নবোঢ়া - পর্ব ২৭ - ইলমা বেহরোজ - ধারাবাহিক গল্প


জুলফা পিছিয়ে গেল। তার বুকের ভেতরটা থরথর করে কাঁপছে। চোখের সামনে ভেসে উঠল নাভেদের মুখ। সে কথা তো কাউকে বলা যাবে না। কখনোই না। শব্দরের তীক্ষ্ণ চোখের সামনে দাঁড়িয়ে সে শুধু বলতে পারল, "আমি... আমি..."

"বলো!" শব্দরের কণ্ঠস্বর এবার পাথরের মতো কঠিন হয়ে উঠল। "কে দিয়েছে তোমাকে এই দুল?"

জুলফার চোখ থেকে অঝোরে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। সে ধীরে ধীরে পালঙ্কের কিনারায় বসে পড়ল। তার সারা শরীর অবশ হয়ে আসছিল। 

কাঁপা কাঁপা হাতে চোখের জল মুছতে মুছতে সে বলল, "আপনি কি জানেন না আমি কী করি? আমি নাচি, গান গাই। যাত্রাপালায় অভিনয় করি।"

জুলফার মনে পড়ল গত বছরের সেই দিনটির কথা। নবাবগঞ্জের বিশাল জমিদার বাড়ি। সন্ধ্যার আলো-আঁধারিতে সাজানো উঠান। চারদিকে মশালের আলো। সেখানে তাদের দল নিমন্ত্রিত হয়েছিল। জুলফা থামল, একপলক শব্দরের দিকে তাকাল। তার চোখে এখনো রাগের আগুন জ্বলছে কি না দেখার জন্য।

"গেল বছর নবাবগঞ্জের জমিদার বাড়িতে আমি লক্ষ্মীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম," জুলফা আস্তে আস্তে বলতে লাগল। "জমিদার গিন্নি খুব মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে বললেন, 'মা লক্ষ্মীর মতোই তুমি অভিনয় করেছ। তোমার কানে কোনো গহনা নেই দেখে মন কেমন করে। নাও, এই দুল তোমাকে দিলাম।'"

জুলফা একটু থেমে গভীর শ্বাস নিল। তার বুকের ভেতর হাজার সুই খচখচ করছে। প্রতিটি মিথ্যা কথা তার হৃদয়ে তীব্র যন্ত্রণা দিচ্ছিল। তবুও তাকে এগিয়ে যেতে হবে। আঁচলে চোখ মুছে সে আবার বলতে শুরু করল।

"আমি প্রথমে নিতে চাইনি। সত্যিই চাইনি।" তার কণ্ঠস্বর এখন অনুনয়ের সুরে ভরা। "তিনি জোর করে আমার হাতে গুঁজে দিলেন। বললেন, 'তুমি না নিলে আমি মন খারাপ করব। আমার মেয়ের জন্য কিনেছিলাম, সে এখন বিলেতে। তুমি আমার মেয়ের মতোই।'"

শব্দরের মুখের রেখা একটু নরম হলো। তবে জুলফার কান্না থামছিল না। এবার সেই কান্না আর অভিনয়ের নয়। এ তার যন্ত্রণার্ত হৃদয়ের গভীর বেদনার কান্না। নিজের বোনা মিথ্যার জালে নিজেই জড়িয়ে পড়েছে সে। প্রতিটি মিথ্যা এখন তীক্ষ্ণ ছুরির মতো বুকে বিঁধছে।

যদি মিথ্যে ধরা পড়ে যায় তাহলে কী হবে? তার তো কোনো বিকল্প নেই। নাভেদ তো শুধুই ক্ষণিকের স্মৃতি... তারপর সে দূরে চলে গেছে। অনেক দূরে। সামনে এখন শুধুই এই বাড়ি আর শব্দর। এই সংসার, এই চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ জীবন - এটাই তার নিয়তি। পৃথিবীর আর কোথাও তার যাওয়ার জায়গা নেই।

শব্দর ধীরে ধীরে এগিয়ে এল। তার কঠিন মুখের রেখাগুলো নরম হয়ে এসেছে। চোখে অনুশোচনার ছায়া। সে জুলফার সামনে এসে দাঁড়াল। কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে, ধীরে ধীরে জুলফার কাঁধে হাত রাখল।

"জুলফা...আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি জানি, আমি তোমাকে অকারণে কষ্ট দিয়েছি। আমার এই দোষটা কখনোই যায় না - সামান্য কিছু দেখলেই মাথা গরম হয়ে যায়। হঠাৎ তোমার কানে এত দামি দুল দেখে..." কথাটা শেষ করতে পারল না শব্দর।

একটু থেমে, গলার স্বর আরও নরম করে বলল, "তুমি এই দুল খুলে ফেলো। আমার স্ত্রীর জন্য কারও দান-দক্ষিণার দরকার নেই। আমি আছি তোমাকে সব কিছু দিতে।"

বলতে বলতেই শব্দর জুলফার কান থেকে দুল খুলে নিল। তারপর সেটা কোথায় যেন ছুঁড়ে ফেলে দিল। জুলফার বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠল। নাভেদের স্মৃতি, তার দেওয়া শেষ উপহার, সব ধূলিসাৎ হয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যে। তার হৃদয়ে অবিরাম রক্তক্ষরণ হতে লাগল, যদিও সেই ক্ষত বাইরে থেকে দৃশ্যমান নয়।

শব্দর এবার নিজের আনা হার অতি যত্নে, ধীরে ধীরে পরিয়ে দিল। জুলফার চোখে তখনও জল। সে চেষ্টা করছিল নিজেকে সামলাতে।

"কেমন হয়েছে?" শব্দর জানতে চাইল।

জুলফা ভারী গলায় বলল, "খুব... খুব সুন্দর।" তার কণ্ঠস্বরে কৃতজ্ঞতার চেয়ে বেদনাই বেশি প্রকট।

শব্দর জুলফাকে আয়নার সামনে নিয়ে গেল। তার কাঁধে হাত রেখে মৃদু হেসে বলল, "দেখো তো নিজেকে। কী অপরূপ লাগছে। তুমি খুশি তো?"

জুলফা মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। তারপর, নিজের অস্বস্তি চাপা দিতে তাড়াতাড়ি বলে উঠল, "আপনি এত রাত করে ফিরলেন। নিশ্চয়ই কিছু খাননি? বসুন, আমি খাবার গরম করে আনছি।"

শব্দরের চোখে একটা কোমল আবেগ দেখা দিল, "তোমার হাতের রান্নার স্বাদ..." একটু থেমে বলল, "শহরে থাকতে প্রতিদিন মনে পড়ত। হোটেলের খাবার খেতে গিয়ে প্রতিবার ভাবতাম, জুলফার হাতের রান্না কবে খাব!"

খানার ঘরে টেবিলে বসে অপেক্ষা করছে শব্দর। জুলফা শঙ্খিনীকে ডেকে নিল রান্নাঘরে। রান্নাঘরের নিরিবিলি পরিবেশে এসে তার সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগল। নাভেদের স্মৃতি একটা বিষাক্ত সাপের মতো মনের চারপাশে পাক খাচ্ছে। সে ভয়ে আড়ষ্ট। যদি শব্দর জানতে পারত... যদি জেনে ফেলত এই দুলের আসল ইতিহাস?

"বেগম সাহেবা? আপনার শরীর ঠিক আছে?"

জুলফা জোর করে নিজেকে সামলে নিল। "একটু মাথা ধরেছে। তুই খাবার গরম কর। আর... আর দেখ, ভাতের সঙ্গে ইলিশ মাছের ঝোল দিস। উনি খুব পছন্দ করেন।"

খাবার পরিবেশনের সময় জুলফার হাত কাঁপছিল। শব্দর খেতে খেতে মুগ্ধ কণ্ঠে বলল, "এই যে তুমি পাশে বসে আছ, আমার দিকে তাকিয়ে আছ - এতেই সব খাবারের স্বাদ দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে।"

শব্দরের কথায় জুলফার ঠোঁটের কোণে একটা ম্লান হাসি ফুটল। 
রাতে জুলফার পাশে শুয়ে শব্দর বলল, "এই কয়টা দিন প্রতি রাতে তোমার স্মৃতি নিয়ে ঘুমিয়েছি। ঘুমের মধ্যেও তোমার হাসি খুঁজেছি, তোমার স্পর্শের জন্য ছটফট করেছি।" একটু থেমে, আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে বলল, "তুমি কি একবারও আমাকে মনে করেছ?"

জুলফা মুখ ফিরিয়ে নিল। তার চোখে জল। রাতের অন্ধকারেও সেই জলের ঝিলিক দেখা যাচ্ছে। শব্দর আস্তে করে তার চুলে হাত বুলাতে লাগল। সেই স্পর্শে একটা অদ্ভুত শিহরণ খেলে গেল জুলফার সারা শরীরে।

"বলো," শব্দরের কণ্ঠে মিনতি। "তুমিও কি আমার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিলে? রাতে ঘুম আসত না? আমার শূন্য জায়গাটা দেখে কি তোমার বুকে ব্যথা করত?"

জুলফা এবার ধীরে ধীরে শব্দরের দিকে ফিরল। তার চোখের জল মুছে দিয়ে শব্দর বলল, "আমি তোমাকে কখনও কষ্ট দিতে চাই না। জানি আমার স্বভাবটা একটু খারাপ। একটু তাড়াতাড়ি রেগে যাই। আজও দেখলে তো... এই দোষটা আমার বড্ড খারাপ..."

জুলফা শব্দরের বুকে মুখ লুকাল। শব্দর তার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে আবার বলল, "আমি সন্দেহ করাতে খুব কষ্ট পেয়েছ? আমার উচিত হয়নি..."

জুলফা কিছু বলল না। তার বুকের ভেতর একটা অদ্ভুত অনুভূতি, অনুশোচনা, অপরাধবোধ, নাকি ভয়? 

শব্দর জুলফার মাথায় চুমু দিয়ে আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে বলল, "যখন একা থাকি, তখন কত কী ভাবি। ভাবি, কেন তোমার আরও আগে জন্ম হলো না? কেন আরও আগে আমাদের দেখা হলো না? কেন..." একটু থেমে, গলার স্বর আরও নামিয়ে বলল, "কেন তুমি আমার প্রেমে পড়লে না?"

জুলফা মৃদু স্বরে বলল, "আমিও ভাবি।" 

"জুলফা।"

জুলফা বুকের ভেতর থেকে সাড়া দিল, "হুঁ?"

"আমাদের এই ভালোবাসাটা কবে দুই তরফা হবে? কবে তুমি আমাকে তোমার সব কিছু দিয়ে ভালোবাসবে?"

"বাসি তো।" জুলফার কণ্ঠস্বর যেন দূর থেকে ভেসে এল। "নয়তো কী একসঙ্গে থাকতাম?"

শব্দর দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সে প্রেম কী জানে, ভালোবাসা কেমন হয় জানে। জানে সেসব অনুভূতি জুলফার মধ্যে নেই। শুধু দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ - এগুলোই আছে। তাছাড়া কিছুক্ষণ আগের ঘটনাটা... জুলফা যদিও বলেছে দুলটা কোনো এক হিন্দু জমিদার বেগম দিয়েছে, তবে তার মনে খটকা লাগছে। প্রশ্ন করতেই জুলফা অমন ভয় পেয়ে গেল কেন? মুখ এত ফ্যাকাশে হয়েই বা কেন গেল? হঠাৎ তার ধমক শুনে ভয় পেয়েছিল? নাকি অন্যকিছু? 

জুলফা সুন্দরী, অল্প বয়সী। বিয়ের পর থেকে তাকে কখনো সেভাবে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। অন্য কারো প্রতি আকৃষ্ট হওয়া কি খুব অস্বাভাবিক? শব্দর জুলফাকে আরও শক্ত করে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরল। তবে তার মনের ভেতর সন্দেহের বীজ ইতিমধ্যেই অংকুরিত হতে শুরু করেছে। 

সেদিন থেকে শব্দর জুলফার প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি নিঃশাস অনুসরণ করতে থাকল। জুলফা যখন বনের পথে পা বাড়াত, তখন সে ছায়ার মতো অনুসরণ করত তাকে। প্রতিটি মুহূর্তে তার চোখ খুঁজত কোনো সন্দেহজনক ইঙ্গিত, কোনো লুকানো ইশারা। অথচ জুলফার সরল পদক্ষেপে কোনো চাঞ্চল্য ছিল না। তার চোখে-মুখে কোনো গোপন পাপের ছায়া নেই। 

বনের নির্জন পথে জুলফা যখন একা হাঁটত, তখন মাঝে মাঝে থমকে দাঁড়াত। কখনো একটা রঙিন পাখির ডাকে মুগ্ধ হয়ে, কখনো বা একটা বুনো ফুলের সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে। তার এই সরল আনন্দ, এই নিষ্পাপ মুগ্ধতা দেখে শব্দরের মনের সন্দেহ ধীরে ধীরে ম্লান হতে থাকে। 

কিছুদিন যেতেই শব্দরের মনের গভীরে যে অবিশ্বাসের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে শুকিয়ে যেতে থাকে। প্রতিদিন জুলফার নিঃসঙ্গ পথচলা দেখে তার বুঝতে বাকি রইল না যে, তার সন্দেহ ছিল একটা ভুল, একটা অন্যায়। জুলফা মিথ্যে বলার মেয়ে নয়। 

সেই দিনটা ছিল অন্যান্য দিনের মতোই। জুলফা পুরো মহল ঘুরে বেড়াচ্ছিল, শব্দর যথারীতি তার পিছু নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো। হঠাৎ তার পা থমকে গেল। মনে পড়ল সেদিনের কথা, যেদিন প্রথম সন্দেহের বশবর্তী হয়ে সে জুলফাকে প্রশ্ন করেছিল। জুলফার চোখে তখন ফুটে উঠেছিল অবাক ভয়। সেই ভীত চোখের দৃষ্টি আজ তার কাছে নতুন অর্থ বহন করছে।

ভয় শুধু তাদেরই চোখে ফোটে, যারা কখনো পাপ করেনি। যারা মিথ্যার জাল বোনেনি, তারাই এমন ভয়ে কেঁপে ওঠে। জুলফার সেই ভীত চোখই ছিল তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ, তার নির্দোষিতার সাক্ষ্য।

শব্দর ঘুরে দাঁড়াল। জুলফার পিছু না নিয়েই নিজের কাজে বেরিয়ে গেল। বিশ্বাসের চেয়ে বড় কোনো সম্পদ নেই। আর সেই বিশ্বাস ভেঙে যাওয়ার ভয়ে যে অবিশ্বাস জন্ম নেয়, তা নিজেকেই ধ্বংস করে। এই উপলব্ধির সাথে সাথে শব্দরের মন থেকে সমস্ত সন্দেহের কালো মেঘ কেটে গেল।

দুপুরের খরতাপে পুড়ে যাচ্ছে গোটা জনপদ। সুফিয়ান ভূঁইয়ার বিশাল জমিদারির প্রাণকেন্দ্র গুদামঘর, যেখানে হাজার হাজার কৃষকের স্বপ্ন আর ভরসা জমা থাকে। সেই গুদামঘরে এসে শব্দর অনুভব করে একটা অদৃশ্য ভয়ের ছায়া, যা ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে।

ছোটবেলা থেকেই দেখেছে কীভাবে ভাইজান শুধু নিজের নয়, পুরো অঞ্চলের কৃষকদের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছেন। তার গুদামে ধান জমা রাখতে পারলে কৃষকরা নিশ্চিন্ত থাকে, জানে যে উচিত দামে বিক্রি হবে তাদের ফসল।

কিন্তু আজ সেই নিরাপত্তার বেড়া ভেঙে পড়তে চলেছে। রাজধানীর বড় ব্যবসায়ীরা একযোগে চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে। শুধু তারা নয় বিভিন্ন অঞ্চলের বড় ব্যবসায়ীরাও চুক্তি বাতিল করেছে৷ এর মানে হাজার মণ ধান পড়ে থাকবে গুদামে, আর তার দাম পড়বে তলানিতে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ছোট কৃষকদের। যারা ভরসা করে ফসল তুলে দিয়েছে গুদামে, অগ্রিম নিয়েছে সামান্য, তাদের সংসার চলবে কী করে?

সুফিয়ান ভূঁইয়ার চোখে-মুখে দুশ্চিন্তা, হাতে চিঠি। বছরের পর বছর ধরে তিনি যে বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন ব্যবসায়ীদের সাথে, তা এভাবে ভেঙে পড়ার কারণ কী? কে বা কারা এমন ষড়যন্ত্র করল যে একসঙ্গে সবাই পিছিয়ে গেল?

"দেখো শব্দর," সুফিয়ান বললেন, "এই বিপদ শুধু আমাদের নয়। আমাদের উপর নির্ভর করে আছে পাঁচশ' কৃষক পরিবার। তাদের ছেলেমেয়ের পড়াশোনা, বিয়ে, চিকিৎসা সব কিছুর জন্য তারা আমাদের কাছে আসে। আমরা যদি ভেঙে পড়ি, তাহলে এই গ্রামের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে।"

বাইরে জ্যৈষ্ঠ মাসের রোদ চড়ছে আরও। গুদামের ভেতর থেকে ভেসে আসছে ধানের গন্ধ। সেই গন্ধে মিশে আছে কত কৃষকের ঘামের গন্ধ, তাদের স্বপ্নের সুবাস। এই লড়াইটা তাকে জিততেই হবে। শুধু ব্যবসার প্রশ্ন নয়, এটা মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই।

"আমি আবার যাব রাজধানীতে। কাল ভোরেই রওনা দেব, ভাইজান," শব্দর বলল। "প্রথমে দেখা করব মতিন সাহেবের সঙ্গে। উনি সবচেয়ে বড় আড়তদার, সবাই তার কথা শোনে। তারপর যাব নারায়ণগঞ্জ। খুঁজে বের করতেই হবে, কারা আমাদের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র করেছে।"

সুফিয়ান উঠে দাঁড়ালেন, "মনে রেখো শব্দর, টাকার খেলায় মানুষ কতটা নিচে নামতে পারে, তার কোনো সীমা নেই। সাবধানে থেকো। আর যদি দেখো যে কেউ অতিরিক্ত বন্ধুত্ব দেখাচ্ছে, তাকে আরও বেশি সন্দেহ করবে।"

দূরে মাঠে কৃষকরা কাজ করছে। তাদের গায়ে লেগেছে রোদের তেজ, মুখে চিন্তার ছায়া। শব্দর ভাবছে আগামীকালের কথা। কী অপেক্ষা করছে তার জন্য রাজধানীতে? কোন অদৃশ্য শত্রুর জালে জড়িয়ে পড়েছে তাদের ব্যবসা? আর সবচেয়ে বড় কথা, কীভাবে বাঁচাবে সে এই অঞ্চলের এতো মানুষের জীবন-জীবিকা?
.
.
.
চলবে...................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন