প্রকৃতি যেন অলীক আতঙ্কে নিমজ্জিত! আনমনে বুঝিয়ে দিল চর্তুদিকে ভয়! করুণ ভয়! এই ভয় থেকে নিস্তার নেই। বাঁচা নেই। উদ্ধারও তালব্য শ দিয়ে শূন্য। বুকের ভেতর দুরুদুরু তীব্র কাঁপুনি নিয়ে বাঁশের দুয়ার খুলল সে। ধীরে ধীরে, মন্থর লয়ে, চোরের মতো তাকাল শ্রেষ্ঠা। এখনো মনে হচ্ছে আতঙ্কের ঢেউ কমেনি, হামলার বর্বরতা যায়নি, যেন ভয়াল গ্রাসে অপ্রত্যাশিত কিছু মুখিয়ে রয়েছে। পেছন থেকে ফিসফিস স্বরে তেমনি ভীতকণ্ঠে বলে উঠল রোজা,
- শ্রেষ্ঠা সাবধান! খবরদার দরজা ওভাবে খুলিস না। ওরা দেখে ফেলবে.. ওরা দেখে ফেলবে আমাদের! তাড়াতাড়ি ওটা বন্ধ কর, বন্ধ কর জলদি!
শ্রেষ্ঠা কথাগুলো শুনল না। ও তেমনি দরজা খুলে সামান্য ফাঁক করা জায়গাটা দিয়ে চোখদুটো এঁটে দিল। একেবারে নিঃশব্দে, প্রায় দম বন্ধ করে দূরের ধূঁ ধূঁ অন্ধকারে সবকিছু দেখতে লাগল। লোকগুলো আশপাশে নেই। ওদের উপস্থিতি হয়তো টের পায়নি! এদিকটা ছেড়ে অন্যদিকে নির্মম তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে। ওরা চারজন এখন বসে আছে সেলিমের কুটির থেকে সামান্য দূর, এক ভগ্ন জীর্ণ পরিত্যক্ত ঘরে। যে ঘরে অব্যবহৃত জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ঘরটা মূলত স্টোর রুম। এখানে কেউই মূলত আসে না। সেলিম ভালো করেই জানতো, এমন ভগ্ন দুর্বল ঘরে দুর্বৃত্তরা পা মাড়াতে যাবে না। বরং বাইরে থেকে সুরতহাল পর্যবেক্ষণ করে কুটিরগুলোতে ধ্বংসলীলা চালাবে। আর হয়েছেও তাই। কানে রীতিমতো আছড়ে ফেলার শব্দ, তীব্র ভাঙচুরের আওয়াজ, হৈ হৈ গলাগুলো শুনতে পাচ্ছে সবাই। ভয়ে হৃৎপিণ্ডের মাঝ বরাবর কামড় বসে যাচ্ছে! পিঠের শিরদাঁড়া দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ঠাণ্ডা শীতালু স্পর্শ! এমন সময় জিদান আরো সতর্ক স্বরে ফিসফিস করে বলল,
- শ্রেষ্ঠা, শ্রেষ্ঠা কথা শোন। দরজাটা বন্ধ কর। এভাবে বিপদ ডাকিস না। ওরা টের পেলে কুকুরের মতো জবাই করে যাবে! রেসোর্টের ম্যানেজার আমাদের ছেড়ে পালিয়ে গেছে শ্রেষ্ঠা। এই মুহুর্তে জান বাঁচানো ছাড়া আর কিচ্ছু দেখছি না! দরজাটা প্লিজ বন্ধ কর।
সরু ফাঁকে নজর বুলিয়ে ভারি বিরক্ত হয়। মুখ ভরে ভরে গালি আসে। কিন্তু পরিস্থিতির জন্য মুখ ফুটে কিছু বলে না শ্রেষ্ঠা। এদের মতো নিমোকহারাম, গর্দভ, রাম ছাগলদের সাথে একদণ্ড থাকতে ইচ্ছে করছে না। কেমন মানুষ এরা? তিনটে ব্যক্তি এখনো মৃত্যুর কার্নিশে ঝুলে আছে, সেখানে ওরা চিন্তা করছে 'নিজে বাঁচলে বাপের নাম'? চরম আক্রোশে বুঁদ বুঁদ করে ওঠা ক্ষোভ দমিয়ে নেয় শ্রেষ্ঠা। ভারি একবুক দম ছেড়ে আবারও চাইল দরজার ফাঁকে। যেভাবেই হোক এই মৃত্যুপুরী থেকে বেঁচে ফিরতে হবে! বাঁচাতেই হবে ওদেরকে!
•
রেসোর্টের উত্তরপ্রান্তের রাস্তাটায় সজোড়ে গাড়ি থামিয়েছে পার্থ। আকস্মিক ব্রেকে প্রচণ্ড ভড়কে গেছে রাফান। পেছনের সিট থেকে ধমকে ওঠার কথাটুকু মনে নেই তার। অতল বিস্ময়ে চোখদুটো স্থির করে ফেলেছে! সরাসরি তাকিয়ে আছে সামনের রিয়ার-ভিউ মিররে। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে শোয়েবের পাষণ্ড মুখ। কী বীভৎস কঠিন! বুকটা ধ্বক করে উঠল রাফানের। ঢোক গিলে দৃশ্যটা হজম করার জন্য ধীর গলায় ডাকল,
- স্যা. .স্যার,
ফোন ধরা মুঠোটা পকেটে পুড়ল শোয়েব। মাথা ঘুরিয়ে সরাসরি চাইল রাফানের দিকে। চোখের জান্তব দৃষ্টি, ঠোঁটের কাঠিন্যতা সেভাবেই অটল রেখে বলল,
- রাফান, ঠাণ্ডা মাথায় সমাধান করো। তুমি এখনি গাড়ি থেকে বের হবে। ওয়াকি টকি সেটে বেস এরিয়ায় যোগাযোগ করবে। আমার মনে হচ্ছে স[ন্ত্রা] সী হামলা। জানি না হতাহত হয়েছে কতজন। নাযীফ ছেলেটা হয়তো একা আঁটকা পরেছে। আমাদের হাতে সময় কম। বেরোও!
কথা শুনে রাফান আর পার্থ দুজনই চমকে উঠল। দুজনই কপালে ভাঁজ ফেলে শোয়েবের দিকে তাকিয়ে রইল। অদ্ভুত একটা তথ্য শুনে পার্থই প্রশ্নটা করে ওঠে,
- স্যার? শিয়োর কীভাবে হচ্ছেন নাযীফ ছেলেটা একা আঁটকা পরেছে? ওরা দলে তো সাতজন। একা তো না!
গা থেকে সিটবেল্ট খুলতে খুলতে জবাবটা দিল শোয়েব,
- জাস্ট অ্যান আইডিয়া। একা না থাকলে 'আমরা', 'আমাদের' এই ওয়ার্ডগুলো জোর দিয়ে বলতো। কিছুই বলেনি। একা আছে বলেই ভয়টা বেশি পাচ্ছে! বের হও এক্ষুণি।
কথা শুনে পরস্পর মুখ চাওয়াচাওয়ি করল রাফান আর পার্থ। ওইটুকু কথার মধ্যেও পরিস্থিতির বর্ণনা ছিল? ওরা তো কিছুই বুঝতে পারেনি! এমনকি ঠাহরও করতে পারেনি নাযীফ সম্পূর্ণ একা! অথচ, উনি ফোনকলে মাত্র দুটো কথা শুনেই একা নাকি দলবল, এই ব্যাপারটা ধরে ফেলেছে! কী ভয়ংকর কারবার! গাড়ির বাঁদিকের দরজা খুলে নির্জন রাস্তায় বেরুল শোয়েব। চাঁদের তরল জোৎস্নায় ভালো করে চারিদিকটা দেখে নিচ্ছে। রাফান ও পার্থ গাড়ির সেফজোন থেকে তিনসেট ওয়াকি টকি, তিনটে নাইন এম এম বস্তু, কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বের করে বেজ এরিয়ায় দ্রুত খবর পাঠাল। বুলেট ছোঁড়ার শব্দ এখন পাচ্ছে না শোয়েব। তবু চোখের চশমাটা ডানহাতে খুলে গাড়িতে রেখে এল সে। এই চশমা এখন তার লাগবে না। পার্থ কিছু একটা বুঝতে পেরে তখুনি ওয়াকি টকি সাইডে রেখে বলল,
- আপনি কী করতে চাইছেন স্যার? কোথায় যাচ্ছেন আপনি? ফোর্স এখনো আসেনি স্যার। আসতে কিছুটা সময় লাগবে।
নিজের ওয়াকি টকিটা কোমরের সঙ্গে আঁটকে একপলক তাকাল শোয়েব। ভণিতা না করে সরাসরি উদ্দেশ্যটা বলে ফেলল,
- আমি আগে যাচ্ছি। ভেতরে কী পরিস্থিতি হয়েছে জানা যাচ্ছে না। এভাবে হাতে হাত রেখে বসে থাকাটা আমার পক্ষে কষ্টকর। আমি এগোচ্ছি। তোমরা পেছন থেকে ব্যাকআপ নিয়ে এগোও। যদি দেখো আমার ফিরতে দেরি হচ্ছে, আমার জন্য তোমরা অপেক্ষা করবে না। সরাসরি বাড়ি ফিরে যাবে।
আকাশ থেকে ঠাস করে পরার মতো আশ্চর্য হলো পার্থ! ঠোঁটের সামনে থেকে ওয়াকি-টকি সরিয়ে অবাক কণ্ঠে শুধোল,
- আপনি কোন রুট দিয়ে এগোবেন? এন্ট্রেন্স রুট তো সম্পূর্ণ কলাপজ্। ওখান দিয়ে ঢোকা যাবে না স্যার। টু রিষ্কি। ওটা সরাসরি ওপেন ট্যাকেল!
- জঙ্গল দিয়ে ঢুকব। ওখানে কারোর চোখ পরবে না। আশা করছি পাঁচ মিনিটের ভেতর পেট্রল টিমটা এসে পরবে। তুমি রাফানকে নিয়ে ওদের যতজনকে পারো, রেস্কিউ করে ফিরে যাবে। দাঁড়াবে না। রাতের অন্ধকারে ফুল গিয়ারে না বের হলে সমস্যা পার্থ। রেসোর্টের মালিক আর ম্যানেজার কোথায় পালিয়েছে সেটাও খোঁজ করা জরুরি। আমি গেলাম সামনে, ওকে?
- ওকে স্যার।
বাড়তি প্রশ্ন না ছুঁড়ে সদা প্রস্তুত ভঙ্গিতে কাজে লাগল পার্থ। রাফান দূরে গিয়ে নেটওয়ার্ক সিগন্যাল পাবার জন্য কথা বলে যাচ্ছে। মূলত তথ্যগুলো জানাচ্ছে সেনাবাহিনীর নিকট। যেন দ্রুততম সময়ে বিচ্ছিন্ন পরিস্থিতিটা ওদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসুক।
রাতের অন্ধকারে কালো টেকটিক্যাল হুডি, হুডির নীচে সাদা টিশার্ট। মাথাটা হুডির টুপিতে ঢেকে রাখা। কমব্যাট ট্রাউজারের রাইট পকেট থেকে ধারাল ছুরিটা বের করে এগোতে লাগল শোয়েব। বাঁহাতে খুব দক্ষভাবে কাঁটাযুক্ত ঝোঁপঝাড় হটিয়ে এগোতে লাগল। বহুদিন পর এরকম সার্ভিলেন্স ভঙ্গিতে কাজ করছে সে। চোখদুটোও রাখছে ক্ষিপ্র, উদ্যম, সদা সতর্ক ভঙ্গিতে। শুকনো পাতার মচমচ শব্দ এড়াতে খুব সাবধানে ভেজা জায়গার উপর পা ফেলছে শোয়েব। এই স্বল্প জোৎস্নার মাঝেও এমনভাবে এগোচ্ছে, যেন চারপাশ দিনের মতো ফকফকে, সবকিছু তার নখদর্পণে। কোমরের বাঁদিকে আঁটকানো ওয়াকি-টকি থেকে যান্ত্রিক মৃদু শব্দ বেজে উঠল। খুব ক্ষীণ ভলিয়মে অ্যাডজাস্ট করে নেয়ায় ঘড় ঘড় জাতীয় শব্দটা চারপাশ সচকিত করেনি। আস্তে করে বাঁহাতটা চোখের সামনে থেকে সরিয়ে কোমরের বাঁদিকে নামালো শোয়েব। ডানহাতের অস্ত্রটা দিয়ে অতিরিক্ত বাড়বাড়ন্ত কাঁটার ডালগুলো সরাতে সরাতে ওয়াকি-টকিটা ঠোঁটের কাছে ধরল। তেমনি সতর্ক, তেমনি কায়দাবাজের মতো নীচুস্বরে বলল শোয়েব,
- আলফা ওয়ান। রিড ইয়্যু। বলো।
ওয়াকি-টকি থেকে আবারও যান্ত্রিক শব্দ ভেসে এল,
- ব্রাভো, দিস ইজ আলফা ওয়ান। টিম পৌঁছে গেছে। অবস্থা জানিয়ে অর্ডার দিন।
- আলফা ওয়ান, মুভ। ওভার অ্যাণ্ড আউট।
ঠোঁটের কাছ থেকে ওয়ারলেস যন্ত্রটা নামিয়ে কোমরে চালান দিল শোয়েব। স্ট্যাণ্ডার্ড রেডিয়ো ল্যাঙ্গুয়েজে কথা চালাতে হয়েছে। তার সমস্ত দেহ টেকটিক্যাল হুডিতে ঢেকে থাকায় ঝোঁপের কাঁটাগুলো চামড়া পর্যন্ত যেতে পারছে না। খুব ধীরে ধীরে অতি সন্তপর্ণে জঙ্গলাবৃত জায়গাটা শেষ করল শোয়েব। চাঁদের ফিকে আলোয় বুঝতে পারল রেসোর্টের পূর্বদিকে চলে এসেছে সে। মূল প্রবেশপথটা পূর্বদিক থেকে আরো সামনে, বলা বাহুল্য ওটা দক্ষিণদিকে। বাঁহাতে শেষ ঝোঁপটা আস্তে আস্তে সরিয়ে সামনের সুনশান জায়গাটা দেখল শোয়েব। কেউ নেই। দূরে কয়েকটি নিস্তব্ধ কুটির অখণ্ড নীরবতায় দাঁড়িয়ে আছে। চাঁদের ওপর মেঘের আড়ালপনায় জোৎস্নাটা ম্লান হয়ে এসেছে। মানুষ সেখানে আছে কিনা, নাকি জ বাই করে গিয়েছে, তা একটুও বোঝা যাচ্ছে না। কান পাতলে অনেকগুলো বীভৎস কণ্ঠের আওয়াজ পাওয়া যায়। তবে সেটা দূরে দূরে। দাঁড়িয়ে না থেকে কুটিরের জন্য পা চালাল শোয়েব। চারিদিকটা এমন ভূতুড়ে অন্ধকার, এতো গাছগাছালি, সেই গাছের ফাঁকফোঁকর দিয়ে সূর্যের আলোও যেন ঢুকতে পারবে না। নিঃশব্দ জন্তুর মতো এগোতে এগোতে একটা উঁচু কুটিরের অবস্থা দেখে কাঠের সিঁড়ি ধরে উঠল। কয়েক সেকেণ্ড অপেক্ষা করে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রইল। তার টানটান নার্ভ জানান দিচ্ছে এ ঘরে কেউ নেই, তবু সতর্কতার খাতিরে কয়েক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে রইল। তারপর ঢুকল ঘরটায়। ট্রাউজারের পকেট থেকে পেনসিন টর্চ বের করে গোল বৃত্তটা ফেলল। ঘরে কেউ নেই! ঘরের ভেতর সবকিছু পরে আছে, কিন্তু মনুষ্য অস্তিত্বই শূন্য। কুটিরটা থেকে বেরুতেই বুঝল, দুর্বৃত্তের দল এদিকটায় হয়তো আসেনি। অথবা আসলেও তেমন সুবিধে করতে পারেনি। বিশাল বড় রেসোর্টের এপাশটা ভয়ানক নিরিবিলি। কুটিরগুলোও কেমন যেন দশ বিশ হাত দূরে দূরে। রাফানরা কী করছে কে জানে, গোলাগুলিটা কেন বন্ধ তা বুঝতে পারছে না শোয়েব। চাঁদের ফ্যাকাশে আলোয় আবারও অন্য কুটিরের দিকে নিঃশব্দে ছুটল শোয়েব। এবার আপনা-আপনি সতর্ক হয়ে উঠল! কুটিরের ভেতর থেকে হালকা আওয়াজ আসছে। খুবই ক্ষীণ, মৃদু, অস্ফুট ভাবে! সুক্ষ্মভাবে কান না পাতলে শোনাই যায় না! ঘরে কী নাযীফ ছেলেটা? নাকি নৃশংসদের কেউ? কে রয়েছে?
•
ভয়ে বুকের ভেতরটা এটুকু হয়ে গেছে। নিঃশ্বাস নিতে গেলে প্রচণ্ড ভয় হচ্ছে! যেন এই নিঃশ্বাসের শব্দ বুঝি বাইরে চলে যাবে। এরপরই দলবল ওই দুর্বৃত্তরা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে যাবে। সমস্ত শরীর ভয়ে রীতিমতো কাঁপছে। ঝিমঝিম করছে হাতের তালু, পায়ের পাতা। এমন সময় দুকানে স্পষ্ট কথাগুলো শুনতে পেল সোহানা। কে যেন বিচ্ছিরি গালিতে রামধমক দিয়ে উঠল,
- না না, এই ধরণের ফাউ তইথ্য দেওন যাইব না। সবগুলারে খুঁজন মারা। পলায়া যাইব কই? রেসোর্ট এইটা বড় দেইখা এনে ওনে হান্দায়া আছে। মাগার পলাইতে হালারা পারতো না। আমার লগে তেড়িবেড়ি মারাইস না খা . . পোলা। খুঁজ ওদিরে!
আরেকটি পুরুষ কণ্ঠ তেমনি খ্যানখ্যানে গলায় বলে উঠল,
- আঁতকা পলাইলো ক্যামনে কন ভালা? আমি পুরা ছাঁকনির মতো ছাঁইকা ছাঁইকা দেখছি। আঠারোটা কুটিরের মইদ্যে এগারোটা দেহা শ্যাষ। বাকি আছে ওইদিকে কয়ডা, আর এইদিকে কয়ডা। তয় এগারোটার মইদ্যে নাকি উঠছে। এইডা নিয়া ম্যানেজারের ওই টিকটিকিরে জিগাইছিলাম। হেই টিকটিকি তো কইছিল প্রথম কয়ডাত নাকি বোঁচকা নিয়া উঠছে। তাইলে সামনের এই কুটিরগুলি খালি ক্যান? গেছে কোনহানে?
- ওই টিকটিকিরে সামনে পাইলে সত্যি সত্যি ওর লেজটা আমি কা ই ট্টা দিতাম। হালায় গিট্টু একটা মাইরা গেছে। এহন কাউরেই লাগুর পাইতাছি না।
আচমকা সিগারেটের কড়া গন্ধ পেল সোহানা। আতঙ্কে সারামুখ আরো বির্বণ হয়ে গেল। লোকদুটো ধূমপান করছে। ধূমপানের গন্ধ ও সহ্য করতে পারে না। ঠাণ্ডা হাতদুটো মুঠো করে একদম চুপ করে রইল। ভুলেও খুক করে কাশি দেওয়া যাবে না। তাহলেই বিপদ! চরম বিপদ! লোকদুটো ওকে দেখতে পায়নি এখনো। শব্দ টব্দ না করলে এ যাত্রা বোধহয় বেঁচে যেতে পারে। চার ফুটের দুটো সাউণ্ড বক্সের পেছনে লুকিয়ে আছে ও। জায়গাটা ওরা একবার চেক করে গেছে। তখন অবশ্য সোহানা এখানে ছিল না। সোহানা ছিল কলপাড়ের বাঁধানো জায়গাটার দিকে। বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি নলকূপ ঘেরা জায়গাটায় ভাগ্যক্রমে একটা বেড়া ভাঙা ছিল। সেই বেড়ার ওপাশে একচিলতে পা রাখার মতো জায়গা, তারপর ঢালু হয়ে যাওয়া খাদ। ভাঙা বেড়া দিয়ে আড়াল হয়ে ওইটুকু একচিলতে জায়গায় প্রাণটুকু বাঁচায় ও। লোকগুলো যখন বাঁধানো জায়গাটায় নজর বোলাল, তখন কাউকে দেখতে পায়নি তারা। তবে সোহানা জানে নাযীফ ওকে ফেলে যায়নি। ও নিশ্চয়ই আশেপাশে আছে। এমন সময় লোকগুলো হন্যে হয়ে আরেকদিকে দৌড় দিলে সাবধানে তাকাল সোহানা। অবস্থা সুনশান দেখে তাড়াতাড়ি একছুট দিয়ে বাঁদিকের কুটিরগুলোতে পৌঁছে গেল। হাঁপাতে হাঁপাতে হাতের উল্টোপিঠে ঘর্মাক্ত কপাল মুছল। ঘরে ঢুকল সে। অন্ধকারে কিছুই দেখতে না পেয়ে ডাকল ছাড়ল সোহানা। মৃদু, হালকা, অস্ফুট স্বরে ডেকে উঠল,
- না..নাযীফ? নাযীফ, তুমি কোথায়?
ভয়ে দুরু দুরু করে বুক কাঁপছে। চোখে আতঙ্কের ছাপ লেগে অসহায় দেখাচ্ছে। আরো এক কদম এগোতে গিয়ে হঠাৎ খসমস শব্দ পেল ও! সঙ্গে সঙ্গে সটান দাঁড়িয়ে স্তব্ধ বনে গেল। কে যেন পেছনে দাঁড়িয়ে আছে! ধুপ . . ধুপ করে সিঁড়ি ভেঙে উঠছে। প্রবল ভয়ে সমস্ত শরীর হিম হয়ে গেলে ঢোক গিলে পিছু ফিরল সে। মৃত্যুকে চোখের সামনে দেখার মতো আতঁকে উঠতে যেয়ে তৎক্ষণাৎ ফুপিয়ে উঠল সোহানা! নীচের ঠোঁট কাঁপাতে কাঁপাতে বলে উঠল সে,
- শ. . শোয়েব স্যার! ওরা.. রাতে. . আমরা . . গ্রিল পার্টি. .
পেনসিল টর্চটা বন্ধ করে এগিয়ে এল শোয়েব। মাথায় আশ্বস্তের হাত রেখে হালকা ভাবে বলল,
- বাকি ছ'জন কোথায়? তুমি ঠিক আছ সোহানা? এসো। বেরিয়ে এসো। শব্দ কোরো না।
চোখের পানি হাতের উল্টোপিঠে মুছে নীচে নামল সোহানা। গলায় কান্নার ডলাটা আঁটকে এলেও সামলে নিল সে। শোয়েব বুঝতে পারছে না এরা এমন বিচ্ছিন্ন কেন। আলাদা হয়ে কেন একেকজন একেকদিকে ছড়িয়ে গেছে। একটা মোক্ষম জায়গা পেয়ে সেখানে কাভার নিয়ে ওকে বসতে বলল। একে একে জিজ্ঞেস করল সবাই আলাদা কেন, বাকিরা কোথায়, ওরা একসঙ্গে কী করছিল। সোহানা স্ববিস্তারে আস্তে আস্তে সবকিছু বলে চলল। যতক্ষণ ফিসফিস করে বলছিল, ততক্ষণ শোয়েব সমস্তই শুনতে শুনতে অন্যত্র সতর্কও থেকেছে।
- আমরা সবাই যার যার মতো ঘরে ছিলাম স্যার। সন্ধ্যার একটু পর রোজা বলল সুইমিং পুলের ওদিকটায় বেস্ট হয়। ওখানে গ্রিল বসিয়ে খাওয়া দাওয়া করলে মন্দ হয় না। জাস্ট ফিশ, চিকেন আর বিফ স্টেক। সব আয়োজন নিয়ে ছেলেরা তখন ভালোই ব্যস্ত। ওরাই মিলেমিশে কাঠ, কয়লা, মশলা এসব বুঝে বুঝে আনছে। আমরা মেয়েরা স্পটে বসে সবকিছু গোছগাছ করে দিচ্ছি। রেসোর্টের ম্যানেজার হঠাৎ এসে জানালো, আজ নাকি কারেন্ট থাকবে না। আটটা কী নয়টার পর কারেন্ট চলে যাবে। কোথায় নাকি কী যেন শর্ট সার্কিট দেখা দিয়েছে, তা নিয়ে কাজ চলবে। আমরা কিছুক্ষণ হম্বিতম্বি করলেও ব্যাকআপ হিসেবে হারিকেন, মোমবাতি এসব তখন জোগাড় করে নিই। আমাদের রান্নাও সবে শুরু। আপনি তো জানেন, আমাদের দলের একজন হসপিটালাইজড ছিল। অসুস্থতার কারণে। ওর নাম জানা। জানা এসব কয়লার ধোঁয়া সহ্য করতে পারে না। ওর কাছে দম বন্ধ লাগে। জানা যখন কুটিরে যেতে চাইল, তখন ওকে রেখে আসার জন্য নাযীফ উঠে। নাযীফ তখন আমাকেও বলে সঙ্গে আসতে। একা একা ফিরে আসতে ওর ভালো লাগবে না। তখন আমিও ওদের সঙ্গে যাই। রেসোর্টটা অনেক বড় আর বিশাল। আমরা চাচ্ছিলাম না কোনো বাজে ইনসিডেন্ট হোক। মানে জানেন তো স্যার, রেসোর্টের লোকগুলো অনেকসময় বদ, বদমাশ হয়ে থাকে। এই ভয়ে আমি আর নাযীফ জানার সঙ্গে যাচ্ছিলাম। আমরা চাচ্ছিলাম না একা একা পাঠিয়ে কোনো স্টাফ দ্বারা আক্রান্ত হোক। ওকে কুটিরে পৌঁছে দিয়ে আমি আর নাযীফ একত্রে ফিরি। হঠাৎ তখন মনে পড়ে, সয়া সসের বোতলটা আনা হয়নি। সেলিম ওটা আনতে বলেছিল। বেমালুম ভুলে যাওয়ায় নাযীফ নিজেই আনার কথা বলে। আমাকে কিছুটা এগিয়ে দিয়ে ও সস আনতে চলে যায়। এরপরই মেইন গেট দিয়ে গোলাগুলি শুরু! আমি কিছু বুঝতে না পেরে দৌড়ে পালাই। এরপর কে কোথায় চলে গেছে, কোথায় আছে, তারপর কিছু জানি না স্যার। এটাও জানি না, ওরা কী আমাকে একা ফেলে গেছে কিনা।
সব শোনার পর সোহানার দিকে তাকাল শোয়েব। মেয়েটা বড্ড ভয় পেয়েছে। মাথার উপর হঠাৎ বাজ পরার মতো ঘটনাটা ঘটেছে। যারা কোনোদিন কখনো বিপদে পরেনি, তারা আঁচও করতে পারবে না এর অনুভূতি কতটা ভয়ানক। শোয়েব ওকে নির্ভার করার জন্য নিজস্ব অনুমানটা জানিয়ে দিল,
- তোমার বন্ধুদল কেউ পালায়নি। সবাই এখানেই আছে সোহানা। হয়তো কেউ কাছে লুকিয়েছে, কেউ হয়তো দূরে। পালিয়ে যে যায়নি এটা শুনে ঠাণ্ডা হও। তোমার আরেক বন্ধু, যে তখন কুটিরে ফিরছিল, তার কুটিরটা কতদূর? এই বাগান থেকে কোনদিকে?
কূর্তির একপ্রান্ত তুলে চোখ মুছছিল সোহানা। এখন বসে আছে ঘাসের উপর, বাগানের মধ্যে। চোখদুটো মুছতে মুছতে আশেপাশে দেখে নিয়ে বলল,
- এখান থেকে ভালোই দূর। ও সবার থেকে দূরের কুটিরটা বেছে নিয়েছে। আমরা চারজন কাছাকাছি ছিলাম। দুজন ছিল মাঝের দিকে। আর জানা ছিল সবার দূরেরটায়। ওই যে,
সোহানা ডানহাত তুলে তর্জনী উঁচু করে দেখাল,
- ওই রাস্তাটা দিয়ে এগোলে আপনি কুটিরে পৌঁছুতে পারবেন। শুনেছি ওই কুটির থেকে দূরের পাহাড়গুলো আবছা আবছা দেখা যায়। মূলত পাহাড়ের লোভেই ও কুটিরটা পছন্দ করেছে। এখন ওই রাস্তা দিয়ে . . .
বলতে বলতে সোহানা হঠাৎ কেন যেন আঁটকে গেল। কথাগুলো আর বলতে পারল না। শোয়েবের ওই স্থির চাহনির দিকে চেয়ে সোহানাও সেদিকে লক্ষ করে তাকাল। এরপরই ভয়ে ' ও খোদা ' বলে আতঁকে উঠল সে। কালো মুখোশ পরা একটা লোক সরাসরি বন্দুক উঁচিয়ে আছে। বন্দুকের নল শোয়েবের বুকে তাক করা। ট্রিগারে আঙুল!
•
কান ফাটানো শব্দে চারধার গমগম করে উঠল! ওই শব্দের জোর এতোই বেশি ছিল যে, গাছের পাখিরাও যেন উড়াল দিয়েছে। ভীত হয়ে দিগ্বিদিক দিশাহারার মতো পালাচ্ছে। বুলেটের আওয়াজ যেন একের পর এক গর্জন করে উঠছে। মুহুর্তের ভেতর রাতের অন্ধকার যেন এক অনামা রণক্ষেত্রে পরিণত হলো। জোৎস্নার আলো মিইয়ে গেছে। চর্তুদিকে নিশ্চিদ্র আঁধার। সেই আঁধারকে সঙ্গী করে উদভ্রান্তের ছুটে পালাচ্ছে সেলিমরা। পায়ে পায়ে প্রচণ্ড শব্দে মুখর হয়েছে রেসোর্ট। অন্যদিকে রাফানরা ঢুকে পরেছে কুটিরে। একের পর এক কুটিরে চালিয়ে যাচ্ছে অভিযান। যে বা যারা কালো মুখোশ পরে দুর্বৃত্তের মতো ঢুকেছিল, তারাও যেন অতর্কিত ঘটনায় স্তব্ধ! বুঝতেই পারছে না আইন শৃঙ্খলা বাহিনি কীভাবে খবরটা পেল! সবার শেষে যে কুটিরগুলোর অবস্থান ছিল, সেদিকে দৌড় লাগিয়েছে সেলিমরা। হঠাৎ মাঝপথে গতি থামিয়ে বাঁদিকে চাইল। রোজা হাঁপাতে হাঁপাতে ঘর্মাক্ত মুখে বলল,
- এটাই নাযীফের! নাযীফের কুটির!
কথাটা ওদের দিকে বলেই চেঁচাতে লাগল রোজা। জোরে জোরে নাযীফকে গলা ফাটিয়ে ডাকল,
- নাযীফ, নাযীফ তুমি শুনতে পাচ্ছ? নাযীফ এক্ষুণি বেরোও, জলদি করো! আমরা তোমাকে নিতে এসেছি।
শ্রেষ্ঠা ততক্ষণে দৌড়ে উঠে গেছে। ধপ ধপ করে সিঁড়ি ভেঙে উঠতেই পেছন থেকে জিদানও ছুট দিয়েছে। কী ভেবে সেলিমও দাঁড়াল না। নাযীফের কুটির বরাবর দৌড় লাগাল সে। একা একা রোজা কী করবে ভেবে না পেয়ে নিজেও ছুটে গেল। শ্রেষ্ঠা ভেতরে ঢুকে দেখল, নাযীফ মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে বসে আছে। ওর পাশে অজ্ঞাত এক লোক! বোধহয় লোকটা খোঁজ পেয়ে ঠিকই এ ঘরে এসেছিল, কিন্তু মোক্ষম সময়ে লোকটাকে আহত করে নাযীফ। কিন্তু এর বিপরীতে মাথায়ও প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে বসে। লোকটা নিজে আহত হবার আগে নাযীফকেও রক্তাক্ত করে গেছে। শ্রেষ্ঠা ছুটে এসে নাযীফের মাথাটা তুলে ধরল। গলায় মাফলারের মতো প্যাঁচানো ওড়নাটা খুলে ওর মাথায় বেঁধে বলল,
- চল বন্ধু। কিছু হয়নি। সামান্য আঘাত পেয়েছিস। ছোটবেলায় এসব ছোটখাট আঘাত পেয়েছিস নাযীফ। উঠে পড়।
লোকটাকে ঠেকাতে গিয়ে শরীরে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছে নাযীফ। মূলত ফোনটা করার মাঝেই ধরাটা খেয়েছে সে। জোরে জোরে কথা বলতে গিয়ে বাইরে থেকে একজনকে বুঝিয়ে ফেলে। সেই অজ্ঞাত হামলাকারী ঘরে ঢোকে ঠিকই, কিন্তু একজন হয়ে ঢোকে। দলবল বা সঙ্গী-সাথী না থাকায় তেমন ভয়াবহ কিছু ঘটেনি। নাযীফ উঠে দাঁড়ালে জিদান আর সেলিম এসে ধরল। ডানহাতটা তুলে নিল সেলিম, বাঁহাত বুঝে নিল জিদান। দুদিক থেকে দুজন ধরে ওকে ঝটপট ঘর থেকে বের করে আনল। এমন সময় শ্রেষ্ঠা আবারও ছুটে যেতে নিতে হাতটা খামচে ধরল কেউ। শ্রেষ্ঠা মুখ ঘুরিয়ে পিছু চাইলে রোজাকে দেখতে পেল। রোজা মাথাটা ডানে বামে নাড়িয়ে 'না' ভঙ্গিতে ইশারা করছে। দলের বাকিরা তখন রোজার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। শ্রেষ্ঠা যেন অন্ধকারে ডুবল। ওরা কী আরেকজনকে বাঁচাতে চাইছে না? শেষ কুটিরে যে মানুষটা বন্দি আছে, তাকে উদ্ধার করবে না? এ কেমন নিষ্ঠুরতা? কেমন স্বার্থপর ভঙ্গি? শ্রেষ্ঠা হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়াতে চাইলে রোজা কঠিন গলায় বলল,
- ওকে ওর মতো ছাড়। যে আমাদর সঙ্গ ছেড়ে একাই থাকতে ভালোবাসে, তাকে আমরা টেনেটুনে নিয়ে আসব কেন? নিজের ইচ্ছে হলে নিজেই উদ্ধার হয়ে যাবে। নিজের ইচ্ছে না হলে না।
শ্রেষ্ঠা অবাক হয়ে ভাষাই যেন হারিয়ে ফেলে। বাকরুদ্ধ কণ্ঠে কিছুই বলতে পারে না। গলায় কাঁটা বিঁধার মতো অসহায়ত্ব নিয়ে বলল,
- আমি বিশ্বাস করতে পারছি না . . . আমি বিশ্বাস করতে পারছি না তোদের আচরণ এতো নিকৃষ্ট! বিপদের দিনে এইভাবে তোরা মানুষকে ঠেলে দিবি!
চূড়ান্ত সীমার আশ্চর্য নিয়ে ঢোকটা গিলে ও। এই মর্মান্তিক পরিস্থিতিতে মানুষের চেহারা যেন দেখতে পেল। যে চেহারা মানুষের মতোই, কিন্তু আসলে মানুষ নয়। রাগে, ক্ষোভে, প্রচণ্ড আক্রোশে হাতটা ঝাড়া দেয় শ্রেষ্ঠা। ছাড়িয়ে নেয় নিজেকে। এমন সময় পেছন থেকে শাওলিন ডেকে উঠল,
- দাঁড়াও শ্রেষ্ঠা,
মাথা ঘুরিয়ে পিছু তাকায় শ্রেষ্ঠা। শেষ মাথার ওই কুটির থেকে মুখটা দেখা যাচ্ছে ওর। হালকা গোলাপি রঙের জামা। সাদা ধবধবে পাজামা। ডানকাঁধ ছুঁয়ে ওর সাদা ওড়নাটা ঝুলছে। শাওলিন কী বুঝতে পেরেছে ওরা ওকে ছেড়ে যাচ্ছে? ও কী অতোদূর থেকে আঁচ করেছে, ওকে নেওয়া হচ্ছে না? সিঁড়ি ভেঙে নেমে আসছে শাওলিন। ওকে ছুটে আসতে দেখে পেছন থেকে রোজা বলে উঠল,
- আমি বলেছিলাম, নিজের ইচ্ছে হলে নিজেই উদ্ধার হয়ে যাবে। এখন ও নিজেই এসে পরেছে। আর দাঁড়িয়ে থাকিস না, চল!
তাগাদা দিয়ে সবাই দৌড় লাগাল। শ্রেষ্ঠার ডান কবজিটা খামচে ধরে দৌড় দিল রোজা। বারুদের গন্ধ মিলেমিশে বাতাস ভারি হয়ে যাচ্ছে। নিঃশ্বাস নেওয়া যাচ্ছে না। ধোঁয়ায় ঢেকে পরেছে চারপাশ। সেই ধোঁয়ার মাঝ দিয়ে বেদম ছুটতে ছুটতে আচমকা একঝলক পিছু ফিরল শ্রেষ্ঠা। যে দৃশ্যটা দেখতে পেল, তাতে শিরদাঁড়া বরাবর কেঁপে উঠল ওর! চিৎকার করে কিছু বলে ওঠার পূর্বেই রাফানদের হাত ওদের টান দিয়ে ফেলল!
.
.
.
চলবে......................................................