এক হাজার টাকা - পর্ব ১৬ - মৌরি মরিয়ম - ধারাবাহিক গল্প


কান্নার মাঝেই হঠাৎ বললাম,
"এক্ষুণি বাসায় যাব।"

আদনান বলল,
"ঠিক আছে বাসায় গিয়ে শান্ত হও। পরে একটা কল দিও। তোমার নতুন ফোন নাম্বার কিন্তু এখনো আমাকে দাওনি। আমার কিন্তু কল দেয়ার সুযোগ নেই।"

আমি মাথা নেড়ে চলে এলাম। আর কিছুই বলতে পারলাম না। এমনকি আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে এ কথাটাও তাকে বলতে পারলাম না। অথচ এই কথাটা আমি প্রথমেই বলতে চেয়েছিলাম। বাসায় এসে আমি ভেতরে না ঢুকেই ছাদে ছোটচাচ্চুর কাছে চলে গেলাম। চাচ্চু নিশ্চয়ই ঘুমে। ছুটির দিনে সে দুপুরবেলায় ঘুম থেকে ওঠে। জানি এখন
ঘুম থেকে ডেকে তুললে সে বিরক্ত হবে, ধমকা-ধমকি করবে। কিন্তু আমার উপায় নেই৷ আমার যাবতীয় সমস্যার সমাধানের পথ কেবলমাত্র এই মানুষটাই জানে। আমি
দরজায় নক করতেই প্রায় সাথে সাথে দরজা খুলল চাচ্চু। সে আগেই উঠেছে দেখে কিছুটা স্বস্তি পেলাম। বললাম,
"সর্বনাশ হয়ে গেছে চাচ্চু ।"

চাচ্চু বিরস মুখে বলল,
"তোর আর কাজ কী! আগে চোখের পানি মোছ। ফ্যাচফ্যাচানি কান্না বন্ধ করে তারপর বল কী অঘটন ঘটিয়েছিস?"

চাচ্চু ঘর থেকে বের হয়ে দোলনায় বসলো। আমি তার পাশে গিয়ে বসলাম। তারপর বললাম,
"এতবড় অঘটন জীবনেও ঘটাইনি আগে।"

"কী করেছিস?"

আমি আদনানের লেখা চিঠিটা ব্যাগ থেকে বের করে চাচ্চুর হাতে দিলাম। সে চিঠি পড়ে বলল,
"করেছিস টা কী তুই! এতো ভয়াবহ সর্বনাশ! সকাল ১০ টা তো সেই কখন পার হয়ে গেছে। দেখা করেছিস?"

"দেখা করেই তোমার কাছে এলাম।"

"কী কথা হলো? এবার ঠান্ডা মাথায় সব শুনেছিস তো নাকি আবার কোনো আকাম করছিস?"

আদনানের সাথে আমার যা যা কথা হলো সব খুলে বললাম। চাচ্চু বলল,
"আদনান ছেলেটার জন্য মায়া লাগছে। কতটা ভালোবাসলে এত টাকাপয়সা খরচ করে এতদূর আসে কেউ! তাও একদম আন্দাজের উপর এসেছে। তুই যদি তোর বাড়ির লোকেশন মিথ্যা বলতি, তোকে তো ও খুঁজেই পেত না।"

"আমি এখন কী করব চাচ্চু ?"

"তোর মন কী বলে।"

"আমি ঠিক বেঠিক ভাবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি। আমি পাগল হয়ে গেছি আদনান আসাতে৷ দ্বিতীয়বার পাগল হয়েছি ওকে দেখে। আমি ওকে প্রায়ই সন্দেহ করতাম যে
মানুষটার ছবি ওর প্রোফাইলে দেওয়া সেটা ও না। যখন দেখলাম সেটাই ও, আমি পাগল হয়ে গেলাম। তৃতীয়বার পাগল হয়েছি ওর কথাগুলো শুনে।"

"সেটা তোকে দেখেই বুঝতে পারছি।"

"চাচ্চু আমি বিয়েটা ভেঙে দেই?"

চাচ্চু মাথা চুলকে বলল,
"বিয়ে ভেঙে দেই বললেই দেওয়া যায় না। আবার যায়। আসলে সবকিছু নির্ভর করছে কমল ব্যাপারটা কীভাবে নেয় তার ওপর।"

"কমল খুব ইজিলি নেবে চাচ্চু । সে অনেক ভালো মানুষ। অনেক আন্ডারস্ট্যান্ডিং। তাকে যখন আমি পুরো ঘটনা বুঝিয়ে বলব সে বুঝতে পারবে। আর আমাদের পাস্ট
নিয়ে একদিন কথা হচ্ছিল। সেদিন তাকে আমি আদনানের কথা বলেছিলাম।"

চাচ্চুর মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। আমার পিঠ চাপড়ে বলল,
"সাবাস বেটি। এবার বল কমল কী বলেছিল?"

"ইজিলি নিয়েছিল।"

"তাহলে এত ভাবছিস কেন?"

"কারণ এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে। বিয়ের দিন তারিখ সব ঠিক। শপিং করাও শুরু হয়ে গেছে। দুই ফ্যামিলিকে কীভাবে ম্যানেজ করব?"

"শোন এইসব এঙ্গেজমেন্ট, বিয়ের তারিখ, শপিং এগুলার চেয়ে মানুষের জীবনের সুখ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এইসব কিছু করে তুমুল আয়োজনে বিয়ে দিয়েও বিয়ে টেকে না। আর এতো কেবল এঙ্গেজমেন্ট। তুই কমলকে সব খুলে বল। তুই ওর ব্যাপারে যা বলেছিস আর আমি যতটুকু বুঝেছি ওর ফ্যামিলিকে ওই ম্যানেজ করতে পারবে। আর এদিকটা আমি সামলাবো।"

আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,
"কিন্তু চাচ্চু ..."

"কী?"

"কমল বোধহয় আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। কষ্ট পাবে সে।"

"তাহলে বিয়ে করে ফেল।"

"তার আগে নিজের জীবন শেষ করে ফেলব।"

চাচ্চু আমার গালে আচমকা এক চড় মারলো। ঠিক সেই মুহূর্তে মা ছাদে এসে ঢুকলো। চাচ্চু আমি দুজনেই মা কে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। মা অবাক হয়ে বললেন,
"কী হয়েছে? তিন্নি কী করেছিস তুই? রূপক তোকে চড় মারলো কেন?"

ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা দুজনেই কথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মা বললেন,
"তোরা দুটোতে চোরের মত করছিস কেন? কী হয়েছে আমাকে এক্ষুনি বল। রূপক তুই বল তিন্নি কাঁদছিল কেন?"

চাচ্চু এবং আমি দুজনেই জানি এখন মাকে মিথ্যে বলে পার পাওয়া অসম্ভব। তাই চাচ্চু মা কে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলল। সব শুনে মা-ও একটা চড় মারলেন আমাকে। তারপর
বললেন,
"খবরদার বলে দিচ্ছি, বিয়ে ভাঙার কোনো চেষ্টা করলে তোর এমন অবস্থা করব যে নিজেকেই নিজে চিনতে পারবি না। যার জন্য বিয়ে ভাঙতে চাচ্ছিস তাকে কতটুকু চিনিস
তুই? কোথাকার কোন অজানা অচেনা ছেলে, বাপ-মা গার্জিয়ান কিছু নাই তার জন্য এঙ্গেজমেন্ট হওয়া বিয়ে ভাঙতে যাচ্ছে। তাও আবার কমলের মত এত ভালো পাত্র।
এত ভালো পরিবার। দুজনেই মাথায় রাখবি, বিয়ে শুধু দুটো মানুষের মধ্যে হয় না। দুটো পরিবারের মধ্যেও আত্মীয়তা হয় বিয়ের মাধ্যমে। এখন বিয়ে ভাঙলে দুটো পরিবার অসম্মানিত হবে।"
.
.
.
চলবে........................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp