মিনিট বিশের মাথায় চায়ের ট্রে নিয়ে দীপশিখা প্রবেশ করলো। মোস্তফা সাহেব গদগদ স্বরে বললেন,
“আমার মেয়ে দীপশিখা।”
জাওয়াদ কেবলই পায়েশের বাটিটা হাতে নিয়েছিলো। মেয়ের মুখখানা দেখতেই হাত ফসকে বাটিটা পড়ে গেলো পায়ের উপর। চোখ বিস্ফারিত হলো, মুখের রঙ ফ্যাকাশে হলো। অস্পষ্ট স্বর বের হলো,
“চিংকি?”
তার কণ্ঠ হয়তো কেউ শুনলো না। কারণ সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লো মাটিয়ে পড়া পায়েশের বাটি নিয়ে। সকলের হট্টগোলে সম্বিৎ ফিরলো জাওয়াদের। সে নিচে তাকিয়ে দেখলো পায়েশের বাটি ভেঙ্গে গেছে। পায়েশ কারপেট আর মেঝেতে ছিটিয়ে পড়ে একাকার অবস্থা। মোজার ভেতর পায়েশ ঢুকে যাচ্ছে তাই অবস্থা। জাওয়াদের ওসিডির বাতিক আছে। অস্বস্তিতে তার চোখ মুখ কুচকে এলো। ব্যতিব্যস্ত হয়ে গেলো সে। তাড়াতাড়ি মোজা খুলে ফেলবো। অস্থির স্বরে বললো,
“ওয়াশরুম কোথায়?”
দীপশিখার বড় বোন বললো,
“আসো আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।”
জাওয়াদ উঠে পড়লো চট করে। তখন আব্বার রাগান্বিত চেহারার দর্শন পেলো। জাওয়াদের আব্বা আব্দুল হামিদ সাহেব রাগী মানুষ। ইহজীবনে তাকে হাসতে দেখেছে বলে মনে পড়ে না জাওয়াদের। তার বজ্রকণ্ঠ আর কড়া চাহনী জাওয়াদের প্রাণ শুকিয়ে ফেলার জন্য যথেষ্ট। আজও অন্যথা হলো না। একেই দীপশিখাকে দেখার পর থেকে চিন্তাশক্তি ক্ষীণ হয়ে গেছে। এখন আব্বার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার বদহজম হবার উপক্রম হলো। মাথা নত করে ফেললো। চিবুক লেগে গেলো বুকের কাছে। কোনোমতে আব্বার চোখের সামনে থেকে সরে পড়লো জাওয়াদ।
দীপশিখার বোনের নাম তরঙ্গিনী। জাওয়াদের থেকে অনেক বড় সে। ওয়াশরুম দেখিয়ে বললো,
“তোমার কিছু লাগলে ডাক দিও। আমি এখানেই আছি।”
“জ্বী।”
“তুমি কি নার্ভাস?”
জাওয়াদ ঈষৎ বিস্মিত স্বরে বললো,
“কেনো আপু?”
“না, এমনি।”
জাওয়াদ জোরপূর্বক হাসলো। তরঙ্গিনীকে তো বোঝানো যাচ্ছে না সে আসলে ব্যাপক ভয় পেয়েছে। তরঙ্গিনী মিটিমিটি হাসছে। জাওয়াদ নিশ্চিত তাকে বেকুবের দলে ফেলেছেন এই মহিলা। কিন্তু কিছুই করার নেই।
*****
সূর্যের তেজ নেই। শুকনো সমীরণে হিমেল ছোঁয়া। ছাদের এক পাশে দুটো চেয়ারে মুখোমুখি বসে আছে জাওয়াদ এবং দীপশিখা উরফে চিংকি। পা পরিষ্কার করে সোফাতে বসতেই মোস্তফা সাহেব জোরপূর্বক জাওয়াদ এবং দীপশিখাকে ছাদে পাঠালেন। তার মতে ছেলে মেয়ের আলাদা কথা হওয়া প্রয়োজন। আব্দুল হামিদ, যিনি কিনা নিতান্ত সেকেলে মানুষ; একেবারেই আপত্তি করলেন না। বরং সহমত, সহমত করে একপ্রকার ধাক্কা মেরে চিংকির সাথে পাঠালেন। জাওয়াদ চিংকির দিকে তাকাতে পারছে না। অস্বস্তিটা গলা অবধি উঠে গেছে। এতো বিশ্রী পরিস্থিতিতে কখনো পড়েছে কি না মনে পড়ছে না জাওয়াদের। সে অস্বস্তি কাটাতে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে আড়চোখে তাকাচ্ছে চিংকির দিকে। যখনই তাকাচ্ছে তখনই দেখছে চিংকি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একভাবে দেখছে তাকে। জাওয়াদের মনে হলো এখনই বমি করে দিবে সে। অস্বস্তি, বিব্রতবোধ তীব্র হচ্ছে। কোনো কথাও খুঁজে পাচ্ছে না। শুধু একবার চিংকি বলেছিলো,
“চা খান, ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
প্রচন্ড শীতল স্বর। জাওয়াদের মনে হলো গলা থেকে চা দূর পানিও নামবে না। ছয়বছর আগের চিংকি আর এখনের চিংকির মধ্যে অনেক মিল থাকলেও অনেক অমিল আছে। আগের মতোই গোলগাল, স্বাস্থ্যবান থাকলেও এখন আগের মতো বাচ্চাভাবটি নেই। মুখের মেছতার দাগ কমে গেছে। চুল অনেক বড় হয়েছে। মোটা খোপায় বাঁধা চুলগুলো। আজ চোখে সেই গোলগোল চশমা নেই, হয়তো লেন্স পড়া। দাঁতে আগে মেটাল ব্রেস ছিলো। এখন নেই। এখন সে পনেরো বছরের কিশোরীটি নেই। একুশ বছরের নারী সে। কিশোরী সত্ত্বা থেকে নারী সত্ত্বায় পদচারণায় মেয়েদের চেহারায় অনেক পরিবর্তন হয়। চিংকির মাঝেও তেমন-ই পরিবর্তন হয়েছে। জাওয়াদের স্বপ্নে তাকে এমন দেখায় নি। সেখানে অধিক সাজসজ্জায় ভিন্ন লাগছিলো। কড়া সাজ, কড়া লিপ্সটিক। অথচ বাস্তবে সেই সাজসজ্জা নেই। ভাসা ভাসা চোখজোড়ায় কাজলও দেয় নি চিংকি। অথচ একেবারেই মন্দ লাগছে না। কেমন দীঘির শান্ত জলের মত প্রশান্তিময় একটা মুখবায়ব। জাওয়াদের চিন্তার মেঘে চির ধরলো যখন চিংকি শুধালো,
“আপনি কি আমার ছবি দেখে এখানে এসেছেন?”
জাওয়াদ শুকনো ঢোক গিললো। মেকি হাসি ঝুলিয়ে বললো,
“হ্যা।”
“আপনার আমাকে বিয়ে করতে আপত্তি নেই?”
জাওয়াদ বিপাকে পড়লো। কি উত্তর দিবে? চিংকি মুখোভাবে মনে হচ্ছে সে জাওয়াদকে মোটেই পছন্দ করছে না। করার কথাও নয়। কিশোরীকালে প্রত্যাখ্যান কোনো মেয়ে সহ্য করতে পারে না। জাওয়াদ তাকে খুবই রুক্ষ্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলো। চিংকির মনে জাওয়াদ পৃথিবীর নিকৃষ্ট পুরুষ, এতে সন্দেহ নেই। এখন যদি জাওয়াদ বলে,
“না, আসলে আমি তোমার নামটাও বোনকে ঘুষ দিয়ে শুনেছি।”
তাহলে সামনে থাকা চায়ের কাপ ফিক্কে মারার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। চান্স নেওয়া যাবে না। তাই স্মিত স্বরে বললো,
“হ্যা, কেন?”
“আপনি কি আমাকে চিনতে পারেন না?”
বিহ্বল স্বরে শুধালো চিংকি। জাওয়াদ মা নাড়িয়ে মিথ্যে বললো,
“না তো। আমাকে তুমি চেন?”
চিংকির মুখের ভাব বদলে গেলো। মেদুর মুখখানায় তীব্র বিষাদ ফুটে উঠলো। থমথমে স্বরে বললো,
“আমি আইডিয়ালে পড়তাম। আপনি সেখানে আমার সিনিয়ার ছিলেন।”
জাওয়াদ জোর করে হেসে বলল,
“তাই নাকি?”
চিংকি আর কোনো কথা বললো না। জাওয়াদের মনে হলো সে পৃথিবীর জঘন্য মানবদের মধ্যে নাম লিখিয়েছে। এক মেয়ের মন দ্বিতীয়বারের মতো সে ভেঙ্গেছে। হয়তো চিংকি অন্যকিছু শুনতে চেয়েছিলো। কিন্তু যেহেতু জাওয়াদ অস্বীকার করে ফেলেছে তাই আর পুরোনো বিশ্রী স্মৃতি মনে করাতে চাইলো না। সূর্য ঢলে গেছে। সমীরণে সন্ধ্যার গন্ধ। চিংকি দাঁড়িয়ে পড়লো। জাওয়াদও উঠে দাঁড়ালো। তার পিছু হাটতে নিলেই ঘুরে দাঁড়ালো চিংকি। ফলে জাওয়াদের মধ্যকার দূরত্ব বেশ কমে গেলো। মেয়েটির মাথা জাওয়াদের বুক বরাবর। জাওয়াদের নিঃশ্বাস আটকে গেলো। তাদের চোখাচোখি হলে চিংকিও একটু ভ্যাবাচেকা খেলো। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
“আপনার আমাকে অপছন্দ আমি জানি, কিন্তু আপনার কিছু বলা লাগবে না। আমাকে কেউ রিজেক্ট করেছে বাবা শুনলে কষ্ট পাবেন। আমিই বলে দিব, আমার আপনাকে পছন্দ হয়নি।”
চিংকির কথায় জাওয়াদ ধাক্কা খেলো। আজ অবধি কেউ “তাকে পছন্দ হয়নি” এমন কথা বলেনি। সুদর্শন হবার জন্য ছোটবেলা থেকেই মেয়েমানুষের পছন্দের তালিকায় তার স্থান হয়েছে। কতখানা লাভলেটার জীবনে পেয়েছে তার হিসেব নেই। চিংকিও তাদের মধ্যেই একজন। ফলে বেশ অপমানিত বোধ হলো জাওয়াদের। প্রতিবাদ করে বললো,
“তুমি মিথ্যে বলবে কেন?”
এমন প্রশ্নে চিংকি অপ্রস্তুত হলো। মুখ লাল হয়ে গেলো তার। মনে হলো এখনই কেঁদে দিবে। থমথমে স্বরে বললো,
“কিন্তু আমাদের বিয়ে তো হবে না!”
“কে বলেছে?”
“আপনার আমাকে পছন্দ হয়েছে?”
চিংকির অকপটে করা প্রশ্নে জাওয়াদ থমকালো। কথা হারিয়ে গেলো। চিংকিকে সে অপছন্দ করে না। ভয় পায়। বিগত চারদিন তার সাথে যা হচ্ছে তাতে ভয় পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। চিংকিকে বিয়ে করলে তার অবস্থা কি হবে জানা নেই। চিংকি ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঠিক তখনই তরঙ্গিনী তাদের ডাকতে এলো। জাওয়াদ যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। কিন্তু এখনো ফাঁড়া কাটে নি। গলার উপর বিয়ে নামক তলোয়াড়টি এখনো ঝুলছে।
*****
যে ভয়টা পাচ্ছিলো জাওয়াদ সেটাই হলো। আব্দুল হামিদের মেয়ে খুব পছন্দ হয়েছে। তিনি চিংকি উরফে দীপশিখাকেই ঘরের বউরুপে চান। মেয়ের পরিবার যেমন মার্জিত, মেয়েটিও শান্ত-শিষ্ট। আব্দুল হামিদের ঘরে এমন একটি মেয়েকেই তিনি চান। স্ত্রী গত হয়েছে প্রায় দশ বছর। একাই দুই ছেলেমেয়েকে মানুষ করেছেন। ছেলে চাকরি করছে, মেয়েটি মাত্র প্রথম বর্ষে। ছেলের বিয়ের পর মেয়ের বিয়েও দিয়ে দিবেন। ঘরে জ্যোতির মতই একটা মেয়ে থাকলে তখন ফাঁকা ফাঁকা লাগবে না। তাই ছেলের বিয়ের এতো তোড়জোড়। আর দীপশিখাকে দেখে তার মনে হয়েছে এই মেয়েটা একেবারে খাপে খাপ। আব্বার ঘোষণায় জাওয়াদের অবস্থা খারাপ। তার বদহজম হলো, বমি হলো তারপর ধুম জ্বর। পাভেল অবাক স্বরে বললো,
“তুই তো ভাই ইতিহাস করলি, বিয়ের খুশিতে একেবারে জ্বর তুলে ফেললি?”
“অফ যা গাধা।”
জাওয়াদ ক্রোধিত স্বরে বললো। তার পাভেলকে দেখলেই থাপড়াতে ইচ্ছে করছে। বন্ধু না মীরজাফর বুঝতে পারছে না। বন্ধুর সমস্যা নিয়ে তার বিন্দুমাত্র মাথাব্যাথা নেই। মেয়ের বাড়িতে পাত পেরে খেয়েও তার সাধ মিটেনি। হামিদ সাহেবের কথা শোনামাত্র নির্লজ্জের মতো বলেছে,
“আংকেল, মেন্যু আমি ঠিক করবো কিন্তু....”
এমন বন্ধু থাকার চেয়ে বন্ধুহীন হওয়া ভালো। জাওয়াদের বিরক্তমুখ দেখে এবার পাভেল হাত থেকে মোবাইল রাখলো। কৌতুহলী স্বরে বললো,
“কি হয়েছে মেয়ে ভালো লাগেনি? একটু চাপা রঙ, আর একটু হেলদি। এছাড়া তো খারাপ না। ব্যাবহার মিষ্টি। পড়াশোনা জানে। নাকি তুই এখনো শাম্মীর শোকে বেহুশ?”
একেই জ্বরে মাথা ব্যাথা করছে। উপর থেকে পাভেলের কথা শুনে কান ঝা ঝা করতে লাগলো। জাওয়াদ হাতের বালিশ ছুড়ে রাগী স্বরে বললো,
“বের হ, চোখের সামনে থেকে সর। নয়তো তোর গায়ে বমি করে দিব।”
“মেয়েদের মত রাগ করিস না তো। বল, বল। আমি সল্যুশন দিচ্ছি। পৃথিবীর সবকিছুর সল্যুশন আমার কাছে আছে।”
জাওয়াদ দীর্ঘশ্বাস ফেললো। গম্ভীর স্বরে বললো,
“সত্যি শুনবি?”
“মিথ্যে কেমনে শুনে।”
জাওয়াদ চোখ রাঙ্গাতেই পাভেল নরম স্বরে বললো,
“বল বল।”
জাওয়াদ এক একে চারদিনের সব কাহিনী খুলে বললো। পাভেলের মুখ হা হয়ে গেলো। সব ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা শেষে জাওয়াদ অসহায় স্বরে বললো,
“যাকে স্বপ্নে দেখলে আমার দিনের চৌদ্দটা বাজে, সেই মেয়েকে বিয়ে করলে তো জীবনের নিষ্পত্তি ঘটে যাবে! কিন্তু আব্বারে কেমনে বুঝাবো! কি বলবো?
"আব্বা, যাকে পছন্দ করছেন সে আমারে স্বপ্নে ভয় দেখায়"-- আব্বা ট্যাডা দিয়ে দৌড়ানি দিবে।"
পাভেল চুপ করে রইলো। থুতনিতে হাত ঠেকিয়ে বসে রইলো সে। জাওয়াদ বিরক্তির স্বরে বললো,
“চুপ করে আছোস কেন?”
এবার মুখ খুললো পাভেল,
“দীপশিখা আসলে চিংকি, সেই চিংকি যে তোকে ইন্টারের ফেয়ারওয়েলে লাভ লেটার দিছিলো আর তুই ওকে মুখের উপর না করে দিছিলি। এখন ছয় বছর পর ও তোকে স্বপ্নে ভয় দেখাচ্ছে আর তোর চৌদ্দটা বাজাচ্ছে। শুধু তাই না আংকেল চিংকির সাথেই তোর বিয়ে ঠিক করতেছে। তুই কি ডেট ওভার শুকনা গাঞ্জা খাওয়া শুরু করছিস? কি বলতেছিস নিজে শুনছিস?”
জাওয়াদ কঠিন চোখে তাকাতেই পাভেল থেমে গেলো। শুকনো কাশি কেঁশে বললো,
“দেখ, আমাকে বলছিস ভালো কথা। কিন্তু আর কাউকে বলিস না। সবাই তো আমার মতো ভালো মানুষ না। দেখা গেলো তোকে মাছের জালে আটকায়ে পাবনায় ছেড়ে আসলো।”
“বের হ, এখন বের হ আমার ঘর দিয়ে।”
“চেঁতিস না দোস্ত।”
“বের হ, নয়তো বমি করে দিবো।”
জাওয়াদ বমি করা ভঙ্গি করতেই পাভেল দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। জ্যোতির সাথে দেখা হতেই বললো,
“বিয়ের খুশিতে তোর ভাই পাগলায়ে গেছে।”
***
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে দীপশিখা। চুল উড়ছে মৃদু হিমেল হাওয়ায়। তরঙ্গিনী এসে একটা শাল গায়ে জড়িয়ে দিলো। দীপশিখা ঈষৎ চমকালো হঠাৎ স্পর্শে। তরঙ্গিনী মৃদু স্বরে বললো,
“কি ভাবছিস?”
“কিছু না আপু।”
“তোর দুলাভাই ফোন করেছে, ওদের তোকে খুব পছন্দ হয়েছে। বাবা আমাকে পাঠালেন তাই। মিস্টার জাওয়াদ হামিদকে তোর কেমন লাগলো?”
দীপশিখা জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেললো। খুব হতাশ স্বরে বললো,
“জানি না আপু। আমি খুব কনফিউজড। তোমাদের কেমন লেগেছে?”
“আমাকে জিজ্ঞেস করলে, আমি বলবো আস্ত বলদ ছেলেটা। অবশ্য বাবার বলদটাকে ভালো লেগেছে। মারও পছন্দ। সে বলছিলো শ্বাশুড়ি নেই, ঝামেলা নেই। কিন্তু আমি চাই না এই বলদের সাথে তোর বিয়ে হোক।”
“বলদের কি দেখলে?”
“ওমা, বলদ না? তোকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে গিয়েছিলো, পায়েশ ফেলে একাকার অবস্থা। উপরে পায়েশ মোজায় ঢুকে যাওয়ায় এমন ভাব করেছিলো যেনো তার গায়ে কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ছাগল ব্যাটা।”
দীপশিখা অবাক হলো। বিহ্বল স্বরে শুধালো,
“আমাকে দেখে চমকেছিলো?”
“হ্যা।”
“তাহলে কেন বললো আমাকে চিনে না?”
আনমতেই স্বগোতক্তি করলো দীপশিখা। তরঙ্গিনী আলতো ধাক্কা মেরে বললো,
“কি ভাবছিস?”
“কিছু না।”
“কি বলবো বাবাকে?”
“আমার সময় লাগবে। এভাবে এক দেখায় কি করে বলবো?”
তরঙ্গিনী হাসলো। দীপশিখার গাল টিপে বললো,
“বড় হয়ে যাচ্ছিস তুই! টেনশন নিস না। জোড়া আল্লাহই ঠিক করেন। এই বলদের থাকে জোড়া থাকলে দেখবি ঠিক-ই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।”
দীপশিখা মলিন হাসলো। আপুকে কি করে বুঝাবে, এই মানুষটি তার প্রথম প্রেম ছিলো! দীপশিখার এখনো মনে আছে সেদিনের কথা, যেদিন মানুষটি রুক্ষ্ণভাবে বলেছিলো,
“তোমার কি মনে হয় তোমার লাভ লেটারে আমি গদগদ মনে হ্যা বলে দিবো? এমন লাভলেটার আমি দিনে দশটা পাই।”………………
.
.
.
চলবে................................................