সুফিয়ান ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন আড়তের ভেতরে। ডান দিকে ধানের বস্তার সারি, বাঁ দিকে পাটের আঁটি। দুইয়েরই একই অবস্থা, কেনার লোক নেই।
কিছুক্ষণ আগে পাটের দালাল এসেছিল। বলে গেল, "হুজুর, কী করুম? মিলের মালিক কইছে দাম কমাইয়া দিতে। নাইলে নিতে পারতাছে না।"
সুফিয়ান সাহেব একটা পাটের আঁটি হাতে তুলে নিলেন। কী সুন্দর রং ধরেছে! চাষিরা দিনরাত খেটেছে এই পাট নিয়ে। পানিতে নামিয়ে রেখেছে। পচিয়েছে। ছাড়িয়েছে। শুকিয়েছে। আর এখন...
"এই পাট... এই ধান...পুরো গ্রামের ভরসা," নিজের মনেই বিড়বিড় করলেন তিনি। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া কাঁধ আরও যেন নুয়ে পড়ল।
পাটের আঁটিগুলোর মাঝে একটা ইঁদুর ছুটে গেল। সুফিয়ান সাহেব চমকে উঠলেন। এই গরমে পাট বেশিদিন রাখা যাবে না। ইঁদুরে কাটবে, পোকায় ধরবে। ধানও নষ্ট হবে।
হঠাৎ মনে পড়ল রশিদের কথা। গত সপ্তাহে এসেছিল। মেয়ের বিয়ের টাকা চেয়ে।
"হুজুর, ধানের দাম পাইলে মেয়েরে পার করুম।" কী জবাব দিয়েছিলেন তিনি? "একটু সবুর কর। ধান বিক্রি হোক।"
করিমের ছেলের অপারেশনের কথা। সালেহার স্বামীর ঋণ শোধের কথা। প্রতিটি পরিবারের আশা-আকাঙ্ক্ষা জড়িয়ে আছে এই ধান আর পাটের সঙ্গে।
সুফিয়ান সাহেব আড়তের দরজার কাছে এসে দাঁড়ালেন। দূরে দেখা যাচ্ছে সবুজ ধানক্ষেত। নতুন করে বীজ বোনা হয়েছে। কিন্তু এই ফসল যদি বিক্রি না হয়, তবে পরের ফসল কে লাগাবে?
বৃদ্ধ আঙুলগুলো থরথর করে কাঁপছে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি সব হারাতে চান না। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে শুধু ফসল নয়, হারিয়ে যাবে মানুষের আস্থাও। সেই আস্থা, যা তার পূর্বপুরুষেরা গড়ে গিয়েছিলেন, যা তিনি এতদিন আঁকড়ে ধরে ছিলেন।
পায়ের শব্দ শোনা গেল। সুফিয়ান সাহেব ঘাড় ফিরিয়ে দেখলেন, মনির এসেছে। তার হাতে একটা কাগজের মোড়ক। মনিরের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, অনেকটা পথ হেঁটে এসেছে সে।
"হুজুর..." মনির এগিয়ে এল, "সৈয়দ সাহেব পাঠিয়েছেন..."
মোড়কটা খুলতেই পুরনো দলিলপত্র বেরিয়ে এলো!
"হুজুর, একটা খবর ছিল..." মনির সামান্য থেমে বলল। "নাভেদ সাহেবকে দেখলাম মোল্লারচর বাজারে। তার অবস্থা ভালো না।"
"কী হয়েছে?"
"পাটোয়ারী সাহেব নাভেদ সাহেবকে ব্যবসা থেকে সরিয়ে বিলেত থেকে ফিরে আসা নিজের ছেলেকে বসিয়েছেন।"
সুফিয়ান বিস্ময় নিয়ে তাকালেন। "পাটোয়ারী সাহেবের এত বড় ব্যবসা... নাভেদ তো সব কিছু দেখাশোনা করত!"
"জি হুজুর। গত পাঁচ বছর ধরে নাভেদ সাহেবই তো সব দেখতেন। দোকানপাট, আড়ত, চালের কল সব কিছুর হিসাব রাখতেন। পাটোয়ারী সাহেব তো শুধু বসে থাকতেন।"
"তারপর? কথা হয়েছে তার সঙ্গে?"
"না হুজুর। দেখলাম উনি মোল্লারচর বাজারের চায়ের দোকানে বসে আছেন। আগে তো কত বড় অফিসে বসতেন... এখন..."
সুফিয়ান চেয়ারে বসলেন। নাভেদের মতো বুদ্ধিমান ছেলে খুব কম দেখেছেন তিনি। ছেলেটা পাটোয়ারী সাহেবের ব্যবসা দশ গুণ বাড়িয়েছে। হিসাবপত্র, লেনদেন - সব কিছু গুছিয়ে রেখেছে। এমন একজনকে কী করে সরিয়ে দেওয়া যায়?
চোখের চশমা ঠিক করে বললেন, "নাভেদের খোঁজ নে। কোথায় আছে, কী করছে। তার সঙ্গে কথা বলতে হবে। বলবি..." তিনি একটু থামলেন, "বলবি যে আমাদের আড়তে আসতে।"
মনির কুর্নিশ জানিয়ে চলে গেল।
জাওয়াদের পিঠ থেকে গড়িয়ে পড়া রক্ত দেখে গুলনূরের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল।
বাজারের ভিড় থেকে উঠল কান্নাতুর স্বর, "কে মারল রে? কে মারল?" মুহূর্তেই জমা হতে লাগল মানুষের ভিড়। বিকেলের বাতাসে ছড়িয়ে পড়ল উত্তেজিত কণ্ঠস্বর।
"ডাক্তার! কেউ ডাক্তার ডাকো!" কারো আর্তনাদ বাজারের প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ল।
জাওয়াদ গুলনূরের দিকে তাকিয়ে ক্ষীণ স্বরে বলল, "ভয় পেও না। সামান্য আঘাত... কিছু হয়নি আমার।"
দুজন যুবক এগিয়ে এল। পাকচুল বৃদ্ধ একজন, জীবনের নানা ঝড়-ঝাপটা যার চোখে-মুখে গভীর দাগ কেটেছে, বললেন, "আরে এ তো জাওয়াদ। সরকার বাড়িতে থাকে, আগে প্রতিদিন বাজারে আসত। কে এমন কাজ করল?"
"কাউকে দেখতে পেলেন?" কেউ জিজ্ঞেস করল।
"না ভাই, ভিড়ের মধ্যে কে যে..." অন্য একজন মাথা নাড়ল।
গুলনূর তার ওড়নায় মুখ ঢেকে নীরবে কাঁদছে। জাওয়াদ তার দিকে তাকিয়ে আবার বলল, "আমি ঠিক আছি।"
বাজারের শেষ প্রান্তে রশিদ ডাক্তারের ছোট ডাক্তারখানা। কয়েকটা পুরনো চেয়ার, একটা খাট আর ওষুধের আলমারি দিয়ে সাজানো ঘরটা। দেয়ালে টাঙানো পুরনো ক্যালেন্ডারে উড়ছে একটা মশা।
দু'জন যুবক ধরাধরি করে জাওয়াদকে নিয়ে এল। রশিদ ডাক্তার তখন অন্য একজন রোগীকে দেখছিলেন। চশমার ফাঁক দিয়ে জাওয়াদের দিকে তাকালেন। চিনতে দেরি হলো না। ছেলেটার সঙ্গে প্রায়ই দেখা হয় বাজারে।
"কী হয়েছে?" রশিদ ডাক্তার উদ্বিগ্ন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন।
জাওয়াদকে খাটে শুইয়ে দেওয়া হলো। রশিদ ডাক্তার পিঠের জামা সরিয়ে ক্ষতস্থান পরীক্ষা করলেন। ক্ষতের চারপাশে জমাট রক্ত। তিনি সাবধানে জায়গাটা পরিষ্কার করতে লাগলেন।
"সৌভাগ্যক্রমে ছুরিটা গভীরে ঢোকেনি। জখম বেশি গভীর নয়।" তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন, "কে এই কাজ করল?"
জাওয়াদ বলল, "জানি না। আমার তো কারো সাথে শত্রুতা নেই।"
ড্রেসিংয়ের সময় জাওয়াদ দাঁত চেপে যন্ত্রণা সহ্য করছিল। ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে আছে গুলনূর। তার ওড়নার প্রান্ত ভিজে গেছে চোখের জলে। শরীরটা এখনো কাঁপছে। জাওয়াদ মাঝে মাঝেই তার দিকে তাকাচ্ছে, চোখের ইশারায় বলছে, 'ভয় নেই'।
রশিদ ডাক্তার লক্ষ্য করলেন, গুলনূরের দিকে জাওয়াদের বারবার তাকানো। জিজ্ঞেস করলেন, "আপনি কি ওর..."
"স্ত্রী।" জাওয়াদ আস্তে করে বলল।
গুলনূরের চোখ দিয়ে আবার টপ টপ করে জল পড়তে লাগল। ওড়নার প্রান্ত দিয়ে চোখ মুছল সে।
রশিদ ডাক্তার হাসিমুখে বললেন, "এজন্যই কয়দিন এ তল্লাটে দেখিনি!"
জাওয়াদ কিছু বলল না।
"ভয় পাবার কিছু নেই।" রশিদ ডাক্তার ব্যান্ডেজ বাঁধতে বাঁধতে বললেন, "দুদিন ঔষধ খান, সেরে যাবে। তবে..." একটু থেমে গম্ভীর হলেন, "থানায় একটা ডায়েরি করে রাখুন। এই এলাকায় এরকম ঘটনা আগে কখনও শুনি নাই।"
"ঠিক আছে," জাওয়াদ উঠে দাঁড়াল। গুলনূরের কাঁধে হাত রেখে বলল, "চলো, বাড়ি যাই।"
সন্ধ্যার আবছা আলোয় দুজনে বের হলো ডাক্তারখানা থেকে। বাজারের রাস্তায় তখন লোকজন কম। দু-একজন দোকানি দোকান গুটিয়ে বাড়ি ফেরার তোড়জোড় করছে। কয়েকজন এখনো দাঁড়িয়ে আছে, করুণ চোখে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।
গুলনূর জাওয়াদকে আঁকড়ে ধরে আছে। তার সারা শরীরে একটা অদৃশ্য ভয়। পাছে আবার কেউ আক্রমণ করে।
হঠাৎ জাওয়াদ বলল, "তুমি আমাকে বাঁচিয়েছ।"
গুলনূর অবাক চোখে তাকাল।
"যদি তুমি ধরে না রাখতে, আমি মাটিতে পড়ে যেতাম। তখন ছুরিটা ভেতরে ঢুকে আঘাতটা আরও গভীর হতে পারতো।"
গুলনূর চোখ নামিয়ে নিল। কথা বলতে না পারলেও তার আঙ্গুলগুলো আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল জাওয়াদের হাত।
বাড়িতে ঢুকেই সে হারিকেন জ্বালাল। হলদে আলোয় জীর্ণ দেয়ালের ফাটলগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠল। বিছানায় শুয়ে জাওয়াদ দুর্বল কণ্ঠে বলল, "রান্নাঘরে একটা সাদা থলে আছে। খুব বেশি কিছু নেই। যা আছে তাই দিয়ে কিছু একটা করো।"
গুলনূর হারিকেন হাতে নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকল। কোণায় পড়ে থাকা সাদা থলেটা খুঁজে পেতে বেগ পেতে হলো না। থলে খুলে দেখল, দুইশো গ্রামের মতো চাল, একমুঠো হলুদ রঙের মসুর ডাল, কয়েকটা শুকনো লাল মরিচ, দুটো পেঁয়াজ যার একটা অল্প নরম, তিনটে রসুন আর একটু সয়াবিন তেল। অনেক খোঁজাখুঁজি করে একটা পুরনো টিনের কৌটায় লবণ পেল।
থলেটা নিয়ে ঘরে ফিরে এসে হাত নেড়ে জাওয়াদকে বোঝাল হলুদ-মরিচ নেই।
"যা আছে তাই দিয়ে কিছু একটা করো," জাওয়াদ চোখ বুজে বলল। ক্ষতটা থেকে যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ছে সারা শরীরে।
গুলনূর চাল-ডাল ধুয়ে, পেঁয়াজ-রসুন কুচি করে, তেল গরম করে রান্না শুরু করল। খিচুড়ি তৈরি হলে পুরনো একটা বাটিতে করে ঘরে নিয়ে এল। জাওয়াদ তততক্ষণে উঁচু বালিশে হেলান দিয়ে বসেছে। গুলনূরকে দেখেই বলল, "ডাক্তারের কাছে তোমাকে স্ত্রী বলেছি বলে, রাগ করোনি তো?"
গুলনূর মাথা নাড়ল।
"বলতে হয়েছিল। না বললে লোকে বুঝত না কেন তুমি আমার সঙ্গে আছো। নিন্দে করতো। এই সমাজ এখনো সেই পুরনো চিন্তায় আটকে আছে। উন্নত হতে আরও অনেক সময় লাগবে।"
গুলনূর উঠে গিয়ে রান্নাঘর থেকে জলের গ্লাস নিয়ে এলো। দুজনে পাশাপাশি বসে খিচুড়ি খেল।
খাওয়া শেষে কিছুক্ষণ চুপ থেকে জাওয়াদ জিজ্ঞেস করল, "ভয় হচ্ছে না?"
গুলনূর উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাল। জাওয়াদ আলমারির দিকে ইশারা করে বলল, "ওখানে খাতা-কলম আছে, নিয়ে এসো।"
গুলনূর উঠে গিয়ে খাতা-কলম আনল। লিখল, "কীসের ভয়?"
"আমাকে।"
গুলনূর খাতায় লিখল, "না, হয় না। আমি জানি আপনি কখনও আমার ক্ষতি করবেন না। আপনার চোখে আমি শুধু মানুষ। বোবা নই, অক্ষম নই। আর..." গুলনূরের হাত থেমে গেল।
"আর?"
গুলনূর আবার লিখতে শুরু করল, "আপনার সামনে আমি নিজেকে অসম্পূর্ণ মনে করি না। অন্যরা যা দেখে না, আপনি তা দেখেন। আমার নীরবতার ভাষা আপনি বোঝেন। এই পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে আমার নীরবতাকে এত সুন্দর করে পড়তে পারে।"
জাওয়াদ স্থির হয়ে বসে রইল। চোখের দৃষ্টি গুলনূরের দিকে নিবদ্ধ। গুলনূরের অস্বস্তি হয়। সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। টেবিলের ওপর রাখা ঔষধের প্যাকেটটা নিয়ে এলো, তারপর রান্নাঘর থেকে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি। নীরবে এগিয়ে দিল জাওয়াদের দিকে।
ঔষধটা খেয়ে জাওয়াদ বিছানায় শুয়ে পড়ল। পিঠের ক্ষতটা থেকে যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ছে সারা শরীরে। গা-টা গরম, জ্বর আসার পূর্বাভাস। গুলনূর সযত্নে বালিশটা ঠিক করে দিল। তারপর পা টিপে টিপে পাশের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।
দুই ঘরের মাঝখানে একটি হারিকেন জ্বলছে। তার কম্পমান শিখায় দেয়ালে নাচছে আলো-আঁধারির ছায়া। গুলনূর ছোট খাটে শুয়ে পড়ল। হারিকেনের আলোয় জাওয়াদের ঘরের ছায়াটা স্পষ্ট। সেই ছায়ার দিকে তাকিয়ে রইল অপলক।
মধ্যরাতে বাড়িটা নিস্তব্ধ। হঠাৎ কিছু ভারী পায়ের শব্দে গুলনূরের ঘুম ভেঙে যায়। বুকের ভেতর হুড়মুড় করে উঠে। কান পেতে শুনতে পেল, বাড়ির চারপাশে কারা যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে। চাপা কণ্ঠের কথাবার্তা, পায়ের শব্দ। জানালার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিতেই, ঠং করে প্রচণ্ড শব্দে কেউ জানালায় আঘাত করল। গুলনূর ভয়ে চিৎকার করে উঠতে গিয়েও পারল না। তার কণ্ঠ থেকে শুধু একটা অস্পষ্ট গোঙানি বের হয়।
বাইরে থেকে ভেসে এলো কয়েকজনের কথোপকথন -
"দরজা ভাঙ।"
"এই বাড়িতেই আছে।"
"আমি বিকালেই দেখছি।"
গুলনূর প্রায় টলতে টলতে ছুটে গেল জাওয়াদের ঘরের দিকে। তার হাত-পা কাঁপছে, বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। জাওয়াদের বিছানার পাশে গিয়ে সে প্রায় ধপ করে বসে পড়ল। জাওয়াদের হাত ধরে ঝাঁকাতে লাগল। মুখ দিয়ে অস্পষ্ট শব্দ বের হচ্ছে। চোখে আতঙ্ক।
বাইরে থেকে ভেসে আসছে দরজায় লাথি মারার শব্দ। কাঠের দরজা মচমচ করে উঠছে। পেছনের জানালায় পাথর পড়ার শব্দ।
জাওয়াদ চোখ মেলল গুলনূরের ঝাঁকুনিতে। প্রথমে ঝাপসা দেখছিল সব। তারপরই গুলনূরের আতঙ্কিত মুখ, কাঁপা হাত আর চোখের জলে তার ঘুমের ঘোর কেটে গেল। বাইরে থেকে ভেসে আসা শব্দগুলো এখন স্পষ্ট। অনেকগুলো পায়ের শব্দ, গুঞ্জন, দরজায় ধাক্কা।
জাওয়াদ কষ্টে উঠে বসল। পিঠের ক্ষতটা থেকে তীব্র যন্ত্রণা ছুটে গেল সারা শরীরে। জ্বরে গা পুড়ছে। তবুও টলতে টলতে জানালার কাছে গেল। পর্দার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখল, পাঁচ-ছয়জন লোক। হাতে লাঠি, রড, দা। একজনের হাতে পিস্তল। চাঁদের আলোয় চকচক করছে ধারালো অস্ত্রগুলো।
"ওরা কারা? সব দিক ঘিরে ফেলেছে।" জাওয়াদের কণ্ঠে উদ্বেগ। ঘামে ভিজে গেছে সারা শরীর। জ্বরের তাপে চোখ দুটো লাল। ফিসফিস করে বলল, "গুলনূর, রান্নাঘরে একটা ছোট দরজা আছে। বাইরে সরু গলি। গলির শেষে দেয়াল। ওই দেয়াল টপকে পালাতে হবে। এছাড়া আর কোনো পথ নেই।"
গুলনূর ভয়ে কাঁপা হাতে জাওয়াদের জামা চেপে ধরল।
"আমার জন্য অপেক্ষা করো না। আমি তোমার পিছনেই আসছি।" জাওয়াদ আলমারি খুলে একটা পুরনো চাবি বের করল। তার হাত কাঁপছে। "এই চাবি দিয়ে পেছনের দরজা খুলে যাবে।"
বাইরে থেকে ভেসে আসা পায়ের শব্দ ক্রমশ কাছে আসছে। জাওয়াদ আর সময় নষ্ট না করে গুলনূরকে প্রায় জোর করে রান্নাঘরের দিকে ঠেলে দিল। গুলনূর কাঁপা হাতে চাবি ঘোরাল। দরজা খুলে গেল। সামনে অন্ধকার গলি। চাঁদের আলো পড়ে গলির দেয়ালগুলো রহস্যময় দেখাচ্ছে।
দুজনে দ্রুত গলিতে নেমে এগোতে লাগল। জাওয়াদের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। পা দুটো টলছে। হঠাৎ পিছন থেকে চিৎকার ভেসে এলো, "ওই দিকে! ওরা পালাচ্ছে!"
তাড়াহুড়োয় দেয়াল টপকাতে গিয়ে জাওয়াদের ক্ষতস্থানের ব্যান্ডেজ খুলে গেল। গভীর ক্ষত থেকে তাজা রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগল। জ্বরে মাথা ঘুরছে। চোখের সামনে সব ঝাপসা। তবুও থামার উপায় নেই।
"দৌড়াও!" জাওয়াদ শেষ শক্তি দিয়ে চিৎকার করে উঠল।
.
.
.
চলবে............................................