তুমি রবে নীরবে - পর্ব ৩৩ - নাদিয়া সাউদ - ধারাবাহিক গল্প


দুপুরের খাবার খাইয়ে তবেই বেয়ানকে ছেড়েছেন শারমিন বেগম। সবটা রান্না করেছে কুহু। জুলেখা এটাসেটা এগিয়ে দিয়েছে। শাশুড়িকে রান্নাঘরে উঁকি পর্যন্ত দিতে দেয়নি। কুহুর এই আঁটসাঁট বেঁধে সংসারী হওয়াটা ভীষণ ভালো লেগেছে শারমিন বেগমের। অনেকদিন বাদে আজ মন খুলে গল্প করেছেন তিনি। সারাক্ষণ কাজ আর চার দেওয়ালে বন্ধীই কাটে। খাওয়া শেষ করেই রুমে এসে শুয়ে আছে কুহু। জ্বরটা আবারো বোধহয় মাথাচাড়া দিতে চাচ্ছে। দূর্বল লাগছে গা। অত্যল্পকালে নিদ্রার সায়রে ডুবল সে।


সন্ধ্যা পেরিয়েছে কিছুক্ষণ পূর্বে। অনেকটা মন খারাপ নিয়েই বাড়ি ফিরেছে রিশা। ফ্ল্যাটে রাতিম ভাইয়ের বন্ধুদের থেকে যতদূর জানতে পেরেছিল সে হুট করেই কাউকে কিছু না জানিয়ে গ্রামে চলে গেছে। রিশার মতো তারাও ফোন করে বন্ধ পাচ্ছে। চিন্তায় ভেতর অস্থির হয়ে উঠলো। কোনো অঘটন ঘটেছে ভেবে দুশ্চিন্তা বাড়লো। সম্ভব হলে গ্রামেই ছুটে চলে যেত রিশা। এই প্রথম অনুভব করলো কেমন দমবন্ধ লাগছে তার। খাটে বসে ছিল কুহু। দরজার পাশ দিয়ে রিশাকে যেতে দেখে ডাকলো জোড়ালো স্বরে। অন্যমনস্ক রিশা বোধহয় খেয়ালই করেনি। পাল্টা আর ডাকলো না কুহু। জ্বরের ঔষধ নেওয়ার জন্য উঠলো। রওনক ভাই ফিরে যদি দেখে তার গা গরম তাহলে নির্ঘাত লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে দেবে। দ্রুত ঔষধ খেয়ে বেরিয়ে আসলো রুম থেকে। রিশার রুমের কাছে আসতেই দেখলো ফোনে গভীর মনোযোগী। 

"কিরে রিশু? ডাকলাম শুনলি না কেন? আমি কখন থেকে তোর অপেক্ষা করছি। আজকে ভার্সিটিতে কি কি হলো শুনবো বলে। 

কুহুর রিনরিনে স্বর শুনে দৃষ্টি তুলে তাকালো রিশা। থতমত খেল খানিক। কি জবাব দেবে এখন? সে তো গুছিয়ে মিথ্যাও বলতে জানে না। তাছাড়া রূপসা, নয়ন, আরিয়ান আর সোহাকে ফোন করলেই জানতে পারবে রিশা আজ যায়নি। হাসার চেষ্টা করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় রিশা। ফ্রেশ হওয়ার জন্য ড্রয়ার থেকে জামা বের করতে করতে বলে,

" কি জানিসতো কুহু, পরোপকারী করতে গিয়ে ঝামেলার মধ্যে ফেঁসে গেছি। একটু শিশু আশ্রমে গিয়েছিলাম। বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাতে গিয়ে ভার্সিটির কথা ভুলে গেলাম।

কুহুর খুশি মুখখানা চুপসে গেল মুহূর্তে। রিশাকে প্রায়ই দেখত রাস্তায় অসহায় বাচ্চাদের সাহায্য করতে। টাকা, খাবার যা দিয়ে সম্ভব হতো। কথাটা বিশ্বাস করে প্রস্থান করলো সে। রিশা স্বস্তির শ্বাস ফেলল। মিথ্যা টা বলতে রীতিমতো ঘাম ঝরে গেছে। রাতিমের কথাটা কুহুকে বলতে না পেরেও শান্তি পাচ্ছে না। যদি এতসব ঝামেলা না থাকতো তবে কবেই জানিয়ে দিত রিশা। 

◼️

কুহু রুমে আসতেই দেখলো ফোন বাজছে খাটের উপর। সোহার ফোন। অবশ্য সকালের দিকে আরিয়ান ফোন করেছিল যাওয়ার জন্য। অসুস্থতার দোহাই দিয়ে না করে দিয়েছিল কুহু। এগিয়ে এসে ফোন রিসিভ করে কানে জড়াল। ওপাশ থেকে ঝড়ের গতিতে ধেঁয়ে আসলো কতগুলো কথা। সবাই কুহুর উপর ভীষণ অভিমান করেছে। বিশেষ করে সোহা। সে এই প্রথম নৃত্য করেছিল। স্টেজে এত মানুষের মাঝে নার্ভাসনেস বেড়ে গিয়েছিল খুব। আরিয়ান খুব সুন্দর ভাবেই সামলে নিয়েছে। অথচ কুহু দেখতে পারেনি ভেবে খারাপ লাগছে তার। কুহু স্বান্তনা দিল। আফসোস করলো খুব। সোহার কথা শুনে সত্যিই মনস্তাপ হচ্ছে। হুট করেই সোহা জানালো তারা সবাই কুহুর বাড়ি যাচ্ছে। সবার পারফরম্যান্সের ভিডিও দেখাতে। আর অসুস্থ কুহুকে দেখতে। সোহার কথা শুনে আৎকে উঠলো কুহু। সে তো শশুড় বাড়িতে! সবাই জানে না তার বিয়ে হয়ে গেছে! বাড়িতে গেলেই জানাজানি হয়ে যাবে! কোনোরকম তুতলে বলল কুহু, 

"শো,,,,শোন সোহা। আমি তো হসপিটালে। বাসায় কেউ নেই।দুদিন পর যাচ্ছিই তো ভার্সিটিতে। তখনই না হয় দেখব। আর সব গল্পও শুনবো।

কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলল সোহা,

" আচ্ছা। দেখলি তোকে ফোন না করলে জানতেই পারতাম না তুই বাড়িতে নেই। অযথা খালি বাড়িতে যেতাম! এদিকে আরিয়ান বলছিল তোকে সারপ্রাইজ দিবে। ভাগ্যিস যাইনি। নয়তো আমরাই সারপ্রাইজড হয়ে যেতাম।

"হু,,হ্যাঁ হ্যাঁ।

খানিক গলা খাঁকারি দিয়ে বলল সোহা,

" আরেকটা কথা কুহু। তুই তো বিশাল কিছু মিস করে ফেললি রে! আজকে রওনক স্যারের স্বাগত ভাষণ টা খুব সুন্দর ছিল। সাথে তাল মেলাচ্ছিল শাহিনূর মাহি ম্যাম। তারপর শেষে দু'জন নৃত্যও করেছিল। কি দারুণ মানিয়েছিল তাদের! দুঃখের বিষয় হচ্ছে এটা ভিডিও করতে পারিনি।

শেষের কথা শুনে কুহু ভয়ানক রেগে গেল। তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল। 

"কি বলছিস? রওনক স্যার নেচেছে? ওই শাঁকচুন্নির সাথে? আজকে আমি খবর করে ফেলবো।

" কি বললি? কার খবর করবি? তাছাড়া তুই হঠাৎ এমন রেগে গেলি কেন?

কুহুর টনক নড়লো সে কি বলে ফেলেছে। "কিছুনা" বলে ফোন কেটে দিল। খাটে ফোন ছুঁড়ে ফেলে ফ্যাচফ্যাচ করে কেঁদে ফেলল। ফোন হাতে নিয়ে চারজন অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। কোমড়ে হাত রেখে বলল রূপসা,

"দেখলি মহারানী ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে আর আমরা কেউ টেরই পেলাম না! একেবারে বিয়ে করে ফেলল। আর ভার্সিটিতে আসলে একেবারে যেন স্যারের ছাত্রী হয়ে যেত।

আরিয়ান বলল,

" তোরা তো কুহুকে আগে ফোন করে তারপর আসতে চেয়েছিলি। যদি না বলে আসতাম তাহলে কি এত বড় খবরটা জানতে পারতাম বল?

নয়ন বলল,

"আমি ভাবছি ওই রাগী স্যারের সঙ্গে আমাদের কুহু দিনের পর কাটাচ্ছে কিভাবে? স্যারকে দেখলেই তো সবাই সেঁধিয়ে থাকে। আর আজকে সোহা যেই ঝামেলা বাঁধিয়ে দিয়েছে দুজনের মধ্যে না জানি কি হয়।

সোহা বলল,

" তুই চুপ থাকতো। আমরা কি জানি নাকি কুহুর হাসবেন্ড যে রওনক স্যার? তাই একটু মিথ্যে বলে জগড়া বাঁধিয়ে দিলাম।

নয়ন বলল,

"স্যারের মুখের উপর জবাব দিতে পারবে তো কুহু?

রূপসা বলল,

" জামাই যদি অন্য মেয়েদের সাথে হাসিমুখে কথা বলে তাহলে কোনো বউ সেটা সহ্য করবে না বুঝলি। আমাদের কাছে সে স্যার। কিন্তু কুহুর তো জামাই! তার নিশ্চয়ই ভয়টয় নেই অত।

আরিয়ান তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল,

"আমি তো ভাবছি আমরা কেউই বুঝতে পারলাম না? ভার্সিটিতে স্যার তো এমন ভাব করে থাকতো যেন কুহু তার ছাত্রী ছাড়া কিছুই না। মাঝেমধ্যে কুহুর সাথে কথা বললে স্যার তখনই হাজির হয়ে যেত। যেই না আমরা একসঙ্গে নৃত্য করবো বলেছি তখনই স্যার এসে একগাদা কথা শোনালো আমাকে! তখনো আমার মোটা মাথায় কিছু প্রবেশ করেনি। 

সোহা বলল,

" কিভাবে প্রবেশ করবে বল? আমরা তো স্বপ্নেও ভাবিনি রওনক স্যার কুহুকে বিয়ে করবে! ভাই এখনো স্বপ্ন মনে হচ্ছে। এত রাগী স্যার, প্রেমের বিয়ে হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।

নয়ন বলল,

"ভাব একবার। বাসর রাতে কুহু যদি স্যারের কথা না শুনে থাকে তাহলে নির্ঘাত ধমকে দিয়েছে! নয়তো পানিশমেন্ট!

আরিয়ান বলল,

" তোরা কি গবেষণা করে যাবি নাকি বাসায় যাবি? বাকিটা আমাদের বুঝে নিতে হবে। কথা কিভাবে বের করতে হয় সেটাও জানা আছে। তোরা শুধু দ্যাখ আগে আগে কি হয়।

কুহুর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে চারজন গোল মিটিং করছিল এতক্ষণ যাবৎ। কখন রাত হয়েছে কারোরই বোধহয় খেয়াল নেই। আজকে কুহুর বাড়িতে এসে সত্যিই সারপ্রাইজড সবাই।

◼️

জানালার কাছে বসে আছে কুহু। ঘরের আলো নেভানো। অন্যদিনের তুলনায় আজকে যেন একটু বেশিই দেরি করছে রওনক ভাই। মনে সন্দেহ পাহাড় সম আকার ধারণ করছে। ভাবনার মাঝেই ঘরের আলো জ্বলে উঠল। কুহু ঘাড় ঘুরালো না। চেনা পারফিউমের ঘ্রাণে অনুভব করে নিল রওনকের উপস্থিতি। হাত ঘড়ি খুলতে খুলতে কুহুর দিকে একপলক তাকাল রওনক। গলা ঝেড়ে কেশে নিজের উপস্থিতি জানান দিল। কুহুর কোনো ভাবান্তর হলো না। মন খারাপ এটুকু যেন চট করেই বুঝে ফেলল রওনক। কারণ কি বুঝে উঠতে পারলো না। ফ্রেশ হতে চলে গেল সে। কুহু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। রওনক তাকে এড়িয়ে গেল ভাবতেই অবাক হলো! ড্রেসিং টেবিলের কাছে রওনকের ফোনটা বেজে উঠলো। তড়িঘড়ি করে নেমে গেল কুহু। স্ক্রিনে শাহিনূর মাহি ম্যামের নাম। ততক্ষণে রওনক চলে আসলো খোলা শার্ট নিয়ে। কুহুর কাছে জানতে চাইলো কে কল করেছে। ফোন নিজের হাতে রেখেই বলল কুহু, 

"আপনার কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী হবে হয়তো। পছন্দের মানুষও হতে পারে।

কুহুর কথায় ভ্রু কুঁচকে গেল রওনকের। কথার লাইন বাঁকা মনে হচ্ছে। আজকেই শাহিনূর মাহি তার ফোন নাম্বারটা নিয়েছিল। আগাম ঝড়ের পূর্বাভাস আঁচ করতে পারলো রওনক। একটুখানি বাঁকা হেসে কুহুকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। চোখ জুড়ে এক অন্যরকম ঘোর! শক্ত চোখেমুখে রওনকের পানে তাকিয়ে রইল কুহু। তার দু'হাতে ঠেকলো লোমশ বুকে। কুহুর কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বলল রওনক,

" আমার শুভাকাঙ্ক্ষী, পছন্দের মানুষ সবটাই তো তুমি বউ! অন্য কোথাও চোখ দেওয়ার সময় আছে নাকি আমার? সারাদিন খুব মিস করেছি। 

রওনকের উন্মুক্ত বুকে আঘাত করে বলল কুহু,

"তাই? তা আজকের দিনটি কেমন কাঁটলো? বিশেষ করে শাহিনূর মাহি ম্যামের সঙ্গে যখন নেচেছেন?

রওনকের কপাল ভাজ পরলো। কি সব উল্টাপাল্টা কথা বলছে এই নির্বোধ মেয়ে? নাকি রওনককে বাজাতে চাইছে?

"আচ্ছা রানী সাহেবা এবার বলুন তো আপনি রাগ কেন? আজকে ভার্সিটিতে যেতে দেইনি তাই? এই জন্য নির্দোষ আমাকে আপনি ভুলভাল বলে ফাঁসিয়ে দিতে চাচ্ছেন?

" কথা একদম ঘোরাবেন না রওনক ভাই! কি ভেবেছেন আমি খোঁজ পাব না? 

"কাল রাতের জ্বরে কি মাথার স্ক্রু ঢিলে হয়ে গেছে তোমার? কি সব বলছো তখন থেকে?

" আপনি শাহিনূর মাহি ম্যামের সঙ্গে কেন নাচলেন তার কৈফিয়ত দিন।

তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল রওনক,

"তুমি আসলেই একটা মাথা মোটা মেয়ে। কোথাও দেখেছ এমন অনুষ্ঠানে স্যার আর ম্যামেরা নাচে? আমাকে ফাঁসানোর আর কোনো বুদ্ধি পেলে না? অবশ্য ঘটে বুদ্ধি থাকলে তো!

কুহু ভাবনায় পরলো। ঠিকই তো! এটা তো সে ভাবেইনি। সে আজকে ভার্সিটিতে যায়নি তাই হয়তো সোহা ওরা মিথ্যে বলেছে। এমন কিছু ঘটলে অবশ্যই ভিডিও করে রাখতো তারা। ভাবুক কুহুর দিকে কিয়ৎক্ষণ তাকিয়ে থেকে অধরোষ্ঠ দখল করে নিল রওনক। চমকে উঠলো কুহু। রওনকের ভারী নিশ্বাস ছড়িয়ে গেল তার সম্পূর্ণ মুখাবয়বে। মনে মনে সোহাদের প্রতি ভীষণ রাগ হলো। সবকয়টাকে একবার সামনে পেলে উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে! এদিকে অযথাই চোখের জল ফেলেছে কুহু। গলায় গভীর স্পর্শ পেতেই ভাবনার জাল ছিন্ন হলো কুহুর। রওনক যেন মুহূর্তেই হারিয়ে যেতে থাকলো কুহুর মাঝে। ভয়ানক এক অনুভূতি মেরুদণ্ড শীতল করে দিল কুহুর। অত্যল্পকালে রওনককে জড়িয়ে নিল সে। হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল তার। শক্তপোক্ত পুরুষালি স্পর্শে শিরশির করে উঠলো পায়ের তলানি। কোনোরকম বলল সে,

" ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি খাবার দিচ্ছি। দরজা কিন্তু খোলা!

ধাক্কা দিয়ে রওনককে সরিয়ে দিতে চাইলো। একটুও হেলাতে পারলো না। দরজার দিকে তাকিয়ে বলল কুহু,

"আরে রিশু তুই?

মুহূর্তে ছেড়ে দিল রওনক। দরজার কাছে তাকাতেই মনে পরলো সে রুমে ঢোকার সময় দরজা লাগিয়েছিল। কুহু হাসতে হাসতে নুইয়ে গেল। চুলে হাত চালিয়ে নিয়ে বলল রওনক,

" রাত আবি বাকি হ্যায়। সবটা তো সুদেআসলে পূরণ করেই ছাড়বো। তুমি শুধু সময় গুনতে থাকো। আসছি আমি।

◼️

আজকে যেন জুলেখার কাজের চাপ একটু বেশিই।কিছুক্ষণের মাঝেই রিশাকে দেখতে আসবে পাত্রপক্ষ। কুহু নিজের হাতে সবকিছু গুছিয়েছে আজ। রান্নার দিকটাও দেখেছে। ছেলের বউয়ের প্রতি আজ খুশিই শারমিন বেগম। তবে রিশাকে রুম থেকে তেমন বের হতে দেখা গেল না। রাশেদ জামাল ফোন হাতে বসে আছেন। ছেলের বাবা ফোন করলেই তিনি রাস্তা থেকে এগিয়ে নিয়ে আসবেন। বাড়িতে যেন বিয়ে বিয়ে আমেজ চলে এসেছে একটা। কুহু ইচ্ছে করেই রিশার রুমে বেশি একটা যায়নি। মেয়েটার মনে কি চলছে তার জানা। আশফিক ভাইয়ের ঘটনার পর থেকে রিশা কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেছে। আগের মতো প্রাণ খুলে হাসে না, কথা বলে না। গুটিয়ে নিয়েছে সবকিছু থেকে নিজেকে। সবকিছু ভাবলে ভীষণ খারাপ লাগে কুহুর। কারো মনের উপর জোড় দেওয়া উচিত নয়। সে নিজেও তো রওনক ভাইকে বিয়ে করতে রাজি ছিল না। পরিস্থিতির কারণে হয়ে গেছে। অথচ এখন মনে হয় এই মানুষটা তার জীবনে না আসলে গোটা জীবনটাই অসম্পূর্ণ থেকে যেত। অনেক সাধনা করেও এমন মানুষ পায়না কেউ! কুহুর বিশ্বাস, রিশার জীবনটাও তার মতো আনন্দময় হয়ে উঠবে। মানুষের জীবনে একতরফা কষ্ট থাকে না। সুখও আসে। আর যা হয় ভালোর জন্যই হয়। সুন্দর সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। রাশেদ জামালের ফোন বেজে উঠতেই কুহুর ভাবনার ঘোর কাটলো। মহা আনন্দ নিয়ে বেরিয়ে গেলেন তিনি। তপ্ত শ্বাস ফেলে নিজের রুমে পা বাড়ালো কুহু। মনে মনে ভীষণ ভাবে চাইল স্বপ্নের মতোই রিশার জীবনটা পাল্টে যাক! ফিরে আসুক আশফিক ভাই। সব ঠিক হয়ে যাক।


বন্ধ দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রিশা। চোখ বেয়ে অনর্গল জল পরছে। নিঃশব্দে কাঁদছে আর রাতিমকে ফোন করে যাচ্ছে।বার বার বন্ধ বলছে। হাত দু'টোও অস্বাভাবিক কাঁপছে। বুক ধুকপুক করছে। শেষ মুহূর্তে রাতিম ভাইয়ের মুখ থেকে শুনুক সে তাকে ভালবাসে, তবে এক্ষুনি গিয়ে জোড় গলায় সবকিছু আঁটকে দিবে রিশা। যাবে না পাত্রপক্ষের সামনে। এসব আয়োজন তার দম বন্ধ করে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে হাত পা বেঁধে কেউ অশান্ত নদীতে ফেলে দিয়েছে তাকে। ধৈর্য্য বাঁধ মানলো না। নিজ থেকেই রাতিমকে ম্যাসেজ পাঠালো_____

‘আপনার ফোন বন্ধ কেন রাতিম ভাই? আমাকে প্লিজ একবার ফোন করুন। জীবনের এক কঠিন মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি আমি। সেদিন কথা কেন অসম্পূর্ণ রেখে চলে গেলেন? আমি অতসব জানতে চাই না। শুধু একটা কথা জানাতে চাই, আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি।’ 
·
·
·
চলবে..........................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন