অয়ন উবার ডাকতে চাইল। কিন্তু ইউশা দেয়নি। সে এক্ষুনি বাড়ি ফিরতে চায় না। খুব অনুনয় করল,
“ এখানে তো প্রথমবার এলাম, অয়ন ভাই। চারদিকটা ঘুরে দেখি না একটু! তোমার সাথে দেরি করে ফিরলেও কেউ কিছু বলবে না।”
অয়ন ভেবেছিল না বলবে । ওর ক্লিনিকে ছুটতে হবে এখন।
কিন্তু ইউশার নিষ্পাপ মুখের দিকে চেয়ে আর মানা করতে পারেনি।
বলল,
“ আচ্ছা,আয়।”
ইউশার মনে তখন রাজ্যের সুখ। এতটা সুখ বোধ হয় কখনো কারো হয়নি। যতটা ওর হলো শুধু অয়নের সঙ্গে আরেকটু সময় কাটানোর ছুঁতো পেয়ে।
অয়ন হাঁটছিল সামনে। লম্বা পায়ের সাথে ইউশার গতি মেলানো দুষ্কর। তাতে কী! ও যে অয়নের পিঠের দিকে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকতে পারছে এই বা কম কী সে?
সে অনেক আগের কথা। একবার খুব জ্বর বাঁধল ইউশার।
বাড়িময় মানুষের কী চিন্তা! ডাক্তার, বদ্যি মায়ের কান্নাকাটি। কিন্তু ওসব ছাপিয়ে ইউশার মনে দাগ কাটল আরেকটি প্রিয় মানুষের উদ্বেগ। অয়ন!
ইউশা ঘুনাক্ষরেও ভাবেনি,এই ডাক্তারের ভেতরে এতটা যত্ন লুকিয়ে আছে।
মাকে সরিয়ে দিয়ে তার মাথার কাছে বসে থাকা,পড়াশোনা ভুলে সারাদিন ইউশার সেবা নিয়ে ব্যস্ততা,
ঠিক টাইমে এসে নিজ হাতে ওষুধ খাওয়ানো,
ঘনঘন রুমে এসে গায়ে, কপালে হাত দিয়ে দেখা জ্বর কমল কী না! হাসপাতালেও তো কম ছোটেনি! তখন ইউশার মেট্রিকের টেস্ট পরীক্ষা চলছিল। জ্বর একটু সাড়লেও শরীরী দূর্বলতা কাটেনি।
সব কটা পরীক্ষায় অয়ন নিজ দায়িত্বে নিয়ে গেছিল ওকে। বুকের সাথে আগলে ধরে ধরে বেঞ্চে বসিয়েছিল। ইনভিজিলেটর সহ সবাইকে বলেছে,ওকে একটু দেখবেন।
শুধু কি তাই? পরীক্ষা শেষ হওয়ার তিন ঘন্টা বাইরে দাঁড়িয়েও থেকেছে। বারবার বলেছে,’‘আমি আছি। তুই নিশ্চিন্তে লেখ।’
ইউশার ওসব স্পষ্ট মনে আছে এখনো।
অমন যত্ন,অমন আদর,আর অমন প্রশ্রয় পেয়ে পেয়েই তো তার কিশোরী মনটায় চড়া দাগ পড়ল। যে দাগ সময় যেতে যেতে এত গাঢ হয়ে বসেছে,যা কক্ষনো মুছে ফেলার সাধ্য ইউশার নেই।
ও চায়ও না মুছতে। শুধু চায় অয়ন ওকে ভালোবাসুক। একবার বুঝুক ওর চোখ কী বলে! একবার শুনুক ওর মন কী চায়!
এই চাওয়া-পাওয়া নিয়ে ইউশার বাকি জীবন কাটানোর স্বপ্নটা কবে পূরণ হবে? অয়ন কবে সাড়া দেবে?
ইউশা জানে,অয়নের মনের কোথাও ও নেই। হয়ত, ওকে নিয়ে অয়ন আদৌ বেশি কিচ্ছু ভাবে না। তাতে ইউশার খারাপ লাগলেও,অভিযোগ নেই। ও ভালোবাসে,ভালোবাসছে.. ভালোবাসবে। এই ভালোবাসার টানাহেঁচড়ায়,কিংবা অনুভূতির তোড়ে? অয়ন একদিন ঠিক সাড়া দেবেই।
যদি ইউশার ভালোবাসা সত্যি হয়,অয়ন ওর হবেই।
মেয়েটা মাথা নুইয়ে হাসল।
ধ্যান ফিরল অয়নের কথায়।
কণ্ঠে অনুচিন্তন তার,
“ এখান থেকে শহীদ মিনারের চত্বর কাছে। যাবি?”
ইউশা মাথা নাড়ল বিলম্বহীন।
ও ঠিক করে জায়গার নামও শোনেনি। অয়ন ভাই যেখানেই নিয়ে যাক,হোক সেটা পাতালে! ওনার সাথে থাকলেই চলবে।
অয়ন রিকশা ডাকল।
ইউশা পাশে এসে বলল,
“ এপ্রোনটা আমার কাছে দাও না।”
দিলো সে।
রিকশা ওটা যেতে চাইছে না। অদূর হতেই মাথা নাড়লেন দুপাশে।
অয়ন বলল,
“ আমি সামনে থেকে রিকশা ডেকে আনছি,তুই এখানেই দাঁড়া।”
বলে চলেও গেল। ইউশার নজর তখন অয়নের এপ্রোনে। মৃদূ হেসে আঙুল চালাল তাতে।
অয়ন খুব দামি ব্রান্ডেড সুগন্ধি ব্যবহার করে। ঘ্রাণও অন্যরকম।
ইউশা এপ্রোন তুলে নাকের কাছে ধরল।
দুচোখ বুজে শ্বাস টানল জোরে। এই গন্ধ ওর আত্মায় মিশে। মিশে ওর বক্ষঃস্পন্দের ফাঁকফোকড়ে৷
যার মাঝে স্বীয় সত্তাকে বিলীন করার প্রখর ইচ্ছে ইউশার।
অয়ন ভাই যে কবে একটু বুঝবেন ! কবে বোন বোন নজর বাদ দিয়ে প্রেমিকার চোখে দেখবেন। ইউশা তো মনের কথা জানাতে ছটফট করে মরছে। শুধু উনিই শোনার জন্যে ছটফট করছেন না।
“ কী হয়েছে? শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তোর?”
তুরন্ত চোখ মেলল মেয়েটা।
অয়ন সামনে দাঁড়িয়ে। হতভম্ব চোখদুটো এদিকেই দেখছে। কখন এলেন উনি?
ধ্যান-জ্ঞান খুইয়ে ইউশা পায়ের শব্দ অবধি বোঝেনি? মেয়েটা
ত্রস্ত নাক থেকে এপ্রোনটা নামাল। ধাতস্থ হওয়ার প্রয়াস চালাল খুব করে। আমতা-আমতা করে বলল,
“ না মানে কই? না তো।”
“ এত জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলি কেন তাহলে? সিম্পটম দেখে তো মনে হচ্ছে হাঁপানী আছে। বাসায় যাবি? খারাপ লাগছে?”
ইউশা ক্লান্ত চোখে চাইল।
“ না। আমি ঠিক আছি। রিকশা এনেছ? চলো যাই।”
অয়নের মুখ দেখে মনে হলো না, তার চিন্তা কমেছে। কিছু না বলে,ইউশার পিঠ ব্যাগটা হাতে নিলো।
ইউশার বয়স ১৭। কিন্তু সে তুলনায় ছোটোখাটো অনেকটা। রিকশায় ওঠার জন্যে এক পা তুলল,তক্ষুনি এক হাত চেপে ধরল অয়ন। ফিরে চাইলে বলল,
“ তোর যা সাইজ! মই না দিলে তো পারবি না।”
ইউশার মন খারাপ করার কথা। কিন্তু হেসে ফেলল উলটে।
মনে মনে বলল,
“ খাটো মেয়েদের বর লম্বা হয়, অয়ন ভাই। এই যে তুমি অনেক লম্বা! এতেই পুষিয়ে যাবে।”
ও বসতেই,অয়ন পাশে এসে বসল। হুড তোলা ছিল আগেই। অয়ন হাত দিয়ে পেছনে ঠেলে দিলো সেটা।
রিকশা মুক্ত হলো এরপর। চলন্ত চাকার সাথে তাল মিলিয়ে বাতাসের বেগ বাড়ল। অয়নের নজর পীচের ঢালে রইলেও, ইউশার চোখ তার ওপরে আটকে। যে দৃষ্টির প্রতি পরতে প্রেম।
যেখানে মুগ্ধতা,মায়া আর ভালোবাসা মিশে। বয়ঃসন্ধিকালীন প্রথম প্রেম মানুষের যতটা তীব্র হয়,এত তীব্র প্রেম কেউ বাকি জীবনের সমস্ত প্রেম এক করলেও পাবে না। কিন্তু আফসোস,উচাটনে ভরতি ওই নজর জোড়ায় ফিরল না অয়ন।
ইউশা চাইলও না সে ফিরুক। ফিরলেই তো ওর চোখ ফেরাতে হবে। লুকাতে হবে অনুভূতি। যেটা সে চায় না। ও অয়নকে দেখতে চায়। সারাদিন,সারা প্রহর।
একটা সময় জ্যামের কবলে পড়ে রিকশা থেমে যায়। অয়নের মুখটা হাসিহাসি। এই জায়গা গুলো তার সুপরিচিত। বন্ধুদের সাথে কতশত স্মৃতি জড়িয়ে।
ও হাত দিয়ে দেখাল একদিকে,
“ ক্লাস শেষে এখানে আমরা আড্ডা দিতাম। একটা দারুণ চা পাওয়া যায় এখানে বুঝলি! তুই তো চা-কফি খাস না। নাহলে টেস্ট করতে পারতি।”
ইউশা এসব শুনল কী না কে জানে! তার চাউনিজোড়ায় বদল হয়নি কোনো। অয়নের ফরসা চিবুকের ধারে আঠার মতো লেগে আছে ওরা।
সেসময় একটা ছোটো মেয়ে এসে দাঁড়াল। পরনে ফ্রক, হাতের বড়ো মগটায় অনেকগুলো তরতাজা গোলাপ। ভাঙা ভাঙা বুলিতে আবদার করল,
“ একটা ফুল ন্যান, বাইয়া! একটা!”
ইউশা সাথে সাথেই বলল,
“ কত করে?”
“ বিশ ট্যায়া।”
“ একটা দাও আমাকে।”
ইউশা ব্যাগে হাত দিতে গেলে,অয়ন বাধ সাধল। বলল, “ আমি দিচ্ছি।”
মেয়েটা ওর পাশে দাঁড়িয়ে। বিল নিয়ে,ফুলটা ওর হাতে দিয়ে চলে গেল কোথাও।
অয়ন ফুলটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“ গাছ থেকে ফুল ছেড়া আমার খুব অপছন্দের একটা ব্যাপার। একটু পর তো ফেলে দেবে। কী দরকার এসবের কে জানে!”
ইউশার খেয়াল অয়নের মুঠোতে। টকটকে গোলাপ তার দিকে বাড়িয়েছে ছেলেটা। প্রেমিকার চোরা মনে চট করে একটা দুষ্টুমি এলো তার। ব্যাগ হাতিয়ে ফোন বের করল দ্রুত।
বলল স্ফূর্তিতে,
“ ধরে রাখো, আমি একটা ছবি তুলে নেই।”
অয়ন কিছু বলেনি।
তবে ভ্রুদুটো তার কুঁচকাল তখন,যখন ফুলের এপাশে এক হাত রাখল ইউশা।
যেন অয়ন ফুল দিচ্ছে,আর সে নিচ্ছে। এভাবেই একটা চমৎকার ছবি কয়েদ হলো ক্যামেরায়।
অয়নের কপালের ভাঁজ এবার প্রগাঢ়তা পেলো। মনের ভেতর একটা তীব্র আশঙ্কা পাখা মেলতে মেলতেও,চুপসা-লো ফের।
ফোস করে শ্বাস ফেলে দুপাশে মাথা নাড়ল সে।
না না,ইউশা তো বাচ্চা মেয়ে! চোখের সামনে বড়ো হতে দেখেছে৷ ও এখনো এসব বোঝে কী না তারই ঠিক নেই। অয়ন,তুই বোধ হয় অহেতুক বেশি বেশি ভাবছিস!
********
ইয়াসির বাড়ি ফিরল সেই মধ্যরাতে। আজ আর কেউ সজাগ নেই। যে যার মতো খিল টেনেছে দোরের। শুধু মা বসেছিলেন সোফায়। মুখখানা ভার। ইয়াসির খেয়াল করেনি। রুমে যেতে যেতে বলল,
“ ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
তনিমা চুপ করে রইলেন।
ইয়াসির ঘরে ঢুকল। পরপর ফিরল পায়ের শব্দে। একেবারে পিছু নিয়ে ভেতরে এসেছেন তনিমা।
ও অবাক হলো একটু! মায়ের চোখমুখ গম্ভীর। অন্যসময় হাসেন। কত কী জিজ্ঞেস করেন!
প্রশ্ন করল ইয়াসির,
“ কিছু বলবে?”
অমনি গজগজিয়ে উঠলেন তিনি,
“ কী বলব? কী বলার বাকি রেখেছিস?
তুশিদের কাছে আমার তো কোনো সম্মানই রাখলি না,সার্থ! মেয়েটাকে আমি কত আশা নিয়ে বললাম তুই ওর সাথে দেখা করতে যাবি,সেখানে কী করলি এটা? ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে ফেরত পাঠিয়ে দিলি?
বিয়ে করতে মন না চাইলে বলে দিবি,যে করব না। বাদ দাও এসব। কিন্তু এক মুখে বিয়ের জন্যে রাজি হয়ে অন্য মুখে এমন অসম্মান করছিস কেন?”
বলতে বলতে গলার স্বরটা বুজে এলো তার। ইয়াসির বুঝল মা কষ্ট পেয়েছেন। আর তার মাত্রা এত গভীর,এই যে ইয়াসিরের কপাল কেটে গেছে? একটা ফাস্ট এইড ব্যান্ডেজ আছে সেখানে? কিচ্ছু খেয়াল করেনি।
ও ফোস করে শ্বাস ফেলল।
বলল,
“ আমি কাল দেখা করব। খুশি?”
তনিমার চোখ ছলছলে।
“ সত্যি বলছিস? না আবার পালটি খাবি?”
“ সত্যি বললাম। পালটি খাব কেন?”
“ করিস তো পুলিশের চাকরি। কোনো বিশ্বাস নেই।”
ইয়াসির অবসন্ন চোখে চাইল। তনিমা হেসে ফেললেন,
“ মজা করেছি।
আমি তো জানি আমার ছেলে কত দায়িত্ববাণ পুলিশ অফিসার।
আচ্ছা শোন, তুই তাহলে কাল ওকে ফোন করে ডেকে নিস। কেমন?”
ইয়াসির মাথা নাড়ল।
তনিমা বের হতে নিলেন। হঠাৎ থেমে ফিরে চাইলেন আবার। ইয়াসির ইউনিফর্ম ছাড়ছিল। মুখটা খেয়াল করেই আঁতকে উঠলেন রমণী,
“ এ কী! তোর কপালে ব্যান্ডেজ কীসের?”
ওর কণ্ঠ নিষ্প্রভ,
“ যাক,খেয়াল করলে তাহলে।”
তনিমা ত্রস্ত এগিয়ে এলেন। উৎকণ্ঠিত আওড়ালেন,
“ কাটল কী করে? কিছু হয়েছে? কোথাও পরে টরে গেছিলি? এ বাবা! ব্যথা করছে?”
মায়ের উদ্বীগ্ন মুখটা শান্ত চোখে দেখল ইয়াসির। এই মমতার নজরে ও এখনো বড়ো হতে পারেনি। পুলিশ অফিসার তো একদমই নয়। সেজন্যে এখনো মা ভাবছেন, কোথাও পড়ে গিয়ে চোট লেগেছে।
কিন্তু সত্যিটা ইয়াসির বলল না। শুধু শুধু মায়ের চিন্তা বাড়িয়ে লাভ নেই।
জবাব দিলো সুস্থির ,
“ গাছের ডাল ঝুঁকে ছিল,খেয়াল করিনি। সেখানটায় লেগেই..”
“ সে কী! একটু সাবধানে হাঁটাচলা করবি না? এমনিতেও তোর মাইগ্রেনের সমস্যা। রাতে যদি ব্যথা বাড়ে!”
“ অল্প কেটেছে,মা। এত চিন্তার কিছু নেই। যে পেশায় আছি,এতে আরো বড়ো কাঁটাছেড়া বাকি।”
মা শান্ত হলেন না।
অমন অস্থির হয়েই বললেন,
“ একটু শেক দিয়ে দেই। ফোলা ভাবটা কমবে তাহলে। ইশ,কী একটা অবস্থা! তুই ফ্রেশ হ। আর নিচে নামার দরকার নেই। আমি বরং খাবারটা ঘরে নিয়ে আসি।”
পালটা বলার সুযোগ না দিয়েই তনিমা বেরিয়ে গেলেন দ্রুত। ইয়াসির আলগোছে হাসল। সেই হাসি সেকেন্ডের মাথায় উবে গেল হঠাৎ। আর্ত নজর মেলে জানলার বাইরে চাইল সে। চোখের পর্দায় ভেসে উঠল কিশোর সায়নের মুখখানি। ইয়াসিরের থেকে মাত্র এক বছরের বড়ো ছিল সায়ন।
তবুও সম্পর্কে বড়ো ভাই সে!
ইয়াসিরের হলদে আননে বিষাদ বসতে পারল না। খুব কৌশলে বিষণ্ণতা গিলে নিলো সে। ঠোঁটের কোণ গলে কাষ্ঠ হাসি ছুটল এক চোট। ঢোক গিলে ভাবল ,
“ তুই সব মিস করছিস, সায়ন। মায়ের এত যত্ন,ভাইবোনদের আনন্দ সব মিস করছিস। আচ্ছা, তাহলে তুই আনলাকি? না তোর শূন্যতায় পুড়তে থাকা আমরা!”
*********
ইয়াসিরের বিয়ের সমস্ত বন্দোবস্ত শেষ। দুই পরিবার প্রথমে ভেবেছিল, আংটিবদলের একটা বিরাটাকার আয়োজন করবেন। কিন্তু রুহানের কেসের পর পর ইয়াসিরের ওপর আরো কতক নতুন নতুন কেসের ভার পড়েছে। তার লাগামছাড়া ব্যস্ততায় অতীষ্ঠ হয়ে সৈয়দ ভবনের বয়ঃজ্যেষ্ঠরা মেয়েকে আংটি পরিয়ে এসেছেন।
এই শুক্রবারেই বিয়ের তারিখ ফেলেছেন তারা।
ইয়াসির মায়ের কথায় সেদিন ফোন করলেও,তুশিকে পাওয়া যায়নি। ইউনিভার্সিটির বসন্ত উৎসব নিয়ে মেতে থাকায় সাক্ষাৎও হয়নি তাদের। তাই আজ সময় মিলিয়ে দুজন দেখা করতে এলো।
ধানমণ্ডির একটি সুসজ্জিত,সুন্দর রেঁস্তোরা এটা।
ইয়াসির বাইক নিয়ে এসেছে। ব্যক্তিগত কাজে সে সরকার প্রদত্ত জিপ ব্যবহার করে না। ডিউটির ফাঁকে আসায়, পরনের ইউনিফর্ম ছাড়েনি। তুশি মেয়েটা আগে থেকেই রেঁস্তোরার ভেতরে বসেছিল।
ওপাশে বিশাল কাচের বেষ্টনী। সরব রাস্তা স্পষ্ট দেখা যায়। ইয়াসির ঢুকতেই রিসিপশানের ছেলেটা চোখ বড়ো করল। পুলিশ কেন? কোনো গোলমাল হয়নি তো!
ম্যানেজার কাউন্টার রেখে ত্রস্ত এগিয়ে এলেন।
সালাম ঠুকে বললেন,
“ কিছু লাগবে, স্যার?”
ইয়াসির এতে বিরক্ত হয়। রুহান কেসের জের ধরে দেশে তার মুখটা বেশ পরিচিত এখন। তার ওপর পুলিশের লোক! সবাই একটু-আধটু গদগদ ভাব করতে ওস্তাদ। ও সোজাসাপটা বলল,
“ এত খাতিরের কিছু নেই। আমি এখানে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো এসেছি।
আপনি নিজের কাজ করুন,যান! নো ওর্যিস!”
লোকটা কিছু থতমত খেলেন। সুপুরুষ ইয়াসিরের আপাদমস্তক দেখলেন বাঁকা চোখে। মাথা নেড়ে ফিরে গেলেন তাও। ইয়াসির চারপাশে চাইল। অনেকেই ওকে দেখছে। কিন্তু সে খুঁজল ছবিতে দেখা মেয়েটিকে।
পেলোও এক কোণে।
তুশি মেয়েটা ফোনে কথা বলছিল। মুখভঙ্গি গুরুতর। যেন ভয়ানক কিছু ঘটেছে। ওপাশের কারো সাথে তর্ক চলছে নিরন্তর। ইয়াসির সামনে এসে দাঁড়াল। শুনল কয়েকটি পরিষ্কার লাইন,
“ আমিতো বললাম এত চিন্তার কিছু নেই। আগে কথা বলতে দাও। তারপর দেখা যাবে!”
ইয়াসির পুরোটা শোনার আগ্রহতে নেই। তাকে আবার এতটা পথ বাইক ছুটিয়ে থানায় ফিরতে হবে।
গলার শ্লেষা কাটাতে কাশল একবার। তুশি ফিরল। ইয়াসিরকে দেখেই চমকাল যেন! ফোনটা কান থেকে নামাল দ্রুত।
ইয়াসির জানে এটাই সেই মেয়ে। তাও নিশ্চিত হতে শুধাল,
“ তুশি?”
হাসল মেয়েটি,
“ জি জি। বসুন!”
মুখোমুখি চেয়ার টেনে বসল ইয়াসির।
“ ফাইনালি আপনার সময় হলো।”
ইয়াসির সৌজন্যতায় ঠোঁট বাঁকাল এক পাশে। মেন্যু কার্ড ঠেলে দিয়ে বলল,
“ কী খাবেন?”
“ এইত এলেন। কথাবার্তা বলি তারপর না হয়!”
“ কিছু মনে করবেন না, আমি আসলে হাতে অতটা সময় নিয়ে আসিনি।
মা বলেছিল দেখা করা জরুরি! সেদিন আমার ব্যবহারে আপনি হার্ট হয়েছেন। সেজন্যেই আসা। দেখা যখন হয়েছে,কথাবার্তা নাহয় বিয়ের পর বলা যাবে।”
তুশির মেজাজ খারাপ হলো। কী লোক! এমন মুখের ওপর ফটর ফটর উত্তর কে দেয়! তাও বিয়ের আগে!
“ আপনার মনে হয় না, ব্যস্ততার মাঝেও আপনার এখন আপনার উডবি ওয়াইফ কে একটু সময় দেয়া উচিত? আফটার অল বাকিটা জীবন তার সাথে কাটাবেন। বিয়ের তো মাত্র এক সপ্তাহ বাকি।”
ইয়াসিরের স্পষ্ট জবাব,
“ দেখুন,আমি জানিনা আপনি আমার ব্যাপারে কতটুকু জানেন!
বা মা কতটা কী বলেছে আপনাকে! তবে একটা কথা হচ্ছে আমি নিজের কাজের বেলায় ভীষণ সিনসিয়ার। আমি যখন চাকরির সময় শপথ পাঠ করেছিলাম, সেটা বইয়ের রিডিং পড়া ছিল না। প্রত্যেকটা লাইন আমি নিজের মন থেকে উচ্চারণ করেছি। আর সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করাই আমার ধর্ম। এসব আপনি ব্যস্ততা ভাবলে, ভাবুন।
তবে আমি যেমন আমার কাজকে সম্মান করি,আমার স্ত্রীকেও আমার কাজকে সম্মান করতে হবে। রইল বাকি সময় দেয়া? একজন স্বামী হিসেবে নিজের স্ত্রীর প্রতি যতটুকু দায়িত্ব, কর্তব্য কিংবা তার ইচ্ছে পূরণে যেটুকু করার আমি করব।
কিন্তু তার মানে এই নয়,বিয়ে ঠিক হওয়ার সাথে সাথে নিজের সব কাজবাজ ফেলে সারাদিন তাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে। এতটা রোমান্টিসিজম আমার মধ্যে নেই।
আর বিয়ের আগের এসব আমি পছন্দও করি না।”
তুশি চুপ করে গেল। ইয়াসিরের কথাবার্তায় পরিষ্কার, ও যথেষ্ট অহংকারী! নাহলে এমন কাঠখোট্টা ভাবে
কথা বলে কেউ!
চোখের কোণ তুলে ছেলেটাকে মাপল সে। জিম করে বোধ হয়! পরনের ইউনিফর্ম গায়ের সাথে আঁটোসাঁটো। হাফ হাতা হতে বাইসেপস বেরিয়ে আছে।
মুখের গড়ন ধারালো। একটু রেগে তাকালেই তো আসামি গড়গড় করে সব বলে দেবে।
তুশি ছবিতে যেমন দেখেছিল,ইয়াসির সামনে থেকে ততোধিক সুদর্শন।
প্রশ্নটা ছুটে এলো তখনই
“ কী খাবেন বললেন না!”
“ উম,কফি।”
“ আর কিছু?”
মাথা নাড়ল তুশি।
এখানে পে ফার্স্ট। ইয়াসির উঠে বিল দিতে গেল। যেতে যেতে হঠাৎ চোখ পড়ল ওপাশে,কাচের বাইরে। রেঁস্তোরাটা তিন তলায় হলেও,মেইন রোড পরিষ্কার বোঝা যায়। রাস্তার ফুটপাতে একটা চেনা মুখ দেখেই,কেন যেন থামল ইয়াসির।
আখের রসের ভ্যানের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে তুশি। দুপাশে দুটো বাচ্চা ছেলে। একটা মোটা,আরেকটা রোগা। তুশি আখের রস ভরতি একটা গ্লাস তুলে টিনটিনকে দিলো,আরেকটা বাবলুকে। সেকেন্ডেই চোখ ফেরাল ইয়াসির। হাঁটতে নিয়েও,দাঁড়াল ফের।
হঠাৎ মনে পড়ল, তুশি ওকে বাঁচিয়েছিল সেদিন। সময় মতো ছুরিটা এসে না ধরলে, ও এমন সুস্থ সবল থাকতো না বোধ হয়! কিন্তু ইয়াসির কি মেয়েটাকে ধন্যবাদ দিয়েছিল সেজন্যে? না, উলটে ধমকে-ধামকে বিদেয় করেছে। কিন্তু সেটা তো উচিত হয়নি। একটা ধন্যবাদ কি
দেয়া প্রয়োজন? একজন ছিচকে চোরকে পুলিশ হয়ে নয়,ধন্যবাদটা ও জানাবে মানুষ হিসেবে।
ইয়াসির নিচে নামতে গিয়েও থামল। তুশি চলে যাচ্ছে।
একটা লোকাল বাস এসে দাঁড়াতেই,কেমন লাফ-ঝাঁপ দিয়ে উঠে গেল তাতে।
তুরন্ত ভ্রুতে ভাঁজ বসল ওর।
এমন ডানপিটে মেয়ে ও দুটো দেখেনি। নির্ঘাত বাসে উঠেছে কারো পকেট মারতে! নাহ,এই মেয়ের একটা বিহিত করা দরকার। হাতের কেস দুটো শেষ হোক,তারপর এর একটা ব্যবস্থা করবেই ইয়াসির।
বৃহস্পতিবার!
ঠিক বিকেল নাগাদ হাসনা বানু কোথা থেকে ছুটতে ছুটতে ফিরলেন। এমনিতে বাড়ি আসতে বেলা গড়ায় ওনার। কখনো মাগরিবের আযান পড়ে যায়। মোট দু বাড়িতে কাজ করেন প্রৌঢ়া।
কিন্তু আজকের এই তাড়াতাড়ি আসার কারণটা ঠিক বোঝা গেল না।
অস্থির হাতে টিনের দোর খুলে ঢুকলেন তিনি। তুশি তখন বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। এই রবিবার ওর কাজ নেই। রুটিন মতো সে গভীর নিদ্রায়।
হাসনা এসেই গা ধরে ঝাঁকালেন,
“ ওই তুশি ওঠ। ওঠ বু একখান জরুরি কতা আছে।”
তুশি আধো চোখ মেলল।
“ হট হিপিন দাদি?
জ্বালাচ্ছো কেন?”
“ আরে উইঠা বইবি তো। এমনে মইরা থাকলে ক্যামনে কমু?”
“ আচ্ছা ডিসকাসটিং তো!”
বিরক্তি চেপে উঠে বসল তুশি।
দুপাশে দুহাত মেলে লম্বা একটা হাই তুলল সাথে।
বলল,
“ বলো,কার গুষ্ঠি উদ্ধারে যেতে হবে?”
“ ও কি কতা! গুষ্টি উদ্দার করোন লাগতো না। যা কইতাছি খালি মন দিয়া হোন।”
তুশি চ সূচক শব্দ করল,
“ মিসটিক! (মিসটেইক)
কথা মন দিয়ে নট লিসেনিং দাদি,লিসেনিং বাই কান।”
হাসনা কড়া চোখে চাইলেন,
“ তুই হুনবি?”
পরপরই মুখটা হাসিহাসি করে বললেন,
“ তোর লিইগা একখান সম্মন্দ পাইছি বু। পোলা রিশকা চালায়। নিজের রিশকা। যা কামাই তাই ওর।
ফাইভ পাশ।
বাপে ভ্যানে জামা বেচে। তয় আমগো মত বস্তিতে থাহে না। হুনছি, ফ্ল্যাট বাসায় থাহে নিচ তলায়। আইজকা রোকেয়ার মায় কইল। ওরা এট্টু সুন্দার মাইয়া চায়। তোর কতা কইতেই,আমি কাম ফালাইয়া ছুইট্টা আইলাম।”
তুশির কান ঝাঁঝিয়ে উঠল। কস্মিনকালেও দাদি ওর বিয়ের আলাপ করেনি। আজ কী হলো?
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,
“ এ্যাহ,মাই বিয়ে? ইউ কি পাগল হয়েছ,দাদি? আমি বিয়ে করব কোন দুঃখে?”
“ ওমা,বিয়া দুক্ষে করবি ক্যান? বিয়া করবি সুখে।”
ও চট করে দাদির কপালে হাত দিলো।
“ দাদি, ইওওর কি ফেবার (fever) এসছে? হুয়াই এমন উল্টোপাল্টা টকিং?”
হাসনা রুষ্ট হলেন ভারি। কত চমৎকার একটা কথা বললেন,আর তুশির ভাবমূর্তি দেখো! ঝটকা মেরে হাতটা হটিয়ে দিলেন ওর।
কটমটিয়ে বললেন,
“ তুই কী করতে চাইতাছোস? বিয়া সাদি করবি না কহনো? পুরাডা জীবন এমনে নাইচা-কুইদা বেড়াবি? মাইনষের পকেট মাইররা মাইররা?”
“ আহ হা,তুমি হঠাৎ আমার বিয়ে নিয়ে পড়লে কেন?”
“ তয় কী করমু আমি? বড়ো হসনাই তুই? শরীরের বাড়বাড়ন্ত দ্যাখছোস? একটা মাইয়া মাইনষের এতদিন আবিয়াত্তা থাকোন ভালা? এমনেই বস্তির কতডি কুত্তার নজর তোর দিকে। রাইতে বেড়ায় শব্দ হইলে আমি ডরে থাহি। এই বুজি কোনো কুত্তা বেড়া ভাইঙ্গা ঢুইক্কা পড়ে।”
তুশি আশঙ্কা হাওয়ায় উড়িয়ে দিলো।
“ অত সোজা? ঢুকে গেলেও এমন জায়গায় মারব না, জীবনে আর বউকে দেখাতে পারবে না।”
“ চুপ কর। খালি বেডা মাইনষের মতোন কতা। তোর চিন্তায় আমার ঘুম আহে না তুশি! তুই এডি দেহোস না? বুজোস না?
তুই একানা ওকানা মাইনষের পকেট মাইররা বেড়াস। চাইলচক্কর হগল পোলাগো মতোন। তোর লিজ্ঞা যে একখান সম্মন্দ আনতাছে মানুষ, এইডাই তোর কফাল।”
তুশি কানের ছিদ্রে আঙুল দিয়ে নাড়ল। দাদি পাশে বসেই চিল্লাচ্ছে। চোখেমুখে বিস্তর অনীহা দেখেই চটে গেলেন হাসনা।
উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
“ তুই বিয়া করবি, কি করবি না? বিয়া না করলে পরিষ্কার কইয়া দে।”
“ পরিষ্কার!”
হাসনা চিল্লিয়ে উঠলেন,
“ তুশিইইইইই,ফাইজলামি মারাবি না আমার লগে। মুখ খারাপ করাবি না কইলাম।
আমি রোকেয়ার আম্মারে কইয়া আইছি শুক্কুরবার ওনাগো খবর দিতে। এহন তুই কী কাহিনী করতে চাইতাছোস ক!”
তুশিও উঠে দাঁড়াল।
“ আমি বিয়ে করব না, দাদি। এসব ভাল্লাগে না আমার। আচ্ছা বিয়ের পর কী স্পিসাল হয়? রান্না করো,খাও,ঘুমাও তাইতো?
রান্না তুমি করছো,আমি খাচ্ছি। ঘুমাচ্ছিও দু বেলা। হলো না সেম সেম?
এরজন্যে ওসব রঙতামাশার কী দরকার?”
হাসনা পরাজিত! কিছুক্ষণ থম ধরে চেয়ে থেকে আচমকা কেঁদে ফেললেন। নাকে আঁচল চেপে বললেন,
“ জানতাম,জানতাম আমি তুই এমন করবি। আমার কতার তো কোনো দাম নাই। আমি ক্যাডা?
আইজকা তোর বাপ মায় কইলে এমনে মুখের উপরে না কইতে পারতি? এক ফোডা সম্মান দেস না আমারে।”
তুশি নাক-চোখ কুঁচকাল।
“ কাঁদছো কেন? ”
“ তয় কী করমু?
তুই-ইতো আমারে কান্দাস। হোন তুশি, আমার শ্যাষ একটা কতা হোন।
শুক্কুরবার ওরা তরে দেখতে আইব, তুই যদি ওগো সামনে না বইছোস,
আমি আর থাকমু না এইহানে। যেদিক দুই চোখ যায় চইলা যামু। মরার আগে আমার মুখও দেখবি না কইলাম।”
“ দাদি! কী সব বাজে কথা বলছো!”
তুশির কণ্ঠে বিরক্তি।
“ বাজে না,এইডাই কতা। আর এইডা আমি করমুই। মনে রাহিস তুই।”
তুশি হার মানল। বিফল শ্বাস ফেলে বলল,
“ আচ্ছা ওকে।
বসব ছেলেপক্ষের সামনে। কিন্তু ছেলে জানে আমি কী করি? পকেটমার জেনেও ঘরের বউ বানাবে?”
“ পাগল হইছস? এডি কি কওন যায়? রোকেয়ার মায় কইছে তুই আমার লগে কাম করোস এক জাগায়।”
“ তারপর জানলে কী হবে? মিথ্যে বলার জন্যে তোমাকে-আমাকে ল্যাম্পপোস্টে বেধে ঠ্যাঙাবে না?”
“ খালি আজাইরা কতা কয় এই মাইয়া। জানব ক্যামনে? বস্তির কেউ কইব না। ও লইয়া তর চিন্তা নাই।
ওরা তো তর বিয়া হইলেই বাঁচে।”
পরপরই গদগদ আওড়ালেন,
“ পোলার রিশকা আছে নিজের। কোনো জুট জামেলা হইব না। ডাকা শহরে রিশকার মেলা দাম! এন্তে ওইহানে গেলেই পঞ্চাশ টিয়া।”
তুশি চাইছিল কিছু বলবে না।
কিন্তু দাদির উচ্ছ্বাস দেখে জ্বিভ ফস্কে বেরিয়ে গেল,
“ তাহলে বিয়েটা তুমি করে ফেলো না। তোমার তো বর নেই কত বছর। রিকশাওয়ালা তোমাকে রিকশায় চড়িয়ে ঢাকা ঘুরিয়ে দেখাবে। কত ভালো হবে না? আমিও দাদা দাদা বলে গলা জড়িয়ে ধরব।”
হাসনা ক্ষিপ্ত চোখে চাইলেন।
দাঁত পিষে বললেন,
“ তুই কিন্তু মেলাদিন মাইর খাস না। খাবি অহন?”
তুশি ঠোঁট চেপে হাসল।
হাসনা এসে মশারি তুললেন। এলোমেলো বালিশ কাঁথা গোছাতে গোছাতে বললেন,
“ হোন,
ওগো সামনে এইরহম জামা পিন্দন যাইব না। গত রোজার ইদে তরে একখান কামিজ কিইন্না দিছিলাম না? একবারও তো পরোস নাই। ওইডা বাইর কইররা দিমু, ওইডা পিনবি। বুঝছোস?”
“একদম না। আমি ওসব পরতে পারব না।”
“ কথা কম ক! আমার চ্যাতাবি না। বেশি কাহিনী করলে কিন্তু ট্রেনের নিচে মাতা দিমু কইলাম।”
হাসনা আবার শান্ত হলেন। কাছে এসে চিবুকটা আঙুলে তুললেন ওর। বললেন,
“ তুই দ্যাকতে কত সুন্দর বু। একটু যত্ন নেলে আরো সুন্দর লাগব। এই কয়দিন ডাইল বাইট্টা দিমু তরে। রোজ মুখে লাগাবি,মুখ চমকাইব।
খাড়া অহনই বাইট্টা আনি।”
হাসনা চপল পায়ে ছুটলেন। তুশি সেদিকে ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইল।
নাক সিটকে বিড়বিড় করল
“ গু বাটা লাগাব। যত্তসব!”
.
.
.
চলবে…....................................................................