বজ্রমেঘ - পর্ব ০২ - ফাবিয়াহ্ মমো - ধারাবাহিক গল্প


ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে গাড়িটা। নড়ছে না ওটা। দুটো ফরসা হেডলাইটের আলো জ্বলজ্বল করে জ্বলে আছে। যেন জান্তব দুটো চোখ। ভারি বর্ষায় গর্জন করছে বিক্ষুদ্ধ প্রকৃতি। অশান্ত সেই ভারি বর্ষণে বুকের ভেতরটা শক্ত করে বলল সেলিম, 

  - একটা অচেনা গাড়ি এমনিই পিছু পিছু আসবে না। গাড়িটা সাইডে চাপিয়ে রাস্তা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। তারপরও গাড়িটা সরছে না। একটা অদ্ভুত গাড়ি কোনো কারণ ছাড়াই ফলো করবে? আঠারো কি. মি. সামনে পাহাড়ি ধস। সামনে রোড ব্লক। ঘটনা এখানে কী দাঁড়াচ্ছে? আমাদের জলদি এখান থেকে পালাতে হবে নাযীফ! দ্রুত ব্যাকআপ ধর। 

কথাগুলো শুনে বরফের মতো জমে গেল রোজা। হাত পা কেমন ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। বুকের ভেতর ভয়ের কাঁটা সূঁইয়ের মতো ফুঁটছে। অস্থির হাতগুলো আশ্রয় খুঁজতে চট করে বাঁদিকে থাকা হাতদুটো খামচে ধরল। সহসা বৈদ্যুতিক শকের মতো চমকে উঠে বাঁয়ে মুখ ফিরিয়ে প্রচণ্ড আশ্চর্য হলো ও। পাতলা একটি চাদরে সমস্ত শরীর মুড়ে বসে আছে শাওলিন। ওর নরম হাতদুটো ভয়ানক গরম। যেন আগুনের উপর হাত রেখে বসে আছে রোজা। গাড়ির ইনসাইড বাতিটি নেভানো ছিল বলে গুরুতর অবস্থাটা সবারই চক্ষু এড়িয়ে গেছে। শাওলিন চাদরের নীচ দিয়ে আরেকটি হাত বের করে সেটিও রোজার হাতদ্বয়ের উপর রাখল। আশ্বস্ত, ভরসা, নির্ভরতার আশ্বাস ছুঁয়ে। অথচ গাড়িভর্তি এতোগুলো মানুষ, এতোগুলো মানুষের মতো মুখ তারা যে স্ব স্ব ভাবনায় ডুবো! গতকাল যখন ট্র‍্যাকিং করতে গিয়ে পাথরে হোঁচট লেগে ব্যথাটা পেল, সেই ব্যথাতেও কেউ আন্তরিকতার স্পর্শ এভাবে রাখেনি। কিছু স্পর্শ যে চামড়া ভেদ করে হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছায় এটা কী মানুষ জানে? নির্ভুল ভাবনার মাঝে আতঙ্ক জড়িত কণ্ঠে সোহানা নড়েচড়ে উঠে। ভয়মিশ্রিত কণ্ঠে অস্থিরসূচকে জানায়, 

  - এখানে থেমে থাকার দরকার নেই। গাড়িটা যদি বাজে মতলব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তবে এক্ষুণি আমাদের পালানো উচিত। এই এরিয়া দ্রুত ত্যাগ করে আমাদের জলদি নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছতে হবে। দেরি করাটা বড্ড ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। সেলিম, তুমি দ্রুত সিদ্ধান্ত নাও। আর দেরি কোরো না। 

ভাবনায় ডুবো মুখটা সামনে ফিরিয়ে নিল সেলিম। চিন্তায় তার চোখ দুটো ডানে বামে অস্থিরভাবে ঘুরছে। পেছনে অচেনা গাড়ি, সামনে নির্জন পাহাড়ি পথ। কতটা ভয়ংকর ভাবে ওদের পালাতে হবে তা বুঝতে পারছে ও। সেলিম মনে মনে আন্দাজটা সেরে ফেলে ডানদিকে বসা নাযীফের দিকে তাকায়। অপ্রকৃতিস্থ সুরে কিছু বলবে তার আগেই বিচক্ষণ নাযীফ ওকে থামতে ইশারা করে। সে নিজেই মাথাটা পিছু ঘুরিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলে,  

  - বন্ধুগণ, 

কথাটা বলে গভীরভাবে দম নিল নাযীফ। প্রত্যেকের দিকে থমথমে চোখ বুলিয়ে বলতে লাগল, 

  - আমরা এই মুহুর্তে সবচেয়ে অ্যাডভেঞ্চারাস মোমেন্টে দাঁড়িয়ে আছি। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। গাড়িটা আমি স্টার্ট দিব। সবাই এমনভাবে সিটে বসবি যেন আকস্মিক ধাক্কায় মাথায় হিট না লাগে। গুরুতর আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা আজ হাণ্ড্রেড পার্শেন্ট। তবু কেউ প্যানিক করিস না। আগামি দশ মিনিট দম বন্ধ করে বসে থাক। শক্ত হয়ে বসবি।  

নাযীফের কথা শেষ হতেই ভয়ে শরীরটা ছমছম করে শিউরে উঠল। এক বিচিত্র আতঙ্কে ছেয়ে গেল সবার মন। সোহানা পেছনের সিট থেকে সরাসরি তাকিয়ে আছে ফণ্ট মিররটায়। সেখানে দেখা যাচ্ছে নাযীফের স্থির দুচোখ। সেই চোখ মিররের ভেতর দিয়ে সোহানাকে আশ্বস্ত করে দিল। নিঃশব্দে যেন বোঝাল “ভেবো না তুমি। আমি সব দেখে নিব।” নাযীফ মিরর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে স্টিয়ারিংটা দুহাতে খামচে ধরল। সবাই সিটবেল্ট বেঁধে আসন্ন ঝড়ের মোকাবিলা করতে কঠোর মনষ্কে প্রস্তুত। ঠিক তখনি নাযীফ প্রচণ্ড ঝাঁকুনি তুলে সজোড়ে ছুটালো গাড়ি। প্রকৃতির অবাধ্য গর্জনে রণ-দীপ্ত আকাশ দেখল স্থলপথে এক অনামা ঝড়। যেখানে স্টিয়ারিংয়ের উপর চলছে দুহাতের কৌশল-যজ্ঞ। ঝুম বৃষ্টির ভেতর প্রচণ্ড ভয়ংকরভাবে ড্রাইভ করতে লাগল নাযীফ। গাড়ি কখনো ডানে মোড় নিচ্ছে। কখনো বামে মোড় নিচ্ছে। কখনো উঠছে সোজা ঢালাই পথ ধরে উর্ধ্বগামী পথে। দুদিকে ঘন বন-বেষ্টিত আঁধার। শোঁ শোঁ বাতাসের তাল কেটে উত্থাল করছে বন্য-বাতাস। নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে গোটা বনানী-সাম্রাজ্য। জিদান মুখটা আবারো পিছু ফিরিয়ে অচেনা গাড়িটার গতিবিধি লক্ষ করল। চোখ বিস্ফোরিত করে প্রচণ্ড উৎকণ্ঠিত স্বরে চ্যাঁচালো, 

  - নাযীফ! স্পিড বাড়া! লক্ষণ খারাপ। আমাদের পেছন থেকে ধাক্কা মারতে পারে। বন্ধু ফাস্ট ফাস্ট! আরো ফাস্ট! 

নাযীফ কর্ণধারে শুনতে পেল জিদানের ব্যগ্রসুলভ কণ্ঠ। অনুমান করতে পারছে কতটা কাছাকাছি পৌঁছে গেছে গাড়িটা। পায়ের তলায় থাকা এক্সিলেটরে চাপ বাড়িয়ে স্পিডটা আরো তুঙ্গে তুলল নাযীফ। পাশে বসা সেলিম গায়ের সিটবেল্ট আরো টাইট করতেই শীতল সতর্কতায় বলল, 

  - সামনে দুটো রাস্তা দেখতে পাবি! আমরা আসার সময় বাঁদিকের রাস্তা দিয়ে এসেছি। গাড়িটা ভুলেও ডানদিকে নিবি না নাযীফ! ওটা নিষিদ্ধ স্থান। ওটা পুরোপুরি বাদ। সাবধানে গাড়িটা বামে ড্রাইভ কর। জলদি চালা! 

কথাগুলো নাযীফের কানে পৌঁছুল কিনা তা স্পষ্ট নয়। নাযীফকে দেখাচ্ছে সম্পূর্ণ নির্লিপ্তের মতো পাথর। যেন সমস্ত বোধ-জ্ঞান লুপ্ত করে সে মরিয়ার মতো সেফ-জোন খুঁজছে। পথে আরো দুটো তেরছা বাঁক নিতেই সেলিম লক্ষ করল গাড়িটা ডানদিকের সেই বিশেষ জায়গায় নিয়ে ফেলেছে। শাঁই শাঁই উচ্চগতিতে সমস্ত রোড সাইন, নিষেধাজ্ঞা, সাবধানী বার্তা নিমিষের ভেতর ভঙ্গ! সেলিম চ্যাঁচিয়ে উঠার পূর্বেই প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে চারপাশ আঁধারে ছেয়ে গেল। মেঘের বজ্রগর্ভের পাশাপাশি গমগম করে উঠল একঝাঁক ভয়ার্ত স্বর। প্রথম ক'মিনিট কেউ বুঝতেই পারল না ঘটনা কী ঘটেছে। মস্তিষ্কের নিউরনে আকস্মিক ব্যাপারটা বসে যেতেই একে একে চোখ মেলে। কেউ মাথায়, কেউ কপালে, কেউ কাঁধের ব্যথা নিয়ে চারপাশে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেখল। অতঃপর বুঝতে পারল এটা সেই জনশ্রুত রেসট্রিক্টেড জোন। যেখানে বসবাস করে কিছু বিশেষ ব্যক্তিবর্গ। যেখানে অবাধ চলাচল, সাধারণ বিচরণ সম্পূর্ণই নিষিদ্ধ। নাযীফের ভুল কর্মকাণ্ডে ওরা সবাই প্রোটোকল ভাঙা স্থানে গাড়ি নিয়ে বসে আছে। পেছনে সেই মারমুখী গাড়িটা নেই। বোধহয় উক্ত গাড়িটাও বুঝতে পেরেছে ওরা কোন কুরুক্ষেত্রের মাঝে সমাসন্ন। মেজাজ ভয়ানক খারাপ করে তীব্র আক্রোশে ফুঁসে উঠল সেলিম,

  - কী করলি এটা তুই! কোন ডেঞ্জারাস জোনে গাড়িটা ঢুকিয়েছিস? এটা রেসট্রিক্টেড জোন শালা! ওরা বুঝতে পারলে আমাদেরই উল্টো ঝুলিয়ে টার্কি ফ্রাই করবে! 

গাড়িতে থাকা সকলেই ভীত-চকিত মুখে আশপাশে তাকাচ্ছে। মানুষ নেই। প্রহরী নেই। অদূরে বিশাল ভারি প্রশস্ত গেট। যেটি বতর্মানে কোনো এক অনির্ণীত কারণে উন্মুক্ত। ওরা যে সেই উন্মুক্ত গেট দিয়ে এতটা পথ ভুলবশত বা ইচ্ছাকৃত চলে এসেছে তা এখন সুস্পষ্ট। কিন্তু অমন নিষিদ্ধ খ্যাত স্থানে গেট কেন সুরক্ষা ছাড়া? কেন প্রহরীশূন্য অবস্থায় মুক্ত? ঠিক তখনই ওদের দৃষ্টি সচকিত করে গমগম ভারি শব্দ হলো। বন প্রকৃতিকে জানান দিয়ে কোনো এক বিশেষ ব্যক্তির বাহন প্রস্থান করছে। বাহনটি গাঢ় সবুজ বর্ণের জীপ। আকার দৈত্যশালী। ইঞ্জিনের ভারিক্কি আওয়াজ ছেড়ে পানিতে ঝপাস শব্দ তুলে বেরিয়ে যাচ্ছে। কে ছিল, কেন গেল, কোথায় এসেছিল কেউ কিছু জানল না। 

নাযীফ স্টিয়ারিং ধরে তখনো বসা। তার চোখে মুখে খেলছে প্রশ্নের তোলপাড়। সংশয়, দ্বিধা, কৌতুহল, চিন্তা সমস্তই তাকে প্রচ্ছন্ন ঘোরে নির্বাক রেখেছে। এমন সময় টানটান দৃষ্টিতে দেখল ওদের দিকে কে যেন লাল লেজার লাইট ছুঁড়ছে। ইঙ্গিতটা বুঝতে আর বাকি রইল না ওদের। পেছন থেকে চতুর বুদ্ধির জিদান আগাম ইঙ্গিতে বলল, 

  - মাথা ঠাণ্ডা রাখবি। খবর‍দার, বাজে ব্যবহার করে বিপদ ডাকবি না। সবকিছু ভদ্র! 

পানিতে ছপ্ ছপ্ পা ফেলে বৃষ্টি মাথায় এগিয়ে আসছে কেউ। হাতে টর্চ। অন্যহাতে লেজার লাইট। লোকটাকে নিকটবর্তী আসতে দেখে জানালার কাঁচ নামিয়ে ঢোক গিলল নাযীফ। কণ্ঠ ভদ্র, চোখ শান্ত, মন স্বাভাবিক করে কিছু বলতে উদ্যত হচ্ছিল, কিন্তু তার পূর্বেই আগত লোকটি নিজেই শুধিয়ে উঠল, 

  - কে আপনারা? পরিচয় কী? 

ঠাঁট গম্ভীর কণ্ঠ শুনে জমে যায় নাযীফ। লোকটার পরণে লম্বা কালো রেইনকোট। রেইনকোটের হুডিতে মাথা ঢাকা থাকলেও মুখটা ভীষণ গম্ভীর। কর্কশ একটা ভঙ্গি ফুটিয়ে আবারও প্রশ্নটা গরম স্বরে শুধাল, 

  - আপনাদের পরিচয় কী! এখানে কী করতে এসেছেন!

এবারের কণ্ঠে যেন কেঁপে উঠল ওরা। নাযীফের চোখমুখ মেঘের মতো অন্ধকার। অদ্ভুত একটা জড়তার মাঝে আঁটকা পড়ে আমতা আমতা স্বরে জানাল, 

  - আমরা . . আমরা ট্যূরিস্ট। এখানে ট্যূরের জন্য এসেছিলাম। কিন্তু মাঝপথে . . 

কথাটা সম্পূর্ণ করতে দিল না লোকটা। ভীষণ খেপাটে গলায় উত্তেজিত স্বরে বলল, 

  - ট্যূরের জন্য নিষিদ্ধ জায়গাতে এসেছেন! নাটক করেন এখানে? 

এ পর্যায়েও ঠোঁট এঁটে চুপ রইল নাযীফ। অবস্থা সঙ্গিণ দেখে পাশ থেকে উপর্যুক্ত জবাবে জানিয়ে উঠল সেলিম, 

  - আমরা রেসট্রিক্টেড জোনে ঢুকতে চাইনি। বিষয়টা আমাদের হাতে কখনোই ছিল না। আপনি যা দেখতে পাচ্ছেন এটা সম্পূর্ণ বাজে পরিস্থিতির শিকার। স্যার, ইউ আর ফিলিং স্যরি টু ব্রেক দ্যা প্রোটোকল। বাট আপনি জেনে রাখুন, একটা আননোন সাদা গাড়ি মারাত্মক ভাবে আমাদের ফলো করছিল। শুধু এটাই নয়, আপনাদের এরিয়ায় ঢুকতে দেখেই গাড়িটা পিছু ছাড়ে। আর আসেনি। এরকম অভিজ্ঞতা একজন ট্যূরিস্ট হিসেবে নিশ্চয়ই বিপজ্জনক। আপনি চাইলে আমাদের সমস্ত ট্যূর ডিটেল এখুনি দেখাতে পারি। 

সেলিমের সুস্পষ্ট কথার জবাবে লোকটা নীরব। কিছু একটা যে মনে মনে ভাবছে তা অনুমেয়। কিন্তু লোকটা কী ওদের সাহায্য করবে? ওদের যে এখন সাহায্যের ভীষণ দরকার! শ্রেষ্ঠাও নিজের নীরবতা ভেঙে কিছু কথা জানান দিয়ে উঠল, 

  - আমরা কয়েক কিলোমিটার দূর ময়ূরী নামক একটা হোটেলে উঠেছিলাম। সেখানে হোটেল ম্যানেজার আমাদের অতিসত্ত্বর স্থান ত্যাগ করতে বলে। আমাদের ভেতর একজন খুব অসুস্থ। তার উপর এই বাজে ওয়েদার। আমরা বাধ্য হয়ে রওনা দিই। কিন্তু ফলাফল খুব ভয়াবহ হলো। আমাদের জন্য এখানে আসা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না। আমাদের আপনি সাহায্য করুন প্লিজ। যদি সম্ভব হয়, ঢাকায় ফেরার মতো কোনো একটা ব্যবস্থা করে দিন। 

লোকটা স্থির চোখ ফেলে ওদের প্রত্যেককে একনজর করে দেখল। অবিশ্বাসের চোখে, কিছুটা অন্য অনিশ্চিত কারণে। কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর কলমের মতো লেজার লাইটটা পকেটে পুড়ে সেলফোনটা বের করে। বৃষ্টির পানি বাঁচিয়ে বেশ দক্ষভাবে কলটা ডায়ালে বসিয়ে কানে চাপলো। চোখদুটো ওদের দিকে ফেলে কঠোর জবানে বলল, 

  - কেউ এখান থেকে এক ইঞ্চি নড়বেন না। এখানেই থাকবেন। আসছি।

পা ঘুরিয়ে ফিরতি পথে চলে গেল লোকটা। সবাই বসল চুপচাপ অপেক্ষা পুষে। কতক্ষণ ওভাবে কেটে গেল খেয়াল নেই। তবে লোকটা যখন ফিরে এল তখন সঙ্গে আরেকজন এসেছে। একই রকম পোশাক-আশাক। একইরকম শক্ত ভঙ্গি।আপাদমস্তক রেইনকোটে ঢাকা। তবে চেহারায় সুস্পষ্ট কাঠিন্যের ছাপ আছে। দ্বিতীয় লোকটা কতগুলো ছাতাগুলো ওদের বুঝিয়ে দিয়ে বলল, 

  - আমি পার্থ। আপনাদের সবার পরিচয় যেতে যেতে শুনব। বতর্মানে এক এক করে ছাতা মেলে সঙ্গে আসুন। আপনাদের মালপত্র নেয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সবাই সাবধানে নামুন। 

পার্থর নির্দেশে সবাই সাবধানে একে একে পথ ধরল। প্রথমে রোজা, জিদান, সোহানা একত্রে বেরিয়ে গেলে সবার শেষে আস্তে করে নামল শাওলিন। শরীরের উপরিভাগ খয়েরি রঙের কাশ্মীরি চাদরে ঢাকা। পড়ণে কালো বর্ণের জামা, নীচে রঙ ম্যাচিং করা কালো পাজামা। সম্পূর্ণ অন্ধকার পোশাকে আবৃত বলেই চোখে অন্যরকম ঠেকছে। খট করে ছাতাটা খুলে শাওলিনের মাথার উপর ধরল পার্থ। ব্যাপারটাতে বিশেষ কিছু না ভাবার জন্য সে নিজেই বলে উঠল, 

  - আমি রেইনকোটে আছি। আপনার জন্য ছাতা ধরে রাখতে সমস্যা হবে না। কিন্তু আপনার বন্ধুদের কেউ ছাতাটা ধরতে গেলে দুজনই কম-বেশি ভিজবেন। এজন্য আমি ধরলাম।

চুপচাপ থাকা শাওলিন দুহাতে জামাটা খানিকটা উচুঁ করে ধরল। বৃষ্টির কাদামাটি বাঁচিয়ে দুর্বল পায়ে এগোতে এগোতে বলল, 

  - সাহায্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। তবে আপনার সাহায্যটায় দ্বিতীয় কিছু ভাবিনি। 

কিছুটা পথ দূরে একটি কাঠ-নির্মিত বাংলো। বাংলোর চারপাশজুড়ে গাছগাছালির আধিপত্য। বৃষ্টি মাড়িয়ে পথ ডিঙিয়ে সেই বাংলোতে পৌঁছুল সবাই। আধভেজা স্বল্পভেজা পোশাকে সবাই বসলো উষ্ণ আরাম ঘরে। কাঠের মেঝে, কাঠের দেয়াল, কাঠের সমুদয় আসবাবপত্র হলেও প্রতিটি জিনিস যেন মনোহর। দেখতে ভালো লাগে। চোখে লাগে বৈচিত্র্যময়। সবাই সোফা ভাগাভাগি করে বসতেই রেইনকোট ছেড়ে উপস্থিত হলো পার্থ। সঙ্গে সেই উক্ত লোক। কালো গ্যাবার্ডিন প্যান্টের পকেটে মোবাইল ঢুকিয়ে নিজের পরিচয় রাখল সে, 

  - আমি রাফান সিদ্দিকী। আমাকে স্যার না বললে চলবে। আপনাদের কাছ থেকে তথ্যগুলো জেনে আমি একটা রিপোর্ট রেডি করব। কে বা কারা এ ধরণের দুষ্কৃতি ঘটাচ্ছে সেটা জানা জন্য আমার প্রয়োজন। বাইরে যেরকম ঝড়ো আবহাওয়া চলছে এটা কারোর জন্য নিরাপদ অবস্থা নয়। আপনাদের থাকার অনুমতি বনবিভাগ থেকে মঞ্জুর করা হয়েছে। আপনারা এখানে থাকুন। পরিস্থিতি সুবিধের হলে অন্য কোথাও হোটেল বুক করে চলে যাবেন। 

রাফানের কথা বলার ভঙ্গি, বাক্যের উপর ক্ষমতা সবই অভিভূত করল ওদের। গম্ভীর মেজাজি মুখ। কথার ভেতর মেজাজ খোয়ানোর ভাব সুপরিলক্ষিত। রেইনকোটের আড়ালে ছিল সাদা টিশার্ট, ধূসরবর্ণ গ্যাবার্ডিন ট্রাউজার। কথাগুলো যথাযথ বলে সেখান থেকে প্রস্থান করল রাফান। সঙ্গীর গমনে বুকের উপর হাত ভাঁজ করে এগিয়ে আসে পার্থ। সে এতোক্ষণ দরজার চৌকাঠের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। লম্বা চওড়া স্মার্টসুলভ ভঙ্গি তার মধ্যে প্রকট। রেইনকোট খুলে ফেলায় স্পষ্ট হয়েছে গায়ের পোশাক আশাক। পড়ণে কালো টিশার্ট; সঙ্গে ক্যামোফ্লেজ প্যাটার্নের ট্রাউজার পরা। বৃষ্টিতে হালকা ভিজেছে তার মাথার চুল। ঠোঁটের উপর মৃদু হাসির চিহ্ন রেখে বলে উঠল পার্থ, 

  - আমার পার্টনারের আচরণ সামান্য রুক্ষ। এটা কনসিডার করবেন। আপনাদের জন্য চা কফি কোনটা বলব? 

সবাই নিজেদের মতো ইচ্ছে পোষণ করতে ব্যস্ত হলে সেখানে চুপ ছিল শাওলিন। চাদরের নীচে জ্বরদগ্ধ গা কাঁপতে শুরু করেছে তা টের পাচ্ছে ও। শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সুতীব্র জ্বরের ছোবল। চোখ বন্ধ করে ডানে বসা সোহানার কনুইটা মৃদু নাড়া দিয়ে ডাকল, 

  - সোহা, 

নিজের নাম শুনে পাশে ফিরে তাকায় সোহানা। কনুই স্পর্শ করা হাতটা ও তখনি মুঠোয় টেনে সরল কণ্ঠে শুধাল, 

  - খারাপ লাগছে? একটু শুবি? 

আর কিছু বলতে হলো না ওই আরক্ত শুষ্ক ঠোঁটে। অনুচ্চ অনুক্ত কথাগুলো সরল-মনা সোহানা নিজেই অকপটে বুঝে নিয়েছে। শ্রেষ্ঠার দিকে তাকিয়ে ‘শ্রেষ্ঠা শোন...’ বলতেই ত্রস্তভঙ্গিতে সমস্ত কিছু কার্যে পরিণত করে ছেড়েছে। পার্থর সাহায্যে একটা শোবার ঘরে বিশ্রামের অনুমতি পেয়ে সেখানেই মাথাটা বালিশে রাখল শাওলিন। চোখের সামনে গোটা পৃথিবী এমন ধূসর, অস্বচ্ছ, ঝাপসা হতে লাগল যে ওর মনে জাগল ভয়। অসম্ভব এক ভয়! পুরোনো দিনের পুরোনো ভয়! চোখদুটো বুজে ফেলল ও। ওই ভয়কে দুচোখেও দেখতে চায় না। সহ্য করতে চায় না ও . . মনে আনতে চায় না ওটা। যেন শত চেষ্টাতেও খুলতে পারল না চোখের ভারি পল্লব। কানে পৌঁছাতে লাগল দূর . . বহুদূরের শব্দ। আর কিছু মনে নেই . . সব অস্পষ্ট। 


সুবিশাল আলোকমণ্ডিত হাসপাতাল। হাসপাতাল চত্বরে মানুষের আনাগোনা শূন্য। ঝম ঝম করে ভিজছে মুষলধারার বৃষ্টিপাতে। থাইগ্লাসের বাইরে একঘেয়ে দৃশ্যপটটি চুপচাপ দেখছে নার্স রেহানা হানিফ। হাতের মুঠোয় যান্ত্রিক বস্তু। যাতে ফুটে আছে কন্টাক্ট নাম্বারে বিশেষ নামের আদ্যক্ষর। সেই কর্তব্য-কঠোর মানুষ রীতিমতো তাকে উপেক্ষার খাতায় তাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ম্যাসেজের বিপরীতে আসেনি ম্যাসেজ। কলের বিপরীত বাজেনি কখনো অগুরুত্বপূর্ণ কল। বরং সদাসর্বদা কাজ সচেতন মনোভাব নিয়েই তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে ওই লোক। চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির ভেতর দুর্বিনীত মনে ইচ্ছে প্রকাশ করল নার্স রেহানা। খুব করে চাইল আজ একটা অপ্রত্যাশিত কল আসুক। একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটুক। সব নিয়তির চালে পরিপূর্ণ হোক আজ! কিছু ঘটুক। কিছু হোক আজ! তীব্র কঠিন চাওয়ায় চোখদুটো আকাশেই রাখল রেহানা। হুড়হুড় করে পেরিয়ে গেল অখণ্ড সময়। হাতের মুঠো দৃঢ় থেকে প্রচণ্ড দৃঢ় করল সে। অতঃপর দুরাশায় ভরা চোখদুটো নামিয়ে আনে ফোনের ওপরে। না; কল নেই। হয়তো আসবেও না। ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে চলে যেতে নেয় রেহানা নাযীফ, হঠাৎ ভুম্ ভুম্ কাঁপনে পরিচিত শব্দ বেজে উঠল। ঝটিতি চোখ তুলে ফোনে তাকাল রেহানা। আশ্চর্যে স্তব্ধীভূত হয়ে থমকে রইল। এমন সময় সুনশান সেই হাসপাতাল চত্বরে হর্ণের পর হর্ণ যেন গমগম করে উঠেছে! সদর দরজাটা ঘড় ঘড় করে খোলার আওয়াজ। কী হচ্ছে কী বাইরে? আকস্মিক ঘটনায় কী হলো কিচ্ছু বুঝতে পারছে না নার্স হানিফ। দ্রুত কানে ফোন চেপে দৌড়ে গেল জানালার কাছে। নীচে চোখ বিস্ফোরিত করে দেখল সেই সবুজ জীপ। কম্পিত স্বরে বলল রেহানা, 

  - হ্যালো স্যার . . 

কলের ওপাশ থেকে ব্যস্তভঙ্গিতে জবাব ছুঁড়ল কেউ, 

  - নীচে নেমে যান। আর্জেন্ট নার্স হানিফ! রাফানের সঙ্গে যারা এসেছে, তাদের পূর্ণ সহযোগিতা করুন। 

তীব্র অস্থিরতায় নীচের ওষ্ঠে দাঁত বসাল রেহানা। মাথাটা ‘হ্যাঁ’ সূচকে নাড়িয়ে আশ্বস্তের কণ্ঠে জানান দিল, 

  - আমি ব্যাপারটা দেখছি। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। 

আর একটা শব্দও ব্যয় করল না নার্স হানিফ। অক্ষরে অক্ষরে কথা মেনে সে তখনি ধপ ধপ শব্দে সিঁড়ি ভেঙে নীচে নামল। হাতের ফোনটা এপ্রণের পকেটে ঢুকিয়ে দৌড়ে ওয়ার্ড বয়দের ডাকল সে। তাদের মধ্যে ক'জন বাইরে ছুট দিলে রেহানা বাকি কাজে ব্যস্ত হয়। সদ্য ইন্টার্ন করতে আসা নার্স ফাইরুজ প্রচণ্ড উত্তেজিত স্বরে চ্যাঁচিয়ে ডাকছে, 

  - রেহানা আপু! আপু, আপনি কোথায় আছেন?তাড়াতাড়ি আসুন আপনি। এক্ষুণি! 

ফাইরুজের উচ্চকণ্ঠে পিলে চমকে তাকায় রেহানা।বিপদের আশঙ্কা টের পেতেই রেহানা একছুট দিয়ে ফাইরুজের কাছে পৌঁছে শুধাল, 

  - কী হয়েছে? কেন ওভাবে চেঁচাচ্ছ? 

ফাইরুজ হাঁপ ধরা গলায় অসংখ্য ঢোক গিলতে গিলতে মুখ হাঁ করে দম টানছে। নিঃশ্বাসে পিণ্ডি চটকে আসছে তার। ভীষণ অস্বস্তির সাথে দম ফেলতে ফেলতে ফাইরুজ বলল, 

  - পেশেন্ট একজন মেয়ে। গায়ে মারাত্মক জ্বর। থার্মোমিটারে জ্বর মাপার পর প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছি। একশো চার ছাড়িয়ে পাঁচের দিকে অবস্থা আপু। কী করব বলুন? আমি কী ডাক্তার রেজাকে একবার ফোন করব? 

রেহানা মাথা স্থির রেখে শান্তভাবে বলল, 

  - এখনই নয়। থামো! আগে আমি দেখে আসি পরিস্থিতি কেমন। তুমি স্যালাইন রেডি করেছ? ব্লাড প্রেশার কেমন? 

  - প্রেশার হাই। স্যালাইন এখনো রেডি করিনি আপু। আপনি এলে সব ব্যবস্থা করে দিব। আপনি আগে চলুন। 

  - চলো জলদি। 

ধপধপ করে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতেই প্রশস্ত করিডোর দিয়ে ডানে ছুট লাগাল। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই লম্বা বেডে জ্ঞানশূন্য মেয়েটাকে দেখতে পেল। সমস্ত গা রক্তাভ, চোখদুটি বন্ধ, কাশ্মীরি আপেলের মতো ঠোঁটদুটি তপ্ত লাল। রেহানা ডানহাত এগিয়ে কপাল ছুঁয়ে চমকে ওঠে। চকিতে সহকর্মী মেয়েটির দিকে উদ্বিগ্ন সুরে চেঁচাল, 

  - স্যালাইন এক্ষুণি করো ফাইরুজ! ফাস্ট!

সেকেণ্ডের ভেতর হাতের নীল শিরায় স্যালাইনের সূঁচ ঢোকানো হল। ফোঁটা ফোঁটা স্যালাইন সরু নলের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করছে শরীরে। কিয়ৎক্ষণ নীচের ঠোঁটে দাঁত বসিয়ে ভাবতে থাকলে সহকর্মীর দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ল রেহানা,

  - মেয়েটা রাফানদের কী হয় ফাইরুজ? জানো কিছু? রাফান আর পার্থ কেন একে এই ঝৃষ্টির মধ্যে আনলো? 

সহকর্মী মেয়েটা উজবুক চোখ তুলে রেহানার দিকে তাকায়। যা যতকিছু বুঝেছে তা-ই মুখ ফুটে জানায়, 

  - এই মেয়ের সঙ্গে তো পুরো একটা দল এসেছে। একা আসেনি তো। তিন তিনটা ছেলে, তিনটা মেয়ে। ছয়জনের একটা বিরাট গ্রুপ। ওরা সবাই নীচে বসে আছে। দোতলায় উঠেনি। আমি-ই বরং ওদের হইচইয়ের জন্য উপরে উঠতে দিইনি। 

ভ্রুঁদ্বয়ের মাঝে চিন্তিত খাঁজ ফেলল রেহানা। হাতদুটো এপ্রণ পরা বুকের উপর ভাঁজ করে কিছুটা অন্যমনষ্ক সুরে বলল, 

  - শোয়েব স্যার কেন যেচে হেল্প করতে গেলেন? কী দরকার উনার? 

কথার অতলে থাকা সুক্ষ্ম ইঙ্গিত বুঝতে পারে নার্স ফাইরুজ। বুঝতে পারে মেয়েলি হিংসুক মন পশুর মতো জাগ্রত হয়ে উঠেছে উনার। যে নিজের ভালো ব্যতিত অন্যের ভালোটা সহন করতে পারে না। ফাইরুজ কাজের অজুহাত দেখিয়ে চট করে সটকে পড়ল সেখান থেকে। এরকম বিদঘুটে মহিলার সংস্পর্শ তার পছন্দ নয়। সমগ্র কেবিনজুড়ে ভূতুড়ে নিস্তব্ধতা। বাইরে উত্থাল হাওয়ার তোড়। রেহানা মন ঘুরিয়ে কেবিনের অন্যপ্রান্তে থাকা সোফাদুটোতে একটি টোট-ব্যাগ দেখতে পেল। ব্যাগটার চেহারা দেখল নাক ছিঁটকাল সে। এমন একটা মুখভঙ্গি করল যেন মাসে মাসে ডিয়র শ্যালেনের ব্যাগ ব্যবহার করতে অভ্যস্ত। সামান্য বেতনভুক্তা একজন নার্স অত্যন্ত দম্ভের সাথে টোটব্যাগটা তুলে নিল। বহুদিনের ব্যবহার্য বলে গাঢ় বাদামি রঙটা একটু ফ্যাকাশে হয়েছে। তবু রূপ উজ্জ্বলতায় এতটুকু বিবর্ণ ছাপ ফেলেনি। ব্যাগের চেইনটা একটানে খুলে ভেতরে সবে হাত ঢুকাতে চাচ্ছিল রেহানা। কিন্তু ব্যাগের এক জায়গায় ছোট্ট করে এমব্রোডারি বুননে একটা নাম লক্ষ করল ‘Shawleen’ . শাওলিন? এর অর্থ কী? কী বোঝায় এই নাম দ্বারা? বাল্বের ঝকঝকে আলোয় কেবিনের ঠাণ্ডা নিস্তব্ধতায় ছোট্ট মুখটা দেখতে লাগল রেহানা। জ্বরের আঁচে গালজুড়ে যেন রক্তজবার লালিত্য . . অদ্ভুত সম্মোহন করা এক লালচে মেদুর আভা! চোখের পাতা বন্ধ রইলেও ছোটবেলার স্বপ্ন-প্রোথিত দিনগুলোর কথা মনে পড়ল খুব। মনে পড়ল সেই স্বপ্নচারিণী রাজকুমারী স্লিপিং বিউটির রূপকথা! আজ যেন সাক্ষাৎ ওর সামনে রূপকথার সেই ঘুমন্ত সুন্দরীই অসাড়ে ঘুমিয়ে রয়েছে। জ্বরে, অসুখে, দৈহিক অবসাদে। মুখজুড়ে তার মোহবদ্ধ সৌন্দর্যের দ্যুতি বিচ্ছুরিত হচ্ছে যেন। কী সুন্দর . . কী স্নিগ্ধ . . কী অপার ঘোর লাগানো রূপ-কুহকী। হঠাৎ কেবিনের দরজাটা ক্যাচ্ করে উঠলে অপ্রস্তুতভাবে ঘাবড়ে গেল রেহানা হানিফ। তড়িঘড়ি করে পিছু ফিরতেই বরফের মতো জমে গেল সে। অন্তরাত্মা ধ্বক করে কেঁপে উঠে! কেবিনের দরজা ঠেলে ঢুকে পড়েছে স্বয়ং বন কর্মকর্তা। অজানা ভয়ে মন-পাখিটা লাফিয়ে উঠতেই ঝপ ছেড়ে দিল ব্যাগটা। সমস্ত জিনিসপত্র উপড়ে দিয়ে ব্যাগটা পড়ে রইল ফ্লোরে। কিছু জিনিস গড়াতে গড়াতে পৌঁছুল সেই মানুষটার পায়ের কাছে। রেহানা নির্বাক! ঠোঁটদ্বয় কাঁপছে, চোখদ্বয় বিস্ময়ে মূঢ়। 
.
.
.
চলবে....................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন