বিকেলটা উড়ে গেছে সে কোন ফাঁকে। হাওয়া চলছে ঢিমেতালে। পশ্চিমের আকাশে লালিমা মেখে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। জানালার কাঁচ গলিয়ে বিকালের শেষ রোদ উঁকি দিচ্ছে রুমের মধ্যে। কোমল রোদের আলো নেমে এলো বিছানার উপর ঘুমিয়ে থাকা স্নিগ্ধ মুখটার ওপর। গভীর ঘুম ভাঙতেই চোখ মেলে তাকাল সেহরিশ, কমলা সূর্যের আলোয় রোদেলার ঘুমন্ত মুখটা কোমল, নির্মল দেখাচ্ছে। ছোটো বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে রয়েছে রোদেলা। কান্না করার কারণে চোখ দুটো লাল হয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছে। জোজোর জন্য সেহরিশের মনটাও খারাপ লাগছে। বার বার তার গোলগাল মায়াবী চোখগুলো চোখে ভেসে উঠছে। সেহরিশ গোপনে ভারী নিঃশ্বাস ফেলল এরপর তর্জনী আঙুল রোদেলার কপালে রাখল। ঠান্ডা হাতের হঠাৎ স্পর্শে রোদেলা পিটপিট করে চোখ খুলে তাকাল। সেহরিশকে জিজ্ঞেস করলো, 'কখন এসেছেন?'
সেহরিশ রোদেলার কপাল থেকে হাত সরিয়ে মাথায় রাখল। তারপর নরম গলায় বলল, 'ভুলে গেছো?'
রোদেলার কোমল মুখখানা মূহুর্তে গম্ভীর হয়ে উঠল। কিছুক্ষণ আগের ঘটনা মনে করার চেষ্টা করলো সে। সকাল সকাল মনটা কেমন ছটফট করছিল। মামা, মামির সঙ্গে ফোনে কথা শেষ করে শ্বশুর বাড়িতে কল করে রোদেলা। পরিবারের সকলে তখন বাড়ির বাগানে জোজোর মৃতদেহের কাছে ছিল। ড্রয়িংরুমে পড়ে থাকা ফোন অনেকক্ষণ বেজে যাচ্ছিল, বেশ খানিকক্ষণ পর কল রিসিভ করে মারিয়া। ভাঙা ও আদুরে গলায় চাচির সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে সে। মারিয়ার কাছে জানতে পারে জোজো মারা গিয়েছে। রোদেলা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে জোজো ঠিক মতো খাবার খেত না। সারাক্ষণ গেটের দিকে তাকিয়ে বসে থাকত, ও হয়তো ভাবতো এই বুঝি রোদেলা ফিরে আসবে। চোখ দুটো দিয়ে প্রায় সময় পানি পরতো জোজোর। কেউ রোদেলার নাম নিলেই ছুটে কাছে আসতো, রোদেলাকে ভিডিও কলে দেখার পর জোজোর চোখ দিয়ে যেন বেশি পানি পরতো। জোজোর মৃত্যুর কথা শুনে রোদেলা স্তব্ধ হয়ে যায়। হাত থেকে ফোনটা মাটিতে পরে যায় আর সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে রোদেলা। একটু পরই সেহরিশ ফিরে আসে তখন সেহরিশ কে আঁকড়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে সে। তারপর কী হয়েছিল? জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল বৈকি কিছুই মনে করতে পারলো না রোদেলা। রোদেলার চোখ দুটো ভিজে উঠেছে আবার। সেহরিশ আলতোভাবে চোখের অশ্রুজল মুছে দিয়ে রোদেলাকে বুকে আঁকড়ে ধরলো। তারপর নরম গলায় বলল,
'জুবিয়া আর তূর্ণ গতকাল ইতালি এসেছে। আমি আজ ডিনারে ওদের চারজনকে ইনভাইট করেছি। তোমার এমন অবস্থা বন্ধুদের সঙ্গ পেলে একটু ভালো লাগবে।'
রোদেলা কিছু বলল না। ছোটো বাচ্চার মতো সেহরিশের বলিষ্ঠ দেহের সঙ্গে মিশে রইল। সেহরিশ রোদেলার কপালে শুঁকনো চুমু খেয়ে বলল,
'চিন্তা কোরো না আমি আছি।'
রোদেলা বেশ কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে হঠাৎ বলল,
'ওরা প্রথমবার আমাদের বাড়ি আসবে আর আপনি এখন বলছেন। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে এলো সময়ও বেশি নেই। অনেক কাজ করতে হবে।'
রোদেলা বিছানা ছেড়ে উঠতে নিল। এসময় সেহরিশ তার হাত ধরে নির্মল কণ্ঠে বলল, 'তোমাকে কিছু করতে হবে না। সার্ভেন্ট আছে ওরা ডিনারের সব ব্যবস্থা করবে। তোমার শরীর এখনো অনেক দূর্বল তাই রেস্ট করো।'
রোদেলা খানিক ইতস্তত করে বলল,
'কিন্তু?'
সেহরিশ রোদেলার ওষ্ঠদ্বয়ে আঙুল রেখে নরম গলায় বলল,
'উঁহু, কোনো কথা না।'
সেহরিশ বিছানা ছেড়ে উঠে নিশ্চল পায়ে হেঁটে এগিয়ে এল সিঁড়ির ধারে। ধাপে ধাপে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামতে নামতে হুট করে কল এলো। ফোনের স্কিনে একপলক নামটা দেখে কল রিসিভ করে সেহরিশ। তারপর উঁচু গলায় বলল,
'বল।'
তূর্ণ উত্তেজিত গলায় বলল,
'সেহরিশ, তুই কি ব্রেকি নিউজ দেখছিস?'
সেহরিশ ভ্রু কুঁচকাল। একটু থেমে শক্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
'কি দেখাচ্ছে নিউজে?'
তূর্ণ বলল,
'এক সপ্তাহে তিনটা খুন হয়েছে। আর পুলিশ আশংকা করছে খুনি একজনই কারণ তিনটা খুনের ধরন এক।'
সেহরিশের পা থেমে গেল। তর্জনী আঙুল কপাল ছুঁয়ে রাগান্বিত কণ্ঠে বলল,
'আমি পুলিশ নই তূর্ণ, আমি পুলিশের হয়ে খুনিকে খুঁজতে যেতে পারব না।'
তূর্ণ পায়ের উপর পা তুলে সোফায় হেলান দিয়ে বসল। এক হাত কানে গুঁজে হালকা চুলকাতে চুলকাতে বলল,
'তুই কেন খুঁজতে যাবি? আমি তো শুধু তোকে নিউজটা শোনাচ্ছি।'
সেহরিশ শক্ত গলায় বলল,
'তোর আর কোনো কাজ নেই?'
তূর্ণ ফিক করে হেসে বলল,
'না, নেই।'
সেহরিশ খিঁচে চোখজোড়া বন্ধ করে কান থেকে ফোন নামিয়ে কল কেটে দিল। তূর্ণ হাত পা ছড়িয়ে বসে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আফসোস করে বলল, 'কল কেটে দিল কেন? দূর, আমি বিরক্ত হচ্ছি। এখন কি করব? কাকে জ্বালাব?'
তূর্ণ সাথে সাথে দাঁত বের করে ঠোঁটে একটা হাসি রেখে সোফা থেকে উঠে রুমের দিকে চলে গেল। দরজা খুলে রুমের ভেতরে এক পা রেখে নেশালো গলায় তূর্ণ বলল,
'বউ!'
মূহুর্তে একটা উড়ন্ত বালিশ এসে তূর্ণর মুখে লেগে মাটিতে পড়ে গেল। তূর্ণ চোখ বন্ধ করে ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সহসা চোখ খুলে উচ্চকণ্ঠে বলল, 'বালিশ ছুঁড়ে মারলে কেন?'
জুবিয়া তূর্ণর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
'বিছানার এই কি অবস্থা করেছেন আর আপনার শার্ট প্যান্ট এইগুলো আলমারিতে না থেকে একটা বিছানায় আরেকটা ফ্লোরে কি করছে? এগুলো গোছাতে আমার কষ্ট হয় না? সকালেই রুমটা পরিস্কার করে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। আর এসেছি এক ঘন্টা ও হয়নি এরইমধ্যে আবার জঙ্গল বানিয়ে ফেলছেন। এগুলো গোছাতে কষ্ট হয় না?'
জুবিয়া চেঁচাচ্ছে। তূর্ণ গম্ভীর ভাব নিয়ে ওর সামনে দিয়ে হেঁটে বিছানায় এসে বসল। তারপর বলল, 'এতজন সার্ভেন্ট আছে ওদের বলো গুছিয়ে দিবে। তোমাকে কষ্ট করতে কে বলেছে?'
জুবিয়া কোমর থেকে হাত সরিয়ে স্পষ্ট গলায় বলল, 'সার্ভেন্টদের আমি ছুটি দিয়েছি।'
তূর্ণ চমকাল। চোখ বড় বড় করে বলল, 'কেনো?'
'আমরা দুজন মানুষ। দশ বিশজন সার্ভেন্ট রেখে লাভ কী? শুধু শুধু টাকার অপচয়। এরচেয়ে ভালো আমরা নিজেরাই নিজেদের কাজ করব এতে শরীর ফিট থাকবে আর টাকাও বাঁচবে।'
তূর্ণ ঠোঁট প্রসারিত করে জোরপূর্বক হেসে বলল,
'বাহ, কত ভাবো তুমি আমাকে নিয়ে।'
জুবিয়া আর কিছু বলল না। অগোছালো শার্ট-প্যান্ট জায়গা থেকে তুলে নিয়ে এসে তূর্ণর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
'এগুলো ভাজ করে জায়গায় রেখে আসো। আজ থেকে সব কাজ আমরা মিলেমিশে করব।'
তূর্ণ ঠোঁট উল্টিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে যেতে যেতে বিড়বিড় করে কাতর গলায় বলল, 'কে বলেছিল আমায় বিয়ে করতে? বিয়ে না করলে আমাকে আজ এসব করতে হতো না। আল্লাহ জানে আমাকে দিয়ে আর কি কি করাবে? আল্লাহ রক্ষা করুন।'
সেহরিশের কথামতো খাবারের জন্য টেবিল প্রস্তুত করা হয়েছে। রোদেলা অল্প সময়ের জন্য রান্নাঘরে গেলেও বেশিক্ষণ থাকতে পারে নি, সেহরিশের ডাকে চলে যেতে হয়। রৌদেলা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে দেখতে লাগল যে সে যে শাড়িটি পরেছে তা সব দিক থেকে ঠিক আছে তো। এ সময় সেহরিশ রুমে এলো, রাতের সব মেহমান এসেছে বলে খবর দিতে এসেছে। কিন্তু রোদেলাকে দেখে তার দৃষ্টি সংকুচিত হয়ে যায়। পাথরের মূর্তির মত স্থির হয়ে দাড়িয়ে সে অপলক দৃষ্টিতে রোদেলার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের পলক ফেলতেও ভুলে গেছে যেন। সেহরিশ মাথা নিচু করে মৃদু হাসলো। তারপর নরম গলায় বলল,
'রোদ, নিচে চলো। ওরা এসে গেছে।'
রোদেলা ঘুরে সেহরিশের দিকে তাকাল। বলল,
'হ্যাঁ, চলুন।'
রাতের খাবারের জন্য এখনও অনেক দেরি। তাই বন্ধুদের সাথে ড্রয়িং রুমে বসে যায়। রোদেলা উমাইয়ার পাশে বসে চিন্তিত কণ্ঠে বলল, 'বাবু ঠিক আছে তো? শুনলাম তুই আজ পড়ে গিয়েছিলি। উমা তোর চোখ কোথায় থাকে? এই সময়ে, নিজের সঙ্গে সন্তানের ও যত্ন নিতে হয়।'
উমাইয়া ভারী নিঃশ্বাস ফেলল। রোদেলার হাতটা শক্ত করে ধরে বলল, 'আমার কথা ছাড়। আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুই নিজের দিকে একটু তাকা, কান্না করে মুখটার কি অবস্থা করেছিস। দেখছিস?'
রোদেলা মাথা নিচু করে ফেলল। জুবিয়া রোদেলাকে জড়িয়ে ধরে বলল, 'রোদু, এই রোদু। জোজো কি শুধু তোর একার আদরের ছিল? ওকে কি আমরা কম ভালোবাসতাম? তাছাড়া আমরা তো জানি জোজো সবথেকে বেশি তোকে ভালোবাসে। তুই এভাবে কান্নাকাটি করলে তো জোজো কষ্ট পাবে রে। তুই কান্না করিস না৷ জোজোকে মনে করলে সর্বক্ষণ মুখে হাসি রাখবি। এতে ওর আত্মা শান্তি পাবে।'
রোদেলার চোখের কার্নিশ বেয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু জল গড়িয়ে পড়ল। উমাইয়া আলতো হাতে অশ্রুজল মুছে দিয়ে বলল, 'রোদেলা তুই কান্না করলে আমাদের ভালো লাগে বল? আমরাও কিন্তু কান্না করে ফেলব। দেখ, আমার চোখে পানি চলে আসছে।'
রোদেলা চোখ খুললো না৷ জুবিয়া বলল, 'তুই কি চাস উমা এই অবস্থায় কান্না করুক আর বাচ্চার ক্ষতি হোক?'
রোদেলা মাথা তুললো। ডান থেকে বামে নিবিড়ভাবে মাথা নেড়ে বলল, 'নাহ।'
একটু সময় নিয়ে নিজেকে শান্ত করলো রোদেলা। সেহরিশ, সাদাফ আর তূর্ণ এই সময় সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমে এলো। জুবিয়া আচমকা উমাইয়ার পেটে হাত রেখে বলল,
'উমাইয়া প্রেগন্যান্ট শোনার পর থেকে আমারও কেমন মা হতে ইচ্ছে করছে।'
তূর্ণ হুট করে বলে ওঠল,
'তোমার ইচ্ছে পূরণ করার দায়িত্ব আমার।'
জুবিয়া চোখ বড় বড় করে তাকাল। ওরা কখন আসছে সে দেখেনি। সেহরিশ আর সাদাফকে দেখে একটু লজ্জায় পড়ে গেল জুবিয়া। রোদেলা আর উমাইয়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। সেহরিশ রোদেলার দিকে তাকাল। ভেজা চোখ দেখে উঠে এল সে। হাঁটু মুড়ে রোদেলার সামনে বসে সেহরিশ তার এক হাতে রোদেলার হাত ধরে অন্য হাত রোদেলার গালে রেখে জিজ্ঞেস করলো, 'রোদ, কি হয়েছে? তুমি আবার কাঁদলে কেন? তোমার শরীর খারাপ লাগছে কী? জ্বর আসেনি তো?'
সেহরিশ চিন্তিত হয়ে রোদেলার কপালে হাত রাখল। তূর্ণ অবাক গলায় বলল,
'আমাদের নিয়ে এভাবে কখনো চিন্তিত হসনি। উল্টো প্রতিবার আমাদের টেনশন দিয়েছিস।'
সেহরিশ তূর্ণর দিকে তাকাল না। শক্ত ও গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বলল,
'তোরা আমার বউ না।'
সাদাফ প্রসঙ্গ বদলাতে বলে ওঠল, 'আমার খুব খিদে পেয়েছে। কখন খেতে পারি?'
রোদেলা বলল,
'আপনারা টেবিলে যান। আমি এখনই খেতে যাচ্ছি।'
সেহরিশ রোদেলার হাত ধরে বলল,
'তুমি নও। সার্ভেন্ট আছে, সার্ভ করবে। তুমি আমার পাশে বসবে।'
তূর্ণ ওদের দেখে রাগে দাঁত কিড়মিড় করে জুবিয়াকে ফিসফিস করে বলল, 'দেখো আর কিছু শিখো। তুমি সব সার্ভেন্ট কে ছুটি দিয়ে আমাকে দিয়ে সব কাজ করিয়েছ।'
খাবার টেবিলে বসে পছন্দের খাবার দেখে সবাই বেশ অবাক হলো। বেশ আনন্দের সহিত খেতে আরম্ভ করে তারা। সেহরিশ রোদেলার দিকে তাকায়। রোদেলা কোনো খাবার মুখে দিচ্ছে না। সে হয়তো জোজোর কথা ভাবছে। চোখের সামনে থাকা এতগুলো মানুষের জন্য ভেতরের কষ্টটা চাপা দিয়ে রেখেছে। এটা ভেবে যে তার কষ্ট দেখে হয়তো অন্যরা কষ্ট পাবে। সেহরিশ টেবিলের নিচে রোদেলার হাত চেপে ধরে বলল,
'রাতের খাবারের পর আমরা হাঁটতে বের হব। ঠিক আছে?'
রোদেলা মাথা নেড়ে বলল,
'আচ্ছা।'
ঘণ্টা দুয়েক পর ওরা বিদায় জানিয়ে যথারীতি চলে গেল।
অন্ধকার আকাশে টিপটিপ করে জ্বলজ্বল করছে অগুনিত তাঁরা। তাদের মধ্য খানে গোলাকার একটা চাঁদ ঘাপটি দিয়ে বসে আছে। চারিদিক তারই আলোয় আলোকিত, নির্জন একটা রাস্তায় গাড়ি থামাল সেহরিশ। গাড়ি থেকে নেমে প্রথমে রোদেলার জন্য দরজা খুলে দিল। রোদেলা গাড়ি থেকে নামার পর চারপাশে তাকিয়ে দেখল রাস্তার দু'ধারে বড়বড় পর্বত আর তার মাঝে পিচঢালা সরু রাস্তা। ল্যাম্পপোস্টের আলো আর জ্যোৎস্না রাতের জন্য সবকিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। রোদেলা সেহরিশের দিকে তাকাল। সেহরিশ মৃদু হেসে বলল,
'তুমি যখন এই পথ ধরে হাঁটবে আমার সঙ্গে তখন পৃথিবীর সমস্ত কষ্ট ভুলে যাবে। এই জায়গায় শান্তি রয়েছে।'
সেহরিশ রোদেলার হাত ধরে পথের দিকে পা বাড়ায়। এ-সময় বেশ কয়েকটি পা ওদের সঙ্গে যেতে নেয়। সেহরিশ পেছনে ঘুরে তার বডিগার্ডের উদ্দেশ্য বলল,
'তোমরা এখানেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করো।'
রোদেলা সেহরিশের সঙ্গে পা মিলিয়ে চলার চেষ্টা করছে। তবে পারছে না। সেহরিশের লম্বা লম্বা কদমের সঙ্গে পা মিলাতে তার কষ্ট হচ্ছে, সেহরিশ বিষয়টি লক্ষ্য করে ছোটো ছোটো কদম ফেলে রোদেলার সঙ্গে পা মিলিয়ে চলছে। রোদেলার লজ্জা লাগলো। রাস্তা ধরে আরেকটু এগিয়ে যেতে রোদেলা অবাক হয়ে গেল। ল্যাম্পপোস্টের পাশে বিশাল ফুলের বাগান আর এই রাতে ফুলের উপর দিয়ে কিছু হলদে পোকা উড়তে দেখে উৎফুল্ল হয়ে উঠল সে। এরমধ্যে কিছু রঙিন প্রজাপতি ও রয়েছে। কিছুক্ষণের জন্য রোদেলা জেনো সব ভুলে গেল। হাসির রূপে মুক্তা ঝড়ছে তার অধর ছুয়ে। রোদেলা এদিক ওদিক ছুটে প্রজাপতি ধরতে চাচ্ছে। রোদেলাকে এমন করতে দেখে সেহরিশ ঠোঁট প্রসারিত করে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। চকিত তাকিয়ে সেহরিশ ভারী নিঃশ্বাস ফেলে কাতর গলায় বলল,
'আমি তোমাকে কখনো সেভাবে দেখিনি, যখন থেকে দেখেছি তখন তোমাকে ছাড়া আর কিছুই দেখিনি।'
সেহরিশ আকাশের নিটোল চাঁদের দিকে তাকিয়ে গর্বের সঙ্গে বলল,
'Sorry moon, my wife is more prettier than you!'
রোদেলা আলতো হাতে মুঠোয় পুড়ে একটা প্রজাপতিকে নিয়ে খুশি মনে ছুটে এলো সেহরিশের সামনে। এরপর ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে হাসিহাসি মুখে বলল, 'দেখুন কত সুন্দর।'
এইটুকু বলে হাতটা ধীরেধীরে ফাঁকা করে রোদেলা। রঙিন প্রজাপতিটি ছাড়া পেতে উড়তে শুরু করে রোদেলা মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে প্রজাপতির উড়ে যাওয়া দেখল, সেহরিশ তার কাঁধ থেকে শালটা নিয়ে রোদেলার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বলল, 'এখন আর ঠান্ডা লাগবে না।'
রোদেলা নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে বলল,
'আমার তো আপনার মতো কিছুই নেই। তবুও আপনি আমার এত যত্ন করেন কেনো?'
সেহরিশ বলল,
'তুমি আমার তাই তোমার যত্ন করে যাই। তাছাড়া কে বলেছে তোমার কিছু নেই? তুমি আছো তো আমার তাতেই চলবে। তুমি আমার সব কিছু রোদ, আমার যা আছে সব তোমার।'
.
.
.
চলবে......................................................