তুমি রবে নীরবে - অন্তিম পর্ব ৪০ - নাদিয়া সাউদ - ধারাবাহিক গল্প


রিশার ঘর থেকে জুলেখার চিৎকারের শব্দ পাওয়া গেল। ভয়ে কলিজা ধ্বক করে উঠলো কুহুর। খাতা, কলম ফেলে ছুটে গেল সে। রিশা ওয়াশরুমে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। দরজা আধো খোলা। কুহুর শরীর কাঁপতে লাগলো। এই মুহূর্তে বাড়িতে কেউ নেই। রিশার বিয়ে উপলক্ষ্যে শারমিন বেগম স্বামীকে নিয়ে জুয়েলার্সের দোকানে গিয়েছেন। কোনোরকম এগিয়ে গিয়ে রিশার মাথাটা কোলে নিল কুহু। গাল চাপড়ে ডাকলো। কোনো হেলদোল নেই। নিজেকে এখন চরম অপদার্থ মনে হচ্ছে। রিশার মানসিক অবস্থাটা সে একবার খেয়াল করলো না! নিজের কথা ভেবে চলে গেল? সাময়িক সময়ের জন্য যেন বোধবুদ্ধি লোপ পেয়েছিল। জুলেখার সাহায্য নিয়ে রিশাকে টেনে রুমে নিয়ে আসলো কুহু। তক্ষুনি খাটে পরে থাকা রিশার ফোন বেজে উঠলো। স্ক্রিনে আশফিকের নাম। কাঁপা হাতে কোনোরকম ফোন রিসিভ করলো কুহু। রিশার বেগতিক অবস্থার কথা জানাল। আশফিক এক্ষুনি আসছে জানিয়ে ফোন কেটে দিল। জুলেখা বারংবার বলে যাচ্ছে যেন রিশার বাবা, মাকে একবার ফোন করে জানায়। কুহু দিশেহারা হয়ে গেল ক্ষণিকের জন্য। জুলেখাকে বলল রুম থেকে তার মোবাইলটা নিয়ে আসতে। তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গেল জুলেখা।

◼️

পশ্চিমাকাশে কমলা রঙ ছড়িয়েছে। সূর্যটা এক্ষুনি অস্ত যাবে। ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে ভাবলেশহীন দাঁড়িয়ে আছে রাতিম। বাবার মৃত্যু তাকে পাথর করে দিয়েছে। কোনো অনুভূতি স্পর্শ করতে পারে না। আজকে মা আর রূপার দায়িত্ব তার কাঁধে না থাকলে রিশাকে কাঁদাতো না সে। মনে হচ্ছে এই নশ্বর দুনিয়ায় কেবল কষ্টের বোজা বইতেই এসেছে। ইহজন্মে রূপাকে স্ত্রী রূপে মেনে নেওয়া অসম্ভব। সময় হয়তো বদলে দেবে একদিন সব। তবে রূপাকে মনের সব কথা জানিয়ে দেওয়ার পর হালকা লাগছে রাতিমের। এই মুহূর্তে এসব না বলেও শান্তি মিলছিল না। রূপাকে গ্রহণ করতে আরো সময় চাই তার। কিন্তু মন থেকে ভালোবাসতে পারবে কিনা সেটুকু আশ্বাস দিতে ব্যর্থ হয়েছে রাতিম। রূপা চোখের জল আড়াল করে মনোযোগ নিয়ে কথাগুলো শুনেছিল। সেই মলিন মুখখানা দেখে খারাপ লেগেছিল তার।আজকে আইরিশের মুখে তার বিয়ের কথা শুনতেই ভেতর দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে রাতিমের। চোখ বুজলেই দেখতে পাচ্ছে মেয়েটা অন্য কারো জন্য বউ সেজেছে! এত যন্ত্রণা সইতে পারবে তো মন? ডুকরে কেঁদে উঠলো রাতিম। চারিদিকে আঁধার ঘনিয়ে এসেছে। যেন অমাবস্যা নেমেছে। বুকের ভেতর হুহু করে উঠলো। বিষাক্ত অনুভূতির ছোবলে রক্তক্ষরণ বইয়ে গেল অন্তঃকরণে! দমকা হাওয়া ছেড়েছে। বৃষ্টি আসার পূর্ভাস। আচমকা ঘর থেকে মায়ের চিৎকারের শব্দ কানে ভেসে আসছো রাতিমের। ভাবনার জগৎ থেকে ছিটকে বেরিয়ে এলো সে। দ্রুত নিচে আসতেই দেখলো কাঠের সদর দরজা হাট করে খোলা। মায়ের আহাজারি কান ভারী করলো তার। অজানা ভয়ে শরীর কাঁপতে লাগলো। ধীর পায়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখলো মেঝেতে রূপার দেহ পড়ে আছে লুটিয়ে। মুখ ভর্তি ফেনা। ঠিক কি ঘটেছে রাতিমের মস্তিষ্ক দ্রুত বুঝে ফেলল! দৌড়ে গিয়ে রূপার পাশে বসে চিৎকার করে ডেকে উঠলো। ছুঁতে গিয়েও পারলো না সে। অদৃশ্য এক শক্তি বাঁধা দিল। স্পষ্ট কানে ভেসে আসলো রূপা বলছে, কোন অধিকারে আমাকে ছোঁবে তুমি? স্বামীর? এই বিয়েটাকে কি তুমি মেনেছ? যখন কাছে ছিলাম তখন ছুঁয়েছ একটু ভালোবেসে? রাতিমের চোখ বেয়ে টপটপ করে জল পরলো৷ কন্ঠনালী চেপে ধরলো। তবে কি আইরিশের বিষয়টা রূপাকে জানিয়ে ভুল করলো? আচমকা দূরে দৃষ্টি থমকে গেল রাতিমের। একটা কাগজ ভাজ করে রাখা। তার পাশেই কাঁচের রেশমী চুড়ি ভেঙ্গে ছড়িয়ে আছে। এগিয়ে গিয়ে কাগজটা হাতে নিল রাতিম। ভাজ খুলতেই দেখলো কিছু লেখা। শক্ত চোখেমুখে পড়তে আরম্ভ করল,

আমি চলে যাচ্ছি রাতিম ভাই। শুধুমাত্র আমার জন্য তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষটাকে আপন করে পেলে না, এটা মেনে নিতে পারছিলাম না। যদি বলতাম তুমি আইরিশের কাছে ফিরে যাও, তাহলে কখনোই যেতে না। তুমি দায়িত্বের হেলাফেলা করবে না আমি জানি। বুঝ হবার পর থেকে আমার প্রথম ভালোবাসার পুরুষটি ছিলে তুমি। তোমাকে ঘিরে আমার স্বপ্ন, আশা ছিল। সেই তোমার ভালোবাসা পাবনা জেনে কি করে বেঁচে থাকতাম বলো? আমি মনকে সান্ত্বনা দিয়েছি, অন্তত তোমার বউ তো হতে পেরেছিলাম! বিচ্ছেদের যন্ত্রণা সইবার মতো ক্ষমতা আমার নেই। তোমাকে অন্য কারো সাথে ভাবার চেয়ে মৃত্যুই আমার কাছে সহজ মনে হয়েছে।। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিয়ো। আমার মৃ-ত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। 

ইতি তোমার বউ রূপা।

চিঠিটা পড়তেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো রাতিম। রূপার কষ্ট টা অনুভব করতে পারছে সে। তবে রূপার এভাবে চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছে না। এই ক্ষত সারাজীবনের জন্যও ভুলতে পারবে না। মেয়েটা আজীবনের জন্য অপরাধী করে চলে গেল তাকে। রাতিমের মা ছেলের পানে তাকিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেছেন। পুলিশ আসলে যদি রাতিমকে ধরে নিয়ে যায়? রূপা তো স্পষ্ট বলেই গেছে কেউ দায়ী নয়। সবকিছু ছাপিয়ে কেবল আইরিশের কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে রাতিমের। মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায়নি তো? তাহলে যে বাঁচার আর কোনো পথই থাকবে না! যত দ্রুত সম্ভব এদিকের ঝামেলা মিটমাট করে ঢাকায় যেতে হবে।

◼️

কিছুক্ষণ পূর্বেই জ্ঞান ফিরেছে রিশার। মস্তিষ্কে অতি-রিক্ত চা-পের ফলে সাময়িক সময়ের জন্য জ্ঞান হারিয়েছে। ডাক্তার জানিয়েছে এতে মৃ-ত্যু ঝুঁ-কিও ছিল। কান্নার কারণ শারমিন বেগমের চোখমুখ ফুলে বেহাল দশা হয়েছে। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছেন। পাশেই গম্ভীর মুখে বসে আছেন রাশেদ জামাল। কিছুটা দূরে আশফিক দাঁড়িয়ে আছে হতভম্বের মতো। কুুুহু দাঁড়িয়ে আছে রিশার পায়ের কাছে। চোখের পাপড়ি ভেজা। রাতিমের কথা সবারই জানা এখন। কিছুক্ষণ পূর্বে কুহুর থেকে সবটাই শুনেছে সবাই। এই মুহূর্তে আশফিকের মুখের দিকে তাকাতে পারছে না কুহু। তার কথাতেই এসেছে লোকটা। অথচ রিশার মনে ছিল অন্যকিছু।রাশেদ জামাল তার স্ত্রীর উপর ক্ষিপ্ত। মা হয়ে মেয়ের কোনো খোঁজ রাখেনি সে। মেয়ের চলাফেরা, মনের অবস্থা একটুও খেয়াল করেনি। অথচ মেয়েদের সবচেয়ে কাছের বন্ধুর মতো হয় তার মা। রিশা মেঝেতে দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে আছে। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা শেষে কেবিনে প্রবেশ করলো রওনক। চোখমুখ কাঠিন্য তার। গম্ভীর স্বরে বলল সে,

"রিশ এর বিয়ে আশফিকের সঙ্গেই হবে। একটা মানুষকে হাজারবার বোঝানোর পর যখন সে অনুভূতির মূল্য দেয় না, নিজের মতো করে বিয়ে করে নেয় তখন তার জন্য কষ্ট পাওয়াটা নির্বোধ নয় বরং গর্দভের পরিচয় দেয়। তুই রাতিম কে ভালোবাসতি আমাকে একবার বলতি!

পাশ থেকে আশফিক বলল,

" আমিও জিগ্যেস করেছি, কিছু বলেনি। ভালোবাসা তো জোড় করে হয় না। যে ছেলেটা বারবার ফিরিয়ে দিচ্ছে তবুও কেন তাকেই চাই? হোয়াই?

রিশার কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। কুহু করুণ চোখে তাকিয়ে রইল।মেয়েটা বড্ড চাপা স্বভাবের। নার্স এসে জানালো এভাবে যেন পেশেন্টকে বিরক্ত করা না হয়। রওনক একপলক কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল বাইরে আসতে। চলে গেল সে। বেশ অনেক্ক্ষণ পর মুখ খুলল রিশা। বাবা, মাকে বলল বেরিয়ে যেতে। আশফিকের সঙ্গে কথা বলবে। দু'জনেই উঠে চলে গেল। দৃষ্টি তুলে তাকাল রিশা। চোখদুটো জলে ভাসা! নাক টেনে বলল,

"ঠিকাছে ধরে নিলাম রাতিম একটা বেঈমান। আমাকে স্বপ্ন দেখিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এমন স্বার্থপরকে মনেও রাখতে চাই না। তবে আপনাকে আমি বিয়ে করবো। তার আগে একটা কথা স্পষ্ট বলুন আমায়, আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন আশফিক ভাই? চোখের দিকে তাকিয়ে বলুন! সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যা বলা যায় না।

এমন প্রশ্নে অপ্রস্তুত হলো আশফিক। বার কয়েক চোখের পাতা ঝাপটালো। রিশা নিনির্মেষ তাকিয়ে দেখলো ঘাবড়ে যাওয়া আশফিককে। প্রলম্বিত দম নিয়ে বলল আশফিক,

" এটুকু বলতে পারবো আমি তোকে চাই রিশ। পৃথিবীর সমস্ত সুখ আমি তোর পায়ের কাছে লুটিয়ে দিতে পারবো। তোর সব ইচ্ছে, চাওয়া আমি পূর্ণ করে দিব। আমার নিজের মতো করে সাজিয়ে নেব! সুখ খুঁজে নেব দু'জন।

তাচ্ছিল্য হাসলো রিশা। দৃষ্টি সরিয়ে বলল,

"আপনার চোখই বলে দিচ্ছে ভালোবাসেন না। ছোট্ট একটা প্রশ্নের এত বড়ো উত্তর হয় না৷ শুধু নিজের ভালো থাকার জন্য আমাকে চান আপনি! এটাও কি স্বার্থপরতাকে বোঝায় না? 

আশফিক কিছু বলতে পারলো না। আজও চোখ বুজলে জেনিথকে অনুভব করে সে। 


কুহুর হাত টেনে ধরে হসপিটালের বারান্দায় চলে আসলো রওনক। এতক্ষণ যাবৎ মেয়েটা তাকে এড়িয়ে যাচ্ছিল বেশ বুঝতে পারছিল। কারণটাও বেশ ভালো করে জানা। কুহুর সামনে একটা কাগজ বাড়িয়ে ধরে জোড়ালো স্বরে বলল,

" কি লিখেছ এটা? আমি আপনাকে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবো না রওনক ভাই।আমি চলে যাচ্ছি। হোয়াই ডিড ইউ রাইট দিস? আন্সার মি!

রওনকের পুরুষালি কন্ঠে গমগম করে উঠলো আশপাশ। রাগে কপালের রগ ফুলে উঠলো। শক্ত চোখেমুখে জবাব দিল কুহু,

"ভুল কি বললাম? রিশার এই অবস্থার জন্য নয়তো আপনাকে ছেড়ে আমি সত্যিই চলে যেতাম। এত সব আয়োজন করার পর একটা মেয়ের যখন বিয়ে ভেঙ্গে যায় তখন কতটা মানসিক আঘাত হয় জানেন আপনি? কেন করেছেন এমন? কেন নাটক সাজিয়েছেন? 

নাকের পাটা ফুলে উঠলো রওনকের। কুহুর বাহু চেপে ধরে দেওয়ালের সাথে ঠেকিয়ে ধরলো। চোখ ফেটে এক্ষুনি যেন র-ক্ত বেরিয়ে আসবে। চোয়াল শক্ত করে বলল,

"কেন নাটক সাজিয়েছি এটুকু বুঝতে পারোনি? আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসতাম ষ্টুপিড মেয়ে! কখনো সেটা বোঝার ক্ষমতা হয়েছিল? আমাকে তো চাওনি তুমি! সেচ্ছায় বললে বিয়ে করতে চাইতে? কোন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এমন প্ল্যান করেছি সেটা একমাত্র আমি জানি কুহু! এভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে উচিত ছিল না আমার থেকে সবটা জানার? ছেড়ে যাওয়ার স্পর্ধা হয় কি করে? তুমি অপমানিত হয়েছ এটুকু বুঝলে কিন্তু আমার ভালোবাসাটা বুঝলে না! পৃথিবীর যে প্রান্তেই যেতে ঠিক খুঁজে নিতাম আমি! নয়তো নিজেকে শেষ করে দিতাম। এটাই তো চেয়েছিলে তাই না?

কুহু কিছু বলতে পারলো না। স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। চোখদুটো ঝাপসা হয়ে গেল। শরীর টলছে মনে হচ্ছে। একে একে সবকিছু খুলে বলল রওনক। কুহুকে সেই প্রথম দিনই ভালো লাগার কথা। তার জন্য নীরবে অনুভূতি বয়ে বেড়ানো। আচমকা ঘাড় ফেলে দিয়ে ঢলে পড়লো কুহু। ভয়ে কলিজা ধ্বক করে উঠলো রওনকের। চেপে রাখা বাহু আলগা করে দিল। তৎক্ষনাৎ বুকে জড়িয়ে নিল।কোনো হেলদোল নেই কুহুর৷ মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিল রওনকের। গালে হাত রেখে পাগলের মতো ডেকে গেল বারবার! অত্যল্পকালে কোলে তুলে নিল। ছুটলো ইমারজেন্সি কক্ষে। অজানা ভয় আর উত্তেজনায় শ্বাস-রোধ হয়ে গেল রওনকের। কুহুকে কি কষ্ট দিয়ে ফেলল সে? মানসিক চাপ সইতে পারেনি মেয়েটা? বোকা মেয়েটা কি কখনোই বুঝবে না তাকে? কুহুকে বেডে নামিয়ে দেওয়ার পর ডাক্তার জানালো দেখছে। বাইরে বেরুতেই দেখলো রাতিম এদিক-সেদিক পাগলের মতো কাউকে খুঁজছে। মুহূর্তে রাগ চরম আকার ধারণ করলো রওনকের। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে রাতিমের কলার চেপে ধরলো। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নাক বরাবর ঘুষি বসিয়ে দিল। মুহূর্তেই রাতিমের নাক দিয়ে গলগল করে র-ক্ত বেরিয়ে গেল। বাম হাতে নাক চেপে ধরে রওনকের দিকে তাকিয়ে বলল সে,

"আইরিশ কোথায় রওনক?

রাগ দমাতে না পেরে রাতিমের চোয়াল বরাবর আরেকটা ঘুষি বসিয়ে দিয়ে বলল রওনক, 

" কেন এসেছিস এখানে? আমার বোন বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে দেখতে?

কাতর চোখে তাকিয়ে বলল রাতিম,

"আমাকে ভুল বুঝিসনা রওনক! আইরিশের কাছে নিয়ে চল। আমি সব বলছি। 

" রিশ তোকে দেখলে কষ্ট পাবে রাতিম। এটা হসপিটাল। আমি চাচ্ছি না কোনো ঝামেলা করতে। চলে যা তুই!

হাঁপাতে হাঁপাতে বলল রাতিম,

"আমি,,,আমি আইরিশের কাছে চলে এসেছি একেবারের জন্য! 

রাগত রওনক হঠাৎই দমে গেল যেন! কপালে ভাজ পরলো তার। দূর থেকে শারমিন বেগম ডাকলেন রওনককে। পেছন ফিরে তাকাতেই সেদিকে এগিয়ে গেল রাতিম। শারমিন বেগমকে এড়িয়ে সোজা কেবিনে ঢুকে গেল। রিশা বসে আছে নিশ্চুপ। ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো রাতিম। একেবারে আষ্টেপৃষ্টে শক্ত করে! যেন ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে রিশা। আশেপাশে সবাই অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। রিশা নির্বাক! কি হচ্ছে? সে কি কোনো কল্প জগতে? স্পষ্ট রাতিমের হৃৎস্পন্দন শুনতে পাচ্ছে। মৃদু কাঁপছে ছেলেটার শরীর! ধীরে ধীরে জড়িয়ে নিল রিশা। চোখ বুজলো। নিঃশব্দে দুফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে পড়লো। নিমেষে তার অভিমান, কষ্ট, ব্যাথা সব বিলীন হয়ে গেল! কান্নারত স্বরে সবকিছু খুলে বলল রাতিম। পরিস্থিতির কারণে সে দূরে চলে গিয়েছিল। অন্তরে এক অন্যরকম প্রশান্তি বয়ে গেল রিশার। মানুষটার এই চমৎকার ব্যাক্তিত্ব তাকে বারবার মুগ্ধ করে। এসব আগে বললে কি রিশা বুঝতো না? কেন এত কষ্ট দিল?রূপা মেয়েটা নিজের জীবন ত্যাগ করে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা দিয়ে গেল রিশাকে। অজান্তেই মেয়েটা ঋণী করে দিয়ে গেল তাকে! সবাই একে একে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। কাঁপা স্বরে বলল রিশা,

" আমাকে ছেড়ে আর যাবেন না তো রাতিম ভাই? তাহলে রূপার মতোই আমার পরিনতি হবে! না পাওয়ার যন্ত্রণা যে খুব বেশি হয়!

ছেড়ে দিয়ে রিশার দিকে তাকালো রাতিম। পরক্ষণে ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরলো স্বীয় অধরোষ্ঠ দিয়ে। চোখ বুজে ফেলল রিশা। শরীর মৃদু কাঁপুনি দিল। এই অনুভূতি তার কাছে নব্য! অন্যরকম এক সুখকর,অনেক অপেক্ষার।অনেক সাধনার! 

◼️

কুহু মাথা নিচু করে বেডে বসে আছে। লজ্জায় গালে লাল আভা ছড়িয়েছে। পাশেই রওনক বসে আছে চোখেমুখে আনন্দ আর খুশি নিয়ে। মুহূর্তটা স্বপ্নের মতো লাগছে! কিয়ৎক্ষণ তাকিয়ে থেকে কুহুর পেটের কাছাকাছি হাত থেকে কম্পিত কণ্ঠে বলল রওনক,

"কুহু? আমাদের ভালোবাসার অস্তিত্ব ধারণ করছো তুমি! এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মনে হচ্ছে নিজেকে। তুমি যদি দূরে চলে যেতে এই খুশির দিনটা দেখা হতো আমার?

অশ্রুসিক্ত চোখে তাকালো কুহু। শুকনো ঢোক গিলে নিয়ে বলল, 

" আপনার ভালোবাসা আমি বুঝতে পেরেছিলাম, রওনক ভাই। কিন্তু আপনি এটা নিজের মধ্যে চেপে রেখে অন্যায় করেছেন! সেজন্য আমার কষ্ট হয়েছিল। রাগ হয়েছিল। আপ...

কুহুর ঠোঁটের মাঝে হাত রেখে বলল রওনক,

"উহুম। ভাই নয়। বলো রওনক। নয়তো কদিন পর আমাদের বাচ্চাকাচ্চা হলে দেখা যাবে আমাকে ভুলে মামা ডেকে বসবে!

কুহু ফিক করে হেসে ফেলল। মুহূর্তে জড়িয়ে নিল সামনে থাকা দীর্ঘকায় পুরুষকে। কানের পাশে ফিসফিস করে বলল,

" আপনার দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার ছিল এই সন্তান। ভালোবাসি রওনক স্যার। আমি প্রকাশ করে দিতে জানি। নীরবে বয়ে বেড়াই না। আমৃত্যু বলবো ভালোবেসে যাব আমার অনাগত সন্তানের বাবাকে। 

রওনকের চোখ জলে ভেসে উঠলো। কুহুকে আঁকড়ে ধরলো বুকের মাঝে। অনুভব করলো কুহু কাঁদছে। সুখের কান্না!
.
.
.
সমাপ্ত...............................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন