তুমি রবে নীরবে - পর্ব ৩১ - নাদিয়া সাউদ - ধারাবাহিক গল্প


সামনে বড়ো এক ঝিল। একমনে বসে আছে রিশা। আশেপাশে লোক সমাগম ভালোই। বিকেলের ফিকে হয়ে যাওয়া কমলা রঙা সূর্যের আলো ছুঁয়েছে রিশার চোখেমুখে।একদৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে আছে সে। অন্যরকম এক ভাল লাগা কাজ করছে ভেতর জুড়ে। রাতিম ভাই দেখা করতে বলেছে। তার মানে আজ অবশ্যই কিছু বলার আছে তার! এটা চিন্তা করতেই সারারাত ঘুম হয়নি। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ঠিকই বুঝে নিয়েছে সব। আশ্চর্যজনক ভাবে রাতিম ভাইকে নিয়ে ভাবতে একটুও খারাপ লাগেনি রিশার। নিজেকে মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করেই এসেছে। রাতিম ভাইকে শূন্য ফেরাবে না। এত সুন্দর মনের একটা পুরুষের জন্য এক তরফা ভালবাসার রোগ থেকে মুক্তি মিলেছে। আগের মতো আর টান টা ঠিক অনুভূত হয় না আশফিক ভাইয়ের জন্য। জীবনে যোগ্য একজন কেউ আসলে সবকিছু খুব সুন্দর হয়ে যায়। রিশার জীবনের যোগ্য পুরুষটা যে রাতিম ভাই এতে একচুলও সন্দেহ নেই। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই আপন মনে হেসে ফেলল রিশা। মন বুঝি আজ একটু বেশিই ভালো।হাত ঘড়িতে সময় দেখে নিল।সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। মনে হচ্ছে একটু বেশিই দেরি করছেন রাতিম ভাই। ঢাকার জ্যাম ঠেলেঠুলে আসতে দেরি হচ্ছে বোধহয়।

"আইরিশ?

চিরচেনা ভরাট কন্ঠস্বরটুকু শুনে তড়িৎ গতিতে ঘুরে তাকাল রিশা। আকাশী রঙের শার্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে রাতিম। শার্টের উপরের বোতাম খোলা।কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো উদভ্রান্তের মতো উড়ছে। ফর্সা মুখশ্রী জুড়ে অপরাধীর ছাপ।রিশা তাকিয়ে রইল নিনির্মেষ। হঠাৎই তার হৃৎস্পন্দনের গতি বেড়ে গেল। তিরতির করে কাঁপলো চোখের পাতা। রাতিম এগিয়ে আসলো কয়েক পা। হাতে ছোট একটা বক্স।গিফট পেপার দিয়ে মোড়ানো। রিশার দিকে বাড়িয়ে ধরলো।মুহূর্তে রাস্তার ধারের নিয়নবাতি গুলো জ্বলে উঠল।আলোকিত করে দিল চারিপাশ।হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে রাতিম।জিগ্যেসু দৃষ্টি রিশার। তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল রাতিম,

" সামান্য একটা উপহার তোমার জন্য। আমার অসুস্থতার সময় অনেকটা সাহায্য করেছ তুমি। আমি কৃতজ্ঞ।

উপহার টা হাতে নিল না রিশা। অন্যপাশে দৃষ্টি রেখে বলল,

"আচ্ছা! সেবার বিনিময়ে দিতে চাচ্ছেন? এই জন্যই তবে ডেকেছেন আমাকে?

রিশার হাত টা টেনে ধরে উপহারটা হাতে ধরিয়ে দিল রাতিম।বেজায় চমকালো রিশা। সামনে দাঁড়ানো পুরুষটা এতখানি স্পর্ধা দেখাবে ভাবেনি।একগুচ্ছ ভালো লাগার দমকা হাওয়া ছুঁলো রিশাকে। পকেটে হাত পুরে নিল রাতিম।শান্ত জলের দিকে তাকিয়ে বলল,

" সবকিছুর বিনিময় চাইলেই কি পাওয়া যায় আইরিশ? মায়া, ভালোবাসার বিনিময় আশা করতে নেই। এমনটা ভাবতেও নেই। আমাদের ভাবনা মতো সরলরৈখিক ভাবে চলে না জীবন। সহজ কিছু বলতেও অনেক সময় কঠিনতম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।

"আমি আপনার মতো এত কঠিন কথা বুঝি না।

রিশার কণ্ঠে এখনো খানিক অভিমান। শব্দ করে হাসলো রাতিম।

" আমি তো সহজ করেই মেলে ধরলাম নিজে.......

কথা শেষ করতে পারলো না রাতিম।প্যান্টের পকেটে ফোন বেজে উঠলো। হাতড়ে ফোন নিয়ে রিসিভ করে কানে জড়ালো সে। বেখেয়ালি ফোনের সঙ্গে পকেট থেকে লাল টুকটুকে একটা গোলাপ পড়ে গেল মেঝেতে। সেটা দৃষ্টি গোচর হলো না রিশার। মুহূর্তে সমস্ত অভিমান দূরীভূত হয়ে গেল তার। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে রাতিম। রিশা ডেকে বলবে কিনা ভেবে পেল না। মিনিট একের মধ্যেই রাতিম একপ্রকার ছুটে এসে জানাল জরুরি ফোন এসেছে তার। এক্ষুনি যেতে হবে। রিশার উত্তর টা শোনার সময় হলো না। চলে গেল রাতিম। রিশা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কি এমন দরকারী কাজ পড়ে গেল যার জন্য বলে যাওয়া গেল না? মুহূর্তে আবারো মনটা ভীষণ ভার হয়ে গেল রিশার। মাটি থেকে ফুলটা কুড়িয়ে নিল সে। সযত্নে ব্যাগে নিয়ে হাঁটা ধরলো। 

◼️

রওনক আর কুহুর ফিরতে রাত আটটা বেজেছে প্রায়। চোখেমুখে আঁধার শারমিন বেগমের। পাশেই টিভিতে মনোযোগী রাশেদ জামাল। স্ত্রীর কাছে সবই শুনেছেন। ছেলের এমন কাউকে না জানিয়ে চলে যাওয়াটা ভালো লাগেনি তারও। কুহু রুমের কাছাকাছি আসতেই রিশাকে দেখলো।রওনক রুমে চলে গেল। রিশা কুহুকে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো। ক্লান্ত কুহুর পা চলতে চাইছে না।মলিন মুখে হাসলো একটু। রিশার চোখেমুখে আনন্দ আর খুশি! 

"কিরে আমার কলহপ্রিয় ভাইকে মানতে পারবি না বলেছিলি এখন তো সোজা হানিমুনে চলে গেলি।

কুহু থতমত খেল। বার কয়েক চোখের পাতা ঝাপটে নিয়ে আমতাআমতা করে বলল,

" ক..কিসের হানিমুন? তুই জানিস কি হয়েছিল?

কুহুর চোখেমুখে স্পষ্ট লজ্জার লাল আভা ফুটে উঠলো। হানিমুনের কথা বলতেই কেমন দৃষ্টি লুকিয়ে নিল। বেশ সুক্ষ্ম ভাবে পর্যবেক্ষণ করলো রিশা। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,

"কিভাবে জানবো? তুই আগেই ভালো ছিলি কুহু। কত কথা শেয়ার করতাম তোর সাথে। একসাথে কত সময় কাটাতাম! এখন তোকে ভাগে পাই আমি? আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের উপর এখন ভাইয়ার শতভাগ রাজত্ব চলে!

কথার প্রসঙ্গ পাল্টালো কুহু। ক্লান্ত গলায় সবকিছু খুলে বলল। তবে তাদের বিয়ের বিষয়টা সঙ্গোপনে লুকিয়ে গেল।সব শুনে হা হয়ে রইল রিশা। এদিকে বাবা, মা মন খারাপ করে আছে রওনক হুট করে চলে যাওয়ায়। আর এখন দেখা যাচ্ছে কাহিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন! কুহু ফ্রেশ হওয়ার জন্য তাড়া নিয়ে চলে গেল। রুমে আসতেই দেখে রওনক ভাই ঝটপট ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসেছে। পরনে কেবল তোয়ালে।উন্মুক্ত বক্ষস্থলে দৃষ্টি পরতেই তৎক্ষণাৎ ঘুরে গেল কুহু। বিষয়টা দৃষ্টিগোচর হলো না রওনকের। ঈষৎ হেসে চুলের মাঝে হাত চালিয়ে নিয়ে বলল সে,

"যে বই তোমার সম্পূর্ণ পড়া। যার প্রতিটা পৃষ্ঠা তোমার মুখস্থ সেটাকে না বোঝার মতো ভাবভঙ্গি দেখাতে পারো না মেয়ে।

রওনকের কথা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো কুহুর।কান দিয়ে রীতিমতো উত্তপ্ত ধোঁয়া ছুটে গেল। দাঁত কিরমিরিয়ে বলল,

" আপনার মতো নির্লজ্জ পুরুষ আমি আর দেখিনি।

দ্রুত পা চালিয়ে কুহুর সামনে এসে দাঁড়াল রওনক। দু'হাত দেওয়ালে রেখে বন্ধী করে নিল। কুহু পেছাতে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকলো তার। মাথা খানিক উঁচিয়ে তাকাল রওনকের চোখের দিকে। অদ্ভুত এক বাঁকা হাসি তার ওষ্ঠকোণে,

"আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম তুমি যে মাথামোটা একটা! এত সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার পরও রওনক ভাইকে পড়তে পারলে না? এক রাতেই ভুলে গেলে সব? 

লজ্জায় চোখ নামালো কুহু। রওনকের শক্তপোক্ত বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলো। কালকের ঘটনা ইচ্ছাপূর্বক মনে করিয়ে দিতে চাইছে রওনক। কুহু লজ্জায় আরো নুইয়ে গেল। কোমড়ে হাত পেচিয়ে নিজের সাথে কুহুকে মিশিয়ে নিল রওনক। কুহুর গলার পাশে দৃষ্টি আঁটকাতেই ভ্রু কুঁচকে গেল তার। একপাশে রক্ত জমাট হয়ে গাঢ় দাগ বসে আছে। মুচকি হাসি ফুটে উঠলো ওষ্ঠকোণে। হাত বাড়িয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ছুঁয়ে দিল রওনক। মৃদু কেঁপে উঠলো কুহু। অবুঝের মতো প্রশ্ন ছুঁড়লো রওনক,

" তোমার গলায় এটা কিসের দাগ কুহু? 

কথাটা বুঝতেই চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল কুহুর। শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে রওনককে ধাক্কা দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল সে।রওনক অবাক দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে আছে। হঠাৎই কুহুর শরীরে যেন অসুরে শক্তি ভর করেছে!

◼️

ছেলের জন্য খাবার নিয়ে বসে আছেন শারমিন বেগম। পাশেই বসে খাচ্ছেন রাশেদ জামাল। ছেলেকে নিয়ে স্বামীর মুখে কোনো কথা নেই। এই নিয়ে একটু মনঃক্ষুণ্নই তিনি। বিয়ের পর ছেলের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে ভালোই। অন্যদিনের মতো ছেলেকে আর ডাকলেন না। কিছু সময়ের মধ্যে রিশা উপস্থিত হলো। মেয়েকে দেখেই নীরবতা ভঙ্গ করলেন রাশেদ জামাল। ছেলের অপেক্ষা করলেন না। খুব ভালো একটা বিয়ের সম্মন্ধ নিয়ে এসেছেন। রিশার চঞ্চল ভাবটা হঠাৎই উবে গেল। দৃষ্টি তুলল না সে। প্লেটে ভাত নাড়াচাড়া করে বাবার কথা শুনলো। তার দোটানা মন কি চায়? কদিন আগেও যেখানে আশফিক ভাইয়ের চিন্তা ছিল সেখানে এখন নতুন করে রাতিম ভাইয়ের নাম উদয় হয়েছে। আজকে তো লোকটা এসেছিলই মনের কথা বলতে। কি এমন তাড়া ছিল যে চলে গেল! অভিমানে আর পাল্টা ফোন করেনি রিশা। এই মুহূর্তে বাবাকে কিভাবে নিষেধ করবে? পরশু ছেলেপক্ষ আসবে জানালেন রাশেদ জামাল। খুশিতে গদগদ হয়ে গেলেন শারমিন বেগম। ছেলে ডাক্তার! সব শুনে ভালোই মনে হয়েছে। রিশার গলা দিয়ে খাবার নামলো না। অদ্ভুত এক অস্থিরতা কাজ করলো। ঠিক যেন গলায় বিঁধে যাওয়া কাঁটার মতো! রাতিম ভাই যতক্ষণ না নিজ থেকে কিছু বলছে ততক্ষণ আগ বাড়িয়ে রিশার কিছু বলা শোভা পায় না। এমন ধারালো ব্যাক্তিত্বের পুরুষের সঙ্গে বুঝেশুনে কথা বলতে হয়। কিছু সময়ের মাঝে রওনক আর কুহু উপস্থিত হলো। অন্যদিনের তুলনায় কুহু যেন আজ বড়োসরো ঘোমটাই টেনেছে। মুখ তুলে তাকাননি শারমিন বেগম। রাশেদ জামাল টুকিটাকি কথা বললেন পাত্রপক্ষ নিয়ে।প্রস্তাবটা ভীষণ ভালো লাগলো রওনকের। ঠোঁটে হাসি নিয়ে রিশার দিকে তাকাল কুহু। খাওয়ার মাঝে মায়ের সঙ্গে কথা বলল রওনক। একদিনের জন্য সাজেক গিয়েছে জানাল। এমন জলজ্যান্ত মিথ্যা শুনে খাওয়ার মাঝে বিষম খেল কুহু। কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না শারমিন বেগমের। রওনক ব্যতিব্যস্ত হয়ে কুহুকে পানি খাইয়ে দিল। মাথার তালুতে ফুঁ দিয়ে দিল। ভীষণ চিন্তিত লাগলো তাকে। রিশা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। কুহু তাকে মিথ্যা বলল নাকি ভাইয়া মিথ্যা বলল বুঝতে পারলো না। বউয়ের প্রতি ছেলের এমন চিন্তা দেখে নীরবে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন শারমিন বেগম। নীরবে প্রস্থান করলেন রাশেদ জামাল। ছেলে বোধহয় ভুলে গেছে এখানে তার বাবা, মা উপস্থিত আছেন। রওনকের পকেটে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো। এতক্ষণে বোধহয় খেয়ালে এলো সে। পকেট থেকে ফোন বের করতেই দেখে রাতিম। একপলক কুহুর দিকে তাকিয়ে ছাদে চলে গেল সে। সিঁড়িঘরের কাছে এসে রিসিভ করে কানে জড়ালো। রাতিম জানাল পঞ্চাশ হাজার টাকা লাগবে তার। কেমন বিচলিতই লাগলো তাকে। পাল্টা আর প্রশ্ন করেনি রওনক। টাকা পাঠিয়ে দিবে বলল।

"ভালোবাসার মানুষটার জন্য সব সম্ভব তাই না ভাইয়া? যে কোনো উপায়ে মানুষটাকে নিজের করে পাওয়াই মূল লক্ষ্য থাকে। অনেকে বলে ভালোবাসলে পেতেই হবে এমন নয়।অপূর্ণতায়ও পূর্ণতা থাকে। তবে আমি বলবো এমন ভালবাসা জীবনে না আসুক! কুহুকে যদি তুই না পেতিস কোনো আক্ষেপ থাকতো তোর?

রিশার কথায় ঘুরে তাকাল রওনক। কিয়ৎক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,

" বেঁচে থাকার অর্থই হারিয়ে ফেলতাম। সত্যিকারের ভালবাসার মানুষকে হারালে তার আক্ষেপ কোনো কিছু দিয়ে মেটানোর নয়।

দীর্ঘশ্বাস ফেলল রিশা। হাত ভাজ করে দূরে দৃষ্টি রেখে বলল,

"ভালবাসা নীরবে বয়ে বেড়ানো টা খুব কষ্টকর ভাইয়া। একটা মানুষের জন্য আকাশসম অনুভূতি জমিয়ে যখন সেটা তাকে জানানোর উপায় থাকে না সে অনুভূতিটা আরো বেশি কষ্টদায়ক! তোর খুব ধৈর্য্য! কুহুকে সেই কবে থেকে ভালোবেসে গিয়েছিস অথচ এতদিনে তাকে জানালি! 

ঈষৎ হাসলো রওনক। 

"এই অনুভূতি আমাকে বড্ড পুড়িয়েছে। আর কুহুর মতো নির্বোধ মেয়েকে তো বোঝাতেই পারিনি কখনো। অথচ এই বোকামোই আকৃষ্ট করতো আমাকে। কুহুকে বহু আগে থেকেই ভালবাসতাম সেটা এখনো বলিনি।

তড়িৎ গতিতে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল রিশা,

" মানে? বিয়ে হয়ে গেছে তোদের আর এখনো বলিসনি? এটা তো অবশ্যই অন্যায় করছিস ভাইয়া।

শব্দ করে হাসলো রওনক,

"নির্বোধ মেয়ে যখন বোঝেনি সেটা আর প্রকাশ করিনি। তবে কুহুকে আমি ভালবাসি এটুকু জানিয়ে দিয়েছি। তবে তার জন্য যে বহু আগে থেকেই নীরবে অনুভূতি পুষেছি সেটা এখনো জানাইনি। এটা একান্ত আমার নিজের মধ্যে থাকুক।

" মানে কি? অনেক আগে থেকে ভালবাসতি সেটা বলবি না?

"বলতাম রিশ।কিন্তু এখানে অনেক ঝামেলা আছে।কুহু যদি প্রশ্ন করে, ভালবাসতেন তাহলে অন্য ছেলের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার সময়ও বাঁধা দেননি কেন? তখন কি বলবো? কিছু জিনিস একান্ত নিজের মাঝে রাখতে হয়। কুহু বহু আগে থেকেই নীরবে আমার মনের গহীনে আছে সেভাবেই থাকুক। তবে কাপুরুষের মতো পিছিয়ে নেই আমি। ভালবাসি ঠিকই জানিয়ে দিয়েছি।

সিঁড়ির কাছাকাছি শব্দ হলো। রওনক আর রিশা একত্রে তাকাল। কুহু উঠে এলো। হাসিমুখে চলে গেল রিশা। কুহু পিছু ডাকলো। কোথায় সেও আসলো আড্ডা দিতে এদিকে রিশা চলেই গেল! রওনকের দিকে দৃষ্টি পরতেই দ্রুত পা ফেলে এগিয়ে এসে বলল কুহু,

" খাবার টেবিলে সত্য বললে কি হতো শুনি? আমি তো রিশাকে বলে দিয়েছি সব সত্য কথা। আর আপনি বললেন সাজেক! রিশা ভাবছিল আমরা হানিমুনে গিয়েছি। এখন তো বাবা, মাও ভাববে আমর হানিমুনে গিয়েছি! 

কোনো উত্তর দিল না রওনক। কুহুকে কোলে তুলে নিল। চমকে উঠলো কুহু। অপ্রস্তুত হলো। আশেপাশে দ্রুত দৃষ্টি বুলালো। পাশের বিল্ডিং থেকে কেউ দেখে না ফেলে! রওনকের কপালে পড়ে থাকা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে। গভীর দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে আছে সে। 
·
·
·
চলবে...............................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন