কাছে আসার মৌসুম - পর্ব ০২ - নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি - ধারাবাহিক গল্প


সন্ধ্যে নেমেছে। এই সবে মাগরিবের আজান শেষ হলো। মতিঝিল থেকে কাওরান বাজার,ব্যস্ত জায়গার সরব আরো বাড়ল তাতে। জ্যাম,হল্লাহল্লি, মানুষে ঠাসা গাদাগাদির মাঝে এই চায়ের দোকানটায় ভিড় একটু কম! 
কাছের মসজিদে মুসুল্লিরা নামাজ পড়ছেন। দোয়া-দরুদ পড়ার আওয়াজ পরিষ্কার শুনতে পাওয়া যায়।  
তুশি এসে বসল কেবল। সঙ্গে 
দুজন আজন্ম চ্যালা। বাবলু আর টিনটিন। দুটোর ছাঁয়া,রূপ-প্রতিরূপ আলাদা সব। বাবলু মোটাতাজা, টিনটিন খরের মতো শুকনো। একমাত্র মিল হলো,এরা দুজনেই তুশির সব কাজের সঙ্গী। 
দোকানে ঝোলানো ত্রিভুজ পাউরুটি দেখেই বাবলুর চোখ চকচক করে উঠল। জ্বিভ দিয়ে ঠোঁটটা চাটল একবার। আবদার করল সাথে সাথে,
“ ওস্তাদ,এট্টা রুডি খাই?” 
তুশির চোখ আশেপাশে। কখনো যাতায়াত করা মানুষের পকেটে,গায়ে। 
ওভাবেই বলল, 
“ খা।” 
বাবলু খুশি হলো। চটপট প্যাকেটের ভেতর থেকে একটা রুটি বের করে নিলো হাতে। আরেকটা তুলে জিজ্ঞেস করল,
“ খাবি?” 
টিনটিন ঘাড় নাড়ল দুপাশে। তার নজর গোল্ড লিফের প্যাকেটে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“ ওস্তাদ,আমি এট্টা বিড়ি খাই?” 
চোখ পাকিয়ে ফিরল তুশি। রেগেমেগে বলল,
“ ওয়ান চড় মারব। 
এই বয়সে এসমোক করবি,লজ্জা করে না? ইসটুপিট। অন্য কিছু খা।” 

ধমক খেয়ে চুপসে গেল টিনটিন। মুখ গোজ করে বলল,
“ তাইলে বিস্কুট আর চা খাই। চাচা,আদা চা দাও এট্টা। কাপ কিন্তু ভালো কইররা ধোবা।” 

দোকানির মেজাজ ভালো না। এতটুকু ছেলের ফরমায়েশে সেটা আরো বিগড়াল। চটে বললেন,
“ সবাইরে যেমনে দিই অমনেই দিমু। পছন্দ নাহইলে বাড়িত্তে কাপ লইয়ায়।” 

টিনটিন আর কথা বাড়াল না। কী বলবে? বৈয়াম থেকে বিস্কিট তুলে চুপচাপ খেতে বসল তাই।
তুশি ঘাড় ডলতে ডলতে চারপাশ দেখল কয়েকবার। ধরার মতন পাখি নেই! আজকে পুরো দিনটাই খারাপ। মাত্র পাঁচটা পকেট কেটেছে,যা ওর রেকর্ডে সবচেয়ে কম। এখন একটা বড়ো দাও মারতে না পারলে তো কাল দুপুর অবধি ঘুম হবে না। তুশির কিছু নিজস্ব নিয়ম আছে। সপ্তাহের ছ-দিন চুরি-টুরিতে কাটালেও,রবিবার ও বেলা করে ঘুমায়। ওইদিন ওর সাপ্তাহিক ছুটি। হিসেব মতো কালই রবিবার। 
অন্তত মনকে আনন্দ দিতে একটা বড়ো ঘুঘু না ধরলেই হচ্ছে না। 
কিন্তু এরকম কেউ নেই দেখে হতাশ হলো তুশি। টিনটিনের পাশে বসল ধপ করে। চ সূচক শব্দ করে বলল, 
“ ডে নট গুড বুঝলি! টুডেকাল কারো পকেটেই বেশি মানি থাকে না।” 
টিনটিন ফিরে চাইল।
“ টুডেকাল কী ওস্তাদ?” 
তুশি রেগে রেগে বলল,
“ এইজন্যে বলি এসটাডি কর। এইটুক ইংরেজিও পারিস না? গর্দভ! 
 টুডে অর্থ আজ। মানে আজকাল। আডারএসট্যান?” 

বাবলু খেতে খেতে মাথা নাড়ল। অর্থাৎ,বুঝেছে
। তুশির গলা শুনে কাজ ফেলে ত্রস্ত ফিরে চাইলেন দোকানি। 
হেড়ে গলায় বললেন,
“ ওই তুশি ওই,তুই ট্যাকা আনছোস?” 

তুশি জ্বিভ কাটল। চোখদুটো বড়ো হলো অমনি। এই রে,ব্যাটা আবার ধরে ফেলেছে! এর কি টাকা ছাড়া মাথায় কিছু নেই নাকি! 
তুশি ঘুরল না। বসে রইল গাট হয়ে। দোকানি চড়া কণ্ঠে বললেন,
“ এদিক ফের কইলাম। তুই কী শুরু করছোস! তিন মাস ধইরা ঘুরাস আমারে। তেইশ'শ টাকা পাই তর কাছে। চাইলেই কস পরে দিবি। আর এই যে তোর চ্যালাডি খাইতেছে এগুলার বিল দিব ক্যাডা? মাইয়া বইলা কিন্তু সব সময় পার পাবি না কইলাম।” 

তুশি হাসিহাসি মুখ করে ফিরল। বলল সুন্দর করে,
“ মানি আমি গিভ করব চাচা। হোয়াই এংরি ইউ? খাতায় রাইট(write) করে রাখো না।” 

ভদ্রলোক ক্ষেপে বললেন, 
“ থামা তর ইংলিশ। ট্যাকা বাইর কর আগে।” 

“ আরে, নাউ মানি হোয়ার পাব? পরে গিভ করব বললাম না? আপাতত কাজে এসেছি চাচা। নো ডিসটাপ মি পিলিজ।”

“ তোর আবার কাম! ওই তো, খুঁজতাছোস কার পকেট মারা যায়। এ্যাই, আমি কিন্তু আগেই কইয়া রাখলাম,আমার এইহানে কাস্টোমার আইলে কিন্তু এইসব করবি না।” 

তুশি বিরক্ত হলেও চুপ রইল। এরকম কত দোকানে যে ওর ধার দেনা আছে! 
 পাশের দোকানে টিভি চলছিল সেসময় । বিকেলের গরম খবর,
এমপি রুস্তমের ছেলে রেইপ কেসে গ্রেফতার! অনেকেই উৎস্যুক হয়ে দেখছেন। গ্রেফতার করা অফিসারকে নিয়ে প্রসংশায় পঞ্চমুখ তারা। 
 তুশি একবার তাকিয়েও,চোখ সরাল। ওর এখন টিভিও ভালো লাগছে না। আচ্ছা,মুসিবত তো! সাতটা বাজতে চলল। কাউকে পাবেনা না কি? সন্ধ্যেটা কি ওর এমন বাসিমুখেই কাটবে!  

রুস্তমের ছেলের নাম রুহান এহমাদ। এক নম্বরের লম্পট যাকে বলে! ফারিন মেয়েটাকে কদিন ধরে নানা ভাবে উত্যক্ত করছিল। সেদিন হোস্টেলের রাস্তা থেকে তুলে নেয়। রেখে যায় দুদিন আগে। ওই দুটো দিন ধরে মেয়েটা থানার দুয়ার ঘুরতে ঘুরতে কাহিল। শেষে খোঁজ পেয়েছে ইয়াসিরের। 

ছেলের গ্রেফতার হওয়ার খবর বাতাসের গতিতে রুস্তমের কানে পৌঁছে গেল। 
রুহানের দুহাত হাতকড়ায় আটকে। নাকের এক পাশ কাটা। বৃত্তাকার ছিদ্র হতে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। 
শার্টের কলার ইয়াসিরের মুঠোতে। ছেলেটাকে হিড়হিড় করে টানতে টানতে জিপে তুলছে সে। 
পুরো দৃশ্যটায় রুস্তমের শরীর টগবগ করে উঠল। ত্রস্ত ফোনটা দূরে ছুড়ে মারলেন। পাশে দাঁড়ানো নিয়াজ ভয় পেলো একটু! ফোনটা ওর। রুহানের সাথে ক্লাবেই ছিল সেসময়। এত ফূর্তি নিয়ে নাচছিল ছেলেটা! হুট করে ইয়াসির এসে সব পণ্ড করে দিয়েছে। 
রুস্তম চিল্লিয়ে বললেন,
“ আমার পোলার গায়ে হাত তুলছে ওই, ওই দুই পয়সার পুলিশ? 
মারছে ওরে?” 

নিয়াজ আনত ভাবে ঘাড় নাড়ল। উত্তর-হ্যাঁ।
ইয়াসিরকে দেখার পর প্রথম দফায় রুহানের ভাবান্তর হয়নি। গ্রেফতারের কথাতেও না। হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল। এক চোট অসভ্যতা হিসেবে গ্লাসে থাকা মদ ছুড়েছিল ইয়াসিরের মুখে। 
ব্যস! এক প্রকাণ্ড ঘুষি মারল ইয়াসির। রুহানের মাতাল শরীরটা তৎক্ষনাৎ গিয়ে ছিটকে পড়ল টেবিলে। 

রুস্তম উঠেই নিয়াজের কলার চেপে ধরলেন। ভড়কাল ছেলেটা। গোল চোখ তুলতেই রুস্তম দাঁত পিষে বললেন, 
“ ওই নাটকির পূত আমার পোলারে মারছে। আর তুই,তুই কই ছিলি তহন? ক কই ছিলি? তোরে কি আমি ঘাস খাইতে রাখছি?” 

নিয়াজের থুতনী নেমে এলো বুকে। ইয়াসির হঠাৎ রুহানের ওপর চড়াও হওয়ায় ও হকচকিয়ে গেছিল। 
 দলবল ডেকে যে বাঁধা দেবে, সেই সাহসে কূলায়নি। এমন ক্ষিপ্ত বাঘের মতো চোখমুখ লোকটার! এর আগে এই অফিসারকে ও দেখেনি কোথাও। 
কিন্তু এসব রুস্তমকে কীভাবে বলবে? ভয় পেয়ে দূরে দাঁড়িয়ে ছিল শুনলেই চাকরি শেষ। রুস্তম রাগ গিলে নিলেন। ছাড়লেন কলারটা। ঘনঘন শ্বাস ফেলে বললেন,
“ কমিশনাররে ফোন লাগা। দেখি কার এত ক্ষমতা আমার পোলারে জেলে আটকায়!” 

*******

ইয়াসিরদের জিপ তখনও ব্যস্ত রাস্তায় ছুটছে। থানায় পৌঁছায়নি ওরা। অথচ এর মধ্যেই পুরো মিডিয়া পাড়া নতুন খবরে গরম হয়ে গেল। ক্লাব থেকে রুহানকে নিয়ে জিপে তোলার সময়েই, কিছু ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়েছে নেটে। সে নিয়েই মাতামাতি! 

হঠাৎ ফোন বাজল ইয়াসিরের। স্ক্রিনে “কমিশনার’’ দেখে যা বোঝার বুঝে ফেলল সে। ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভেবে, তৎপর পাওয়ার বাটন টিপল। 
শরিফের চোখ বেরিয়ে এলো সহসা। ঢোক গিলল সে। আর কত সাহস দেখবে এই ছেলের? কমিশনারের কল ধরবে না বলে ফোনটাই বন্ধ করে দিলো? 

রুহান জিপের পেছনে বসে। তার দুপাশে পুলিশের লোকেরা। 
হ্যান্ডকাফে প্যাঁচানো হাতদুটো তুলে গাড়ির রডে বেধে রাখা। 
মদ খেয়ে টাল ছেলেটা। 
নাকটাও অবশ ব্যথায়। মাথা ঝুলতে ঝুলতে নেমে এসেছে হাঁটুতে। আচমকা মুখ খুলল রুহান। যেন ভীষণ ক্লান্ত। কোনোমতে চাইল,
“ পানি! একটু পানি!” 
ইয়াসির শুনতে পেলো। বলল,
“ পানি দাও ওকে।” 
পাশের একজন জিপ হাতালেন। বোতল খালি দেখে বললেন,
“ গাড়িতে পানি নেই,স্যার।” 
ইয়াসির চ সূচক শব্দ করল। 
শরিফকে বলল,
“ গাড়ি থামাও।” 
দ্রুত ব্রেক কষল সে। 
ইয়াসির বলল,
“ ওর জন্যে পানি নিয়ে এসো।” 

শরিফ ঘুরল পেছনে। গলা উঁচিয়ে বলল,
“ স্যার কী বললেন শোনোনি? যাও পানি নিয়ে এসো।” 
ইয়াসির ভ্রু বাঁকায়। 
“ আমি তোমাকে বলেছি।” 
“ না মানে স্যার,আমি? ওদের একজন যাক না।” 
ইয়াসির কেমন করে চাইল। গুরুতর হলো স্থূল স্বর,
“ কেন? তুমি গেলে কী সমস্যা?” 

আহত শ্বাস ফেলল শরিফ। 
অগত্যা সিটবেল্ট খুলে নামল গাড়ি থেকে। 
পানির দোকান একটু দূরে। লেন ঘুরতে হবে। ছোটো,অল্প কোলাহলের রাস্তাটা হেঁটে পার হলো সে। পরনে খাকি রঙের পোশাক দেখেই নড়েচড়ে বসল তুশি। এতক্ষণের নীরস চোখ মুহুর্তেই ঝলমল করে উঠল। 

পানির বড়ো বোতল চাইল শরিফ। সাথে নিজের জন্যে একটা ঠান্ডা কোক। তুশি ত্রস্ত উঠে দাঁড়াল।  
টিনটিন খেয়াল করল ওকে। এগোতে নিলেই টেনে ধরল হাতটা। 
সতর্ক গলায় বলল,
“ ওস্তাদ, পুলিশ কিন্তু।” 

তুশির উদ্বেগ এলো না। 
 ঝুটি বাঁধা চুলের গোছা নাড়িয়ে বলল, 
“ তো? ভয় পাই? আজকে
 প্রথম পুলিশের পকেট মারব না। এর আগেও মেরেছি। 
এসব পুলিশ-টুলিশ হেবি ঘুষ ইট করে! এদের কাছে প্রচুর মানি। নাউ হ্যান্ড ছাড়।” 
 
বাবলু খাবার চিবোচ্ছে। ওভাবেই বলল,
“ ছাইড়া দে টিনটিন। ওস্তাদ ঠিক পারবে। এসব ওস্তাদের কাছে বাম হাতের খেলা।” 

টিনটিন ছেড়ে দিলো। একটা দোকান পরেই দাঁড়িয়ে শরিফ। তুশি আস্তে করে সেখানে এসে দাঁড়াল।  
ওর এক হাত কোমরে। অন্য হাতে ঘাড় চুলকে চুলকে দেখল চারিপাশ। ঠিক সেকেন্ড কয়েক লাগল শরিফের মানিব্যাগ নিতে। দৃশ্যখানায় টিনটিন হাঁ করে বলল,
“ ওস্তাদ দেখি সত্যিই পাশ! হালার পুলিশ ট্যারও পাইলো না।”  
বাবলু বলল,
“ চুরিতে ওস্তাদের জুড়ি নাই।” 

তুশি ফিরে এসে আবার জায়গায় বসল। ভর-সন্ধ্যেবেলা পুলিশের মানিব্যাগ চুরি। এত বড়ো কাজ সেড়েও তার মুখায়বে বিশেষ গর্ব নেই। এসব এখন ডালভাত। এত বছরের জীবনে আজ তো নতুন চুরি করছে না! 
কবে থেকে শুরু করেছে তাই মনে নেই। তুশির পাঁচশর লিস্টে পুলিশ থেকে শুরু করে, বস্তির চেয়্যারম্যানও আছে। 
এখন হাতটা বড্ড পাকা। ভূতের মত আসে আর যায়। মাঝখান থেকে হাওয়া হয় মানিব্যাগ। 

তুশি এক্ষুনি টাকা গুণলো না। এখনো রিস্ক আছে। কিচ্ছু ঘটেনি ভাব করে বসে রইল চুপচাপ। চায়ের অর্ডার করল। সাথে গরম গরম জিলাপি। দোকানি হাঁ করতে গেলেই বলল,
“ দেবো চাচা দেবো। এটার মানি একটু পরেই গিভ করব। নাউ টি দাও।” 

বাতায়ণে ভ্যাপসা গরম। ইয়াসির নেমে দাঁড়িয়েছে। ফোন বন্ধ করায় আরেক বিপদ হলো। মা কল করে না পেলেই একশা হবেন চিন্তায়। কিন্তু ইয়াসির এক্ষুনি কমিশনারের সাথে কথা বলবে না। আগে ছক সাজাবে,তারপর!  

ও শান্ত চোখে রুহানকে দেখল আবার। মাথা নিচু করে ঝিমোচ্ছে ছেলেটা। মদের তোড়ে হুস নেই। 
ইয়াসির নিম্নোষ্ঠ কামড়ে চোখ ছোটো করল। এমপি রুস্তম নিশ্চয়ই এতক্ষণে পাগলা ষাড় বনে গেছে। ওপরমহল থেকে এ নিয়ে চাপ পড়তে দেরি নেই। 
কিন্তু ইয়াসিরের অস্ত্র হবে মিডিয়া। একবার নেটপাড়া তোলপাড় হলে,রুস্তম কেন? ওর বাপেরও করার কিছু থাকবে! আগুনে হাত যখন দিয়েছেই,এত তাড়াতাড়ি থামলে হয়! একটা রেপিস্টকে শাস্তির সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাবে সে। 
শরিফ বেজার মুখে এসে দাঁড়াল সেসময়। মিনমিনিয়ে বলল,
“ স্যার,আপনার কাছে একশো দশ টাকা হবে?”
ইয়াসিরের চোখে প্রশ্ন। শরিফ খুব মন খারাপ করে বলল, 
“ আমার মানিব্যাগটা চুরি হয়ে গেছে।” 

“ কীহ?” চোখ নিচু করে মাথা নাড়ল সে। মুখে তার শত প্রস্থ বেদনা। মানিব্যাগে ভালো টাকা ছিল। কখন যে হলো এটা! 

ইয়াসির হতভম্ব আওড়াল,
“ একজন এস-আইয়ের মানিব্যাগ চুরি হয়েছে? তাও এই সন্ধ্যেবেলা?” 

“ কী করে যে হলো স্যার,বুঝতেই পারলাম না।”

জিপের ভেতর থেকে একজন বললেন,
“ এই জায়গাটা এরকমই স্যার। ওই যে বস্তিটা দেখছেন? ওখানে চোর-ছ্যাচড়দের মেলা একেবারে। আসবেন, হঠাৎ দেখবেন পকেট আছে মানিব্যাগ নেই।”

ইয়াসিরের মেজাজ চটে গেল। পুরোটা বর্তাল শরিফের ওপর। একজন পুলিশ অফিসার হবে সতর্ক-সচেতন। তার যদি পকেটের দিকেই নজর না থাকে,অপরাধীদের ওপর থাকবে কী করে? 
শক্ত কণ্ঠে বলল,
“ গাড়িতে গিয়ে বোসো। আমি দিয়ে আসছি।” 

“ না মানে স্যার,আমি থাকতে আপনি! “ 
“ বললাম তো, যাও।” 
শরিফ আর কথা বাড়াল না। এসে বসল সিটে। ইয়াসিরের কাছে তার ইজ্জতের এক কণাও বেঁচে নেই। সব কাজের ভুল কেন এই লোকের সামনেই হতে হবে! ধ্যাত! 

ততক্ষণে দোকানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ইয়াসির। জিজ্ঞেস করল,
“ বিল কত ছিল?” 
“ ১১০ টাকা স্যার।” 
ইয়াসির মানিব্যাগ খোলে। ওপাশ হতে তুশির চিলের নজর ঠিক এখানেই পড়ল। লাইটের আলোতে কচকচ করছে টাকার নোট। জিলাপি রেখে ঝট করে দাঁড়াল ও। 
“ আরিব্বাস,এত মানি!” 

 ফিসফিস করল বাবলু, 
“ ওস্তাদ, আবার যাবা?” 
“ ইয়েস। এত মানি পেলে টুমোরো আরামসে যাবে।” 

টিনটিন বলল, 
“ ওস্তাদ, আইজকা বাদ দাও। এক পুলিশের পকেট কাটছো,আরেক পুলিশ আসছে। ধইরা ফালাইলে সোজা জেলে।” 

“ মাউথ বন্ধ কর। অলওয়েস কাজে বাম হ্যান্ড দিবি না। আগেরটার মেরেছি টের পেয়েছে? এটাও পাবে না।” 

তুশি চলে গেল। টিনটিন বিড়বিড় করল,
“ বেশি লোভ ভালা না।” 

ইয়াসির দাঁড়িয়ে। ভাংতি ছিল না বলে আস্ত নোট দিয়েছে। 
তুশি ফের পেছনে এসে দাঁড়াল। শরিফ জিপে বসে এদিকেই দেখছিল। তুশির চোরা নজর দেখে কপালে ভাঁজ বসল তার। এই মেয়ে কি পকেটমার না কি? 
ও হাঁ করেও ঠোঁট টিপে নিলো। 
যা হচ্ছে হোক! করুক চুরি। নিয়ে যাক স্যারের ওয়ালেট। সব সময় খালি বড়ো বড়ো কথা! আজকে বুঝবে কেমন লাগে! 

তুশি খুব সাবধানে দুটো আঙুল ইয়াসিরের পকেটে ঢোকাল। লম্বা মানিব্যাগের অর্ধেকটাই বেরিয়ে। এতে সুবিধেই হলো ওর। যখনই ওপরে তুলতে যাবে, আচমকা খপ করে হাতটা চেপে ধরল ইয়াসির। চমকে উঠল তুশি। প্রকট নেত্র হকচকিয়ে তুলল ওপরে। বাবলু,টিনটিনের খাওয়া শেষ। তড়াক করে দাঁড়াল দুজন। 
ইয়াসির সরু চোখে তুশির আপাদমস্তক দেখল একবার। 
ভ্রু উঁচিয়ে বলল, 
“ বাহ,ফিমেইল পকেটমার!” 

তুশি ঢোক গিলল। এই প্রথম! এই প্রথম হাতেনাতে ধরা পড়ল সে। পেছনের সব রেকর্ড ভেঙে চুরমার করতে হাতটা আরো শক্ত করে ধরল ইয়াসির। বোঝাল, পালানোর সব পথ বন্ধ।  
তারপর টান মেরে বলল,
“ চলো।” 
মেয়েটা লাফিয়ে উঠল ভয়ে। 
জিজ্ঞাসায় ফ্যাকাশে ঠোঁট নাড়ল, 
“ কো...ক...কোথায়?” 
“ থানায়।” 
.
.
.
চলবে.........................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp