স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা - পর্ব ১৭ - মুশফিকা রহমান মৈথি - ধারাবাহিক গল্প


এর মধ্যেই পাভেল জাওয়াদের কানে কানে বললো,
 “দোস্ত উপায় পেয়ে গেছি চিংকির লালা জোগাড়ের।”

জাওয়াদ উদ্গ্রীব স্বরে শুধালো,
 “কি উপায়?”

পাভেল মুচকি হেসে বললো,
 “খুব ইজি, একটা আইসক্রিম কেন। ওকে সাধ। ও খেলেই ওর লালা লেগে যাবে। তারপর ওই ড্রেনের পানিতে আইসক্রিম গুলিয়ে খা।”

পাভেলের দিকে তাকিয়ে কঠিন চোখে তাকালো জাওয়াদ। দাঁতে দাঁত খিঁচে বললো,
 “এই শীতকালে তো গাধারাও আইসক্রিম খায় না। আর আমি খাবো আইসক্রিম? মাথা খারাপ তোর?”
 “পড়াবাবার কথা মত তুই তোর হবু বউ যে তোকে বিয়ে করতে চায় তার লালা খুঁজছিস! অন্তত তোর মত মানুষের মুখে গাধা শব্দ মানায় না।”

জাওয়াদ কিড়মিড় করে তাকালো। পাভেল সাথে সাথেই জ্যোতির উদ্দেশ্যে বললো,
“জ্যোতি, কিছু খাবি? মামীর সাথে শাড়ি দেখতে দেখতে আমার দুকেজি ওজন কমে গেছে। মহিলা মানুষ এতো দোকান ঘুরে জানলে কোনোদিন আসতাম না।”

মামীর পাভেলের কথা পছন্দ হলো না। ফলে ভেংচি কেটে বললেন,
 “তোমাকে আসতে বলেছে কে বাপু?”
 “আপনার মত সুন্দরী রমনীকে জাওয়াদের উপর ছেড়ে দিতে ভয় হচ্ছিলো মামী।”
 
মামীর দূর্বলতা হল প্রশংসা। সেটা যেই করুক না কেন, তিনি গলে যান। তাই পাভেলের ঠাট্টায় রাগ হলেও সেটা গলে পানি হয়ে গেল। লজ্জা লজ্জা স্বরে বললেন,
 “হয়েছে হয়েছে। চল, খাওয়া দাওয়া করা যাক। দীপশিখারও ক্ষুধা লেগেছে নিশ্চয়ই।”

পাভেল চাইলো জাওয়াদের দিকে। ইশারা করে বুঝালো,
 “সুযোগ দিয়েছি, লুফে নে।”

*****

দোতালা ফুড কোর্টের একেবারে শেষ টেবিলে বসলো তারা। পাভেল দুটো চেয়ারে শপিংয়ের জিনিসগুলো রাখলো। একে একে যে যার পছন্দের খারাপ অর্ডার করলো। জাওয়াদ শুধু আইসক্রিম কিনে আনলো। তার হাতে আইসক্রিম দেখে জ্যোতি বিস্মিত স্বরে প্রশ্ন ছুড়লো,
 “ভাইয়া তুই এই ঠান্ডায় আইসক্রিম খাবি? কিছুদিন আগে তো হাসপাতালে ভর্তি ছিলি, এবার কি বিয়ের আগে নিউমোনিয়া বাঁধাবি?”
 
জাওয়াদ অগ্নিদৃষ্টি ছুড়লো পাভেলের দিকে। পাভেল সাথে সাথেই জ্যোতির উদ্দেশ্যে বলল,
 “আরে কিছু হবে না। ঠান্ডা ঠান্ডায় ঠান্ডাক্ষয়।”
 “হ্যা?”
 “বিষে বিষে বিষক্ষয় শুনিসনি?”
 “শুনেছি।”
 “অমনই কিছু একটা। তুই খা না, নয়তো আমাকে দে।”
 “পাভেল ভাই, খাওয়া বাদে কিছু মাথায় থাকে আপনার? এতো কে খায়?”
  “আমাকে খাওয়ার খোঁটা দিবি না জ্যোতি, আমি কখনো বলেছি তুই রাস্তার মোড়ের চাঁদাবাজদের মতো সুযোগ পেলেই টাকা চাস? বলি না তো। আমার খাওয়ায় নজর দিবি না।”
 
জ্যোতি নাক মুখ কুচকে বললো,
 “একশোবার দিব, হাজারবার দিব। খাদক একটা।” 

জাওয়াদ ওদের উপেক্ষা করলো। যা পারে করুক, হেদিয়ে মরুক। তার যায় আসে না। সে চিংকির দিকে আইসক্রিমটা এগিয়ে বললো,
 “খাবে?”
 
চিংকি বেশ অবাক হল। তার বিস্ময় তার চোখে মুখে স্পষ্ট প্রকাশ পেলো। সে জানে জাওয়াদ শুচিবাই ধরনের মানুষ। সে কারোর খাওয়া খাবার খায় না। এক স্ট্র কখনো ব্যবহার করেনি তারা। এমনকি পানির বোতলের মুখেও যদি মুখ দিয়ে খাওয়া হয় জাওয়াদ সেটাও উপেক্ষা করে। ফলে বিস্মিত স্বরে শুধালো,
 “এটা তো আপনার জন্য কিনে এনেছেন।”
 “হ্যা… তুমি টেস্ট করবে একটু?”
 
চিংকি ঈষৎ দ্বিধান্বিত স্বরে বললো,
“সমস্যা নেই, আপনি খান।”
 “খাও না তুমি একটু।”
 “হ্যা?”
 “হ্যা, ওরা বললো এটা অনেক টেস্টি।”
 “আইসক্রিমে আবার কি টেস্ট? সব তো একই রকম।”
 “এটা বিদেশী আইসক্রিম। সাড়ে তিনশটাকা এক স্কুপ। খাও প্লিজ।”
 
জাওয়াদ যেন একপ্রকার জোর করলো চিংকিকে। চিংকির সংশয় বাড়লো। জাওয়াদের আচারণ অস্বাভাবিক ঠেকলো যেন। জাওয়াদের মুখবিবরে অনিশ্চিত অস্থিরতা। চিংকির মনে হলো সে যেন জোরপূর্বক কাজটা করছে। ফলে নিচু স্বরে বললো,
 “মামীকে দেখানোর জন্য আপনার অভিনয় করতে হবে না। এমনিতেও আমার আইসক্রিম খাওয়া বারণ। ডায়েট করছি তো।”

জাওয়াদ হতাশ হল। ফলে সাড়ে তিনশ টাকা জলে। পাভেলের মাথা থেকেই এমন অদ্ভুত বুদ্ধি বের হতে পারেই। সেই এমন আজব কিছু চিন্তা করতে পারে। ভুল তার ছিলো। পাভেলের বুদ্ধি গ্রাহ্য করার পূর্বে তার ভাবা উচিত ছিলো। পাভেল জাওয়াদের দৃষ্টি দেখে মিনমিন করে বললো,
 “একটু খাও, এতো সুন্দর করে সাধছে।”
 “আমি জানি পাভেল ভাই, জাওয়াদ সাহেব একটু হাইজিন মেইনটেইন করেন। আমি উনাকে এভাবেই পছন্দ করেছি। আমার জন্য উনাকে বদলাতে হবে না।”
 “আরে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে খাবার শেয়ারে ভালোবাসা বাড়ে। এক কামড়ে কি ওর ডায়রিয়া হবে নাকি? ইশ! আমার প্রেমিকা এমন না, আমাকে এভাবে আদর করে খাবার সাধে না। সেও জ্যোতি ফাজিলের মতো শুধু আমার খাবারে নজর দেয়। চায় আমার পেট খারাপ হয়ে টয়লেটেই আত্মহুতি দেই।”

বলেই জ্যোতির দিকে তাকালো পাভেল। জ্যোতি সাথে সাথেই উপহাস করে বললো,
 “এতো নজরেও আপনার কিছু হবে না পাভেল ভাই। আপনি হল গন্ডার। মোটা চামড়ায় ওই নজর ঢুকতে পারবে না। বেচারি আপনার প্রেমিকা।”
 “তোর মত চাঁদাবাজ হওয়ার থেকে গন্ডার হওয়া ভালো। তোর বরের কষ্টে আমার রাতে কান্না পায়। যাক গে, দীপশিখা আমার বন্ধুকে ফিরিয়ে দিও না।”

পাভেলের কথায় মুখ চেপে হাসলো চিংকি। সাথে খানিকটা লজ্জাও পেলো। জাওয়াদ ভাবলো চিংকি সরাসরি আইসক্রিম খাবে, ফলে লালা পাওয়ার মিশন সম্পূর্ণ হবে। কিন্তু এমন কিছুই হলো না। চিংকি একটা চামচ দিয়ে হালকা একটু খেলো। তারপর বললো,
 “নিন, আপনার অনুরোধ রেখেছি। এবার আপনি নিশ্চিন্তে খান।”

এমন কাজের সাথে জাওয়াদ এবং পাভেলের প্রথম পরিকল্পনা একেবারেই ভেস্তে গেলো। খাওয়া দাওয়া শেষে কটমটিয়ে পাভেলকে বললো,
 “বিল দে।”
 “আমি কেন? তোর বউয়ের শপিং তুই দে।”
 “আইসক্রিমে লালা লাগিয়ে পানির সাথে খাওয়ার বুদ্ধিটা কার?”

পাভেল কাচুমাচু স্বরে বললো,
 “দোস্ত, মাসের শেষ। পকেটে টানাটানি।”
 “জান নিয়ে টানাটানির আগে বিল দে।”

পাভেল জানে জাওয়াদ এখনই ওকে উঠিয়ে আছাড় দিবে। ফলে তাকে চেঁতিয়ে লাভ নেই। হাত কামড়ে দোকানদারকে বললো,
 “কত হয়েছে ভাই?”
 “দু হাজার সাতশ স্যার।”
 “কার্ড চলবে?”
 “নো, স্যার অনলি ক্যাশ।”

পাভেল অসহায় চোখে তাকালো। তার পকেটে টাকা নেই। নিজেই সাতশ টাকার খাবার খেয়েছে। জাওয়াদকে বললো,
 “দোস্ত, আজকে দিয়ে দে। আমি বিকাশ করে দিব।”
 “আমিও জ্যোতির বিয়ে অন্য জায়গায় দিয়ে দিব।”

পাভেল পাথর চোখে তাকালো। জাওয়াদ তার তুরুপের এক্কা বানিয়েছে জ্যোতিকে। লোক ঠিকই বলে, “বউয়ের ভাই মানেই কুমির”। পাভেল আকাশ পাতাল চিন্তা করতে লাগলো, কিভাবে টাকা দেওয়া যায়। সাথে সাথেই মাথায় বুদ্ধি এলো। আগ্রহী স্বরে বললো,
 “দাঁড়া।”

বলেই ছুটলো টেবিলের দিকে। চিংকির প্লেট থেকে চামচটা নিয়েই পকেটে পুরে ফেললো। তারপর এসে বলল,
 “তোর সমস্যা মিটিয়ে দিয়েছি, বিল দে।”

জাওয়াদ খেঁকিয়ে বললো,
 “কি এমন খোরাফাতি কাজ করেছো শুনি।”

সাথে সাথেই চামচ বের করলো পাভেল। গর্বিত স্বরে বলল,
 “দেখ।”
 “বিল দিতে বলেছি বলে চামচ চুরি করেছিস?”
 “ধ্যাত, আরে এটা চিংকির চামচ। এই চামচে ওর লালা আছে তো। এই চামচে তুই পানি খেলে একের ভেতর তিন কাজ হবে।”

পাভেলের বুদ্ধি মন্দ নয়। জাওয়াদ অভিভূত হলো। না, বন্ধু তার অকর্মণ্য নয়। পাভেল অসহায় স্বরে বললো,
 “এবার বিলটা দিয়ে দে।”

জাওয়াদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিল দিল। জ্যোতিরা অপেক্ষা করছিলো একটা ঘড়ির দোকানের সামনে। একটি ঘড়ি দীপশিখার খুব ভালো লেগেছে। দামটা অনেক বেশি। তার কাছে বর্তমানে এতো টাকা নেই। কিন্তু এই ঘড়িটা জাওয়াদের হাতে দেখেছিলো সে। ঘড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে। একদিন দীপশিখার সাথে দেখা করতে আসার সময় তার মোটরসাইকেলের হালকা দূর্ঘটনা হয়েছিলো। ওভারটেক করতে যেয়ে একটি সিএনজির সাথে ধাক্কা লেগে গেছিলো। তখন ঘড়িটা ভেঙ্গে গেছে। জাওয়াদ বিদ্রুপ করে বলেছিলো,
 “শোনো মেয়ে, তোমার সাথে একটু সময় পাওয়ার জন্য আমার প্রিয় ঘড়ির জ্বলাঞ্জলি দিয়েছি। এবার অন্তত সময় দাও।”

জ্যোতি দুষ্টু স্বরে শুধালো,
 “এখনই বরের জন্য পছন্দ করছো?”
 “দশটা নয় পাঁচটা নয়, একটাই তো বর।”
 “এতো দাম দিয়ে মাথায় চড়িও না।”
 “ভাইকে এভাবে বলছো?”
 “ভাই বলেই বলছি। পুরুষ মানুষকে তোল্লায় দিলে মাথায় উঠে ডুগডুগি বাজায়।”
 “তোমার ভাই হয়তো তেমন পুরুষ নয়।”
 “বাহ বা, এখনই পক্ষ নিচ্ছ?”
 “নিলাম, যাকে ভালোলাগে তার পক্ষ নিতে কিসের কার্পণ্য!”
 
এর মধ্যেই জাওয়াদরা চলে এলো। জ্যোতি মিনমিন করে বললো,
 “ভালোলাগাটা প্রকাশ করে ফেলো ভাবী, এরেঞ্জ কাম লাআআআআভ ম্যারেজ হয়ে যাক।”
 
চিংকি হাসলো শুধু। উত্তর দিলো না। মন্দ বলেনি জ্যোতি। কিশোরী চিংকির প্রেমপত্রকে অগ্রাহ্য করলেও হবু বউয়ের প্রেমপত্র তো অগ্রাহ্য করবে না। জাওয়াদ মৃদু স্বরে বললো,
 “চল।”
 “চলুন।”
 
****

নীল আকাশের রঙ শুষে নিয়েছে রাত্রি। জ্বলজ্বল করছে বাড়ির আলোগুলো। দূরের চায়ের স্টল থেকে গান ভেসে আসছে,
 “তুই আমার হিরো,
 তুই আমার হিরো।”

জাওয়াদের বাইক থামলো ঠিক দীপশিখার বাড়ির সামনে। দীপশিখা বাইক থেকে নামলো। জাওয়াদ হেলমেট খুললে মৃদু স্বরে বললো,
 “শাড়ি পছন্দ হয়েছে তোমার?”
 “হ্যা, হয়েছে তো।”
 “আসলে মামী অনেক চুজি টাইপের। একটু বিরক্তিকর। কিন্তু উনি ছোটবেলা থেকে আমাদের দু ভাইবোনকে খুব যত্ন করেছেন। তাই উনাকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আই হোপ তুমি মাইন্ড করনি?”
 “জাওয়াদ সাহেব, আপনার কি হয়েছে বলুন তো?”

জাওয়াদ কিঞ্চিত ভ্যাবাচেকা খেলো। বিহ্বল স্বরে শুধালো,
 “কি হবে?”
 “আপনি আমার জন্য এতো চিন্তিত, আমার তো ভয় হচ্ছে আপনি আমার প্রেমে ট্রেমে পড়লেন কিনা?”
 
জাওয়াদ মৃদু হেসে বললো,
 “তোমার কি ধারণা?”
 “কেস জন্ডিস।”

বলেই হাসতে হাসতে ভেতরে চলে গেলো চিংকি। জাওয়াদ তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। আজ থেকে তার পড়াবাবার পানি সেবন শুরু। হয়তো পরিত্রাণ খুব সন্নিকটে।

****

পড়াবাবার সামনে বসে আছে জাওয়াদ। তার চোখে মুখে অসীম বিরক্তি। টানা দশ দিন সে নাক চেপে, চোখ বুজে পড়াবাবার পানি খেয়েছে। কাজ হচ্ছে কি না পরীক্ষার জন্য গতকাল চিংকির সাথে দেখা করেনি সে। আজ সকালেই আবারও বিয়ের স্বপ্ন দেখেছে। শুধু স্বপ্নে তার জীবন সীমাবদ্ধ নয়। সকাল সাতটায় ইনচার্জের ফোন,
 “জাওয়াদ তোমাকে আপকামিং প্রজেক্ট থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই.ও”

প্রজেক্টটা জাওয়াদের অনেক কষ্টের ছিলো। সব কাজ সে করেছে। অথচ তাকেই বরখাস্ত হবে। পাভেল তার পাশে বসা। মিনমিন করে বলেছে,
 “বলেছিলাম ভন্ড, ড্রেনের পানি খেয়ে বমি করেও লাভ হলো কি?”

পড়াবাবার মুখ শান্ত। তাকে মোটেই উদ্বিগ্ন লাগলো না। স্বাভাবিক মুখমন্ডল। সে ধীর স্বরে বললো,
 “তুমি কিভাবে পানি সেবন করেছো?”
 “যেভাবে আপনি বলেছেন!”
 “পানিতে চিংকির লালা মিশিয়েছো, তাও কাজ হচ্ছে না?”
 “একটু চিটিং করেছি। লালা কি করে মিশাবো, ওর খাওয়া চামচ দিয়ে কাজ চালিয়েছি।”
 “এজন্যই কাজ হয়নি বৎস। তোমরা এতো শর্টকাট কেনো কর? উফফ!”

পড়াবাবার মুখে বিরক্তি ফুটে উঠলো। জাওয়াদ পাভেলের দিকে তাকালো। পাভেল অপ্রস্তুত স্বরে বললো,
 “আমি কি লালা বানাই নাকি? যা মাথায় আসছে সেটাই বলেছি।”
 
জাওয়াদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
 “এখন উপায়। আমার জীবনে তো খাড়া ঝুলছে।”
 “একটাই উপায়।”
 “কি?”
 “একটু অশ্লীল উপায়টা।”
 “কি?”
 “সরাসরি তোমাকে চিংকির লালা সেবন করতে হবে।”
 “পাগল আপনি, আমি এখন চিংকিকে বলবো নাকি আমার মুখে থুথু মারো?”
 “এখন স্বপ্ন থেকে পরিত্রাণের উপায় নেই। কি করার?”

জাওয়াদের মাথা ফেটে যাচ্ছে। পেট মোড়াচ্ছে। কোন আক্কেলে এই বাবার কাছে এসেছিলো সে? ইচ্ছে করছে পড়াবাবার গায়ে বমি করে দিতে। উজবুকের মতো মামীর পরামর্শ নেওয়াই উচিত হয়নি। রাগী স্বরে বললো,
 “আমার পাঁচশত টাকা ফেরত দিন।”
 “ওটা তো অফেরতযোগ্য।”
 “মানে কি?”
 “মানে আমি তোমাকে উপায় বলেছি। সেটার দাম ওই টাকা।”

জাওয়াদ এবার রেগে পড়াবাবার কলার চেপে ধরলো। রাগী স্বরে বলল,
 “ফাজলামি করস?”
 “উত্তেজিত হচ্ছো তুমি জাওয়াদ। আমার উপায় কিন্তু তোমার বন্ধুর কাজে দিয়েছে। বিশ্বাস না হলে চিংকিকে বিয়ে করেই দেখতে পারো। অবশ্য এছাড়া আর উপায় নেই। তুমি চাইলেও ওকে সব খুলে বলতে পারবে না। সাহস থাকলে বলে দাও। ভেঙ্গে দাও বিয়ে, নাকি তুমি নিজেই এই স্বপ্ন থেকে পরিত্রাণ চাইছো না?”

পড়াবাবার ঠোঁটের হাসি খসলো না। জাওয়াদ তার কলার ছেড়ে দিলো। সত্যি তো, সে কেনো চিংকির সাথে বিয়ে ভাঙ্গতে চাইছে না। পড়াবাবা হাসি বিস্তৃত করে বললো,
 “তোমার সাহস নেই বিয়ে ভাঙ্গার? তুমি আসলে চাইছোই না চিংকি থেকে পরিত্রাণ পেতে। তুমি মেয়েটির প্রেমে পড়েছো।”
 
জাওয়াদের কপালের শিরা দপদপ করছে। ইচ্ছে করছে পড়াবাবার মুখ ভেঙ্গে দিতে। কিন্তু পারছে না। লোকটির চোখের দিকে তাকালেই কেমন কেমন যেন লাগছে। এমন অদ্ভুত দৃষ্টি। জাওয়াদ রাগী স্বরে বললো,
 “আপনাকে আমি ভুল প্রমাণ করে দিব, জাস্ট ওয়েট।”

পড়াবাবা বিকৃতচিত্তে হাসছেন। তার হাসি ঝংকার তুলছে শান্ত ঘরে। মৃদু কন্ঠে বললো,
 “আই এম ওয়েটিং।”

জাওয়াদ পাভেলের সাথে বেরিয়ে গেলো। জাওয়াদ চোখ মুখ কঠিন হয়ে আছে। পাভেল রয়ে সয়ে বললো,
 “কি করবি এখন?”
 “বিয়ে ভাঙ্গবো সেই সাথে স্বপ্ন থেকেও পরিত্রাণ পাব।”
.
.
.
 চলবে.......................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp