কুহুকে নিয়ে সিঁড়ি ভেঙ্গে নামতে নামতে বলল রওনক,
"এই কথাটা তো আমার মাথাতেই ছিল না। আমাদের তো এখনো হানিমুনই হয়নি! কবে যাওয়া যায় বলো তো বউ?
কুহুর চোখদুটো বড়ো বড়ো হয়ে গেল। রওনকের টি-শার্ট মুচড়ে ধরে বলল,
"হ্যাঁ, প্রতিদিনই আপনার সাথে হানিমুনে চলে যাব।
" উহুম। হানিমুনে গিয়ে কয়েকদিন থাকলেই হবে। অবশ্য এই কয়েকদিনে আমার পোষাবে কিনা! সব বিপত্তি ঘটে এই কাজের জন্য। আমার তো ইচ্ছে করে তোমাকে নিয়ে দূর কোনো অজানায় হারিয়ে যাই! যেখানে শুধু ভালবাসা আর ভালবা......
রওনক পুরো কথা শেষ করতে পারলো না। তার আগেই কুহু তার পেলব হাতখানা নিয়ে মুখ চেপে ধরলো। বাকি আর কথা বাড়ালো না রওনক। সামনে তাকিয়ে হাঁটা ধরলো। দাঁত চিবিয়ে বলল কুহু,
"দুনিয়ার সব ভালবাসা আপনার ভেতরেই! যারা প্রেমের ইতিহাস করে গেছে তারাও বোধহয় এত ভালবাসেনি।
রুমে এসে কুহুকে খাটে নামিয়ে দিয়ে একটুখানি সুর তুলে বলল রওনক,
" এ বুকে বইছে যুমনা নিয়ে অথৈ প্রেমের জল। তার তীরে গড়বো আমি আমার প্রেমের তাজমহল।
কুহু বোকার মতো তাকিয়ে রইল। এ কোন রওনক ভাইকে দেখছে? যার মুখ দিয়ে সবসময় ঝাঁঝালো কথা ছাড়া কিছু আসতো না! মনে হচ্ছে এই প্রেম শতবছর ধরে লালিত তার অন্তঃকরণে! পাশেই ধপাশ করে খাটে শুয়ে পরলো রওনক। দৃষ্টি রাখলো সিলিং ফ্যানের দিকে। বুকের বা পাশে ডান হাতটা চেপে ধরে বলল,
"সম্রাট শাহজাহানের তাজমহলের থেকেও বিরাট বড়ো তাজমহল তোমার জন্য বানিয়েছি কুহেলিকা! ঠিক আমার বুকের এখানটায়!
চোখ সরুসরু করে রওনককে পর্যবেক্ষণ করলো কুহু। দিনদিন বেরসিক, কলহপ্রিয় রওনক ভাই যেন রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছে! সবকিছু ঠিক হজম হচ্ছে না! কুহুর ভাবুক মুখের দিকে তাকাল রওনক। পরক্ষণে হাত টেনে ধরে টেনে নিল স্বীয় বক্ষস্থলে। টাল সামলাতে পারলো না কুহু।তার অধরোষ্ঠ ঠেকলো রওনকের গলার পাশে। জড়িয়ে নিয়ে কানের পাশে ফিসফিস করে বলল রওনক,
" ভালবাসাতে কোনো খাঁদ হয় না, নির্বোধ মেয়ে। অহেতুক সন্দেহ একটা সুন্দর সম্পর্কের জোড়া কে আলগা করে দিতে সক্ষম। আমি প্রতি মুহূর্তে, প্রতিনিয়ত ভালবাসি জানান দিয়ে যাব। তুমি শুধু অনুভব করে যাবে।
কথা বলা শেষে কুহুর কানে ছোট্ট একটা চুমু খেল রওনক। মৃদু কেঁপে উঠলো কুহু। দ্রুত মাথা তুলে রওনকের দিকে তাকাল। একমুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছে রওনক ভাই তাকে পড়ে নিয়েছে! মন অবধি হদিস করে নিয়েছে। রওনকের মুখের উপর ঝুঁকে আছে কুহু। চোখে একরাশ মায়া নিয়ে তাকিয়ে আছে রওনক। হাত বাড়িয়ে কুহুর পাতলা ঠোঁট জোড়া আঙ্গুল দিয়ে ছুঁয়ে দিল। অপ্রতিভ হয়ে বার কয়েক চোখের পাতা ঝাপটালো কুহু। কোনোরকম কপালে হাত রেখে বলল,
"দু'দিন ধরে ঠিকঠাক ঘুম হচ্ছে না। মাথাটা ব্যাথা করছে।
রওনকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পরলো। উঠে বসলো সে। বিছানার পাশ টেবিলের ড্রয়ার হাতড়ে মাথা ব্যাথার মলম বের করলো। কুহুকে টেনে নিজের কোলে শুইয়ে দিল। চুলে হাত বুলিয়ে দিল খানিক। কুহু অবাক দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে আছে। এরুপ কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিল না। কুহুর মাথায় মলম লাগিয়ে আলতো করে টিপে দিল। চোখ বুজে রাখলো কুহু। বন্ধ চোখের দিকে তাকিয়ে ঈষৎ হাসলো রওনক। মুখের আদল বলছে স্বস্তি পাচ্ছে মেয়েটা।
" ঘুম হলে ঠিক হয়ে যাবে দেখো। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি চুপচাপ ঘুমিয়ে যাবে।
কুহু চোখ মেলে তাকালো। রওনকের কোমড় জড়িয়ে নিয়ে আরেকটু গুটিসুটি হয়ে গেল। এই স্পর্শে কোনো স্বার্থ নেই! আছে অফুরন্ত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। ভেবেছিল রওনকের ভাইয়ের মনে হয়তো অন্য বাসনা চেপেছে। অথচ কুহুর সামান্য মাথা ব্যাথার কথা শুনে কেমন চিন্তিত হয়ে গেল লোকটা! হঠাৎই কুহুর ভেতর থেকে কেউ বলে উঠলো, তুমি খুব সৌভাগ্যবতী মেয়ে! পুরুষের এমন যত্ন আর নিটোল ভালবাসা কি সহজে মেলে? তবুও যদি সন্দেহ পুষে রাখো তবে সত্যিই নারী বোকা তুমি! কুহুর মাথায় ছোট্ট একটা চুমু খেল রওনক। মেয়েটা শান্তিতে ঘুমালেই নিশ্চিন্ত। সম্ভব হলে এইটুকু ব্যাথা নিজেই শুষে নিতো। কুহুর বন্ধ চোখের কার্নিশ বেয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। অসুস্থ হলে ঠিক মায়ের কোলে এভাবে শান্তিতে চোখ বুজতো। বাবার আদর তো জোটেইনি কপালে। খুব ছোট বেলায় হারিয়েছে। ঠিকঠাক সুন্দর একটা স্মৃতিও তার মানসপটে নেই! শুনেছিল একটা মেয়েকে তার বাবার চেয়ে অধিক ভালবাসতে পারে না কেউ।সে সৌভাগ্য তার হয়নি। রওনক ভাইকে পাবার পর মনে হচ্ছে দূর্ভাগ্যও নয় তার। কুহুর শরীর মৃদু কাঁপছে কান্নার দাপটে। হঠাৎই যেন টনক নড়লো রওনকের। বিচলিত হয়ে কুহুর গালে হাত রাখতেই দেখলো ভেজা!
"কুহু? মাথা বেশি ব্যাথা করছে? খারাপ লাগছে? বলো আমাকে? এই কুহু?
রওনকের কোল থেকে মাথা তুলো উঠে বসলো কুহু। ভেজা চোখে কিয়ৎক্ষণ তাকিয়ে রইল চিন্তিত রওনকের মুখে। পরক্ষণে বক্ষস্থলে ঝাপিয়ে পরলো। কান্নার বেগ বাড়লো। রওনকের ভেতর অস্থির হয়ে উঠলো! হঠাৎ কি হয়ে গেল মেয়েটার? কুহুর কান্না তার বুক ক্রমেই ভারী করে তুলল। নিশ্বাস রোধ হয়ে রইল। বুকের সঙ্গে শক্ত করে জড়িয়ে নিল সে। কান্নারত স্বরে থেমে থেমে বলল কুহু,
" আপনি আমায় এত কেন ভালবাসেন রওনক ভাই?
কুহুর কান্নার কারণ এতক্ষণে বোধহয় ঠাওর করতে পারলো রওনক। একটুখানি যত্ন পেতেই মেয়েটা আবেগপ্রবণ হয়ে গেছে। মাথায় অনেকগুলো চুমু খেয়ে বলল রওনক,
"ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে! এতখানি ভালবাসি কেন সেটা তো নির্দিষ্ট করে বলতে পারব না। ভালবাসার কোনো সংজ্ঞা হয় না। তবে আমি কিন্তু ভালবাসার বিনিময়ে ভালবাসা আদায় করে নিতে জানি। একচুলও ছাড় দেই না।
মিনমিনে গলায় বলল কুহু,
" আমি ঋণ রাখি না। অবশ্যই শোধবোধ করে দিব।
রওনকের ওষ্ঠকোণে হাসি ফুঁটে উঠলো। বোকা মেয়েটা ভালোই উত্তর দিতে জানে তবে!
◼️
ঘড়িতে সকাল নয়টা। নাশতা তৈরি করছেন শারমিন বেগম। হাতে হাতে এগিয়ে দিচ্ছে জুলেখা। কুহু আজকে এখনো জাগেনি। ব্যাপারটা অবাক করেছে শারমিন বেগমকে। অন্যদিন ঠিক সকালেই জেগে যায় মেয়েটা। হয়তো জুলেখাকে রাখা হয়েছে বলেই মেয়েটা আশকারা পেয়ে বসে আছে। বেশ বিরক্ত নিয়েই কাজ করছেন শারমিন বেগম। টেবিলে খবরের কাগজ হাতে অপেক্ষায় বসে আছেন রাশেদ জামাল। কিছুক্ষণের মাঝে রিশা উপস্থিত হলো। তক্ষুনি কলিং বেল বেজে উঠলো। এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল রিশা। তোহা আর আফসানা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন হাসিমুখে। বেশ খুশিমনেই অভিবাদন জানালো রিশা। তোহা হাত থেকে ফলমূল আর মিষ্টির প্যাকেট ধরিয়ে দিল। ভেতরের রুমে গিয়ে মাকে ডাকলো রিশা। মেয়ের মুখে কুটুম আসার খবর ঠিকই পেয়েছেন শারমিন বেগম। বাহিরে যেতে ইচ্ছে হলো না তার। হাতের কাজ পড়ে আছে। এক্ষুনি স্বামীকে খাইয়ে বিদেয় দিতে হবে। জুলেখার উদ্দেশ্যে বললেন বেশি করে চা বসিয়ে দিতে। আর ফলমূল কাঁ-টতে। রিশার বদৌলতে এতক্ষণে জুলেখার জানা হয়ে গেছে বাড়িতে কুহুর মা আর ভাবী এসেছে।
রাশেদ জামাল বেশ হাসিখুশিই কুশল বিনিময় করছেন। কিছু সময়ের মাঝে জুলেখা এসে পরোটা আর আলুভাজি দিয়ে গেল। আর কুহুর বাড়ির লোকদের জন্য কাঁ-টা ফলমূল। দৃষ্টি ঘুরিয়ে কুহুকে খুঁজছিল তোহা। জুলেখা দাঁড়িয়ে ফটাফট নিজের পরিচয় দিতে শুরু করলো। এই বাড়ির নতুন কাজের লোক সে। রওনক স্যার নিয়ে এসেছে তার বউয়ের কষ্ট কমাতে। বউ যেন সংসারের কাজের চিন্তায় পড়াশোনার ক্ষতি না করে। জুলেখার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে তোহা। মনে হচ্ছে কথা একটু বেশিই বলে এই মেয়ে। জুলেখার কথাগুলো বেশ ভালো লাগলো আফসানা বেগমের। জামাই তবে এত চিন্তা করে তার মেয়ের জন্য? খাওয়া শেষ হতেই তাড়া নিয়ে চলে গেলেন রাশেদ জামাল। রওনকের দরজা ভেতর থেকে লক করা দেখে আর ডাকলো না রিশা। ফিরে আসলো। হাত মুছতে মুছতে প্রবেশ করলেন শারমিন বেগম। ঠোঁটে কৃত্রিম হাসি নিয়ে বললেন,
"অনেক্ক্ষণ যাবৎ বসিয়ে রাখলাম। আসলে একা হাতে সব কাজ দেখতে হয় তো। কাজের লোক দিয়ে কি আর রান্না বান্না হয়? তা কুহু কি এখনো আসেনি আপনাদের খবর পেয়ে?
রিশা কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেল। আফসানা বেগম কথার প্রসঙ্গ পাল্টালেন। মেয়ের শশুড় বাড়িতে দাওয়াত দিতে এসেছেন জানালেন। শারমিন বেগম হাসিমুখেই দাওয়াত গ্রহণ করলেন। পরক্ষণে রিশাকে আদেশ করলেন কুহুকে ডাকার জন্য। খানিক থতমত খেল রিশা। তোহাকে ডেকে নিয়ে গেল সঙ্গে। নিজের রুমে এসে বলল রিশা,
" কুহুরা এক জায়গায় গিয়েছিল। ফিরেছে কাল রাতে। ডাকতে গিয়ে দেখি দরজা ভেতর থেকে লক। তাদের ডাকা কি ঠিক হবে ভাবী?
মুখ টিপে হাসলো তোহা।
"মনে হচ্ছে হানিমুন থেকে ফিরেছে আমার ননদী। ঠিকঠাক ঘুমায়নি তাই হয়তো জাগতে পারেনি এখনো। ডাকা অবশ্যই ঠিক হবে না তবে এটা যে তার শশুড় বাড়ি সেটা ভুলে গেলেও চলবে না।
" তাহলে তুমিই গিয়ে ডাকো। আমি পারবো না।
•
কলেজ যাওয়ার জন্য একেবারে তৈরি রওনক। আয়নায় দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। খাটে শুয়ে তাকিয়ে আছে কুহু। শেষ রাতে গায়ে জ্বর উঠেছিল। সেসময় থেকে রওনক একটুখানিও ঘুমায়নি। যত্ন নিয়েছে কুহুর। গা মুছিয়ে দিয়ে ঔষধ দিয়ে দিয়েছে। কড়াকড়ি নির্দেশ জানিয়েছে কুহু যেন চুপচাপ শুয়ে থাকে। বাকিটা সে সামলাবে। এভাবে শুয়ে থাকতে ভাল লাগছে না কুহুর। বাইরে সবাই কি ভাবছে কে জানে। শরীর ভীষণ দূর্বল লাগছে। রওনক ভাই বেরিয়ে গেলে ওঠে বাইরে যেতে হবে তাকে। আয়নায় তাকিয়ে বলল কুহু,
"আপনি এত সেজেগুজে বের কেন হচ্ছেন রওনক ভাই? ওই শাহিনূর মাহি ম্যামের জন্য? আজকে তো আমি যাচ্ছি না তাই একটু বেশিই পরিপাটি হয়ে যাচ্ছেন আপনি।
কুহুর কথা শুনে ঘুরে তাকাল রওনক। এমন কিছু শুনবে ভাবতে পারেনি। গলা খাকাড়ি দিয়ে বলল,
" রোজ তো এভাবেই যাই। তাছাড়া তোমার বর কি দেখতে সুন্দর নাকি? সেজেগুজে গেলেই বা কি?
"কে বলেছে সুন্দর না? আপনি তো.....
কথাটুকু বলেই থেমে গেল কুহু। রওনক ভাই কথার জালে ফাঁসিয়ে দিয়েছে তাকে। আমতাআমতা করলো। রওনক উৎসুক দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে আছে। শোয়া থেকে উঠে বসলো কুহু। হতাশার শ্বাস ফেলে বলল রওনক,
" হাজার রমনী দৃষ্টি দিলেই কি! নিজের বউয়ের মুখেই এখনো প্রশংসা শুনতে পেলাম না। অবশ্য হট লুক দিলে সে আমার দিকে তাকায়ই না লাজে!
কুহু উত্তর দেওয়ার আগেই দরজায় টোকা পরলো। রওনক এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো তোহা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। সালাম জানাল সে।কুশল বিনিময় করলো হাসিমুখে। দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে বলল। কলেজ যাওয়ার সময় হয়েছে জানিয়ে চলে গেল। কুহু ততক্ষণে বিছানা ছাড়লো। তোহা এগিয়ে এসেই কুহুর দিকে একটা পলিথিন ব্যাগ ধরিয়ে দিল। এতে কুহুর সেই লাল আর সাদা গোলাপের গাছ দুটো। ভীষণ খুশিমনে সেগুলো হাতে নিল কুহু। আচমকা কুহুর গলার পাশে দৃষ্টি আঁটকে গেল তোহার। মৃদু হাসি ফুটে উঠলো তার ঠোঁটের কোণে। গলা ঝেড়ে বলল,
"তা ননদী, হানিমুন কেমন কাঁটলো? অবশ্য ভালোই কেটেছে মনে হচ্ছে। গলায় ভালবাসার চিহ্ন একেবারে জ্বলজ্বল করছে!
তোহার কথা কর্নপাত হতেই কুহুর ডানহানটা চলে গেল গলায়। অপ্রতিভ হয়ে গেল সে। বারকয়েক চোখের পাতা ঝাপটে নিয়ে ওড়না খুঁজতে লাগলো খাটে। লজ্জায় যেন পালাতে চাইছে মেয়েটা। শব্দ করে হাসলো তোহা। গায়ে কোনোরকম ওড়না জড়িয়ে নিয়ে গাছ দুটো নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল কুহু। গাছদুটোতে সাদা আর লাল দু'টো গোলাপই ফুটে আছে। এর মানে তবে কি দাঁড়ায়? রওনক ভাই ফিরলে আজ অবশ্যই জিগ্যেস করবে। এসব যুক্তি সে ছাড়া আর কে বলতে পারবে? তোহা বেলকনিতে চলে আসলো। কুহুর মাথায় বড়োসরো ঘোমটা দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
" তোমার এই লাজুকতাই বলে দিচ্ছে তুমি ঠিক কতটা সুখে আছ কুহু! জীবনে একটা সঠিক মানুষ পেলে আনন্দময় হয়ে ওঠে প্রতিটা মুহূর্ত, ক্ষণ। ভালবাসা এমন একটা জিনিস যেটা ভালবাসা দিয়েই অর্জন করতে হয়। অন্য কিছু দিয়ে পরিমাপযোগ্য নয়। রওনক তোমাকে খুব ভালবাসে সেটা বাইরের মানুষকে আচার-আচরণের মাধ্যমে বুঝতে দিও না। শুনেছি তোমার জন্য নাকি রওনক কাজের মেয়ে এনেছে। এতে তোমার শাশুড়ি খুব একটা খুশি হয়েছে মনে হয়নি। সংসারটা তোমার কুহু। সবার মন জুগিয়ে চলা তোমার কাজ। একতরফা স্বামীর ভালবাসা পেয়ে সব ভুলে যেয়ো না। রওনকের যা ইচ্ছে হয় করুক। বাঁধা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে তুমি তোমার সর্বোচ্চ দিয়ে সবাইকে খুশি রাখবে। এই যে রান্নার কাজটা সেটা তুমি দেখতে পারো কুহু। যেচে শাশুড়ির কাছ থেকে সব শিখে নেবে।
কুহু একদৃষ্টিতে ভাবীর দিকে তাকিয়ে কথাগুলো শুনছিল। চমৎকার ভাবনার মেয়ে তোহা। নিজের সংসারটা সত্যিই খুব সুন্দর ভাবে আগলে নিয়েছে। কখনো কোনো অভিযোগ বা রাগ হতে দেখেনি। কাজ বেশি হলেও কোনোদিন উচ্চ শব্দে ভাইয়ের মুখের উপর কিছু বলতে দেখেনি। এই জন্যই বোধহয় ভাইয়া এত মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসে ভাবীকে। কুহুর গালে হাত বুলিয়ে নিয়ে বলল তোহা,
"বিয়ে একটা মেয়ের জীবনের সবচেয়ে বড়ো পরিবর্তন কুহু। দায়িত্ব বেড়ে যায়। তুমি পড়াশোনা করছো, স্বামীর সাপোর্ট পাচ্ছ খুব ভালো, তবে নিজের দায়িত্ব আর কর্তব্য থেকে সরে যেও না।
রিশা ডাকতে ডাকতে চলে আসলো। কুহু আর তোহা রুমে চলে আসলো। রিশাকে তৈরি দেখে বলল কুহু,
" কিরে তুই ভার্সিটিতে যাচ্ছিস নাকি রিশু?
রিশা যেন একটু থতমত খেল। আমতাআমতা করে বলল,
"হ্যাঁ,,মানে যাচ্ছি তো ভার্সিটিতে। তুই জানিসনা আজ নবীন বরণ? সবাই ফোন করছে যাওয়ার জন্য। একটু ঘুরে আসি। আমি তো দু'দিন যেতেই পারিনি।
আফসোসের স্বরে বলল কুহু,
" ইশশ, আমারও যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু তোর ভাই তো নিষেধ করে গেল। একটু জ্বর এসেছিল তাই।
"ভাইয়া যখন নিষেধ করেছে তাহলে আর যাবার দরকার নেই তোর। বাসায় আরাম কর। নয়তো চিনিসই তো আমার ভাইকে। আচ্ছা আমি বেরুচ্ছি। তোকে আর ভাবীকে বসার রুমে ডাকছে। তাড়াতাড়ি যা।
কথাটুকু বলেই তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে আসলো রিশা। দরজার বাইরে এসে সঙ্গোপনে স্বস্তির শ্বাস ফেলল। সে তো এখন রাতিম ভাইয়ের ফ্ল্যাটে যাবে। কাল থেকে লোকটাকে ফোন করে বন্ধই পাচ্ছে। কোনো বিপদ হলো কিনা কে জানে। দুশ্চিন্তায় রাতে একটও ঘুম হয়নি। যে পর্যন্ত চোখের দেখা না দেখবে দুদণ্ড শান্তি মিলবে না।
·
·
·
চলবে...............................................