এক অবিদিত সত্য নিয়ে চুপ করে বসে আছে ফিহা। দুচোখ ভরা বিষণ্ণ আঁচের সুস্পষ্ট ছাপ। গোলাপ রাঙা ঠোঁটদুটি থরথরিয়ে নতুন বাঁশপাতার মতো কাঁপছে। হয়ত চোখ ভরে ভরে অশ্রু বর্ষণ করতে চাইছে, কিন্তু প্রকৃতিপ্রদত্ত নোনাবিন্দুগুলো হাউমাউ চিৎকারে নির্গত করার অভ্যেস নেই। ছোট থেকে নিজেকে নিজেই বোঝাতে সক্ষম হয়েছে কান্না হলো লুকোনো জিনিস। চোখ ভেজা অশ্রুগুলো কখনো কাউকে চিৎকার করে শোনানো যাবে না। নীরবে শান্তশিষ্ট কল দেওয়া পুতুলের মতো সম্পূর্ণ অশ্রুমোচন বিষয়টি একাকী বুকে অনুভব করতে হবে। আজ বড় অদ্ভুত কারণে মনে পড়ছে বড় বোন ফিমাকে। বিশেষ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মন খারাপ ছাড়া বড় আপুকে ওর মনে পরে না। মাঝে মাঝে মনে হয় ও যদি পৃথিবীর বুকে আর কটা বছর পর আসতো, তাহলে মাতৃসম কোমল আদরটা বড়বোনের কাছ থেকে কী পেতো না? হয়ত পেতো। বান্ধবি রিমাকে ও দেখেছে স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে ওর বড়ো বোনের রান্না করা নানারকম মজার মজার খাবার আনতে। খাবারগুলো কী যে সুস্বাদু আর মুখরোচক হতো! কখনো কখনো দেখতে পেতো স্কুল ছুটির পর হঠাৎ আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামলে ছাতা নিয়ে হাজির হয়ে যেতো ওর বড়ো বোন। সঙ্গে করে নিয়ে যেতো রিমাকে। ফিহার সর্বদা মনে হয়েছে সে বাসাবাড়িতে যতটা প্রফুল্ল ও চঞ্চল, তার চেয়ে ঢের বেশি প্রাণ্ঞ্জল সে বাসাবাড়ির বাইরে স্যার, ম্যাম এবং ক্লাসের সহপাঠীদের মাঝে। ভাগ্য যে বড় অদ্ভুত একটা পরিহাস করে আবারও ওকে নিচ্ছিদ্র নীরবতার মাঝে ঠেলে দিল তা দেখে ভীষণ দুঃখ হয় ওর। এই বাড়িটা এতো শূন্য কেন? কান পাতলেও মানুষের হৈচৈ কলরব শোনা যায় না, দূর রাস্তায় যানবাহনের বিকট হর্ণ কানে আসে না, সারা বাড়ি ঘুরঘুর করলেও একটি মানুষও নেই, যার সাথে মন খুলে অনেকক্ষণ কথা বলবে। সুফিয়া খালা মানুষটা রসিকপ্রবণ হলেও কথাবার্তায় বেশ সংযত। একনাগাড়ে কথা বলার চেয়ে উনার কাছে ঘুমের সন্ধিটা বড়ো বেশি প্রিয়। তিনি সময় পেলেই নিজ কক্ষে গিয়ে ঘুমোন। এখনো ঘুমুচ্ছে। জেগে রয়েছেন শুধু শ্বশুর স্থানীয় মানুষ খালুজান। তিনি নিজ কক্ষে বেশ মনোযোগের সহিত শব্দের প্যাজল মেলানো খেলায় বুঁদ হয়ে রয়েছেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছে না তিনি “ছদ্মপ্রহরী” সংক্রান্ত ব্যাপারটায় কোনোরূপ বিচলিত। বিছানায় বসে হাঁটু মুড়ে সাবধানে ডান পাটা কোলের কাছাকাছি আনতেই ব্যথা কমে আসা যাওয়াটায় আঙুল বুলাল মৃদু মৃদু। পায়ের গিটের কাছে আলতো চাপ দিয়ে বুঝতে পারল ব্যথাটা আগের চেয়ে অনেকটাই কমে এসেছে। বোধহয় আর কিছুদিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ ব্যথা নিরাময় সুস্থ পদচারণায় মেতে উঠবে। ঠিক তখনই শোঁ শোঁ করা ঝড়ো হাওয়ার মতো মস্তিষ্কের অন্দরে দাপুটে একটা ঝাপটা এসে পড়ল। চোখদুটি ছিঁটকে চলে যায় খোলা বারান্দার ওদিকে দুপুরে দেখা প্রশ্নবিদ্ধ ঘটনাটি। মন বড্ড দুরুদুরু করে উঠতেই চট করে বিছানায় রাখা সেলফোনটি নিয়ে ডায়ালে বসালো কল। অপ্রতিভ বদনে ঘন ঘন দুটো শুকনো ঢোক গিলে ওপাশ থেকে রিসিভ হওয়ার কিয়ৎ সেকেন্ডের ভেতর সাড়া এলো,
- বলুন।
না কোনো সম্বোধন, না কোনোপ্রকার “হ্যালো” শব্দ, না কোনো সরল ব্যক্তিদের মতো ঢলঢলে গলার উত্তর। বরং সে এমন এক ধারালো গাম্ভীর্য নিয়ে সাড়াটা দিল যে ফিহা কয়েক সেকেন্ডের জন্য ভ্যাবাচ্যাকা খেতে বাধ্যই হলো। একটুক্ষণ পর ধাতস্থ মুখে কিছু বলতে যাবে তার ঠিক আগেই যেন ও প্রান্তের অধৈর্যশীল পুরুষটি তাড়া প্রচ্ছন্ন কণ্ঠে বলল,
- নাবিলা, আমি শুনছি। আপনি বলুন।
এবার যেন পুরোপুরি সংবিৎ ভাবটা মস্তিষ্ক থেকে টং করে বাজল। তাড়াহুড়ো করলেও গলার স্বর শান্ত করে বলল,
- ব্যস্ত?
- বলুন। শুনছি।
- বাসায় কটার দিকে আসছেন আপনি?
- দ্রুত আসলে আপনি আমাকে কেমন ট্রিটমেন্ট দিতে চলেছেন?
- আহ! পালটা প্রশ্ন ভাল লাগছে না। বলে ফেলুন না আসছেন কটার দিকে?
- নিশ্চিতভাবে সময়ের ব্যাপারটা জানি না। কথা অনুযায়ী কাজ করতে না পারলে আমার ওপর আবারও একটা মিথ্যাবাদীর স্ট্যাম্প পরবে। দেখা যাক।
সুকোমল মসৃণ কপালে দৃঢ় কুন্ঞ্চন বসিয়ে ত্যক্ত সুরে বলল ফিহা,
- আপনি খুবই কথা প্যাঁচান। সোজাসুজি একটা কথা জানতে চাইলে তাকেই উলটো কথার ফাঁদে ফেলে দেন। কেন? একটু নম্রভাবে কী বলা যায় না? বলুন না আনুমানিক সময় কটা?
- আমার দ্বারা যে নম্র ভদ্র স্বাভাবিক টোন আসে না, জানেন তো। এখন প্রসঙ্গ সেটা না। আপনি কি নিয়ে টেন্সড ফিল করছেন সেটা বলুন। মিথ্যা বলে লাভ নেই। আমি এসব হালকা মানের মিথ্যা ধরতে পারি। বলুন।
চট করে জিভে কামড় বসিয়ে ধরা পড়ার ভঙ্গিতে মুখ কোঁচকালো ফিহা। কী মুশকিল যে বাবা! সেই কোন মাথা থেকে এ মাথার কাহিনি ওর গলার অবস্থা শুনেই আঁচ করে ফেলেছে। ওপাশ থেকে আবারও ভারি গলাটা বেশ তাগাদা দীপ্তস্বরে বলল,
- বলুন ওয়াইফ। ভাবাভাবির কাজটা কল কেটেও করতে পারবেন। প্রবলেমটা শেয়ার করে রিল্যাক্স হোন।
মনে মনে ফিহা ভাবছে সে কী আসলে কথাগুলো ফোনেই উচ্চারণ করবে কিনা। তবে মনে হচ্ছে কথাগুলো সামনাসামনি বললে বোধহয় সুন্দরভাবে আলোচনাটা করা সম্ভব। কিন্তু ফোনে ব্যাপারটা বললে এটাও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না অফিসে উনার মন এসব ঘটনা শুনে খিঁচড়ে যায় কিনা। ওর কাছে যে প্রহরীর কথাটা একপ্রকার গোপন করতে চাইছে, সেখানে ফিহা তার গোপন লুকোনো ব্যাপারটা চম্পট জেনে ফেলেছে অকস্মাৎ ঘটনায়। শেষপর্যন্ত সবকিছু বিবেচনা করে কথার স্রোতটা বদলে দিয়ে বলল,
- আপনি দ্রুত বাড়ি আসুন। বাসায় একা একা আমার সময় কাটছে না। আপনি বাসায় এলে কিছু ব্যাপারে কথাও বলব। জলদি জলদি আসুন।
- হুম। যথা নির্দেশ। ফুল পছন্দ করেন?
- হঠাৎ ফুলের প্রসঙ্গ উঠছে কেন?
- কারণ আমি মুখ দিয়ে প্রশ্ন করেছি, এজন্য।
কথার তীর্যক ভঙ্গিটা শুনে ফিহাও মুখটা তেঁতো করে বলল,
- হ্যাঁ করি। ফুল সবাই পছন্দ করে।
- কিন্তু আমি অন্য একটা ফুল পছন্দ করি। বাগানে কিছু গোলাপ ফুল ফুটেছে। লাল রঙ। আপনার লজ্জা পাওয়া গালদুটোর মতো রঙ। পছন্দ হলে সেখান থেকে কিছু ফুল ছিঁড়তে পারেন। আল্লাহ হাফেজ। এসে আপনার ওই গুরুত্বপূর্ণ টপিকে কথা হচ্ছে।
খট করে কলটা কেটে যেতেই টুট টুট একটানা শব্দ শুনে কান থেকে ফোনটা নামায় ও। কী যে অদ্ভুত ধরণের বিচিত্র আচরণ করে লোকটা! কেন যে নাকের ডগায় জ্বলন্ত অঙ্গার নিয়ে গমগম স্বরে প্রত্যেকটা কথা নিক্ষেপ করতে থাকে! তবে স্বল্প মিনিটের এইটুকু আলাপে মনের কালো মেঘে ঝকঝক করে উঁকি দিচ্ছে সূর্য। যেন অন্দরমহলটা আপনা থেকেই জানিয়ে উঠছে “শান্ত হও নাবিলা হক। শান্ত হও তুমি। সমস্ত প্রশ্নের তুমি রাতের মধ্যেই পাচ্ছ। সে তো মিথ্যা বলবে না তোমার কাছে। বলবে বলো?”
••••••••••••
ঝুপসি অন্ধকারে সমস্ত ঘরটা কবরের মতো নিস্তব্ধ। ভয়ংকর দুর্ভেদ্য এই কালো কুচকুচে ঘর। কোথায় এনে রাখা হয়েছে এখনো আন্দাজ করা যাচ্ছে না। শরীরের আনাচে কানাচে তীব্র ব্যথার মারণ যন্ত্রণায় আধবোজা চোখের কোল ঘেঁষে গড়িয়ে পরছে অশ্রু। ডানহাতের দুটি আঙুল ভেঙে গেছে। তর্জনী ও বৃদ্ধা আঙুলে মস্তিষ্কের কোনো সাড়া কাজ করছে না। গলায় ঢোক গিললেও কলজে শুকিয়ে আসছে মুমূর্ষু দীপের। অসহ্য শারীরিক পীড়ায় আবারও ডানচোখের কোল বেয়ে অশ্রু ছেড়ে দিল। সে কী মরে যাবে? অজ্ঞাত লোকগুলো কী বাঁ চি য়ে রাখবে না ওকে? সে তো জানতো না সামান্য একটা ভুল কাজের ফলে এমন করুণ দশা হবে তার। বুক ঠেলে খরখরে বিশ্রী কাশিটা কণ্ঠনালী ছেয়ে যেতেই জোরে জোরে যক্ষ্মা রোগীর মতো কেশে উঠল দীপ। শুকনো খর চৌচির গলা, আঠালু র ক্তে মাখামাখি হাতের ত্বক, গায়ের আসমানী রঙের শার্টে চিটচিটে র ক্ত শুকিয়ে খসখসে শক্ত আকার ধারণ করেছে, বাঁ পায়ের কাছে কোনো অনুভূতি নেই, জিভ নাড়ালে নোনাস্বাদে মুখ কটু . . মৃ ত্যুভয়ে দুচোখের নির্মল অশ্রু ছেড়ে চোখ বুজল সরফরাজ দীপ। ওদের কথামতো না চললে ওকে নির্মমভাবে জ... বা... ই করা হবে। মাংস কা.. টা.. র অ.. স্ত্রটা দিয়ে গতকাল যেভাবে জ্যান্ত একটা মানুষকে গরুর মতো জ.. বা.. ই করা হলো, সারা জায়গা লাল স্রোতের মতো র ক্তে র আঁশটে গন্ধে মেখে দিল— মনে পড়লেই পেট গুলিয়ে বমি চলে আসে তার। সে বাঁচবে না। সরফরাজ দীপ প্রাণ নিয়ে আজ কোনোদিনই হয়ত পৃথিবীর বুকে স্বজনদের মুখ দেখবে না। বুকের ভেতরে জিইয়ে রাখা একটি মাত্র নামকে যন্ত্রণার মুখে উচ্চারণ করল দীপ,
- ভাই বাঁচাও। বাঁচাও সাঈদ ভাই। তুমি বাঁচাও এই ন র কের যন্ত্রণা থেকে। আমি সহ্য করতে পারছি না ভাই। আমার ভেতরে তোমাদের মতো সহ্যক্ষমতা ধৈর্যশক্তি একটুও নাই। আমাকে উদ্ধার করো . .
প্রতিটি নিঃশ্বাস নিতে এতোটা কষ্ট, এতোটা দুর্বিগাহ যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে যে সামান্য দমটুকুও নিতে হচ্ছে স্রষ্টার অশেষ কৃপায়। আজ থেকে দুদিন আগে সে কোম্পানির বিশেষ একটা কাজের সূত্র ধরে সিলেট আসে। বিকেলে একটি হোটেল রুম বুক করা জায়গায় রেস্ট নিয়ে রাত নটার দিকে একটু এলাকা ঘুরার উদ্দেশ্য বের হয়। হঠাৎ দুটো ছোকরা, বয়স বোধহয় আঠারো/উনিশ হবে, তারা এসে সরাসরি জানালো ওদের সঙ্গে হাঁটা দিতে হবে। বেশি উঁচুনিচু কিছু করার চেষ্টা করলে সা ই লে ন্সা র বসানো বস্তুটা দিয়ে ছোট্ট একটা বু লে ট বের করতে বেশিক্ষণ লাগবে না। দীপ প্রথমে ভীত না হয়ে নিজেকে শক্তসর্মথ্য ব্যক্তির মতো দেখাল,
- কী চাও তোমরা? কী জন্যে আমার কাছে এসেছ? আমি তো তোমাদের চিনি না! রাস্তা ছাড়ো। বেশি বাড়াবাড়ি করলে এক্ষুণি পুলিশে দেব। চৌদ্দশিকের ভাত খেতে চাও? শা.. লা.. র ন.. ষ্টা.. র দল মাথা খারাপ করতে আসছে।
ঠিক সে মূহুর্তেই দীপ আবিষ্কার করল কত বড় ভুলটা যে সে করে ফেলেছে। ওই উঠতি বয়সী দুটো ছোকরার মুখ কতটা উগ্ররূপী জা.. নো.. য়া.. র এবং নিষ্ঠুরতম খু.. নিদের মতো দেখতে, সেটুকু বুঝতে কালবিলম্ব হলো না আর। বোবায় ধরা মানুষের মতো ওদের সঙ্গে যেতে থাকলে অদূরে দাঁড় করানো একটি মাইক্রো বাসে উঠে পড়ল দীপ। মাইক্রোর ভেতরকার আলোটি নেভানো। কতজন মনুষ্য জা.. নো.. য়া.. র সেখানে আছে তা বুঝে উঠার আগেই হঠাৎ মুখে পেছন থেকে রুমাল ঠেসে দিল কেউ। ওইটুকু সীটে প্রাণপণ ছোটাছুটির যুদ্ধ করতেই মিষ্টি গন্ধ মাখানো সুভাসের কাছে কাবু হয়ে যায় সে। ঘড় ঘড় করা বিশ্রী একটা বিকট শব্দে ভাবনার সুতো খুলে দুচোখ মেলল দীপ। চ্যাট করে সুইচ টেপার শব্দ হতেই কবরের মতো অন্ধকার ঘরটায় হলুদ টিমটিমে বাতি জ্বলে উঠল। আলোর তীব্রতা সহন করতে না পেরে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয় দীপ। কানে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে বুটজোড়ার ভারি গমগমে পদশব্দ। একটা চেয়ার টেনে ধপ করে বসে পড়ল অজ্ঞাত আগন্তক। মিনিট খানেক নীরবতার ভেতর গুজরান করতেই জন্তুর মতো ফোঁস ফোঁস নিঃশ্বাস ছাড়া কণ্ঠে লোকটি বলল,
- শরীর কেমন স্যার?
প্রশ্নটা শুনতে পেয়েও ইচ্ছা করে জবাবটা দিল না দীপ। মুখ ভরে ভরে একঝাঁক গা.. লি যদি ছুঁড়তে পারতো সে! ষাট ওয়াটের বাতির তীব্রতায় চোখ সওয়ানোর জন্য ক্ষীণভাবে চক্ষু পাতা মেলতে থাকে সে। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে ফুটল কবরের মতো অন্ধকার ভাবা ঘরটিতে চারকোণা একটি টেবিল আছে। টেবিলের ওপাশে একটি চেয়ার। চেয়ারে বসে আছে সম্পূর্ণ রহস্যময় এক লোক, যার মুখটি কালো মাঙ্কি ক্যাপে লুকোনো। পড়ণের পোশাক আশাক কেমন অদ্ভুত। প্রথমদফায় দেখলে মনে হবে ভিনদেশী কোনো টুরিষ্ট। কিন্তু লোকটি যে দলীয় সর্দার গোছের গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তি হবে তা ওই শীতল চক্ষুর নিষ্পলক চাহনি দেখেই অনুমান করা যাচ্ছে। ওরকম পলকহীন অস্বাভাবিক চাহনি দীপ এর আগে কখনোই দেখেনি।
- আমাকে আঁটকে রেখে লাভ নেই। আমি কিছুতেই তোমাদের কাজে সাহায্য করতে যাব না।
নিজের অবিচল ভঙ্গিটুকু বজায় রেখে জানালো দীপ। চাপা হাসির স্ফুরণে কালো টুপিতে থাকা মুখ হো হো শব্দে পুরো ঘর কাঁপিয়ে হাসতে থাকল। যেন এর চাইতে চূড়ান্ত রসিকতা আর হয় না। টেবিলের ওপর তবলা বাজানোর মতো ডানহাতের আঙুল বাজাতে থাকলে হাসিমাখা কণ্ঠে বলল,
- তোমাদের ওই এক সমস্যা। সোজা কথা বললে কানে ঢোকে না। দ্যাখো অফিসার, তোমাদের লোক কিন্তু আমাদের দলের দুজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে খু.. ন করে ফেলেছে। সঙ্গে যেই খাবারের পোটলা চুরি করে নিয়েছে ওটা নিয়ে আমাদের কোনো আক্ষেপ নেই। আক্ষেপটা এখন তোমাদের হবে। হাড়ে হাড়ে। আমাদের কাজে বাঁধা দেওয়ার জন্য খুব বড়ো ধরণের হিসাব তোমাদের চুকাতে হবে। বুঝেছ তো ফকিরের দল?
দীপ প্রচণ্ড রাগে দাঁত কটমট করতে চাইলেও শারীরিক শক্তি তাকে সহায়তা করল না। বরং নেতিয়ে যাওয়া বেলুনের মতো চুপসে শুয়ে রইল সে। ক্ষোভিত দীপ্ত চাহনি ছুঁড়ে তবু পালটা কথাটার জবাব একটা ছুঁড়েই বলল,
- আমাদের দেশে ঢুকে, আমাদের লোককে মে.. রে ফেলে, আমাদেরকে তোরা হিসাব শেখাবি? ওরে জা.. লি.. মের দল, ফকির কাদের বলিস? বাংলাদেশের প্রত্যেকটা ডিফেন্স টিম কী তোদের ছে ড়ে দিবে রে? আমি তোদের কোনো কাজেই সাহায্য করব না। তুই আমাকে মে.. রে কু.. টে মাটিতে পুঁ.. তে ফ্যাল, তোদের মতো শূ.... বাচ্চাকে আমি ভয় পাই না। বাংলার মাটিতে দাপট দেখাবি, দেখা। আসল দাপট শুরু হলে তোদের কলজে খু ব লে টে.. নে ছিঁ.. ড়ে আনবে নে দেখিস। থু!
মুখভর্তি করা বিশ্রী থুথুটা সর্বশক্তি দিয়ে নিক্ষেপ করল সরফরাজ দীপ। মুখ ঢাকা লোকটার পায়ের কাছে থুথুটা ছিঁটকে গেলেও পাথরের মতো নির্বিকার রইল দলীয় সর্দার। তিনি জ্বলন্ত দুটি অগ্নিকুণ্ডের মতো দৃষ্টি তাক করে দেখছেন এই উত্তপ্ত দামাল টগবগ করা নিরস্ত্র দুর্বল যুবককে। এক্ষুণি চাইলে এক কোপে মু.. ণ্ডুটা ঘাড় থেকে আলাদা করে দিতে পারেন এর। কিন্তু এই দুঃসাহসী স্পর্ধা দেখানো যুবকের চোখে মৃত্যুভয় বলতে কোনো ভয় নেই। নির্ভয়ী চোখ। সে বুক চিতানো বাঘা বাঘা সৈন্যের মতো মৃত্যুর আলিঙ্গনকে পরম উচ্ছ্বাসে মেনে নিতে সম্ভ্রম প্রস্তুত। তবু দুষ্কৃতিকারীদের কাছে নিজের দায়িত্ব, কর্মজীবনের নৈতিক শিক্ষা, আপামর দেশের মানুষকে নির্মমতার কাছে তুলে দেবে না দীপ। দীপ খরখরে গলাতে ভীষণ কষ্ট পেয়েই চিৎকার ছেড়ে বলল,
- মার আমাকে! তোদের মতো শূ... দলকে আমি কিছুই বলব না। তোরা আমার গা থেকে চামড়া খুলে আনলেও এই মুখ আমি খুলবই না! লিল্লাহি তাকবির আল্লাহু আকবর!
বজ্রস্বরে গমগম করে না উঠলেও দীপের ওইটুকু তাকবির এহলানে মুখ ঢাকা লোকটির দৃষ্টি কেমন কেঁপে উঠে। অতলস্পর্শী স্পর্ধা দেখে আশ্চর্য হয়! দীপ মরমে মরমে অসহ্য মারণ পীড়া মুখ বুজে গিলে নিলেও মরহুম নানাকে স্মরণ করল খুব। বাংলার মাটিকে স্বাধীন করতে বীর মুক্তিযোদ্ধা নানা একদিন ভরদুপুরে ভাতঘুমের সময় অমায়িক হাসিতে শিখিয়েছিলেন— “নানু, বিপদের সময় তুমি আল্লাহরে ডাকবা। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নাই। বুকের ভিতরে ভয়ডর ঢুকলে চিৎকার দিয়া তাকবীর বলবা। ভয় গায়েব হয়ে যাবে। ভয় পেলে একজনরে ভয় পাবা। মানুষরে কক্ষনো ভয় পাবা না। মনে রাখবা সবসময়। মনে রাখবা সরফরাজ ভাই।” দীপ জানে নানার মতো দেশপ্রেমিক ব্যক্তি কখনো তার শেখানো বুলিতে ভুল হবে না। বুকের ভেতরে ভয়ের সমস্ত বুঁদ বুঁদ অজানা ফুঁৎকারে বাষ্প হয়ে গেছে। মন ভীষণ শান্ত। শঙ্কাহীন।
••••••••••••••
আফজাল কাদিরের নাম একাত্তরের খাতায় না উঠলেও এ নিয়ে আফসোস কাজ করে না। বরং হৃদয় জুড়ে শীতলতার ছোঁয়া মনকে করে দেয় শান্ত। মা সমতুল্য দেশের জন্য রাইফেল হাতে লড়াই করেছেন তিনি। তার জন্য কেন তাঁকে সার্টিফিকেটে সীল বসানো এক টুকরো কাগজ পেতে হবে? ওই এক টুকরো কাগজ হৃদয়ের ভেতরে অফুরন্ত মাতৃপ্রেমটা বহিঃপ্রকাশ করতে পারবে? মাকে বাঁচাতে বুকের সন্তান কখনো মায়ের কাছে সার্টিফিকেট চায়? চায় না। তিনিও চাননি। তার চোখের সামনে কতগুলো বুভুক্ষু প্রাণী নিজেকে “মুক্তিযোদ্ধা” বলে আখ্যা দিয়ে নানারকম ভাতা, সুযোগ-সুবিধা এবং সরকারি মহলে সম্মানও ভোগ করে গেল। অথচ আদৌ কী তারা জানে রা..ই.. ফেল কীভাবে চালাতে হয়? কাঁধের কোন জায়গাটায় রা.. ই.. ফেল ঠেকালে বু.. লে.. ট ছোঁড়ার দুর্দম্য ধাক্কাটা আঘাত করে যায়? মুক্তিযোদ্ধার নাতী হয়েও সেটুকু সুযোগ-সুবিধা কখনো ভোগ করতে যায়নি সাঈদ। বরং মাঝে মাঝে এই বীর সাহসী বুড়ো লোকটার অতীত নিয়ে ভাবলে গায়ের রক্ত গরম হয়। মনে দোর্দণ্ড আত্মবিশ্বাস জেগে উঠে। আজ হয়ত নিজেকে এই পর্যায়ে আনার ক্ষেত্রে নানা আফজাল কাদিরের অনস্বীকার্য ভূমিকা বেশি। বুক ভেদ করা অসহন এক হতোশ্বাস শব্দ করে ছেড়ে সেলফোনটার দিকে নজর ফেলল। কর্ণেল সোয়াদ দুপুর দুটোর দিকে তিনটে কল করেছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের জন্য কলটি রিসিভ করতে পারেনি। কলব্যাক করার ইচ্ছেটুকু না হলেও কর্মজীবনের একনিষ্ঠ নৈতিকতা থেকে কল ব্যাক করল সাঈদ। ওপাশ থেকে কর্ণেল মেজাজী কণ্ঠস্বর ভেসে এলো,
- হ্যালো।
- দুটো সাত মিনিটে কল দিয়েছিলেন। হেডকোয়ার্টারে একটা মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিলাম। রিসিভ করাটা সম্ভব হয়নি। কারণ বলুন।
- তোমার স্ত্রী বাড়ির বাইরে দুজন সিভিল গার্ডকে দেখে ফেলেছে। আজ দুপুরে এসে ব্যাপারটা নিয়ে জিজ্ঞেস করে গেল। আমি তেমন কিছু বলতে পারিনি।
- ভালো করেছেন। এই মূহুর্তে কিছু জানানো উনার জন্য নেসেসারি নয়। আই থিংক শী শ্যূড স্টে আউট অফ দিস।
- আই অ্যাগ্রি উইদ ইয়্যুর কনসার্ন। মেইক শিয়োর শী ডোন্ট গেট ইয়্যু রং। ফিহা তোমাকে তোমার কর্মকাণ্ডের জন্য ঘৃণার নজরে দেখলে তুমি সহজে ওর কাছে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবে না। এ কথা মনে রেখো।
- আপনি রওনা দিচ্ছেন কখন?
- টুমরো অ্যাট টেন।
- ওকে। আই উইল সী ইয়্যু দ্যান।
- শোনো,
- বলুন।
- আমার মনে হয় তোমার কোথাও ঘুরতে যাওয়া উচিত। এভাবে মেয়েটাকে বাসাবন্দি রাখার মানে হয় না। বিয়ে করেছ, এখন দায়িত্ব সামলাও। অযথা বাড়ি বসে বিরক্ত হচ্ছে। আর দু সপ্তাহ পর তুমি এমনিতেই কাজে যাচ্ছ। আট মাস। এখনকার পর্যাপ্ত সময় নিজের স্ত্রীকে দেওয়া উচিত।
- সেটা নিয়ে ভেবে দেখেছি। হয়ত কিছুদিনের ভেতর এক্সিকিউট করব। আপনি শুধু এটা নিশ্চিত করুন অফসাইড থেকে কোনো ইনফরমেশন যেন উনার কানে না পৌঁছায়।
- তা আমি দেখে রাখব। তাহলে এখন কল রাখছি। আসছ কটায়?
- শার্প অ্যাট নাইন থার্টি।
- আচ্ছা। আসো।
- আল্লাহ হাফেজ।
কলটা কেটে দিতেই কপালে ধীরেধীরে কুন্ঞ্চন পরতে লাগল সাঈদের। থাইগ্লাসের ওপাশে নীল আকাশটা ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে ঝুপ করে সন্ধ্যে নামা অন্ধকারে নতজানু হচ্ছে। সে বুঝতে পারছে প্রচণ্ড কৌতুহলদীপ্ত স্ত্রীকে বেশিদিন বুঝ পড়িয়ে আড়াল রাখতে পারবে না। দূর দূর করে রাখার বাসনায় আরো তীব্রবেগে অগ্রসর হচ্ছে ওদিকে। ভয় হচ্ছে! ভীষণ ভয়! যদি হাতের মুঠো ফসকে কখনো ওই দুষ্টু চন্ঞ্চলটা হাতটা চলে যায়? যদি কখনো ঠোঁটদুটোর মিষ্টি হাসিটা ছুঁতে না পারে? কখনো যদি ঘেন্নার মতো . . না! এরকম কিছু চিন্তা করতেও তার মন বিষাক্ত হয়ে আসছে। সে যে ভীষণ আসক্ত হয়ে পরেছে ওর ওপর, ওর সুকোমল সত্তার ওপর, ওর প্রফুল্লে ভরা সরল চাহনিদুটোর ওপর . . পারবে না। সে কী করে নিজের অভ্যেস থেকে আলগা করবে? সম্ভব না। কোনো শর্তেই সম্ভব না এটা!
•••••••••••
মেঘে ছাওয়া কালো সম্মোহন আকাশপট। চাঁদবুড়ির আগমন নেই সেখানে। ধূসর বর্ণের টুকরো টুকরো মেঘ তুলতুলে তুলোর মতো উড়ে বেড়াচ্ছে। মুখ ফুটে ওঠা মিষ্টি হাসিতে ছাদের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আকাশ পানে মুগ্ধচোখে তাকাল। প্রফুল্ল ভরা চোখদুটিতে রাজ্যের আনন্দ মাখামাখি। রাতের দিকে এভাবে একা, নিঃসঙ্গ, দুরুদুরু বুকের কাঁপন নিয়ে কখনো ছাদে প্রবেশ করেনি। তবে আজ বড্ড ইচ্ছে জেগেছে প্রাণ খোলা আনন্দটুকু উজাড় করে নিজের মতো কিছুটা সময় উপভোগ করতে। বদমেজাজী, জাঁদরেলমুখো, অত্যধিক অনম্র সদাতেজি পুরুষটি এখনো ফেরেনি বাড়িতে। তবে তার অগোচরে টুপ করে পা টিপে টিপে চলে এসেছে তার একান্ত ছোট্ট চিলেকোঠায়। ছাদে সাদা রঙের একটি এনার্জী বাল্ব জ্বলছে। চিলেকোঠার দরজাটা ঘটাং ঘটাং শব্দ করে খুলে ফেলতেই মোবাইলের আলোটা জ্বেলে অন্ধকার ঘরটায় প্রবেশ করল। বুক ফুলিয়ে গভীর উচ্ছ্বাসে দম নিল ফিহা। এ ঘরের শান্ত বাতাসে সেই অন্তর্মুখো মানুষটার গায়ে জড়িয়ে থাকা একান্ত ঘ্রাণটুকু মেখে আছে। এই ঘ্রাণ তাঁর বুকের প্রশস্ততায় মুখ লুকোনো গভীর নিঃশ্বাসে অনুভব করা যায়। শক্ত শরীরটা দুহাতে আঁকড়ে ধরে খামচে রাখলে টের পাওয়া যায় নেশালু ওম। ফিহা ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে সেদিনের সেই টেবিলটার কাছে চেয়ার টেনে বসলো। খেয়াল রাখল যেন বেকায়দায় ব্যথাতুর পায়ে আঘাত না পায়। তীব্র বাতাসের ঝটকায় জানালার লাল টকটকে পর্দা টেবিলের বুকে আঁচল পেতে দিয়েছে। সেই আঁচলের ওপর স্ব দণ্ডায়মান মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে লম্বা একটি মোমদানি। মোমদানির চূড়োয় ছোট্ট ক্ষয়ে যাওয়া সাদা এক টুকরো মোমবাতির অস্তিত্ব। ফিহা সেটা দেখে চট করে ড্রয়ারের মধ্য থেকে ম্যাচ বাক্স নিয়ে মোমবাতিটা ধরিয়ে দিল। পুরো ঘর হলুদাভ আলোয় হেমন্ত রঙে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলে ভীষণ আনন্দ হলো মন। হঠাৎ লক্ষ করে দেখল মোমদানিটির কাছে কাঠের গোলমুখো একটি ফুলদানি রাখা। ভীষণ সুন্দর। ফুলদানিতে দখল করেছে দুটি ময়ূর পেখম। কী যে চমৎকার লাগছে দেখতে, ইশ! ফিহা তখনো জানতো ওর এই আনন্দটুকু ক্ষণিকের! টেবিল ছাওয়া ওই পর্দাটার নীচে যা রাখা আছে, তা দেখলে এক্ষুণি ঘোর বর্ষার মতো বীভৎস বিচিত্র অন্ধকার নামবে। ফিহা টেবিল লাগোয়া চৌকির ওপর কিছু নোটবুক দেখতে পেয়ে সেখান থেকে একটা নোটবুক বাঁহাত বাড়িয়ে নিতে গেল। কিন্তু হাতটা ওই নোটবুকের নাগাল পাবার আগেই টেবিল থেকে লাল পর্দা সরে উন্মুক্ত হয়। চট করে অস্থির অশান্ত চোখদুটি সেখানটায় পরলে সহসা ওর বাঁহাত তখনই স্থির হয়ে যায়। নোটবুকের খেয়ালটা মাথা থেকে উবে সেখানে আঁচড় কাটে টেবিলের ওপর দৃশ্যটুকু। ফুলের মতো নিষ্পাপ হাসিটা কমতে কমতে একপর্যায়ে হয়ে যায় মলিন। একটি অ্যালবাম সাইজের ফটো এবং ফটোতে এক যুগলবন্দির স্থিরদৃশ্য। যেখানে খয়েরি বর্ণ ঠোঁটে আঙুল রেখে চুপ করিয়ে দিচ্ছে এক রমণী। চোখে শীতল মাদকতার বিচ্ছুরণ। ছোট্ট টেবিলের দুপ্রান্তে বসা দুটি মানুষ। বাঁয়ে পুরুষ্টু দেহধারী উগ্র ধারালো হাসিবিবর্জিত শক্ত মুখ, ডানে তার মুখোমুখি অবতারণায় সেই একই কঠোরতার ছাপ বসানো নারী চেহারা। যেন কেউ কারো চেয়ে গুণে, কৌশলে, যোগ্যতায় কিন্ঞ্চিৎ সম কম না। দুর্দম্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার চাহনিতে দুজনের মাঝখানে রাখা ছোট্ট একটি আংটির বাক্স। সেখানে চিকচিক করে হীরার জানান দিচ্ছে বাগদানের মতো আংটি।
গলার কাছে কাঁটা আঁটকানোর মত রুদ্ধ শ্বাসটা যত অল্প অল্প করে ছাড়ছে ফিহা, ততই স্থিরচিত্রে বিদ্ধ করা দৃষ্টিদুটো অস্বচ্ছ, ঘোলা, ঝাপসা হয়ে আসছে ওর। থরথরিয়ে কাঁপছে পেলব শুকনো ঠোঁট দুটো।
.
.
.
সমাপ্ত..............................................................