মাই মিস্টিরিয়াস প্রিন্স - পর্ব ০৫ - মৌমিতা মৌ - ধারাবাহিক গল্প


"স্যার! কোথায় যাচ্ছি আমরা? আর কতো গভীরে যাবো? হাঁটতে পারছি না আমি।"

মৃদু মৃদু বাতাস, টালমাটাল রোদ, আশেপাশে ঘন ঘন সবুজ গাছপালা, লম্বা লম্বা নাম না জানা অজস্র গাছের সারি আর তার মাঝে হেঁটে যাচ্ছে দুজন দম্পতি যাদের বিয়ে মাত্র একদিন আগে সম্পন্ন হয়েছে কিন্তু নেই কোনো মনের মিল আর না আছে কোনো মতের মিল। তাও কী করে যে এক পথে হাঁটছে দুজনে তা নিয়েই প্রকৃতি অতিমাত্রায় ব্যাকুল হয়ে পড়েছে।

অনন্যার প্রশ্নের উত্তরে বিদেশি গম্ভীর ব্যক্তিটি উরফে ইশতেহার কৌশিক মহাশয় একটিও কথা বলল না। তার চোখে গাঢ় কালো সানগ্লাস, সানগ্লাসের কালো ছায়ায় কিছু চুল ঝুলে পড়েছে। গায়ে নীল রঙের জ্যাকেট, যার নিচে লাল রঙের টিশার্ট ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে। পায়ে কালো টাইট জিন্স আর বুট জুতো। আকাশে ঝলমলে রোদ উঠেছে, চারপাশের প্রকৃতি যেন আলোকিত হয়ে উঠেছে। তবু তাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন শীতের এক গভীর সময়ে হাঁটছে। প্যান্টের পকেটে দু'হাত গুঁজে সে ধীর পায়ে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তার হাঁটার ভঙ্গি নিঃশব্দ, অথচ প্রতিটি পদক্ষেপ যেন নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।

বেশ অনেক ক্ষণ আগে কৌশিক স্যার তার রেসিং কার অনন্তর বাতাসের বেগে চালিয়ে জঙ্গলের সামনে এসে থামেন। চারপাশের নিস্তব্ধ পরিবেশে গাড়ির শব্দ যেন কয়েক মুহূর্তে সবকিছু কাঁপিয়ে দিয়েছিল। হঠাৎই তিনি কোনো বাক্য উচ্চারণ না করে অনন্যাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন আর রেসিং কার নিয়ে কোথায় যেন চলে যান। অনন্যা বিস্মিত হয়ে চারপাশে তাকিয়ে জঙ্গলের সামনে অপেক্ষা করতে থাকে।পাঁচ মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হলো তাকে। কৌশিক স্যার আবারো এসে উপস্থিত হলেন, তবে এইবার তার রেসিং কার ছাড়া। তার মুখে সেই চিরাচরিত নির্লিপ্ত ভঙ্গি, গম্ভীর চালচলন যা তার ব্যক্তিত্বের অংশ হয়ে উঠেছে।

হাসপাতাল থেকে বেরোনোর পর কৌশিক স্যার অনন্যাকে নিয়ে শপিং করিয়েছিলেন। অনন্যার জন্য পাকিস্তানি ঢিলেঢালা পোশাক কেনা হয়েছিল, পরার জন্য যা আরামদায়ক এবং দেখতে খুবই সুন্দর আর বিশেষ করে অনন্যার এসব ড্রেস খুব পছন্দের। এখন তার মধ্যেই একটা ড্রেস পরে কৌশিক স্যারের পিছুপিছু জঙ্গলের মাঝে হেঁটে যাচ্ছে সে।

অনন্যা ধৈর্য্য হারিয়ে আবারো বলে উঠলো,
"আপনি কী আপনার বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন নাকি জঙ্গলের ভেতরে নিয়ে আমাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করছেন এটাই বলুন আগে! উত্তর যেটাই হোক আমি নিজেকে প্রস্তুত করতে চাই।"

ইশতেহার কৌশিকের মুখে তারপরও কোনো উত্তর নেই। স্যারের মুখ থেকে উত্তর না পেয়ে অনন্যার মুখমণ্ডলে ক্রোধ ছেপে বের হলো। স্যারের নির্লিপ্ত আচরণ দেখে তার রাগ যেন আরো চরমে উঠলো। হাঁপাতে হাঁপাতে সে নিজেকে থামাতে পারলো না। মনটা এতো এতো বিষিয়ে উঠছে। এমনিতেই দুই দিন ধরে তার সাথে কি সব ঘটে যাচ্ছে তার মধ্যে এই লোকের চুপচাপ থাকা মাথা খারাপ করে ফেলছে মেয়েটার। 

স্যারের পেছনে দাঁড়িয়ে অনন্যা জোর গলায় বলে উঠলো,
"বদমাইশ লোক! একেবারে লুইচ্চা! ভাবেন আপনি অনেক বড় কিছু? হুহ! আসলে আপনি তো ইঁদুর! ইঁদুরের মতো নির্লজ্জ আর নীরব! সারাদিন চোঁ চোঁ করে ঘুরবেন, কিন্তু কারো কথায় কোনো উত্তর দেবেন না। আর ওই মুখটা! কী একটা পেঁচার মতো মুখ! যেটা দেখে মনে হয়, আপনি সারাক্ষণ কোনো গভীর রহস্যের মাঝে ডুবে আছেন। কিন্তু আসলে আপনি কিছুই না! একটা নির্বোধ, অসভ্য, গম্ভীর লোক ছাড়া আর কিছুই না।"

একটু থেমে অনন্যা আবার শুরু করলো,
"আপনার মতো লোকের উপর বজ্রপাত হওয়া উচিত। আকাশের সব তারা খসে পড়ে যেন আপনাকে পিষে দেয়! আর আপনি এখানে পড়ে থাকবেন, কিন্তু কেউ আপনাকে তুলবে না। ইঁদুরের মতো পটপট করে শুধু এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ান, কিন্তু মানুষের মতো একটাও কথা বলতে পারবেন না। আর আপনার এই অহংকার! আপনি ভাবেন আপনি রাজপুত্র? না! আপনি একজন বিরক্তিকর, একগুঁয়ে, নীরস মানুষ। বুঝলেন?"

অনন্যার কথার ঝাঁঝে যেন বাতাস ভারী হয়ে উঠলো। দূর থেকে কোনো অজানা পাখিরা ইঁদুরের নাম করে চো চো করে ডেকে উঠলো, ইশতেহার কৌশিক স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। না এখনো পেছনে ফিরে নি সে, অনন্যার দিকে একবার তাকায় ও নি। তাও অনন্যার মনে হচ্ছে লোকটা তাকে সত্যিই পিষে ফেলবে। তারপরও নিজের শেষ দেখার আগে মুখে যা বলার বলে দিতে পেরেছে এটাই যেন মেয়েটার জন্য সুখকর ব্যাপার।

ইশতেহার কৌশিক পিছনে ফিরে বললো,
"আপনার শেষ?"

অনন্যা থতমত খেয়ে বললো,
"জ্বি?"

"এই যে কতকিছু বললেন সব বলা শেষ হয়েছে?"

"হু! আপনি কী সবটা বুঝতে পেরেছেন?"

"যতটুকু বোঝার বুঝেছি।"

"বাংলা এতো ভালো বুঝেন! বলতেও পারেন কী করে? আপনি না বিদেশি।"
অনন্যা দ্রুত লোকটার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে জিগ্যেস করল কথাটা।

"এখানে আসার আগেই বাংলা ভাষা শিখেই এসেছিলাম। এন্ড, প্র্যাক্টিস মেকস আ ম্যান পার্ফেক্ট!"

"আচ্ছা বাংলাদেশে কবে এসেছেন আর কেনো এসেছেন? কেনো অন্য দেশ নয়, স্যার?"
অনন্যা আগ্রহ সহিত প্রশ্ন ছুঁড়ল।

ইশতেহার কৌশিক সামনে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,
"নো কুয়েশ্চেন।"

অনন্যা হাঁটতে হাঁটতে মুখ ফুলিয়ে বললো,
"ওকে! আর কতক্ষণ লাগবে?"

"ফাইভ মিনিটস! কিন্তু আপনি যেতে পারবেন না।"

অনন্যা হতচকিত হয়ে দ্রুত আবারো স্যারের পাশে এসে দাঁড়াল। জিজ্ঞেস করলো,
"কেনো? কেনো পারবো না?"

"আপনার কথা যা ছিল আমার উদ্দেশ্যে, তা আমার চিন্তাধারাকে বদলে দিয়েছে। এখন আপনাকে নিজের বাড়িতে রাখতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তাই নিচের পথ ধরুন সেটাই ভালো হবে।"

অনন্যা দ্রুত লোকটার হাত চেপে ধরে বললো,"না... না স্যার! আপনি এমনটা করতে পারেন না।"

"আপনি যেভাবে বলতে পারলেন, আমাকেও সেভাবে করতে পারতে হবে।"

অনন্যা ইশতেহার কৌশিকের হাত টেনে বরাবর দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললো,
"আমাকে কী মনে নেই? আমি আপনার স্টুডেন্ট!"

ইশতেহার কৌশিক অনন্যার হাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে আবারো হেঁটে যেতে থাকলো। সামনে দৃষ্টি স্থির রেখে বললো,
"মনে আছে। একদিন লাইব্রেরী রুমে আপনার সাথে আটকে পড়েছিলাম।"

"জ্বী! যাক মনে আছে।"

"কিন্তু তাতে কী? আপনি আসতে পারবেন না।"

"স্যার! আমি কিন্তু আপনার নামে নারী নির্যাতন মামলা করবো। এটাও বলবো আপনি জোর করে বিয়ে করেছেন।"

"কোনো প্রমাণ?"

"আমার বাসার সবাই আমার জন্য দাঁড়াবে। তাদের কথাই প্রমাণ হবে।"

"এসবে কিছু হবে না।"

কিছু মুহূর্ত পর ইশতেহার কৌশিক বিরক্ত চোখে নিচের দিকে তাকালেন। অনন্যা তার পা শক্ত করে ধরে আছে, আর কাঁদো কাঁদো স্বরে বলছে,
"প্লিজ, স্যার! আমাকে নিয়েই যান। নাহলে আমি যাবো কোথায়? কী করবো? আপনি আমাকে এভাবে ফেলে যেতে পারেন না!"

লোকটা যেন একেবারে চুপচাপ, কোনো কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই। পা টেনে টেনে ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। আর অনন্যা সেই পা ছাড়ার নামই নিচ্ছে না। মাটিতে ধুলো মেখে একরকম গড়াগড়ি খেয়ে পড়ে আছে সে, তবুও হাতের গ্রিপ যেন ইস্পাতের মতো শক্ত। একটুও শিথিল হচ্ছে না।

কিছুটা পথ হেঁটে যাওয়ার পর হঠাৎ ইশতেহার কৌশিক থেমে গেলেন। স্যারের এমন আচরণ দেখে অনন্যা কিছুটা অবাক হয়ে গেলো। চোখ তুলে সামনে তাকাতেই তার মুখ অবিশ্বাসে ফাঁকা হয়ে গেল।

জঙ্গলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে একটি রহস্যময় দুই তলা বাড়ি। বাড়ির চারপাশে কালো পোশাকের চারজন সিকিউরিটি গার্ড সতর্ক ভঙ্গিতে পাহারা দিচ্ছে। বাড়িটি যেন জঙ্গলের নির্জনতা ভেঙে এক অদ্ভুত রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

এ দৃশ্য দেখে অনন্যা অবাক হয়ে লোকটার পা আরো জোরে চেপে ধরলো। যেন স্যারকে ছেড়ে দিলে সবকিছু হাতছাড়া হয়ে যাবে।

ইশতেহার কৌশিক এবার বিরক্ত হয়ে মুখ তুলে চিৎকার করে বললেন,
"লিভ মিইই!"

তার কণ্ঠের তীব্রতা অনন্যার হৃদয়ে দোলা দিলো। ভয়ে কেঁপে উঠে সে হাত সরিয়ে নিলো। মুহূর্তের মধ্যে তার মুড খারাপ হয়ে গেলো। স্যারের এমন কঠোর আচরণে সে গভীরভাবে আহত হলো।

চিৎকার শুনে সিকিউরিটি গার্ডরা মুহূর্তে সতর্ক হয়ে গেলো। তারা চারপাশে নজর বুলিয়ে সন্দেহজনক চোখে তাকালো। তবে ইশতেহার কৌশিক তাদের দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করেই ধীরে ধীরে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন। গার্ডরা তাকে দেখেই সম্মানের ভঙ্গিতে মাথা নত করলো।

কৌশিক বাড়ির প্রধান দরজায় পৌঁছে সেটি ঠেলে খুললেন। ভেতরে প্রবেশ করার সময় তার অভিজাত ভঙ্গি এক মুহূর্তের জন্যও বদলালো না।

অনন্যা পিছু পিছু এগিয়ে গিয়ে দরজার কাছে দাঁড়ালো। কিন্তু প্রবেশ করার আগেই কৌশিক দরজার কাছে থেমে দুই হাতে পথ আটকালেন। তিনি পথ আটকে দাঁড়িয়ে বললেন,
"কিছু কন্ডিশন মানলে ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে।"

অনন্যা একটু অপ্রস্তুত বোধ করলো তারপর ও হাত দিয়ে ইঙ্গিত করলো, "ঠিক আছে, বলুন শর্ত কী?"

কৌশিক চোখ সরু করে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
"Condition one--No unnecessary questions. 
Condition two--Follow my instructions without any argument. 
Condition three--Once you're inside, there's no turning back. So, Are you ready to accept?"

অনন্যা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। অতঃপর তাকে ঢুকতে দেওয়া হলো। অনন্যা যতোই ভেতরে হাঁটছে ততোই বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যাচ্ছে। ভেতরে একজনের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। অনন্যা কৌশিক স্যারের পিছুপিছু হলরুমে প্রবেশ করলো। দেখতে পেলো এক আদিবাসী মহিলাকে। মহিলাটি কোন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর হবে তা নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেলো অনন্যা।

ততক্ষণে ইশতেহার কৌশিক মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
"লারা! এক কাপ স্ট্রং কোল্ড কফি করে নিয়ে আসো।"

লারা মাথা নামিয়ে বললো,
"এখনি নিয়ে আসছি, স্যার।"

ইশতেহার কৌশিক ধূসর রঙের সোফায় বসে উপরিভাগে নিজের হাত ছড়িয়ে দিলো। অনন্যা দ্রুত এগিয়ে স্যারের পাশে বসে বললো,
"স্যার। মহিলাটি কোন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর?"

"চাকমা।"

"ওকে! আমার ও খিদে লেগেছে খুব। আমি কী কিছু খেতে পারি?"

"ইয়েস!"
কৌশিক বিরক্তের সাথে উত্তর করলো।

"আচ্ছা! আগে ফ্রেশ হয়ে আসি। রুম কোনটা আমার?"

অনন্যা বসা থেকে উঠে পাশ ফিরে দাঁড়ালো। যেখান থেকে সামনের দিকে তাকালে একটা সিঁড়ি, যা বেয়ে উপরে উঠতে হয়। উপরে দুটো মাত্র কক্ষের দরজা দেখা যাচ্ছে। ইশতেহার কৌশিক উপরে তাকিয়ে বললো,
"প্রথম রুমটা আমার। তো দ্বিতীয় রুমটা আপনার।"

"ঠিক আছে।"
অনন্যা দ্রুত হেঁটে যেতে থাকলো। ইশতেহার কৌশিক একটু জোরেই বলে উঠলো,
"কিন্তু! দ্বিতীয় রুমটায় কোনো বাথরুম নেই।"

অনন্যা থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো। আড়চোখে তাকালো স্যারের দিকে। ইশতেহার কৌশিক ছড়ানো হাত দুটো ঠিক করে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বললো,
"নিচের বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসুন।"

অনন্যা মাথা হেলিয়ে বাথরুমের দিকে চলে গেলো। বাথরুমটা দেখে আবারও তার মাথা ঘুরে গেলো,এটা পুরো একটা রুমের সমান! বিশাল আকার, সজোরে আছড়ে পড়া আধুনিক ডিজাইন আর মার্বেল টাইলসে সাজানো ছিলো সব কিছু। সে নিজের সব অন্তর্নিহিত কাজ সেরে বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে হাত ও মুখ ধুয়ে নিল।

যখন বেরোতে যাবে, তখন হঠাৎ কেউ প্রচণ্ড গর্জন করে ডাকলো। ভয়ংকর একটা আওয়াজ, যেন কোনো বড় প্রাণী। অনন্যা ভয়ে শিটিয়ে গেলো। সে দ্রুত বড় বাথরুমের আনাচে-কানাচে চোখ বুলাতে লাগলো, যেন কোথাও কিছু অদ্ভুত বা বিপদজনক কিছু লুকিয়ে আছে। আবারো গর্জন শোনা গেলো, শোনা গেলো গড়গড় আওয়াজ। এক কোণে একটা পিলারের পেছন থেকে আওয়াজটা হচ্ছে। অনন্যা মনে ভয় নিয়ে দেয়ালের দিকে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আর তার চোখ দুটো পিলারের দিকে স্থির হয়ে আছে। বেশ কিছু সময় পর, হাঁটতে হাঁটতে একটি বাঘ বেরিয়ে এলো। বিশাল, শক্তিশালী বাঘটি তার দিকে নজর ফেললো। অনন্যা প্রচণ্ড ভয়ে চিৎকার করতেও ভুলে গেলো। সে শুধু এক মুহূর্তের মধ্যে দরজার দিকে দৌড়ে গেলো, পায়ের তলায় যেন মাটি খসে পড়ছে।

অনন্যা দরজাটি খোলার চেষ্টা করছে, কিন্তু সেটি একটুও সাড়াচ্ছে না। বিপদের মুহূর্তে, অনন্যার মাথাটাও কাজ করছে না। অস্থিরভাবে দরজার হাতল ঘুরাচ্ছে, কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। অপর দিকে, বাঘটি ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসছে, তার পা হাঁটতে হাঁটতে মাটিতে গুমর তৈরি করছে। অনন্যার হৃদপিণ্ড যেন ভীষণ জোরে কাঁপছে, তবে সে এক মুহূর্তের জন্যও নিজের অবস্থান ছাড়তে পারছে না।
.
.
.
চলবে....................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন