রাতের আঁধারে ঘটে খেল নৃশংসতম একটি ঘটনা। কেউ জানলোও না। বুঝলও না। ঢাকার ওয়ারি এলাকায় নিঃশব্দে খু° ন করে ফেলা হয়েছে একটি প্রাপ্তবয়স্ক যুবককে। যুবকটির বয়স বোধহয় ছাব্বিশের কাছাকাছি। পড়ণে কালো শার্ট প্যান্ট এবং উল্লেখযোগ্য বিষয় প্যান্টের কাছে জিপার খোলা। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতেই যে যুবকটি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিল, এটিই ছিল তার জন্য মৃ° ত্যু নামক পরিণতি। অদূরে দাঁড়ানো গাঢ় নীল গাড়িটি দুমাদুম বিপদের গন্ধ পেয়ে সেখান থেকে সটকে পরেছে। গাড়িটা বোধহয় জানতো আজ ধরা পরলে কোথায় ওদের চামড়া ছাড়ানো হবে। তবে মৃতদেহের কাছে তখনো পরে আছে পার্সেল। খাবারের পার্সেল। রেস্তোরাঁর লোগো বসানো ওতে। ঘণ্টায় চল্লিশ কিলোমিটার বেগে ছুটতে থাকা গাড়িটি নিরাপত্তার জন্য ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে না গিয়ে সরাসরি ধরল টঙ্গীর পথ। ড্রাইভার লোকটি বারবার রিয়ার মিররে দেখছে কেউ ওদের ফলো করছে কিনা। কেউ নেই। ফাঁকা। ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও গোসলের মতো ঘেমে উঠেছে শরীরের প্রতিটি কোণা। ঢোক গিলে হাপিত্যেশ সুরে দম ছাড়তে ছাড়তে লোকটি বলল,
- আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে চিফ। ওরা কী করে জানল আজ আপনি হাইড আউট-৩ ছেড়ে ওয়ারীতে ভিজিট করবেন? আমাদের মধ্যে ঘাপলা লুকিয়ে আছে চিফ! আমার মনে হয় এবার একটা সুখবর দেওয়া দরকার। ওদের বাড়টা খুব বেড়েছে।
চিফ সম্বোধন করা লোকটির মুখ পাথরের মতো নিষ্প্রাণ। তরমুজের বিচির মতো ছোটো ছোটো দাঁতগুলো কালো কুৎসিত ঠোঁটের নীচে ঢেকে আছে। ডান গালে তার বীভৎস কাটা দাগ। সেই বীভৎস দাগের উপর আঙুল বুলিয়ে চিফ লোকটা কঠোর স্বরে জানালো,
- লোকেশন চেন্ঞ্জ করে হাইড আউট-১ এর দিকে গাড়ি ঘুরাও। হাইড আউট-৩ বন্ধ। সমস্ত লোককে জানিয়ে দাও ওরা যেন জায়গা পরিবর্তন করে ফেলে। হাইড আউট-৪ এর চিশতি হারুনকে বলো যে কজন জীবিত আছে, সবগুলোকে জ বা ই করে দিক। লা! শ গুলো ফেরি করে জায়গামতো ফেলে দিয়ে আসুক। ওরা আমাদের কাজে আঙুল ঢুকিয়ে ভাল করেনি পাশা। বড়ো বাড় বেড়েছে এদের। থামানো দরকার।
পাশা লোকটা স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে ডানে মোড় নিতে নিতে সম্মতির সুরে বলল,
- জো হুকুম চিফ। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। আপনাকে আমি নিরাপদে পৌঁছে দিয়ে চিশতি হারুনের সাথে যোগাযোগ করার ব্যবস্থা করছি। একটা কথাও মাটিতে পরবে না চিফ। সিকান্দার পাশা যতক্ষণ দম নিচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো বাঘের বা! চ্চা কলজে নিয়ে ফিরতে পারবে না। খোদা কি কসম!
পাশে বসা চিফ লোকটি সুপ্রসন্ন হয়ে দুবার মাথা ঝাঁকাল পাশার প্রতি। সিকান্দার পাশা সবচেয়ে ভয়ংকরতম নিষ্ঠুর এজেন্টদের একজন। মানুষ শি কা রে সিকান্দার পাশার মতো নির্মম অমানবিক “এজেন্ট” হিসেবে আর জুড়ি নেই। তাকে সহজে মাঠেও নামায় না চিফ। তিনি ইতোমধ্যে বুঝে গিয়েছেন তাদের পেছনে বোধহয় খুব শীঘ্রই বাংলাদেশী হোমড়া চোমড়া লাগানো হবে। এই বাংলাদেশ নামক এক টুকরো ছা পোষা ভূখণ্ড কী করে যে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনিকে রুখে দিল, তা আজও তিনি বুঝে উঠতে পারেন না। শরীরে নেই মাংস, পেটে পরে না ভাত, পূর্বপুরুষ শা! লা রা পা চাটা গোলামি করে বেড়াতো, আর তারা কিনা ছিনিয়ে আনল স্বাধীনতা! থুঁ করে একদলা নোংরা থুথু জানালার বাইরে ফেলে চিফ।
আজন্ম এ দেশের প্রতি ক্ষো ভ বিরাজ করবে তার। তিনি ছা ড় খা র করে দিয়ে যাবেন এদেশের ভূখণ্ড। প্রতিটা নিষ্পাপ জনগণ আবারও নৃ শং স ত ম কা ল রা ত দেখবে। ২৫ শে মার্চের মতো হাজারে হাজারে লক্ষ লক্ষ মানুষের র ক্তে র ব ন্যা ভা সা বে ন তিনি। দেখা যাক প্রতি!রক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের কোন চুলটা বাঁকা করতে পারে। দেখাই যাক!
••••••••••••
টার্গেট পয়েন্ট থেকে চোখ সরিয়ে আরো কিছুক্ষণ আশপাশটা পরোখ করল ষণ্ডা দেহী। চোখে বাইনোকুলার ধরা। মাথায় কালো সানক্যাপ। বাঁ হাতের কবজিতে সবুজ বাতিতে জ্বলজ্বল করছে সময়ের ডিজিট। রাত সোয়া বারো। মাথার উপর কালো আকাশে নক্ষত্রের পিদিম এখনো জ্বলে উঠেনি। ভারি ওভারকোট পড়া পোশাকের নীচে শীতের মুহুর্মুহু ছোবল বক্ষতালু পর্যন্ত শিরশিরিয়ে দিচ্ছে। ঢাকার বুকে চট্টগ্রাম, সিলেটের মতো কঠিন শীত পড়ল কবে থেকে? চোখ থেকে বাইনোকুলার সরিয়ে ঠিক পাঁচমিনিট পর আদেশ দিল ডেরেক ফার্নান্দেজ,
- হারিয়াপ টিম! পুরো রাস্তায় একটা কুকুর পর্যন্ত নেই। আমরা আমাদের কাজ শুরু করে দিই। এটাই সময়। লেটস গো।
সমস্বরে চারটি কণ্ঠ পুরোদস্তুর মিলিটারি কায়দাবাজের মতো চাপা হুংকার ছুঁড়ল,
- ইয়েস স্যার!
ডেরেক ফার্নান্দেজ বাইনোকুলারটা নিজের পিঠে ঝুলানো ব্যাকপ্যাকে ঢুকিয়ে বীরদর্পে ঝপাস করে লাফ দিল নীচে। সে পরিত্যক্ত একটা দোতলা ভবনের টাংকির পাশে কভার নিয়েছিল। সঙ্গে দলের আরো চারজন ব্যক্তি। সবাই একে একে জায়গা থেকে নেমে ডেরেকের পথ ধরে রাস্তার সেই পার্সেলটার কাছে চলে এল। তার একটু দূরেই র ক্তে র ব ন্যা র ভেতর শুয়ে আছে যুবকটি। দুচোখ ভরা আতঙ্ক। বিস্ফোরিত। ঠোঁটের ডানকোণ দিয়ে লালা মিশ্রিত র ক্ত গড়িয়ে পরছে। প্রাকৃতিক কাজ সমাপন করতে পারেনি। বি শ্রী কদাকার দৃশ্য। তাকানো যায় না।
ডেরেক সেখান থেকে চোখ সরিয়ে পার্সেলটা চুপচাপ হাতে তুলে নেয়। যদি ডেরেক ভুল না হয়, তবে খাবারের এই পার্সেলের মধ্যেই কোনো গোপন ক্লু রয়েছে। যা সম্ভবত এই ছোকরা সুনশান জায়গা বুঝে পাচার করতে এসেছিল। কিন্তু পারেনি। ব দ মা শ ছোকরা এটা বুঝেনি পু লি শে র চোখে ধূলো দেওয়া সহজ হলেও পু লি শে র বাপকে ধূলো দেওয়া অতো চাট্টিখানি কথা না। পার্সেলটা ব্যাকপ্যাকের মধ্যে ঢুকিয়ে বাকিদের উদ্দেশ্যে বলল ডেরেক,
- এটাকে এমন ভাবে সাফ করতে দিতে হবে যেন কিচ্ছু ঘটেনি। ভোরের আলো ফুটার আগে আগেই সবকিছু ক্লিয়ার। পুরো জায়গা ফকফকা না করলে সিভিলিয়ান সোসাইটি সামলানো যাবে না। কাজ শুরু করো জলদি।
আদেশসূচকে বলা কথাটি “রজার স্যার” বলে প্রত্যুত্তর করল চার কর্মকর্তা। দ্রুতগতিতে কাজ শুরু করতেই ডেরেক এবার ওভারকোটের পকেটে হাত ঢুকাল। এখনো কোনো কল আসেনি ফোনে। না জানি স্যার ওদিকটা সামলাতে পেরেছে কিনা! একবার কী রিষ্ক নিয়ে একটা ফোন দিয়ে দেখবে? জিজ্ঞেস করবে ওদের সাহায্য লাগবে কিনা? ডেরেক জানে একা হাতে সবকিছু সামাল দেওয়ার মতো দীর্ঘদিনের ট্রেনিং স্যারের আছে। আছে বলেই তার মতো ব্যক্তির এমন উপর্যুপরি কদর। তিনি কোনোভাবেই টিমের উপর দিয়ে ঝড় ঝঞ্ঝা বইতে দিবেন না। হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন বলে উঠল,
- ক্যাপ্টেন? সাঈদ স্যার কী একটু বেশি ঝুঁকি নিয়ে ফেলছে না? যদি ওই দ্বিতীয় লোকটার কাছে এ ক্স প্লো সি ভ কিছু থাকে, তাহলে তো ভয়ানক অবস্থা হবে ক্যাপ্টেন। এদের তো কোনো বিশ্বাস নেই। এরা জা নো য়া রে র মতো বেপরোয়া। স্যার পুরো টিমটাই আমাদের সাথে পাঠিয়ে দিল, আর ওই এলাকায় একা একা উনি টেক ওভার করছে। আমাদের কী একবার যাওয়া উচিত?
ডেরেক ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মুখটা পিছু ঘুরিয়ে বলল,
- নো অফিসার। ফরোয়ার্ড করার সুযোগ নেই। সাঈদ স্যার অর্ডার না দিলে আমি কিছুই করতে পারব না। উনি যদি মনে করেন, আমাদের এখানে থাকাটা বেশি জরুরি, তাহলে আমরা তার ডিসিশনের অ্যাগেন্সটে যেতে পারব না। কমান্ড ফলো করতেই হবে। অপেক্ষা করা যাক। চলো কাজ শেষ করি।
- জ্বী স্যার।
ডেরেক ফার্নান্দেজ ভালো করেই জানে তাদের স্যার মিঠা পানির মাছ না। বিপদের মুখে পরলে কীভাবে শত্রুর সামনে থেকে বেরিয়ে আসা যায় এটা তিনি ভালো করেই রপ্ত করেছেন। এমন হাজারো বিপদ দু কাঁধে সামাল দিয়ে এসেছেন এতদূর। কোথায় 'ব' কে 'র' করতে হয়, কোথায় করতে হয় কাজ হাসিল, কোথায় ঘোল খাওয়ালে সর্বোচ্চ ক্ষতিটুকু করে আসা সম্ভব— এটা তার চাইতে বোধহয় ভালো কেউ জানেও না। এ মূহুর্তে যথাযথ তার অর্ডার ফলো করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো উপায় নেই। ডেরেক মুখ ঘুরিয়ে দ্রুত কাজ সমাধা করতে এগিয়ে গেল। চারজনের সাথে হাত লাগাল সে ফটাফট।
••••••••••••••
ওয়ারী থেকে আসার পর কেমন একটা ভয় ভয় লাগছে কিবরিয়ার। এই ভয় ব্যাখ্যা করার মতো নয়। বারবার মনে হচ্ছে কে যেন আছে পেছনে। কিন্তু মুখ ঘুরালে কাউকে দেখতে পাচ্ছে না সে। এমন অদ্ভুত আতঙ্ক ভর করল কেন? রাস্তায় তো কেউ নেই! হাঁটতে হাঁটতে সেই রেস্তোরাঁ থেকে অনেকদূর সে চলে এসেছে। তার সাথে থাকা মোবাইল ফোনটার চার্জ পুরোপুরি শেষ। বন্ধ। মেজাজটা অবশ্য এ নিয়ে খারাপ লাগছে। একটা জরুরি কল করা প্রয়োজন ছিল। মালটা ঠিকঠাক মতো পৌঁছাল কিনা এখনো জানতে পারেনি। কিন্তু অবচেতন মন আশপাশ থেকে কীসের যেন কু ডাক শুনতে পাচ্ছে। চট করে দুহাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে দ্রুত ফাঁকা রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগল। ল্যাম্পপোস্টের আলোটা বিশ হাত পিছনে ফেলে আসতেই আবছা ঘন অন্ধকার মতো রাস্তাটায় উঠে গেল কিবরিয়া।
এই তো, দশ মিনিটের মতো হাঁটলেই তার থামানো বাইকটা সে পাবে সামনে। কিন্তু হঠাৎ মনে হল, পিছনে খুব কাছাকাছি এসে কে যেন হাঁটছে। হ্যাঁ সত্যিই হাঁটছে! ভারিক্কি পদচলন। বেশ মেপে মেপে কদম ফেলা। চট করে পিছু ফিরে চাইল কিবরিয়া। সাথে সাথে ভয়াল স্বরে আঁতকে উঠতেই কয়েক পা পিছিয়ে গেল সে! কণ্ঠরোধ হয়ে সমস্ত হাত পা শিরশিরিয়ে উঠেছে! নিঃশ্বাসের কুণ্ডলি তার ফুসফুস থেকে বেরোতে পারছে না। কিবরিয়া কোনোমতে থতমত সুরে বলল,
- সা সা সাঈ. . .
- সাঈদ। জুনায়েদ সাঈদ। তোমার আতঙ্ক। চিনতে পেরেছ?
দুচোখের কোটর থেকে যেন ঠিকরে চক্ষুজোড়া বেরিয়ে আসছে। রাতের অন্ধকারে ভরাট কণ্ঠটুকু কেমন ছমছমে ও ভয়ংকর শোনাল, তা ভাষায় বলা দুষ্কর। এর চাইতে নিষ্ঠুরতম শীতল কণ্ঠ কিবরিয়া তার সাতাশ বছরের জীবনে কখনো শোনেনি। যেন ওইটুকু নামের পেছনে লুকোনো নির্মম পরিচয়টা বুঝিয়ে দিচ্ছে এই লোক। ব্যাপারটা টের পেতেই কিবরিয়া তৎক্ষণাৎ আরো দু কদম পিছিয়ে যেয়ে গলার ভারসাম্য ধরে বলল,
- আমার পিছু নেওয়া হচ্ছে কেন?
হুঁ হুঁ করে শীতালু বাতাস এসে ছুঁয়ে দিয়ে যায় সাঈদের রেশম পাতলা চুল। কপালের উপর থোকা থোকা চুলের প্রান্ত এসে নিষ্পলক কালো চোখদুটো আরো বেশি ভয়ানক দেখায়। সে যে অন্ধকারকে পাল্লা দিয়ে কালো শার্টের স্লিভদুটো খুব আস্তে আস্তে কনুইয়ের কাছে গুটাতে শুরু করেছে, সেটা খেয়াল করেনি কিবরিয়া। পুরোদস্তুর শান্ত হয়ে স্বাভাবিক সুরে বলল সাঈদ,
- কাজের কথায় আসি? আমার ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে অভিনয় করতে পছন্দ নয়। যা যা শুনলে আমার সময় বেঁচে যাবে, সেটা আমাকে জানিয়ে দাও কিবরিয়া বিল্লাল। তোমার মতো “এসপিওনাজ” লাইনে আসা নতুন নতুন ছোকরার সাথে “ক্যালিবার” দিয়ে চলে না। বলো। সময় নষ্ট কোরো না। আমি তাড়াতে আছি।
কিবরিয়া দুকানে যে বিবরণ শুনেছিল, সেটা মনে হচ্ছে সেন্ট পার্শেন্ট ভুল। সামনে দাঁড়ানো ১৮৪ সেন্টিমিটার দীর্ঘদেহী এই লোক যদি সাঈদ হয়, তার তো চেহারা হওয়ার কথা ডাকাতের মতো। মুখে শত শত দাগ, ঠোঁটদুটো কালো, শরীর হবে দানোর মতো। কিন্তু একে তো সামনাসামনি দেখলে মেয়েলোকের নজরই খারাপ হয়ে যাবে। এ শা লা এমন গ্রীক মূর্তিদের মতো সুদর্শন কেন? বাপ মা কী বুঝে একে অমানুষের লাইনে পাঠাল? কিবরিয়া অহেতুক চিন্তাভাবনার ভেতরেই সাবধানে কোমরে গুঁজে রাখা ঠাণ্ডা জিনিসটায় হাত দিয়ে রেখেছে। গলাটা ভিজিয়ে সাফ সুতরো কণ্ঠে বলল,
- আমার কাছে কিছুই জানানোর নাই ভায়া। ভুল জায়গায় মনে হয় টুক্কা দিয়া ফেলছেন। যান গা। আপনি কে চিনি না। আমাকেও আপনি চিনেন না। হইছে নি হিসাব? ভাগেন।
চটাশ করে এক চ ড় পড়ল ওর মুখের ওপর। বেকায়দায় পরে কিবরিয়া তখনই দু পা পিছিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু পারল না। তার কলারটা বজ্রআটুনির মতো কঠোর থাবায় মুচড়ে একেবারে কাছে টেনে আনল সাঈদ। নিষ্পলক চোখে কিছু বলার আগেই অনুভব করল তার বাঁ বুকের উপর ঠাণ্ডা কিছু ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। একপলক চোখদুটো নত করে দেখল বস্তুটা কো...ল্ট রি ভ ল বার। সম্ভবত লোডেড। চড় খেয়ে ঠোঁটের একপাশ কেটে রক্ত ঝরলেও শয়তানি হাসি দিচ্ছে ব দ মা শটা। অনবরত ভ্রুঁ নাচাতে থাকলে সাঈদ প্রচণ্ড রাগটা সন্তপর্ণে চেপে নিয়ে বলল,
- তোমাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই বিল্লাল। কথা শোনো। রি ভ ল বার নামাও। এটা ভালো করে জানো, রি ভ ল বার সরানো আমার জন্য কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। আমি কে, কি, কোথাকার মানুষ— এটা মনে হয় না তোমার অজানা আছে।
ভীষণ কুৎসিত একটা হাসি দিয়ে চাপা ইঙ্গিতে চোপ টিপ মেরে বলল কিবরিয়া,
- একটু আগে এটাও খোঁজ পেয়েছি আপনি বিবাহিত। এতোদিন একা একা থাকতেন। বাড়ির বাইরে হুট করে একপত্তন আর্মি গার্ড লাগাইছেন। কেন লাগাইছেন এই খবর অবশ্য জানি না। শুনলাম আপনার কর্ণেল বাপ ছুটি কাটাতে বাড়ি আসছে।
কথার ফাঁকে ফাঁকে কিবরিয়া বেশ চতুর চালাকি করে যাচ্ছে। সাঈদের মনোযোগ অন্যদিকে ভ্রষ্ট করে সে ট্রিগারের ওখানে তর্জনী টিপে দিতে উদ্যত! যেই তর্জনীটা ট্রিগারের উপর জোরে চাপ দিতে নিবে, তখনই সাঈদ সজোড়ে একটা ধাক্কা দিয়ে আকাশ বরাবর রি ভ লবারটা তাক করে দিল। অন্ধকার ফুঁড়ে ফায়ার করা বুলেটটা সশব্দে বেরিয়ে যেতেই খানখান হল নীরবতা! গাছের ডালে ডালে থাকা ঘুমন্ত পাখিরা ভয়ার্ত স্বরে হুল্লোড় জুড়ে দিয়েছে। এই ফাঁকে কিবরিয়ার বু ক বরাবর ধারাল ছু রি টা এক কো পে পুরোটা ঢুকিয়ে দিল সাঈদ। একটুও কাঁপলো না তার পেশাসুলভ হাত। কোত্ করে একটা আর্তনাদ ফুটে উঠতেই বিস্মিত কিবরিয়া আশ্চর্য হয়ে গেছে। তার পকেট থেকে কখন ছুরিটা বের করে নিল? তার ছু রি দিয়ে তাকেই খু ন? তার হিপ পকেটে থাকা ছোট্ট মাইক্রো চিপটাও কী সঙ্গে নিয়ে যাবে? কিবরিয়া এতসব কিছু ভাবতে ভাবতেই বু কে র বাঁদিকে বিঁধানো ছু রি টা উপর থেকে নীচে এক.টান মা র ল সাঈদ! টাটকা মাংস কাটার মতো ফ্যাচ্ করে মৃদু একটা শব্দ হয়ে ফুটে উঠল।
•••••••••••••
তাপমাত্রা আরো এক ডিগ্রী বিয়োগ হয়ে ১৯° সেলসিয়াস এখন চলছে। ঘড়ির কাটায় জানান দিচ্ছে রাত দুটো। গাড়িটা গ্যারেজের ভেতরে পার্ক করে সুন্দর মতো সেটা তালাবন্দী করে বিশেষ চাবিটা তার ওয়ালেটের খাপে ঢুকিয়ে রাখল। মুখ তুলে দেখল, দোতলার দিকে বারান্দার দরজাটা আধ ভেজানো দেখা যাচ্ছে। অন্ধকার। ঘুমিয়ে পরেছে বোধহয়। চুপচাপ বাড়ির ভেতরে ঢুকে রুমের দরজার কাছে আসতেই নিঃশব্দে গোল নবটা মোচড়ে দিল সাঈদ। রুমের দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই চরম বাকরুদ্ধ হয়ে থমকে দাঁড়াল সে! তৎক্ষণাৎ একপা-ও এগোতে পারল না ভেতরে। চোখের সামনে এ কী দেখছে সে? এ স্বপ্ন না সত্যি?
.
.
.
চলবে....................................................................