———————————
বছর তিনেক আগে....
———————————
কৌশিক প্রয়োজনের তাগিদে ইতালির মাটিতে পা রেখেছিল। অপরিচিত শহরের ব্যস্ত রাস্তায় সে জীবনের জটিল সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত। একদিন, ক্লান্তি ও অসতর্কতার মাঝে, সে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরেছিল। গাড়ির গতি ছিল বেপরোয়া, আর এক মুহূর্তের ভুল সিদ্ধান্ত তাকে ভয়ঙ্কর এক দুর্ঘটনার মুখোমুখি করে।
রাস্তার এক তীক্ষ্ণ মোড়ে ব্রেক কাজ করা বন্ধ করে দেয়। গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সজোরে ধাক্কা খায় রাস্তার ধারে থাকা একটি মোটা লোহার খুঁটির সঙ্গে। সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, গাড়ির সামনের অংশ সম্পূর্ণ দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছিল। ইঞ্জিন থেকে ধোঁয়া উঠছিল, আর জানালাগুলো ভেঙে চারদিকে কাঁচের টুকরো ছড়িয়ে পড়েছিল।
কৌশিক দুর্ঘটনার ধাক্কায় স্টিয়ারিংয়ের সঙ্গে সজোরে আঘাত পায়। তার কপাল ফেটে রক্তের ধারা গড়িয়ে পড়ছিল। ডান হাতে গভীর কাটা দাগ, পাঁজরের কয়েকটি হাড় ভেঙে গেছে। মুখে, ঘাড়ে আর পিঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল কাঁচের টুকরোর ক্ষত। তার নিঃশ্বাস ভারী হচ্ছিল, চোখ বুজে বুজে আসছিলো।
গাড়ির দরজা আটকানো ছিল, বাইরে দাঁড়ানো মানুষদের চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। রাস্তায় প্রচন্ড ভিড় জমে গিয়েছিল। কেউ একজন ফোনে সাহায্য চাইছিল, আর অন্যরা গাড়ি ভেঙে তাকে বের করার চেষ্টা করছিল। রাস্তার ধুলো আর রক্ত মিলে এক ভয়াবহ দৃশ্য তৈরি হয়েছিল। কৌশিকের ভারী পোশাক ভিজে ঝপঝপে অবস্থা। মুখে কাঁচের টুকরো লেগে কেটেকুটে রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিল।
অনেকটা সময় পর যখন কৌশিকের জ্ঞান ফেরে, নিজেকে হসপিটালের বেডে শয়ন অবস্থায় আবিষ্কার করে। চারদিকে ভেসে বেড়াচ্ছিল অ্যামোনিয়ার গন্ধ আর মনিটরের বিচ্ছিন্ন শব্দ। তার পুরো শরীর ব্যান্ডেজে মোড়া, ক্ষতস্থান থেকে রক্ত তখনো ঝরছিলো, ভেতর থেকে ব্যথার তীব্রতা বেড়েই চলেছিল।
কৌশিক উঠে বসার চেষ্টা করতেই সারা শরীরে তীব্র যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ে। দুর্বল হাতে আশেপাশে কাউকে খুঁজে পায় না। রুমে একটি বড় কাঁচের জানালা ছিল, যেখান দিয়ে পূর্ণিমার চাঁদের আলো ঠিকরে পড়ছিল ভেতরে। হঠাৎ সেই আলো তাকে প্রচণ্ড টানতে থাকে। ব্যথার তীব্রতা যেন দ্বিগুণ হয়ে যায়।
জানালার দিকে টলমল পায়ে এগিয়ে যায় কৌশিক। তার শ্বাস ভারী, চোখে ছিলো কষ্টের ছাপ। জানালার সামনে দাঁড়িয়ে সে চন্দ্রের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ, এক চিৎকারের সঙ্গে সে জানালায় ঘুষি মারে। কাঁচ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে মেঝেতে পড়ে যায়, বিকট শব্দ রুমের নীরবতা ভেঙে দেয়।
হাওয়া তার র'ক্তাক্ত শরীর ছুঁয়ে যায়। ব্যান্ডেজগুলো ধীরে ধীরে খুলে পড়তে থাকে। কৌশিক চাঁদের আলোয় সটান দাঁড়িয়ে পড়ে। হঠাৎ তার বুকের ডান পাশ থেকে আকাশি রঙের ঝলকানি বের হয়, যা পুরো রুম আলোকিত করে দেয়। সেই আলো চাঁদের শক্তি শুষে নিতে থাকে। সমগ্র রুম আলোয় ভরে যায়।
যন্ত্রণায় কৌশিক গর্জে ওঠে, হাঁটু গেড়ে ফ্লোরে পড়ে যায়। রক্তের ধারাগুলো মেঝে বেয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। তার মুখমন্ডলে ছিল অদ্ভুত এক জেদ। হঠাৎ তার শরীরের ক্ষতস্থানগুলো আলো ছড়াতে ছড়াতে ধীরে ধীরে মুছে যেতে শুরু করে। এক মুহূর্ত পর সে নিথর হয়ে রক্তাক্ত মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে।
রুমে তৎক্ষণাৎ এক নার্স প্রবেশ করে। সামনের ভয়ানক দৃশ্য দেখে চিৎকার করে ওঠে "হেল্প! হেল্প!" বলে। কিন্তু সেই চিৎকার থেমে যায়, যখন কৌশিক আচমকা চোখ খুলে বসে। তার চোখের মণি গাঢ় আকাশি রঙে বদলে যায়। ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি ফুটে ওঠে, শরীর জুড়ে নতুন এক সাহসিকতার রক্ত বইতে থাকে যা পূর্বাভাস দেয় ধ্বংসের।
কৌশিক এক গর্জনে উঠে দাঁড়ায়। তার শরীরের ভঙ্গি পশুর মতো, প্রতিটি পেশী শক্তিতে ভরপুর। সিংহের মতো এক লাফে নার্সের সামনে এসে দাঁড়ায়। নার্সটি আতঙ্কে পেছনে হটে যেতে চায়, কিন্তু তার পা স্থির হয়ে যায়। কৌশিক দ্রুত দরজার দিকে তাকায়, তার বাম হাতের এক আঙুলের ইশারায় ওটির দরজা শক্ত হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। তারপর কৌশিক ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে এগিয়ে যায় নার্সের দিকে। নার্সটি ভয়ে আতংকে আবারো চিৎকার করে উঠে, হেল্প উচ্চারণ করার আগেই কৌশিকের বাম হাত নার্সের পেটের অন্দরে প্রবেশ করে খুবলে ছিঁড়ে ফেলে, তছনছ করে দেয় নাড়িভুঁড়ি আর ভেতরের সবকিছু।
নার্সের চোখ লাল হয়ে ঠিকরে বেরিয়ে আসে, মুখ থেকে বের হয় করুণ গোঙানি। তার দুই চক্ষু হতে ভয়ের অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে , কিন্তু কণ্ঠস্বর বের হয়েও হয় না। কৌশিক তার আরেক হাত দিয়ে নার্সের চোয়াল শক্ত করে ধরে। নার্সটি বাধ্য হয়ে তার চোখের দিকে তাকায়। কৌশিকের চোখের আকাশি আলো নার্সের শরীরের ভেতর থেকে সব শক্তি শুষে নিতে থাকে।
কিয়ৎক্ষণের মধ্যেই নার্সের নিথর দেহ মেঝেতে পড়ে যায়। কৌশিক ঠোঁটের কোণে সেই একই রহস্যময় হাসি ধরে রেখে জানালার দিকে এগিয়ে যায়। হাত বাড়িয়ে ভাঙা কাঁচ সরিয়ে এক লাফে জানালা দিয়ে বাইরে ঝাঁপিয়ে পড়ে, আর পেছনে রেখে যায় এক বিভীষিকাময় নীরবতা।
কৌশিক সেদিনই প্রথম অনুভব করেছিলো, তার শরীরে লুকিয়ে থাকা অদ্ভুত শক্তি কতটা বিপজ্জনক। চন্দ্রের আলো আর তার অভ্যন্তরীণ শক্তি মিলিত হয়ে তাকে এক পাগলাটে প্রাণীতে রূপান্তরিত করেছিল। সেই শক্তি নিয়ন্ত্রণ রাখা বড়ই কঠিন, কৌশিক নিজের মধ্যে থাকে না তখন। ওইদিন ও সে পারেনি নিয়ন্ত্রণ করতে, ঝাঁপিয়ে পড়েছিল চারপাশের মানুষদের ওপর।
এক লাফে গাছের ডাল থেকে বিল্ডিংয়ের ছাদে, সেখান থেকে রাস্তার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে চলে যাচ্ছিল সে। তার দেহে ছিল শুধুই রক্তের চিহ্ন। চোখে ফুটে উঠেছিল এক ভয়ংকর পৈশাচিক রূপ।
যাকেই সামনে পাচ্ছিল, কৌশিক দুই হাতে তুলে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দিচ্ছিল। কখনো কারও বুক চিরে, কখনো গলা ধরে আকাশে ছুঁড়ে ফেলে, আবার কখনো স্রেফ তাদের শক্তি শুষে নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছিল প্রাণহীন দেহ।
ইতালিতে সেই সময় এই ঘটনা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল। শহর জুড়ে ভয় আর আতঙ্ক ছড়িয়ে গিয়েছিল। রাস্তায় ছিল মৃতদেহ, মেঝেতে ছড়িয়ে পড়া রক্তের লাল ধারা। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে কেউই তার রক্তমাখা চেহারা কিংবা তার গতিবিধি স্পষ্ট করে মনে করতে পারেনি।
কৌশিক কয়েক ঘণ্টা ধরে এই অস্বাভাবিক, হিংস্র আচরণ চালিয়েছিল। তারপর, চন্দ্রের আলো যখন ম্লান হতে শুরু করেছিল, তার শক্তি ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে লাগল। সে নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল, যেন এক ঘোর থেকে জেগে উঠেছিল। চারপাশের দৃশ্য দেখে তার নিজেরই শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল। সেদিন সে বুঝেছিল, তার ভেতরে লুকিয়ে থাকা শক্তি কতটা ভয়ানক হতে পারে।
পুরোনো স্মৃতি মনে পড়তেই কৌশিক নিজের গালে কয়েকবার জোরে চাপড় দিলো, সেই ভয়াবহ স্মৃতিগুলো মনে করতে চায় না সে।
তারপর হুংকার দিয়ে নিককে উদ্দেশ্য করে বললো,
"শাট আপ! চাঁদ অনেক ডেঞ্জারাস! আমি আর সেই অতীতের কথা মনে করতে চাই না!"
নিক অবাক হয়ে দ্রুত তার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,
"কেনো? এত ভয় পাচ্ছো কেনো?"
কৌশিক গভীর শ্বাস নিয়ে নিকের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বললো,
"লিসেন! চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই। এটি সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে আলোকিত হয়। আর সেই সূর্যের প্রতিফলিত স্বল্প আলোই আমার শরীরে প্রবেশ করে অদ্ভুত এক খারাপ প্রভাব ফেলে। সেই আলো আমাকে হিংস্র প্রাণীতে রূপান্তরিত করে। তখন আমার নিজের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না।"
নিক চিন্তিত মুখে তাকিয়ে থাকতেই কৌশিক আরো যোগ করলো,
"তাছাড়া অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। আমার অভ্যন্তরীণ শক্তি শুধু শোষণ করতে জানে। যদি কোনোদিন এর মাত্রা ছাড়িয়ে যায় একে তো পৃথিবী ধ্বংস হবে, দুই আমি কি করবো তা নিজেও জানি না।"
তার কথা শুনে নিক হতভম্ব হয়ে গেলো। এই প্রথমবার সে কৌশিকের ভয় আর যন্ত্রণার গভীরতাটা অনুভব করতে পারছে।
অনন্যা কৌশিকের ঢিলেঢালা প্যান্ট আর কালো টিশার্ট পরে ড্রয়িং রুমে পা রাখলো। তার চুলগুলো কাঁধের দুই পাশে এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিল, মনে হচ্ছে সেগুলো গুছানোরও সময় পায়নি মেয়েটা। কাঁচা ভোলাভালা মুখশ্রীতে এক ধরনের সরলতা ঝরে পড়ছিল, যা দেখে বোঝাই যাচ্ছিল, অনন্যা অনেকটাই নির্ভার এবং শিশুসুলভ।
নিক আর কৌশিক নিজেদের কথাবার্তা থামিয়ে মুহূর্তের জন্য অনন্যার দিকে তাকিয়ে থাকলো। মেয়েটার মধ্যে এক ধরনের অদ্ভুত নির্দোষ আকর্ষণ ছিল। দেখে মনে হয় কেউ মেয়েটাকে কিছু বললে সহজেই বিশ্বাস করে নেয় সবকিছু।
পায়ে নরম স্লিপার পরে অনন্যা রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। লারাকে সে আজ ছুটি দিয়ে তার রুমে পাঠিয়েছে। তবে লারা যাওয়ার আগে রান্নার জন্য কাটাকুটির কাজ অনেকটাই এগিয়ে রেখেছিল। অনন্যা চলে যাওয়ার পর নিক বললো,
"কিউট গার্ল!"
কৌশিক বসা থেকে উঠে বললো,
"নট ইউরস!"
নিকের মুখে এক রহস্যময় হাসি ফুটলো। কৌশিক হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কিছু মনে করলো, তাই দাঁড়িয়ে পড়লো। সে আবারও ফিরে নিকের সামনে এসে দাঁড়ালো। পকেটে হাত ঢুকিয়ে, একটু কেশে বললো,
"নিক! আমার মুখের দিকে তাকাও।"
নিক কিঞ্চিত ভ্রু কুঁচকে কৌশিকের দিকে তাকালো। কৌশিক জিজ্ঞেস করলো,
"আমি কী দেখতে ইঁদুরের মতো?"
নিক চিন্তিত হয়ে কৌশিকের সামনে দাঁড়ালো। একবার ডান সাইডে দাঁড়িয়ে দেখলো, আরেকবার বাম সাইডে। অনেকক্ষণ পর্যবেক্ষণ করার পর বললো,
"দেখি ঠোঁট উঁচু করো।"
কৌশিক ঠোঁট উঁচু করলো। নিক হাত তালি দিয়ে বললো,
"হুম, ঠোঁট উঁচু করলে কিছুটা ইঁদুরের মতোই লাগে। বাই দ্য ওয়ে, কে বলেছে এটা? তোমাকে গভীরভাবে দেখেছে হয়তো। আর কী কী বলেছে শুনি?"
কৌশিক একটুখানি নাক ফুলিয়ে "কিছু না" বলে সামনে হাঁটা শুরু করলো।
••••••••••••••
অনন্যা নিজের মতো করেই বাঙালি খাবার রান্না করছিল। ধোঁয়া ওঠা পাতিলে লাফিয়ে উঠছিল ডাল, পাশে সসপ্যানে কষানো হচ্ছিল মাছের ঝোল। রান্নার ঘরে ভরপুর খুশবু ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু বাধ সাধল কৌশিক স্যার। ডাইনিং টেবিলে একদম চোখের সামনে বসে ম্যাগাজিন হাতে, যেন ওর প্রতিটি কাজ নজরদারি করছে। নির্লিপ্ত চেহারা মনে হচ্ছে গভীর মনোযোগ দিয়ে বসে আছে ম্যাগাজিনে। কিন্তু অনন্যা জানে লোকটা তার দিকে নজর রাখার জন্যই বসে আছে।
অনন্যা বিরক্তিতে ঠোঁট কামড়াল।
"এই লোকটা কি করার কিছু পায় না?" মনে মনে বিরবির করে উঠল সে।
তার মধ্যে চুলগুলো সামনে পড়ে বারবার কাজের অসুবিধা করছে। চুল বাঁধার মতো কিছু নেই। আগে জানলে বাসা থেকে বস্তা ভরে জিনিসপত্র নিয়ে আসতো। মেয়েদের যে কতকিছু দরকার হয়, তা ওদের থেকে ভালো আর কেউ বুঝবে না। অগত্যা নিজের হাত দিয়েই সামলে নিল চুলগুলো। বেসিনে গিয়ে আবারো হাত ধুয়ে আসতে হলো।
কৌশিক ম্যাগাজিনটা টেবিলে রেখে ধীরে ধীরে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেল। হাত দিয়ে ঝোলানো চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিলো। অনন্যা মাথা নিচু করে নিজের কাজে ব্যস্ত ছিল, আর মনে মনে ভাবছিল,
"এই লোকটা আবার রান্নাঘরে কেন? কী চাই এর?"
কৌশিক রান্নাঘরে ঢুকে চারপাশটা নিরীক্ষণ করতে লাগলো। কড়াইতে ফুটতে থাকা খাবারের গন্ধ গভীর শ্বাসে টেনে নিলো, যেন খাবারের স্বাদ অনুমান করার চেষ্টা করছিল। রান্নাঘরের নীরবতা একটুখানি কৌতূহল মাখা অস্বস্তি তৈরি করলো।
হঠাৎ, কৌশিক চামচের সেট থেকে একটা কাঁটা চামচ তুলে নিলো। কিছুক্ষণ পরখ করে নিলো চামচটি। অতঃপর কোনো কথা না বলে সে অনন্যার পিছনে দাঁড়ালো। অনন্যার খোলা চুলগুলো তার কাজের পথে বারবার এসে পড়ছিল। কৌশিক দু'হাত বাড়িয়ে তার চুল আলতো করে গোছালো। নরম হাতের স্পর্শে মুহূর্তে থমকে গেল অনন্যা। স্থির হয়ে দাঁড়ালো। হাতের মুঠি শক্ত হয়ে উঠলো।
চামচটা দিয়ে চুলগুলো পেঁচিয়ে কৌশিক শক্ত করে আটকে দিলো। কৌশিকের আঙুলের হালকা শীতলতা আর নিঃশ্বাসের ছোঁয়া পিঠে অনুভব করে অনন্যার সারা শরীরটা শিউরে উঠলো।
অন্যদিকে, কৌশিক তার কাজ শেষ করে ঠোঁটের কোণে একটুখানি হাসি নিয়ে পেছনে সরে দাঁড়ালো।
হালকা গলায় বললো,
"এখন তো আর সমস্যা হচ্ছে না, তাই না?"
অনন্যা মৃদু কাঁপা গলায় বললো,
"না, ধন্যবাদ।"
আবারো নিজের কাজে মনোযোগ দিলো অনন্যা, অস্বস্তি ভাবটা একটুও কমেনি, উল্টো লোকটার করা কাজটি তাকে বেশি করে ভাবিয়ে তুলছে।
.
.
.
চলবে..........................................................