মাই মিস্টিরিয়াস প্রিন্স - পর্ব ১৭ - মৌমিতা মৌ - ধারাবাহিক গল্প


"দেখি বড় করে হাঁ করুন!"

কৌশিক ভ্রু দ্বয় উঁচিয়ে পাশ ফিরে অনন্যার দিকে তাকালো। শঙ্কাজনক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
"কেনো? কেনো হাঁ করবো?"

অনন্যা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো, "লারাকে দিয়ে ব্যথার ট্যাবলেট আনিয়েছি। ট্যাবলেট খেলে ব্যথা সেরে যাবে, পরে আমি ব্যান্ডেজ করে দেবো নাহয়।"

কৌশিক ডাইনিং টেবিলের উপর মাথা নিচু করে বললো, "এসব ট্যাবলেট আমার শরীরে কাজ করবে না, বরং বিক্রিয়া করে নেশা দ্রব্য হয়ে যাবে। আমি ঠিক আছি। চিন্তা করতে হবে না তোমার।"

অনন্যার রাগ একটু বেড়ে গেলো, তাও সে ঠাণ্ডা মাথায় বললো, "আপনাকে কি কিছু জিজ্ঞেস করেছি? শুধু হাঁ করতে বলেছি। হাঁ করবেন। এত কথা কেন বলছেন?"

কৌশিক চোখ মুখ কুঁচকে বললো, "সবসময় ঝগড়াঝাঁটির মুডে থাকো কেনো তুমি? বললাম তো, লাগবে না।"

অনন্যা হঠাৎ নাক মুখ ফুলিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো, "খেতে বলেছি। খাবেন। সবসময় এতো ঘাড়ত্যাড়ামি পছন্দ হয় না।"

কৌশিক কিছু বলার আগেই অনন্যা তার মুখ চেপে ধরে ট্যাবলেট ঢুকিয়ে দিলো, সাথে পানি ঢেলে দিলো গ্লাসে, তারপর কৌশিকের মুখে। তারপর রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেলো অনন্যা। কৌশিক পানি গলাধঃকরণ করতে গিয়ে হেঁচকি উঠিয়ে ফেললো। একবারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো সে। মেয়েটা এতো পরিমাণ জেদী কেনো? যা বলবে করতেই হবে, এমন মনে হচ্ছে।

নিক অনন্যা আর কৌশিকের কাণ্ড দেখে দূর থেকে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসলো। কৌশিকের পাশে আরেক চেয়ার টেনে বসলো। মুচকি হেসে বললো,
"ব্রো, ভালোই একটা বাসায় এনেছো। কথার হেরফের হলেই মাথায় আগুন ধরে যায়। একদম তোমাকে টেক্কা দেওয়ার মতো মেয়ে।"

কৌশিক আরো এক গ্লাস পানি পান করে বিরক্তের সাথে বললো,
"নিক! মজা করবে না বলে দিলাম। এমনিতেই কী খেয়ে ফেললাম!"

কিছুক্ষণ থেমে আবারও বললো,
"যাই হোক, তুমি আজ বাসায় কেনো?"

"আজ ক্ষুধা কম তাই আরাম করছি। "
নিকোলাই হাত ছড়িয়ে বললো কথাটা। কৌশিক বোঝার ভান করে মাথা নাড়লো।

অনন্যা লারা, তামংকে ডেকে নিয়ে এসে সবাইকে নতুন ডাইনিং টেবিলে ঠিকঠাক বসিয়ে প্লেট, খাবার দাবার নিয়ে আসলো। লারাও উঠে সাহায্য করলো তাকে। তামং সাধারণত কম কথা বলে, তবে লারার সাথে নিজের রুমে বেশ বকবক করে বোঝা যায়।

সবাইকে খাবার দিয়ে অনন্যা বললো,
"শুনেছি, আপনাদের তিন বন্ধুর কোনো ফ্যামিলি নেই। তাই মাঝে মাঝে এভাবে ফ্যামিলি টাইম স্পেন্ড করবো আমরা। সেদিন আমি রান্না করবো, সেটা মাসে একদিন হতে পারে অথবা দুই-তিন দিন। এখন খাওয়া শুরু করুন।"

লারা আগ বাড়িয়ে বললো,
"তুমিও বসো। একসাথে খাও।"

"হ্যাঁ খাবো! আগে দেখে নেই আমার হাতের রান্না কেমন লাগলো আপনাদের", অনন্যা হাসিমুখে উত্তর দিলো।

চারজনে খাবারের দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির সাথে মুখে দিলো। কিছুক্ষণ পরে লারা, তামং ছাড়া বাকি দু'জন চুপচাপ বসে রইল। অনন্যার চোখ সরু হয়ে এল। ওদের খাবার চলছে না কেনো?

কৌশিক কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল, তারপর একবার ফুস করে ধোঁয়া ছাড়লো। তারপর এক গ্লাস পানি পান করলো। অন্যদিকে, নিকের অবস্থা খারাপ, সে গ্লাসের পর গ্লাস পানি খাচ্ছে। একসময় নিক অনন্যার দিকে তাকিয়ে হাসার ভান করলো। অনন্যা তাকে প্রশ্ন করলো,
"কেমন লাগছে?"

নিক একটুখানি হাসি দিয়ে বললো,
"ভালো, খুব ভালো।"

এদিকে, কৌশিক আর খেতে পারছে না, নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। অনন্যা তাকে দেখে বললো,
"খাচ্ছেন না কেনো?"

কৌশিক অসহায়ভাবে তার দিকে তাকালো , চোখ পিটপিট করে বললো,
"এতো ঝাল দেওয়ার পরিবর্তে বি'ষ দিয়ে দিতে তাহলে ভালো হতো!"

লারা এক মুহূর্ত দেরি না করে বললো,
"ঝাল খাবার তো আমগোর ঠিক হ্যায়। কিন্ত সাবেরা তো এত ঝাল খায় না। উনারা সব পাতলা পাতলা খায়া পছন্দ করে।"

অনন্যা মাথা চুলকে অপ্রসন্ন ভঙ্গিতে বললো,
"এতে আমার কী দোষ? বাঙালি রান্না ঝাল না হলে ভালো হয় না।"

কৌশিক জোরে নিঃশ্বাস ফেলে চোখ ঘুরিয়ে বললো,
"অত্যাধিক ঝাল। আমি নিতে পারছি না।"

অনন্যা নাক ফুলিয়ে বললো,
"আপনি তো আমার কোনোকিছুই নিতে পারেন না। এটা তো সামান্য খাবার।"

কৌশিক বিরক্ত হলো, কঠোর গলায় উচ্চারণ করলো,
"বেশি বলো না। যা সত্যি তাই বলেছি। নিকের অবস্থা দেখো, ও তো খেতে পারছে না।"

অনন্যা নিকের দিকে তাকালো। বেচারা লালচে মুখ নিয়ে, একবারে কষ্ট সহ্য করেই খাচ্ছে। আর অন্য হাত দিয়ে টিস্যু টানছে, নাক মুছছে।

নিক অনন্যার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
"না, ঝাল হয়েছে। তাও ভালো হয়েছে। তাই না খেয়ে থাকতে পারছি না।"

কৌশিক ইংরেজিতে কয়েকটা গালি দিলো তাকে, মেয়ে মানুষ দেখলে ছেলেটা সব ভুলে যায়। অনন্যা বুক ফুলিয়ে আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে বললো,
"দেখলেন এটাকেই বলে মেয়েদের প্রতি সম্মান করা। উনিই একদম রিয়াল ম্যান। আপনার মধ্যে সেটা নেই। আপনার কাছে তো ভাতের ফেন ও ভালো লাগবে পাতলা পাতলা।"

কৌশিক ক্লান্ত ভঙ্গিতে হাত ঝাড়ি দিয়ে বললো,
"ঠিক আছে, ভাতের ফেনই নিয়ে আসো। কিন্তু এসব আমি খেতে পারছি না।"

অনন্যা কটমটিয়ে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর কৌশিক প্লেট ঠেলে দিয়ে উঠে গেলো। অনন্যার খুব খারাপ লাগলো বিষয়টা। উনি আগে বলে দিলেই তো হতো, অনন্যা উনার জন্য অল্প ঝাল দিতো। কতক্ষণ তো চোখের সামনেই বসে ছিল। সব ওকে জ্বালানোর ফন্দি।

সবাই খাওয়া শেষে উঠে গেলে লারা সব পরিষ্কার করতে লাগলো। লারা কৌশিকের প্লেট নিতে নিলে অনন্যা বারণ করলো। তার প্লেটেই খেলো অনন্যা। এতো গুলো খাবার ফেলে দেওয়া একদম উচিত কাজ হবে না। 

••••••••

কৌশিকের মাথাটা ভনভন করে ঘুরছে। সারাক্ষণের গম্ভীর ভাবটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। চারপাশটা কেমন গোলমেলে লাগছে, মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে সবকিছুই তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। নিজের রুমে বিছানায় বালিশে ঠেস দিয়ে গভীর চিন্তায় ডুবে আছে সে। হঠাৎ নিজের হাতের দিকে তাকালো। আস্তে ধীরে আশেপাশের কিছু পরিমাণ বায়ুকে কাবু করলো সে। কিন্তু মুহুর্ত পরে আবারো কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলছে, মনোযোগ দিতে পারছে না। স্পেলগুলো ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারছে না, নিজের উপর বিরক্তি এসে জমেছে।

মনে হচ্ছে এই অস্বস্তি অনন্যার দেওয়া ওষুধের জন্যই। তবু ভেতরে এক তীব্র কষ্ট তাকে গ্রাস করে রেখেছে। সে তো আর সম্পূর্ণরূপে মানুষ না, যে একটি ট্যাবলেটেই সব ঠিক হয়ে যাবে। এই ব্যথা তার শরীরের প্রতিটি কোণে গেঁথে আছে, প্রতিটি শিরায় শিরায়, প্রতিটি লোমকূপে খুব আবেশে বাস করে যাচ্ছে, মাত্রা বাড়াচ্ছে দিনের পর দিন। তবে কৌশিক চায়ও না ব্যথা সাড়ুক। এই ব্যথাই তার শরীরকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, তাকে মনে করিয়ে দেয় সীমা।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে কৌশিক রুমের ছাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। ঘুম বলে তার জীবনে‌ কিছু নেই, চুপ করে কতক্ষণ এভাবেই বসে থাকতে থাকতে হয়তো মাথা চক্কর দেওয়াটা ঠিক হয়ে যেতে পারে। কিয়ৎকাল পর, হঠাৎ দরজায় নক করার শব্দ এলো। কৌশিক বসে থেকেই হাতের ইশারায় দরজা খোলার চেষ্টা করলো কিন্তু কাজ হচ্ছে না। অগত্যা বিছানা থেকে নেমে হেলেদুলে হেঁটে দরজা খুলতে হলো। 

অনন্যা এসেছে। ট্রে হাতে কৌশিকের রুমে ঢুকলো সে। ট্রেতে এক গ্লাস দুধ আর পাউরুটি। কৌশিক দুধের গ্লাস দেখে নাক কুঁচকে ফেললো। এটা তার একেবারেই অপছন্দের। দরজা খুলে আবার বিছানায় বসলো কৌশিক। অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে ট্রের দিকে তাকিয়ে রইলো। অনন্যা কৌশিকের রুমে প্রথমবার আসলো। রুমটা বেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। একপাশে একটা কালো ডিভান রাখা আছে, তার পাশে বুকশেলফ। টেবিল রয়েছে হাতের ডান দিকে। টেবিলে কম্পিউটার রাখা সাথে চেয়ার। রুমের মাঝেই বিছানা। বিছানার পাশেই একটা পেঁচানো সিঁড়ি সম্ভবত ছাদে যাওয়ার জন্য।

অনন্যা টেবিলে ট্রে রেখে পেঁচানো সিঁড়ির দিকে তাকালো। বিস্মিত হয়ে বললো,
"আহ... আপনার রুমে ছাদে যাওয়ার সিঁড়ি! আমি তো ভাবছিলাম, এই বাড়িতে ছাদে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই।"

কৌশিক নিশ্চুপ হয়ে রইলো। অনন্যা গুটি গুটি পায়ে হেঁটে সিঁড়ি বেয়ে কিছুটা উপরে উঠে দেখে আসলো। ছাদে যাওয়ার জন্য আবার একটা ঢাকনা জাতীয় কিছু একটা খুলতে হয়। বিষয়টা বুঝে আবার নিচে নেমে আসলো, হেঁটে দাঁড়ালো কৌশিকের সামনে। ট্রে থেকে দুধের গ্লাসটা সামনে ধরে বললো,
"নিন! দুধ খেলে শক্তি বাড়বে।"

কৌশিক উদাস চোখে তাকিয়ে রইলো। তারপর আচমকা হাত দিয়ে গ্লাস সরিয়ে দিলো। মুখ শক্ত করে বললো,
"আমি এসব খাই না। আর পরেরবার আমার খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে তোমার চিন্তা করার দরকার নেই।"

অনন্যার হাত ফসকে গ্লাস নিচে পড়ে গেলো। ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়লো মেঝেতে। কেঁপে উঠলো অনন্যা। মেঝের দিকে কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে রইলো। কেউ জোরে কথা বললে সে নিজেকে ধরে রাখতে পারে না, কান্না এসে পড়ে। আজ ও পারলো না, চোখে অশ্রু এসে ভর করলো, কিন্তু তারপরও নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করলো। 

কান্না ভেজা গলায় বললো,
"থাকবো না। আমি বেশিদিন থাকবো না এখানে। কিছু টাকা জমিয়ে চলে যাবো। আপনার এই দয়া বা সহানুভূতি আমার দরকার নেই। তাছাড়া, তখন আপনি নিজেই বলেছিলেন, আমাদের সম্পর্ক মুখের কথায় শেষ হয়ে গেছে। বারবার আপনার বোঝা হয়ে থাকতে চাই না আমি। আর চিন্তা করবো না আপনাকে নিয়ে। সময় হলে ঠিক চলে যাবো। কিছুদিন অপেক্ষা করুন।"

এটুকু বলে অনন্যা হাঁটু গেড়ে ভাঙা গ্লাসের টুকরো তুলতে শুরু করলো। চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলো না, চুপচাপ গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো।

কৌশিক কিছুক্ষণ স্থবির হয়ে বসে রইলো। তার ভেতরে এক অদ্ভুত টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। কিছু বলবে কিনা বুঝতে পারছে না। মাঝে মাঝে কী হয়ে যায়, কী করে বসে নিজেই বুঝতে পারে না। এমনিতেই মাথাটা কেমন যেন করছে, তার মধ্যে এসব! অবশেষে কৌশিক ধীরে ধীরে বললো,
"থামো। তোমার হাত কেটে যাবে। আমি..."

কথাটা শেষ করার আগেই অনন্যা মাথা উঁচু করে তাকালো। চোখে জমে থাকা অশ্রু গাল বেয়ে নেমে আসছে। সে ধীরে ধীরে বললো,
"এখন আর কিছু বলবেন না। আমার ভুল ছিল আপনার জন্য কিছু করতে যাওয়া।"

কৌশিক বিছানা থেকে নেমে শক্ত করে অনন্যার বাহু চেপে ধরে তাকে দাঁড় করালো। অগোছালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
"না, আমার ভুল হয়েছে। আমার কারণে ভেঙে গিয়েছে তাই এসব করতে হবে না তোমাকে।"

অনন্যা হাতের বাহু ছাড়িয়ে বললো,
"ডোন্ট টাচ মি! আপনার কোনো অধিকার নেই আমাকে ছোঁয়ার!"

কৌশিক চরমভাবে ক্ষেপে গেলো, আকস্মিকভাবে বাক্য দুটো তার ভেতরটাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়ে গেলো। আচমকা তার চক্ষুযুগল জ্বলে উঠলো, আকাশি মণি গাঢ় নীল হয়ে জ্বলজ্বল করতে লাগলো। কৌশিক হুট করে অনন্যার হাতের কব্জি ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো। এক হাত দিয়েই শরীরের সাথে চেপে ধরলো মেয়েটাকে। কৌশিকের আকস্মিক কর্মকাণ্ডে অনন্যা চমকে উঠলো। চোখের পানি অজান্তেই শুকিয়ে গেলো।

কৌশিক মুখে রহস্যময় হাসি টেনে মাথা ঝুঁকিয়ে অনন্যার কানে ফিসফিসিয়ে বললো,
"ডোন্ট টাচ মিই? শোন মেয়ে, তুই আমার টাচ ছাড়া এই জীবনে আর কারো টাচ পাবি না!"

কৌশিক আরো জোরে হুংকার দিয়ে বললো,
"আই উইল টাচ এভ্রি পার্ট অফ ইউর বডি! লেট'স সি হু স্টপস মি!"

অনন্যা কথাগুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। অতঃপর নিজেকে ছাড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করলো, কিন্তু কৌশিকের শক্তি যেন অমানবিকভাবে বেড়ে গেছে। তার আঙুলের বাঁধন হয়ে গেছে পাথরের মতো শক্ত। অনন্যার দম বন্ধ হয়ে আসছে। কাঁপা কাঁপা গলায় সে বললো,
"প্লিজ, স্যার! ছাড়ুন আমাকে। আমি আপনার সাথে নিজেকে আর জড়াতে চাই না। অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। আপনি মনে হচ্ছে নিজের মধ্যে নেই!"

কৌশিক হঠাৎ কর্কশ হাসিতে ফেটে পড়লো। সেই হাসি এতোটাই হিংস্র যে ঘরের দেয়ালগুলো কেঁপে কেঁপে উঠছে। তার চোখে অদ্ভুত নীল আগুন জ্বলছে। হাসি থামিয়ে আবারো ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে, নেশাময় কণ্ঠে কৌশিক বললো,
"এখন বলে আর কী হবে? আমি প্রচণ্ড রেগে গেছি। রেগে গেলে আমি কারো কথা শুনি না। আর কী যেন বলেছিলে? আমাদের সম্পর্ক শেষ?

যে সম্পর্ক আমি শুরু করিনি, সেটাকে শেষ করার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু এখন যা শুরু করবো, তার শেষ তোকে দেখিয়েই ছাড়বো।"

অনন্যার শরীর কাঁপতে শুরু করলো, ভয়ে ঠোঁট থরথর করে কাঁপছে। তার স্থান এখনো কৌশিকের বুকের নিচের অংশে। যেখানে সুখ পাওয়ার কথা ছিল, সেখানে মাথা রেখে দমবন্ধ অনুভূত হচ্ছে অনন্যার। চোখ উপচে পানি বেরিয়ে আসছে। মনে হচ্ছে আজকে তার জীবনের শেষ দিন। লোকটা কী করতে চাইছে তার সাথে? স্যারের চেহারায় কত মলিনতা, সাবলীল ভাব ছিল। আর ভেতরে ভেতরে এই লোকটা শয়তানের আরেক রূপ। যদি সে আগে জানতো বিয়ে করতো কী এই দুমোখো লোকটাকে? অনন্যার ভেতরটা ফেটে পড়তে চাইছে, কিন্তু সেই ভয়ঙ্কর চাপা আতঙ্ক তাকে একদম নিস্তব্ধ করে দিয়েছে। কি করবে? কার কাছে যাবে? কে তাকে বাঁচাবে এই অসহায় মুহূর্তে?
.
.
.
চলবে...................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp