কামিনী - পর্ব ০৯ - মম সাহা - ধারাবাহিক গল্প


সময়টি নিঝুম সন্ধ্যে। রাজ প্রাসাদের চারপাশে জ্বলে উঠেছে মশাল। তার অগ্নি শিখা কেঁপে কেঁপে জ্বলছে মৃদু সমীরণে। আজ সারাটি দিন রানি মহল থেকে বের হোননি। ভেবেছেন কেবল এক মনে হ্যাভেন নামক অপরিচিত পুরুষটির কথা। এক মুহূর্তের জন্য যখন রানির মনে হলো হ্যাভেন তার ভ্রম কেবল, ঐ ঘোর লাগা সন্ধ্যার পরের প্রহরটুকু মনের কল্পনা ঠিক তখনই শুভ্র পায়রাটি ডানা ঝাপটালো। রানিকে স্মরণ করিয়ে দিল, কল্পনায় কখনো কিছু পাওয়া যায় না। পাওয়া সম্ভবও নয় বটে! 
সন্ধ্যে হতেই রানি কামিনীর মনটা ভীষণ আনচান করতে লাগলো। মনে হলো কেবল, একবার গিয়ে জঙ্গলে সেই মায়াময় বাঁশির সুরটি শুনতে। সেই মুগ্ধ করা বাঁশির সুরে কী এক মুগ্ধতা! রাতে তাকে ঘুমুতে দেয় না। বড়ো জ্বালাতন করে। 

রানি তৈরি হয়ে নিলেন। রুনুঝুনু শব্দে তার চঞ্চল উপস্থিতি সরব হয়ে গেলো। রানি প্রথমেই ঘর থেকে বেরুতেই তার দাসী ফ্রেয়া ছুটে এলো। মাথা নত করে তড়িঘড়ি করে শুধালো,
 "কিছু লাগবে আপনার, রানি?"

রানি এই ভীতু মেয়েটির দিকে টান টান চোখে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। তিনি বুঝে উঠতে পারেন না মেয়েটি কেন তাকে এত ভয় পায়? কিন্তু তিনি জিজ্ঞেস করেন না সেটা। জিজ্ঞেস করে লাভও-বা কী? তিনি যে নিজেই নিজেকে এমন ভাবে উপস্থাপন করেছেন যে প্রজারা তার ভয়ে কুঁকড়ে থাকে। রানির নামে প্রজাদের বুকে কেবল লেপ্টে থাকে এক রাশ ভয়। 

 "কিছু লাগবে না। আমার সখীর কী খবর? ওর শরীর সুস্থ তো?"

ফ্রেয়া মাথা নাড়িয়ে জবাব দিল, "সুস্থ আছেন উনি।"

 "সখী এখন কোথায়? নিজের কক্ষে?"

 "হ্যাঁ।"

 "ঠিক আছে। তুমি একটু দেখবে সখীর দাসী সখীর ঠিক যত্ন নিচ্ছে কি-না।"

 "আচ্ছা, রানি।"

ফ্রেয়ার সাথে এই সংক্ষিপ্ত কথোপকথন শেষ করেই রানি যামিনীর কক্ষের দিকে এগিয়ে গেলেন। 

 যামিনীর কক্ষে ঢুকতেই রানি দেখলেন যামিনী শুয়ে আছে বিছানায় আধ-শোয়া ভাবে। কপালে হাত রেখে। তিনি এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালেন বিছানার পাশে। রানির রিনিঝিনি শব্দ তখনও যামিনীর কর্ণে পৌঁছায়নি বোধহয়। এতটাই অন্যমনস্ক ধ্যানে মগ্ন সে। রানি তার ছলহীন কণ্ঠে ডাকলেন,
"সখী, ঘুমিয়েছো?"

যামিনীর এবার ধ্যানে ভাঁটা পড়লো। কিঞ্চিৎ কেঁপেও উঠলো। চোখ মেলেই চোখের সামনে রানিকে দেখতেই তড়িঘড়ি করে উঠে বসল। ব্যস্ত স্বরে বলল, 
"আরে সখী, কখন এলে? দেখেছো টেরই পেলাম না। বসো বসো।"
কথাটা বলতে বলতেই দাঁড়ানোর জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল যামিনী। রানি থামিয়ে দিলেন তাকে। খানিক হেসে বললেন, "আহা! দাঁড়াচ্ছো কেন? বসো তুমি।"

যামিনী আর দাঁড়ালো না। তবে খুব ছোটো কণ্ঠে বলল, "রানিকে দেখে দাঁড়ানো যে কর্তব্য এবং নিয়ম।"

 "সেই নিয়ম তো সকল প্রজাদের জন্য। আপন মানুষদের জন্য নয়।"

রানির কথায় কিছুটা অভিমান কিংবা পরিহাস করেই হাসলো যামিনী। নিজের হাতের কঙ্কণ গুলোর দিকে চোখ রেখে বললেন, "শাস্তির বেলা যদি প্রজার মতনই দণ্ড পাই তাহলে অন্য বেলা কেন আপন বলে নিয়ম অমান্য করবো?"

 যামিনীর মাথা নিচু করে থাকলেও জলে পরিপূর্ণ চক্ষু যুগল ঠিকই দৃষ্টিগোচর হলো রানির। তিনি তা দেখে মৃদু মাথা নাড়ালেন। কেবল অভিমান প্রকাশ করতে পারেন না বলে আর বলতে পারলেন না যে— সখীর ব্যথায় তিনিও কতটা জ্বালিয়েছেন নিজেকে। কিছু মানুষ যে এমনই হয়! অভিমান, অভিযোগ গুলো বুকে চেপেই তারা কাটিয়ে দেয় গোটা একটি জনম। এবং তাই লোকে বুঝতে পারে না, তাদেরও কষ্ট হয়! যন্ত্রণা তাদেরও আছে।

"তোমার শরীর এখন কেমন, সখী?"
রানির প্রশ্নে যামিনী প্রায় নিজের চোখের জলকে লুকিয়েই ফেলল। হাসি-হাসি মুখে উত্তর দিল, "দারুণ। তুমি বসছো না যে!"

 "না, আমি একটু বাহিরে যাবো।"

"কোনো কাজে যাচ্ছো, সখী?"

রানি যামিনীর প্রশ্নে কিছুটা সংশয়ে পড়লেন। তিনি কি আদৌ কোনো কাজে যাচ্ছেন? না তো! তিনি তো যাচ্ছেন মনের ইচ্ছে পূরণে। পুরুষ বিদ্বেষী নারীটি যাচ্ছেন পুরুষের বাঁশির সুরে মুগ্ধ হতে। কিন্তু এই কথা কি বলা যায় সগর্বে? তাই রানি উত্তরে বললেন, 
"হ্যাঁ, আছে।"

 "চলো, এগিয়ে দিয়ে আসি।"

"তুমি বিশ্রাম করো, সখী। আমি যেতে পারবো।"

রানির কথা মানলো না যামিনী। সে উঠে দাঁড়ালো। রানির কথাকে পাত্তা না দিয়েই বলল,
"চলো তো, এগিয়ে দিই। এমনিতেও বসে থেকে শান্তি লাগছে না। একটু হেঁটেও এলাম।"

রানি মেনে নিলেন। "চলো" বলেই হাঁটা ধরলেন। 

 হাঁটতে হাঁটতে রাজ প্রাসাদের বাহিরে এলেন দু'জনে। হনহনিয়ে তখনই আসতে দেখা গেলো সেনাপতি হ্যাব্রোকে। সে দাঁড়িয়ে ছিলো প্রাসাদের বাহিরে। রানিকে দেখেই এগিয়ে এলো। কুর্নিশ করে বলল, 
"কোনো প্রয়োজন আছে, রানি? আমাকে ডাকতেন, আমি চলে যেতাম।"

রানি বেশ স্বাভাবিক কণ্ঠেই বললেন, "না। তোমার সাথে আসার পর আমার কিছু কথা আছে। রাত্রিকালে কক্ষে এসো।"
বেশ স্বাভাবিক একটি কথা। যামিনীর সে কথায় বুকে খচখচ করে উঠলো হয়তো খানিকটা। কী অদ্ভুত! এই খচখচানির তো প্রয়োজন ছিলো না। তবে সেও কি অন্যদের কথাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে নিজের সখীর নামে ভুল ভাবনা ধারন করলো অন্তরে? সে-ও সখীকে অবিশ্বাস করার ক্ষমতা দেখালো? এ যে ধিক্কারের! এ যে চরম লজ্জার। যে-ই সখী তাকে এত সুন্দর একটি জীবন দিয়েছে সে-ই সখীকে এমন অবিশ্বাসের জায়গায় সে রাখলো কেমন করে? এতটা অকৃতজ্ঞ হওয়া আদৌ উচিত কি? মনের দ্বিধাদ্বন্দে মূর্ছা গেলো যামিনী। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো বুক চিরে। 

রানি তখনই বিদায় নিলেন। নিজের রাজ ঘোড়ায় চড়ে তুমুল শব্দে ছুটলেন নিজের গন্তব্যে। ঘোড়ার চলনের বাঁকে রানির শরীরটি আরও আকর্ষণীয় আর মনোমুগ্ধকর লাগলো। কী অপরূপ রূপ দিয়েই না বিধাতা সৃষ্টি করেছেন এই রানিকে! 
পথের বাঁকে রানি ও তার রাজ ঘোড়া মিলিয়ে যেতেই যামিনী হ্যাব্রোর পানে তাকালো। হ্যাব্রো তখনও রানির যাওয়ার পথটায় তাকিয়ে আছে। যামিনীর দিকে তাকানোর যেন সময় নেই মানুষটার। কী অপরাধ যামিনীর? রানি না হওয়াটা নাকি সুন্দরী না হওয়াটা?

হ্যাব্রোর সঙ্গ চাওয়ার লোভ চেপে ধরলো যামিনীকে। একটু একাকীত্বে হ্যাব্রোর সঙ্গে কাটানোর সুযোগ যেন হাত বাড়িয়ে ডাকছে তাকে। এই সুযোগ হাতছাড়া করার কোনো যুক্তি সে নিজেকে দিতে পারল না। লোভটাও সংবরন করতে পারলো না। তাই হ্যাব্রোর দিকে তাকিয়ে বলেই বসলো,
 "আমাকে কি একটু সামনের মেলাটায় নিয়ে যাবে? শুনেছি সেখানের সন্ধ্যের পর নাকি ভীষণ সুন্দর সুন্দর জিনিস পাওয়া যায়!"

হ্যাব্রো যামিনীর কথায় যামিনীর দিকে তাকালো। গুরুগম্ভীর স্বরে বলল, 
"সন্ধ্যার আগে জমজমাট থাকে মেলাটি। এখন ধীরে ধীরে পণ্যশালা বন্ধ করে দিবে। বিশেষ কোনো আনন্দ পাবেন বলে মনে হয় না। আপনি যদি কাল বিকেলে যান তবে অনেককিছু দেখতে পারবেন আশা করি।"

হ্যাব্রোর সাথে একান্তে সময় কাটানোর এই প্রচেষ্টা, বুদ্ধি বিফল হওয়ায় ভেতর ভেতর অবসন্ন বোধ করলো যামিনী। উত্তরে কেবল ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পেলো না। 
 হ্যাব্রো বুক টান টান করে দৃষ্টি সংযত রেখেই বলল, "আপনি প্রাসাদের অভ্যন্তরে চলুন এখন।"

যামিনী তপ্ত শ্বাস ফেলে আরেকটু বোকা বোকা কথা বলে ফেলল হুট করে, "আমার শরীর কেমন আছে তা তো একটিবারও জানতে চাইলে না।"
কথাটি বলে নিজেই হতভম্ব হয়ে গেলো সে। চমকে গেলো ভেতর ভেতর। কারো প্রতি ভালো লাগা আমাদেরকে এতটা লাগামহীন কেন করে দেয় তা ভেবে ভেবেই হয়রান হলো। হ্যাব্রোও বা কী ভাববে? খুব নগন্য বোধ করলো নিজেকে সে।
 কিন্তু তার এতশত জটিল ভাবনাকে শান্ত করে দিয়ে হ্যাব্রো স্বাভাবিক স্বরেই বলল, "বৈদ্য জানিয়েছিলো আপনি সুস্থ আছেন। তাই আর জিজ্ঞেস করিনি।"

হ্যাব্রোর স্বাভাবিকতায় স্বস্তির শ্বাস ফেললো যামিনী। দ্রুত পায়েই চলে গেলো প্রাসাদের ভেতর। ভালোবাসা, ভালোলাগা ব্যাপার গুলো ভীষণ ভেজালযুক্ত। এই অনুভূতি গুলো আমাদের নিজেদেরকে নিজেদের জায়গায় স্থির থাকতে দেয় না বলে ভীষণ রাগও হলো তার নিজের উপর। কীভাবে সে অনুভূতির জোরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে! সখী ঠিকই বলে। ভালোবাসা, প্রেম, মায়া, মোহ আমাদের নিঃস্ব করে দেয়। নিজেদের সবটুকু আত্মবিশ্বাস হারিয়ে আমরা হয়ে যাই শূন্য, নিঃস্ব। 

*

 রাজ ঘোড়া যখন আকাশ-পাতাল উজাড় করে শব্দ তুলে জঙ্গলে প্রবেশ করলো তখন মাথার উপর এক ফালি চাঁদ হাসছে নীরবে। সেই চন্দ্রের মধুমাখা জোছনায় জঙ্গলের ঘন অন্ধকার পথ কিছুটা দৃশ্যমান হয়ে উঠলো। 
ঠিক জঙ্গলের মাঝামাঝি গিয়ে রানি ঘোড়ার শব্দে লাগাম টানলেন। দূরন্ত ঘোড়াটি দিব্যি রানির লাগাম টানার সাথে সাথে ধীর হয়ে গেলো! এই অবুঝ পশুটি কী সুন্দর রানির ভাব-গতিক মুখস্থ করে নিয়েছে! 

গহীন জঙ্গলের ভেতরটা থেকে ভেসে এলো আবার সেই মোহনীয় বাঁশির সুর। পরিষ্কার এসে কানে লাগলো। রানির আবার ঘোর লাগলো। যখনই সে মুগ্ধ হতে যাবে তখনই চোখের পাতায় ভেসে উঠলো হিংস্র একটি পুরুষের মুখাবয়ব। একটি নয়, কয়েকটি। যৌনতায় অন্ধ সে-ই মুখ। রানির মুগ্ধতা কেটে গেলো নিমিষেই। পুরুষদের প্রতি তার স্থায়ী ঘৃণা গিয়ে পড়লো বাঁশি বাজানো মানবটির উপর। রানি ঘোড়ার দড়িতে টান দিতেই ঘোড়াটি আবার চলতে শুরু করলো। তবে সেটা বিপরীত দিকে। জঙ্গলের ভেতরে আর তিনি গেলেন না। কেনইবা বা যাবেন? কীসের টানে? পুরুষদের কোনো কিছুই মুগ্ধতা নয়। সবটাই বিষ। এই বিষ ধীরে ধীরে দেহে প্রবেশ করে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। এতকিছু জেনেও সে কীভাবে এই বিষের টানে ছুটে এসেছিলো? তার উপর এই মানবটি মোটেও সুবিধার নয়। তার অঙ্গে ছুটে বেড়াচ্ছে কূটনীতি কিংবা গোপন রহস্য। 

 ১২.

 অম্বরে তখনো উত্তপ্ত রবীর দেখা মেলেনি। চারপাশে তখন সবে কুয়াশা জমেছে। আসন্ন শীতের আগাম বার্তায় প্রকৃতি স্থবির থেকে খানিক হেসে-হেসে উঠছে বিষণ্ণ বদনে। 
লোহার দরজাটায় খানিক শব্দ হতেই উদাস রেবেকার ধ্যানে খানিক ভাঁটা পড়লো। সারারাত জেগে সদ্য চোখ বুঁজেছে। এই বদ্ধ রুমটিতে একমাত্র খাবার যখন দিয়ে যায় তখনই এই দরজাটা খুলে। কিন্তু আজ এত সকালেই খুলে যাওয়ায় কিছুটা অবাকই হলো রেবেকা। দুপুর হয়ে গেলো কী! সূর্য আসতে পারে না বলে সে বুঝতেও পারছিলো সময়টা ঠিক সকাল নাকি বিকেল।

চোখ মেলে দরজার দিকে তাকাতেই রেবেকা খেয়াল করলো কেউ নেই চারপাশটায়। দরজাটা হা করে খোলা। রেবেকার কাছে ব্যাপারটা প্রথমে অবিশ্বাস্যকরই লাগলো। রানি কামিনীর এই কারাগারের দোর কখনো তো এমন অসাবধানতায় খোলা থাকে না। তবে!

দুর্বল শরীর নিয়ে রেবেকা উঠলো। পেটের দু'দিকে এখনো ব্যথাটা বিদ্যমান। রানি বৈদ্য দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন তাই কিছুটা সুস্থ সে। পেটের এই জরাজীর্ণ ব্যথাটা নিয়েই সে সাহসটা করে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। উঁকি দিয়ে দরজার বাহিরে তাকাতেই দেখলো কালো চাদর দেওয়া একটি মানুষ হেঁটে চলে যাচ্ছে। মানুষটার পেছনটুকুই কেবল দেখা যাচ্ছে। রেবেকা উযোয়ার মুহূর্তেই যেন স্তব্ধ হয়ে গেলো। কামিনীর রাজ্যে কেউ বেইমানি করছে রানি কামিনীর সাথে? রানির আটকে রাখা এই কঠিন কারাগার থেকে রানির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা রেবেকাকে কি-না ছেড়ে দিয়ে গেলো? অথচ কেউ দেখলো না? জানলো না? 
রেবেকার একবার মনে হলো বেরিয়ে যেতে। এই সুযোগে পালিয়ে যেতে। আরেকবার মনে হলো, রানি কামিনীকাঞ্চনের রাজ্যে রানি না চাইলে কেউ পালাতে পারে না। আর না জানুক, সে তো জানে রানির চতুরতা কেমন! 

নিজের ভেতর ভেতর হওয়া এই দ্বন্দে শেষমেশ রেবেকার মনে হলো একবার চেষ্টা করেই দেখা যাক। এখানে থাকলেও মরতে হবে আর পালাতে নিলে ধরে ফেললেও মরতে হবে। মৃত্যু যেখানে অনিবার্য সেখানে একবার বাঁচার চেষ্টা করাই যায়! একবার জীবনকে শেষ সুযোগ দেওয়াই যায়। 
 ভাবনা অনুযায়ীই পদক্ষেপ নিলো রেবেকা। ধীরে ধীরে কারগারটি থেকে বেরিয়ে এলো। বদ্ধ এই বিশাল জায়গাটি থেকে কোনো রকমে প্রাণ নিয়ে যেন দৌঁড়াতে লাগলো। দৌড়াতে দৌড়াতে কারাগারের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছালো। শেষ মাথায় প্রহরীরা তখন ঘুমে বিভোর। অথচ এই প্রহরীদের ঘুমানোর কথা নয়। চব্বিশ ঘন্টা চলে পাহারা। আজ কি ভাগ্য তাকে সাথ দিলো নাকি কারো নিবিড় প্রচেষ্টায় সে বেরিয়ে যেতে পারছে সেই হিসেব কষার ফুরসত নেই। মনের মধ্যেই বিস্ময় রেখে বেরিয়ে গেলো দ্রুত। কারাগারের শেষ প্রান্তে থাকা দরজাটি দিয়ে আলগোছে। কত গুলো দিন পর দেহে, চোখে, মুখে প্রাতঃকালের রশ্মি এসে লাগতেই রেবেকা জোরে শ্বাস নিলো। দ্বিতীয় বার বাঁচার সুযোগ পেয়ে সেই অজ্ঞাত ব্যক্তিতে ধন্যবাদ দিলো। এরপর ছুটতে লাগলো জঙ্গলটির দিকে। যেকোনো ভাবেই হোক তাকে যে এই রাজ্য ছাড়তে হবে। দৌড়াতে দৌড়াতে সে পেছন ফিরে একবার তাকালো। কালো চাদর জড়ানো ব্যক্তিটি তখন কারাগারের দোরটি ভেতর থেকে আটকে দিচ্ছে। থেমে গেলো রেবেকার পা। চাদরের আড়ালে থাকা হাসিটি তার পরিচিত। বড্ড পরিচিত। 
অনুশোচনায় তার চোখে জমলো জল। স্তব্ধতা নিয়ে সে তাকিয়েই রইলো নির্নিমেষ। 
.
.
.
চলবে.......................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp