আমি যখন কলেজে পড়তাম তখন হােস্টেলে থাকতাম। শুধু তাই নয়, গণরুমে থাকতাম। যারা সরকারি স্কুল কলেজের হােস্টেলে থেকেছেন। অথবা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থেকেছেন তারা জানেন গণরুম কী? যারা জানেন না তারা এই উপন্যাসের প্রথম পর্বেই জেনে যাবেন। হােস্টেলে থাকাকালীন দুই বছরই আমি গণরুমে থেকেছি। আমি ভীষণ মিশুক হওয়ার কারণে শত শত মেয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে, খাতির হয়েছে। আমি প্রায় সকলেরই কথা রাখার বাক্স ছিলাম, শ্রোতা হিসেবে আমি উচ্চ পর্যায়ের। একজনের কথা আরেকজনকে বলতাম না বলেই হয়তাে আমি তাদের নির্ভরতার জায়গাটা অর্জন করতে পেরেছিলাম। এরা সকলেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে। একেকটি মেয়ের জীবন, পরিবার, মানসিকতা ছিল একেক রকম। একেকজনের গল্প শুনতাম আর অবাক হয়ে ভাবতাম, পৃথিবীতে আমাদের ভাবনার বাইরে এতকিছু ঘটে যায়? এর মধ্যে গুটিকয়েক মেয়ের জীবনের ঘটনা এবং তাদের চিন্তা-ভাবনা আমাকে রীতিমতাে ব্যথিত করে তুলত। দিন যত যেতে লাগলাে আর আমি বড় হতে লাগলাম, আরাে বেশিসংখ্যক এ ধরণের মেয়েদের সাথে পরিচিত হতে লাগলাম। এর মধ্যেই আমি লেখালেখি শুরু করেছি। তখন ভাবলাম আমার এদেরকে নিয়ে কিছু লিখতেই হবে। আমি কী ধরনের মেয়েদের কথা বলছি তা এখানে বিস্তারিত লিখতে পারছি না, আপনারা উপন্যাসটি পড়লেই বুঝতে পারবেন। বলা যায় মহাযাত্রা আমার ড্রিম প্রজেক্ট। আমার যত লেখা রয়েছে তার মধ্যে এই উপন্যাসটি লিখতে আমার সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছে। একটি উপন্যাস লিখতে লিখতে সেই উপন্যাসের চরিত্রগুলাে লেখকের পরিবারের সদস্যদের মত হয়ে যায়। তাই তাদের আনন্দে লেখক আনন্দ পায়, তাদের কষ্টে কষ্ট পায়। উপন্যাসটি পড়ে একটি মেয়েও যদি কোনাে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে তবে আমার এত কষ্ট করে এত বড় উপন্যাস লেখা সার্থক হবে। মহাযাত্রায় মূল চরিত্রের নাম প্রাণাে। প্রাণাের জন্মদিনের দিন তার জীবনে একটি বিশেষ ঘটনা ঘটে। রূপক অর্থে ধরা যায়, সেদিন তার নতুন করে জন্ম হয়েছে। আগের প্রাণাের সাথে এই প্রাণের কোনাে মিল নেই। আমি চাই মেয়েরা নতুন প্রাণাের মত আত্মবিশ্বাসী, আত্মসম্মানবােধ সম্পন্ন, পরিশ্রমী এবং স্বপ্নবাজ হয়ে উঠুক।
মৌরি মরিয়ম
সব বইয়ের মত মহাযাত্রা দ্বিতীয় খন্ডেরও সম্পূর্ণ কাহিনী, কিছু দৃশ্য ও সংলাপ আগে থেকেই ভাবা ছিল। তারপরেও কিছু দৃশ্যে গিয়ে আমি ভেবে রাখা জিনিস লিখতে পারিনি আবার না ভাবা জিনিসও লিখতে হয়েছে। কারণ টা হচ্ছে প্রাণো। সে উপন্যাসের চরিত্র থেকে কখন যেন আমার কল্পনায় বাস্তব চরিত্র হয়ে উঠল। দিনশেষে প্রাণো যেটা চেয়েছে আমি সেটাই লিখতে বাধ্য হয়েছি। মহাযাত্রা আমার এবং আমার পুরোনো পাঠকদের জন্য বিশেষ একটি উপন্যাস। পাঠকেরা অধীর আগ্রহে দ্বিতীয় খন্ডের জন্য অপেক্ষা করে আছে। তা নাহলে হয়তো এবছর বইটি আনতামই না। কারণ এবছর দুই বার কোভিডে আক্রান্ত হয়েছি। লেখার মত অবস্থা ছিল না দীর্ঘদিন। উপন্যাসটি লেখার সময় আমার সাথে আমার মাও রাত জেগেছে। আমি অসুস্থ তাই মা একটু পর পর কখনো চা, কখনো গরম পানি দিত। লেখার নেশায় ডুবে আমি ক্ষুধার অনুভূতি ভুলে যেতাম। মা খাবার এনে দিলে বুঝতাম ও আচ্ছা ক্ষুধা লেগেছে তো! যাই হোক, মহাযাত্রা দ্বিতীয় খন্ড লেখার জার্নি খুব বেশি কঠিন ছিল।
মৌরি মরিয়ম