সাদ ভ্রু নাচালো৷ মনের মধ্যে তার লাড্ডু ফুটছে। আজ যে সে স্মরণের পকেট ফাঁকা করিয়ে ছাড়বে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সাদ বাঁকা হেসে তার ডিমান্ড বললো,
" আমার ফোনটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে প্রায়। স্যামসাং এর একটা দামী ফোন কিনে দাও।"
এই কথা বলতে দেরি হলো তবে পিঠে কিল পড়তে দেরি হলো না। স্মরণ ক্রোধিত গলায় বললো,
" শালা শয়তান! আমার দূর্বলতা নিয়ে তুই ফোন ডিমান্ড করছিস! সাহস কত বড়! যা দিলাম না তোকে ফোন। কি করবি করে নে। "
সাদও গোঁ ধরে বসলো। স্মরণকে ভয় দেখিয়ে বললো,
" দেখো ভাইয়া, ছোট্ট একটা ডিমান্ড। না মানলে আমার হাটে হাড়ি ভাঙতে সময় লাগবে না। ভেবে নাও।"
স্মরণ এবার আর পাত্তা দিলো না। বললো,
" কর কর। কি করবি করে নে। তোর মতো ছিঁচকেকে কে পাত্তা দিবে। যা ভাগ। "
সাদ এবার পকেট থেকে ফোন করে তৎক্ষনাৎ নাজমা বেগমকে কল দিয়ে বললো,
" দেখো, ফোন দিচ্ছি মা কে। "
" দে। ধরে নাকি....."
স্মরণের মুখের কথা মুখেই রইলো। এর মধ্যেই নাজমা বেগম কল রিসিভ করে বললেন,
" কি রে সাদ? নামাজে যাসনি? এখন ফোন দিলি যে?"
থমকে দাঁড়ালো স্মরণ। মায়ের কণ্ঠ শুনে মুহূর্তেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো যেনো। সাদ আগে-পিছে কোনো কথা না বলেই চোখেমুখে অদ্ভুত কায়দা ফুটিয়ে তুলে বললো,
" মা জানো? ভাইয়া......."
সাদের জবান হতে বাকি কথাটুকু খইয়ের মতো ফোটার আগেই মুহূর্তেই স্মরণ তার মুখ চেপে ধরলো। ওদিকে ফোন লাইনে রেখেই সাদ নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালালো। ফোন লাইনে থাকতেই ধস্তাধস্তি চললো দুজনের। স্মরণ পরিস্থিতি সামাল দিতে বললো,
" মা, এখন ফোন রাখো। নামাজ পড়ে এসে কল দিবো তোমাকে। "
নাজমা বেগম তো এদিকে কিছুই আন্দাজ করতে পারেননি। কারণ দুপুরের খাবার তৈরী করতে ব্যস্ত তিনি। তবুও জিজ্ঞেস করলেন,
" সাদ ফোন দিয়েছিলো কেনো?"
" কিছু না মা। ওকে আগে গোসল করতে দেইনি। এ কারণে ঝামেলা বাধাচ্ছিলো। তুমি ফোন রাখো।"
" উফ, তোরা দুই ভাইও না। কি যে করি!"
বলেই কল কেটে দিলেন নাজমা বেগম। পরিবেশ ঝুঁকিমুক্ত দেখে তৎক্ষনাৎ সাদের মুখের উপর থেকে হাত সরালো স্মরণ। সাদ ছিটকে এলো স্মরণের থেকে। মুখ গোল করে হাঁপ ছাড়ছে সে। দমবন্ধ হয়ে আসছিলো এতক্ষণ। স্মরণের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে হাঁটুতে দু হাত ঠেকিয়ে বড় বড় শ্বাস টেনে নিতে নিতে বললো,
" তুমি দেখি পাক্কা একটা মার্ডারার ভাইয়া! এখনই তো মেরে ফেলতে আমাকে।"
স্মরণ ঠোঁট উল্টিয়ে বললো,
" তোর তো কই মাছের প্রাণ। সহজে দেহ ত্যাগ করে না।"
" এ্যাহ, তুমি যেভাবে ধরেছিলে আমাকে! আজই মরে যেতাম বোধহয়। তোমার বিয়ে খাবো বলেই বেঁচে ফিরলাম। নাহলে কালকের পত্রিকায় বড় বড় অক্ষরে ছাপা হতো, 'স্মরণ নামক একটি পুরুষ নিজের প্রেমের খবর লুকাতে গিয়ে খুন করলো তার ছোট ভাইকে।' তখন কি হতো বলো তো? জেলে থাকতে বুঝলে?"
স্মরণ বিতৃষ্ণা নিয়ে বললো,
" তুই আজীবন ত্যাদড়ই থেকে যাবি সাদ!"
সাদ এবার সোজা হয়ে দাঁড়ালো। কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে সে। চওড়া হাসি দিয়ে বললো,
" দেখলে তো কি হতে পারে সাদের কথা না শুনলে?"
স্মরণ সরু চোখে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। অতঃপর বললো,
" আচ্ছা যা ফোন দিবো তোকে। কিন্তু আমাকে সময় দিতে হবে। "
খুশিতে সাদের চোখজোড়া যেমন মুক্তোর মতো চকচক করছে। স্মরণ রাজি হয়ে যাওয়ায় উচ্ছ্বসিত গলায় বললো,
" তা সময় নাও। সমস্যা নেই। আমাকে ফোন দিলেই হবে। কিন্তু প্রমিজ করো। শেষে গিয়ে যদি ধোঁকা দিয়ে দাও। "
স্মরণ সাদের দিকে এমনভাবে হাত ঝাড়লো যেনো কোনো ময়লা সরাচ্ছে সে। অতঃপর বললো,
" যা যা প্রমিজ। শুধু তুই মুখে সুপারগ্লু এঁটে বসে থাকবি ব্যস। "
" তা পারবো। তবে আরেকটা শর্ত আছে। "
স্মরণ তেতে উঠলো। উচ্চ স্বরে বললো,
" আবার কিসের শর্ত! সবচেয়ে বড় শর্তটাই তো পূরণ করলাম। "
সাদ দাঁত কেলিয়ে হাসলো এবার। বললো,
" আজ নীলু আপুর সাথে দেখা করবো। "
স্মরণ বেঁকে বসলো আবারও। বললো,
" এটা পূরণ করতে পারবো না। সরি। আমাদের ডেটে গিয়ে কি করবি তুই?"
সাদ দাঁত কেলালো। হে হে করে হাসতে হাসতে বললো,
" কাবাবে হাড্ডি হবো। "
স্মরণও পাল্টা জবাব দিয়ে বললো,
" আমরাও সেই হাড্ডিটা কুকুরকে দিয়ে দিবো। "
সাদ ঠোঁট কুঁচকালো, নাক ফোলালো। বললো,
" কতদিন হয়ে গিয়েছে নীলু আপুর সাথে সাক্ষাৎ হয় না। তাই একটু দেখা করলে কি সমস্যা? "
" অনেক সমস্যা। ফুপার জন্য সহজে বের হতে পারে না ও। আজ যা একটু সুযোগ পেয়েছে তুই তো সেই সুযোগ খেয়ে দিবি। "
" আহ হা নিয়ে চলো না। আর চাইবো না। আজকেই লাস্ট। প্লিজ ভাইয়া। "
স্মরণ কিছুক্ষণ ভাবলো। অতঃপর তীব্র বিতৃষ্ণা নিয়ে বললো,
" আচ্ছা যা নিয়ে যাবো। কিন্তু অল্প কিছুক্ষণ থেকেই চলে আসবি কিন্তু। "
" আচ্ছা আচ্ছা। তা আসবো। টেনশন করো না। তোমাদের বাসরে কোনো সমস্যা হবে না। "
" ছিহ! সাদের বাচ্চা! কিসব বলিস!"
বলেই স্মরণ সাদকে মারতে ছুটলো। সাদও সুযোগ বুঝে টুপ করে বাথরুমে ঢুকে পড়লো।
--------------
রবীন্দ্র সরোবরে বসে আছে স্মরণ, নীলিমা ও সাদ। বিকেলের দিকে চারপাশটা তুলনামূলক স্তব্ধ হলেও লোকসংখ্যা বেশি। তাই মানুষের কথাবার্তায় সেই নিস্তব্ধতায় ভাটা পড়েছে। লেকের সিমেন্টের তৈরী বেঞ্চে বসে আছে নীলিমা ও সাদ। দাঁড়িয়ে আছে স্মরণ৷ সাদের এক পা মাটিতে আর আরেক পা ঠেকে আছে বেঞ্চে। কনুইতে ভর দিয়ে হাত তার গালে। চোখে অপার বিস্ময় নিয়ে দেখছে নীলিমাকে। নীলিমাও অবাক সাদের এ চাহনিতে। জিজ্ঞেস করলো,
" কি ব্যাপার? এভাবে কি দেখছো?"
সাদ বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
" দেখছিলাম যে তুমি ভাইয়ার মধ্যে কি এমন পেয়েছো যে ওর সাথে প্রেম করছো।"
লাজুক হাসলো নীলিমা। বললো,
" কিছু তো পেয়েইছি। এ কারণেই রিস্ক নিয়ে প্রেম করছি। "
সাদের কথায় রাগ হলেও নীলিমার কথায় যেনো বরফের ন্যায় গলে পড়লো স্মরণ। সাদ এবার বললো,
" শোনো নীলু আপু। তোমাকে আগে থেকেই কিছু বিষয় সতর্ক করছি।"
স্মরণ ও নীলিমা দু'জনই প্রশ্নাতুর চাহনিতে চাইলো। নীলিমা জিজ্ঞেস করলো,
" কি ব্যাপারে?"
" ভাইয়া কিন্তু ঘুমানোর সময় ভোঁ ভোঁ করে নাক ডাকে আপু! বিয়ের পর কিন্তু শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না। "
সাদের কথায় হো হো করে হেসে উঠলো নীলিমা। স্মরণ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো এ শুনে। সে কখন নাক ডাকে? আদৌ কি সে নাক ডাকে? জিজ্ঞেস করলো সাদকে,
" এ্যাই, আমি কখন নাক ডাকি রে? মিথ্যা বলিস কেনো।"
সাদ ঠোঁট বাঁকালো। বললো,
" মানুষ ঘুমের সময় নাক ডাকে। আর ঘুমিয়ে থাকলে যে সে নাক ডাকে বুঝবে কি করে? বুঝে তো তার পাশে শোয়া পাবলিক। ভোগান্তি তো তার হয়। তুমি আমার কষ্ট বুঝবে না ভাইয়া।"
বলেই সে মিছে দুঃখের ভান করলো। স্মরণ নিজের পক্ষের সাফাই দিতে উদ্যত হলো। বললো,
" বিশ্বাস করো নীলিমা। আমি নাক ডাকি না। একদম মিথ্যা বলছে ও। "
নীলিমা মিটিমিটি হাসলো। বললো,
" নাক ডাকতেই পারেন। সমস্যা নেই। আর আপনি নাক ডাকলেও তো ঘুমের জন্য জানবেন না। তাই শুধু শুধু সাদকে দোষ দেয়ার দরকার নেই। "
নীলিমাকে নিজের পক্ষ নিতে দেখে স্মরণের দিকে চেয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরলো সাদ। ভ্র নাচিয়ে বুঝালো, নীলিমা তার পক্ষে।
এদিকে স্মরণ বেচারা পড়েছে বিপদে। ছোট ভাই নামক এই আপদকে নিয়ে এসে যে প্রেমের বারোটা বাজাচ্ছে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে সে৷ স্মরণ পারে না এখনই সরোবরের পানিতে সাদকে নাকানিচুবানি দিতে৷ বহু কষ্টে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে সে।
সাদ এবার সবচেয়ে বড় বোমটা ফাটালো। নীলিমাকে বললো,
" ভাইয়ার আরেকটা খারাপ দিক তো তোমাকে বলিইনি। ভাইয়া বাথরুম থেকে আসার পর সে বাথরুমে আর যাওয়া যায় না৷ আদিম মানুষের মতো অপরিষ্কার। বাথরুম গন্ধ করে রাখে। ইয়াক!"
.
.
.
চলবে.......................................................................