মাই মিস্টিরিয়াস প্রিন্স - পর্ব ৫৫ - মৌমিতা মৌ - ধারাবাহিক গল্প


পৃথিবী এক দ্বৈত বাস্তবতার আঙিনা যেখানে আলো আর ছায়ার মাঝে রয়েছে বিস্তৃত এক রহস্যময় জগত। যা সাধারণ মানুষের দৃষ্টির আড়ালেই রয়ে গেছে। এই অদৃশ্য রাজ্য অনেকেই অন্ধকার জগত বা Dark Realm বলে চেনে, সেখানে বাস্তব আর অলৌকিকতার সীমানা অস্পষ্ট হয়ে যায়। এই জগতে ভ্যাম্পায়ারদের নীরব ছায়া ঘুরে বেড়ায়, শেপশিফটাররা আকৃতি বদলে নতুন রূপ ধারণ করে, নেকড়ে মানবরা পূর্ণিমার আলোয় জেগে ওঠে, আর ছায়া দানবেরা অন্ধকারের গভীরে লুকিয়ে থেকে সুযোগের অপেক্ষা করে, এছাড়া রয়েছে আরো নতুন আবিষ্কার যা সম্পর্কে আমরা জানি না বা জানতেও চাই না। দরকার কি? মানুষ হয়ে আমরা ব্যস্ত থাকি নিজেদের কর্মকাণ্ডে।

অন্ধকার জগতে রাতের প্রতিটি মুহূর্ত এক নতুন রহস্য বয়ে আনে, আর এই রহস্যময় অস্তিত্বেরা মানুষের অগোচরে এই পৃথিবীতে নিজের কার্যসিদ্ধি করে যায়। তবে এই জগত যতই ভয়ংকর হোক! মানুষের এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। তারা যা দেখে না, তা নিয়ে ভাবে না। তারা জানেই না, ঠিক তাদের পাশেই কোনো এক গোধূলি সন্ধ্যায় কেউ তাদের দিকে নিঃশ্বাস বন্ধ করে তাকিয়ে ছিল, কিংবা কোনো গভীর রাতে জানালার ওপারে ছায়ার মতো কিছু নড়ে উঠেছিল।

সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ, তারা চায় বা না চায়, অন্ধকারের শক্তির নাগাল পায় না। এই রহস্যময় অস্তিত্বেরা কখনোই সরাসরি মানুষের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি। তবে তারা যুগে যুগে বোকা মানুষদের ব্যবহার করেছে, তাদের প্রলোভনে ফেলেছে, অন্ধকারের পথে টেনে নিয়েছে। মানুষ তাদের অস্তিত্ব মানুক বা না মানুক, অন্ধকারের এই জগত চিরকালই রয়ে গেছে ঠিক আমাদের পাশেই।

বহুকাল আগের কথা। ভেনোরা কখনো সাধারণ ছিল না। জন্ম থেকেই সে ছিল এক অনন্য রহস্য। তার জন্ম কবে, কোথায়, কিভাবে সে কথা কেউ জানে না। নেত্র খুলে সে নিজেকে আবিষ্কার করেছিল ঘন অরণ্যের এক নির্জন কোণে। সে শুয়ে ছিল এক ঘন অরণ্যের মাঝখানে, বিস্তৃত ছনের বিছানায়। পাখিদের কূজন, পাতার মর্মরধ্বনি আর দূরে বইতে থাকা ঝরনার শব্দ। পৃথিবী সম্পর্কে তার কোনো জ্ঞান ছিল না, ছিল না কোনো স্মৃতি। সে বড় হয়ে জন্মেছিল নাকি বড় হয়েই পৃথিবীকে আবিষ্কার করেছিল তা বলা মুশকিল। একজন আট বছরের ছোট মেয়ে যেমনটা হয় ঠিক তেমনটা নিজেকে আবিষ্কার করেছিল ভেনোরা। সে শুরু থেকেই যেন অর্ধেক জ্ঞান লাভ করে এসেছিল। ভেনোরার ত্বক জন্ম থেকেই ফর্সা ছিল, কিন্তু প্রকৃতির সাথে মিশে থাকতে থাকতে ত্বকে ময়লা ময়লা ভাব চলে এসেছিল। ভেনোরার একমাত্র সঙ্গী ছিল একজন দীর্ঘ দাঁড়িওয়ালা পুরুষ! গম্ভীর, নীরব আর রহস্যময় সে ব্যক্তি। লোকটিকে দেখে ভেনোরার মনে হতো, তিনি প্রকৃতিরই এক অংশ, গাছপালার মতোই চিরন্তন। নাম না জেনেও, সম্পর্কের কোনো সংজ্ঞা না বুঝেও, ভেনোরা তাকে নিজের কাছের কেউ মনে করতে শুরু করে। 

ভেনোরার তথাকথিত অভিভাবক ছিলেন এক নির্লিপ্ত ভেষজ চিকিৎসক। মানুষের সঙ্গে মিশতে চাইতেন না তিনি। কিন্তু পশুপাখিদের ব্যথা বোঝার অনন্য ক্ষমতা ছিল তার অন্তরে। জঙ্গলের প্রাণীরা তার অদৃশ্য ভাষা বুঝত, তাদের ক্ষত সারানোর জন্য প্রকৃতির মাঝেই খুঁজে পেতেন তিনি নানা ওষুধের উপাদান। ভেনোরা তাকে নিজের বাবা বলে মানত, যদিও তিনি কখনো পিতৃস্নেহের বহিঃপ্রকাশ ঘটাননি ভেনোরার উপর। প্রাচীন গ্রন্থের বিবর্ণ পাতায় ডুবে থাকা এই মানুষটির পৃথিবী ছিল সীমিত। খালি চোখে যা দেখা যায়, তার বাইরেও যে অসংখ্য রহস্য লুকিয়ে আছে, তা জানাই ছিল তার একমাত্র সাধনা। মানুষের ভুলে যাওয়া জ্ঞানকে ফিরে পাওয়ার জন্য রাতদিন এক করে ফেলতেন। বিশ্বাস করতেন, প্রকৃতির গভীরে এমন কিছু শক্তি আছে যা সঠিক মানুষের হাতে পড়লে ভাগ্য বদলে দিতে পারে। তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল হারিয়ে যাওয়া সত্যের সন্ধান করা। নতুন কিছু জানার অদম্য ইচ্ছা তাকে থামতে দেয়নি। সময়ের গণ্ডিতে বেঁধে রাখা কোনো জীবন তার জন্য ছিল না। তিনি ঘুরে বেড়াতেন, কখনো জঙ্গলের গাছপালার নিচে বসে পুরনো বইয়ের ছেঁড়া পাতায় কালি দিয়ে নতুন তথ্য টুকে রাখতেন, কখনো বা গভীর রাতে নদীর ধারে দাঁড়িয়ে আকাশের তারা দেখে কিছু বিড়বিড় করতেন।

আর এই সবকিছুর মাঝেই, ভেনোরা একাকী শিখছিল প্রকৃতির ভাষা। ঘন সবুজ পাতার আড়ালে সে শুনতে পেত অরণ্যের শ্বাস। পাখিরা তার বন্ধু ছিল, নদীর কলধ্বনিতে সে খুঁজে পেয়েছিল সুরের মায়া। একলা শৈশবে, এই প্রকৃতিই ছিল ভেনোরার একমাত্র আশ্রয়, মেয়েটার জীবন।

ভেনোরা শৈশব থেকেই অনুভব করত এক অদ্ভুত আকর্ষণ আকাশের প্রতি, পাখিদের প্রতি। প্রায়ই গভীর রাতে জঙ্গলের চিলেকোঠার বাড়ির ছাদে বসে থাকত, তার মনে হতো, হয়তো কোনো একদিন ডানা মেলে উড়ে যাবে সে, হারিয়ে যাবে শূন্যের অতলে। 

ভেষজ চিকিৎসক কখনো তার দিকে খুব একটা নজর দিতেন না, কোনো প্রশ্নের উত্তরও দিতেন না। তিনি ডুবে থাকতেন তার নিজস্ব গবেষণায়, পুরনো পাণ্ডুলিপি আর অজানা মন্ত্রের গভীরে। ভেনোরা একান্তেই বড় হয়ে উঠছিল। তার চারপাশে কেউ ছিল না, কেউ তার কথা শুনত না, এমনকি কেউ তাকে ছুঁতেও চাইত না। সেই জঙ্গলে প্রাণী ছাড়া মানুষ খুব কমই আসতো।ভেনোরার পরনে থাকত মলিন পোশাক, যা কখনো বদলানো হতো না। দিনের পর দিন কেটে যেত একইভাবে। জঙ্গলের শেষ প্রান্তে ছিল একটি স্বচ্ছ নদী, সেখানেই তাদের পানির চাহিদা মিটত। আর খাবার বলতে ছিল বনজ ফলমূল, শিকড় আর কখনো কখনো পাখিদের দেওয়া উপহার। ধীরে ধীরে বনই হয়ে উঠল তার আশ্রয়, তার স্কুল, তার জীবন।

সময়ের সাথে সাথে বাবার বইগুলোর পাতায় সে খুঁজে পেল এক নতুন জগত। সেখানে ছিল হারিয়ে যাওয়া জ্ঞান, প্রাচীন মন্ত্র আর রহস্যময় চিকিৎসার পদ্ধতি। সে গাছপালা, লতাগুল্ম আর শেকড় নিয়ে পরীক্ষা শুরু করল। কোন পাতা ক্ষত সারায়, কোন ফুলের নির্যাস বিষ, কোন শেকড় শক্তি বাড়ায়। সবই সে বুঝতে শিখল। ধীরে ধীরে সে নিজের হাতে ওষুধ বানাতে শুরু করল, পরীক্ষা করত ছোট প্রাণীদের ওপর! একটু আহত পাখি, বনবিড়াল কিংবা খরগোশ।

পাখিরাই ছিল তার সবচেয়ে কাছের সঙ্গী। তারা বুঝতে পারত ভেনোরার ভাষা। সে ডাক দিলেই তারা ছুটে আসত, তার কাঁধে বসত, চুলে ঠোকর দিত। পাখিদের সঙ্গেই সে দিন কাটাত, রাত কাটাত। তার দুনিয়া ছিল তাদের ঘিরেই। এইভাবেই কেটে যাচ্ছিল সময়।

ভেনোরার বয়স যখন পনেরো, একদিন গভীর রাতে হঠাৎ এক তীক্ষ্ণ আর্তনাদে ঘুম থেকে জেগে উঠল সে। ঘরের কোণে বাবার দেহ নিথর হয়ে পড়ে ছিল। তার পায়ের চারপাশে কুণ্ডলী পাকিয়ে ছিল এক কালো বিষধর সাপ। ভেনোরা শ্বাস আটকে তাকিয়ে রইল, কিছু বুঝে ওঠার আগেই সাপটি ফণা তুলে পেছন দিকে ছুটে চলে গেলো। মৃত্যু তখন ধেয়ে আসছিল চিকিৎসকের শরীরে। চিকিৎসক শুধু মৃত্যুর পূর্বে একটা বাক্য উচ্চারণ করে যান! 
সেটি হলো,
ভেনোরা, আমার লেখা পাতায় অজস্র কিছু আছে যা তোমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

সেই রাতেই ভেনোরা নিজের নাম স্থির করল। এর আগ পর্যন্ত পৃথিবীর বুকে ভেনোরা ছিল নামহীন, অজানা এক অস্তিত্ব।

বাবা চলে গেছে, এই সত্যি মেনে নিতে তার মন চাইছিল না। কিন্তু শোকের বদলে ভেতরে জন্ম নিল প্রবল রাগ। সাপটাকে খুঁজতে সে পুরো জঙ্গল চষে ফেলল। অবশেষে এক ঝোপের আড়ালে সাপটাকে পেলো। ঠান্ডা এবং বিষাক্ত চোখে তাকিয়ে ছিল বিষধর সাপটি।ভেনোরা বিন্দুমাত্র দেরি করেনি। হাতের ধারালো গাছের বাকল দিয়ে সাপটাকে মেরে ফেললো।

ভেনোরার জগত আরো একলা হয়ে উঠলো। সে নিজের মতোই সময় কাটাতে লাগলো। তবে একদিন সে জঙ্গলে মানুষ আসা শুরু করলো। জঙ্গলের কাছাকাছি এক ছোট্ট বিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল তার ফলেই এটা সম্ভব হলো। বিদ্যালয় থেকেই কিছু ছোট্ট শিশু ছুটে আসে জঙ্গলে, কৌতূহল ভরা চোখে প্রকৃতিকে খুঁজে দেখে। তারা ফুল তোলে, নদীর ধারে বসে হাসে, আর মাটিতে হাত বুলিয়ে খেলে। প্রথমে ভেনোরা দূর থেকে তাদের দেখত, কিন্তু ধীরে ধীরে তারা নিজেরাই কাছে আসতে শুরু করল। শিশুরা ভেনোরাকে জিজ্ঞাসা করত অদ্ভুত সব প্রশ্ন। ভেনোরা তাদের খেলা দেখতে দেখতে একসময় হাসতে শিখল, কথা বলতে শুরু করল, আর একসময় শিশুরা তার একাকীত্বের সঙ্গী হয়ে উঠল।
এমনি একদিন এক ছোট্ট মেয়ের হাত ধরে ছিল সে। কিন্তু আচমকা মাথায় এক প্রবল চাপ অনুভব করল। মনে হলো আচমকা কেউ তার চেতনার ভেতর ঢুকে পড়ল। চোখ বন্ধ করতেই ধোঁয়াটে সব ছবিরা জেগে উঠল। বাচ্চাটি একটি উঁচু পাহাড়ের কিনারে দাঁড়িয়ে, পিছলে পড়ছে এরপর সব অন্ধকার। ভেনোরা তাড়াতাড়ি হাত ছেড়ে দিলো বাচ্চা মেয়েটার। গা ছমছম করে উঠল তার। সে ঠিক কী দেখল বুঝে উঠতে পারছিলো না ।

কয়েকদিনের মধ্যেই সেই দৃশ্য সত্যি হলো। বাচ্চাটি সত্যিই পাহাড়ের ধারে পড়তে গিয়েছিল, কিন্তু কেউ একজন ঠিক সময়ে তাকে ধরে ফেলেছিল। তারপর ধীরে ধীরে ভেনোরা উপলব্ধি করতে পারলো, সে ভবিষ্যৎ দেখতে পারে। কিন্তু সম্পূর্ণ নয়। কিছু আগাম মূহুর্ত টের পায় ভেনোরা।

আরো অনেক দিন পর, রোদের আলো জানালার ফাঁক গলে চিলেকোঠার ছোট্ট ঘরটাকে আলতো ছুঁয়ে যাচ্ছিল। বাতাসের ঝাপটায় খোলা আলমারির পুরনো বইগুলোর পাতা নড়ছিল হালকা করে। ভেনোরা বাবার রেখে যাওয়া হলদেটে একখানা পাতা হাতে নিয়ে পড়ছিল। পাতাটিতে অদ্ভুত কিছু চিহ্ন আঁকা, সাথে অস্পষ্ট বাক্য ছিল। কিন্তু তাদের অর্থ ভেনোরার বোধগম্য হচ্ছিল না। অনেকটা সময় ধরে গভীর মনোযোগে লেখাগুলোর অর্থ বোঝার চেষ্টা করছিল সে। ফর্সা ময়লা কপালে গভীর ভাঁজ পড়ে গেলো। ঠিক তখনই বাইরে থেকে ভেসে এলো একটা অদ্ভুত শব্দ।

ভেনোরা দ্রুত পুরনো জরাজীর্ণ দরজাটা ঠেলে বেরিয়ে এলো। চোখ সরাসরি পড়ল সামনের মাটিতে পড়ে থাকা এক বিশাল ঈগলের দিকে। ঈগলের বিশাল ডানাগুলো ছড়িয়ে আছে নিষ্প্রাণভাবে, নিথর তার শরীর। ঈগলের বুকের উপর ছিল এক কালচে লাল চিহ্ন যা ভেনোরাকে সামনে এগিয়ে যেতে উৎসুক করলো!

হাঁটু গেড়ে বসল ভেনোরা, হাত বাড়িয়ে ঈগলের সেই চিহ্ন ছুঁয়ে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে তীব্র এক চাপ অনুভব করল মাথার ভেতর। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই চোখের সামনে আঁধার দেখতে পেলো সে।

জ্ঞান ফিরলে ভেনোরা আবিষ্কার করল, আকাশ ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। বাতাস থমথমে, একটা বিদঘুটে অনুভূতি ছড়িয়ে আছে চারপাশে। ভেনোরা ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। পিছন ফিরে দেখতে পেল । চিকিৎসকের চিলেকোঠার ছোট্ট ঘরটা ধ্বংস হয়ে গেছে! বাতাসে ছিন্নভিন্ন হয়ে উড়ে গেছে কাঠের টুকরো আর পুরনো কাগজপত্র।

ভেনোরা স্তব্ধ হয়ে গেলো। তারপর হঠাৎই প্রচণ্ড ঝড় উঠল। বাতাসের তীব্র দাপটে সে টাল সামলাতে পারছিল না, দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রাখল। তখনই বিকট আওয়াজ হলো। ওর পিঠের দুই পাশ চিরে বেরিয়ে এলো দুটি বিশাল ডানা! ভেনোরার পোশাকের পিছন দিক ছিঁড়ে ফুরে গেলো। তারপরই এক অদৃশ্য শক্তি তাকে বাতাসে তুলে উড়িয়ে নিয়ে গেলো। প্রচণ্ড ঝড়ের মাঝে ভেনোরা টের পেল, সেই ডানাগুলো তার মনের ইচ্ছার সাথে একাত্ম হয়ে গেছে। তার মনের কথা পড়ে উড়ে চলছে দিকবিদিক। নিচে নামিয়ে দিচ্ছে যেখানে দরকার। এভাবেই ভেনোরা ঈগল মানবীতে পরিণত হয়েছিল। তারপর থেকেই পৃথিবীকে আবার নতুন করে বুঝতে শুরু করল সে।

ভেনোরার দেখা হয় অন্ধকার জগতের রহস্যময় অস্তিত্বদের সাথে। ধীরে ধীরে তাদের জন্য কাজ করতে শুরু করল সে, অবশ্যই কোনো কিছুর বিনিময়ে, সেটা হয়ে থাকতো খাবার, টাকা, সুন্দর জিনিসপত্র যা যা ভেনোরার পছন্দ। সব প্রাণীর জন্য ভেষজ ওষুধ তৈরি করত সে, যা সাধারণ চিকিৎসায় সেরে ওঠা সম্ভব ছিল না। ভবিষ্যতের ক্ষতির আভাসও সে আগে থেকে দেখতে পারত। ভয়, শঙ্কা কিংবা অভিশাপ। সবকিছু থেকে তাদের মুক্তি দিতে পারত ভেনোরা। সেই সময়েই তার পরিচয় হয় কৌশিকের সঙ্গে। 

ভেনোরার জীবনে কৌশিকই ছিল একমাত্র জটিল কেস। 
যখন ভেনোরার সাথে দেখা হয় এক মারাত্মক আঘাতে কৌশিক তখন অসহ্য যন্ত্রণায় ভুগছিল। সেবার একমাত্র ভেনোরার তৈরি ওষুধেই সে সুস্থ হতে পেরেছিল। ভেনোরা এসব গুণ তার বাবার পান্ডুলিপি ঘেঁটেই লাভ করেছিল। কিন্তু জানতো না এভাবে একে একে সব বিভিন্ন স্থানে কাজে লেগে যাবে। ভেষজ চিকিৎসকও একজন অজানা রহস্য ছিল ভেনোরার কাছে যাকে নিয়ে ভেনোরা এখনো চিন্তা করে‌। 

দীর্ঘদিন একসাথে থাকার দরুন ভেনোরা কৌশিকের অতীত সম্পর্কেও সবকিছু জেনে গিয়েছিল। ধীরে ধীরে কৌশিকের প্রতি এক টান অনুভব করতে শুরু করল সে।
তারপর থেকে, তারা হয়ে উঠল একে অপরের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। দরকারে অদরকারে একসাথে থাকতো, এরপর নিক ও তাদের সাথে যুক্ত হয়ে গেল। কিন্তু অনান্য সবার জন্য কাজ করতে গিয়ে ভেনোরাকে হুটহাট উধাও হয়ে যেতে হয়। এই যেমন কয়দিন আগেও চলে যেতে হয়েছিল। তারপরই হলো কৌশিকের সাথে অনন্যার বিয়ে। আবার তার এক ডাকাতে ছুটেও এসেছে ভেনোরা।

ভেনোরা আপাতত মাথায় হাত চেপে বসে আছে। কৌশিকের অবস্থা দেখে সে দ্বিধাগ্রস্ত ও চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছে। কৌশিকের শরীর আবারো পোশাক দিয়ে ঢাকতে নিক ও সাহায্য করলো।

বেশ কিছু সময় পর ভেনোরা গভীর শ্বাস নিয়ে কঠিন গলায় বলে উঠল,
"কিয়ান! খুলে বলো সব। এই কয়দিন কী কী করেছো তুমি?"

নিক তখন হাই তুলে অলস ভঙ্গিতে বলল,
"কি আর করবে! বউয়ের সাথে প্রেম করেছে।"

ভেনোরা কটমট করে নিকের দিকে তাকালো। নিক ঢোক গিললো। দ্রুত বলে উঠল, 
"আমি বলছি! কৌশিক ব্রো তোমার যাওয়ার পর অনেক কিছু করেছে। একবার ওর অন্তর্নিহিত শক্তি অ্যানাকে দিয়ে দিয়েছিল, যার কারণে ব্রোকে মরণ যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছিল।"

ভেনোরার ভ্রু কুঁচকে গেলো। ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করল, "শক্তি কেনো দিয়েছিল?"

কৌশিক কোনো উত্তর দিলো না। সে ধীরে ধীরে ড্রেস পরে সোফার মধ্যে গুটিসুটি মেরে বসে রইল।

নিক একপাশে দাঁড়িয়ে অস্বস্তিতে মাথা চুলকাতে লাগলো, তারপর গভীর শ্বাস ফেলে বলল,
"মেয়েটাকে ভুলবশত মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল। শক্তি না দিলে মেয়েটা তৎক্ষণাৎ মারা যেত।"

ভেনোরা হাত ভাঁজ করে শক্ত দৃষ্টিতে কৌশিকের দিকে তাকিয়ে রইল।কঠোর গলায় বলল, 
"আমরা বাংলাদেশে কেন এসেছিলাম, কিয়ান?"

কৌশিক এক মুহূর্ত চোখ নামিয়ে নিলো, তারপর ধীরে ধীরে ভেনোরার দৃষ্টির সম্মুখীন হলো।
নির্ভার কণ্ঠে বলল, 
"তোমার ভবিষ্যদ্বাণীর কারণে।"

"আমার বলা ভবিষ্যৎ বাণী কী ছিল?"

"বিংশ শতাব্দীর শুরুতে এক বাঙালি মেয়ের জন্ম হবে। যার প্রধান উদ্দেশ্যই হবে আমার মৃত্যু।"

"খুঁজে পেয়েছো তাকে?"

কৌশিক চুপচাপ মাথা নাড়িয়ে 'না' সূচক উত্তর দিলো।
নিক ধীর পায়ে ভেনোরার পাশে গিয়ে বসলো। 
ভেনোরা ক্ষিপ্ত গলায় আবার বললো,
"চেষ্টা করেছিলে নাকি আমার কথাকে আজেবাজে মনে হলো তোমার? তুমি একটা বাঙালি মেয়েকে কীভাবে বিয়ে করতে পারলে? তুমি এখানে করতে এসেছো অন্যকিছু আর করলে অন্যকিছু। বিয়ে করেছো, বুঝলাম। ওকে! আগেও করেছো। ইটস নরমাল ফর আস। কিন্তু ওই মেয়েটাকে ঘরে কেনো তুললে? ঘরে তুলেছো, বুঝলাম! এখনো মেয়েটা বেঁচে কেনো আছে?"

ভেনোরা এবার এক নিঃশ্বাসে বলে গেলো, কণ্ঠে তার হতাশা মিশ্রিত,
"ওই মেয়েটাকে বাঁচানোর জন্য শক্তি দেওয়ার কী দরকার ছিল? তুমি জানো না ল্যুমিস নদীকে নিয়ে আমি কী জ্ঞান দিয়েছিলাম? ভুলে গেছো সব?

লেট মি ক্লিয়ার এগেইন। ল্যুমিস নদীর শক্তি যা বায়ু, বজ্রপাত আর আকাশে শক্তির মিশ্রিত এক ভান্ডার সেটা তোমার শরীরের মধ্যে আছে। এই শক্তি তোমার মধ্যে আছে মানে এটা একান্তই তোমার। তুমি অমরত্ব লাভ করেছো এর মাধ্যমে। তোমার রক্তের প্রতিটি প্রবাহে ল্যুমিস নদীর স্রোত বইছে, তার শীতলতা আর প্রবাহমানতা তোমার অস্তিত্বে মিশে গেছে। নদী সুস্থ থাকলে তুমি সুস্থ থাকবে, নদী ক্রুদ্ধ হলে তুমি ধ্বংস হবে।

তোমার কাজ কী? প্রথম থেকেই মানুষের শক্তি শোষণ করে নিজেকে টিকিয়ে রাখা, শক্তিশালী করা, যাতে নদীর প্রবাহ অব্যাহত থাকে। কিন্তু তুমি কী করেছো? তুমি তোমার নিজস্ব শক্তি, যা একান্তই তোমার, সেটা অন্য কাউকে কিছু অংশ দিয়ে দিয়েছো! তোমার শরীর থেকে যে নীলচে আলো বেরিয়ে আসছে, সেটা সেই বিশ্বাসঘাতকতারই শাস্তি।

ভেনোরা কিছুক্ষণ থেমে কৌশিকের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
আবারো বললো,
"তুমি নিশ্চয়ই নিজেকে ঠিক করতে ল্যুমিস নদীতে গিয়েছিলে? কয়েকদিন সুস্থ ছিলে। তারপর হঠাৎ তোমার শরীর অসাড় হয়ে গেলো, তোমাকে ব্যথার কাতরতায় ফেলে দিলো। আর সেই ব্যথা মেটাতে তোমাকে দুই থেকে তিনজন মানুষের শক্তি শোষণ করতে হলো। রাইট?"

কৌশিকের চোখে বিস্ময় ফুটে উঠল, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সেটা মিলিয়েও গেলো। 
সে চিন্তিত গলায় বললো,
"এতো কিছু কীভাবে জানো তুমি?"

"তোমার শরীর ছুঁয়েই অনেক কিছু অনুভব করেছি। তোমার রক্ত, তোমার শ্বাস, তোমার শিরায় বয়ে যাওয়া শক্তি। সবই কথা বলে।"

কৌশিক এবার সঙ্কোচে চোখ আর তীক্ষ্ণ করলো।
ভেনোরা আরো বললো,
"তুমি নিশ্চয়ই অনিয়ম করেছিলে। নিজের খেয়াল রাখোনি। কয়েক দিন নিজের এই অবস্থার কথা ভুলে গিয়েছিলে। ঠিক বলছি কী?"

কৌশিক নিশ্চুপ হয়ে মাথা নাড়লো। ভেনোরা একদৃষ্টিতে কৌশিকের দিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর ধীরে ধীরে বললো,
"আমরা মানুষ নই যে মানুষের মতো আচরণ করবো। হাসবো, ফিরবো, ঘুরবো, খেলবো এইসব আমাদের জন্য নয়। আমরা এই জগতের অন্যরকম সৃষ্টি, চাইলেই আমরা মানুষের মতো থাকতে পারবো না।"

নিক নিঃশব্দে শুনছিলো, কৌশিকের কপালের শিরাগুলো টানটান হয়ে উঠেছে।
ভেনোরা আরো কঠোর কণ্ঠে বললো,
"হ্যাঁ, কিয়ান, তুমি এক্সেপশনাল। তুমি একসময় মানুষ ছিলে, কিন্তু এখন নও। এটা তোমাকে মনে রাখতে হবে। তুমি মানুষ আর মনস্টারের মাঝামাঝি একটা পর্যায়ে অবস্থান করছো। কিন্তু এই সামঞ্জস্য ধরে রাখতে হবে তোমাকেই।"

কৌশিক বললো,
"তো এখন কি করতে বলছো?"

"তোমাকে এইবার আমি ঠিক করতে সাহায্য করবো, কিন্তু মনে রেখো, এটা শেষবার। যদি আবার এমন কিছু হয়, তুমি এই পৃথিবীর জন্য হুমকি হয়ে উঠবে, কিয়ান। তখন আমি আর কিছু করতে পারবো না।"

কৌশিক মাথা নেড়ে বললো,
"ওকে! দ্বিতীয় বার আর এরকম হবে না।"

ভেনোরা এক মুহূর্তের জন্য চুপ ছিল। তারপর সে বললো,
"তবে, আমি অনন্যাকে চেক করতে চাই। মেয়েটাকে বেশ সন্দেহজনক মনে হচ্ছে।"

নিক ও কৌশিক একসাথে ভ্রু কুঞ্চিত করে ভেনোরার দিকে ফিরলো। কৌশিক প্রশ্ন করলো,
"কী বলতে চাইছো তুমি?"

ভেনোরা কিছুটা চিন্তিত হয়ে বললো,
"এখনো আমি কিছু স্পষ্টভাবে বুঝতে পারিনি। আমাকে যাচাই করতে হবে। শুধু এতটুকু বুঝতে পেরেছি, অনন্যার দেহে একটা বিশুদ্ধ আত্মা বসবাস করছে। কিয়ান, তুমি কি আমার সাহায্য করবে?"

কৌশিক মাথা নাড়িয়ে বললো,
"ঠিক আছে।"

কয়েক সেকেন্ড পর কৌশিক আবারো বললো,
" আহ! আমারও একটা কথা হঠাৎ মনে পড়ল। যেদিন অনন্যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছিল সেদিন ও ভুলবশত নদীতে পড়ে গিয়েছিল। তখন আমি ওকে বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপ দেই। প্রথমে এমনি খোঁজার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু অনেক বড় নদী ছিল যার কারণে আমি খুজে পাচ্ছিলাম না। তাই নদীর পানিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। নদীর পানি দুই ভাগ করার পর আমি ওকে একটা গোলাকার সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে দেখতে পাই। যেটা দেখে আমি প্রচন্ড অবাক হই।"

নিক আর ভেনোরাও প্রচন্ড অবাক হয়ে গেলো, একসাথে বলে উঠলো,
"গোলাকার সুরক্ষা বলয়?"

কৌশিক মাথা নেড়ে বললো, 
"হ্যাঁ, ঠিক তাই। আমি কখনো ভাবিনি যে এমন কিছু দেখতে হবে। প্রথমে মনে হয়েছিল হয়তো আমি ভুল দেখছি। কিন্তু স্পষ্ট দেখতে পেলাম, ওর চারপাশে স্বচ্ছ এক বলয় তৈরি হয়েছে, যার কারণে নদীর পানি ওকে ছুঁতে পারছিলো না। আমি কাছে যেতেই সুরক্ষা বলয় ভেঙ্গে যায় আর মেয়েটা আমার হাতের বাহুতে এসে জায়গা করে নেয়। এরপর এমন কিছু আর ঘটতে দেখিনি।"

কৌশিক অনেকক্ষণ নিশ্চুপ ছিল। আবার কিছু মনে পড়তেই বললো,
"ওহ হ্যাঁ। আরেকবার আর্চেরি শেখানোর সময় আরেকটা বিষয় খেয়াল করি। ও বলেছিল আর্চেরি পারে না, কখনো চেষ্টা ও করেনি শেখার। কিন্তু শেখানোর সময় দেখা গেলো অনন্যা আগে থেকেই আর্চেরিতে পারদর্শী। পরে আমারও সন্দেহ জাগে। যেহেতু তুমি ছিলে না সন্দেহ মেটানোর জন্য আমি ওকে হিপনোটাইজ করেছিলাম। বাট তেমন লাভ হয়নি।"

ভেনোরা আরো চিন্তায় পড়ে গেলো। শুধু একদৃষ্টিতে মেঝেতে তাকিয়ে কিছু একটা চিন্তা করতে লাগল।

********

কৌশিক অনন্যার রুমে প্রবেশ করল। রাতের খাবারের সময় হয়ে গেছে, কিন্তু অনন্যা এখনো নিচে আসেনি। লারা কয়েকবার এসে ডাকলেও মেয়েটা সাড়া দেয়নি, তাই কৌশিককেই আসতে হয়েছে।

রুমের ভেতর ঢুকে কৌশিক দেখল, অনন্যা বিছানায় শুয়ে আছে, গায়ে কম্বল মুড়িয়ে। ফ্যান ফুল স্পিডে চালানো ছিল, আর সেগুলোর তীব্র বাতাসে অন্ধকার ঘরটা সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। অনন্যার মাথা কিছুটা দেখা যাচ্ছে, কিন্তু সে একদম নিশ্চুপ। কৌশিক একাধিক বার পেছন থেকে ডাকল। কিন্তু পাত্তা দিলো না অনন্যা।

কৌশিক চুপচাপ এগিয়ে এসে এক টানে কম্বল সরিয়ে দিলো। অনন্যা হতবাক হয়ে কৌশিকের দিকে তাকালো। তার চোখে বিরক্তি আর অবাক হওয়া ভাব ছিল। সবে উঠে বসেছিল অনন্যা, কম্বল টানতে নিয়েছিল। কিন্তু কৌশিক তার হাত ধরে ফেললো।

অনন্যা কটমট করে তাকালো এবং স্বভাবসিদ্ধ রাগ দেখালো।
কৌশিক হালকা শ্বাস নিয়ে অনন্যার হাত ছেড়ে দিলো, মৃদু স্বরে বললো,
"কিছু বলতে চাই।"

"আমার শুনতে ইচ্ছে করছে না।"

"কিন্তু আমার তো বলতে ইচ্ছে করছে।"

"আপনার অন্য বউদের গিয়ে বলুন।"

অনন্যার রাগ দেখে কৌশিকের হাসি আসছিল। কিন্তু মেয়েটার রাগী মুখমন্ডল দেখে সে থেমে গেলো। নিজেকে সামলে অনন্যার খোলা চুলগুলো ঠিক করে দিলো। নিচুতে ঝুঁকে অনন্যার চোখে চোখ স্থির রাখলো কিছু সময়। ফিসফিসিয়ে বললো,
"কেউ নেই তো।"

অনন্যা চমকে উঠলো, প্রচন্ড শক খেলো।মুখ তুলে বললো,
"কেউ নেই কেনো?"

"বাদ দাও এসব। খেতে এসো। রাত হচ্ছে।"

অনন্যা বিরক্তের সাথে বললো,
"আপনি এসব বলবেন আর আমি চুপ করে বসে তামাশা দেখবো? আমি আর থাকবো না আপনার সাথে। ওই মেয়েটাও নিশ্চয়ই আপনার বউ। যান উনার কাছেই যান। আর ভালো লাগছে না আমার। আমি খুব ই ক্লান্ত।"

কৌশিক আচমকা অনন্যার মাথার পেছনে হাত দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। দুই হাত দিয়ে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
"একটু চুপ থাকো।"

অনন্যা চুপ থাকতে পারলো না। সব লজ্জা শরম ভুলে ডুকরে কেঁদে উঠলো। খুব জোরে কাঁদলো সে। বুকের ভেতরটায় খুব কষ্ট হচ্ছে অনন্যার। কৌশিক ও প্রচন্ড অবাক হলো‌, সে বুঝতে পারেনি মেয়েটা এভাবে কান্না করে দিবে।

পরিশিষ্ট :

পল্লবী অনন্যার মাথায় থাপ্পড় মেরে বললো,
"লজ্জা শরম নেই? জামাইবাবুর পিঠে কীভাবে উঠিস?"

অনন্যা রাগ দেখিয়ে বললো,
"মা! মারবে না তো! আমার এমনিতেই ভালো লাগছে না।"

"একশবার মারবো। এটা কি ধরনের ব্যবহার? তুই কি বান্দর যে পিঠে ঝুলে পড়বি?"

"আমি বান্দর না কিন্তু ওই লোকটা মানুষ না ‌। আস্ত পাগল, বদমাশ, থেঁতো ইঁদুর!"

অনন্যার মা মেয়ের মাথায় আবার মেরে বললেন,
"চুপ থাক! দেখলাম ই তো কি করেছিস তুই! ছেলেটা কত সুন্দর করে আদর করে চলে যাচ্ছিলো। আর তুই এটা কী করলি?"

অনন্যা নাক মুখ কুঁচকে বললো,
"তুমি আমাকে লজ্জা দিচ্ছো।"

"আসছে লজ্জা পেতে। এতো সুন্দর একটা জামাই। আবার ছেলেটার পিঠে উঠে তুই কামড় বসিয়েছিস? লজ্জা তো পাওয়াই উচিত।"

"তুমি উঁকি মেরে কেন দেখছিলে? উফফ! আগে জানলে আমি উনার ধারেকাছেও যেতাম না।"

"দেখতে হবে না? দেখতে হবে না এত সুন্দর জামাই আমার মেয়েকে ভালো রাখে কিনা। কিন্তু উঁকি মেরে দেখি আমার মাইয়া হচ্ছে সব নষ্টের গোঁড়া। একটা বান্দর। জামাইয়ের পিঠে চড়ে! ছিঃ ছিঃ!"

অনন্যা মুখ ঢেকে উঠে গেলো। ইশশ! ওই সময় যে একজন দরজার ফাঁক দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে‌ সেটা যদি অনন্যা জানত তাহলে কি এমনটা করতো নাকি!
.
.
.
চলবে........................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp