গ্যারেজটি বাড়ির পেছন দিকে অবস্থিত। গ্যারেজের গেইট থেকে শুরু করে নিচ পর্যন্ত একটা সরু রাস্তা চলে গেছে যা শুধুমাত্র যানবাহন বের হওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে। গাড়ির ইঞ্জিনের মৃদু গর্জন আর চাকার নিচে পাথরের কড়মড় শব্দে গ্যারেজ থেকে বেরিয়ে সরু রাস্তায় নামলো কৌশিক। অনন্যা চুপচাপ জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিল, তার ভ্রু কুঁচকে আছে। সকালের ঘটনাগুলো মনের ভেতর বারবার ভেসে উঠছে, আর তাকে চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে।
কৌশিক স্যার গাড়ির গতি তীব্র বেগে বাড়িয়ে রেখেছিলেন। অনন্যা অসহ্য হয়ে হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো,
"আস্তে চালান! কাল কিছু বলিনি, কিন্তু আজ তো সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে শরীরের হাড়গোড়, নাড়িভুঁড়ি সব উলটপালট হয়ে যাচ্ছে । প্লিজ, দয়া করে স্পিড কমান।"
কৌশিক ঠান্ডা ভঙ্গিতে বললো,
"এইটুকু স্পিড সহ্য করতে পারছেন না?"
তবুও গাড়ির গতি কিছুটা কমিয়ে দিলো সে। অনন্যা নাক ফুলিয়ে বললো,
"না! এমনভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন, মনে হচ্ছে একটু পর আমার পা আকাশের দিকে উঠে যাবে, আর মাথাটা উল্টো হয়ে মাটিতে পড়ে থাকবে। এভাবে মানুষ গাড়ি চালায়?"
কৌশিক ঠোঁট বাঁকিয়ে এক পলকের জন্য হাসলো, তারপর চুপচাপ রাস্তার দিকে মনোযোগ দিলো। গাড়ির ভেতরে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। অনন্যা চুপ করে রইলো, ভ্রু কুঁচকে বাইরের দৃশ্য দেখছিল সে।
হঠাৎ কৌশিক আচমকা গলা খাঁকারি দিয়ে গম্ভীর স্বরে উচ্চারিত করলো,
"শিকদার!"
অনন্যা চমকে উঠলো, স্যারের দিকে ঘুরে বললো,
"অনন্যা!"
কৌশিক একপলক অনন্যার দিকে তাকালো, বললো,
"একই কথা..... আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে শান্ত থাকবেন।"
অনন্যা ভ্রু কুঁচকে বললো,
"শান্ত থাকবো মানে?"
"মানে, আমাদের বিয়ে হয়েছে, এই বিষয়টা ভুলে যাবেন। কাউকে ভুলেও বলতে যাবেন না।"
অনন্যা ভ্রু তুলে জিজ্ঞাসু কণ্ঠে বললো,
"আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকেও বলতে পারবো না?"
কৌশিক দম নিয়ে সপ্রতিভ ভঙ্গিতে উত্তর দিলো,
"না! পারবেন না। আপনার কথা আমি মেনে নিয়েছি। আমাদের বিয়ে হয়েছে, এই সত্যটা বিশ্বাস করেছি। তাই এটাকে সিক্রেট রাখার চেষ্টা করবেন।"
অনন্যা চুপ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো, ঠোঁটের কোণায় এক অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠলো।
"পুরুষ মানুষেরা সবাই একই রকম হয়।"
ইশতেহার কৌশিক প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো অনন্যার দিকে। অনন্যা বললো,
"আমার একটা বয়ফ্রেন্ড ছিল। ভার্সিটিতে স্টুডেন্টদের মধ্যে খুব ফেমাস। সেও বলেছিল, আমাদের দুজনের সম্পর্কের কথা কাউকে না বলতে। আজ আপনিও বললেন। সেম সেম!"
"ভুল তো বলেনি।"
"কিন্তু আমার জন্য খুবই বিরক্তিকর। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করা, কথা বলা সবকিছু অসহ্যকর। এরকম রিলেশনশিপে থাকার চেয়ে সিংগেল থাকা শতগুণে ভালো।"
"হুম, বুঝলাম।"
কৌশিক মাথা নাড়লো। পরমুহূর্তে বললো,
" বয়ফ্রেন্ড থাকতে অন্য কাউকে কেনো বিয়ে করছিলেন? ধোঁকা দিয়েছিল নাকি?"
অনন্যা চমকে উঠে বললো,
"আপনি সবকিছু এতো দ্রুত বুঝে যান কীভাবে?"
ইশতেহার কৌশিক ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে স্টিয়ারিং সামলাতে ব্যস্ত। অনন্যা এক গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে বসে পড়লো। তার মনের ভেতর যেন সিনেমার মতো ভেসে উঠলো ছয়-সাত দিন আগের সেই ঘটনা।
ঈরা সেদিন খুব জোরাজুরি করেছিল মামার কাছ থেকে ঘোরার অনুমতি পেতে। তাদের কাছে ঘোরাঘুরি বলতে বাইরে একটু হাঁটাহাঁটি করা, পছন্দের রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করা আর শপিং মলে গিয়ে নতুন নতুন পোশাক ট্রাই করা। সেদিনও ঠিক তেমনই একটা পরিকল্পনা করে বেরিয়েছিল তারা।
দুজনে মিলে শহরের মাঝখানের একটি বিখ্যাত রেস্টুরেন্টে গিয়েছিল। রেস্টুরেন্টটা বেশ জমকালো। ভিতরে ঢুকতেই মনটা ভালো হয়ে যায়, ডিম লাইট, মৃদু মিউজিক, চারপাশের ফ্রেমবন্দি শিল্পকর্ম আর সুগন্ধি বাতাস যেন স্বর্গের আভাস দিচ্ছিল। ঈরা মেনু হাতে নিয়ে একের পর এক আইটেম বেছে নিচ্ছিল আর অনন্যা চুপচাপ বসে তার হাতের মেনুটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিল।
হঠাৎ চোখ চলে গেলো রেস্টুরেন্টের কাচের দরজার দিকে। অনন্যা দেখতে পেলো, আরণ্যক একটি মেয়ের সাথে ভেতরে প্রবেশ করছে। দৃশ্যটি দেখে অনন্যা কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসেছিল।
সে দ্রুত ঈরার দিকে তাকিয়ে বললো,
"সিট পাল্টা, প্লিজ!"
ঈরা অবাক হয়ে বললো, "কেন? কী হলো?"
অনন্যা কিছু না বলে ঈরার পাশে সরে গেলো। তার চোখ ঘুরে বারবার আরণ্যক আর তার সঙ্গিনীর দিকে চলে যাচ্ছিল। মেয়েটি আরণ্যকের হাতে হাত রেখে কিছু একটা বলছিল, আরণ্যক হেসে তার মাথার চুল ঠিক করে দিচ্ছিল। তারা দুজন খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে বসেছিল।
মেয়েটি যা পছন্দ করছিল, আরণ্যক তা-ই অর্ডার করছিল। তাদের চোখে-মুখে একটি সহজাত মধুরতা খেলা করছিল। অনন্যার হৃদয়ে একের পর এক তীর বিদ্ধ হচ্ছিল যেন। আরণ্যক যে এমনভাবে তার বিশ্বাস ভেঙে দিতে পারে, সে কখনো ভাবেনি।
আরণ্যকের সাথে সকালেও কথা হয়েছিল। তখন আরণ্যক জানিয়ে ছিল,
"আজ প্রচুর ব্যস্ত, অনু।চাইলেও দেখা করতে পারবো না। অন্য কোনোদিন দেখ।"
আরণ্যকের ব্যস্ততার অর্থ এই মেয়েটাই ছিল তাহলে?
কৌশিক ডানে মোড় নিতে নিতে গাড়ির স্টিয়ারিংটা মৃদু আঁকড়ে ধরলো। গম্ভীর স্বরে বললো,
"মানুষ খুব বোকা! সবসময় আবেগে বশ হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। আবেগ, অনুভূতি মানুষকে বোকা বানায়, দুর্বল করে ফেলে।"
অনন্যা মৃদু হেসে বললো,
"আপনি কখনো আবেগ, অনুভূতির দেয়ালে আটকে পড়েননি? ভালোবাসেননি কাউকে?"
শোনা গেলো প্রচণ্ড তীক্ষ্ণ কণ্ঠ! কৌশিক গভীর স্বরে বললো,
"নাহ! এই শব্দগুলোর অস্তিত্ব আমার জীবনে নেই। ভালোবাসা মানুষকে দুর্বল বানায়। আমি দুর্বল নই।"
অনন্যা এক মুহূর্ত চুপ রইলো, তারপর ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে বললো,
"হুম, ঠিক বলেছেন! জীবনে একবার হলেও ভালোবাসতে হয়, স্যার। বোঝার জন্য যে কেনো ভালোবাসা উচিত নয়।"
কৌশিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্থির দৃষ্টি রাখলো সামনের রাস্তায়। হঠাৎ মস্তিষ্কের গভীর থেকে উঠে এলো পুরনো কিছু স্মৃতি। কানে বাজলো এক মিষ্টি কিন্তু ক্রন্দনভরা স্বর,
"কেনো ভালোবাসলে না আমায়?"
কৌশিকের বাম হাত মুহূর্তেই কপালে চলে গেলো। মাথা নিচু করে প্রচণ্ড চাপ অনুভব করলো সেখানটায়। স্টিয়ারিং ধরে রাখার চেষ্টায় তার ডান হাত কাঁপছিল। গাড়ি ক্রমাগত এঁকেবেঁকে চলছিল।
অনন্যা ভীত চোখে তার অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করলো। দ্রুত পেছন থেকে হাত বাড়িয়ে কৌশিকের কাঁধে স্পর্শ করে বললো,
"স্যার! কী হয়েছে? আপনি ঠিক আছেন?"
কোনো উত্তর আসলো না। কৌশিকের চেহারায় ঘাম জমে উঠেছে, স্টিয়ারিং সামলাতে তার হাতের স্নায়ুগুলো যেন শিথিল হয়ে পড়ছে। গাড়ির গতি ক্রমেই বাড়তে লাগলো।
পাশের একটি ট্রাকের হর্ণ শোনা মাত্রই অনন্যা চিৎকার করে উঠলো,
"স্যার! গাড়ি থামান! প্লিজ, থামান! এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে!"
গাড়ির সামনের চাকা হঠাৎ বাঁ দিকের গার্ডরেলের দিকে স্লাইড করতে শুরু করলো। অনন্যা ঝাঁকুনি খেয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়লো। আতঙ্কিত কণ্ঠে আবার চেঁচিয়ে উঠলো,
"স্যার! আর ইউ ওকে? প্লিজ, কান্ট্রোল ইয়োরসেলফ!"
কৌশিক একঝটকায় নিজের চেতনা ফেরানোর চেষ্টা করলো। ডান হাতে স্টিয়ারিং ধরে রেখে ব্রেকের দিকে পা বাড়ালো। গাড়ি এক হালকা ঝাঁকুনিতে থেমে গেলো। অনন্যা তখনও শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় তাকিয়ে আছে।
ট্রাকটি পাশ কাটিয়ে চলে গেছে ইতিমধ্যে। কৌশিক দীর্ঘক্ষণ নিঃশব্দে গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে বসে ছিল। অনন্যাও প্রচুর পরিমাণে শ্বাস নিচ্ছিলো, এক মুহুর্তের জন্য মনে হয়েছিল আজকে তারা শেষ।
কৌশিক এক ঝটকায় মাথা তুলে আশেপাশে তাকিয়ে রাস্তা পরখ করতে লাগলো, সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে অনন্যার দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বললো,
"গাড়ি থেকে নামুন।"
অনন্যা স্তম্ভিত হয়ে তার দিকে তাকালো, যেন কথাগুলো তার কানে পৌঁছাতে সময় নিচ্ছিল। কৌশিকের কঠোর অভিব্যক্তি আর সেই শীতল ভাষা শুনে কিছুই যেন বুঝতে পারছিল না অনন্যা।
কৌশিক আবারও বললো,
"আপনাকে নিয়ে ভার্সিটির গেইট পর্যন্ত যেতে পারবো না। তাই এখানেই থামুন। মনে রাখবেন, আপনার আর আমার বিয়ের সম্পর্ক এই রাস্তা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে। এই রাস্তা থেকে যতোই পা বাড়াবেন, আপনি আমার অপরিচিত বলে গণ্য হবেন। ভার্সিটিতে যখন পরিচিত হবো, তখন আমি আপনার স্যার।"
অনন্যা কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে বসেছিল, অতঃপর ব্যাগটা নিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। এক পাশে সরে দাঁড়ালে গাড়িটি হুঁশ করে সামনে ছুটতে লাগলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনে এগোতে থাকলো অনন্যা। কপালে কেমন বর জুটলো, সময়ের সাথে সাথে সবকিছু কেমন যেন জটিল লাগছে। মানুষটিকে একেক সময় একেক রকম মনে হয়। কখনো কঠোর, কখনো ঠান্ডা, কখনো শান্ত, কখনো অস্বাভাবিক। কি হচ্ছে তার সাথে কিছুই যেন মাথায় ঢুকছে না।
•
নিত্যদিনের মতো আজ ও আরণ্যক আনমনে ভার্সিটির লম্বা পথ ধরে হাঁটছিল। ফ্রেন্ড, ভাই ব্রাদারদের সাথে হাত মেলাতে মেলাতে তার প্রবেশ ঘটছিল। কিছুটা সামনে পরিচিত একজনকে দেখে তার পা থেমে গেলো। পাশের বন্ধুকে 'আসছি' বলে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো সে।
সামনের পরিচিত মানুষটি কোনো বিষয়ে গভীর চিন্তা করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছিলো। আরণ্যক হঠাৎ দ্রুত তার দিকে ছুটে গেলো এবং মেয়েটির ব্যাগটি টান দিয়ে ধরলো। অনন্যা একটু পিছনে সরে এলো। আরণ্যককে দেখে বিস্মিত হয়ে তাকালো।
নিজেকে সামলে জিজ্ঞেস করলো,
"কী?"
আরণ্যক অনন্যার হাতের কব্জি ধরে বাগানের দিকে নিয়ে গেলো। বাগানে গাছের এক পাশে দু'জনে এসে থামলো। অনন্যা জোর করে হাত ছাড়িয়ে নিল। বিরক্তের সহিত বললো,
"কী সমস্যা?"
"ফোন দেখা!"
"আমার পার্সোনাল জিনিস কাউকে দেখাই না।"
"পার্সোনাল জিনিস? কতগুলো মেসেজ, মিসড কল করেছি..... খেয়াল আছে? কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি? নিজে থেকে একটা ফোন ও করিস না। বেশি ভাব না তোর?"
অনন্যা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
"আমার লাইফ! আমি যা মন চায় তাই করব.... তোমার কী?"
আরণ্যক ক্ষিপ্ত হয়ে বললো,
"কী বলছিস তুই? আমরা দু'জন একে অপরকে ভালোবাসি। অনেক দিন একসাথে ছিলাম, এখন হঠাৎ কী প্রমাণ করতে চাইছিস? কেন যোগাযোগ বন্ধ করে দিলি এতদিন?"
অনন্যা তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বলল,
"তুমি নিজেও জানো কী কারণ হতে পারে! আর আমাদের সম্পর্ক সেই কবেই শেষ হয়ে গেছে। তাই আমার ব্যক্তিগত বিষয়ে ইন্টারফেয়ার করার অধিকার তোমার নেই। যাই হোক, আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।বাই!"
অনন্যা কথাগুলো বলে নিজের বিল্ডিংয়ের দিকে চলে গেলো। আরণ্যক স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কবে কী ভুল করেছে তার মনে পড়লো না। মেয়েটা এমন কেনো? সরাসরি কিছু বলে না কেনো?
•
বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় ওদের ক্লাস। ক্লাসে পৌঁছেই নোহারাকে দেখতে পেলো অনন্যা। পাশে বসতে বসতে হালকা স্বরে বললো,
"কখন আসলি?"
নোহারা মিষ্টি হাসি দিয়ে উত্তর দিলো,
"এই তো, দশ মিনিট হবে হয়তো।"
দু'জনের মধ্যে বেশ অনেকক্ষণ গল্প-গুজব চললো। হঠাৎ নোহারা স্মরণ করিয়ে দিলো,
"তুই না বলেছিলি, খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলবি!"
অনন্যার মনে ভেসে উঠলো স্যারের সেই কঠোর বাক্যগুলো। ভেতরে চাপা অস্বস্তি। অনন্যা প্রসঙ্গ এড়িয়ে বললো,
"কই কিছু না তো! আচ্ছা, প্রথমে কোন ক্লাস?"
নোহারা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো,
"জানি না রে। রুটিন তো এখনো দেয়নি।"
অনন্যা একপাশে মাথা হেলিয়ে ফোন দেখতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর দরজা ঠেলে ক্লাসরুমে প্রবেশ করলেন স্যার। নোহারা সামনের দিকে তাকিয়ে, মুগ্ধ স্বরে অনন্যার হাত ধরে চাপা গলায় বললো,
"দোস্ত, আমার অনেক দিনের সুপ্ত ইচ্ছে আজ পূরণ হলো। আইকে স্যার এসেছে! প্রথম দিন, প্রথম ক্লাস। এই সেমিস্টারটা তার চেহারার মতোই সুন্দর কাটবে রে!"
কথাগুলো শুনে অনন্যা দ্রুত মুখ তুলে তাকালো। হঠাৎ ধ্বক করে আওয়াজ হলো বুকে। সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল অনন্যার নতুন নতুন বিয়ে করা বর উরফে বিদেশি প্রফেসর। গাড়িতে বসে তার পোশাকের দিকে ভালো করে খেয়াল করেনি অনন্যা, কিন্তু এখন স্যারের উপস্থিতি যেন নজর আটকে রাখলো তার। কালো কোটের নিচে সাদা শার্ট, শার্টের ভেতর ভারী টিশার্ট, কালো প্যান্ট, সবকিছু যেন নিখুঁত সৌন্দর্যের মূর্ত প্রতীক। তার ব্যক্তিত্ব, তার আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিমা, সবকিছু মিলিয়ে কৌশিক যেন এক অজ্ঞাত সিনেমার নায়ককেও হার মানিয়ে গেছে।
অনন্যার শরীরের ভেতর দিয়ে এক অজানা শিহরণ ছড়িয়ে পড়লো। তার দৃষ্টি আটকে গেল স্যারের দিকে। কতক্ষণ এভাবেই চলে গেলো খেয়াল নেই। কতো যে কথা বললো লোকটা। অনন্যা শুধু চুপ করে ভ্যাবলার মতো তাকিয়েই থাকলো, কথাগুলো আর কানে গেলো না। লোকটার কর্কশ স্বর, ক্লাসে এসে মধুর কণ্ঠে পরিণত হয়ে গেলো কী করে?
.
.
.
চলবে..................................................