মাই মিস্টিরিয়াস প্রিন্স - পর্ব ০৮ - মৌমিতা মৌ - ধারাবাহিক গল্প


"আমি নতুন স্যারের ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছি।"

অনন্যা নোহারার দিকে চোখ ফিরিয়ে ভ্রু কুঞ্চিত করে জিজ্ঞেস করে,
"খোঁজ নিয়ে কী পেলি?"

"স্যার ইতিহাস, ফিজিক্স,কেমিস্ট্রি এসব নিয়ে পড়াশোনা করেছে। ওনার এই সাবজেক্টে মাস্টার্স , পিএইচডি করা আছে।"

"বাপ রে!"

"হুম, আর পরের সেমিস্টারে উনার হিস্ট্রি আর ফিজিক্স কোর্সটা আমাদের পড়েছে।"

"হিস্ট্রি? উনি কি আমাদের অন্য দেশের ইতিহাস পড়াবেন?"

"আরে না! প্রাচীন যুগের ঘটনাপ্রবাহ আর নানা কাহিনীর উপর উনার গভীর জ্ঞান আছে। তাছাড়া, বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে রিসার্চ করতে এসেছেন উনি। এর বেশি কিছু জানতে পারিনি।"

"ওহ! বুঝলাম। এজন্যই বাংলাদেশে আসা।"

"হুম। তবে উনি অনেক আগেই বাংলাদেশে এসেছেন। কখন এসেছেন, তা কেউ সঠিকভাবে বলতে পারে না। আর উনার সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কারো কোনো ধারণাও নেই। উনাকে নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে, অনেক গল্প শোনা যায়। কিন্তু কেউই নির্ভুল তথ্য দিতে পারে না। উনি নিজের ব্যাপারে কাউকে তেমন কিছুই জানান না।"

অনন্যা নোহারার কথা শুনে একি সাথে বেশ কৌতূহলী এবং চিন্তিত হয়ে পড়লো স্যারের ব্যাপারে। 

🌿🌿🌿

সেমিস্টার ব্রেক এক মাসের হওয়ায় তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ সুনসান পরিবেশ। নোহারা গ্রামের বাড়িতে ঘুরতে চলে যাওয়ায় অনন্যা বেশ একলা হয়ে পড়েছে। বাসায় দিনের পর দিন কাটাতে কাটাতে ওর মনে একঘেয়েমি চেপে বসেছে। মাঝে মাঝে ঈরার সাথে বাইরে বের হতে গেলেও মামার বকার কারণে সেই সুযোগও বন্ধ হয়ে গেছে।

একদিন হঠাৎ আরণ্যক ফোন করে জানালো, "আমি ভার্সিটিতে যাচ্ছি। তুই যদি চাস, আসতে পারিস।"

অনন্যা অনেকক্ষণ ধরে চিন্তা করলো। সেমিস্টার ব্রেকের এই একঘেয়ে দিনগুলোতে আরণ্যকের প্রস্তাব একদিক থেকে বেশ লোভনীয় মনে হচ্ছিল। বাসায় বসে সময় কাটানোর কোনো মানে হয় না, কিন্তু মামার কড়া বকাঝকা মনে পড়তেই একটু দ্বিধা লাগলো।

শেষমেশ, ভাবনা বাদ দিয়ে আরণ্যককে ফোন করলো, "ঠিক আছে, আমি আসছি। কোথায় দাঁড়াব?"

" লাইব্রেরিতে অপেক্ষা করিস।"

"আচ্ছা।"

দুপুরের খাবার সেরে বেরিয়েছে অনন্যা। সাজগোজ বলতে গেলে তেমন কিছুই নয়। হালকা পাউডার মাখা মুখ আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিকের ছোঁয়া। টিশার্ট আর লং স্কার্ট পড়ে, গলায় ওড়না পেঁচিয়ে বেশ সাধারণ অথচ পরিপাটি লাগছিল তাকে। কাঁধে সাইড ব্যাগটা ঝুলিয়ে নিয়ে রিকশায় চেপে ভার্সিটির গেট পর্যন্ত এসে নামল। ভাড়া মিটিয়ে আনমনে হাঁটতে শুরু করলো সে।

হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ গাড়ি পার্কিংয়ের দিকে চোখ গেল অনন্যার। সেখানে দাঁড়ানো লাল মার্সিডিজটা ঠিক যেন নোহারার বর্ণনার সাথে মিলে যাচ্ছে। অনন্যা এক মুহূর্ত থেমে গেলো। গাড়িটা চিনতে পেরে সে মনে মনে ভাবলো, "ছুটির মধ্যেও স্যার অফিস করছেন!"

আবারো হাঁটা শুরু হলো। পথিমধ্যে আরণ্যককে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতেও দেখা গেলো। আরণ্যক অনন্যাকে ইশারা করে লাইব্রেরিতে বসতে বললো। অনন্যার খুব মন খারাপ হলো, যদি বন্ধুদের সাথে আড্ডাই দিতে হয় তাহলে তাকে ডাকার কি মানে? অনন্যা যেই খুশিটা নিয়ে ভার্সিটিতে প্রবেশ করেছিল তা আর রইলো না। গোমড়া মুখে লাইব্রেরীতে প্রবেশ করলো সে। প্রায় ঘন্টাখানেক একা একা বসে সময় নষ্ট করেছিল সেদিন অনন্যা। নোহারা যদি এ বিষয়ে জানতো, তখনি সম্পর্ক শেষ করে দিতে বলতো অনন্যাকে। কিন্তু অনন্যাই বেশ নরম মনের, সকলের মিষ্টি মিষ্টি কথায় কি সুন্দর গলে যায়!

সময় আর নষ্ট করা যাবে না ভেবে অনন্যা সিদ্ধান্ত নিলো, একটা বই পড়বে। এতে সময়টাও কেটে যাবে, আর মনটাও কিছুটা হালকা হবে। শুরু হলো বই খোঁজার মিশন। ঘরের তাকগুলো এক এক করে দেখতে লাগলো। খুঁজতে খুঁজতে সবচেয়ে উপরের তাকে একটা বই নজরে পড়লো।

"উফ! এত উঁচুতে রেখেছে কেন?" মনে মনে বিরক্ত হলেও সে টুল নিয়ে এসে বইটি নামালো। ধুলা ঝেড়ে বইয়ের নাম দেখে চোখে উজ্জ্বলতা ফুটে উঠলো।

"দ্য ক্রুসিফিক্স কিলার"।

বিদেশি বই, তবে বাংলা অনুবাদ করা। নাম শুনেই অনন্যার মনে হলো, এ বই পড়তে মজা হবে। বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছিল নামটা। আর কোনো দেরি না করে, বইটা হাতে নিয়ে টুলের উপর বসে পড়লো। প্রথম পৃষ্ঠার শব্দগুলোই যেন তাকে টেনে নিয়ে গেলো রহস্যময় এক জগতে। পড়তে পড়তে কতটা সময় যে কেটে গেছে অনন্যার ইয়ত্তা নেই। এদিকে লাইব্রেরির স্যার দুই বার এসে বলে গেছে, লাইব্রেরিতে কেউ থাকলে বেরিয়ে যেতে কারণ কিছু সময়ের মধ্যে এই কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। অনন্যা বইয়ের পাতায় এতটাই মগ্ন ছিল যে এসব কথা তার কর্ণে প্রবেশ পর্যন্ত করেনি।

অনন্যার মাথায় তখন শুধুই বইয়ের কাহিনির উক্তি ঘুরপাক খাচ্ছিল, "হ্যালো, আমি ডিটেকটিভ হান্টার বলছি!" হান্টার চরিত্রটা যেন তার মনের কোণায় চেপে বসেছিল। কাহিনির কিলার কে, সেটা বের করার জন্য তার মন এক মুহূর্তও স্থির থাকতে পারছিল না।

বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। লাইব্রেরির দরজায় তালা পড়েছে অনেকক্ষণ আগেই। ঘাড় ঘোরানো পর্যন্তও অনন্যা বইয়ে ডুবে ছিল। অবশেষে একটু ঘাড় ঘুরিয়ে আশপাশে তাকালো। চারদিকের নিস্তব্ধতা যেন তাকে খানিকটা অস্বস্তি দিচ্ছিল।

হঠাৎই চোখে পড়লো দূরে এক বেঞ্চে বসে থাকা একটা অবয়ব। লোকটা কি করছিল, বা কেমন দেখতে, অন্ধকারে কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না।

"কে... কে ওখানে?" 
ভয়ে অনন্যার গলা কেঁপে উঠলো।

কোনো উত্তর নেই। লোকটা নড়ল না। নিঃশব্দে বেঞ্চে বসে ছিল।

"হ্যালো?" এবার একটু জোরেই বললো অনন্যা। 

লোকটার গম্ভীর স্বর শোনা গেলো,
"কি চাই?"

অনন্যা বসা থেকে দাঁড়িয়ে আশেপাশে তাকালো, এতো বড় রুমটা হঠাৎ করে কেমন চুপচাপ হয়ে পড়েছে। অনন্যা দরজার বিষয়টা ভুলে গেলো। সে ধীর পায়ে লোকটার সামনে এসে দাঁড়ালো, একটু নিচু হয়ে বোঝার চেষ্টা করছিল, কে মানুষটি।

লোকটা টেবিলের ওপর বই রেখে একদম মনোযোগ দিয়ে কিছু পড়ছিল। অনন্যা তাকে একদৃষ্টে দেখছিল। এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে লোকটা আচমকা বেঞ্চে জোরে আঘাত করে উঠলো।

"ওয়াট ইজ ইউর প্রবলেম?"

তার আঘাত এতটাই শক্তিশালী ছিল যে বেঞ্চের মাঝখানে ফাটল দেখা গেল। অনন্যা মুহূর্তেই কেঁপে উঠলো। বুকের ধুকপুকানি সামলে সে বিপরীত বেঞ্চে বসে লোকটাকে ঠিকমতো লক্ষ্য করলো। তারপর চিনতে পারলো যে এটা সেই বিদেশি প্রফেসর...ইশতেহার কৌশিক স্যার!

কৌশিক স্যার তখনো মাথা নত করে বইয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। অনন্যা একটু সংকোচ নিয়ে ঢোক গিলে বললো,
"আপনি? আপনি এই সময়ে লাইব্রেরিতে কী করছেন?"

কৌশিক ধীরেসুস্থে মুখ তুলে শীতল দৃষ্টিতে অনন্যার দিকে তাকালো। তিনি তীক্ষ্ণ কণ্ঠে উত্তর দিলেন,
"লাইব্রেরিতে মানুষ কী করে?"

অনন্যা হালকা হাসি দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো। বললো,
"হুম... ঠিক আছে, কী বই পড়ছেন দেখি!"

অনন্যা নিজের বই টেবিলে রেখে একরকম জোর করেই কৌশিক স্যারের কাছ থেকে বইটা টেনে নিল। মুখে বলল,
"ওহ! ভ্যাম্পায়ার নিয়ে লেখা বই? এগুলো পড়ছেন কেন? যাদের কোনো অস্তিত্বই নেই।"

কৌশিক স্যারের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে অদ্ভুত হাসি ফুটলো। তারপর দৃঢ় কণ্ঠে বললেন,
"আপনার কীভাবে জানা আছে যে নেই? হয়তো তারা মানুষের মধ্যেই লুকিয়ে আছে।"

অনন্যা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
"আপনি সিরিয়াস? আমার মনে হয় না এমন কিছু হতে পারে।"

কৌশিক স্যার কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর গভীরভাবে তাকিয়ে বললেন,
"পৃথিবীতে যেমন ভালো মানুষ আছে, তেমনই মানুষের চেহারায় লুকিয়ে থাকা অমানুষও আছে। আমরা শুধু তাদের দেখতে পাই না... কারণ আমরা তাদের খোঁজ করি না।"

"আচ্ছা? কিন্তু তাতে কী! মানুষ তো সৃষ্টির সেরা জীব। অমানুষেরা কী টিকতে পারবে যদি থেকেও থাকে?"

কৌশিক স্যার গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন। তার ঠোঁটের কোণে সেই রহস্যময় হাসি ফিরে এলো। ধীরে ধীরে বললেন,
"হুম! কারণ মানুষ বোকা। মানুষরূপী অমানুষদের চেনার ক্ষমতা তাদের নেই। যারা আড়ালে থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে, তারা কীভাবে এতদিন টিকে আছে, কখনো ভেবে দেখেছেন?"

অনন্যা বিভ্রান্ত হয়ে গেল। সে কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু কৌশিক স্যার তাকে থামিয়ে দিলেন।
"আপনারা চোখে যা দেখেন, তাই বিশ্বাস করেন। কিন্তু পৃথিবীটা এর চেয়েও অনেক বেশি জটিল। কিছু মানুষ শুধু মানুষের মতো দেখতে হয়, কিন্তু ভেতরে তারা অন্য কিছু।"

"আপনি বলছেন... তারা আমাদের চারপাশে আছে?"

কৌশিক স্যার নিচু স্বরে বললেন,
"তাদের অস্তিত্ব বোঝা খুব কঠিন। কারণ তারা নিজেদের এমনভাবে লুকিয়ে রাখে যে মানুষ কখনোই তাদের সঠিকভাবে চিনতে পারে না। আর যখন চিনতে পারে, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।"

অনন্যার শরীর শিউরে উঠলো। চোখ বৃহৎ আকার ধারণ করলো। স্যার কী বলতে চাইছেন? পৃথিবীর সত্যিই কি এত রহস্য লুকিয়ে আছে?

সে ঢোক গিলে বললো,
"আপনি কখনো সরাসরি দেখেছেন এদের? এসব তো রূপকথায় শোনা যায়। বই তো কল্পনার পসরা দিয়ে সাজানো হয়। এতে যে সব সত্যি থাকবে এমন তো কথা নেই তাই না? বেশিরভাগ তো নিছকই কল্পনা।"

ইশতেহার কৌশিক স্যার হাত ভাঁজ করে বললেন,
"ইউ আর টু শর্ট টু নো বাট এসব ক্রিয়েচার ও সত্যি হতে পারে। পুরোনো ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে, অলৌকিক শক্তির অনেক প্রমাণ অনেক জায়গায় পাওয়া গেছে। তখনকার মানুষ এসব বিশ্বাস করতো আর তারা সেসকল জিনিস নিজের দু চক্ষে দর্শন করেছে। তো হতেও পারে এসব ক্রিয়েচার আমাদের মানুষের মাঝেই আছে অমানুষ হিসেবে।"

"কিন্তু.....!"

হঠাৎ দরজার করাঘাতের শব্দে লাইব্রেরীর নির্জনতা ভেঙে গেল। দুজনের দৃষ্টি একসঙ্গে দরজার দিকে চলে গেল। একই সময়ে অনন্যার ফোন বেজে উঠলো। পুরো লাইব্রেরীতে তারা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই। অনন্যা দ্রুত ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে, আরণ্যক ফোন দিয়েছে।

ধীরে ধীরে ফোনটা কানে তুলতেই বিপরীত দিকে স্যার বইটা তার হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে টেবিলের উপর রেখে গভীর দৃষ্টিতে বইয়ের পাতায় মনোযোগ দিলেন।

"অনু, তুই লাইব্রেরীতে আছিস?" 
আরণ্যকের উদ্বিগ্ন কণ্ঠ ভেসে এলো। 
"ওরা খাওয়া-দাওয়ার জন্য জোর করলো, তাই একটু দেরি হয়ে গেল। দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম, বললো তোকে বের হতে দেখেনি। এখন তুই কোথায়? আমি লাইব্রেরীর সামনেই আছি, কিন্তু দরজায় তো তালা ঝুলছে।"

অনন্যা আরণ্যকের কথা শুনে স্থির হয়ে বসে রইলো।ফোনটা হাতে ধরে তাকিয়ে রইল। দরজার করাঘাত আবারও শোনা গেল। 

অনন্যা ফোনটা নামিয়ে স্যারের দিকে কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,
"দরজায় তালা মেরে দিয়েছিল, এটা কী আপনি জানতেন?"

স্যার কিছুক্ষণ নীরব থেকে উত্তর দিলো 
"কেনো? আপনি জানতেন না?"

অনন্যা কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে বললো, 
"না! আপনি যখন জানতেন, কিছু বললেন না কেনো লাইব্রেরি স্যারকে?"

এবার দরজায় আবারও করাঘাত হলো। অনন্যা তাকিয়ে দেখলো এবং উত্তেজিত কণ্ঠে বললো, "আমি... চাইছি না..."

স্যার ঠাণ্ডা গলায় বললো, "আপনার বন্ধুকে দরজা খোলার ব্যবস্থা করতে বলুন।"

অনন্যা অবাক হয়ে আবার তাকালো। বন্ধু? লোকটা কী তাকে চেনে? আর স্যার তো এখানেই বসেছিল, অথচ দরজা তালা দেওয়ার সময় কিছু বললো না কেন? অনন্যার মনের মধ্যে এক ধরনের সন্দেহ জেগে উঠেছে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো এতক্ষণে কলটা কেটে গিয়েছে। তাই সে আরণ্যককে আবার কল করলো। আর জানালো, স্যারসহ সে ভেতরে আটকা পড়ে গেছে, যাতে দ্রুত দরজা খোলার ব্যবস্থা করা হয়।

সেই পুরোনো দিনের কথা ভাবতে ভাবতে অনন্যা কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল খেয়াল-ই নেই ওর। আকাশে সন্ধ্যা শেষ হয়ে রাত নেমেছে হঠাৎ পেটটা কেমন ব্যথা করতে শুরু করেছে। দুপুরের দিকে সেই ঘাস পাতা খেয়েই হয়তোবা।

দরজায় করাঘাত শোনা গেলো। অনন্যার কর্ণকূহরে অল্প করে শব্দটা পৌঁছে গেলো। তার মনে হল, সেই দিনকার লাইব্রেরির সেই করাঘাতের আওয়াজ। তার চোখ দুটো এক মুহূর্তে ঝাপসা হয়ে গেলো, যেন ঘুমের ঘোরেই সে বলে উঠলো,
না এই দরজা খোলা না হোক, আমি আরণ্যকের চেহারা দেখতে চাই না, আরণ্যক সবসময় আমার সাথে এমন করে। আমি কী খুব খারাপ? সবার সামনে আমাদের সম্পর্কের স্বীকৃতি দিলে কি হয়ে যায়?

কেউ সারাজীবনের জন্য তালা মেরে যাও এই লাইব্রেরি। আমি এই লাইব্রেরিতেই অনেক সময় কাটিয়ে দিতে চাই। অনেক অনেক কিছু জানার আছে আমার, স্যারের কাছ থেকে! আমি... আমি জানতে চাই ফেইরি টেইল কী সত্যিই আছে? প্রিন্স! প্রিন্স কী সত্যিই আসবে আমার জীবনে?

অজান্তেই দরজা খুলে গেলো।‌ অনন্যা চোখ কচলে ডাকতে লাগলো,
"ঈরা! ঈরা?"

চোখের সামনে স্যারকে দেখে অনেক বড় ঝটকা খেলো অনন্যা। হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো, একদম অগোছালো চুলে। নিজের অবস্থা দেখে মনে হলো, কেমন যেন একটা অদ্ভুত পরিস্থিতিতে পড়ে গেছে। এই অবস্থায় স্যারকে তীক্ষ্ণ নজর দিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে মনে পড়লো তার তো বিয়ে হয়ে গেছে, তাও এই নতুন স্যারের সাথে! কয়েক মুহূর্ত পূর্বে অনন্যার মাথাটা হঠাতই ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল যেটা মাত্র ঠিক হলো। এর অর্থ কি সে সারাজীবনের জন্য এখানে, এই লোকটার সাথে আটকা পড়ে গেছে?

সকালে স্যার একটা শর্ত দিয়েছিলো - Once you are inside, There is no turning back.

এর মানে কী অনন্যা ভার্সিটিতেও যেতে পারবে না? সকালেও তো এই বিষয়টা মাথায় আসেনি। হঠাৎ এসব প্রশ্ন এখুনি কেনো মাথায় ভর করছে?
.
.
.
চলবে.................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন