এই ঝুম বৃষ্টি'র রাতে,তোমায় নিয়ে সহস্র মাইল পাড়ি দিব হেঁটে!দুজনার হাতে হাত আবদ্ধ!ভেজা পিচঢালা রাস্তায় তোমার নগ্ন পা'য়ে'র নুপুরের শব্দ,আমায় ভোলাবে জগৎ!ল্যাম্পপোষ্টে'র আলোয় মাখা উষ্ণ চা'য়ে তোমার সঙ্গে হবে ভালবাসা বাটোয়ারা!নির্জন রাত্র প্রহর ঘনিয়ে এলে তোমার মায়ায় বুঁদ হয়ে ছুঁবো অধর!দূরত্ব ঘুচিয়ে তুমি ছুঁয়ে থাকবে আমায়।আকাশ তীব্র গর্জন তুললে,আমার এই নিছক কল্পনার বিভ্রম কাটবে বারংবার।তোমায় গানে,কন্ঠস্বরে আমি ফের ডুববো সুকন্ঠী!সে গানে'র মাঝে'ই খুঁজে নিব না বলা কথা,,,এই মুহূর্তে শুনছেন রেডিও ৯৩.৪ এফ এম।আমি আছি আর.জে জুবরান রাজ আপনাদের প্রিয় সাপ্তাহিক লাইভ শো ‘গানে হোক মনে'র কথা’ নিয়ে।জটপট এস এম এস করে জানিয়ে দিন আপনার প্রিয় গানে'র নাম।আর কাকে উৎসর্গ করছেন!গানে'র মাধ্যমে আমি তাঁর কাছে পৌছে দিব আপনার মনে'র কথা।
কথাটুকু শেষ করে'ই ঘড়ি দেখলো জুবরান।রাত দশটা বাজে।এই শো শেষ করে যথাসময়ে বাস ধরতে পারবে কিনা কে জানে।নয়তো ট্যুর'টাই মিস হয়ে যাবে।বাইরের বিরতিহীন বৃষ্টি চিন্তা বাড়িয়ে দিচ্ছে তাঁর।শ্রাবণ মাস চলছে।বর্ষার ঢল অহরহ লেগে'ই থাকে।অতকিছু ভাবলে চলবে না।আপাতত নিজের স্বপ্ন,ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেওয়া'ই যৌক্তিক মনে হচ্ছে।হাজার খানেক ম্যাসেজে গানে'র রিকোয়েস্ট চলে এসেছে ইতিমধ্যে!প্রায় অনেকে'ই বলছে জুবরানে'র প্রিয়তমা সুকন্ঠী'র গান শুনতে চায়।এমন'টাই হবে জানে জুবরান।এটা'ই হয়ে আসে সবসময়।ওমন কন্ঠের মায়ায় যে কেউ পরতে বাধ্য।ওষ্ঠ কোণে হাঁসি খেলে গেল তাঁর।পরক্ষণে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস।এই আজনবি অঙ্গনা কে,সেটা এখন পর্যন্ত অজানা জুবরানে'র।ইহজনমে দেখা পাবে কিনা সে'ই নিশ্চয়তাটুকুও নেই!অথচ অপরিচিতা'কে নিয়ে কতরকম ভাবনা'র পসরা সাজিয়ে যায় সে।তাঁর এই শো মেয়েটা আদৌ দেখে কিনা সেটুকুও অজানা!
অতিরিক্ত ম্যাসেজে'র কারণে ভাবনা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না জুবরানে'র!আপাতত ভাবনা রেখে নিজের কাজে মনোনিবেশ করল।
••••••••••
ঘড়ি'তে রাত বারোটা।খানিকক্ষণ বাদে'ই বাস ঢাকা ছাড়বে।গন্তব্য সুদূর খাগড়াছড়ি।এর আগে কখনো নিজের শহরে'র গন্ডি ছেড়ে এতটাদূর পাড়ি জমানো হয়নি অগ্নিলার।হুট করে'ই এই জায়গায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত রুহি'র।মেয়ে'টা বড্ড ভ্রমণ পিপাসু।কদিন আগে'ই সাজেক থেকে তাদের একটা গ্রুপ ঘুরে এসেছে।তার বর্নণা দিয়েছিল অগ্নিলা'কে।সেখানে যাওয়ার এক আকাশসম ইচ্ছে থাকলেও,সেটা অসম্ভব'ই ছিল অগ্নিলার পক্ষে।তবে হুট করে এমন একটা বাজে পরিস্থিতি তৈরি হয়ে,সাজেক যাওয়া হবে সেটুকু কল্পনাতীত ছিল।ভাবনার মাঝে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।আচমকা জানালা গলিয়ে দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টির ছাট এসে সর্বমুখ ভিজিয়ে দিল অগ্নিলা'র।তড়িঘড়ি করে জানালা'র কাচ টেনে দিল সে।আসার সময় ছাতা না নিয়ে আসার দরুন ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে একদম।গাঁ অনেক'টা ঝেড়ে নিলেও জামা সম্পূর্ণ ভেজা'ই!এই মুহূর্তে জামা পাল্টানো'র মতো অবস্থা নেই।হাঁচি আসছে লাগাতার।পাশে'র সিট'টা খালি থাকায় বেশ স্বস্তি অনুভব হচ্ছে।দূরের জার্নি।আরাম আয়েশ করে যাওয়া যাবে।কোলের উপর রাখা ব্যাগ টা খুলল অগ্নিলা।মাউথ অর্গানে'র দিকে দৃষ্টি পরতে'ই তপ্ত শ্বাস বেরিয়ে এলো।এই মুহূর্তে এটা বাজাবার তীব্র ইচ্ছে থাকলেও সেটা সম্ভব নয়।পরক্ষণে পানির বোতল নিয়ে একটুখানি গলা ভিজিয়ে নিল।কেমন শীত শীত অনুভূত হচ্ছে।ভেজা চুল গুলো ছড়িয়ে দিয়ে সিটে গাঁ এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজলো।
"এক্সকিউজমি মিস!এটা আমার সিট।
ভরাট পুরুষালি কন্ঠস্বর পেতে'ই দ্রুত চোখ মেলে তাকাল অগ্নিলা।সম্মুখে বলিষ্ঠ দেহি এক যুবক দাঁড়িয়ে।চোখেমুখে কিঞ্চিৎ বিরক্তি প্রকাশ পাচ্ছে ছেলেটা'র।তৎক্ষনাৎ উত্তর দিল সে,
" তো?আমি তো আপনার সিটে বসিনি।
জুবরান এবার কন্ঠে খানিক'টা রাগ নিয়েই বলল,
"ওহ আচ্ছা!তাহলে এই বেয়াদব ব্যাগটা আমার সিট দখল করে রেখেছে?
সিটে চোখ পরতে'ই হকচকিয়ে উঠলো অগ্নিলা!দ্রুত ব্যাগটা নিজের কাছে টেনে নিল।পরক্ষণে নিজেকে জড়োসড়ো করে নিল।পাশে কোনো মেয়ে হলে বোধহয় ভাল হতো।এই ভাবে একটা অচেনা ছেলের সাথে এতদূর যাবে ভাবতে'ই কেমন ভয় লাগা কাজ করছে।টিকিট কাটা সবকিছু'ই রুহি করে দিয়েছে।তবে সঙ্গ আর দিতে পারলো না।তাহলে এতটা দুশ্চিন্তা হতো না।আড় চোখে পাশে তাকাল অগ্নিলা।বেশ বিরক্তি নিয়ে'ই কাঁধ আর গাঁ থেকে বৃষ্টি'র পানি ঝেড়ে ফেলছে জুবরান।চুল খানিক'টা ঝেড়ে নিয়ে'ই কা'কে একটা ফোন করলো।বাইরে চোখ রাখতে গিয়ে ঘোলাটে কাঁচে দৃষ্টি হোটচ খেল অগ্নিলার।বাইরে যে তুমুল বেগে শ্রাবণে'র বর্ষণ হচ্ছে তা আর বুঝতে বাকি নেই।মাথা জানালা'র দিকে এলিয়ে চোখ বুজলো।কিছু'ই ভাল লাগছে না তার।বাড়ি'তে মামির ঠিক কি অবস্থা হচ্ছে কে জানে।হয়তো মামা'র তীব্র অত্যাচার সহ্য করছে।একমুহূর্তে'র জন্য নিজেকে স্বার্থপর মনে হলো অগ্নিলার।সে কি বাড়ি ছেড়ে অন্যায় করলো?মামি'কে কি করে নির্দয়ে'র মতো একা ফেলে চলে আসলো?আচমকা ভেতর ঠেলেঠুলে কান্না আসলো।দ্রুত চোখ মেলে জানালা খুলে দিল সে!বাস চলছে দ্রুত গতিতে।বৃষ্টির অজস্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফোঁটা প্রবেশ করছে জানালা গলিয়ে।মুহূর্তে ভিজিয়ে দিচ্ছে সব।কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই অগ্নিলার।ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে।বৃষ্টি'র ছাট গাঁয়ে লাগতেই চমকে পাশ ফিরে তাকাল জুবরান।মেয়ে'টা কি পাগল নাকি?এই বৃষ্টি'তে কেউ জানালা খুলে রাখে?আশ্চর্য!কিছু বলতে গিয়ে খেয়াল করলো মেয়ে'টার শরীর থেমে থেমে কাঁপছে।ফোঁপানো শব্দ স্পষ্ট কানে বাজছে!ভ্রু কুঞ্চিত হলো জুবরানে'র!কেন জানি হুট করে'ই অনেক'টা কৌতুহল জন্মালো মেয়ে'টার প্রতি।তবে সেটুকু সঙ্গোপনে'ই দমে দিল।ক্ষিপ্র বাতাসে মেয়ে'টার কোঁকড়া চুলগুলো ভাসছে।পরনে বেশ সাদামাটা থ্রিপিস।কেন জানি মনে হচ্ছে মেয়ে'টা পালাচ্ছে!প্রেমিকের কাছে যাচ্ছে বোধহয়।তবে এই কান্নার রহস্য কি?মাঝপথে প্রেমিক আসবেনা বলেছে?তাই নিজেকে অসহায় ভাবছে?বৃষ্টি'র তেজ বাড়তে'ই ভাবনার ঘোর কাটলো জুবরানে'র।মনে মনে নিজেকে খানিক বকাঝকা করলো সে।একটা অপরিচিত মেয়ের ব্যাপারে কতকিছু আপন মনে ভেবে নিচ্ছে!যার কোনো ভিত্তি নেই।সিট থেকে চট করে'ই উঠে দাঁড়াল সে।আর কিছুক্ষণ বসে থাকলে ভিজে ভয়ানক অসুখ বাঁধিয়ে ফেলবে।
◼️
জোবেদা বেগম নিশ্চুপ স্বামী'র সম্মুখে বসে আছেন।একের পর এক কথা শুনিয়ে যাচ্ছেন ভদ্রলোক।তারমতে ছেলের উচ্ছন্নে যাওয়ার পেছনে তার মা'য়ের অবদান'ই বেশি।এক হচ্ছে,বেকার রেডিও শো নিয়ে পরে থাকে।আরেক হচ্ছে,এখানে সেখানে বাউণ্ডুলে হয়ে ঘুরে বেড়ায়।জীবন তো এভাবে চলে না।বয়স তো কম হলো না।পড়াশোনা'র পাট চুকিয়েছে,এখন বাবার ব্যবসা'টা সামলাবে।তা নয়!এই ছেলে স্বাধীন ভাবে নিজের মতো চলাফেরা করছে।স্বামী'র মুখের উপর কড়া জবাব দেওয়ার সাধ্য নেই জোবেদা বেগমের।ছেলে'কে যাওয়ার জন্য পই পই করে নিষেধ করেছিলেন।কথা তো সে শোনেনা।যত জ্বালা হয়েছে তাঁর!আশফাক সাহেবের বলা শেষ হতে'ই মিনমিনে গলায় বললেন জোবেদা বেগম,
"আমার মনে হয় বিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত এই ছেলে'কে ঘরে রাখা যাবে না।আর কাজেও মন বসানো যাবে না।
আশ্চর্য হয়ে রাগ নিয়ে স্ত্রী'র পানে তাকালেন আশফাক আহমেদ।যেন ভয়ানক অন্যায় কিছু বলে ফেলেছে জোবেদা বেগম।তার রাগে'র অনলে রীতিমতো ঘি ঢেলে দেওয়ার মতো!চোয়াল শক্ত করে বললেন তিনি,
" এই হাড়েবজ্জাত ছেলে'র কাছে মেয়ে দিবে কে?
.
.
.
চলবে.....................................................................