শাহজাহান তন্ময় - পর্ব ৮৪ - নাবিলা ইষ্ক - ধারাবাহিক গল্প


অযথার্থ বাড়িতে বন্ধুবান্ধবদের আসা-যাওয়া তন্ময় পছন্দ করে না। প্রয়োজনে অথবা দাওয়াত করিয়ে বছরে একবার, দু-বার আনা ভিন্ন বিষয়। এক্ষেত্রে তার বন্ধুবান্ধবরাও বেশ ভদ্রসভ্য। না বলেকয়ে বাড়িতে অযথার্থ কখনো আসতে চায়নি, আসেওনি। প্রয়োজনে, ঠিক তন্ময়ের জন্যই হয়তোবা দু-একবার এসেছিল। অথচ এবারে ওদের মাথায় এক অন্যরকম ভূত চেপেছে যেন! মাসখানেক ধরে প্রত্যেকটা তার কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করে যাচ্ছে বাড়িতে আসতে চেয়ে। তন্ময়ের পরিষ্কার 'না' টুকু শুনেও নিজেদের ঘ্যানঘ্যানানি থামায়নি। গত শুক্রবার তো ফের ঢাকঢোল পিটিয়ে আবদার করে বসে আছে। তন্ময় অসন্তুষ্ট গলায় না জানিয়েছে প্রত্যুত্তরে। এরপর আর আবদার করেনি এই সপ্তাহ জুড়ে। তন্ময় ভেবেছিল, ওদের মাথা থেকে বুঝি ভূতটা নেমেছে। কিন্তু না, তাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে আজকের কাণ্ড! সন্ধ্যার পরপর ব্যাগ ভরতি জিনিসপাতি নিয়ে প্রত্যেকটা শাহজাহান বাড়িতে হাজির হয়েছে। মোস্তফা সাহেব প্রফুল্লচিত্তে ছেলের বন্ধুবান্ধবদের আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত। এগিয়ে গিয়ে ভেতরে নিয়ে এসেছেন উচ্ছ্বসিত বদনে। যেমন, তিনি ওদের আসবার খবরাখবর আগ থেকে জানতেন। তন্ময় রাজি না বলে, বাড়ির কর্তা মহাশয়কে পটিয়ে ঠিকই চলে এসেছে বাঁদর গুলো। মাহিন সোফায় বসতে বসতে আহ্লাদী স্বরে শুধায়,

‘তন্ময়ের সোনামণিটা—’

রিয়ান মাহিনের পাশেই বসেছিল। মুহূর্তেই বাম হাতের কনুই দিয়ে শক্তপোক্ত এক গুঁতো দিয়ে বসে। গুঁতো খেয়ে মাহিনের মস্তিষ্ক কাজে লাগে। নিজের কথাটুকু দ্রুত শুধরে নেয়,

‘... ইয়ে না মানে চাচা, আমাদের অরু পাখিটা কই? ডাকুন না ওকে। একটু দেখি।’

মোস্তফা সাহেব আনন্দিত হোন। উচ্ছ্বসিত গলায় জবেদা বেগমকে ডাকেন। ভদ্রমহিলা আসতেই গদগদ হয়ে হেসে বলেন,

‘অরু মামণি কী করে? ওকে ডাকো। ওর ভাইয়ারা ওকে দেখতে এসেছে।’

জবেদা বেগম হেসে মাথা দোলান। ততক্ষণাৎ অরুকে আনতে যান। তন্ময় নির্বিকার মুখে দাঁড়িয়ে আছে। সৈয়দ আলগোছে উঠে গিয়ে তন্ময়কে টেনে এনে নিজের জায়গায় বসায়। সোফার পেছনে গিয়ে দু’হাতে তন্ময়ের কাধ দুটো মালিশ করার ছুঁতোয় ভাব জমায়। কণ্ঠ নামিয়ে মিষ্টি করে বলে, 

‘দেখ, আমরা খুব শীঘ্রই হ্যান্ডসাম চাচা হতে যাচ্ছি। আমাদের ভাতিজাকে যদি পেটে থাকতে না দেখি তাহলে ভবিষ্যতে এমন সুদর্শন মুখটা কীভাবে দেখাব ওকে বল? যদি ওরা বড়ো হয়ে ফটর-ফটর করে জিজ্ঞেস করে বসে,
 ‘চাচ্চু, আমি যখন আমার মায়ের পেটে ছিলাম, তুমি কী আমায় দেখতে এসেছিলে?’ 
প্রত্যুত্তরে যদি বলি, ‘না।’ তখন ওরা কষ্ট পাবে না বল? তাইতো দেখতে এসেছি। যেন ভবিষ্যতে তোর পুত্র সন্তান, কন্যা সন্তানকে আদরের সাথে, গর্বের সাথে বলতে পারি তাদের আমরা পেটে থাকতেই দেখেছি।’

তন্ময় আশ্চর্য হয়ে মাথা ঘুরিয়ে উদাস চোখে দেখল সৈয়দের হাসি-হাসি মুখটা। রিয়ান ঠোঁট ভিজিয়ে বন্ধুর কাঁধে কাঁধ ঘষে বলল,

‘দোস্ত, অরুকে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল। বল, ও তো ভাবি হওয়ার আগে আমাদের বোন। তোর বোন মানে আমাদেরও বোন। তুই দু নাম্বারি, ফাটকাগিরি করে বউ বানিয়ে নিয়েছিস বলে তো আর ও ভাবি হয়ে যায় না! আগে বোন, তারপর হচ্ছে ভাবি। এখন বোনকে কী একটু দেখতে আসতে পারি না? তোর বিবেক কী বলে?’

তন্ময় থমথমে মুখে শুধু চেয়ে রয়। বন্ধুদের মুখ দেখে যায়। ফাটকাগিরি করে বউ বানিয়েছে মানে? আশ্চর্য! তন্ময়কে যে টেনেহিঁচড়ে জোরপূর্বক প্রেমের নদীতে ডুবানো হলো তা তো জানে না ওরা। রিয়ান তোতলায়। মোস্তফা সাহেব ফুসুরফাসুর শুনে প্রশ্ন করেন বিনয়ী স্বরে,

‘কোনো সমস্যা, বাবারা?’

মাহিন চমৎকার করে হাসে। মোস্তফা সাহেবের দু-হাতে নিজের হাতে নিয়ে রসিক গলায় বলে,

‘ভীষণ খুশিতে ফুসুরফাসুর করছে। আমাদের মধ্যে তন্ময়ই প্রথম বাবা হতে যাচ্ছে, যাকে নিয়ে আমাদের বিন্দুমাত্র আশা ছিল না। ভেবেছিলাম এই ছেলে জীবনে শুধু মাছ দেখে যাবে, খেতে পারবে না। কিন্তু আমাদের আশ্চর্য করে দিয়ে ও মাছ খেয়ে মাছের… ’

শুহানি কেশে ওঠে। বলে, ‘হা হা হ, মাহিন তুই খুউব ফানি। হা হা হা। আংকেল ও বলতে চাচ্ছে, আমরা খুব খুশি। আমাদের চ্যাম্পের ছোটো চ্যাম্প আসতে যাচ্ছে পৃথিবীতে, খুশি না হয়ে উপায় আছে?’

মোস্তফা সাহেব পালাক্রমে হেসে বলেন, ‘তাইতো, তাইতো।’

তন্ময় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাবার মুখে চেয়ে। তার সরল-সহজ বাবা, তার লম্পট বন্ধুদের ইনিয়েবিনিয়ে বলা এলোমেলো কথাবার্তা বুঝতে পারছে না বলেই এমনভাবে হাসছে। নয়তো ঠিক কাঁদতো। তন্ময় সামনে চায় অরুর গলা শুনে। জবেদা বেগমের সাথে অরু এগিয়ে আসছে ধীর পায়ে। সবাইকে দেখে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েছে। বদন জুড়ে আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। তন্ময় অসন্তুষ্ট হয়। এতো আনন্দের কী আছে? দেখো, কেমন করে হাসছে? কতো খুশি! 

শুহানি উঠে অরুকে ধরে এনে পাশে বসায়। দু'হাতে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় শুধায়,

‘আমাদের বেবিটা ভালো আছে?’

অরু লাজুক হেসে মাথা দোলায়। জানায়, সে ভালো আছে। সবার প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে মিষ্টি করে হেসে গল্প জুড়েছে বেশ। তন্ময় বাঁকাচোখে অরুর হাস্যোজ্জ্বল মুখখানি দেখে গেল বিনাবাক্যে। অবশেষে নিজেও আনমনা সন্তুষ্ট হয়। বন্ধুদের আগমনে যেহেতু প্রিয়তমা তার আনন্দিত সেহেতু তন্ময়ও নারাজ হতে ব্যর্থ। দিনশেষে অরুর হাসিমুখই তার অস্তিত্বের বিরাট কারণ। 

অরু এযাত্রায় লাজুক চোখে চাইল। তন্ময় ভ্রু তুলতেই দ্রুত দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখল জমিনে। ইতস্তত ওকে দেখে তন্ময় ভ্রু কুঁচকাল। কী হলো? সে কী মিস করল? শুহানি তার ভাবুক দৃষ্টি দেখে চাপাস্বরে বিচার দেবার মতো করে জানাল,

‘মাহিন অরুকে সম্বোধন করেছে, ‘তন্ময়ের সোনামণি’ বলে। তাই অরু লজ্জা পাচ্ছে।’

অরু আরও মিইয়ে গেল শুহানির কথা শুনে। মাহিন ঢোক গিলে। দ্রুত সাফাই গাইতে যাবে ওমনি তন্ময় শান্ত তবে ধীর কণ্ঠে বলে,

‘ভুল কী বলেছে? আমার সোনামণি তো।’

শুহানির মুখটা হা হয়ে আসে। আশ্চর্য হয় মাহিনও। অরু দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। লজ্জায় মেয়েটা এখান থেকে যেতে ব্যাকুল। শুহানি নিজের তাজ্জব মস্তিষ্ক কাজে লাগিয়ে অরুকে গিয়ে ধরে দু’হাতে। রিয়ান চোখ পিটপিট করে বলে,

‘মাহিন চাচা, আমার হাতে একটা চিমটি কাটুন তো।’

———

বাচ্চাকালে অরু ছিলো বেশ নাদুসনুদুস। তাকে দেখতে এক হুবহু পুতুলের লাগতো। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্বাস্থ্য বেড়েছে বলেই হয়তোবা— গভীর ঘুমন্ত ওকে সেই বাচ্চা অরুটিই লাগছে। যে একসময় ছোট্টো হাতে তন্ময়ের টি-শার্ট টেনে ধরে আবদার ধরে আদুরে গলায় বলতো,

‘কো-কোললে নাও, ভাইয়া। আমাকে কোল-লে নাও।’

তন্ময় যেন ওকে কোলে নিতে মুখিয়ে আছে ওমনভাবে চটপট কোলে তুলে নিতো। সে কখনোই পারতপক্ষে ওর ক্ষেত্রে 'না' শব্দটি উচ্চারণ করতে পারতো না। বাচ্চা অরু ছিলোই এতো মায়াবী যে তখনকার অবুঝ, নাবালক তন্ময়ও ওকে প্রশ্রয় দিয়ে বেড়াতো। মাথার ওপরে ওঠে নাচতে লাই দিতো রীতিমতো। 

ছোটোবেলার কথা ভেবেই তন্ময় আনমনা হাসে। অরুর বাচ্চা-বাচ্চা, ফুলোফুলো চেহারাটা অনেক্ক্ষণ ধরে দেখে। সারারাত সে বিন্দুমাত্র ঘুমোতে পারেনি। কীসব হাবিজাবি চিন্তাভাবনা মস্তিষ্ক জুড়ে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে! মনের ভেতরে অশান্তি নিয়ে কী আর ভালো ঘুম হয়? সেদিনকার অরুর ওমন কথাগুলো তন্ময়কে এখনো তাড়া করে বেড়ায়। যা সে স্বপ্নেও কখনো ভাবতে পারে না, তাই মেয়েটা কেমন অবলীলায় বলে বসল! রীতিমতো তাকে মে রে ফেলার পঁয়তারা করছে এই মেয়ে। নাহলে ওমন কথা কীভাবে বলল? 

তন্ময় দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মাথা নামিয়ে অরুর কপালে চুমু খায়। গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে জানালার দিকে চায়। আকাশের গা ঘেঁষে সূর্য এখনো পুরোপুরি ওঠেনি। উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে, এই পুরোপুরি উঠলো বলেই। জানালা গলিয়ে একফালি সোনালি রোদ্দুর এসে ভিড়তে চাচ্ছে অরুর শান্ত, ঘুমন্ত মুখে। তন্ময় এবেলায় বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। পা জোড়ায় জুতো গলিয়ে এসে দাঁড়ায় জানালার সামনে। পর্দা টেনে দেয় ভালোভাবে। ফিরে এসে অরুর কোমরে পড়ে থাকা কম্ফোর্টার গলা পর্যন্ত টেনে দিয়ে এয়ারকন্ডিশনারের পাওয়ার কমিয়ে দেয়। অরুর গরম বেশি লাগে। ঘর ঠান্ডা করে কম্ফর্টার জড়িয়ে ঘুমোতে পছন্দ করে। আর আজ এমনিতেও ভ্যাপসা গরম পড়েছে। অক্টোবরে এমন গরম পরার কথা তো নয়। প্রকৃতি যেন মাঝেমধ্যে উল্টো পথে চলতে ভালোবাসে। 

তন্ময় এক মগ গরম কফি নিয়ে এসে বসেছে বাগানে। মন, মস্তিষ্ক শান্ত করতেই মূলত এখানে বসা। বাতাসের মিহি স্পর্শ উপভোগ করতে নিয়েই কফির মগে চুমুক বসায়। তখুনি চায়ের কাপ হাতে মোস্তফা সাহেবকে হাজির হতে দেখা যায়। ভদ্রলোক এতক্ষণ লিভিংরুমে বসে সংবাদপত্র পড়ছিলেন। ছেলেকে দেখেই চা নিয়ে এসেছেন বাগানে বসতে। তন্ময়ের ঠিক পাশের চেয়ারটাতেই আরাম করে বসেন। গলা পরিষ্কার করে চায়ের কাপে চুমুক বসান। আড়চোখে ছেলের মুখে কয়েকবার দৃষ্টিপাত ফেলেন। একসময় চিন্তিত হয়েই শুধিয়ে বসেন, 

‘অশান্ত লাগছে তোমাকে! কী ব্যাপার?’

এহেন আচমকা প্রশ্নে তন্ময় নিঃশব্দে হাসে। বাবার দিকে ফিরে চেয়ে প্রত্যুত্তরে বলে, 

‘কীভাবে বুঝলে? আমার মুখে লেখা নাকি?’

মোস্তফা সাহেব মুহূর্তেই গম্ভীর হলেন। যেন এমন প্রশ্ন তন্ময়ের মুখে মানায় না। সটানভাবে বসে ভদ্রলোক বলেন,

 ‘হুঁ, লেখা। তবে ওই লেখা পিতৃতান্ত্রিক লেখা। শুধু বাবারাই পড়তে জানেন।’

তন্ময় আগ্রহী হয়। উৎসুক চোখে চেয়ে থেকেই প্রশ্ন করে যায়, ‘ভবিষ্যতে আমিও আমার ছেলে-মেয়েদের মুখ পড়তে পারবো তো?’

মোস্তফা সাহেব নড়েচড়ে ওঠেন। চায়ে চুমুক বসান। অন্যদিকে ফিরে বুক ফুলিয়ে বিড়বিড় করে বলেন,

‘আমার মতো সন্তানদের ভালোবাসলে অবশ্যই পারবে।’

তন্ময় হাসে, শব্দ করে। ফিসফিস করে শুধায়, ‘বাবা, আমি তোমার মতো ভালো বাবা হতে পারবো তো?’

মোস্তফা সাহেব থমকান। নরম হোন। সময় নেন প্রত্যুত্তরে—গর্বিত কণ্ঠে আওড়ান, ‘আমার চেয়েও ভালো বাবা হবে। দেখিও কেমন বাবা ভক্ত ছেলেমেয়ে হয় তোমার।’

তন্ময় দীর্ঘশ্বাস ফেলে। শান্ত ভঙ্গিতে কফির মগে চুমুক বসায়। অদূরেই পাখিরা উড়েউড়ে কিচিরমিচির করছে। সেদিকে চেয়েই বলে,

‘আমি ভয় পাচ্ছি, বাবা। আবার অপেক্ষাও করছি। ভয়, অপেক্ষা এই দুটোর মিশ্রিত অনুভূতি যে বড্ড অসহনীয়।’

মোস্তফা সাহেব ছেলের কাঁধে হাত রেখে নীরবে আশ্বস্ত করেন। বোঝান, সব ঠিক হবে। আল্লাহ আছেন। তিনিই উত্তম পরিকল্পনাকারী। তিনিই সব।

———

ক'দিন ধরেই শাহজাহান বাড়ির বাতিগুলো বন্ধ করা হয় না রাতবিরেত। সারারাত জ্বালানো রয় অরুর সুবিধার্থে। ঘরের বাতিও জ্বালানোই থাকে রাতভর। ওর হঠাৎ করে এটা-সেটার প্রয়োজন হয় বলে। সেদিন অক্টোবরের তেরো তারিখ। বুধবার রাত একটা তেতাল্লিশ। জানালার পাশের চেয়ারে বসে তন্ময় ল্যাপটপে কাজ করছিল। হঠাৎ করে ঘুমন্ত অরুকে আর্তনাদ করতে শোনা গেল। প্রথমে অস্পষ্ট ছিল, এরপর ধীরে ধীরে জোড়ালো গলাতেই আর্তনাদ করে ওঠে মেয়েটা।

নিস্তব্ধতা চিড়ে আসা মেয়েলি কণ্ঠের আর্তনাদে তন্ময় ধড়ফড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়। দেখতে পায় অরুর কপালে রীতিমতো ঘাম জমেছে। চোখমুখ খিঁচিয়ে রেখেছে কেমন। মনে হচ্ছে, অনেকক্ষণ ধরে ব্যথা সহ্য করে শুয়ে আছে। না পারতে মুখ ফুটে আওয়াজ করে বসেছে। এযাত্রায় দুর্বল ভাবে উঠে বসতে চাচ্ছে পেট ধরে। তন্ময় দ্রুত কাছে এসে অরুকে দু'হাতে জাপ্টে ধরে বসায়। বিচলিত ভঙ্গিতে সারামুখ ছুঁয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে, 

‘ব্যথা করছে?’
 
অরু ঢোক গিলে আওড়ায়, ‘ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে পেটে।’

অরুর ডেলিভারির তারিখ আরও পাঁচদিন পর ছিল। আজই ব্যথা উঠেছে! তন্ময় ওকে মুহূর্তেই পাজাকোলে তুলে নেয়। ঘর ছেড়ে সে বেরুতে নিয়েই চিৎকার করে ডেকে ওঠে মোস্তফা সাহেবকে। মোস্তফা সাহেবের দরজা আধখোলাই ছিল। এই সময়টাতে বাড়ির সবাই যেন চোখ-কান খোলা রেখে বসে আছে। এক ডাকেই ভদ্রলোক সহ, জবেদা বেগমও হকচকিয়ে বেরিয়ে আসেন। প্রশ্নের ধার না ধেরে, মোস্তফা সাহেব কোনোরকমে গায়ে পাঞ্জাবি জড়িয়ে নিতে নিয়ে ছোটেন ছেলের পেছনে। 

ইতোমধ্যে বাড়ির সবাই জেগেছে। সুমিতা বেগম, জবেদা বেগম গুছিয়ে রাখা ব্যাগগুলো হাতে তুলে নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন মুহূর্তেই। মিনিটখানেকও তাদের প্রয়োজন পড়েনি। যেন আগে থেকেই সব প্রস্তুতি নেয়া আছে তাদের। গাড়ি বের করেছে আকাশ। মোস্তফা সাহেব গাড়ির দরজা খুলে দিতেই অরুকে পেছনের সিটে বসিয়ে দেয় তন্ময়। অরুর দু’পাশে উঠে বসেছে সুমিতা বেগম, জবেদা বেগম। দুর্বল ভাবে আর্তনাদ করা অরুকে দু'জনে জড়িয়ে রেখেছেন। 

আকাশ ড্রাইভিং থেকে নামতেই তন্ময় উঠে বসে ড্রাইভিংয়ে। মোস্তফা সাহেব ছেলের পাশে উঠে বসেছেন। আনোয়ার সাহেব বসেছেন স্ত্রীর পাশে। তন্ময় গাড়ি স্টার্ট করে। এক টানে বাড়ি ছেড়ে বেরোয় গাড়িটা। নির্জন রাস্তা, জ্যাম বিহীন রাস্তা হওয়াতে— তাদের আকাঙ্ক্ষিত প্রাইভেট হাসপাতালটিতে পৌঁছাতে পনেরো মিনিটেরও কম সময় লাগল। 
.
.
.
চলবে.........................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp