দ্য ভিলেজ রেস্টুরেন্টের সামনের রাস্তা ফাঁকা হয়ে পড়েছে। মাঝেমধ্যে একটা দুইটা যানবাহন হুঁশ করে চলে যাচ্ছে। কারো এতো সময় নেই রাস্তার কোনো দিকে নজর দেওয়ার। আশেপাশে কেবল ঝাপসা আলো জ্বলছে, দূরে কোথাও একলা কুকুরের ঘেউ ঘেউ শোনা যাচ্ছে। নিক আর অনন্যা গাড়ি থেকে নেমে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে তাকালো চারপাশে।
আরণ্যকের ফোনের শেষ লোকেশন এদিকেই কোথাও ছিল। অনেক খোঁজাখুঁজির পর নিক এক গলির রাস্তার ধারে, বন্ধ চায়ের দোকানের সামনে পড়ে থাকা একটা ফোন তুলে নিলো। স্ক্রিন ভেঙে টুকরো টুকরো অবস্থা। কিন্তু আরণ্যক এর অস্তিত্ব আশেপাশে কোথাও পাওয়া গেল না।
অনন্যা ফোনটা হাতে নিতেই বিরক্তিতে ফেটে পড়লো। মুখে বললো,
'আপনার বন্ধু একটা সাইকো।'
নিক ঠাণ্ডা চোখে ওর দিকে তাকালো,
'হোয়াট ডু ইউ মিন বাই ‘আমার বন্ধু’? কৌশিক কি করেছে?'
অনন্যা এক দমে বলে গেলো, 'উনিই এসব করেছে। হুট করে জুতো কেনার নাম করে কোথায় যেন চলে গেলেন, তারপর থেকে আর খোঁজ নেই! আর এখন এই কাণ্ড!'
নিক ঠোঁট চেপে কিছুক্ষণ চুপ রইলো, তারপর মাথা দুলিয়ে বললো, 'রিয়েলি? কৌশিক এসব করেছে? ও মেরেছে তোমার বন্ধুকে?'
নিক কিছুক্ষণ থেমে বললো,
'ও যদি করে থাকে, তাহলে খুব খারাপ করেছে। ওর বোঝা উচিত, কাউকে জোর করে ধরে রাখা যায় না।'
অনন্যা ভ্রু কুঁচকে তাকালো, 'মানে?'
নিক হালকা হাসলো, ছদ্ম বিদ্রুপ মাখা মুখ নিয়ে বললো,
'মানে খুব সিম্পল, অ্যানা। তুমি যদি কৌশিকের সাথে না থাকতে চাও, তাহলে সোজাসাপ্টা বলে দাও। শুধু শুধু ওকে পাগল বানিও না। একদিন তোমার জন্য যদি ওর মাথা পুরোপুরি খারাপ হয়ে যায়, তখন মনুষ্য জাতির উপর অভিশাপ নেমে আসবে!'
অনন্যার বিস্ময়ের মুখটা আরও শক্ত হয়ে গেলো, কিন্তু উত্তরে কিছু বলার আগেই তার ফোন কেঁপে উঠলো। দ্রুত পকেট থেকে বের করে দেখলো নোহারা কল দিয়েছে। দেরি না করে কলটা রিসিভ করলো সে। নোহারা অতিরিক্ত বাক্য ব্যয় না করে মূল কথায় চলে গেলো,
'দোস্ত, ভাইয়া হসপিটালে। আমি মেসেঞ্জার গ্রুপে খবর পেলাম। কেউ ভাইয়াকে মারধর করেছে। তারপর আশেপাশের লোকজন তাকে দেখতে পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়! আমি যাচ্ছি দেখতে, তুই গেলে আয়।'
অনন্যার নিঃশ্বাস কেঁপে উঠলো। 'লোকেশন পাঠা, আমিও আসছি।'
নোহারা আর কিছু না বলে ফোন রেখে দিলো। মুহূর্তের মধ্যে অনন্যার ফোনে একটা মেসেজ চলে এলো।নিক কিছু জিজ্ঞেস করলো না। গাড়ির দরজা খুলে বসে স্টিয়ারিংয়ে হাত রাখতেই অনন্যা দ্রুত পাশের সিটে উঠে পড়লো। গাড়ির ইঞ্জিন গর্জে উঠলো, আর মুহূর্তের মধ্যে রাস্তার ধুলো উড়িয়ে তারা ছুটে চললো মেসেজে দেওয়া হাসপাতালের দিকে।
হাসপাতালের সাদা দেয়াল আর ওষুধের গন্ধ অনন্যার মনে অজানা অস্থিরতা তৈরি করছিল। হাসপাতালে পৌঁছেই দ্রুত পায়ে আরণ্যকের কেবিনের দিকে এগিয়ে গেলো। কেবিনের সামনে মানুষে ঠাসা। কেউ নিচু গলায় কথা বলছে, কেউ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, আর কেউ সন্দেহের দৃষ্টি নিয়ে অনন্যার দিকে তাকাচ্ছে।
অনন্যা মুহূর্তেই সংযত হয়ে গেলো, ভেতরে যাওয়ার সাহস পেল না। নিক পিছু পিছু এসেছিল, কিন্তু এত ভিড় দেখে রিসেপশনের দিকে সরে গেলো। অনন্যা ইতস্তত করতে করতে দরজার পাশে দাঁড়াতেই সিনিয়র ব্যাচের কয়েকজন ফিসফিস করে বাজে মন্তব্য ছুঁড়ে দিতে লাগলো। স্পর্শ তো সবার থেকে এক কদম এগিয়ে। স্পর্শের একটা গ্রুপ আছে, ওরা সবাই মিলে সুযোগ পেয়েই অনন্যাকে খারাপ কথা শোনাতে লাগলো।
হঠাৎ নোহারা এসে অনন্যার পাশে দাঁড়ালো। তার কঠোর দৃষ্টি দেখে সবাই চুপ হয়ে গেলো। অনন্যার বন্ধু নোহারা যে মারামারিতে পটু এই বিষয়টা উপর নিচ ব্যাচের মধ্যে অনেকেই জানে।
নোহারা নিজের সাথে করে নার্সও এনেছে।
নার্সটি বললো, 'ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া এখানে এত ভিড় রাখা যাবে না। বেরিয়ে যান সবাই!'
ডাক্তারও এসে কঠোর কণ্ঠে জানিয়ে দিলেন, কেবিনের সামনে এত ভিড় রাখা যাবে না। ধীরে ধীরে সবাই ভিড় কমাতে লাগলো। দরজা খুলে আরণ্যককে একবার দেখে চলে যেতে থাকলো সবাই।
অনন্যা নোহারার পাশে অনেকক্ষণ নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলো। দরজার সামনে যেতে ইচ্ছে করছিল না। মনে হচ্ছে সব তার জন্যই হয়েছে। অনন্যা হঠাৎ বলে উঠলো, 'নোহা, আরণ্যক ভাইয়া কেমন আছে জানিস কিছু?
নোহারা একটু নরম হয়ে বললো, 'আমি ভেতরে যাইনি। শুনেছি, তেমন কিছু হয়নি। মুখে আর মাথায় আঘাত পেয়েছে, ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। চিন্তার কিছু নেই। তুই চাইলে একবার দেখা করে আসতে পারিস।'
অনন্যা নিঃশ্বাস ফেলল, বুকের ভেতর জমে থাকা অস্থিরতাটাকে সামলানোর চেষ্টা করছে। কিছুক্ষণ ইতস্তত করে কেবিনের দিকে এগিয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো সে।আরণ্যক চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ, মুখের আনাচেকানাচে ছোট ছোট কাটা দাগ, কোথাও সুতোর চিহ্নও দেখা যাচ্ছে। হাতের নিচের অংশ ব্যান্ডেজে ঢাকা, শুধু আঙুলগুলো উন্মুক্ত। ভাইয়ার নিঃসঙ্গ, ক্লান্ত মুখটা দেখে এক ধরনের অপরাধবোধে পেয়ে বসল অনন্যাকে।
নিঃশব্দে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অনন্যা কণ্ঠটা শক্ত করলো, তারপর আস্তে বললো, 'স্যরি!'
তারপর দ্রুত পেছন ফিরে চলে যেতে নিলো, কিন্তু ঠিক তখনই শুনতে পেলো একটা ক্ষীণ কণ্ঠস্বর,
'তোর অপেক্ষায়ই ছিলাম।'
অনন্যা সেকেন্ড পার হতেই পিছন ফিরলো। দেখলো, আরণ্যক কষ্ট করে ওঠার চেষ্টা করছে। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে ওর পিঠের পিছনে বালিশ রেখে তাকে উঠতে সাহায্য করলো। আরণ্যক ধীরে ধীরে সোজা হয়ে বসল। মুখে একটা ক্লান্ত হাসি ফুটে উঠলো। আরণ্যক ঠিক মতো বসে বললো,
'কি ডেঞ্জারাস মানুষকে বিয়ে করেছিস তুই। আই এম তো অবাক!'
অনন্যা হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
আরণ্যক বললো,
'সোফায় বস নাহলে টুল নিয়ে এখানে বস। আমার সামনে।'
অনন্যা নিশ্চুপ হয়ে বিছানার পাশে টুল টেনে বসলো। তারপর চোখ দুটো আরণ্যকের দিকে স্থির করে রাখলো। মেয়েটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে একটু আগে আরণ্যকের কথার বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চায় সে।
আরণ্যকের ঠোঁটের কোণে বিদ্রুপ মেশানো হাসি, চোখে অন্যরকম ঝিলিক দেখা যাচ্ছে। তারপর হঠাৎই সে শব্দ করে হেসে উঠলো।
'ভাই, বড় বাঁচা বেঁচে গেছি! আরেকটু হলেই আমার কলিজাডা টেনে ছিঁড়ে ফেলতো, তোর জামাই!'
অনন্যা কথাটা শুনে ধাক্কা খেলো। চোখ সরু করে প্রশ্ন করলো, 'ক...কী হয়েছিল তোমাদের মধ্যে?'
আরণ্যক হাসিটা চাপতে চেষ্টা করলো, কিন্তু ব্যর্থ হলো। কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, 'মারামারি, কথাবার্তা সবই হয়েছে! কিন্তু বলতেই হয়, হি ইজ আ জেম!'
তারপর একটু থেমে চোখ নাচিয়ে যোগ করলো, 'আমি সত্যিই খুশি হয়েছি যে ওই লোকটার সাথে তোর বিয়ে হয়েছে!'
অনন্যার কপালে গভীর ভাঁজ পড়লো,
'মানে কি বলতে চাইছো?'
আরণ্যক হাসলো। তার মন কয়েক ঘণ্টা পূর্বে পৌঁছে গেলো। অনন্যাও আরণ্যকের কথা অনুসারে কয়েক ঘণ্টা পূর্বের কাহিনী শুনতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
টিমটিমে আলোয় ঘেরা গলির বাল্বগুলো একে একে নিভে যাচ্ছিল। চারপাশে এক নিস্তব্ধতা। বন্ধ চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে বসে আরণ্যক অনন্যার সাথে কথা বলছিল, ঠিক তখনই একটা শক্ত ঘুষি তার গালে এসে পড়লো। হাত থেকে ছিটকে পড়লো ফোনটা। মাথায় ঝাঁকুনি খেলো সে, শরীর ভারসাম্য হারিয়ে রাস্তার ধুলোর উপর আছড়ে পড়লো। একটা লাথি তার পাঁজরে পড়লো, শরীরটা ব্যথায় মোচড় দিয়ে উঠলো আরণ্যকের।
তারপর সেকেন্ডের ব্যবধানে নিচে পড়ে থাকা আরণ্যকের ফোনটা লোকটার পায়ের নিচে পড়ে শেষ হলো। কিন্তু আক্রমণকারী আরণ্যককে দম নেয়ার সুযোগ দিলো না। একের পর এক ঘুষি বসিয়ে দিলো আরণ্যকের শরীরে। চোখের সামনে সবকিছু ঘোলা হয়ে আসছিল। মাথার ভেতর বাজছে শোঁ শোঁ শব্দ।
কিন্তু আরণ্যক হাল ছাড়ার পাত্র না! একটা সুযোগে শরীর ঘুরিয়ে প্রতিপক্ষের পেটে এক ঘুষি বসিয়ে দিলো। কিন্তু লোকটার শরীরে লাগলো না কোনো আঘাত! সাঁই করে পাশ কাটিয়ে গেলো সে, মুহূর্তেই ঘুরে এসে এক ধাক্কায় আরণ্যককে গলির দেয়ালে ঠেসে ধরলো। আরেকটা লাথি! আরণ্যক আবারো ছিটকে পড়লো মাটিতে। মুখের ভেতর লবণাক্ত রক্তের স্বাদ পেলো। আরণ্যক ফুঁপিয়ে শ্বাস নিলো, চোখ তুলে তাকালো। কালো মাস্কে ঢাকা মুখ, অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছে ঠান্ডা আকাশি চোখ। চুলগুলো উড়ছে, প্রতিটি নড়াচাড়ায় সুন্দর করে ভারসাম্য রেখে দুলছে।
লোকটা শান্ত হয়ে দাঁড়ালো, আরণ্যক রক্তাক্ত ঠোঁট কামড়ে ধরে বললো,
'হোয়াট? কি চাই? মারামারি কেনো করছেন?
লোকটা ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি ঝুলিয়ে চায়ের বেঞ্চিতে গা এলিয়ে বসল। এক পা আরেক পায়ের উপর তুলে আরাম করে বসলো, হাত দুটো বেঞ্চির পেছনে ঠেস দিয়ে চোখ আধখানা বুঁজে বললো,
'আমম... অন্যের স্ত্রীকে ছোঁয়ার আগে কয়েকবার ভাবা উচিত ছিল। ভাবোনি বলেই তার পরিণাম স্বচক্ষে দেখতে পেলে।'
আরণ্যক নিজের ঠোঁটের ফাঁকে রক্ত মুছতে মুছতে নিঃশ্বাস ফেললো। ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বললো,
'তো আপনিই সেই ব্যক্তি, যে আমার প্রেমিকাকে নিজের বউ বানিয়েছেন?'
লোকটা এক মুহূর্ত চুপ করে তাকিয়ে রইলো। তারপর ধীরস্থির ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকালো,
'নো! আমি বানাইনি। তোমার প্রেমিকা নিজেই আমার বউ হয়েছে। ওয়েট! 'বউ' শব্দটা বেশ দারুন, তাই না? আহ! ইয়েস... অনন্যা আমার বউ।'
আরণ্যক মুখ বিকৃত করে, তীব্র রাগে গর্জে উঠলো, 'কিন্তু জানেন, অনন্যা ভীতু মানুষ পছন্দ করে না? আপনি যেভাবে নিজের স্বভাবকে, নিজেকে এমনকি আপনাদের বিয়েকে লুকিয়ে রেখেছেন, সত্যিই আমি ভাবছি, অনন্যা আপনাকে কীভাবে এক্সেপ্ট করলো। আমি সাহস দেখায়নি বলে আমাকে কতো কথা শুনিয়েছে, জানেন?'
লোকটা ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি ঝুলিয়ে গালে হাত রাখলো।
'আই ডোন্ট কেয়ার!' তার কণ্ঠে নির্লিপ্ততা।
'হ্যাঁ, অনন্যা ভীতু মানুষ পছন্দ করে না। কিন্তু ও আমাকে পছন্দ করে, সেটা নিয়ে আমি নিশ্চিত।'
লোকটা একটু থামলো, আকাশি চোখদুটো অদ্ভুত উজ্জ্বল হয়ে উঠলো অন্ধকারে।
'ওই মেয়েটা আমার, এই কথা দুনিয়ার কাছে ঘটা করে বলার প্রয়োজন নেই। আমি জানি, আমি মানি। আর অনন্যাকেও এটা মানতে হবে। ও আমাকে পছন্দ করেছে মানে ওর সবকিছু আমাকে দিয়ে দিয়েছে। আর এটাই ওর ভবিষ্যৎ। ওর ভবিষ্যৎ মানে আমি। এটা ও মানুক আর না মানুক। লিসেন, সবকিছু তোমার কাছে নিজে থেকে সুরসুর করে হেঁটে আসবে না। অর্জন করে নিতে হবে। সেটা হোক সাফল্য অথবা ভালো লাগার কোনো বস্তু। বিষয়টা তেমনি সাধারণ।
তুমি....মানুষের ভয়ে অনন্যাকে দূরে সরিয়ে দিতে পারো, ভরা মানুষের মাঝে ওকে দেখেও না দেখার ভান করতে পারো, কিন্তু ওকে আঘাত! আঘাত দিতে কীভাবে পারো? মনে করো আরণ্যক। তুমি অনন্যাকে ব্যথা দিয়েছিলে! সেদিনই তোমার ভালোবাসা নামক ফিলিংসটা নিয়ে অনন্যার মনে সন্দেহের জন্ম নিয়েছিল। ওকে, এখন জিজ্ঞেস করতেই হয়, আর ইউ শিওর এবাউট অনন্যা? যদি ভালোবেসে থাকো তাহলে অনেক মানুষের মাঝে জড়িয়ে ধরতেও দ্বিধাবোধ করতে না তখন।
কারো জন্য অনন্যার যদি কোনো ক্ষতি হয়, আমি সেই বস্তুকে অথবা মানুষকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম। অনেক মানুষের মাঝেও ওই মেয়েটাকে রক্ষা করতে সক্ষম। আর বিয়ে? বিয়ে ব্যাপারটা কোনো লুকানোর নয়। বিয়ে হচ্ছে একে অপরের মাঝে নিজের অস্তিত্ব রাখা, রক্ষা করা, আগলে রাখা। এবং অনন্যা যদি নাও মানে আমি মনে করি আমাদের বিয়ের সম্পর্কে এগুলো রয়েছে। সেখানে বিশ্বাস না থাকলে না থাকুক কিন্তু একে অপরের যত্ন নেওয়াটা থাকুক।'
আরণ্যক বেশ অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। মুখ খুলে বললো,
'আমি সত্যিই ভালোবাসি। আমি সেদিন ভুল করেছিলাম জানি। ভুলে আঘাত দিয়ে ফেলেছিলাম ওকে। পরে খুব আফসোস করেছিলাম, নিজেকে কয়েকবার থাপ্পড় মেরেছিলাম। কিন্তু যা হওয়ার তা তো হয়ে গেছে। আমি তো ঘটনাটা বদলাতে পারতাম না।
'বদলাতে পারতে না। কিন্তু সেদিন অনন্যাকে ধরে উঠাতে পারতে। কোথাও লেগেছে কিনা জিজ্ঞেস করতে পারতে। কিন্তু তোমার লোকলজ্জা ছিল সবার উপরে। যাই হোক, এটাকে যাই বলো আমি কিন্তু ভালোবাসা বলবো না। আর একটা কথা।
অনন্যা তোমাকে মিস করে। এই ব্যাপারটা আমি সহ্য করতে পারছি না। তুমি অনন্যাকে স্পর্শ করেছো। এটাও আমি সহ্য করতে পারছি না। তাই প্রথমেই নিজের রাগ মিটিয়ে নিলাম। আমি চাইলেই তোমাকে মে/রে ফেলতে পারি। কিন্তু মারবো না কারণ তুমি আমার স্ত্রীর প্রথম পছন্দ। তোমাকে মেরে আমাকে বদনাম করতে চাই না। অনন্যার কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছি, নিজেকে একবার বদনাম করেই ফেলেছি।
অনন্যা তোমার কাছে আসবে। যদি রাখতে চাও রেখে দিও। যদি থাকতে চায় থাকতে দিও। কিন্তু মনে করিয়ে দিও আমি বলেছিলাম, আমি ওর অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ এ থাকতে চাই। নিজের চরিত্রকে একবার বদনাম করে ফেলেছি আরো করতে রাজি আছি যদি ও থাকতে রাজি থাকে তো। আমি কোনো পাগল প্রেমিক নই তোমার মতো, আমি একটা ফাঁদ যেখানে পড়লে কেউ উঠতে পারবে না। উঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হবে। সারাজীবন ব্যর্থতায় থেকে যাবে তাও আমাকে ভুলতে পারবে না। এবং তুমিও ভুলতে পারবে না আমাকে।'
আরণ্যক নিঃশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে বললো,
'অনন্যা আমাকে ভালোবাসে কিনা জানি না কিন্তু ও আজ আপনার সাথে থাকতে চায়। আপনি সত্যিই একটা ফাঁদ। নাহলে অনন্যা উঠতে পারছে না কেনো? আমার কাছে আবার আসতে পারছে না কেনো?'
আরণ্যক চোখ খুললো। কিন্তু চোখের সামনে কাউকে দেখতে পেলো না। নিজের মাথার চুল আঁকড়ে ধরলো সে। লোকটার চেহারাও তো দেখলো না। অন্ধকারের মাঝে এক রহস্যময় ধাঁধা রেখে চলে গেল সে। কিন্তু যেই কথাগুলো বলে গেলো আরণ্যকের ভেতরটা নড়বড়ে হয়ে পড়লো।
.
.
.
চলবে..........................................................................