এই মুহূর্তে আমি বাবার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছি। তিনি ফোনে কথা বলছেন। কথা শেষ হলেই আমি ভেতরে ঢুকব। এমনিতে তিনি বাড়িতে থাকলে, পারতপক্ষে আমি আমার ঘর থেকে বের হই না। কিন্তু আজ তার সাথে আমার বিশেষ আলাপ আছে। রেগে থাকলে আমার ভয়ের অনুভূতি কাজ করে না। আপনারা কী ধারণা করেছিলেন জানি না। তবে আমার ধারণা সত্য হয়েছে। আমার বাবা ফটোওয়ালা আফতাবকে আমার পাত্র হিসেবে নির্বাচন করেছেন। ঠিক এই আশঙ্কাতেই ওই লোকের সাথে বাবার অমন দহরম মহরম আমার সহ্য হচ্ছিল না। ফার্স্ট ইম্প্রেশন ইজ দ্যা বেস্ট ইম্প্রেশন। তার প্রতি আমার ফার্স্ট ইম্প্রেশনটাই অনেক বাজে ছিল। কারও অনুমতি না নিয়ে তার ছবি তোলাটা অভদ্রতা। আর সেই অভদ্র ব্যক্তির ভদ্রতায় মুগ্ধ হয়ে গেছেন আমার বাবা।
বাবার কথা বলা শেষ হলে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
"তিন্নি কি কিছু বলবে?"
"জি বাবা।"
"ভেতরে এসো।"
আমি বাবার পাশে গিয়ে বসলাম। কথাটা কিভাবে শুরু করব বুঝতে পারছিলাম না। বাবা জিজ্ঞেস করলেন,
"বলো কী বলবে।"
আমি অনেকটা সাহস সঞ্চার করে নিয়ে কথা শুরু করলাম,
"বাবা আমি আফতাব সাহেবকে বিয়ে করতে চাই না।"
বাবা হয়তো কোনভাবেই আশা করেননি যে আমি এমন কিছু বলবো। গতকাল যখন তিনি মায়ের মাধ্যমে আমার কাছে প্রস্তাবটি পাঠিয়েছিলেন তখন আমি কোন উত্তর দিইনি। তারা হয়তো নীরবতা সম্মতির লক্ষণ বলে ভেবে নিয়েছিলেন। কিন্তু আমি সরাসরি বাবার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম।
আমার কথা শুনে তিনি বললেন,
"কারণ কী? তোমার বিয়ের বয়স হয়নি এমন তো না।"
"বাবা ব্যাপারটা তা নয়। ওনাকে আমার ভালো লাগে না।"
"কেন ছেলেটা ভালো চাকরি করে, দেখতে শুনতে ভালো, ফ্যামিলিও ভালো। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি।"
"আমার ভালো লাগেনি। একেবারেই না।"
"তোমার কি কোনো পছন্দ আছে? থাকলে বলো । আমি কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই তোমার বিয়ের কথা ভাবছিলাম। স্কুল কলেজে যখন তোমার বিয়ের প্রস্তাব এসেছে আমি নিজেই মানা করে দিয়েছি। কিন্তু এখন তোমার বিয়ের উপযুক্ত সময়। সময়ের কাজ সময়ে করতে হয়।"
"বাবা আমার কোনো পছন্দ নেই। আমি শুধু ওই লোকটিকে বিয়ে করতে চাচ্ছি না। তুমি যদি একান্তই এখন আমার বিয়ে দিতে চাও তাহলে অন্য ছেলে দেখো। আমি অবশ্যই বিয়ে করব, তবে যাকে বিয়ে করব তাকে তো আমার পছন্দ হতে হবে।"
"বুঝতে পেরেছি। ঠিক আছে তাহলে আফতাব বাদ। তবে তোমার যদি কোনো পছন্দ থেকে থাকে, ভয় না করে বলো। আমি খোঁজ খবর নিয়ে দেখি।"
"তেমন কেউ নেই বাবা।"
"তাহলে আমি বরং অন্য ছেলে দেখি। এত তাড়াহুরোর কিছু নেই।"
আমি সত্যিই ভাবিনি বাবা আমার কথা এত সহজভাবে মেনে নেবে। ভীষণ আনন্দ হচ্ছিল আমার। আমি খুশিতে বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম। বাবা বোধ হয় একটু বিব্রত বোধ করলেন তবুও আমি তাকে ছাড়লাম না।
.
.
.
চলবে.................................................