শাহজাহান তন্ময় - পর্ব ৮৩ - নাবিলা ইষ্ক - ধারাবাহিক গল্প


অরুর প্রেগন্যান্সির আট মাস। শরীরের তুলনায় পেট খানা তার অসম্ভব বড়ো। বড়ো পেটের কারণে হাঁটাচলা তো দূরের বিষয়, মেয়েটা আরাম করে শুতে অবধি পারে না। কোনোরকম একপাশ হয়ে শুয়ে থাকতে হয় সারাটিরাত। অথচ ও বিছানার জুড়ে ঘুমের ঘোরে পায়চারি করা মেয়েমানুষ। তন্ময় হাপুসনয়নে প্রিয়তমারা অস্বস্তি, কষ্ট দেখে —পীড়া অনুভব করে। সে পীড়া অনুভব করে, তা অরু হয়তোবা বোঝে। তাইতো কোনোভাবেই খারাপ লাগা জাহির করতে চায় না। চঞ্চল থাকতে চায়, হাস্যোজ্জ্বল থাকতে চায়৷ বোঝাতে চায় সে মোটেও খারাপ নেই। দিব্যি আনন্দে আছে। এতেও তন্ময় খুব অসহায় অনুভব করে। তার অরুর এতো বুঝদার হওয়া ভালো লাগছে না। এতো বুঝতে কে বলেছে? এসময়েও কেনো তার কথা ওই পুচকে মেয়েটার ভাবতে হবে? ওর খারাপ লাগলে কাঁদুক, তন্ময়কে জ্বালাক, পোড়াক…জানাক এইতো সে চায়। 
খুব করে চায়। এইযে ও কিছু মাস ধরে শান্তিতে ঘুমুতে পারছে না। ঘুমের ঘোরে একটু নড়তেচড়তে গেলে অসুবিধে হয়। ব্যস, ওমনি ঘুম ভেঙে যায়। আর বাকিটা রাত ঘুম আসে না ওর। নির্ঘুম কাটে। তন্ময়েরও ঘুম ভেঙে যায়, সে অবশ্য ওর চিন্তায় ঠিকঠাক ঘুমাতেও চায় না৷ ইচ্ছে হয় না।

অরুর পাশে— বিছানার হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে তন্ময়। কাজের ফাঁকে-ফাঁকে আড়চোখে ঘুমন্ত অরুর ওপরও নজর রাখছে। ওর ওঠার সময় হয়ে এসেছে। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে এই মাঝরাতে উঠে বসে থাকার বদভ্যাস করে রেখেছে। আজ রাতের খাবার সেরে একটু হেঁটেছিল। এরপর ঘরে এসেই ঘুমিয়ে গিয়েছে। দেয়াল ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে রাতের একটা পঁয়তাল্লিশ। আজ আকাশে চাঁদ নেই, নেই নক্ষত্র। কালো মেঘে আকাশ অন্ধকার। জানালা দিয়ে কেমন ঠান্ডা বাতাস আসছে। এসময়ে ঝংকার তুলে বজ্রপাত পড়ল। তন্ময় চকিতে তাকাল অরুর দিকে। না, ওর ঘুম ভাঙেনি। বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। মাঝেমধ্যে অস্বস্তিতে গুঙিয়ে উঠছে। তলপেটে হাত রেখে আছে। অন্যহাত গালে। তন্ময় কিছুক্ষণ নীরবে, বড্ড নিভৃতে অরুর মুখখানি দেখে। আগের তুলনায় স্বাস্থ্য হয়েছে সামান্য। গাল দুটো ভরাট। কী ভীষণ মিষ্টি দেখায় আজকাল! অন্যরকম সৌন্দর্য বহন করছে ওর অস্তিত্ব জুড়ে। 
তন্ময় হাত বাড়িয়ে অরুর অবাধ্য চুলগুলো মুখ থেকে সরিয়ে কানে গুঁজে দেয়। মুখ থেকে হাত নামিয়ে আলগোছে ওর তলপেটে হাত রাখে। বুলিয়ে দেয়। অরুর পেট বুলিয়ে দেয়া তার অন্যতম এক অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ অভ্যাসটা অবশ্য অরুই করিয়েছে তাকে। হঠাৎ করে এসে বলতো,

‘তন্ময় ভাই, বাবুদের ছুঁয়ে দিন তো একটু। ওরা ওদের বাবার স্পর্শ চায়।’

তন্ময় দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এমন মুহূর্তে ওর মুখের ভাই ডাকটা পৃথিবীর অন্যতম হাস্যকর সম্বোধন। 
তন্ময় অসহায় গলায় তখন বলে, 

‘এক মুখে আমায় ভাই ডাকছিস, আবার তোর পেটের বাচ্চাকে আমায় বাবা ডাকাচ্ছিস। তোর কমনসেন্স কোথায়?’

অরু মিইয়ে যায়। দাঁত দিয়ে জিহ্বা কামড়ে মিনমিনে গলায় বলে, 

‘ফায়াজ-ফাইজার বাবা, বাবুদের ছুঁয়ে দেন না।’

তন্ময় ওকে কোলে বসিয়ে উঁচু পেটটা ছুঁয়ে দিতো, চুমু খেতো। ভীষণ আদর করতো। এখন তাকে আর বলতে হয় না। সে দিনে অগুনিত বার অরুর পেট বুলিয়ে দেয়। সেদিন ঘরের দুয়ারে এসে দেখে অরু নিজের পেট দু'হাতে ধরে নরম গলায় গল্প করছে। তন্ময়কে দেখতে পেতেই হাতের ইশারায় কাছে ডেকে উত্তেজিত বলে,

‘একটা বাবু মাত্রই কিক করল। কে কিক করতে পারে বলুন তো? ফায়াজ নাকি ফাইজা?’

তন্ময় কীভাবে জানবে কে লাথি দিয়েছে? তার তো জানার কথা না। ওদিকে অধীর আগ্রহে চেয়ে থাকা প্রেয়সীকে হতাশ করতে ইচ্ছে হয়নি তার। অরুর চোখে চেয়ে দিনদুপুরে মিথ্যে বলেছিল,

‘ফায়াজ।’

অরু গদগদ গলায় বলে, ‘আসুন, ছুঁয়ে দেখুন কীভাবে কিক করছে! একদম আপনার মতো অ্যানার্জেটিক।’

তন্ময় আর অ্যানার্জেটিক? আদতেও এই কথা বিশ্বাস করার মতন? তন্ময় এগিয়ে গিয়ে পাশে বসে অরুর পেটে হাত রাখে। তখুনি বাচ্চা ফের কিক করে। তন্ময় স্পষ্ট একটা নতুন জীবনের উপস্থিতি পায়। সেই অনুভূতি ভাষায় ব্যক্ত করার মতো নয়। আজও সে অরুর পেট ছুঁয়ে বাচ্চাদের উপস্থিতি অনুভব করার প্রচেষ্টা চালায়। এসময়ে ফের বজ্রপাত ঘটে। আশেপাশেই ঘটেছে বোধহয়। জানালা খোলা থাকায় খুব জোরালো হয় বজ্রের ধ্বনি। অরু নড়েচড়ে ওঠে। তন্ময়ের হাতটা শক্ত করে দু'হাতের মধ্যে। আড়মোড়া চোখ মেলে চায়। তন্ময়কে দেখে ঠোঁট ফুলিয়ে বিড়বিড় করে,

‘খেতে ইচ্ছে করছে।’

তন্ময় ল্যাপটপ বন্ধ করে। অন্য হাতে অরুর চুল বুলিয়ে দিয়ে শুধায়,

‘কী খেতে ইচ্ছে হচ্ছে?’

অরু বলে না। বরংচ প্রশ্ন করে, ‘কয়টা বাজে?’

তন্ময় সময় বলতেই অরু কিছুক্ষণ নীরব থাকে। চিন্তিত গলায় বলে, ‘কিছু খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। ঘুমাচ্ছেন না কেনো? এতো রাত হয়েছে আর আপনি এখনো জেগে। আসুন, ঘুমান।’

বাইরে বুঝি বৃষ্টি শুরু হয়েছে? ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। ঝুম হয়ে বৃষ্টি এই নামবে বলে। তন্ময় অরুর গাল ছুঁয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘কী খেতে ইচ্ছে করছে?’

অরুর সদ্য ঘুম ভাঙা মুখ অসহায় দেখল। বড়ো হতাশ হয়ে জানাল, 

‘রসমালাই। কিন্তু আমি খেতে চাচ্ছি না বিশ্বাস করুন। বাচ্চারা খেতে চাচ্ছে।’

তন্ময় হেসে ফেলে। সেই হাসি দেখে অরু হাপুসহুপুস করে। লজ্জা পায়। নিজের কথাটুকু প্রমাণ করতে বলে,

‘ওদের জিজ্ঞেস করুন, ওরাই বলবে আমি নির্দোষ।’

বলতে বলতে অরু উঠতে চায়। তন্ময় দু'হাতে উঠে বসতে সাহায্য করে। অরুর গায়ের ম্যাক্সি হাটুর ওপরে উঠে আসে৷ তন্ময় নরম হাতে ছায়া, ম্যাক্সি ঠিক করে দিয়ে বলে,

‘আমার বাচ্চারা খেতে চেয়েছে যেহেতু আমি তাদের বানিয়ে খাওয়াব। তাদের মাকে তো একবার বানিয়ে খাইয়েছিলাম। ভুলে গেছে?’

অরু মুহূর্তেই তন্ময় বুকে হামলে পড়ে। দু'হাতে জড়িয়ে মুখ লুকিয়ে বিড়বিড় করে জানায়,

‘আমাকে কিনে এনে দিলে মোটেও ভালো হতো না। আমি খুব অভিমান করতাম। খুউউব।’

তন্ময় নিঃশব্দে হাসে। অরুর চুলগুলো গুছিয়ে নিতে নিয়ে বলে, 

‘দিনের চব্বিশঘণ্টার বিশ ঘণ্টাই তো অভিমান করে থাকিস।’

অরু প্রত্যুত্তরে আরও গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে তন্ময়ের পুরুষালি কোমর। বড়ো করে ঘ্রাণ শুঁকে নেয় তন্ময়ের শরীরের। তন্ময়ের বুকে যেই শান্তি পায় সে তা পৃথিবীর কোথাও পায় না। এই যায়গাটাই তার সবকিছু। অরুর আস্ত পৃথিবী এই বুক। 

— — —

বাতি বন্ধ লিভিংরুমের, রান্নাঘরের। সবাই ঘুমাতে চলে গিয়েছে। রাত তো কম হয়নি! তন্ময় বাতি জ্বালায়। এসে দাঁড়ায় রান্নাঘরে। সেবার ইউটিউব দেখে রান্না করেছিল। এবারো সে ইউটিউবে রসমালাই বানানোর ভিডিও ছেড়ে কিছুক্ষণ দেখল। উপকরণ গুলো আগে জড়ো করতে হবে। প্রথমে ফ্রিজ থেকে দুধ নামিয়ে ভিজিয়ে রাখল।
এরপর রান্নাঘরের কাবার্ড খুলে উপকরণ খুঁজতে থাকল। নীরবতা চিড়ে টুংটাং ধ্বনিতে মুখরিত চারিপাশ। এসময়ে কারো উপস্থিতি অনুভব করে তন্ময় পিছু চেয়ে আশ্চর্য না হয়ে পারে না৷ মোস্তফা সাহেব আগ্রহী বদনে দাঁড়িয়ে আছেন। হালকা কেশে প্রশ্ন করেন চাপাস্বরে,

‘কী করছো?’

তন্ময় ফের ব্যস্ত হয় নিজের কাজে। বলে,

‘অরু রসমালাই খেতে চাচ্ছে। তাই বানাব।’

মোস্তফা সাহেব আনন্দে আপ্লূত হলেন। চটপট বেসিনে ধুতে গেলেন হাত দুটো। হাত দুটো ফটাফট ধুয়ে এসে বলেন,

‘একা করতে পারবে না। দেরি হবে। আমিও সাহায্য করি।’

বলতে বলতে তিনি নিপুণ দৃষ্টিতে তন্ময়ের ফোন নিয়ে রসমালাই বানানোর রেসিপিটা দেখে নিলেন। বিজ্ঞের মতো বলেন,

‘দুধটা চুলোতে বসিয়ে দিই আগে। এটা অনেকক্ষণ জ্বাল দিতে হবে। তারপর নাহয় ঢো বানানোর কাজে লাগব।’

মোবাইলটা রেখে মোস্তফা সাহেব দুধের প্যাকেট কেটে ঢেলে নিলেন পাতিলে। তন্ময় তখনো এক এক করে উপকরণ খুঁজে খুঁজে এক যায়গায় জড়ো করছে। ব্যস্ত দুজন হঠাৎ কারো উপস্থিতি পেয়ে পিছু ফিরে দেখে আনোয়ার সাহেব দাঁড়িয়ে। চোখে চশমা, হাতে বই। ভদ্রলোক ঠান্ডা পানি খেতে এসেছেন। বড়ো ভাই, এবং ভাইপোকে রান্নাঘরে ব্যস্ত দেখে আশ্চর্য গলায় শুধান,

‘কী করছেন ভাইয়া?’

মোস্তফা সাহেব আনন্দিত গলায় ঘোষণা দেবার ভঙ্গিমায় জানান,

‘অরু রসমালাই খেতে চেয়েছে। রসমালাই বানাচ্ছি।’

মুহূর্তেই আনোয়ার সাহেব বিচলিত হলেন। বইটা পাশে রেখে হাত দুটো ধুতে গেলেন বেসিনে। ধুয়ে এসে তিনিও বড়ো ভাইয়ের পেছনে রসমালাই বানানোর কাজে ব্যস্ত হলেন৷ তন্ময় আশ্চর্য না হয়ে পারে না। নির্বাক তাকে মোস্তফা সাহেব কাজ ভাগ করে দিলেন। তন্ময় দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীরবে হেসে ভাগে পড়া কাজটুকু করতে থাকে। 

রান্নাঘরের টুংটাং শব্দ, মিহি স্বরে রসমালাই বানানোর আলোচনার মধ্যে অরু ধীরপায়ে এসে হাজির হয় লিভিংরুমে। সে এসেছে তন্ময়ের রসমালাই বানানো দেখতে। অথচ রান্নাঘরে তন্ময় ব্যতীত আরও দুজন ভীষণ ব্যস্ত। মোস্তফা সাহেবের নাকে আটা লেগে আছে৷ আনোয়ার সাহেবের সাদা শার্টেও সাদা কিছু একটা লেগে গিয়েছে। তন্ময়ের দু'হাতে মিশ্রণের বাসন। এই পর্যায়ে তন্ময় অরুকে দেখতে পায়৷ অদূরেই দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যাল চোখে তাদের দেখছে। আনোয়ার সাহেবও এবারে মেয়েকে দেখেন৷ দু'হাতে ময়দা তার। সেভাবেই দু'গাল ভরে হাসেন। মোস্তফা সাহেব প্রাণোচ্ছল গলায় বলেন,

‘মামণি আর আধঘন্টার মধ্যেই রসমালাই হয়ে যাবে। তুমি বসো।’

অরু লজ্জায় আড়ষ্ট হয়। বাবা-চাচাদের এহেন কাণ্ডে আনন্দে হেসেও ফেলে। তন্ময় চাইতেই সে দু'হাত মুখে চেপে হেসে ওঠে। চাচার কথা মতো বসে লিভিংরুমের সোফায়। দেখা গেল কিছুক্ষণের মধ্যে জবেদা বেগম, সুমিতা বেগমও এসে হাজির হলেন। তবে তারা রান্নাঘরে ঢোকে না। লিভিংরুমে দাঁড়িয়ে তাদের ব্যস্ত কাণ্ডকারখানা দেখে যায়।

— — —

অরুর ডেলিভারি ডেট ঘনিয়ে আসছে। তন্ময় আপনমনে খুব অস্থির হয়ে আছে। অরুও কিছুটা ভয়ে মাঝেমধ্যে গুটিয়ে যায়। এইতো অরুর প্রায় ন'মাস। এই মাসের শেষের দিকে অরুর ডেলিভারি ডেট পড়েছে। জবেদা বেগম, সুমিতা বেগম ব্যাগপত্র গোছাতে শুরু করেছেন। আজ তন্ময় বেবিশপ থেকে শপিং করে ফিরেছে। নবজাতক বাচ্চা যা যা প্রয়োজন সবই সে নিয়ে এসেছে। সেসব জবেদা বেগমের হাতে দিয়ে ঘরে এসে ঢোকে। অরু বিছানায় বসে আছে হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে। তন্ময়কে দেখে অস্থির হয়, নড়েচড়ে ওঠে। তন্ময় হাত ঘড়ি খুলতে নিয়ে শুধায়,

‘কী হলো?’

অরু হাতের ইশারায় কাছে ডাকে। তন্ময় এগিয়ে যায়। পাশে বসে৷ অরু কিছুক্ষণ তন্ময়ের দিকে চেয়ে থেকে কান্না আটকে রাখা চাপা গলায় বলে,

‘তন্ময় ভাই, যদি আমার কিছু হয়ে যায় আপনি কিন্তু কখনো অন্যক কাউকে বিয়ে করতে পারবেন না।’

তন্ময় মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়। থমকায় তার মুখ। চোয়াল তৎক্ষণাৎ শক্ত হয়। এক ভয়ংকর বিশ্রী অনুভূতির তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয় ভেতরের সবকিছু। অরু বোধহয় বুঝতে পারে সে ভালো কিছু বলেনি! কিন্তু তাকে কিছু বলতেই দেয় না তন্ময়। জাপ্টে ধরে নিজের বুকের মধ্যে। বিড়বিড় করে তন্ময়,

‘দ্বিতীয়বার এইসব কথা তোর মুখে শুনলে আমি — আমি….’

তন্ময় শেষ করতে পারে না বাক্য। সে থামে যায়। অরু ঘাবড়ে যায়। গুটিয়ে যায় তন্ময়ের বুকে৷ 
.
.
.
চলবে..........................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp