পাকাপোক্ত হাতে ড্রাইভিং করতে থাকা ম্যানেজার সুমন চোখা চোখে খুব নিপুণ দৃষ্টিতে দেখছে তন্ময়ের সুদর্শন তবে গম্ভীর মুখ। অপরিচিত কেউ হয়তো-বা এই গম্ভীর মুখ দেখে কোনো অনুভূতির হদিস করতে পারবে না, কিন্তু সুমন ঠিকই করতে পেরেছে। দীর্ঘসময় ধরে পাশাপাশি কাজ করে সে একটু হলেও অল্পভাষী তন্ময়কে পড়তে পারার ক্ষমতা অর্জন করেছে। অনুমান করতে পারছে তন্ময়ের গম্ভীর মুখের আড়ালের অন্যমনস্ক, অস্থির সত্তা। অবচেতন ভঙ্গিতেই সে ফোন স্ক্রিনে ক্ষণে ক্ষণে দৃষ্টি ফেলে। বাকিটা সময় শান্ত হাতে ঊরুতে রাখা অ্যাপল ল্যাপটপের কি-বোর্ড চাপে থেমে থেমে। বাইরের কোলাহল হতে আজাদ গাড়ির ভেতরটা খুব নীরব। পিনপতন নীরবতা ভেঙে শুধুই কি-বোর্ডের সূক্ষ্ম ধ্বনি কর্ণধার ছুঁয়ে যায় কিছুক্ষণ পরপর। বাইরের আকাশ মেঘলা। বৃষ্টি হবে হবে ভাব। তবে হবার সম্ভাবনা কম। ঘড়ির কাঁটা তখন সকাল দশটা নয়-তে। তন্ময় নাস্তা করেনি শুনেছে সুমন। জয়া বেগম দুয়ারে দাঁড়িয়ে বারবার করে ছেলেকে খাওয়াতে ব্যাকুল ছিলেন। সুমন তো তখন শাহজাহান বাড়ির দোরগোড়াতেই দাঁড়িয়েছিল। ঠিক দেখেছিল তন্ময় কেমন ওপরে চাইছে! সুমন কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে তন্ময়ের অস্থিরতা কাকে ঘিরে রয়েছে। এসময়ে সে আয়নায় চেয়ে চাপাস্বরে বলে,
‘স্যার, ব্রেকফাস্ট করে নেবেন, কী?’
তন্ময় প্রত্যুত্তরে শুধুই শান্ত চোখে চেয়েছে। সেই চাওনি পড়তে পারে সুমন। তখনই নিজের মুখ বন্ধ করে ফেলে। আর সে আগ বাড়িয়ে খাওয়া-দাওয়ার দুর্বল প্রসঙ্গে যাওয়ার সাহস করে না। দুটো ধারালো তীক্ষ্ণ বাক্য ছুঁড়ে মারলেই সুমনের ফকফকে মন বিষাদে জর্জরিত হবে। এমনিতে মানুষটা ভদ্র, স্বল্পভাষী তবে মেজাজ খারাপের সময় দু'চারটে তেতো কথা মুখের ওপর শুনিয়ে দেয়। সুমন সেই তেতো স্বাদ পেয়ে শুধরেছে। নিজ ইচ্ছেতে কক্ষনোই সেই তেতো কথা শুনতে চায় না।
তন্ময় অবশেষে ল্যাপটপ বন্ধ করে গা এলিয়ে দেয়। সিটে মাথাটা এলিয়ে দু'চোখ বন্ধ করে নেয়। ডান হাতের আঙুল গুলো ব্যস্ত হয় কপাল ডলতে। তার মাথা ধরেছে বিশ্রী ভাবে। রাতে তো ঘুমোয়নি। সাথে অরুর ভাবনা আরও ব্যথা বাড়িয়ে তুলছে। মেয়েটা এমনভাবে মন খারাপ করেছে যে তন্ময়েরই এখন মেজাজ খারাপ হচ্ছে। অস্থির লাগছে। অবচেতন মনের ইচ্ছে করছে সুমনকে বলতে,
‘গাড়িটা ঘুরিয়ে ফেলো। বাড়ি ফিরব।’
আপনমনে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এসময়ে পার্সোনাল ফোন খানা বেজে ওঠে। ফোন তন্ময়ের পাশেই ছিল নজরবন্দী। সহজেই দেখতে পায়—অরুর ছবি স্ক্রিনে ভাসছে। ছবিটা শাবিহার মেহেন্দি অনুষ্ঠানের। দু'হাতের মেহেদি দেখিয়ে হাসছে ক্যামেরার চেয়ে। তন্ময়ের নামের অক্ষরটি ফকফকে সাদা তালুতে সুস্পষ্ট।
তন্ময় হঠাৎ করে আজ এবং এক্ষণ খেয়াল করে তার ফোনে অরুর নাম্বার অরু দিয়েই সেভ করা। সেদিন রিয়ানের ফোনে দেখেছে, রিয়ান খুব সুন্দর একটা নিকনেম দিয়ে শুহানির নাম্বার সেভ করেছে। তখন অতটা না ভাবলেও এখন ভাবছে। সে কখনো অন্য কোনো নাম দিয়ে সেভ করার চিন্তাভাবনা করেনি– তবে আজ হঠাৎ করে মনে হচ্ছে, শুধু অরু নামটা মানাচ্ছে না। অন্যকিছু দিতে হবে।
তন্ময় কল রিসিভ করে ফোন কানে ধরে। আনমনে ঠোঁটের কোণের দীর্ঘতা বাড়ে। ফের সিটে মাথাটা এলিয়ে দেয়। চোখ বন্ধ করে। অরুর কণ্ঠে অভিমানের ছোঁয়া,
‘তন্ময় ভাই!’
তন্ময় নিঃশব্দে হাসে। প্রত্যুত্তরে নাকমুখে শব্দ করে, ‘হুমমম?’
বড্ড ভারি আর গভীর শোনায়। অরু কাঁদোকাঁদো গলার স্বরে বলে,
‘আপনি আমাকে না বলে চলে যেতে পারলেন।’
তন্ময়ের ঠোঁটের হাসি চওড়া হয়। বন্ধ চোখে ঝটপট এঁকে নেয় অভিমানে ভেজা মুখখানি। দুষ্টুমি করেই বলে সে,
‘পারলাম তো।’
অরুর কণ্ঠে স্পষ্ট অবিশ্বাস, ‘আপনি আবার মজাও করছেন? জানেন আমি কত কষ্ট পাচ্ছি?’
তন্ময় মিহি স্বরে বলে, ‘জানি না তো। না বললে কীভাবে জানবো?’
অরু চুপ করে যায়। নাক টানছে। হয়তো কাঁদছে। তন্ময় হেসে যায় নিঃশব্দে। এবেলায় নীরবতা চিড়ে বলে,
‘চিরকুট রেখে এসেছিলাম। পেয়েছিস?’
অরু আকস্মিক চ্যাঁচিয়ে ওঠে, ‘কীহ! কোথায়!’
তারপর ওর পদচারণের ধ্বনি ভেসে আসে। হয়তো-বা হন্য হয়ে চিরকুট খুঁজছে। তন্ময় ফোন কানে ধরে সানন্দে অপেক্ষা করে। অরু বোধহয় পেয়েছে। মিনমিন করে বলে,
‘এতো মিষ্টি করে বললেই বা কী! আপনিতো আমাকে মুখে মুখে বলে যাননি।’
তন্ময় ঠোঁট ঠোঁট টিপে হাসি রুখে শুধায়, ‘মুখে মুখে?’
পরপর কণ্ঠ খাদে নামিয়ে চাপা গলায় বলে, ‘মুখে মুখ লাগিয়েই বলতে হবে? তাহলে ফিরে আসি?’
অরু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে। ত্বরিত প্রত্যুত্তরে বলে, ‘মুখে মুখে বলতে সামনা সামনি। সরাসরি।’
তন্ময় এবারে ভারি স্বরে হেসে ফেলে আওয়াজ তুলে। বলে, ‘ওহ। ভুলে বুঝেছি তাহলে।’
সুমন নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে। সে অবাক হতেও ভুলে গেছে। আড়চোখে দেখছে তন্ময়ের নরম মুখ। এতক্ষণ কেমন গম্ভীর হয়েছিল৷ আর যেই না বউ কল করেছে, ওমনি সব গম্ভীরতা শেষ। তবে একদিকে ভালো হয়েছে। সুমন বেঁচেছে। তার ইচ্ছে করছে গিয়ে অরুর পা-জোড়া জড়িয়ে ধরে বলতে,
‘ম্যাডাম বেশিবেশি কল করুন। এভাবেই এই লোককে হাতিয়ে রাখুন। নাহয় আমাদের মতো নিরীহ মানুষকে ভুগতে হয়।’
অরু গলা কেশে পরিষ্কার করে প্রশ্ন করে, ‘খেয়েছেন?’
তন্ময় মিথ্যে বলতে পারে না। বলে,
‘উঁহু।’
‘আশ্চর্য! কটা বাজে? এক্ষুনি কোথাও গাড়ি থামিয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিন। এক্ষুনি।’
তন্ময় ভ্রু নাচিয়ে আদুরে ভঙ্গিতে শুধায়, ‘হুকুম করছিস?’
অরু টেনে বলে, ‘করছিইইইই। খাবেন কিনা বলুন।’
তন্ময় হার মেনে নেয়, ‘খাব।’
‘আমাকে ছবি তুলে পাঠাবেন কী খাচ্ছেন! আধঘন্টার মধ্যে।’
চোখমুখ বাম দিয়ে রেখে তন্ময় হেসে ফেলে। দেখো কাণ্ড! তাকেই ধমকানো হচ্ছে! আশকারা পেয়ে মাথায় চড়ে নাচছে। এসময়ে রুবির ডাক পড়ে অরুর জন্যে। হয়তো-বা অরুর দুয়ারে এসে দাঁড়িয়েছে,
‘শোন, তাড়াতাড়ি রেডি হবি। বলে দিয়েছেন দুলাভাই, তিনটায় বেরুব আমরা।’
তন্ময়ের হাসিটুকু মুছে যায় মুহূর্তেই। ভ্রুদ্বয়ের মধ্যিখানে ভাঁজ পড়ে ডজনখানেক। প্রশ্ন করে,
‘কোথায় যাবি? আর দুলাভাইটা কে?’
অরু গদগদ গলায় বলে, ‘কে আবার? অয়ন ভাইয়া! আমরা আজ বিকেলে রেস্টুরেন্ট যাব। ভাইয়া ট্রিট দেবেন।’
তন্ময় বিরক্ত হয়। মেজাজ খারাপ হয়। সে নেই আর এই মেয়ে ঘুরতে বেরুবে সেজেগুজে তা তার পছন্দ হচ্ছে না। প্রত্যুত্তর না পেয়ে অরু মিষ্টি ভঙ্গিতে সাবধান স্বরে ডাকে,
‘তন্ময় ভাই! আমি যাই ওদের সাথে?’
অরুর এইটুকু কথাতেই তন্ময়ের মন শান্ত হয়। মেজাজ নরম হয়ে আসে,
‘আচ্ছা। বড়ো আপুদের পাশেই থাকবি। এদিক-ওদিক একা যাবি না। যাবার সময় কল করবি। এখন রাখছি।’
কল কেটে তন্ময় স্ক্রিনে চায়। অরুর নামটা এডিট করতে বসে। কী দেবে ভেবে পায় না! অনেকটা সময় ভাবে। ইতস্তত করে। একসময় মাত্র চারটা ইংরেজি অক্ষর বসিয়ে সেভ করে ফেলে। স্ক্রিনে ভাসছে,
‘Jaan’
———
দিনাজপুর পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর দুটো। হোটেলের পার্কিং লটে এসে থেমেছে তাদের গাড়ি৷ অদূরেই স্যুট-কোট পরে দাঁড়িয়ে আছে চারজন লোক। তাদের মধ্যের জন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রতন হাওলাদার। তন্ময়ের পার্টনার। মিটিং তার সাথেই। ভদ্রলোকের হাতে গোলাপ ফুলের বুকে। তন্ময় বেরিয়ে আসতেই রতন সাহেব এগিয়ে আসেন। বিনয়ের সহিত হাত বাড়িয়ে বলেন,
‘মিস্টার, শাহজাহান। নাইস ঠু মিট ইউ।’
তন্ময় হাত মেলায়। প্রত্যুত্তরে বলে, ‘নাইস ঠু মিট ইউ এজ ওয়েল, মিস্টার হাওলাদার। হোপফুলি ইউ আর ডুইং গ্রেট!’
বুকে-টা দু'হাতে এগিয়ে দিতে নিয়ে রতন সাহেব হেসে বলেন, ‘অ্যাবসোলুটলি।’
তন্ময় বুকে নেয়। এরপর সুমনের হাতে ধরিয়ে দেয়। রতন সাহেবের সাথে কথা বলতে বলতে এগুতে থাকে হোটেলের দিকে। রতন সাহেব লাঞ্চের অফার করেন। দুপুর যেহেতু, একসাথে খাওয়াও হবে সাথে ব্যবসায়িক আলাপ। তন্ময় বিনয়ের সাথে রাজি হয়। দু'জন এগোয় লবিতে।
এরমধ্যে দু'বার ফোন বাজে তন্ময়ের। তন্ময় ধরতে পারে না। সাইলেন্ট করে রাখে। লাঞ্চ সেরে আজকের জন্য বিদায় নিয়ে উঠতে উঠতে বেলা তিনটা। হোটেল চেকিং করে ঘরে ঢুকতেও সময় লাগে। ক্লান্ত ভঙ্গিতে বিছানায় বসে সে ফোন হাতে নেয়। অরু কল করেছিল, ভিডিও কল। তন্ময় কল ব্যাক করে। কল রিসিভ হয় সময় নিয়ে। অরু সেজেছে। কীসব মেখে একদম পুতুলের মতো হয়ে আছে! অবশ্য এমনিতেই পুতুল দেখতে, সাজগোজে করায় দ্বিগুণ রূপে লাগে।
‘কোথায় ছিলেন?’
তন্ময় ক্লান্ত শরীরে শুয়ে পড়ে বাম হাতে মাথা রেখে। ডান হাতে ফোন ধরে রেখেছে মুখের সামনে। অরুকে ভালোভাবে দেখে বলে,
‘ব্যস্ত ছিলাম। তুই কি পরেছিস?’
অরু কী পরেছে তা দেখাবে বলে ফোন রেখেছে ড্রেসিং টেবিলের ওপর। ও একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। শাড়ি পরেছে। জর্জেটের সফেদ শাড়ি। তন্ময়ের চূড়ান্ত বেহায়া নজর সোজা গিয়ে থামে অরুর পেটে। অরু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখাচ্ছে বলেই হয়তো-বা, পুরো ফরসা পেট সে দেখতে পেয়েছে। লাল তিল গুলো উঁকি দিচ্ছে। তন্ময় অসহায় ভঙ্গিতে ঢোক গিলে। অরু ক্যামেরার কাছে আসতেই পেটের দৃশ্য আরও স্পষ্ট হয়। তন্ময় সেদিক চেয়ে নির্বিকার কণ্ঠে বলে,
‘তুই কি আমায় শাস্তি দিচ্ছিস বলে আসিনি বলে?’
অরু আশ্চর্য হয়। দ্রুত ফোন হাতে নেয়। সরল মুখখানা দেখিয়ে বলে, ‘আমি? কখন? কী বলেন?’
তন্ময় লম্বা শ্বাস নেয়। ‘এক্ষণ এটা পরিবর্তন কর। কামিজ পরে যাবি। আর নাইলে যাবার দরকার নেইতো।’
অরু হতভম্ব হয়ে থাকল। হলো কী? ‘শাড়ি ভালো লাগছে না?’
তন্ময় নিগূঢ় চোখে চেয়ে বলে, ‘ওই ভালো আমি এসে দেখব যখন তখন পরিস৷ এখন চেঞ্জ কর। ফাস্ট…ফাস্ট।’
অরু হতাশ, ‘সময় নেইতো।’
‘যাওয়ার দরকার নেই।’
অরু নাকমুখ ফুলিয়ে চেয়ে আছে। তন্ময় ওই আদুরে মুখে চেয়েও ছাড় দেয় না। অগত্যা অরু ভিডিও কল রেখেই কামিজ নিয়ে ওয়াশরুম ছোটে। এরমধ্যে তন্ময় শার্ট খুলে ফেলেছে। তার গরম লাগছে। এই মেয়েটা তাকে শান্তি দেবে না তার শপথ করে রেখেছে বোধহয়। অরু শাড়ি পরিবর্তন করে কামিজ পরেছে সিল্কের। ভোঁতা মুখে এসে আওড়ায়,
‘আপু কত সময় নিয়ে, কষ্ট করে পরিয়েছিলেন! বাকিরাও শাড়ি পরেছে।’
তন্ময়ের কাটকাট প্রত্যুত্তর, ‘ওরা পরলে পরুক, তুই পরবি না।’
অরু অভিমানী চোখে চেয়ে বলে, ‘দূরে গিয়ে আপনি আরও কঠিন হয়ে গেছেন। কখন থেকে ধমকাচ্ছেন!’
তন্ময় মুহূর্তেই নরম হয়ে যায়। কণ্ঠ আরও নরম হয়, ‘ধমকাচ্ছি না। কখন বেরোবি?’
অরু গোমড়া মুখে বলে, ‘এখনই।’
‘আচ্ছা, যা। সাবধান ওকে?’
অরু মাথা দোলায়। তখনই দীপ্তর ডাক পড়ে। দরজায় করাঘাত করছে। অরু বলে, ‘যাচ্ছি।’
‘উমম।’
———
পার্টনারের সাথে পরদিনের মিটিং শেষ করে সাথে সাথে তন্ময় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বিশ্রামও নেয়ার প্রয়োজনবোধ করে না। ঢাকা পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত দশটা বাজবে বোধহয়। সুমন গাড়ি চালাচ্ছে। আবহাওয়া ভালো না। সম্ভবত ঝড়বৃষ্টি হবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরও তাই সংকেত করছে। তাদের ফেরার রাস্তাটা একটু এলোমেলো।
তার ওপর ঘুটঘুটে অন্ধকার। রাস্তায় গাড়ি কম। মানুষের তেমন যাতায়াত নেই। সুমন এফএম ছেড়েছে। নাইন পয়েন্ট জিরো-তে প্রোগ্রাম চলছে।
প্রোগ্রামটি হচ্ছে, অজানা মানুষের মনের মানুষের জন্য রিকোয়েস্টেড গান প্ল্যা করা। তন্ময় বিরক্তি নিয়ে চাইল সুমনের দিকে। সুমন শুকনো হেসে বলল,
‘স্যার, ব্যাপারটা কিন্তু রোমান্টিক।’
তন্ময় কপাল কুঁচকে বলে,
‘রোমান্টিকে কী আছে এখানে ?’
‘রোমান্টিক না বলতেছেন? এইযে প্রিয় মানুষকে ছোটো মেসেজ দিয়ে মনের অনুভূতি বোঝাতে— যেই গান ছাড়তে বলে, আর তা চলে… এটা রোমান্টিক না? এরচেয়ে রোমাঞ্চকর কিছু আছে? তাইলে আর রোমান্টিক কী?’
তন্ময় দৃষ্টি নামায়। চায় ল্যাপটপে। সুমন জবাব না পেয়ে ভাবে এই বুঝি প্রত্যুত্তর আর আসবে না। কিন্তু আসে, হঠাৎ করে তন্ময় জবাবে বলে,
‘চোখে চোখ রাখার চেয়ে রোমান্টিক কিছু হয় না।’
সুমন জবাব দিতে চাইল তখনই সে খেয়াল করে সামনে থেকে হঠাৎ করে বেপরোয়া ভঙ্গিতে ছুটে আসছে হলুদ রঙের ট্রাক। ট্রাক বোধহয় ব্রেইক ফেইল করেছে। ঝড়ের বেগে ছুটে আসছে চোখের পলকে…..
.
.
.
চলবে.....................................................................