মাই মিস্টিরিয়াস প্রিন্স - পর্ব ০৭ - মৌমিতা মৌ - ধারাবাহিক গল্প


বেশ কয়েক মাস আগের কথা,

শীতের শেষ সময়ে কুয়াশা কমই দেখা যায়, অল্প স্বল্প ঠান্ডা শীতল হাওয়া গায়ে দোলা লাগিয়ে অদূরে চলে যায়, মনের এক কোণায় শীত শীত অনুভূতির জন্ম দেয়, তবে সূর্য্যিমামাও অন্যপাশে তাপ দিয়ে শীতের অনুভূতি অল্প করে ঘুচিয়ে দেয়। বাতাসে নিঃশ্বাস ফেললে আগের মতো ধোঁয়া ধোঁয়া দেখা যায় না। শরীরের মধ্যে শুধু হাত দুটো শীতের কাতরতায় অল্প কাঁপতে থাকে, ঠোঁটের ফাটা অংশ ধীরে ধীরে সয়ে যেতে থাকে। হুটহাট জ্বর আসা, ঠান্ডা লাগাটাও কমে কমে যায়। দুপুর দুপুর সময় ঘড়িতে। এই অসময়ে পরীক্ষার কারণে ভার্সিটিতে আসতে হয়েছে অনন্যাকে। ভালো লাগে না তাও আসা। প্রথম কারণ তো কুইজ পরীক্ষা কিন্তু দ্বিতীয়? অনন্যা মিটিমিটি হাসলো। দ্বিতীয় কারণটা তার ভালো লাগার। আরণ্যককে একবার হলেও চোখের সামনে দেখা, এটাই অনন্যার দ্বিতীয় কারণ।

আরণ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, যাকে প্রায় সবাই এক নামে চেনে, পছন্দ করে এবং শ্রদ্ধা করে। তার ব্যক্তিত্বের মাধুর্যে যেন এক অদৃশ্য আকর্ষণ, যা সহজেই সবার মন জয় করে নেয়। তার এক কথায় মেয়েরা মুগ্ধ হয়ে যায়, আর ছেলেরাও তার বৃহৎ খ্যাতির কারণে আরণ্যকের সিদ্ধান্ত বা মতামতের বিপক্ষে কিছু বলতে সাহস পায় না।

অনন্যা বুঝে পায় না, গুণে গুণে এসব ফেমাস ছেলেদের ই কেনো তার পছন্দ হয়ে যায়? যদিও এটাই তার প্রথম! আরণ্যককে পছন্দ করা আর ছেলেটার সাথে সম্পর্কে জড়ানোর পর ভয়ংকর সময় কাটে অনন্যার। আরণ্যক কখনোই চায় না, সকলের সামনে অনন্যাকে নিজের গার্লফ্রেন্ড হিসেবে পরিচিতি দিতে। তাই ভার্সিটিতে সরাসরি তাদের কথাবার্তাও খুব কম হয়। যা হয় সব ফোনের এসপার - ওসপারের মাধ্যমেই। অনন্যাও চায় না, সে ভার্সিটিতে সবার মুখ্য শত্রু হয়ে থাকুক। যেহেতু আরণ্যককে অনেক মেয়েরা মন দিয়ে বসে আছে আর ছেলেটার সাথে কথা বলার জন্য অনেকে উৎসুক হয়ে বসে থাকে, সেক্ষেত্রে যদি তারা জানতে পারে অনন্যা আরণ্যকের গার্লফ্রেন্ড তখন নিশ্চয়ই একটা হুলস্থূল কাণ্ড ঘটে যাবে? এই বিষয়ে একদম নিশ্চিত অনন্যা।

অনন্যার পাক্কা বেস্ট ফ্রেন্ড নোহারা। নোহারাই একমাত্র যে অনন্যার পছন্দ সম্পর্কে অবগত। যদি সঠিকভাবে বলা হয়, অনন্যার খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে ওর পরিবারের আগে নোহারা সুনিপুণভাবে অবগত। দু'জনের ফ্রেন্ডশিপটা মূলত কলেজ থেকেই। ভার্সিটিতে একসাথে ভর্তি হয়ে বন্ডিংটা আরো জোরদার হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে যদি - ইয়ে বান্ধন তো প্যায়ার কা বান্ধন হে গানটা ব্যবহার করা হয় তাতেও কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। 

অনন্যা নোহারার সাথে ভার্সিটির পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছে, তখনই তার মুঠোফোনটা বেজে উঠলো। সে ফোনটা ব্যাগ থেকে বের করতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো, তখনই নোহারা হাত টেনে ফিসফিস করে বললো,
"তোর প্রেমিক এসেছে।"

অনন্যা নিজের রেডমি ফোনটা বের করে সামনে দৃষ্টি রাখলো। কিছু দূরেই দাঁড়িয়ে থাকা শ্বেত রঙের জ্যাকেট আর ডেনিম জিন্স প্যান্ট পরে থাকা আরণ্যক ফোনের দিকে ইশারা করলো। অনন্যা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো আরণ্যক ই কলটা করেছে। সে কল রিসিভ করে কানে ধরে রাখলো। আরণ্যক বেশ রোমান্টিক মিশ্রিত স্বরে ডাকলো,
"অনুউ!"

অনন্যা হাসলো, বেশ মিষ্টি হাসি। উজ্জ্বল শ্যামলা গালটা মৃদু লাল হতে থাকলো। 
আরণ্যক অনন্যার চোখে চোখ রেখে বললো,
"খুব সুন্দর তুই!"

অনন্যা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বললো,
"তোমার আশেপাশে কেউ শুনে ফেললে ঝামেলা বাঁধতে পারে। "

"উমম! হলে হোক! আচ্ছা অনেক দিন হ্যাং আউট করা হয় না। আজ বের হবি?"

পাশে নোহারা হঠাৎ অনন্যার পোশাক টান মেরে বললো,
"দোস্ত, কে জানি আসছে! সবাই জায়গাটায় জড়ো হয়ে পড়ছে। আমি যাই?"

অনন্যা চোখ ফিরিয়ে একবার দেখতে চাইলেও আরণ্যকের স্বর তাকে থামিয়ে দিলো। 
আরণ্যক বললো,
"কিরে? কোথায় হারালি?"

"হুম!

হঠাৎ সব স্টুডেন্টরা সরু রাস্তা দিয়ে ছুটতে লাগলো। অনন্যার উত্তর শোনার আগেই নোহারা তাদের পিছু পিছু হাঁটা ধরেছে। সবার ছোটাছুটি দেখে অনন্যা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। সবাই হাঁটতে হাঁটতে মেইন গেটের দিকে পা বাড়িয়েছে।

অনন্যা কিছু চিন্তা করার আগেই তার হাতের কব্জি ধরে কেউ টেনে নিয়ে যেতে থাকলো।

"এই! কী হচ্ছে?"

তার চিৎকারের মাঝেও টান থামল না। অনন্যা হতভম্ব হয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো সাদা জ্যাকেট পরা আরণ্যককে।

আরণ্যক কোনো কথা না বলে তার হাতটা শক্ত করে ধরে ভিড়ের মধ্য দিয়ে তাকে নিয়ে এগিয়ে চললো। অনন্যা পিছন ফিরে নতুন আগন্তুককে দেখতে চাইলেও দেখা হলো না। হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে এক দমকা বাতাস এসে পিঠ পর্যন্ত অনন্যার লম্বা চুলগুলো উড়িয়ে দিয়ে গেলো। আরণ্যক এসে থামলো সম্পূর্ণ ফাঁকা ক্যান্টিনে। হাত ছেড়ে দিয়ে শান্ত হয়ে দাঁড়ালো আরণ্যক। ক্যান্টিনে আশেপাশে তাকালে পোকামাকড় ছাড়া একটা মানব ও অবশিষ্ট নেই এখন। কোথায় যেন সকলে বেরিয়ে পড়েছে। অনন্যা আশেপাশে তার দুটো চোখের অক্ষিগোলক ঘোরাতে লাগলো। কেমন নিঃশব্দতায় কান ভারী হয়ে আসছে, কোনো শব্দ খুঁজছে অনন্যার কর্ণদ্বয়। 

আকস্মিক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে ফেললো আরণ্যক। হঠাৎ কাছে এসে অনন্যাকে জড়িয়ে ধরলো, অনন্যা থ বনে গেলো। উচ্চতায় আরণ্যক আর অনন্যা একি সাইজের তাই একে অপরের কাঁধে নিজের মাথা ঠেকলো। কেউ কিছু বলতে পারলো না। অনন্যা কখনো ভাবতে পারেনি ছেলেটা এমন নির্জন স্থানে এসে তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরবে। কেমন জানি কান দুটো লাল হয়ে যেতে শুরু করে অনন্যার। পেটের মধ্যে প্রজাপতি গুড়গুড় করতে থাকে। আরণ্যকের হাতটা অনন্যার কোমড়ে এসে স্পর্শ করে, মেয়েটা হারিয়ে যায় কোনো দূর দিগন্তের পাড়ে। কিছু মুহূর্ত, কিছু কাল যেন এভাবেই কাটিয়ে ফেলে তারা, আর পৌঁছে যায় অজানা এক গন্তব্যে।

কারো কথাবার্তার স্পষ্ট আওয়াজ কানে পৌঁছুতেই আচমকা যেভাবে জড়িয়ে ধরা হয়েছিল ঠিক সেভাবেই ছেড়ে দিয়ে আতংকে, ধরা পড়ার ভয়ে অনন্যাকে অনিচ্ছাকৃত ধাক্কা মেরে বসে আরণ্যক। ছিটকে পড়ে অনন্যা, পাশে সজ্জিত এক টেবিলের কোণায় জোরে আঘাত লাগে তার। ব্যথার তীব্রতায় এক মুহূর্তের জন্য "আহ!" শব্দ করে উঠলেও তা কারো কানে পৌঁছায় না। আরণ্যকের ব্যাচমেটরা ইতিমধ্যেই এসে তার সাথে গল্পে মগ্ন হয়ে গেছে। তাদের কথার ভিড়ে আরণ্যক একবারও অনন্যার দিকে তাকানোর অবকাশ পায়নি।

অনন্যা ব্যথায় কুঁকড়ে গিয়ে মেঝেতে বসে পড়ে। কয়েক মুহূর্ত পর নিজেকে সামলে নিয়ে ধীরে ধীরে উঠে বসে। চোখ যায় নিজের হাতের দিকে, তাতে রক্ত লেগে আছে। ভ্রুকুটি করে কপালে হাত রাখতেই অনুভব করে সেখানে কেটেকুটে গেছে এবং রক্ত ধীরে ধীরে ঝরছে। নিজের অবস্থায় হতবাক অনন্যা কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। আশপাশে কেউই যেন তার অস্তিত্ব টের পায়নি। ঠোঁট কামড়ে নিজের ব্যথা চেপে ধরে, তারপর হাঁটতে হাঁটতে ওয়াশ রুমের দিকে চলে যায়। কপালে পানির ঝাপটা দিয়ে রক্ত পরিষ্কার করে, এই অবস্থায় প্রচন্ড জ্বলছিল। তাও এই জ্বলার চেয়ে কিছুক্ষণ আগের মুহূর্ত মনে পড়ে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে চিন্তা করে, আরণ্যক এতোটা নির্দয় কি করে হতে পারে?

ক্লাসে ফেরার পর নোহারা বারবার অনন্যাকে জিজ্ঞেস করে, "কী হয়েছিল? তোর কপালে এই ক্ষতটা কীভাবে হলো?"

অনন্যা নোহারার প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে ঠাণ্ডা স্বরে বলে, "ওসব বাদ দে। কুইজ পরীক্ষার প্রস্তুতি নে। সামনে পরীক্ষা, সেটা এখন বেশি জরুরি।"

নোহারা কিছুটা অখুশি হলেও আর কিছু বলেনি। পরীক্ষার পরে আরো দুটো ক্লাস রয়েছে। তবে তার আগে ব্রেক চলছে। ব্রেকের সময় ক্লাসের সবাই মিলে গল্পে মেতে উঠে। কিন্তু আজ গল্পের বিষয়টা যেন একটু আলাদা। ক্লাসের সবাই ফিসফিস করে বলাবলি করছে, দুপুরের দিকে ক্যাম্পাসে এক নতুন স্যারের আগমন নাকি পুরো পরিবেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল।

কেউ কেউ বলছে, "এই এই.... দুপুরের স্যারটাকে দেখেছিস? অসম্ভব রাগী আর অ্যাটিটিউডে ভরা। তবে দেখতে কিন্তু একেবারে বিদেশি ফিল্মের হিরোদের মতো!"

আরেকজন যোগ করে, "আমার মনে হয় উনি কোনো বড় ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন। আমাদের লেভেলের কেউ না।"

নোহারা চুপচাপ বসে তাদের কথাগুলো শুনছিল। হঠাৎ তার মনে পড়লো, অনন্যা নিশ্চয়ই এই বিষয়টা জানে না। এই ভেবে সে একদম উত্তেজিত হয়ে অনন্যাকে বলল,

"দোস্ত, জানিস! আমাদের ভার্সিটিতে একটা নতুন প্রফেসর এসেছে?"

অনন্যা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললো,
"এইটা আর নতুন কি? প্রফেসর তো আসবে যাবে, তাতে আমার কী?"

"ধুর! তুইও না! চোখ দুটো আরণ্যক থেকে সরিয়ে একটু আধটু অন্য পুরুষদের দিকেও রাখ।"

"মানে?"

"মানে কী! শোন, এই নতুন প্রফেসর ভারী হ্যান্ডসাম বুঝলি? আমাদের অন্য প্রফেসরদের দেখ না, পেটে ভুঁড়ি নিয়ে কষ্ট করে হাঁটে। কারও আবার দুই-তিনটা বাচ্চা! কিন্তু উনি,কিছুই নেই তার। একদম ফিট! আজ যখন লাল মার্সিডিজ গাড়ি নিয়ে আমাদের ক্যাম্পাসে পা রাখলেন, শপথ করে বলছি, পুরো ক্যাম্পাস থমকে গিয়েছিল। আর প্রত্যেকটা স্টুডেন্ট ও! আমি তো বটেই হাঁ করে তাকিয়ে ছিলাম! ভাই রে ভাই, কী স্টাইল! কী চওড়া কাঁধ, কী চলার ধরন! লোকটার প্রতিটা পদক্ষেপ যেন ধীর গতির কোনো সিনেমার দৃশ্য।

বিশ্বাস কর, সেই মুহূর্তে আমার হার্ট একদম রেসের ঘোড়ার মতো দৌড়াচ্ছিল। আমি শিওর, উনাকে ওয়েলকাম করার জন্য পুরো ফ্লোরটাই যেন লাল কার্পেট হয়ে গিয়েছিল।"

অনন্যা চোখ-মুখ কুঁচকে বললো,
"একটু অতিরিক্তই বলছিস! যা, হার্ট যখন রেসের ঘোড়ার মতো দৌড়াচ্ছিল, তখন ঘোড়ার রেসে নাম দিয়ে আয়। অন্তত কাজে তো লাগবে!"

নোহারা তার গল্পেই মত্ত ছিল। সে গভীর ধ্যানে বলতে লাগলো,
"শুনলাম, বিদেশে তার জন্ম। সেখানেই সব পড়াশোনা কমপ্লিট করে বাংলাদেশে আসা।"

"বিদেশ ছেড়ে বাংলাদেশ কেনো?"

"আমাদের জেনে কী লাভ? লোকটাকে দেখতে পাচ্ছি এটাই তো অনেক!"

"আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কী দিনকে দিন বেশি ফেমাস হয়ে যাচ্ছে? আচ্ছা এটা বল! কোন দেশ থেকে প্রফেসরটা এসেছে? জন্ম কোথায়?"

নোহারা বললো,
"রোমানিয়া! আমি সাথে সাথেই গুগলে সার্চ দিয়ে দেখেছিলাম।"

পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী, এতক্ষণ নোহারার কথাগুলো গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। তাদের মধ্যে একজন বললো,
"নাহ! স্কটল্যান্ড!"

অপরজন,
"হাঙ্গেরি!"

"অস্ট্রিয়া!"

অনন্যা সবাইকে থামিয়ে বললো,
"তোদের কী মাথা খারাপ হয়ে গেল? একেকজন একেক দেশের নাম বলছিস!"

পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মেয়ে মুঠোফোনের দিকে তাকিয়ে বললো,
"নাহ রে, অনন্যা। একেক জায়গায় একেকটা নাম দেখাচ্ছে। কিছুই তো বুঝতে পারছি না।"

আরেকজন বললো,
"ভাই, আমি এখন ফ্রান্স দেখছি। ওয়েবসাইটগুলো কি অকেজো হয়ে গেলো?"

অনন্যা চিন্তিত হয়ে বললো,
"সাসপিসিয়াস! মোস্ট ইম্পরট্যান্ট কুয়েশ্চেন, স্যারের নাম কী?"

"ইশতেহার কৌশিক!"

অনন্যা উত্তেজিত হয়ে উত্তর করলো,
"নো, গাইস! এটা তো বাংলা নাম।"

অনন্যার কথা শুনে নোহারা চিৎকার করে বললো,
"ওয়েট, ওয়াট? উনার আসল নাম কী তাহলে? এই ব্যাপারটা তো এতোক্ষণ আমার মাথায়ই আসে নি।"

সকলের মনের মধ্যে কৌতুহলী প্রশ্নেরা ঘিরে ধরলো, একেকজন ঝাঁপিয়ে পড়লো, নতুন প্রফেসরের আসল নাম খোঁজার জন্য। কিন্তু কারো ফোনে ঠিকঠাক উত্তর আসলো না। একটা সময় পর কেউ কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারলো না। কৌতুহল, কৌতুহল ঘিরে ধরেছে সকলকে। যতদিন না কেউ ঠিকঠাকমতো উত্তর পাচ্ছে শান্তিমতো শ্বাস ও নিতে পারছে না।

অনন্যা বাসায় ফিরলে ঈরা অনন্যার কপালের ক্ষত দেখে বেশ বকাঝকা করলো। পরমুহূর্তে নিজে এসেই ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলো। নোহারার পর অনন্যার জীবনে অতি আপন মানুষ ঈরা। অনন্যা সচরাচর সব বিষয়ে কেয়ারলেস তবে ঈরা তাকে বেশ যত্ন করে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা পড়াশোনা করছে কিন্তু ভিন্ন ডিপার্টমেন্ট হওয়ায় একসাথে যাওয়া-আসা, চলাফেরা হয়ে ওঠে না। তবে যখনই সুযোগ হয় নোহারা সহ দুজন মিলে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ে।

সেই ঘটনার পর আরণ্যকের সাথে অনন্যা দুই দিন কথা বলেনি। এদিকে দরকার নেই বলে ভার্সিটিতেও যাওয়া হয়নি। তবে দুই দিন পর নোহারার মাধ্যমে আরণ্যকের সাথে কথা হয়ে যায় অনন্যার। আরণ্যক বারবার স্যরি বলে বিষয়টা মেটানোর চেষ্টা করে, এক পর্যায়ে অনন্যা শান্ত হয়ে বলে, "ঠিক আছে।"

আরণ্যকের মন শান্ত হয়, কিন্তু সে জানে না অনন্যার তারপরও রাগ কমেনি।

সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে সকলের। পরীক্ষার মধ্যে গার্ড হিসেবে কয়েক বার ইশতেহার কৌশিক স্যারের সুদর্শন মুখমণ্ডল দেখার সৌভাগ্য হয়েছে সকলেরই। কিন্তু লোকটা বেশ কড়া। তার দাঁত দুটো যেন কুমিরের বড় চোয়াল। সুদর্শন হলে কী হবে? চোখে মুখের ইশারায় যেন সব পিষে ফেলে এই লোকটা। একটু পিছনে ফিরলে বা মুখ দিয়ে একটা শব্দ উচ্চারণ করতে না করতেই চোখের সামনে খাতা নাই হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে এতো কড়া গার্ড কে দেয়? কিন্তু এই স্যারটা দিবে যেন তার শত বছরের অভিজ্ঞতা এই পরীক্ষার খাতা নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে মেটাচ্ছে।

অনন্যা অবশ্য অতো দেখাদেখিতে পটু নয়, তাছাড়া সামনে পিছনে যাদের সিট পরেছে তারা দেখানোর থেকে দেখে বেশি তাই অনন্যার সবগুলো কোর্সের পরীক্ষা একা একাই শেষ করতে হয়। নোহারা দূর থেকে জিজ্ঞেস করলে মাঝেমধ্যে হেল্প করার চেষ্টা করে কিন্তু কোন লাভ হয়ে ওঠে না। এতো দূর থেকে কতোটুকুই বা বোঝা যায়?

দেখতে দেখতে শেষ পরীক্ষার দিন চলে আসে। পরীক্ষা শেষে নোহারা, অনন্যা আপনমনে ক্যাম্পাসে হাঁটছিল। আকাশে আজ কড়া রোদ উঠেছে। শীতের রেশ নাই বললেই চলে। নোহারা হাঁটতে হাঁটতে বলে উঠে,
"আমি নতুন স্যারের ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছি।"
.
.
.
চলবে.................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন