রাতিম হাত ঘড়ির দিকে তাকাল। মাথায় ঘাম জমলো তার। যতেষ্ট স্বাভাবিক হয়ে বলল,
"সেটা তো আগেই বলেছিলাম। আমার অসুস্থতার সময় তুমি সাহায্য করেছ তাই ভেবেছিলাম তোমাকে একটা ট্রিট দিই। এই আরকি।
" আপনি কথা ঘোরাচ্ছেন রাতিম ভাই।
আশেপাশে তাকিয়ে নিয়ে বলল রাতিম,
" আমার সময় নেই আইরিশ। কাজ আছে। আসছি।
চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো রাতিম। কোমল হাতে রাতিমের হাত চেপে ধরলো রিশা। আশ্চর্য হয়ে গেল রাতিম! এমন কিছু ঘটবে বোধহয় আশা করেনি। রিশার চোখ দু'টোতে জলেরা ভীড় জমিয়েছে। নাকের ডগায় জমেছে ঘাম। পাতলা ঠোঁট জোড়া মৃদু কাঁপছে। প্রখর রোদ্দুর এসে ছুঁয়েছ কপাল। রাতিমের ভেতর জুড়ে বয়ে গেল প্রলয়ঙ্কারী ঝড়! নিমেষে গুড়িয়ে দিল তার অন্তঃকরণ! ভাগ্যিস ভেতরের অবস্থা প্রকাশ্যে দেখা যায় না! শুকনো ঢোক গিলে নিয়ে বলল রিশা,
"কেন মিথ্যে বলছেন রাতিম ভাই? আমার পাঠানো সেদিনের ম্যাসেজ কি আপনি দেখেননি? আমি আপনাকে ভীষণ ভালবাসি। এই কয়টা দিন আমার কিভাবে গিয়েছে আপনি ধারণাও করতে পারবেন না! আমি জানি আপনিও আমায় ভালোবাসেন। সেদিন আপনার পকেট থেকে পড়ে যাওয়া গোলাপটা আমি এখনো সযত্নে রেখে দিয়েছি। বুঝেছি, চাকরি চলে গেছে বলে এমন করছেন তাই তো? আপনি তো শিক্ষিত ছেলে। যে কোনো সময় চাকরি হয়েই যাবে।
রিশার হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিয়ে কাঠিন্য স্বরে বলল রাতিম,
" কি আবোলতাবোল বলছো? আমি কখনো এমন কিছু বলেছি তোমাকে? নাকি ইঙ্গিতে বুঝিয়েছি? রওনকের বোন তুমি। আমার ছোট বোনের মতোই! এসব বলার আগে মুখে বাঁধলো না তোমার?
রিশার গলা ধরে এলো। পৃথিবী তাকে কেন্দ্র করে ঘুরতে লাগলো। চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো অনর্গল। রাতিমের কপালে ঘাম ছুটে গেল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অপ্রত্যাশিত এক কাজ করে বসলো রিশা। দ্রুত ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো রাতিমকে। চোখ বন্ধ করে ফেলল রাতিম। নিশ্বাস আঁটকে আসতে চাইলো। এই মুহূর্তে মৃত্যু চলে আসলেও বোধহয় তাকে আলিঙ্গন করা সহজ হতো তার জন্য। রিশার শরীর মৃদু কাঁপছে। জড়িয়ে নিতে পারলো না রাতিম। পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইল। চোখদুটো বুঝি জ্বালা করছে তার। কান্নার দাপটে গলার স্বর ভেঙ্গে গেল রিশার। থেমে থেমে বলল,
"আপনার ভালোবাসা আমাকে কতটা বেহায়া, নির্লজ্জ করে দিয়েছে দেখুন! জানি না কেন এমন করছেন। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে রাতিম ভাই।
জোরপূর্বক রিশাকে ছাড়িয়ে দাঁড় করাল রাতিম। আশেপাশে অনেকে তাকিয়ে আছে। রিশার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিজের নাম্বারটা তুলে দিল। কোনোরকম বলল,
" এটা আমার নতুন সিমের নাম্বার। পরে কথা হবে তোমার সাথে। আসছি।
কথাটুকু বলেই লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে গেল রাতিম। সামনে রিকশা পেতেই উঠে বসলো। নিজের কান্নাটা আর ধরে রাখতে পারলো না। ফুপিয়ে কেঁদে ফেলল। আর কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে থাকলে নিজের শক্ত খোলসটা আর ধরে রাখতে পারতো না। ইচ্ছে করেই আগের নাম্বার থেকে রিশাকে ব্লক করে রেখেছিল। আজকে কাকতালীয় ভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবেনি। বাধ্য হয়েই অন্য সিমের নাম্বার টা দিয়ে এসেছে। নয়তো আজ সহজে নিস্তার মিলতো না এখান থেকে। এদিকে বাড়ি থেকে রূপা ফোন করছে। দ্রুত যেতে হবে।
•
পরীক্ষা শেষ হয়েছে অনেক্ষণ আগেই। অস্থির হয়ে বের হয়েই রিশাকে ফোন করেছে কুহু। পরীক্ষা মিস দেওয়ার মতো মেয়ে নয় রিশা। কি চলছে মেয়েটার মনে? অনেকদিন যাবৎ মনে হচ্ছে কিছু ঠিক নেই! কয়েকবার রিং বাজতেই রিসিভ হলো। কুহুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বলল রিশা,
"আমি জানি তুই কেন ফোন করেছিস। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য গিয়েছিলাম। মাঝরাস্তায় এক্সিডেন্ট হই। বাইকের সাথে ধাক্কা লাগে। পায়ের আঙ্গুলে চোট পেয়েছি খুব। ভাইয়াকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি পরীক্ষা দিতে পারবো না।
অস্থির কন্ঠে শুধালো কুহু,
" এখন কেমন আছিস? বেশি ক্ষতি হয়নি তো?
" আরে না। চিন্তা করিস না। বাসায় আয় জলদি।
"আচ্ছা।
চিন্তা সম্পূর্ণ দূরীভূত হলো কুহুর। স্বস্তির শ্বাস ফেলল। এই রওনক স্যারটাও না, রিশা যে তাকে ফোন করেছে একবার জানাবে না? নিজেকে আবার জ্ঞানী ভাবে।
" তা এই প্রেম কবে থেকে চলছে ম্যাডাম?
আরিয়ানের কথা শুনে ঘুরে তাকাল কুহু। সবাই দাঁড়িয়ে আছে একত্রে। অপ্রস্তুত হলো কুহু। তখন মাথা এতটাই বিগড়ে ছিল যে আশপাশ না দেখেই রওনক ভাইকে জড়িয়ে ধরেছিল। এখন লজ্জাও লাগছে খুব। অবশ্য জবাবটা ভেবেই নিয়েছে। লম্বা দম নিয়ে সবকিছু খুলে বলল কুহু। কিভাবে তাদের বিয়ে হয়েছে। সব শুনে রূপসা বলল,
"আমাদের কি তোর বোকা মনে হয়? যে কোনো একটা গল্প বানিয়ে বলে দিবি আর আমরা সেটা বিশ্বাস করে নেব? ক'বছর ধরে প্রেম চলছিল বল? রিশার খাতিরে স্যারের বাসায় তোর প্রায়ই যাতায়াত ছিল।
কপালে ঈষৎ বিরক্তির ভাজ ফেলে বলল কুহু,
" আরে সব সত্যি বলছি! রওনক ভাই তো দু’চোখে সহ্য করতে পারতো না আমাকে।
ফুস করে দম ফেলে বলল সোহা,
"তাই? তা কে একটা অসহ্যকর মানুষকে বিয়ে করতে চায় বল? তোর বিয়েতে ঝামেলা হোক তাতে রওনক স্যারের কি আসে যায়? এমনি এমনিই বিয়ে করে নিল তোর মতো বিরক্তিকর মানুষকে?
কুহু যেন এক ভাবনায় মগ্ন হয়ে গেল। রওনক ভাই তাকে বিয়ে করবে এটা তো সেসময় অবাস্তব ছিল তার কাছে। ভেবেছিল সম্মান বাঁচাতে হয়তো বিয়েটা করছে। পরে হয়তো সব স্বীকার করে পথ আলাদা করে নেবেন। তবে সব তো উল্টো ঘটলো! রওনক ভাইয়ের চোখে বিরক্তিকর কুহুটা এখন সবচেয়ে বেশি ভালবাসার কেউ হয়ে গেল! মানব মন কি এতই বিচিত্র? কুহু নিজেও তো রওনক ভাইকে সহ্য করতে পারেনি। আজ এই সময় এই লোকটাই তার সমস্তটা দখল করে নিয়েছে! কুহুকে চুপ থাকতে দেখে সবার সন্দেহ গাঢ় হলো। নয়ন বলল,
" হতে পারে কুহুকে স্যার দয়া করেছেন। বদনাম হবে বলেই বিয়ে করে নিয়েছেন। এখন সব ঝগড়া ভুলে হয়তো ভাব হয়ে গেছে দু'জনের মাঝে!
চট করেই কুহু বলল,
"হ্যাঁ, হ্যাঁ। নয়ন বুঝতে পেরেছে বিষয়টা। ঝামেলা হয়েই বিয়েটা হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে আমাদের মাঝে ভাব হয়ে গেছে বুঝলি।
কুহুর এই উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারলো না কেউই। কিছু তো একটা পূর্বসূত্র আছেই! সকলের কথার মাঝে রওনক উপস্থিত হলো ক্যাম্পাসে। সবাই বেশ ভদ্র ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে গেল। সালাম জানালো। কুহুর দিকে তাকিয়ে জবাব দিল রওনক। ভরাট স্বরে বলল,
" বাসায় যেতে হবে চলো। আমি বাইকে অপেক্ষা করছি।
কথাটুকু বলে'ই হাঁটা ধরলো রওনক। উপস্থিত সবাই আশ্চর্যের শেষ সীমানায় পৌঁছে গেল। রওনক স্যার তাদের সামনে এমন কিছু বলবে এটা অকল্পনীয় ছিল! কুহু অপ্রস্তুত হয়ে আশপাশে তাকাল। ক্যাম্পাস একেবারে খালি বললেই চলে। সবাই বেরিয়ে গেছে এতক্ষণে। কিছুদূর যেতেই ফের ফিরে আসলো রওনক। কুহুর হাত ধরে বলল,
" যেতে বললাম তো! এখনো দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করছো কেন?
ঠিক কি উত্তর দিবে ভেবে পেল না কুহু। বাকি সবার দিকে তাকাল। ভুত দেখার মতো চমকে তাকিয়ে আছে সবাই। একপলক সেদিকে তাকিয়ে বলল রওনক,
"কুহু এতক্ষণ যাবৎ তোমাদের যা যা বলেছে সব সত্য। নয়তো এই গর্দভ মেয়েকে যেচে বিয়ে করার কোনো প্রশ্নই আসে না।
কথাটুকু বলেই কুহুকে নিয়ে চলে গেল রওনক। ইচ্ছে করেই ওদের এই কথাটা বলল। নয়তো সবকয়টা গোয়েন্দাগিরি শুরু করে দিত। আর ঠিক কুহুর ব্রেইন ওয়াশ করে দিত। সবাই কুহু আর রওনকের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল। তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল আরিয়ান,
" দেখলি কেমন আচরণ করলো স্যার! অপমানও তো করলো কুহুকে। মনে দয়া, মায়া, ভালোবাসা আছে নাকি কে জানে।
রূপসা বলল,
"আমি আর সোহা তো ভাবলাম ওদের মাঝে আগে থেকেই কিছু চলছে! ফাঁকা ক্লাসরুমে কি হয়েছে তা তো আর তোরা দেখিসনি। এখন আফসোস হচ্ছে, এই রগচটা স্যারের সঙ্গে সারাদিন থাকবে কি করে কুহু?
নয়ন বলল,
" টিকবে না। এই সম্পর্ক বেশিদিন যাবে না। দেখলি না কিভাবে খোঁটা দিয়ে গেল? এই জন্যই স্যার হয়তো ভার্সিটিতে সবার থেকে বিয়ের ব্যাপারটা লুকিয়ে গেছেন।
নয়নের কথা শুনে অত্যল্পকালে বাকি তিনজনের মুখে আঁধার নামলো। কুহুর জন্য খারাপ লাগলো।
◼️
সারারাস্তায় রওনকের সাথে একটা কথাও বলেনি কুহু। রাগে গা ফেটে পড়ছে। বন্ধুদের সামনে কতবড় অপমানটাই না হলো সে। অথচ বড় মুখ করে বলেছিল তাদের মধ্যে ভাব হয়ে গেছে। এই তার নমুনা? আড় চোখ কুহুকে পর্যবেক্ষণ করছে রওনক। লুকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। ভয়ানক রাগলে দারুণ লাগে কুহুকে। গাল দুটো বেলুনের মতো ফুলে যায় কেমন! ড্রেসিং টেবিলের কাছে আসতেই নীল রঙা ছোট্ট একটা চিরকুট দেখতে পেল কুহু। কপালে ভাজ পরলো তার। তৎক্ষনাৎ হাতে তুলে নিয়ে খুলে পড়তে লাগলো।
"মানুষের মনটা হয় বিশাল আকাশের মতো! মাঝেমধ্যে কষ্টগুলো মেঘ হয়ে নেমে আসে। বৃষ্টি শেষে আবারও তো হাসে ঝলমলে আকাশ। তেমনি কষ্ট পেলেও কি মানুষ সেটা মনের ভেতর পুষে রাখে? ক্ষমা করে দিয়ে হাসতেও তো পারে। "
আমার রুমে আয়তো একটু কুহু। তোর জল্লাদ ননদী তোর অপেক্ষায় তৃষ্ণার্ত কাকের মতো ছটফট করছে। এসে তাকে ক্ষমা করে দিয়ে ধন্য কর।
ইতি
কুহুর প্রিয় রিশা
চিরকুটটা পড়তেই ওষ্ঠকোণে হাসি খেলে গেল কুহুর। একদৌড়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। রওনক অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। মুহূর্তে হাসিমুখে কোথায় ছুটে গেল! রিশার রুমে এসে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো কুহু। চমকে উঠলো! অন্ধকার রুমে টেবিলের উপর মোটা মোটা মোমবাতি জ্বলছে। পাশেই ছোট্ট একটা কেক। রিশাকে ডাকলো কুহু। এগিয়ে গেল কেকের দিকে। কেকের উপর বড় করে স্যরি লেখা। খুশিতে চোখে পানি চলে আসলো কুহুর। হঠাৎ করে রুমের লাইট জ্বলে উঠল। ঘাড় ঘুরিয়ে রিশাকে দেখতে পেয়েই জড়িয়ে ধরলো কুহু। কেঁদে ফেলল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিল রিশা। চোখ ঝাপসা হয়ে উঠলো। কুহু তার উপর কখনই অভিমান করে থাকতে পারবে না জানে। ভাঙ্গা গলায় বলল,
"তুই খুউব ভালো কুহু। খুব বোকাও! তোর উপর যে রাগ, জেদ দেখাবে সে নিজেই দ্বিগুণ কষ্ট পাবে। সকালে তোর সাথে খুব বাজে আচরণ করে ফেলেছি।
কান্নার দাপটে কিছু বলতে পারলো না কুহু। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দেখলো রওনক। পরক্ষণে নিশ্চুপ প্রস্থান করলো। কুহুকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে কেক কাটলো রিশা। খাইয়ে দিল যত্ন নিয়ে। খানিকটা কেক রিশাকে খাইয়ে দিয়ে বলল কুহু,
" মানুষের যখন মনমেজাজ ঠিক থাকে না তখন সে নিজের মাঝে থাকে না। আমি কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছি তুই ঠিক নেই। কি হয়েছে বল আমাকে?
কুহুর দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে রইল রিশা। আবারো খুব কান্না পাচ্ছে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, আমি ভালো নেই কুহু। ভেতর থেকে ভেঙ্গে নিঃশেষ হয়ে গেছি। চাইলেও রাতিম ভাইয়ের বিষয়টা কুহুকে বলা সম্ভব নয়। নাক টেনে বলল,
" আমরা যে জিনিসটা নিয়ে বেশি আশা করে ফেলি, স্বপ্ন দেখি সেটা যখন পাই না তখন মন মানতে চায় না। চাইলেও নিজেকে মানানো যায় না। তবুও চলতে হয়। এতসব ভাবলে হয় না। আমিও জানি সব একদিন হয়তো ঠিক হয়ে যাবে।
"তুই আশফিক ভাইয়ার জন্য এখনো কষ্ট পাচ্ছিস?
রিশা কোনো উত্তর দিল না। কুহুকে বলল গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে। মাথা ব্যাথা করছে তার। রিশার পায়ের ব্যান্ডেজ করা আঙ্গুলের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেল কুহু। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা এঁটে দিল। শরীর কাঁপছে। আজকের ঘটনাটা মস্তিষ্ক থেকে বেরোতে চাচ্ছে না। কেন রাতিম ভাই এমন ব্যবহার করলো? রিশার ভাবনা কি এতটাই ভুল ছিল? স্পষ্ট রাতিম ভাইয়ের চোখে ভালবাসা দেখেছিল নিজের জন্য! তাহলে কেন দূরে ঠেলে দিচ্ছে এখন?
•
রুমে এসে ফোন হাতে নিল কুহু৷ ফেসবুকে আশফিকের আইডিটা খুঁজে বের করলো। কিছুটা স্ক্রল করতেই দেখলো বেশ কয়েকটা পোস্ট করা। কেমন বিরহের আভাস মিলল! তবে কি সম্পর্ক ঠিক নেই তার? শত চিন্তা মাথায় নিয়ে আশফিকে ছোট্ট একটা ম্যাসেজ পাঠালো। অপেক্ষা করতে লাগলো উত্তরের।
" সেই কখন ফিরেছ! ফ্রেশ হওনি কেন এখনো?
ভরাট পুরুষালি স্বর শুনে আৎকে উঠলো কুহু। কোনোরকম ফোনটা খাটে রাখলো। রওনকের হাতে দুইমগ কফি। হঠাৎই রাগের কথা মনে পড়ে গেল কুহুর। আজকে তাকে অপদস্ত করেছে রওনক ভাই। টেবিলের উপর মগ দু'টি রাখলো রওনক। কুহু চলে যেতে নিলেই হাত চেপে ধরলো। ছাড়াতে চেষ্টা করলো কুহু। চোখেমুখে এখনো তীব্র অভিমান। হাত টেনে ধরে কাছে দাড় করাল রওনক। দু'হাতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিল। একটুও নড়ার শক্তি পেল না কুহু। লেপ্টে রইল শক্তপোক্ত বুকে। হাত বাড়িয়ে কুহুর কপাল থেকে কাটা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিল রওনক। শীতল কন্ঠে বলল,
"দেখো বাচ্চাদের মতো ঠোঁটের কোণায় কেকের ক্রিম লেগে আছে তোমার।
কথাটুকু শুনতেই ঘাড় ঘুরিয়ে আয়নার দিকে তাকাল কুহু। সত্যিই লেগে আছে ঠোঁটের পাশে।
" ছাড়ুন। মুছে নিচ্ছি আমি।
কুহুর কথা তোয়াক্কা করলো না রওনক। মাথা খানিকটা নিচু করে কুহুর ঠোঁটে লেগে থাকা ক্রিমটুকু খেয়ে নিল। কাঠের পুতুলের মতো সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কুহু। ভারী নিশ্বাস সারা মুখে ছড়িয়ে গেল তার। হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল। চোখ তুলে তাকাল না। গালে আদুরে ভাবে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল রওনক। মেরুদণ্ড বরাবর শীতল স্রোত বইয়ে গেল কুহুর। অভিমানের বরফ গলল না। কানের কাছে ফিসফিস করে বলল রওনক,
"বোকা মেয়ে, তোমার অভিমানের পাহাড় কিভাবে গুড়িয়ে দিতে হয় সেটা রওনকের খুব ভালো করেই জানা আছে। একবার জড়িয়ে নাও আমাকে। দেখবে অভিমান গলে জল!
·
·
·
চলবে.................................................