দিনে দুপুরে কপাল ফাঁটিয়ে সাদিফ গম্ভীর হয়ে আছে। আদৌ কোনো কষ্টে আছে কিনা ঠাহর করা মুশকিল। অথচ বাড়িসুদ্ধ একেকজন মানুষের হাহাকার শুনে মনে হয়, এ যেন কঠিন শোকের সমাহর। সদ্য বিয়ে ভাঙ্গা কনের মর্মান্তিক ক্রন্দন সুর। কিংবা মাছের বাজারের হট্টগোল কি বলা যায় একে? বলা যায় বোধহয়। সাদিফের কপাল ফেঁটে যাওয়ার খবর শুনে কাজে ভাঁটা দিয়ে বাড়ির তিন জন মালি, দু'জন কাজের খালার পাশাপাশি কোত্থেকে কোন কাকও উড়ে এসে বসেছে সুদূর জানালার কাছটায়। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সাদিফের পানেই। মৃদু অথচ করুণ সুরে ডাকছে, কা কা! কা কা! সেই করুণ সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়েই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন সালমা সুলতানা। হাকিম ভূঁইয়া একপাশে থমথমে মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তাকে বোধকরি স্বান্তনা দেওয়ার প্রচেষ্টাতেই মেজো আর ছোট চাচা নানা অঙ্গভঙ্গিতে কিসব বলছেন। সাদিফ নিরবে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কপালটা বিতিকিচ্ছিরি ভাবে জ্বলছে। রঞ্জনের জন্য আনা মুরশিদ ডাক্তারকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে তার চিকিৎসার জন্য। লাল লাল ঔষধী পানির ছোঁয়া লাগা মাত্রই কপালটা এত জঘন্য ভাবে জ্বলে উঠে! সাদিফের চোয়াল শক্ত হয়। এতসব মানুষের ভীড়ে স'ন্ত্রা'সী মানুষীকে খুঁজে। নাহ্! মেয়েটা কোথাও নেই। চুপিসাড়ে লুকিয়ে তাকে দেখছেও না। বরং সাদিফের মাথা ফাঁটিয়েই সে উধাও!
“হ্যাঁরে সাদিফ, এসব কিভাবে হলো বলছিস না কেন? কে কপাল ফাঁটিয়েছে তোর?”
কথাটা শায়লা খাতুনের। গুণধর আসামির গুণধর মায়ের। সাদিফ মুখ কুঁচকে ফেলল। বলতে চাইল, “এইটা তোমার এক নাম্বার বাচ্চার কারসাজি, চাচি। ওরে আমার সামনে আনো। ওর দুইটা গাল লাল করে দেই।”
জবাব না পেয়ে শায়লা খাতুন আবার জিজ্ঞেস করলেন, “কথা বলছিস না কেন? এই সাদিফ! বেশি ব্যথা পেয়েছিস?”
সাদিফ বরাবরই নিরুত্তর। তা দেখে সবার মুখেই চিন্তার সুস্পষ্ট ছাপ। পাশ হতে কাজের খালা বিশেষজ্ঞদের মতো মাথা নাড়িয়ে বললেন, “ঘটনাতো সাংঘাতিক, চাচিহ্। কপাল ফাইট্টা মনে হয় মাথায় এফফেরকট করছে। স্মৃতিশক্তি মনে হয় অক্কা! শেষ!”
‘শেষ’ শব্দটা এত নাটকীয় সুরে টানা হলো যে শুনেই খিলখিলিয়ে হাসলো প্রান্ত। শুধরে দিয়ে বলল, “ওইটা এফেক্ট খালা। এফফেরকট না।”
সালমা সুলতানার অবশ্য সেসব শোনার সময় নেই। স্মৃতিশক্তির বিষয়টা মস্তিষ্কে ধরতেই হু হু করে কেঁদে উঠলেন তিনি। আহাজারি করলেন। সহসা এহেন হযবরল পরিবেশে বিব্রত হলেন মুরশিদ ডাক্তার। গলা খাঁকিয়ে বললেন, “সামান্য আঁচড়। স্মৃতিশক্তি হারানোর সম্ভাবনা নেই। আপনি কান্না থামান।”
ততক্ষণে সাদিফের গরম মাথায় অগ্নিকুণ্ডের তাণ্ডব চলছে। শক্ত চোয়ালটা বুঝি আরও দৃঢ়তা পেল? আকস্মিক তেঁতে উঠে বলল, “কান্না থামাবে কেন? কান্না থামানোর দরকার নেই। আমার আসলেই স্মৃতিশক্তি চলে গেছে ডাক্তার। আমি এদের কাউকে চিনতে পারছি না।” পরপরই আবার কাজের খালার দিকে চেয়ে কেমন চিন্তিত সুরে বলে উঠল, “কিন্তু এই মহিলাকে চিন্তে পারছি। এইযে! তোমার সাথে না আমার তিন বছরের সংসার ছিল? আমার একটু একটু স্মৃতি ফিরে আসছে। আর কাউকে চিনতে না পারলেও তোমাকে আমার মন ভুলেনি ছকিনা। একটু আগে ভালোবাসায় বনিবনা না হওয়ায় তুমিই আমার কপাল ফাঁটিয়ে দিয়েছ, তাই না?”
সালমা খাতুন কান্না ভুলে গেলেন। আশ্চর্য হয়ে একবার কাজের খালার হতবিহ্বল মুখপানে চেয়ে তারপর ছেলের দিকে তাকালেন, “তুই এসব কি বলছিস সাদিফ?”
“ঠিকই বলছি। আপনি কান্না থামালেন কেন আন্টি? আরও কাঁদুন। আমার স্মৃতিশক্তি অক্কা পেয়েছে। আমি আপনাদের কাউকে চিনতে পারছি না। সত্যি!”
হামিক ভূঁইয়া ধমকালেন, “এটা কেমন ধরণের বেয়াদবি, সাদিফ!”
সাদিফ বড়ই আশ্চর্য হল। পিটপিট চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে নিষ্পাপ কণ্ঠে আওড়াল, “আপনি কে আঙ্কেল? আপনাকেও তো চিনতে পারছি না।”
“তুমি আমারে চিনতে পারতেছো তো? আমি কৃষ্ণ। তোমার লগে আমারও চার বছরের সংসার আছিল।” গা দুলিয়ে হাসতে হাসতে কৃষ্ণ কথাটা বলা মাত্রই হাকিম ভূঁইয়া চ্যাঁচিয়ে উঠলেন, “তোমরা থামবে! এসব কি ধরণে ফাজলামো?”
কপালের ছোটখাটো বেন্ডেজ নিয়ে সাদিফ নির্বিকার উঠে দাঁড়ায়। কথা বলে না। ঘরে যেতে যেতে শুনে, কৃষ্ণ, প্রান্ত, মিতা, ধুতরা— সবক'টা হাড়বজ্জাত গলা ফাঁটিয়ে হু হা করে হাসছে। সাদিফ আস্তে করে দরজা লাগিয়ে দিল। মাথাটা ঝিম ধরে আছে। চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ নড়বড়ে, ঝাপসা। বাথরুমের আয়নায় নিজের মুখশ্রী ঝলমলিয়ে উঠতেই চোখ মুখ কুঁচকে মিনিট খানেক তাকিয়ে থাকে। কি বিদঘুটে লাগছে তাকে! তিন মাস ধরে দাড়ি কাটা হয় না। ঘন কালো দাড়ির বিপরীতে আসল চেহারা চেনা দায়। এজন্যই কি মানুষী নামক অসহ্য মেয়েটা তাকে ভালো ভাবে দেখে না? এমন হৃদয়বিদারক ভাবে তুচ্ছ করে? কথাটা সাদিফকে ভাবালো। আয়নার পেছন থেকে শেভিং ফোম আর রেজার বের করল সে। শেভিং ফোমটা গালে মাখতে মাখতে একঝলক তাকালো কপালের মাঝারি বেন্ডেজটায়। গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠল,
“সুন্দরী চলেছে একা পথে,
সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে?”
••••••••••••••
শহর থেকে এসে গ্রামে পা ফেলতেই বাদলের মন খারাপ হয়ে গেছে দুটো কারণে। প্রথমত, বাস থেকে নেমে সে গোরুর গোবরে পা দিয়ে ফেলেছে। দ্বিতীয়ত, গ্রামে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই সাদিফের কপাল ফেঁটে যাওয়ার গুঞ্জন কানে এসেছে তার। সাদিফের নাকি কাজের খালা রহিমার সঙ্গে তিন বছরের সংসার ছিল। সেই সংসারের ইতি টেনেই ছেলেটার কপাল ফাঁটিয়ে দিয়েছেন রহিমা। বিষয়টা জটিল, কষ্টদায়ক। তারচেয়েও জটিল প্রাণপ্রিয় বন্ধু হয়ে সাদিফ কিভাবে পারলো বাদলের কাছ থেকে তার তিন তিনটা বছরের সংসারের কথা লুকিয়ে রাখতে? মনে কষ্টের পাহাড়ে মূর্ছে গেল বাদল। কান্না পেল। তার বন্ধু যে তাকে কোনো কালেই গুরুত্ব দেয়নি, দিবে না— কথাটা তার আগেই বোঝা উচিত ছিল।
ঘড়িতে সাড়ে দশটা। নাস্তার টেবিলে বসে বাদল চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রহিমাকে দেখছে। মহিলার বয়স না হলেও পঞ্চাশোর্ধ। চেহারার চামড়া বুড়িয়ে গেছে। পরনে আলাভোলা পোশাক। ঘাড়টা একটু কুঁজো ধরণের। আবার শুনেছে তিনচারটে দামড়া দামড়া ছেলেমেয়েও আছে নাকি! বয়সে কমবেশি সাদিফের সমান। বাদল বুঝে পেল না, এমন একজন মহিলার সঙ্গে তার বন্ধু সম্পর্কে জড়াল কেমন করে? এ সম্পর্কের সূত্রপাত কি? কৌতুহলী মন প্রগাঢ়তায় আড়ষ্ট হলেও কাউকে জিজ্ঞেস করবার জো নেই। এসে দেখেছিল সাদিফ ঘুমাচ্ছে। এখনো তাই। নাস্তাও খেতে আসেনি।
কৌতুহলে বাদলের গলা দিয়ে খাবার নামলো না। এ বাড়ির সবই তার পরিচিত, অতি চেনা। বলা যায় অনেকটা নিজেরই ঘর তার। কোনোমতে খাওয়া শেষ করেই সে সাদিফের কাছে চলে যায়। মহাশয় ততক্ষণে ঘুম ছেড়ে গোসল করেছেন। চুল ঝাড়তে ঝাড়তে আয়নায় নিজেকে দেখছেন। বাদল তাড়াতাড়ি কাছে গিয়ে দাঁড়াল। উত্তেজিত কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল, “এসব কি শুনতাছি বন্ধু? এল্গা বিশ্বাস করন যায়? ছে! ছেহ্...”
চুলে চিরুনি চালিয়ে সাদিফের তেছড়া উত্তর, “ভালোবাসা বয়স মানে না।”
“তাই বলে রহিমা খালা? ওই বেডি তোরে নেংটাও দেখছে সাদিফ! ওর পোলা মাইয়াও তোর থেইকা বড় হইবো। বিধবা বইলা যা তা করবি?”
এ কথার উত্তর পাওয়া গেল না। সাদিফ তার দিকে তাকালও না। বিরক্ত বাদল কণ্ঠে তেজ নিয়ে বলল, “তুই না মানুষীরে পছন্দ করোছ? তাইলে এইসব করলি কখন?”
চিরুনি চালানো হাত থেমে গেল। কপালের বেন্ডেজটা দেখে মৃদু হাসল সাদিফ। হঠাৎ কিছু মনে পরার মতো করে বলল, “মানুষীকে দেখেছিস?”
“হ। আসার সময় ছাদে যাইতে দেখলাম।”
“আর কেউ ছিল সাথে?”
“সব পোলাপানই আছিল। খালি রঞ্জন ভাই ছাড়া। শুনলাম, বেচারায় পায়খানার জ্বালায় ঘর থেকে বাইর হইতে পারতাছে না।”
রয়েসয়ে চুল সেট করলো সাদিফ। গায়ে সাদা রঙের গেঞ্জি জড়ালো। কালো জ্যাকেট পরলো। এরপর বাদলকে বলল, “চল, ছাদে যাই।”
•••••••••••••
শীতের সকালটা আজকে মনোরম। সূর্যীমামা রাগ কমিয়ে একটু একটু দেখা দিচ্ছেন। উষ্মতায় মন ঠান্ডা, প্রাণ ঠান্ডা!
বাড়ির আমের আচারগুলোতে ফাকুন্দা পরার উপক্রম। সেসুবাদে একটা একটা আচারের বোয়োম নিয়ে তা রোদে দিতে ছাদে এসেছে তারা ভাইবোন। মিতা একটা আচার চট করে মুখে তুলে বললো, “মেজো চাচির আচারগুলো এত মজারে মানুষী! খেয়ে দেখ। আত্মা শান্তি হয়ে যায়। এই প্রান্ত! শহরে তো এসব অত পাস না। খেয়ে দেখ একটা। নে!”
প্রান্ত নাক কুঁচকে বলল, “আমি আচার খাই না।”
মিতার বাড়িয়ে রাখা আচারটা নিমিষেই খেয়ে নিল ধুতরা। প্রান্তর নাক কুঁচকানো দেখে ঢং করে বলল, “বাদ দাও মিতাপু। ওর রঞ্জন ভাইয়ার মতো পেটে সমস্যা আছে। আচার খেলে বাথরুম থেকে বের হতে পারবে না।”
প্রান্ত রেগে গিয়ে মুখ ফুলালো। আড়চোখে দেখল, সে বাদে সবাই-ই কমবেশি আচারগুলো চেখে চেখে দেখছে। তার মানুষী বুবুও! প্রান্তর মন খারাপ হলো। কি স্বার্থপর ওরা! আরেকবার সেধেও দেখল না।
মনে মনে বলা কথাটা যেন মানুষী অচিরেই শুনতে পেল। বোনের লুকায়িত শক্তি দিয়ে। হেসে ডাকল, “কাছে আয় ছেলে। একটু খেয়ে দেখ। ভালো লাগবে।”
যেভাবে হঠাৎ বৃষ্টি মন বিষিয়ে দেয়? সেভাবেই হঠাৎ করে হাঁপিয়ে ওঠা বাদল হাজির হলো সেখানে। হাঁপাতে হাঁপাতে অভিযোগ করল, “তোরা আমাকে রেখে আচার খাচ্ছিস কৃষ্ণ? আমাকে একবার ডাকলি না?”
তড়িৎ বেগে বাদলের দিকে তাকাল মানুষী। ঠিক বাদলের দিকে নয়। বাদলের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা সাদিফের দিকে। লোকটার ঠোঁটের কোণে সুস্পষ্ট কুটিল হাসি বিদ্যমান। যেন বলছে, “পেয়েছি তোকে! এবার কি করবি?”
মানুষী কোনো কিছুতেই অতশত ভয় পায় না। সে সাহসী বাবার সাহসী মেয়ে। কিন্তু এই মুহুর্তে তার সাহসগুলো অতিশয় পালিয়ে গেছে। সেই জায়গা পূরণ করে নিয়েছে বিস্তর ভয়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ। মানুষী দাঁড়িয়ে গেল। পালানোর পথ খুঁজল। কিন্তু কই পালাবে? পেছনে রেলিং, সামনে সাদিফ। বামে ডানে খোলা ছাদ। দিকবিদিকশুন্য হয়ে খোলা ছাদের এককোণে যেতে নেওয়ার পূর্বেই বড় বড় পা ফেলে সামনে এসে দাঁড়াল সাদিফ। আলতো শক্তিতে মানুষীর বেণুনী টেনে ধরল নিমিষেই। গমগমে কণ্ঠে বলল, “তোরা সবাই নিচে যা। মানুষীর সাথে আমার একা কথা আছে। তোদের পরে বারেক চাচার দোকানে নিয়ে যাবো। এখন যাহ্!”
বারেক চাচার দোকানে সুস্বাদু বিরিয়ানি পাওয়া যায়। এ গ্রামের সবচেয়ে পুরোনো আর জনপ্রিয় বিরিয়ানি। লোভনীয় স্বাদটা মনে হানা দিতেই ঢোক গিলল কৃষ্ণ। উৎফুল্ল হয়ে বলল, “চল, যাইগা। আমগো এনে কাজ নাই।”
ওরা সবাই চলে যেতেই সাদিফ এবার সশব্দে হাসল। বিশ্রী কণ্ঠে বলল, “এবার তোর কি হবে সুন্দরী?”
বেণীতে টান পরতেই ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠল মানুষী, “বেয়াদব লোক! বেণী ছাড়ুন।”
“সে সরি ফার্স্ট। তারপর ভেবে দেখবো।”
“বলবো না। আপনার মতো লোকের আরও কপাল ফাঁটানো উচিত। যা করেছি ভালো করেছি।”
সাদিফ আবারও হাসল, “তাই নাকিরে চুন্নি? তোর মাথাও ফাঁটিয়ে দেই?”
“দিন! আমিও আপনাকে ভয় পাই না।”
সাদিফ একটু ভাবল। ভাবুক হল। হঠাৎই মানুষীর বেণুনী ছেড়ে হাত ধরল শক্ত বাঁধনে। নিগূঢ় স্বরে বলল, “তোকে আর মারবো না। বিয়ে করে ফেলব। আয়।”
একটুর জন্য আঁতকে উঠল মানুষী, “মজা করছেন?”
“মজা করবো কেন? আমি তোকে বিয়ে করতে চাইছি এটা তোর কাছে মজা লাগছে?”
“আমি আপনাকে বিয়ে করতে যাবো কোন দুক্ষে? আয়নায় নিজের চেহারা দেখেছেন? ইতর লোক একটা!”
সাদিফ পিটপিট চোখে তাকাল। এত নির্মলতা সেই চাহনিতে! এত শুদ্ধতা! অবাক কণ্ঠে বলল, “আমি ইতর? দেখ, সেভ করেছি! কি হ্যান্ডসাম লাগছে! আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলে এ গ্রামে দুটো পাবি?”
গুন্ডাদের মতো মুখভর্তি ঘন দাড়ির অদলে ঢাকা সুদর্শন চেহারাটা আকস্মিক খেয়াল করল মানুষী। কিয়ৎক্ষণ চেয়েই রইলো। লোকটাকে পরিষ্কার লাগছে। মানুষ মনে হচ্ছে। অবশেষে!
মানুষীর মন্থর বাক্য, “আপনাকে আমার পছন্দ না।”
“আমারও না।”
“তাহলে বিয়ে করবেন কেন?”
“বুঝতে পারছি না। মনে হলো, তোকে বিয়ে করে আমার ইতরামি দেখানো উচিত।”
হাতের বাঁধনে জোড় খুব। বজ্জাত লোকটা বিশ্রী ভাবে ধরে আছে। শত টানাটানি করেও ফল শূণ্য। মানুষী রেগে গেল, “হাত ছাড়ুন অসভ্য লোক! আমি আপনাকে মরে গেলেও বিয়ে করবো না।”
“করবি। স্বামী সেবাও করবি। তিনদিন ধরে কাপড় ধোঁয়া হচ্ছে না। মা মীর জাফরি করছে। বিয়ে করে তুই সেই কাপড় ধুঁয়ে দিবি।”
বলতে বলতে সাদিফ হঠাৎ থেমে গেলে। চুপসে গেল মানুষী নিজেও। সিঁড়ি ঘরের সামনে সালমা সুলতানা আর শায়লা খাতুন দাঁড়িয়ে আছেন। আচারগুলো ছাদে ঠিকঠাক রাখা হয়েছে কি-না তা দেখতেই মূলত ছাদে এসেছিলেন তারা।
.
.
.
চলবে..........................................................................