মাই মিস্টিরিয়াস প্রিন্স - পর্ব ১৩ - মৌমিতা মৌ - ধারাবাহিক গল্প


বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার ছায়া নেমে এসেছে। আকাশের আলতো লালচে আভা ম্লান হয়ে গাঢ় নীলের চাদরে ঢেকে যাচ্ছে। চারপাশের পাখিরা একে একে নিজেদের বাসায় ফিরছে, কিন্তু অনন্যা এখনো বাসায় ফিরতে পারেনি। মাঠের পাশের বেড়া দেওয়া নির্জন জায়গায় বসে আছে নিশ্চুপ হয়ে। মনে অজস্র চিন্তার ঢেউ।

সকালের ক্লাসে কৌশিক স্যারের উপস্থিতি যেন সবাইকে মুগ্ধ করে রেখেছিল। তার ব্যক্তিত্ব আর গাম্ভীর্য সব ছাত্রছাত্রীদের আকর্ষণ করছিল। ক্লাসের মাঝেই কেউ একজন স্যারের আসল নাম জানতে চাইলো। স্যার উত্তরে অদ্ভুত স্বরে একটি ইংরেজি নাম উচ্চারণ করলেন। ক্লাসে এক মুহূর্তের নিস্তব্ধতা নেমে এলো। সবাই যেন স্যারের এই উত্তর নিয়ে বিভ্রান্ত।

অনন্যা কৌশিক স্যারের দিকে তাকিয়ে তখনই বুঝতে পেরেছিল, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে তার পরিচয় লুকোচ্ছেন। তার আসল নাম হয়তো এমন একটি রহস্য, যা তিনি কারো সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চান না। এই চিন্তাটাই সারাদিন তাকে অস্থির করে রেখেছে। এছাড়া তিনি খুব ভালো বুঝাতে পারেন। 

অনন্যা ভেবেছিল, যেহেতু তিনি বিদেশি, হয়তো ক্লাসের শুরু থেকেই কেবল ইংরেজিতে কথা বলবেন। কিন্তু তা হয়নি , তিনি দুই ভাষা মিশিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন। বাংলা বলতে গিয়ে তার কথায় ইংরেজি টোন আসার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু না তিনি শুদ্ধ বাংলা বলতে পারেন। উনার আরেক বন্ধু নিকোলাই ভেস্পার, এর সম্পূর্ণ বিপরীত। নিকোলাই বাংলা বুঝতে পারলেও, বাংলা ভাষায় ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না।

ক্লাস শেষ হওয়ার পর অনন্যা টিউশনে বের হয়েছিল। ক্যাম্পাসের কাছেই ছাত্রীর বাড়ি হওয়ায় যাওয়া আসাতে কোনো সমস্যা হয় না। তবে কয়দিন পড়াতে যায়নি, শেষবার গিয়েছিল বিয়ের আগের দিন। বিয়ের ব্যাপারে ছাত্রীর অভিভাবককে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তাই আজ সেখানে পৌঁছে কিছু কথা শুনতে হয়েছিল। তবু নিজের ভুল স্বীকার করে এবং পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করার জন্য বলে এসেছে, এই সপ্তাহে প্রতিদিন পড়াবে। এভাবেই ঝামেলা মিটে গেছে।

টিউশন শেষে ক্যাম্পাসে ফিরে অনেকক্ষণ সময় কেটে গেছে। স্যারের গাড়িটি ঠিক আগের মতোই পার্ক করা। কোথাও যাওয়ার কোনো চিহ্ন নেই। স্যারের সাথে যোগাযোগ করারও কোনো উপায় নেই। ফোন নম্বর নেই আর বাসায় ফেরার বিষয়ে কোনো কথা হয়নি, অনন্যা লোকেশন ও জানে না। যেভাবে ঝড়ের গতিতে গাড়ি উড়ায় বেঁচে থেকে সুস্থ অবস্থায় গাড়ি থেকে নামতে পারে এটাই তো অনেক।

অনন্যা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বুজে সেদিনের কথা মনে করতে থাকে। তার বিয়ের দিন। সেদিন যদি বুড়ো ডাক্তারের সাথে বিয়ে হয়ে যেতো তখন কী হতো? লোকটির মুখের অভিব্যক্তি, তার চোখের নির্লজ্জ আত্মতুষ্টি, আর সেই হাসি, অনন্যার কাছে যেন এক বিষাক্ত ফাঁদের মতো লাগছিল। প্রথম দেখাতেই সে বুঝেছিল, এই মানুষটির ছায়ায় তার স্বপ্নের মর্মান্তিক অপমৃত্যু ঘটবে। বিয়ের পর লোকটি প্রথমেই তার শরীরের অধিকার দাবি করবে। সন্তানের প্রসঙ্গ তুলে বলবে, "বয়স তো বাড়ছে। এখনই যদি না হয়, তবে আর কখন?" 

সেই সন্তানের জন্য তার পড়াশোনার ইতি ঘটবে। একসময় হয়তো বলে উঠবে, "আমার অঢেল সম্পদ থাকতে তোমার পড়াশোনার প্রয়োজন কী?"

এভাবেই অনন্যার প্রজাপতির মতো উড়ন্ত জীবনে সুখের সমাপ্তি ঘটা করে ঘটবে, ডানা কেটে মাটিতে পড়ে থেকে কাঁতরাতে থাকবে সে। কেউ দেখতে আসবে না! অনন্যা কাটাবে এক তালাবন্দি জীবন, যেখানে সংসারের কাজ আর বাচ্চা সামলানো ছাড়া তার হাতে কিছু থাকবে না। ডাক্তার লোকটাও ব্যস্ততার নাম করে সংসার থেকে অব্যাহতি চেয়ে সবকিছু অনন্যার কাছে ছেড়ে দিবে। অনন্যা একে একে যেন সব কল্পনা করতে পারছিলো।
তার চোখের সামনে বিভৎস ভবিষ্যৎ ভেসে উঠছিল।

আচমকা একটা কর্কশ কণ্ঠস্বর শোনা গেলো,
"শিকদার!"

অনন্যা মুখ তুলে উঁচু লম্বা লোকটার দিকে দৃষ্টিপাত করলো। কয়েকবার পলক ফেললো অনন্যা, চুপসে যাওয়া হৃদযন্ত্রটা আচমকা সচল হয়ে গেলো, উষ্ণ রক্ত ঘোড়দৌড়ের মতো ছুটতে থাকলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও দাঁড়ালো অনন্যা। হাত উঁচিয়ে লম্বা লোকটার নাগাল পেলো না সে। তাই বেড়ার উপর দাঁড়াতে হলো। স্যারের দিকে ফিরে লাফ দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরলো অনন্যা। লোকটার শরীর ঠান্ডায় জমে আছে, অনন্যা ধীরে ধীরে শীতে কুঁকড়ে উঠলো, তারপরও ছাড়লো না। আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,
"ধন্যবাদ! ধন্যবাদ সেদিন আমাকে বিয়ে করার জন্য। ধন্যবাদ আমাকে বাঁচানোর জন্য।"

ইশতেহার কৌশিক নিশ্চুপ হয়ে রইলো, মেয়েটার শরীর তার শরীরে স্পর্শ করতেই বরফ গলে যেতে লাগলো, তার শরীরের শীতলতা কমে গরমের আভা ছড়িয়ে যেতে লাগলো।‌ ঠিক যেমন শীতের দিনে আকাশে সূর্য উঠলে হালকা তাপ অনুভূত হয়, তেমনি যেন এই শীতল মুহূর্তেও কোনো অদৃশ্য শক্তি তার ভিতর উষ্ণতা ছড়িয়ে দিয়েছে, তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে, গরম হতে সাহায্য করছে।
কিন্তু এটা কী করে হতে পারে? 

সেদিন হসপিটালেও যখন অনন্যার শক্তি কৌশিকের শরীরে প্রবাহিত হতে শুরু করেছিল অন্যরকম অনুভব করছিল কৌশিক। নিজেকে পবিত্র মনে হচ্ছিল,যেন কোনো অজানা শক্তি তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তাই পরিদর্শক ডাক্তারকে অবশ করে দেওয়ার পর সে বাইরে বের হয়ে অনেকক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। মাথায় কিছুই ঢুকছিলো না সেসময়।

বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর, কৌশিক হঠাৎই বাস্তবতায় ফিরে এল। হুঁশে ফিরতেই অনন্যার হাত গলা থেকে জোর করে সরিয়ে দিলো। দূরে সরে পিছমুখী ঘুরে আবার সেই কর্কশ গম্ভীর স্বরে বলল,
"সুন্দর ছেলে দেখলেই মেয়েরা লাফিয়ে উঠে। বিয়ে করার জন্য উতলা হয়ে পড়ে। আর.....আমার কাছে আসার অনুমতি দেওয়া হয়নি আপনাকে। তাছাড়া আমরা ভার্সিটিতে আছি। ভুলে যাবেন না।"

ভ্রু কুঞ্চিত করে ফেললো অনন্যা। চিন্তিত হয়ে প্রশ্ন করল,
"আচ্ছা! আপনি প্রথম কথা দ্বারা কী বোঝাতে চাইলেন? ওয়েট! আপনি সুন্দর বলে আমি বিয়ে করে খুশি হয়েছি আর ধন্যবাদ দিয়েছি এটাই বলতে চাচ্ছেন তো?"

কৌশিক কোনো উত্তর না দিয়ে মাথা নাড়ল আর সামনে হাঁটতে লাগল। 

অনন্যা চেঁচিয়ে উঠলো,
"আপনি যাই ভাবছেন, ভুল ভাবছেন। আমি ধন্যবাদ জানিয়েছি কারণ ওই বুড়ো ডাক্তারের সাথে বিয়ে করলে আমার জীবন নষ্ট হয়ে যেতো।"

কৌশিক হাঁটতে হাঁটতে গাড়ির দিকে যাচ্ছিলো। অনন্যা ছুটে এসে তার পাশে হাঁটতে লাগলো। রাগী স্বরে বললো,
"এতো দেরি হবে বলেননি কেনো?"

"অপেক্ষা করতে কে বলেছিল?"

"বাসায় কীভাবে যেতাম? আমি তো রাস্তা চিনি না। ফোন নম্বর ও দেননি।"

"সেভ করা আছে।"

অনন্যা হতচকিত হয়ে গেলো। ফোন ব্যাগ থেকে বের করে চেক করতে থাকলো। ভ্রু কুঁচকে বললো,
"নেই নেই! আপনি মিথ্যা বলেছেন।"

"আছে.... দেখুন ঠিকমতো।"

অনন্যা তিন/চারবার কললিস্ট খুঁজেও নাম্বার পেলো না। কৌশিক গাড়ির দরজা খুলে বসতে বললো। অনন্যা ফোন বাড়িয়ে দিয়ে বললো," বের করে দিন। আপনি ঠিকমতো দেখুন, আপনার নামে কোনো নাম্বার পেলাম না।"

কৌশিক ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে ফোনটা নিয়ে নিলো। ফোনের স্ক্রিনে আঙুল বুলিয়ে সে দ্রুত কিছু খুঁজে বের করে অনন্যার চোখের সামনে ফোনটা ধরে রাখলো। অনন্যা প্রথমে অবাক হয়ে ফোনের দিকে তাকাল। কয়েকবার পলক ফেলে নিশ্চিত হতে চেষ্টা করল, তারপর স্যারের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি ফুটিয়ে ফোনটা টেনে নিলো।

ফোনের স্ক্রিনে নাম্বারের উপরে লেখা সেভ করা নামটা দেখে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে রইল অনন্যা। সেখানে স্পষ্ট লেখা ছিল, "Sir"।

গাড়ির সিটে বসে, হালকা ঠোঁট কামড়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করল অনন্যা। কিন্তু তখনই মাথায় আরেকটা অদ্ভুত প্রশ্ন ভেসে উঠল, "যদি নিজের নাম্বার ‘Sir’ নামে সেভ করে রাখেন, তাহলে আমার নাম্বার কী নামে সেভ করেছেন?"

কৌশিক গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসতেই অনন্যা প্রশ্ন ছুঁড়ল ,
"এতো দেরি কেনো হলো?"

"টিচারদের মিটিং ছিল।"

অনন্যা পাশ ফিরে আগ্রহের সাথে বললো,
"আমাকে খুঁজে কীভাবে পেলেন? একটু আগেও তো আপনাকে দেখলাম না।"

কৌশিক গাড়ি ভার্সিটি থেকে বের করে রাস্তায় নামলো। স্বাভাবিক স্বরে বললো,
"অত্যাধিক প্রশ্ন করেন আপনি। বাসায় থাকার সুযোগ দেবো না কিন্তু।"

অনন্যা মন খারাপ করে গাড়ির সিটে সোজা হয়ে বসে ছিল। পেটটা কেমন মোচড় দিতে শুরু করেছে, কিন্তু সে কিছু বললো না, চুপচাপ বসে রইল। গাড়ি স্লো যাচ্ছিল, আর অনন্যা চোখ বুজে কী যেন ভাবছিল। অজান্তেই, চোখের পাতা ভারী হতে লাগলো এবং একসময় নিজেরই খেয়াল ছিল না যে সে ঘুমিয়ে পড়েছে।

ঘুমন্ত অবস্থায়ই অনন্যার মাথায় হঠাৎ একটা দৃশ্য ভেসে উঠলো,  

সবুজ বনের মধ্যে হাঁটছে কৌশিক স্যার এবং অপরিচিত এক মেয়ে। প্রকৃতি এতো সৌন্দর্যে ভরপুর ছিল যে মনে হচ্ছিল দুই হাত মেলে তাদের চারপাশে স্বাগত জানাচ্ছে। ফুলগুলো রঙিন পাপড়ি খুলে বাতাসে নাচছে আর তাদের সৌন্দর্য যেন আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। মেয়েটি যেন এক জীবন্ত সুন্দরের পূজারী, দুধে আলতা রঙের ত্বক, একে একে স্পর্শ করা সূর্যের রশ্মি যেন তার শরীরের মধ্যে নিবেদিত হচ্ছে। তার লম্বা কালো চুল, যেগুলি সবুজ ঘাসের উপর অল্প অল্প স্পর্শ করে যাচ্ছে আর প্রকৃতিকে সতেজ আর সুগন্ধে ভরপুর করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে।

মেয়েটির পরিধানে রাজকীয় পোশাক, যার প্রতি টুকরো টুকরো ফিতা ও সুতোর কাজ যেন তার সৌন্দর্যের দিকে আরো দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। আর কৌশিক স্যার, সাধারণ পোশাকে, তার পিছনে হাঁটছেন, স্যারের ঠোঁটের মিষ্টি হাসি দেখে মনে হলো পোশাকের অমিল হলেও সম্পর্কের গভীরতা চিহ্নিত করছে। মেয়েটির হাতে ফুলের ঝুড়ি, ফুলগুলো তার হাতে যেমন মেলে, তেমনি যেন জীবনের সব রঙিন মুহূর্ত তাদের মধ্যে বিস্তার লাভ করছে।

কৌশিক স্যার তাঁর শক্ত ও কোমল হাতে অসম্ভব সুন্দর মেয়েটির হাত টেনে ধরলো। মেয়েটি একটু লজ্জাময়ী হাসি হেসে ঝুড়িটা মাটিতে ফেলে দিলো আর সাথে সাথে অদৃশ্য এক শক্তি, ফুলগুলোকে মেঘের মতো ছিটকে তাদের উপর পড়তে সাহায্য করলো। চারপাশে অসংখ্য রঙিন ফুলের পাপড়ি স্নিগ্ধভাবে ঝরে পড়ছিল। তারা একে অপরকে গভীর দৃষ্টিতে দেখছিল, যেন সময় স্থির হয়ে গেছে, আর বাতাসও থেমে গেছে। এক মুহূর্তের জন্য যেন পৃথিবী তাদের চারপাশে হারিয়ে গেছে।

ধীরে ধীরে, কৌশিক স্যার মেয়েটির দিকে আরও এগিয়ে যেতে লাগলেন। মেয়েটির শ্বাস-প্রশ্বাসে উত্তেজনা ছিল , ভালো লাগা ছিল, দৃষ্টিতে ছিল অগাধ প্রেম। কৌশিক স্যার মেয়েটির ঘাড়ে এক হাত রেখে তাকে আরো কাছে টানলেন। তাদের মুখের মধ্যে মাত্র কয়েক ইঞ্চির ব্যবধান ছিল। কৌশিক স্যারের ঠোঁট মেয়েটির ঠোঁটের দিকে ধীরে ধীরে এগোতে লাগলো।

ঠিক সেই মুহূর্তে, অনন্যা হঠাৎ হাত বাড়িয়ে চিৎকার করে উঠলো, "নাআআআ!" তার চিৎকারে যেন দুজনের কাছে আসা থেমে গেলো, থেমে গেলো একে অপরের চাওয়া।

হঠাৎ কানে পৌঁছুলো গম্ভীর স্বর,
"অনন্যা? অনন্যা! শিকদার! ওয়াট হ্যাপেন?"

অনন্যা চোখ খুলে কৌশিক স্যারকে দেখতে পেলো, খুব কাছে আছেন উনি, নিঃশ্বাস ঢেউ হয়ে মুখে লাগছিল। কিন্তু ওই সুন্দরী মেয়েটার যতো কাছে ছিলেন ততটা নয়। অনন্যা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ ওর কী হলো কে জানে ,নির্বুদ্ধিতার মাঝে আটকে পড়ে অপ্রত্যাশিতভাবে স্যারের কাছে গিয়ে দুই গালে হাতে রেখে গভীরভাবে ঠোঁটে ঠোঁট স্পর্শ করলো অনন্যা। এক সেকেন্ড, দুই সেকেন্ড, তিন সেকেন্ড! এই স্পর্শ অনন্যার কাছে মধুর স্পর্শ মনে হলো।

ঠিক তিন সেকেন্ডের সময় ছিটকে গাড়ির দুই সাইডে ধাক্কা খেলো দুজনে। অনন্যা আহ উচ্চারণ করে মাথায় হাত চেপে ধরলো। কৌশিক ও কপালে হাত বুলিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। 

এক মিনিট পার হতেই ইশতেহার কৌশিক জোরেশোরে বললো,
"শিকদার! কী করলেন আপনি?"

অনন্যা থতমত খেয়ে গেল। স্যারের কণ্ঠস্বর খুব জোরে ছিল যে তার হৃদয় কেঁপে উঠলো। অনন্যা মাথা নত করে বসে রইল। একটু আগে কেনো যে সে অপ্রত্যাশিত কাণ্ডটা করতে গেলো নিজেই জানে না। এখন খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে। তাছাড়া তখনের দৃশ্যটা সত্যি মনে হচ্ছিল। এসব দেখার পর কোন স্ত্রী চুপ করে বসে থাকতে পারে? 

কৌশিক রাগান্বিত হয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো। অনন্যা মুখ তুলে একটা অচেনা রাস্তায় গাড়ি থামানো দেখতে পেলো। আশেপাশে ছোটোখাটো বিল্ডিং। পাশ দিয়ে এক সরু গলি বেরিয়ে গেছে। 

কিয়ৎক্ষণ পর ফিরে এসে কৌশিক অনন্যার সাইডের দরজা খুলে টেনে বের করলো তাকে। অনন্যা বাধ্য হয়ে বের হলো, মাথা নত করে দাঁড়িয়ে রইলো। কৌশিক বড় করে শ্বাস নিয়ে বললো,
"আপনার আর আমার সম্পর্ক এদিকেই শেষ। আমি খুব হতাশ। শর্ত দিয়েছিলাম কয়েকটা। একটাও মানতে পারেননি। বারবার, বারবার এমন করেছেন। তাই বাধ্য হলাম। লেটস ফিনিশ দিস!"

অনন্যা কিছু বলতে পারলো না, স্যার মুখের উপর এতো কঠিন বাক্য কীভাবে বলে দিলো? একটুও কী মায়া হলো না অনন্যার জন্য? 
.
.
.
চলবে..................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন