টানা পনেরো দিনের মেঘ বৃষ্টি ভেঙে আকাশে আজ সোনালী রোদ নিয়ে সূর্য উঠেছে।গাছের পাতা গুলো চকচকে সবুজ বর্ন ধারণ করেছে। মনে হচ্ছে তাদের উপর পড়া ধুলো ময়লার আস্তরন ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে। বড় বড় গাছের নিচে শালিক আর ঘুঘু পাখির ডিম সমেত বাসা ভেঙে ভেঙে পড়ে আছে।
সেগুলোই ক্যামেলিয়া সকাল বেলা নাবিল হাসানের বাড়ির চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখছে।
আজকে তার নিজেকে অনেক ফ্রেশ লাগছে।সব কিছুই নতুন নতুন ঠেকছে।
হঠাৎই টুসি আর সুজানা কফি হাতে গার্ডেন এরিয়া তে এসে ক্যামেলিয়া কে চমকে দিতে শব্দ করে উঠলো
"ভাও"
ক্যামেলিয়া চমকে পিছনে তাকাতেই টুসি আর সুজানা কে দেখে মিষ্টি হাসি উপহার দিলো।
"বাহ তোমার হাসিটা তো খুব সুন্দর!
"সব সময় হাসো না কেনো?
বলেই সুজানার আরেক হাতে থাকা কফির মগ এগিয়ে দিলো ক্যামেলিয়ার পানে।
টুসি কফিতে লম্বা এক চুমুক দিয়ে বলে উঠলো
ও গম্ভীরা বতী,এজন্য হাসে না।
আমাকে দেখো আমি কতো ভালো হাসতে পারি বলেই
সব গুলো দাঁত বের করে হো হো করে হেসে উঠলো টুসি।
পিছন থেকে রিজভী ফোড়ন কেটে বললো
"মাফ করে দে বোন।সকাল সকাল কারোর দিন খারাপ করিস না।
মুহূর্তেই লেগে গেলো ঝগড়া রিজভী বনাম টুসি।
ক্যামেলিয়া সেই ঝগড়া দেখে মলিন হাসলো।
সুজানা ক্যামেলিয়ার মনোভাব বুঝতে পেরে তাড়া দেখিয়ে বলে উঠলো
"তোমাকে না আজ দুটো সারপ্রাইজ দেবো বলেছিলাম?
ক্যামেলিয়া মাথা ঝাকিয়ে বললো হ্যা"
"তা তুমি কি সারপ্রাইজড হবার জন্য প্রস্তুত?"
ক্যামেলিয়া ফাইটিং এর সাইন দেখিয়ে বলে উঠলো "ইয়াহ"
******
টানা বৃষ্টির কারণে ঘরবাড়ি একদম স্যাৎস্যাতে হয়ে আছে।টাইলসে পাড়া দিলেই আঠা আঠা অনুভুত হচ্ছে।
মিসেস মিতালি বাসার হেল্পিং হ্যান্ড কোহিনুর কে নিয়ে ঘরবাড়ি মুছামুছি করছেন আর মিটিমিটি হাসছেন।
মিসেস মিতালীর হাবভাব কোহিনুর এর মোটেও ভালো লাগলো না।
অনেক ক্ষণ ধরেই সে দেখে চলছে এই হাসি।
শেষে মনের খচখচানি দূর করতে বলেই ফেললো
" ও মাগো খালা আম্মা! এমন কইরা হাসেন কিল্লিগা?"
মিসেস মিতালি মুখ টিপে হেসে উত্তর দিলো
"একটু পরেই দেখতে পাবি।বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি হাত চালা।
বাসায় আজ সকাল থেকেই বাহারি দেশীয় রান্না হচ্ছে।সাথে কোহিনুরের উপর সব কিছু মুছামুছির স্পেশাল দায়িত্ব পড়েছে।
মিসেস মিতালি একটু ফালুদা আর লাচ্ছি রেডি করলেন।সাথে হালকা নাস্তা।
একটু পরেই টুংটাং শব্দে ঘরের কলিংবেল বেজে উঠলো।
কোহিনুর দরজা খুলতে নিলেই মিসেস মিতালি হাতের ইশারায় কোহিনুর কে খুলতে নিষেধ দিলেন।
নিজের পরনের শাড়ি ঠিক করে,মাথার চুল হাতখোপা করতে করতে দরজার কাছে এগিয়ে এলেন।
দ্বিতীয় বার কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে নিজের স্বামী মাহতাব চৌধুরী কে দেখে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে জিজ্ঞেস করলেন
"তুমি এলে কেনো?
নিজের সহধর্মিণীর কাছ থেকে এমন বেখাপ্পা প্রশ্নবাণে আহত হবার ভান করে মাহতাব চৌধুরী বলে উঠলেন―
"সেকি মিতালি?আমার বাড়ি আমি আসবো না?
"না আসবে না।সময় অসময়ের মানে বোঝোনা?
মাহতাব চৌধুরী কিছু বলার আগেই আবার কলিং বেল বেজে উঠলো
মিসেস মিতালি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতেই
টুসি,সুজানা আর ক্যামেলিয়া কে দেখে আহ্লাদে আটখানা হয়ে ক্যামেলিয়া কে জড়িয়ে ধরলেন।
প্রথমে ক্যামেলিয়ার অস্বস্তি হলেও ধীরে ধীরে তার ভালো লাগতে শুরু করে।
মাহতাব চৌধুরী উঁচু গলায় জিজ্ঞেস করেন
"কে এসেছে মিতালি??
মিতালি আবেগে আপ্লুত হয়ে উত্তর দেয়
"আমাদের আম্মা এসেছে"
মাহতাব মিতালীর কথা অনুসরণ করে দরজায় তাকাতেই ক্যামেলিয়া কে দেখে খুশিতে এগিয়ে গিয়ে কুশল বিনিময় করতে করতে ড্রয়িং রুমে বসতে বললেন।
কোহিনুর চোখ বড় বড় করে ক্যামেলিয়ার দিকে তাকিয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে বলতে থাকে
"ইয়া আল্লাহ গো, বৈদেশি মানুষ।কি সুন্দর!"
সুজানা কাধের ব্যাগ সোফার কোণায় রাখতে রাখতে বলে উঠে
"বাইরে খুব গরম আম্মু,আমাদের ঠান্ডা কিছু খেতে দাও।
মিসেস মিতালি বলে উঠেন
হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়, দিচ্ছি।
মাহতাব চৌধুরী ক্যামেলিয়া কে সামনে পেয়ে যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন।
নিজের জমানো সব কথা উগড়ে দিতে চাচ্ছেন যেনো।
মেয়েটাকে তিনি শুধু ছবিতেই দেখেছেন।সামনে থেকে একবার দেখেছিলেন,কিন্তু কথা বলার সুযোগ হয়নি।
আজ যেহেতু সুযোগ হয়েছেই তবে তিনি সব বলেই তবে ক্ষান্ত হবেন।
এদিকে টুসি তার খালুর বাচ্চামো দেখে শুধু কপাল স্লাইড করছে।
আর মনে মনে ভাবছে
"খালু যা শুরু করেছে ,তাতে এই মেয়ে আধা ঘন্টাও টিকতে পারবে না এখানে।"
টুসি মিসেস মিতালি কে চোখের ইশারা দিতেই মিসেস মিতালি কটমট করে ডেকে উঠলেন
"সুজানার বাবা"-----
ডাকের ধরন শুনেই মাহতাব চৌধুরী যা বুঝার তা বুঝে গেলেন।
তবুও তার এখান থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না।
এদিকে কোহিনুর এটা সেটার ছুতোয় ক্যামেলিয়া কে দেখে চলেছে শুধু।
"কি ফকফকা সাদা,সাপের লাহান নীল চোখ,কি সুন্দর হাত পা,লাল লাল ঠোঁট ,মুখে কোনো দাগ নাই।
ইশ একবার যদি ছুইয়া দেখবার পারতাম!
একটা সেলফি তুইলা যদি ফেসবুকে পোস্ট করবার পারি,আশেপাশের হগগল বাড়ির কামের ছেড়ি তারে সমীহ কইরা চলবো।
ক্যামেলিয়ার কাছে এসে কোহিনুর মনে সাহস সঞ্চয় করে বলে উঠলো
"সিস্টার, আমি এই বাড়ির মানে হাউজ কামের ওয়ার্ক, ওয়ার্ক মাইয়া কোহিনুর।
ক্যামেলিয়া মাথা ঝাকিয়ে বললো
"আচ্ছা তাই নাকি?
খুব সুন্দর তো তোমার নাম টা!
বিদেশির মুখে শুদ্ধ বাংলা শুনে কোহিনুর অবাক।
খুশিতে গদগদ হয়ে বলে উঠলো
"আমনে অনেক সুন্দর,একটু আপনার হাত ডা ধরতাম পারি?
ক্যামেলিয়া একটু হেসে কোহিনুর কে হাতে ধরে টেনে পাশে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলো
"বয়স কতো তোমার?
ক্যামেলিয়ার পাশে বসতে পেরে কোহিনুর নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে করলো।
আবেগে আপ্লুত হয়ে উত্তর দিলো "পনেরো।
কোহিনুর আবার বলে উঠলো
"আফা যদি কিছু মনে না করেন আমনের লগে একটা সেলফি তুলতাম চাই
বলেই মাথা নিচু করে ফেললো কোহিনুর।
কোহিনুর ধরেই নিলো "এই বৈদেশী ছবি তুলতে রাজি হইবো না"
ক্যামেলিয়া মেপে হাসলো।
এরপর বললো
ঠিকাছে,একটাই কিন্তু হুম?
কোহিনুর মাথায় হাত রেখে বললো
আফা আমনে সত্যি আমার লগে ছবি তুলবেন?
ক্যামেলিয়া মুচকি হেসে মাথা ঝাকিয়ে ছবির পোজ দিলো।
ছবি তুলা শেষ না হতেই কোহিনুর এর ডাক পড়লো রান্না ঘর থেকে।
ঝটপট ছবি তুলে কোহিনুর
"জে খালা আম্মা আইতাছি"
বলেই এক দৌড় দিলো।
মিসেস মিতালি আর কোহিনুর তাদের রেডি করা খাবার গুলো সেন্টার টেবিলে এনে রাখলেন।
টুসি ফালুদা দেখে খুশিতে বলে উঠলো
"তুমি বানিয়েছো খালামণি?
মিসেস মিতালি বললেন হ্যা,নে ঠান্ডা থাকতে থাকতেই খেয়ে নে।
ক্যামেলিয়ার হাতে ফালুদার বাটি ধরিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন মিসেস মিতালি
"এটার নাম ফালুদা""খেয়ে দেখো বাবা,অনেক ভালো লাগবে।"
ক্যামেলিয়া স্মিত হেসে এক চামচ মুখে দিয়েই আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
সত্যিই এটা অনেক মজা।
খুব দ্রুততার সহিত এক বাটি খেয়ে ইতস্তত করে বলে উঠলো
"আরেক বাটি পাওয়া যাবে আন্টি?
বলতে না বলতেই মাহতাব চৌধুরী তার নিজের বাটি টা ক্যামেলিয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে উঠলো
আমি জানতাম তুমি আরেক বাটি চাইবে।
"মিতালীর হাতের ফালুদা তোমার বাবাও দু বাটি খেতো।
বাবার কথা মনে পড়তেই ক্যামেলিয়ার চোখে জ্বালা ধরলো।
বার কয়েক পলক ঝাপটে অশ্রু লুকিয়ে ফালুদা খাওয়ায় মনো নিবেশ করলো।
খাওয়া শেষ হতে না হতেই ক্যামেলিয়া কে একপ্রকার বদল দাবা করেই দুতলায় নিজের রুমে ছুটলো সুজানা,সাথে টুসি।
আজ তাদের অনেক প্ল্যান প্রোগ্রাম।
নিজেদের পোশাক বদলে বিছানায় চিৎ হয়ে এলোমেলো ভঙ্গিতে শুয়ে পড়লো সুজানা আর টুসি।
মিনিট পাঁচেক পরেই গোসল সেরে বেরিয়ে এলো ক্যামেলিয়া।
পরনে তার সফট স্কাই ব্লু রঙের ডেনিম হাফ হাতা শার্ট আর স্কিনি জিন্স।
হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে বাদামি রঙের হালকা কোঁকড়ানো চুল গুলো শুকিয়ে ভালোমতো আঁচড়ে কাঁধের দুই পাশে ছেড়ে দিলো।
মুখে হালকা ক্রিম মেখে একটা চেয়ার টেনে বসলো।
সুজানার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো ক্যামেলিয়া
"আপু সারপ্রাইজ কখন দেখবো?
সুজানার কাছে ক্যামেলিয়া কে এই মুহূর্তে একটি বাচ্চা মনে হলো।
শোয়া থেকে উঠে কক্ষের বাইরে চলে গেলো, মিনিট কয়েক বাদে একটা এলবাম নিয়ে ফিরলো সুজানা!
এলবাম টা বিছানার উপর রেখে তিনজনে গোল হয়ে বসলো।
এলবাম এর প্রথম পৃষ্টা উল্টাতেই একটি সাদা টাওয়েল দিয়ে পেঁচানো বাচ্চা পুতুলের ছবি বেরিয়ে এলো।
নিজের ছবি সুজানাদের ফ্যামিলি এলবামে দেখে অবাক হলো ক্যামেলিয়া।
মনের কৌতুহল থেকে প্রশ্ন করলো
"আমার ছবি এখানে কি করে এলো?
টুসি চটপটে কন্ঠে বলে উঠলো
"মনে নেই তোর?চাচ্চু যে খালুর ফ্রেন্ড।
মাথায় চাপ প্রয়োগ করতেই মিসেস মিতালি চৌধুরীর কথা গুলো মনে পড়লো তার।
এরপর দ্বিতীয় পৃষ্ঠা উল্টাতেই একটি ছোট বাচ্চা ছেলের ছবি বের হলো।
সুজানা বললো
"এটা আমার মেজো ভাইয়া,"
এটা বড় আপু,এভাবে ছবি উল্টাতে উল্টাতে একটি সুদর্শন যুবকের বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ইউনিফর্ম পরিহিত ছবি বেরিয়ে এলো।
যার শার্ট টা আকাশি রঙের এবং প্যান্ট নেভি ব্লু।চুল গুলো ছোট করে ছাটানো।বুকে দুই হাত ভাঁজ করে দাঁড়াবার কারনে হাতের পেশী গুলো ফুলে উঠেছে।
দাঁড়িবিহীন ধবধবে ফর্সা ক্লিন শেভড মুখ টা ক্যামেরার ফ্লাশের আলোতে চকচক করছে।চোখ দুটো যেনো গহীন সমুদ্র।
মুখে রয়েছে ভুবন ভুলানো অমায়িক হাসি।
মানুষটা কে তা চিনতে ক্যামেলিয়ার এক সেকেন্ড সময় ও লাগলো না।
ধীরে ধীরে সুজানা আরো ছবি উল্টালো।
একসময় একটি ছবিতে গিয়ে ক্যামেলিয়ার নজর আটকালো।
সেই জ্যাকেট আর মাফলার পরিহিত যুবক।
ভালো করে চোখের দিকে দৃষ্টি দিতেই ক্যামেলিয়া বুঝে ফেললো কে ছিলো সেদিনের সেই আগন্তুক।
সুজানা আর টুসীর দিকে দৃষ্টি দিতেই ওরা মাথা দুলিয়ে সায় জানালো।
এরপর সুজানা নাফিজ হাসানের প্রেরিত সেই চিঠি ক্যামেলিয়ার হাতে দিলো।
অবাক হয়ে ক্যামেলিয়া জিজ্ঞেস করলো
"কি এটা?"
তোমার বাবার দেয়া চিঠি এটা বলেই সুজানা চিঠি টি ভাঁজ খুলে পড়তে ইশারা করলো ক্যামেলিয়া কে।
ক্যামেলিয়া চিঠির ভাঁজ খুলে উল্টে পাল্টে চার পাঁচ বার পড়লো চিঠি টা।
এরপর হঠাৎই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
সুজানা আর টুসি ক্যামেলিয়া কে আগলে ধরলো।
ছেলেটি ক্যামেলিয়ার জন্য অনেক করেছে।অথচ ক্যামেলিয়া তাকে একটা থ্যাঙ্কস পর্যন্ত দেয়নি।
আর ক্যামেলিয়া একজন মানসিক সমস্যা গ্রস্থ ব্যক্তি।
সে কিভাবে একজন মানুষের জীবন রাঙাবে?
বরং সে যার জীবনে যাবে তার জীবনই ধীরে ধীরে রংহীন হয়ে উঠবে।
সত্যিই কি সারাটা জীবন তাকে একাকী, নিঃসঙ্গতা নিয়ে কাটাতে হবে?
ছেলেটি যখন জানবে ক্যামেলিয়া অসুস্থ তখন ঠিকই তাকে দূরে ঠেলে চলে যাবে।
তাই ক্যামেলিয়া চায়না তার রংহীন জীবনের ছোয়া অন্যকে দিয়ে তার জীবন বেরঙ করতে।
******
মাহাদ আজ বাড়িতে নেই।কি এক জরুরি কাজে বাইরে গিয়েছে।
এজন্য দুপুরের খাবারের সময় ডাইন ইন রুমে মাহাদের সাথে কারোর দেখা হয়নি।
দুপুরের খাবার খাওয়ার পর সবাই ভাত ঘুম দিয়েছে।
টুসি আর সুজানা দুজন দুজনকে জড়িয়ে মরার মতো ঘুমুচ্ছে।
সকালের কথা গুলো চিন্তা করে ক্যামেলিয়ার চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছে না।
বিছানা ছেড়ে শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো ক্যামেলিয়া।
এরপর একা একা ঘুরে ঘুরে চারপাশ দেখতে লাগলো।
আলাপ করার মতো কাউকে দেখা যাচ্ছে না।আর ক্যামেলিয়া নিজেও কারো সাথে কথা বলতে আগ্রহী নয়।
সুজানার রুমের দক্ষিণ পাশে একটি কক্ষের দরজা খোলা দেখা যাচ্ছে।সেখানে অফ হোয়াইট রঙের পর্দা গুলো মৃদু বাতাসে দুলছে।
ক্যমেলিয়া ধীরে ধীরে হেটে সেই কক্ষের দিকে পা বাড়ালো।
রুমে ঢুকেই ক্যামেলিয়ার চোখ চড়ক গাছ।
বিশালাকার এই কক্ষটি ছবি আঁকার সামগ্রী আর পেইন্টিং এ ভর্তি।
একটা কর্নার শোকেসে বিভিন্ন মেডেল,ক্রেস্ট,খেলাধুলা করে অর্জিত প্রাইজ রাখা।
একপাশে সিঙ্গেল একটি বিছানা।যা খুব পরিপাটি করে গুছানো।
দক্ষিণ পাশের জানালার কাছে একটি টেবিল আর চেয়ার।
বেলকনির দরজার সাথে একটি হুক লাগানো সেখানে একটি খাঁচাতে ময়না পাখি রাখা হয়েছে।
ক্যামেলিয়া কে দেখা মাত্রই পাখিটি
"ক্যামেলিয়া, ক্যামেলিয়া বলে চিল্লা চিল্লি শুরু করলো।
পাখিটিকে থামানোর জন্য ক্যামেলিয়া হুশ হুশ করেই যাচ্ছে
কিন্তু পাখিটি থামার কোনো লক্ষণ ই দেখাচ্ছে না।
এই মুহূর্তে পাখিটিকে গ*লা টি*পে খু*ন করতে ইচ্ছে করছে ক্যামেলিয়ার।
পাখিটির চিৎকারে ক্যামেলিয়ার মাথা ধরে গেলো।
হঠাৎই সেই বিকট সুর বেজে উঠলো ক্যামেলিয়ার কানের কাছে।
চারপাশে হাতড়ে দিকবিদিক শূন্য হয়ে একটি চিকন রংতুলি হাতে নিলো ক্যামেলিয়া।
এক্ষুনি বজ্জাত পাখির সকল জবান বন্ধ করে দেবে সে।
"চিরতরে এর কন্ঠ রোধ করতে না পারলে আমার নাম ও ক্যামেলিয়া নয়"
খাঁচা খুলে রংতুলির আঘাত হানার আগেই শক্তপোক্ত একটি হাত খপ করে ধরে ফেললো ক্যামেলিয়ার হাতের কব্জি।
মুহূর্তেই পাখিটি চিৎকার করা বন্ধ করলো।
থমকে দাঁড়ালো ক্যামেলিয়া।
কোনো চওড়া বুকের সাথে তার পিঠ লেগে আছে।
হঠাৎ ই বুক কেঁপে উঠলো ক্যামেলিয়ার।মস্তিষ্কও শান্ত হলো।
আলতো হাতে ক্যামেলিয়া কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ক্যামেলিয়ার এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করতে করতে আদুরে স্বরে মাহাদ বলে উঠলো
"পাখি তোমাকে অনেক জ্বালাতন করেছে তাই না?
কি করবো বলো?
পাখি তো একটি অবলা প্রাণী,অবুঝ্,
কি শাস্তি দিবো একে?
ও কি আর আমাদের মতো এতো কিছু বুঝে 'বলো?
"নির্বোধ পাখির হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
"তোমাকে জ্বালাতন করার জন্য সত্যি ই আমরা দুঃখিত।
.
.
.
চলবে.......................................................................