"মিস ওয়াটএভার! কোন ভাবনায় ডুবে আছেন আপনি?"
কৌশিক স্যারের তীক্ষ্ণ গলার স্বর অনন্যার কাছে ধমকের মতো ঠেকলো। নড়েচড়ে বসল সে। তার দৃষ্টি স্যারের কাছ থেকে সরে রুমের আনাচেকানাচে ঘুরতে লাগলো।
কৌশিক কিছুটা সামনে এগিয়ে আসলো, হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে শুধালো,
"নাম কী আপনার?"
প্রশ্নটা কানে পৌঁছাতেই অনন্যা বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। কয়েক মুহূর্তের জন্য তার ঠোঁটজোড়া থরথর করে কেঁপে উঠল। তারপর একটা বিদ্রূপ মাখা হাসি দিয়ে ভাবলো, বিয়ের পরদিন যদি নিজের বউয়ের নামটা জানা না থাকে তাহলে ওই বান্দার সাথে কী করা উচিত আসলে?
অনন্যা বললো,
"মনে নেই আপনার?"
"মনে রাখার মতো ছিল না হয়তো।"
কৌশিকের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি দেখে অনন্যার দাঁতের চোয়াল শক্ত হলো।সে দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিলো,
"অনন্যা! অনন্যা শিকদার!"
কৌশিক গম্ভীর ভঙ্গিতে বললো,
"মিস শিকদার, আপনি কি জানেন, প্রায় আধাঘণ্টা ধরে আপনাকে ডাকা হচ্ছিল?"
অনন্যা একটু ঘাবড়ে গিয়ে বললো,
"না তো! আমি কিছুই শুনিনি।"
"শুনবেন কীভাবে? নিজের জগতে মগ্ন ছিলেন। যাই হোক, রাত হয়ে যাচ্ছে। ডিনার করতে আসুন।"
"রাত হয়ে যাচ্ছে?"
অনন্যা দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
"এখন মাত্র আটটা বাজে!"
কৌশিক দৃঢ় স্বরে বললো,
"এই বাড়িতে আটটার মধ্যেই সবাই রাতের খাবার সেরে ফেলে। আর দেখে মনে হচ্ছে, গোসল করার সময়ও পাননি!"
অনন্যা একটু বিব্রত হয়ে চুলে হাত চালিয়ে বললো,
"আসলে ভুলেই গিয়েছিলাম। এতো ক্লান্ত লাগছিল।"
কৌশিকের চোখে ঠাণ্ডা কঠোরতা,
"সামনে এর চেয়েও বেশি ক্লান্ত লাগবে। তাই নিজেকে গুছিয়ে রাখুন।"
"মানে?"
কৌশিক সংক্ষেপে উত্তর দিলো,
"কিছু না।"
অনন্যা তার মুখে একটা ঠোঁট-কাটা হাসি ঝুলিয়ে বিছানা থেকে নেমে বললো,
"ঠিক আছে, আংকেল!"
কৌশিক থমকে গিয়ে গভীর গলায় বললো,
"আংকেল?"
অনন্যা ততক্ষণে দরজার কাছে পৌঁছে গেছে। দরজার বাইরে যাওয়ার মুহূর্তে ইচ্ছা করেই কৌশিকের গায়ে একটা ধাক্কা দিয়ে বললো,
"উপস! স্যরি, আংকেল! একটু সাইডে সরে দাঁড়াবেন।"
কৌশিকের চোখ রাগে চমকে উঠলো। অনন্যাকে কড়া কথা শোনানোর জন্য মুখ খুলতে নিয়েছিল সে। কিন্তু সুযোগ হলো না, তার আগেই মেয়েটা দৌড়ে পালিয়েছে। কৌশিক রুমের চারপাশে শেষবারের মতো চোখ বুলিয়ে নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল।
রুম থেকে বেরিয়ে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াতেই কৌশিকের চোখে পড়লো, অনন্যা ছুটে উপরে উঠছে। হঠাৎ, মেয়েটি ছুটে এসে কৌশিকের গলা জড়িয়ে ধরে ঝুলে পড়লো। ভীত কণ্ঠে চিৎকার করে বললো,
"এই...এই বাঘটা এখানে কী করছেএএএ?"
পরক্ষণেই অনন্যার ঠোঁট কাঁপতে শুরু করলো। কৌশিক কয়েক মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো, হাত বাড়িয়ে ধরলো না অনন্যাকে। বরং হাত দুটো শক্ত করে সোজা রেখেছে।
অনন্যা আতঙ্কিত স্বরে বললো,
"স্যার! আমি ঠিকঠাক নিচে নামছিলাম। কিন্তু এই বাঘটার হয়তো ভালো লাগেনি। এতো জোরে একটা গর্জন দিলো! আরেকটু হলেই আমি শেষ হয়ে যেতাম!"
কৌশিক ধমকের স্বরে বললো,
"কি হচ্ছেটা কী? আমার শরীর থেকে নামুন!"
"না না! ফিডোকে সরান এখান থেকে! ও কেন সিঁড়ির নিচে দাঁড়িয়ে থাকবে?"
কৌশিক ভ্রু কুঁচকে বললো,
"ফিডো না, ওর নাম রিডো। আর আমার জন্যই দাঁড়িয়ে আছে ও।"
"যে নামই হোক, যার জন্যই দাঁড়াক! বাড়িতে এইভাবে ঘুরঘুর কেন করবে? বাড়ি কী বাঘ রাখার জায়গা?"
কৌশিক ঠাণ্ডা কণ্ঠে বললো,
"লিসেন! রিডো বাঘ হলেও স্বভাব বিড়ালের মতো। কিচ্ছু করবে না ও।"
অনন্যা কৌশিক স্যারের গলায় আরো জোরে চেপে বসলো, গলার স্বর কাঁপতে কাঁপতে বললো,
"বাঘ... বিড়াল কীভাবে হবে? এতো জোরে গর্জন করে, মনে হয় পুরো দুনিয়া কেঁপে উঠে! আপনি প্লিজ এটাকে সরান, নাহলে আমি আজ মরেই যাবো!"
কৌশিক বিরক্ত মুখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
"আহ্! আপনি মেয়েটা একেবারে অসহ্য!"
সে অনন্যাকে গলায় ঝুলিয়েই ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে থাকলো। রিডোর সামনে এসে দাঁড়াল। অনন্যা তখনও মুখটা উপরের সিঁড়ির দিকে করে রেখেছে ,কাঁধ খামচে ধরে আছে, যেন বাঘটা দেখলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে।
কৌশিক বাঘটিকে উদ্দেশ্য করে মজা করে বললো,
"রিডো! এই যে, এই মেয়েটা দেখছো? এটা তোমার আজকের রাতের ডিনার। বুঝলে?"
রিডো মৃদু গর্জন করলো, তারপর নড়েচড়ে আরাম করে বসলো। তার ডোরাকাটা মোলায়েম শরীর আলোতে ঝলমল করছিল।
অনন্যা চিৎকার করে স্যারের পিঠে একটা ধাক্কা দিয়ে বললো,
"কী শুরু করলেন? আমি ভয়ে ঠান্ডা হয়ে কাঁপছি, আর আপনি এখানে মজা করছেন!"
কৌশিক তার শান্ত গলায় বললো,
"ভয়ের কিছু নেই। রিডোর কাছে গেলে কেউ মরে না। কিন্তু আপনি এভাবে ঝুলে থাকলে আমি ঠিকই মরে যাবো!"
"এটাকে সরান তো! আমি নেমে যাবো।"
ইশতেহার কৌশিক অনন্যার দিকে তাকিয়ে খানিকটা পর্যবেক্ষণ করলো। অনন্যার চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে, ঠোঁটজোড়া কাঁপছে আর একটু পর পর ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ছে। ভয়ের চোটে কৌশিকের জ্যাকেট আরো শক্ত করে চেপে ধরেছে।
কৌশিক ঠোঁটের কোণায় একটা মৃদু হাসি ফুটিয়ে বললো,
"রিডো! বাইরে থেকে একটু ঘুরে এসো। তামং তোমাকে নিয়ে যাবে।"
রিডো লেজ নাড়তে নাড়তে সিঁড়ি পেরিয়ে দরজার দিকে চলে গেল। চারপাশে একটা অদ্ভুত নীরবতা নেমে এলো।
কৌশিক ধীরে ধীরে আরো কয়েক ধাপ নামলো। তারপর অনন্যার দিকে তাকিয়ে দৃঢ় গলায় বললো,
"নামুন!"
অনন্যা কাঁপা গলায় বললো,
"না... আমি এখানেই থাকবো। নিচে নেমে যদি আবার ও আসে?"
কৌশিক বিরক্ত মুখে বললো,
"রিডো বাইরে চলে গেছে। আর যদি না নামেন, আপনাকে ফেলে দেবো।"
এই কথা শুনে অনন্যা দ্রুত চোখ খুললো, চারপাশটা ভালোমতো দেখে নেমে গেলো। তারপর কৌশিকের দিকে তাকিয়ে বললো,
"আপনার শরীর এতো ঠান্ডা কেনো? মনে হচ্ছিল কোনো বরফের খাম্বার মধ্যে ঝুলে ছিলাম।"
"আমি কী আপনাকে আমার শরীরের উপর উঠতে বলেছিলাম?"
কৌশিক স্রেফ একবার প্রশ্ন করে ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো।
অনন্যা মুখ ভেংচিয়ে তার পিছু পিছু হাঁটতে লাগলো। যেতে যেতে নিজের হাত মুখের কাছে নিয়ে এল, হঠাৎ এক ধরনের সুগন্ধ নাকে লাগলো। সে থমকে দাঁড়িয়ে ভালো করে শুঁকল। পারফিউমের মিষ্টি ঘ্রাণটা যেন তাকে মুহূর্তের জন্য স্থির করে দিলো।
এদিকে কৌশিক ডাইনিং টেবিলে তার জন্য খাবার ঠিকঠাক করতে ব্যস্ত। অনন্যা দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে বললো,
"স্যার, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?"
কৌশিক মুখ না তুলেই বললো,
"কী?"
"আপনি শরীরে কী পারফিউম ব্যবহার করেন? ঘ্রাণটা তো বেশ রিল্যাক্সিং!"
কৌশিক এবার চোখ তুলে শান্ত কণ্ঠে বললো,
"ল্যাভেন্ডার অয়েল উইথ পারফিউম।"
অনন্যা মুগ্ধ হয়ে বললো,
"ওহ! ঘ্রাণটা সত্যিই ভালো!"
কৌশিক খাবারের প্লেট সামনে রেখে বললো,
" আগে খাওয়া শেষ করুন। গন্ধ নিয়ে গবেষণা পরে করবেন।"
"আমাকে খাওয়ানোর জন্য এতো পাগল হয়ে গেলেন? বিষ টিস মিশিয়েছেনে খাবারে?"
অনন্যার কথায় কৌশিক বিরক্ত হয়ে মাথা চেপে ধরে নিজের চেয়ারে বসলো।
চোখ বন্ধ করে ধমকের সুরে বললো,
"ইউ আর ঠু মাচ! সকালে একটা শর্ত দিয়েছিলাম মনে আছে? আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি - নো আননেসেসারি কুয়েশ্চেন। কিন্তু বারবার সেটাই করছেন আপনি!"
অনন্যা মুখ ফুলিয়ে চুপচাপ বসে রইল। কৌশিক কোনো কিছু না বলেই নিজের খাওয়া শুরু করে দিলো।
তাকে দেখে অনন্যা আরো বিরক্ত হয়ে বললো,
"চিকেন স্যুপ? এটা খেয়ে পেটের এক আনিও ভরবে না!"
কৌশিক ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বললো,
"তাহলে? কী খেতে চান? পুরো মুরগিটা এনে প্লেটে রাখি?"
অনন্যা তৎক্ষণাৎ বললো,
"আপনি মজা করছেন, কিন্তু আমি সত্যি বলছি! এত অল্প খাবার দিয়ে কীভাবে চলবে?"
কৌশিক তীক্ষ্ণ স্বরে বললো,
"অন্যের ঘাড়ে এসে চেপেছেন! অথচ খাওয়ার বেলায় প্লেট ভরা এক গাঁদা খেতে হবে?"
অনন্যা রেগেমেগে ফায়ার হয়ে গেছে। রাগের চোটে বললো,
"খাওয়ার খোঁটা দিচ্ছেন? তাছাড়া, আমি তো আমার জামাইয়ের ঘাড়ে এসে চেপেছি, অন্য কারো তো নয়! বুঝলেন? এতো টুকু তো চাইতেই পারি।"
কৌশিক বিরক্তির সাথে বললো,
"কার জামাই? কিসের জামাই? আমাদের বিয়েই হয়নি।"
"একদম উল্টাপাল্টা বলবেন না। কাল তো সমস্ত আত্মীয় স্বজনের সামনে জোর করে বিয়ে করেছেন। এখন বলছেন বিয়েই হয়নি?"
কৌশিক ঠাণ্ডা গলায় বললো,
"বিদেশে আমরা এভাবে বিয়ে করি না!"
"বিদেশ নিয়ে এখন টানাটানি করবেন না। সব নিয়মকানুন মেনেই বিয়ে হয়েছে আমাদের। তাই আমাকে এড়াতে পারবেন না আপনি। আর বারবার বাড়ি থেকে বের করার কথাও বলতে পারবেন না। কারণ আপনার সবকিছু এখন আমার অধিকার।"
কৌশিক ক্ষিপ্ত হয়ে বললো,
"শাট আপ! আই ওয়াজ নট ইন মাই সেন্স ইয়াস্টারডে! তাই এসব বিয়ে হয়েছে কি হয়নি ম্যাটার করে না আমার কাছে!"
অনন্যা হাত তালি দিয়ে বললো,
"বাহ! বাহ! এখন উনি বলছেন, আই ওয়াজ নট ইন মাই সেন্স? তো আংকেল! কোন সেন্সে গিয়ে... সবার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন এই বিয়ে হবে না? আর কোন সেন্সে বললেন, আমিই অনন্যাকে বিয়ে করবো? তখন আপনার সেন্স কী ঈগল পাখির সাথে ঘুরতে বেরিয়ে ছিল? নাকি নিঃশ্বাসের বাতাসের মতো হারিয়ে গিয়েছিল?"
কৌশিক রাগে ফুঁসছে। সে রাগের অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। কালকের বিষয়টা নিয়ে সে আগে থেকেই ভিতরে ভিতরে চিন্তিত ছিল, কিন্তু কাউকে কোনো কৈফিয়ত দিতে রাজি ছিল না। এক সেকেন্ডের মধ্যে তার চোখে এক ভয়ানক জ্বালা অনুভূত হলো। রাগের মাথায় টেবিলের উপর হাতের মুঠো দিয়ে জোরে, খুব জোরে আঘাত করলো।
কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো! সেকেন্ডের মধ্যেই টেবিলের কাঠ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গিয়ে নিচে আছড়ে পড়লো। টেবিলের উপর থাকা সব প্লেট আর কাপগুলো ছিটকে নিচে পড়ে ভেঙে গেলো। আর খাবারগুলো ছড়িয়ে পড়লো ঘরের কিছু অংশ জুড়ে। এক মুহূর্তে, যেন পুরো পরিবেশ জুড়ে তীব্র শব্দের তরঙ্গ তৈরি হলো, প্লেটের শঙ্খধ্বনি, খাবারের পড়ে যাওয়ার শব্দ, আর কৌশিকের চোখের আগুনে ঘরটা যেন অস্থির হয়ে উঠলো। অনন্যা ডাইনিং টেবিলের অবস্থা দেখে কেঁপে উঠলো আর ঢোক গিলে তাকিয়ে রইল স্যারের দিকে।
শব্দের প্রতিধ্বনি সারা ঘরজুড়ে ছড়িয়ে পড়তেই লারা ছুটে আসলো। সে একটা রুম গোছানোর কাজে ব্যস্ত ছিল, তাই কৌশিক ওকে ডাকেনি। ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে এই অবস্থা দেখে থমকে দাঁড়িয়ে গেলো। মুখে হাত চেপে রেখে দাঁড়িয়ে রইল কিছু সময়। কিছুক্ষণ স্তব্ধ থাকার পর শক সামলে অনন্যার পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
"তোমাক্কো তো বলছিলু, সাবের লগে ঠিকমতো কতা কইতে। তুমি ক্যান কথা শুনলা না, হুহ?"
অনন্যা কিছুক্ষণ মাথা নত করে বসে রইল। তারপর হঠাৎ দমে না গিয়ে বললো,
"লারা! আপনি জানেন এই লোকটা আমাকে কালকে বিয়ে করেছে! আর আজ উনি বলছে কোনো বিয়েই হয়নি। এই অবস্থায় আমার কী করা উচিত আপনি বলুন?"
লারা চিৎকার করে উচ্চারণ করলো,
"সাব, আপনে বিয়ে করছেন? আর জানাইলেন না? এখন আবার অস্বীকার ও করছেন? একদিনে এতো কাহিনী হইলো আর আপনে কিছুই জানাইলেন না?"
কৌশিক বিরক্ত হয়ে লারার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বললো,
"লারা! যা জানো না তা বলতে এসো না!"
লারার কথা শুনে অনন্যার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো। ক্ষিপ্ত হয়ে বললো,
"কী ভুল বলেছে? বিয়ে তো সত্যিই হয়েছে। মেনে নিচ্ছেন না কেনো?"
লারা মাথা নাড়িয়ে বললো,
"সেটাই তো!"
অনন্যা লারাকে বললো,
"তোমার স্বামী যদি বিয়ে করে বলে বিয়ে হয়নি আমাদের, তখন তুমি কী করতা?"
লারার চোখে ক্ষোভ ফুটে উঠলো। সে কড়া গলায় বললো,
"আরে আমি ঝাড়ুর বারি দিতাম পরে সারা রাত বাইরত দাঁড় করায়া রাখতাম!"
অনন্যা মুচকি হেসে বললো,
"তাহলে এখন কী আমারও এটা করা উচিত? তুমি কী বলো?"
লারার মুখটা থমকে গেলো। রাগী স্বরে বলে উঠলো,
"হ্যাঁ... অবশ্যই! করাটাই ঠিক হবে!"
পরক্ষণেই কৌশিকের তীক্ষ্ণ রাগী চোখ পড়তেই লারা দাঁতের পাটি বের করে হাসলো, বললো,
"না না... মানে আমার মাথা গরম হইছিলো। এরকম কিছু করা ঠিক হইবো না!"
অনন্যা এবার ভুরু কুঁচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কৌশিকের দিকে তাকিয়ে বললো,
"তাহলে কীভাবে এই সমস্যার মীমাংসা হবে? স্যার, আপনি বলুন!"
কৌশিক এবার রাগান্বিত হয়ে অনন্যার দিকে তাকালো। তার তীক্ষ্ণ চোখে একটা চাপা ধমক ছিল। কতক্ষণ তাকিয়ে থাকলো, সেটা বোঝা মুশকিল। অনন্যা তার চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়েই ছিল, যেন রাগের আগুনকে জ্বালাতে চায়।
অবশেষে কৌশিক গভীর শ্বাস ফেলে মাথা ঠান্ডা করে বললো,
"মিস শিকদার যা খেতে চায়, তা খেতে দাও। আর আমার খাবার গরম করে আনো। আমি সোফায় বসছি।"
লারা মাথা নত করে শান্ত স্বরে বললো,
"ঠিক আছে সাব।"
কৌশিক ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। তার পায়ের শব্দ মেঝেতে গমগম করে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল।
অনন্যা ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে একগুচ্ছ চুল পিঠের দিকে ফেলে বললো,
"মিস্টার জামাই সাহেব! আমি অনন্যা শিকদার! আমার সাথে কেউ পেরে উঠতে পারে না, বুঝলেন? আমাকে বিয়ে করে বড় ভুল করেছেন। এখন ঠেলা সামলান!"
.
.
.
চলবে...................................................