"স্যার! ধরুন, এই সব কিছু কল্পনার। ধরুন, আমরা বইয়ের কোনো চরিত্র। হঠাৎই দেখা হয়েছে আমাদের। তারপর প্রতিটি পৃষ্ঠায় আমাদের জীবনের মতো কাহিনী পরিবর্তন হচ্ছে। তাহলে তখন কী হতো?"
অনন্যা আকাশের দিকে তাকিয়ে কথা বলছিল, তার চোখ দুটো আকাশের তারার মতো জ্বলজ্বল করছিল। মনে হচ্ছিল সে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। কৌশিক ধীরে ধীরে তার সামনে এগিয়ে এলো, খানিকটা ঝুঁকে মাথায় হাত রাখলো।
"তাহলে বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠায়, যেখানে যেখানে তোমার নাম থাকবে, সেখানে আমি তোমার পাশে থাকতে চাই।"
অনন্যা বিস্ময় নিয়ে তাকালো।
"কেনো?"
কৌশিকের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো। সে বললো,
"বইয়ে যা ঘটবে, তা লেখকের হাতে থাকে। তিনিই চরিত্র, ঘটনা, সব নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই আমি চাই, যে গল্পই লেখা হোক, প্রতিটি শব্দে, প্রতিটি ঘটনায়, আমি তোমার পাশে থাকি।"
অনন্যার চোখে মুখে প্রশান্তির আলো খেলে গেলো। ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠা হাসিটা একটু বিস্তৃত হলো, তারপর আচমকাই সে আওয়াজ করে হেসে উঠলো। অনন্যার সেই প্রাণবন্ত হাসি কৌশিককেও ছুঁয়ে গেলো। সেও মৃদু হাসলো।
হঠাৎই অনন্যা বলে উঠলো,
"স্যার! চলুন বাসায় যাই।"
কৌশিক আকাশের দিকে তাকিয়ে সময়টা আন্দাজ করলো।
"হুম, অনেক দেরি হয়ে গেছে।"
অনন্যা বাসায় ফিরেই সরাসরি রান্নাঘরে ঢুকে পড়লো। অনন্যার চেহারায় কোনো বিষয় নিয়ে উচ্ছ্বাস খেলা করছে, চোখেমুখে একগুচ্ছ ব্যস্ততা ছড়িয়ে পড়েছে। কৌশিক প্রথমে বিষয়টা বুঝতে পারেনি। সে অনুসরণ করতে গেলে অনন্যা এক ধাক্কায় তাকে আটকে দিলো।
কঠোর গলায় বললো,
"আপনি রুমে যান।"
কৌশিক একটু অবাক হলেও আর কিছু বলল না, নির্দিষ্ট রুমের দিকে হাঁটলো। কিন্তু কৌতূহল তাকে শান্ত থাকতে দিলো না। অনেকটা সময় অপেক্ষা করলো কিন্তু অনন্যাকে আসতে না দেখে সে আবার রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলো।
রান্নাঘরের দরজার সামনে এসে থামলো কৌশিক। ভেতরে উষ্ণ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে ভ্যানিলা আর চকোলেটের মিষ্টি ঘ্রাণ। চুলের কিছু অংশ এলোমেলো হয়ে গেছে অনন্যার, উজ্জ্বল শ্যামলা ললাটে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। সে ধীরে ধীরে ওভেনের দরজা খুললো, ভেতর থেকে তাজা, খয়েরি রঙের একখানা কেক বের করে আনলো। সাথে অল্প পোড়া পোড়া স্মেল আসতে লাগলো।
কৌশিক দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে সব।
মৃদু ধোঁয়া উড়ছে কেকের গা থেকে, বেকিং এর মোহনীয় গন্ধ আর সাথে পোড়া গন্ধ পুরো রান্নাঘর ভরিয়ে দিয়েছে। কৌশিকের চোখে মৃদু হাসি খেলা করছে। অনন্যাকে এভাবে দেখতে ভালোই লাগছে তার।
হঠাৎ অনন্যার চোখ পড়লো কৌশিকের দিকে। চোখ কটমট করে তাকিয়ে বললো,
"আপনাকে বলেছিলাম রুমে থাকতে।"
কৌশিক ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে বললো,
"রুমটায় একা একা আর ভালো লাগে না।"
অনন্যা হাত ধুতে ধুতে বললো,
"চেয়ারে বসুন। আমি একটু পরেই নিয়ে আসছি।"
অনন্যা সাবধানে চকলেট দিয়ে কেকের গায়ে হালকা ডিজাইন করলো, আঙুলের নিপুণ ছোঁয়ায় চকচকে লেখাগুলো ফুটে উঠলো। তারপর যত্ন সহকারে ফ্রিজে রেখে দিলো কিছুক্ষণ। সময় গুনে, সঠিক মুহূর্তে, কেকটা এনে কৌশিকের সামনে রাখলো।
কৌশিক কেকের দিকে তাকিয়ে রইলো, গালে হাত রেখে নিঃশব্দে পড়লো লেখা। চুপসে যাওয়া পাউন্ড কেকের ওপরে চকলেট দিয়ে স্পষ্ট করে লেখা Happy Birthday Prince ।
এক চিলতে হাসি ফুটলো কৌশিকের ঠোঁটে। অনন্যার দিকে তাকাতেই সে ঠান্ডা গলায় বলল,
"আরেকটু সময় দিলে কেকটা খেতে ভালো হতো। যেহেতু সময় নেই, তাই নিয়ে আসলাম।"
কথাটা বলেই অনন্যা ছুটে গেলো ভেতরে, নিয়ে এলো একটা ছুরি আর ছোট্ট মোমবাতি। মোমবাতিটা কেকের ওপর বসিয়ে আগুন ধরিয়ে দিলো, তারপর কৌশিকের দিকে এগিয়ে ধরলো।
কৌশিক ধীরে ফুঁ দিতেই অনন্যা চট করে হাততালি দিয়ে উঠলো। কৌশিক মিষ্টি হাসি হেসে ধীর ভঙ্গিতে ছুড়ি তুলে আনলো, কিন্তু কেক কাটতে গিয়েই তার ভ্রু কুঁচকে গেলো। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ছুড়িটা কেকের ভেতর ঢোকানোর চেষ্টা করলো কিন্তু ঢুকছিলই না!
একবার চেষ্টা করলো, ব্যর্থ হলো। আরো কয়েকবার ছুড়ি ধরে চাপ দিলো, কিন্তু কেক পাথরের মতো শক্ত হয়ে আছে। এবার প্রচণ্ড শক্তি প্রয়োগ করলো কৌশিক, অর্ধেকের একটু বেশি ঢুকলো মাত্র।
অনন্যা ও চিন্তায় পড়ে গেছে। সে চাকুটা হাতে নিয়েও চেষ্টা করলো। ব্যর্থ হয়ে স্যারের দিকে তাকিয়ে অসহায় গলায় বলল,
"মনে হয় বেশি বেক করে ফেলেছি।"
"প্রথমবার করেছো?"
অনন্যা মাথা নত করে বললো,
"হুম!"
কৌশিক কেকের উপর থেকে অল্প একটু নিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করলো। সাথে সাথেই দাঁতে এক রকম কটমট শব্দ হলো!
অনন্যা ঠোঁট চেপে দাঁড়িয়ে রইলো, মুখে অস্বস্তি ভর করেছে। কৌশিক ধীরে চিবোতে চিবোতে বলল,
"এটা কি কেক বানিয়েছো? নাকি ইট?"
অনন্যার মুখ একটুখানি হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। কৌশিক হাসিমুখে উঠে দাঁড়াল, এক পা এগিয়ে এসে অনন্যাকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরলো। একরাশ উষ্ণতা মাখিয়ে বলল,
"তুমি আমার জন্য এত পরিশ্রম করেছো। এটাই আমার কাছে অনেক। আমি খুশি হয়েছি।"
সেদিন রাতে মেয়েটার কাণ্ডকারখানা মনে পড়তেই কৌশিকের মুখে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠল। কিন্তু সেই হাসি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। হঠাৎ কৌশিকের হাতে থাকা ফোনটা কেঁপে উঠল। কৌশিক ঠিকমতো তাকিয়ে দেখল স্ক্রিনে ভেসে থাকা নামটা। পরিচিত নাম্বার। ফোনটা রিসিভ করেই কানে চেপে ধরল কৌশিক।
"হ্যালো?"
ওপাশ থেকে গম্ভীর কণ্ঠে ভেসে এলো,
"স্যার! অনন্যা শিকদারের জন্মনিবন্ধন তার প্রকৃত জন্মের দুই বছর পর করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, আশেপাশের পুরনো হাসপাতালগুলোতে তার জন্মসংক্রান্ত কোনো তথ্যই নেই।"
কৌশিক চুপ করে শুনছিল। ভাবতে লাগলো,
তাহলে অনন্যা হসপিটালের ব্যাপারটা মিথ্যে বলেছে?
কিন্তু সে কেন মিথ্যে বলবে? তাহলে কি ওর পরিবার ওকে ভুল তথ্য দিয়েছে? কিন্তু কেন?
কৌশিক গম্ভীর কণ্ঠে জানতে চাইলো,
"আর কিছু জানতে পেরেছ কি?"
ওপাশ থেকে সাড়া এলো,
"জ্বি, কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। অনন্যা শিকদারের বাবা আগে টাঙ্গাইলে থাকতেন। পরে পড়াশোনার জন্য ধানমন্ডিতে আসেন এবং সেখানেই বিয়ে করেন।"
কৌশিক চোখ বন্ধ করে মনোযোগ দিলো,
"অনন্যার মায়ের পরিবারের নিজস্ব একটি বিল্ডিং আছে, যা এখন অনন্যার মামার অধীনে। ওই বিল্ডিংয়ের চারতলার একটি ফ্ল্যাট অনন্যার বাবা কিনেছিলেন এবং দীর্ঘদিন সেখানেই ছিলেন।অনন্যার বাবা নিজ উদ্যোগে ব্যবসা শুরু করেছিলেন, কিন্তু প্রথমদিকে তেমন উন্নতি হয়নি।বিয়ের চার বছর পর অনন্যা তাদের জীবনে আসেন। তবে অনন্যার জন্মের পর থেকেই ব্যবসায় বড়সড় উন্নতি হতে থাকে।
আরও একটা তথ্য পাওয়া গেছে, স্যার। কয়েক বছর আগে অনন্যার বাবা হঠাৎ অনন্যাকে মামার কাছে রেখে নিজের ফ্ল্যাট বিক্রি করে বিদেশে চলে যান, সাথে উনার নিজের স্ত্রী, ছেলেও ছিলেন। কিন্তু কেন গেছেন, অনন্যা শিকদারকে কেনো রেখে গেছেন, এসব তথ্য এখনো অজানা।"
কৌশিক ফোন রেখে চিন্তায় পড়ে গেলো। তখনই নিক নিজের রুম থেকে বের হলো। নীল কালো মেশালো চুলগুলো উলটপালট করতে করতে এগিয়ে এলো। সোফায় কৌশিকের পাশে বসলো। কৌশিকের মুখের গম্ভীর ভাব দেখে সে ভ্রু কুঁচকে বলল,
"ক্লাসে যাও না কেন? বাসায় বসে এত কী চিন্তা করো?"
কৌশিক নিকের দিকে তাকিয়ে উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,
"তোমার ব্যথা সারেনি? তুমিও তো বাইরে যাও না। চেহারা কেমন যেন মলিন হয়ে যাচ্ছে, আগে কত হ্যান্ডসাম ছিলে। নাকি মেয়েদের অভাব বোধ করছ?"
নিক হাসতে হাসতে সোফায় গা এলিয়ে দিল,
"মেয়েদের অভাব পড়লে বাসায় একজন শ্যামকণ্যা আছে, তাকে কাজে লাগাবো।"
কৌশিক থেমে থেকে নিকের দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকালো। ঠোঁটের কোণে একটুখানি হাসির রেখা টেনে বলল,
"তোমার চোখ তুলে ফেলবো, দাঁত থাকবে না, মুখ দিয়ে শব্দ বের করতে পারবে না। তাই যা ই করো, সাবধানে করো।"
রুমে কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো। নিক হঠাৎ মুখে হাত চেপে ধরে ভয় পাওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
"ব্রো, এইভাবে কেউ বলে? আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম!"
কৌশিক মুখ ভেঙচে বলল,
"ভয় পাওয়াই উচিত তোমার।"
নিক কিছুক্ষণ থেমে থেকে গম্ভীরভাবে কৌশিকের দিকে তাকিয়ে বলল,
"একটা কথা জানানোর ছিল।"
কৌশিক নিকের দিকে আগ্রহ সহকারে তাকিয়ে,
"কী?"
"আমাকে যেই মেয়েটা মেরেছিলো সে তোমার ওয়াইফের বান্ধবী।"
কৌশিক বিস্মিত হয়ে নিকের দিকে ফিরলো। নিক উপর নিচ মাথা নাড়লো। কৌশিক হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বললো,
"মানে আর কোনো মেয়ে পেলে না? ওর বান্ধবীকেই ধরতে হলো!"
"এটা আমি কি আগে জানতাম?"
কৌশিক বিরক্তিকর শ্বাস ফেলে বললো,
"এখন কি করতে চাইছো?"
"মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে।"
"তুমিও করো নিশ্চয়ই।"
"হু!"
"পরে?"
"কয়েক দিন আগে হসপিটালে দেখা হয়েছিল। এরপর আর সামনে আগায়নি। এই বিষয়ে অনেক চিন্তা করলাম। এসব সম্পর্কে জড়ালে আমাকে মরতে হবে।"
কৌশিক মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
"তা ঠিক।"
"তোমার ক্ষেত্রেও সেম কথা প্রযোজ্য। অনেক বছর ধরে তোমার সাথে আছি। তাই একে অপরের সম্পর্কে অনেকটা ধারণা রাখি। তুমি যেভাবে অ্যানার সাথে জড়িয়ে যাচ্ছো, দিস ইজ নট রাইট। আলতু ফালতু মেয়ের পেছনে সময় নষ্ট না করে আমরা যে কারণে এই দেশে পা রেখেছি, সেটাই করা ভালো।"
কৌশিক নিশ্চুপ হয়ে শুনছিল। হঠাৎ ফোনটা রেখে উঠে দাঁড়ালো। সোফার সামনে টেবিলের উপর থেকে টেলিভিশনের রিমোটটা হাত নিয়ে মুচড়ে দিলো সে। ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হলো টেলিভিশনের রিমোট। নিক তীব্র অবাক হয়ে বললো,
"এই, আমার রিমোট! আমি টিভি দেখতে এসেছি!"
কৌশিক রিমোটের টুকরোগুলো নিচে পা দিয়ে গুঁড়িয়ে দিলো, তারপর চেঁচিয়ে বললো,
"কোনো আলতু ফালতু মেয়ে নয় ও। ওই মেয়েটা অনন্যা, আমার বউ, মাই এডিকশন। মাই অবশেসন, মাই পার্সোনাল ড্রাগস। ইনফেক্ট মাই পেইনকিলার মেডিসিন!"
নিক বিস্ময়ে শ্বাস আটকে হাঁ করে তাকিয়ে রইলো। কৌশিকের চোখে ঝলসে ওঠা উন্মাদনা খেলা করছে। মুহূর্তের মধ্যে সে দেয়ালের দিকে এগিয়ে গিয়ে সজোরে ঘুষি বসালো। দেয়ালের রুক্ষ পৃষ্ঠে আঘাত লেগে তার হাত লাল হয়ে গেলো, কিন্তু সে একটুও ব্যথা অনুভব করলো না।
তারপর গভীর শ্বাস নিয়ে শান্ত গলায় বললো,
"আই নো! আমি ভুল পথে হাঁটছি। একটা মেয়ের প্রতি এতটা অবশেসড হওয়া উচিত নয়। কিন্তু আমার বিশ্বাস! হ্যাঁ, আমি অনন্যাকে এখন থেকে বিশ্বাস করবো। ও আমার কোনো ক্ষতি করতে পারে না! ও আমাকে ভালো রাখতে পারবে। আমার এতো বছরের জ্বালাপোড়া জীবনের মাঝে এক মুঠো আলো অনন্যা। "
নিক কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো, তারপর সোজা হয়ে বসে বললো,
"বিকেয়ারফুল, কৌশিক। আমার দরকার ছিল তোমাকে সাবধান করা। আমি তাই করেছি।"
কৌশিক একপলকে নিকের দিকে তাকালো, ঠোঁটের কোণে একরকম নিঃশব্দ হাসি টেনে বললো,
"হুম! কিন্তু দরকার নেই।"
*******
নোহারা নাক টিস্যু দিয়ে মুছে গলার স্বর নরম করে বললো,
"আমার খারাপ লাগছে আরণ্যক ভাইয়ার জন্য। ইশশ, কেন যে উনাকে এতো সাহায্য করলাম! ভাইয়া নিশ্চয়ই কষ্ট পাচ্ছে। অথচ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড যে চিটার, এটা কে জানতো?"
শব্দগুলো অনন্যার কানে বিষের মতো লাগলো। নোহারার গলায় হাত জড়িয়ে ধরে কাছে এনে বললো,
"ওই! কি বললি? আমি চিটার?"
নোহারা হেসে গলা ছাড়ানোর চেষ্টা করলো,
"কেন? বিয়ের দিন ভাইয়াকে একটা ফোন দিলেই তো হতো!"
সে থমথমে গলায় বললো,
"তখন আমি ওকে চিটার ভেবেছিলাম।"
নোহারা ধীরে ধীরে চোখ সরু করলো, গলা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
"ছাগলি তুই! মাথায় একটুও বুদ্ধি নেই! একবার ছেলেটার সাথে কথা বললেই তো পারতি।"
"আহা! নিজে কত শেয়ানা! আমি যখন পুরো ঘটনা তোর কাছে খুলে বলছিলাম। তুই বলছিলি না, ওই পোলারে সব জায়গায় ব্লক মারতে? ফোন না ধরতে?"
নোহারা হাসার চেষ্টা করে বললো,
"তখন তো আমি তোর কথা চিন্তা করেছিলাম। ভেবেছিলাম তুই একটা অবলা নারী, বয়ফ্রেন্ডের থেকে ধোঁকা খেয়েছিস।"
এক মুহূর্ত নীরবতা। অনন্যার দৃষ্টিতে অস্বস্তি খেলে গেলো। মুখ খুলতে চেয়েও থেমে গেলো। নোহারা এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
"তুই কি জানিস, ভুলটা ঠিক কোথায় হয়েছে?"
অনন্যার কণ্ঠস্বর মৃদু হয়ে এলো,
"কোথায়?"
নোহারা দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
"তুই যেমন ওকে চিটার ভেবেছিলি, আমিও তো তোর ভালো চেয়েই তোকে বলেছিলাম ফোন না ধরতে। কিন্তু কেউ কি একবারও সত্যিটা বোঝার চেষ্টা করেছিলাম?"
অনন্যা নিশ্চুপ হয়ে মাথা নাড়লো। নোহারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারো বললো,
"যাইহোক বাদ দে। সবচেয়ে বড় কথা তুই কামডা করলি কী? তুই আমার প্রিয়, জানের জান, কৌশিক জানকে তুলে নিয়ে গেলি? বিয়ে করে ফেললি? এখন প্রফেসরকে দেখলে আমার কান্না আসবে!"
এই বলে সে মুখ গোঁজার ভান করে আবারো কাঁদার চেষ্টা করলো। অনন্যা বিরক্ত হেসে নোহারার গাল টেনে বললো,
"আরেকবার ড্রামা করবি তো, নাক ধরে টান দিবো! আর বললাম তো আমি বুঝতে পারছিলাম না কীভাবে হয়ে গেলো? স্যার একটা মানুষ যাকে পাওয়া আমার কল্পনার বাইরে ছিল। আমি শুধু একটা মানুষকে চাইছিলাম যে আমাকে হেল্প করবে। কিন্তু কৌশিক স্যার চোখে ধরা দিলো। আর উনিই যে বিয়ে করতে এসে পড়বে। সেটা আমার চিন্তার ও বাইরে।"
"আচ্ছা স্যার তো এমনিতেই একটু কেমন জানি। তুই কিছু জানতে পেরেছিস। কেনো তার পরিচয় সবার অজানা?"
অনন্যা মাথা নাড়িয়ে বললো,
"না তেমন কিছু না।"
নোহারা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
"আচ্ছা, স্যার কী তোর সাথে ওইসব করেছে নাকি হ্যাঁ?
অনন্যা ভ্রু কুঁচকে বললো,
"কী ওইসব?"
নোহারা চোখ টিপে বললো,
"জানিস আবার জিজ্ঞেস করিস কেন?"
অনন্যা লজ্জায় মাথা নামিয়ে ফেললো। ঠোঁটের কোণে হাসি লুকানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু নোহারা সেটা ধরেই ফেললো। দুষ্টুমি ভরা কণ্ঠে বললো,
"হুমম। মুখে কিছু বলবি না, কিন্তু তোর অবস্থা দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক কিছু!"
তারপর হঠাৎ করেই অনন্যার স্কার্ফ ধরে টান দিলো।
"দেখি তো! কোথায় কোথায় সুন্দর মশাটা কামড় দিছে!"
অনন্যা চমকে স্কার্ফ ধরে ফেললো,
"উফফ! কি করছিস! মানুষ দেখলে কী ভাববে?"
নোহারা নাটকীয় ভঙ্গিতে মুখ লাল করে বললো,
"আহ! ভাবতেই লজ্জা লাগছে। স্যার তো তোকে বিয়ে করেছে, আর কি কি করেছে কে জানে!"
অনন্যা এক ধাক্কায় নোহারাকে সরিয়ে দিলো।
"ধুর এমন কিছুই হয়নি!"
.
.
.
চলবে.......................................................................