তন্ময়ের পুরুষালি তালুতে ‘শাহজাহান আরাবি’ নামটুকু বেশ সময় নিয়ে লিখল অরু। লেখা শেষে গদগদে কণ্ঠে শুধাল,
‘কেমন?’
তন্ময় এক ঝলক চাইল আচ্ছারকমের ল্যাদাভ্যাদা লেখাটুকুর দিকে। তার ভেতরের শিক্ষকসম্প্রদায়ী মনোভাব বলছে, এক্ষণি অরুর এই বাজে হ্যান্ডরাইটিং এর জন্য কঠিনভাবে কটাক্ষ করতে। অন্যদিকে প্রেমিক রূপের স্বামী সত্তা চাচ্ছে — আকাশসম প্রশ্রয়, আহ্লাদ দিতে। খারাপ হোক বা ভালো, মানুষটা তো একান্ত তার। আর হাতের লেখা খারাপ হলেই বা কি? এতে আহামরি কোনো প্রয়োজনীয়তা তো নেই। ভেতরের শিক্ষক সত্তাকে বুঝিয়েশুঝিয়ে তন্ময় নিজেকে সামলে নিলো চটজলদি। মুখে আসা কথাটুকু কোনোরকমে গিলে প্রাঞ্জল গলায় প্রত্যুত্তর করল,
‘ভালো।’
শুধুমাত্র 'ভালো’ শব্দটুকু শুনেই অরু দু'গাল ভরে হাসল। হাসলে ওর চোখদুটো ডুবে যায়। গাল দুটো ফুলে ওঠে। দেখতে কী ভীষণ স্নিগ্ধ দেখায়! তন্ময়ের এই হাসিটা দেখতে ভালো লাগে। হাসির তালে তারও হাসতে ইচ্ছে হয়। অজান্তে তারও পাতলা ঠোঁট দুটোর কোণ প্রসারিত হয়। অরু তৃপ্তি নিয়ে লেখাটায় আঙুল বুলাল গুণে-গুণে তিনবার। ছুঁয়েই সে শান্ত হলো না। ফোনে কিছু ছবিও তুলে নিলো চটপট। বাইরে তখন মুশলধারা বৃষ্টি নামছে। অসময়ের, অপ্রাকৃতিক বৃষ্টি। কনকনে শীতের মাসে বৃষ্টি নামা তো অপ্রাকৃতিকই বটে! এই মাসে শিশিরে ভিজবে প্রকৃতি। এইতো নিয়ম! সেই নিয়ম ভঙ্গ করে নামছে ঝড়ো বৃষ্টি। পড়ছে তীব্র শব্দে বজ্রপাত। কাছাকাছি কোথাও হয়তোবা পড়েছে। বারান্দার স্লাইডিং ডোর খোলা। ফলে মেঝে জলের স্পর্শে ভিজে আছে। ঠান্ডা বাতাস এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে শরীর। তন্ময় একচিত্তে দেখছিল ব্যস্ত অরুর মুখ। হাস্যোজ্জ্বল মুখটা হঠাৎ করে ভোঁতা হতে দেখে আশ্চর্য হলো সে। আঙুলের সাহায্যে গুঁতো দিলো অরুর তুলতুলে নরম ফোলা ডান গালে,
‘কী?’
অরু মনমরা কণ্ঠে ডাকে, ‘তন্ময় ভাই!’
তন্ময়ের গলা শুঁকিয়ে আসে মুহূর্তেই। আবার কী আবোলতাবোল মাথায় ঢুকিয়েছে এই মেয়ে? তন্ময় সাবধানী স্বরে শুধায়, ‘হুঁ? কী?’
তন্ময়ের আগাম সঙ্কেত সত্য করে—অরু আঁকাবাঁকা চোখে এদিক-ওদিক চেয়ে বিড়বিড়িয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
‘আমাদের মেহেন্দি অনুষ্ঠান, গায়ে হলুদ, আনুষ্ঠানিক বিয়ে কবে হবে?’
তন্ময় হতাশ হয়ে চোখজোড়া একমুহূর্তের জন্য বন্ধ করে নেয়। সে স্বীকার করছে, তার থেকে এই পুচকে মেয়েটা অত্যন্ত চালু। চালু ওর সব চিন্তাভাবনা, স্বপ্নগুলো। সাথে ওর হঠাৎ - হঠাৎ সমস্ত ইচ্ছেগুলো বলে দেবার ব্যাপারটাও উপভোগ করে সে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তন্ময় তাকায় অরুর সরল মুখপানে। ডান হাতে আলতোভাবে চেপে ধরে ওর চোয়াল। মুখটা উঁচিয়ে ধরে —গভীর দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
‘বিয়ে তো হয়েছে।’
অরু উত্তেজিত হয়ে পড়ে, ‘এভাবে নয়। সবাইকে নিয়ে। শাবিহা আপুর মতন অনুষ্ঠান করে। আমার তো আপনাকে বর বেশভূষায় দেখার খুব ইচ্ছে। সত্যিই!’
কতটা অবলীলায় বলে ফেলল নিজের মনের কথাগুলো! অথচ সেই কথাগুলো কতটা প্রভাব ফেলছে তন্ময়ের ভেতরে বুঝতে পারে এই অবুঝ মেয়েটা? কীভাবে তার হৃদয়ে উথালপাতাল ঢেউ বয়ে যায় জানে? অরু জবাব না পেয়ে ফের ডেকে ওঠে,
‘তন্ময় ভাই?’
তন্ময় ততক্ষণাৎ অরুকে বুকে জাপটে ধরল। ওর মাথাটা নিজের অশান্ত বুকে জড়িয়ে আওড়াল,
‘আচ্ছা।’
অরু তন্ময়ের উষ্ণ বুকে নাক ঘষে উৎসুক স্বরে জানাল,
‘আমি আজ এখানেই শোব।’
তন্ময় দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তবে প্রত্যুত্তর করে, ‘আচ্ছা।’
অরু একমাইল পেয়ে এবারে দশ মাইল চেয়ে বসে সাবধানী কণ্ঠে,
‘আমি আগামী সবদিন এখানেই শোব।’
তন্ময় এবারে শব্দ করে হেসে ফেলল। হাসির তালে কাঁপল শক্তপোক্ত বুক। অরু স্পষ্ট অনুভব করল সেই কম্পন। তন্ময় ওর মুখে জিজ্ঞাসুচোখে চেয়ে, আগ্রহী গলায় জানতে চাইল,
‘নিজের রুমে ঘুমালেই বা কী সমস্যা, হুঁ?’
অরু নিশ্চুপ রইল কিছুক্ষণ। তন্ময় আগ্রহী চোখে চেয়ে আছে জবাব শোনার জন্যে। অরু আড়চোখে চাইল প্রথমে। তন্ময়ের হাস্যোজ্জ্বল মুখটা দেখে যেন বলবার সাহস সঞ্চয় করছে। মিনিটখানেক সময় নিয়ে মিনমিনে স্বরে আওড়াল,
‘আমার আর একা শুতে ইচ্ছে করে না। আপনি পাশে না থাকলে আমার আর ঘুম আসে না।’
তন্ময় কাছ থেকে দেখল অরুর কম্পিত পাপড়িজোড়া। অনুভব করল লাজুক গাল দুটোকে। বড়ো করে ঢোক গিলল সে। এতো জোরসে বিট করছে কেন হৃদয়? মেয়েটা বোধহয় তাকে মে রেই ফেলতে চায়। অরু এযাত্রায় বুঝি লজ্জা পেলো? তীক্ষ্ণচোখের চাহনি বুঝে সে খুব দ্রুত উঠে দাঁড়াল। তন্ময় ধরার আগেই এক ছুটে পালাল। দৌড়ে ও চতুর। দুয়ারে একটিবার দাঁড়াল অবদি না। তন্ময় শুনতে পেলো দীপ্তর কণ্ঠ,
‘অরুপি দৌড়িও না। পড়ে যাবা।’
তন্ময় আপনমনেই চেয়ে থাকল দুয়ারপানে। দীর্ঘক্ষণ! সে নিজেও আজকাল একা ঘুমাতে পারে না। সিলেট ট্যুর তাকে ভালোভাবেই নষ্ট করেছে। অরুকে বুকে না নিলে তার রাতের প্রহর যেন কাটতে চায় না। সেদিন ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখছিল অরু তার বুকে বিড়ালছানার মতন শুয়ে আছে। এমন স্বপ্ন সে আজকাল নিয়মিত দেখে। কেন দেখতে হবে এমন স্বপ্ন? যেখানে সে চাইলেই অরুকে বুকে নিয়ে ঘুমুতে পারে। তাহলে? তন্ময় অনেকটা সময় ভাবল। গভীর ভাবে। ভেবেচিন্তে সে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাল।
———
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজন করার কথা হলেও— শেষমুহূর্তে শাহজাহান বাড়ির বাগিচায় করবে বলেই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাবিহা নিজেই। মেহেন্দি অনুষ্ঠানের পরদিনই পরিবারকে এই বিষয়ে অবগত করেছে সে। মোস্তফা সাহেব আপত্তি করেননি। মেয়ের ইচ্ছেই তার ইচ্ছে। পারিবারিক ভাবে বিয়েটা হচ্ছে। মানুষজন তারা তারাই। সেক্ষেত্রে তাদের বাগিচায় স্টেজ সাজিয়ে সুন্দরভাবে গায়ে হলুদের কার্যক্রম সেরে ফেলা যাচ্ছে। তবে শাবিহা ঠিক কী কারণে এই সিদ্ধান্তে এসেছে তন্ময় না জানলেও অরু ঠিকই জানে। অরুর জানা মানে একসময়তে এসে তন্ময়েরও জানা। যেমন আজ বিকেল বেলাতেই চুপিসারে মৌমাছির মতন তার চতুর্দিক ঘুরেফিরে কানের কাছে বলে গিয়েছে,
‘অয়ন ভাইয়া চাচ্ছেন শাবিহা আপুকে নিজ হাতে হলুদ লাগাতে। কমিউনিটি সেন্টারে গায়ে হলুদ হলে তো ভাইয়া হলুদ লাগাতে পারবেন না। নাইবা পারবেন আপুকে দেখতে। তাই ভাইয়া চাচ্ছেন আমাদের বাড়িতেই যেন হয় গায়ে হলুদ। হাও রোমান্টিক! তাই না বলুন?’
তন্ময় বাঁকাচোখে চেয়ে ডান ভ্রু তুলল। আশ্চর্য! এখানে রোমান্টিকের কী আছে? আর তন্ময় কম রোমান্টিক নাকি? কম? তন্ময় নিজেকে নিয়ে একমুহূর্তের জন্যে সন্দেহের বেড়াজালে আবদ্ধ হলো। দেখল নিপুণ চোখে অরুর উজ্জ্বল তারাময় চোখ দুটো। এতো খুশি হবার কী আছে? প্রয়োজনে তাদের গায়ে হলুদে তন্ময়ও বলবে এমন কথা। নাহয় এরথেকেও রোমান্টিক কিছু বলবে। এতে এতোটা আশ্চর্যের কী আছে? অদ্ভুত! ভ্রুদ্বয়ের মধ্যিখানে কয়েক ভাঁজ ফেলে দেখল অদূরের অরুকে। উড়ছে মৌমাছির মতন। সাধারণ কথাতেও মেয়েটা তাকে বিরক্ত করতে পারদর্শী। তার ইচ্ছে করছে এক্ষণ তাদের গায়ে হলুদের বন্দবস্ত করতে। করে অনেক রোমান্টিক কিছু বলতে। অরু তন্ময়ের নিগূঢ় দৃষ্টি অনুভব করে ফের কাছাকাছি এলো। কাঁধে লেপ্টে চাপাস্বরে শুধাল,
‘শাবিহা আপু খুব লাকি। তাই না বলুন?’
ওর তাই না, তাই না শুনে তন্ময় উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। এবেলায় অদ্ভুত গলায় পাল্টা শুধিয়ে বসল, ‘আর তুই?’
অরু আশ্চর্য হলো বোধহয়? প্রশ্নবোধক পিটপিট চোখে চেয়ে থাকল কিছুক্ষণ। যেন প্রশ্নটির অর্থ বুঝে নিচ্ছে। কী জানি কি বুঝল মেয়েটা! অবুঝ গলায় সরল হেসে বলল,
‘আমিতো সবসময় লাকি। গতকাল সোফায় পাঁচশো টাকার নোট পেলাম।’
উদাস হয়ে তন্ময় হাতের ইশারায় তাড়িয়ে দেবার ভণিতা ধরে বলল,
‘যা গিয়ে সাজগোজ কর।’
‘পার্লার থেকে লোকজন আসেনি এখনো। কেন আসেনি? সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে তো। একটা কল দিন তো। ওহ আচ্ছা, আপনার কাছে তো নাম্বার নেই। আমিই দিচ্ছি।’ অরু যেভাবে এসেছে সেভাবেই চলে গেল। তন্ময় পড়ল দোটনায়। এখন কি তাকে রোমান্টিকতার ক্লাস করতে হবে? অয়নকে কে কি সে প্রশ্ন করবে এই বিষয়ে? দ্বিধায় জড়িত তার ফোন পকেটে ভাইব্রেট হতে শুরু করল। ফোন বের করতে নিয়ে আনমনা চাইল দোতলার দিকে। অরু দাঁড়িয়ে আছে। মুখ চেপে মিটিমিটি হাসছে। ও এভাবে হাসছে কেন? অরু দ্রুত সরে গেল। কী আশ্চর্য! আশ্চর্য তার ফোন স্ক্রিনে মাহিনের নাম ভাসছে। কল রিসিভ করতেই মাহিনের ব্যস্ত কণ্ঠ শোনা গেল,
‘গায়ে হলুদ অ্যাটেন্ড করতে কী আনা লাগে রে? একটা বোয়ালমাছ আনব? বড়ো দেখে?’
তন্ময় হতাশ কণ্ঠে জবাবে বলল, ‘তোদের থেকে বড়ো বোয়ালমাছ পৃথিবীতে আর নেই। তাই তোরা এলেই হবে।’
কল কাটতে নিয়েও শুনল বন্ধুদের ঘর কাঁপানো অট্টোহাসির ধ্বনি। পূর্বদিকের লাইটিংয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এক সারির লাইট জ্বলছে না। তন্ময় ফোন পকেটে চালান করে দিয়ে সেদিকে হাঁটা ধরল। শীতের মধ্যেও তার গরম লাগছে। কপাল বেয়ে ঝরছে ঘাম। কাজকর্ম শেষ করতে না করতেই বেলা শেষ। সূর্য ডুবেছে অনেক আগে। শীতের বেলা যেন দেখতে দেখতে ফুরিয়ে আসে। ছয়টা দুইয়ে ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে। বাগানের লাইটিং এর সুইচ ওন করতেই ঝলমল করে উঠল শাহজাহান বাড়িটা। কয়েক ধাঁচের, রঙের লাইট ব্যবহার করা হয়েছে। ফুল দিয়ে রাস্তা করা হয়েছে দুয়ার ধরে স্টেজ পর্যন্ত। ইতোমধ্যে চলে এসেছে ফটোগ্রাফার। মোস্তফা সাহেব সহ আনোয়ার সাহেব ঘুরে ঘুরে সবটা দেখছেন। ওদিকে রান্নাবান্নার আয়োজন চলছে ভেতরর রান্নাঘরে। এতো জনের রান্না সেই দুপুর থেকে শুরু করেছেন তিন গিন্নি! তন্ময় একটা কফি পাঠাতে বলে সিঁড়ি ধরল। তার দ্রুত গোসল নেয়ার প্রয়োজন। তৈরি হতে হবে। তার বন্ধুবান্ধব চলে আসবে শীঘ্রই।
তন্ময়ের বন্ধুবান্ধবদের আগমন ঘটল সাতটা পঁয়তাল্লিশে। হলুদ পাঞ্জাবি, সাদা পাজামা পরে এসেছে। শুহানি পরেছে সিল্কের হলুদ শাড়ি। তাদের আপ্যায়ন করতে মোস্তফা সাহেব কোথা থেকে যেন হঠাৎ করে হাজির হলেন। ছেলের বন্ধুদের প্রতি তার আহ্লাদ একটু বেশিই। মাহিন চারটে বড়ো বোয়ালমাছ ধরিয়ে দিল মোস্তফা সাহেবের হাতে। চোখ খুলে মিথ্যে বানোয়াট একটি বাক্য ঝেড়ে ফেলল,
‘তন্ময় জানাল আপনার বড়ো বোয়ালমাছ অত্যন্ত পছন্দের। তাই নিয়ে এলাম।’
আশ্চর্যজনক ভাবে মিথ্যেটা সত্যে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছে। মোস্তফা সাহেবের আসলেই বোয়ালমাছ পছন্দের মাছ। তিনি জ্বলজ্বলে চোখে ছেলের দিকে চাইলেন। তন্ময় নিজেও আশ্চর্য! অন্যদিকে মাহিন ব্যাপারটা বুঝতে পেতেই তার মুখটা দৃশ্যমান রূপে কালো হয়ে এলো। ইশশিরে, এমনভাবে ভালো একটা কাজ করে ফেলল? তন্ময়ের উপকার করল? ছিহ, ছিহ! মোস্তফা সাহেব যেতেই রিয়ান শব্দ করে হেসে ফেলল। সৈয়দের চোখে জল জমেছে হাসতে হাসতে। তন্ময়ও ঠোঁট টিপে বলল,
‘ধন্য…… বাদ।’
মাহিন ফ্যাকাসে মুখে আওড়াল, ‘ইট'স নাথিং।’ এই কথাতে যেন হাসির শব্দ বাড়ল বলে। মাহিন বিরক্ত হলো,
‘উফ, থামবি তোরা!'
শুহানি তন্ময়কে তাড়া দিয়ে শুধাল, ‘অরু কোথায়? পার্লারের লোক এসেছে? কোন রুমে সাজছে? আমি হাককা টাচ-আপ করব।’
তন্ময় অদূরে ছোটা দীপ্তকে ডেকে আনল। ওর সাথে পাঠাল শুহানিকে। পূর্বদিকে চেয়ার বসানো হয়েছে। সেদিকে এগুলো বন্ধুদের নিয়ে। আকাশ এসে পরিচিত হয়ে গিয়েছে একমুহূর্তের জন্য। তারও বন্ধুবান্ধব এসেছে চারজন। শাবিহার মেয়ে ফ্রেন্ড এসেছে কিছু। তারাও ভেতরে চলে গিয়েছে পূর্বেই। কনে এলেই মূলত হলুদের আয়োজন শুরু হবে। তন্ময় হাত ঘড়ির পানে তাকাল। রাত আটটা বাজতে চলেছে। এখনো তৈরি হচ্ছে?
———
অরুকে দেখা গেল ডালা হাতে বেরুতে। খুব উৎসুক ওর হাবভাব। হাসিখুশি মুখ। এদিক-ওদিক প্রজাপতির ন্যায় ছুটছে। জামদানি শাড়ি পরেছে। নিশ্চয়ই উঁচু জুতো পরেছে সঙ্গে! উঁচু হিলস পরলেই এভাবে হেলেদুলে হাঁটে। চুলে বিনুনি গেঁথেছে। মোটা বিনুনি কোমরে ঝুলছে। সামনের দু'পাশে কিছুটা চুল বের করা। দেখতে সুন্দর লাগছে। বাগানে এসেই আড়চোখে কয়েকবার তার দিকেই চেয়েছে। ওই চোখদুটো হাসছে। হাসছে ওর রক্তজবা ঠোঁট। তন্ময়ের বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠল। সে যদি অরুর মতন অকপটে নিজের মনের কথাগুলো প্রকাশ করতে পারতো তাহলে এইক্ষণে বলতো,
‘এইযে এমনভাবে আড়চোখে চাস —আমার এতো ভালো লাগে কেন? এতো সুন্দরভাবে হাসবি কেন? এতো সুন্দর তোকে দেখতে লাগবে কেন? আমার বুক কাঁপে। তোর চুলের বিনুনি এতো মোটা হয় কেন? হাঁটার তালে যখন দোলে আমার ভালো লাগে দেখতে।
তোর ভ্রুজোড়া এতো সুন্দর কেন? ঠোঁটের আকৃতি এতোটা চমৎকার দেখতে কেন? আমার যে চুমু খেতে ইচ্ছে হয়। এইযে সামনে কিছু চুল দুলছে, কেন দুলবে? আমার তো হাত বাড়িয়ে কানে গুঁজে দিতে ইচ্ছে হয়।’
.
.
.
চলবে...............................................