হাওয়াই মিঠাই - পর্ব ১০ - মৌরি মরিয়ম - ধারাবাহিক গল্প

পড়ুন মৌরি মরিয়ম'এর লেখা একটি অসাধারণ ধারাবাহিক গল্প হাওয়াই মিঠাই'র দশম পর্ব
হাওয়াই মিঠাই
হাওয়াই মিঠাই

মীরা তখন জানতেও পারেনি সেদিন আসলে কী হয়েছিল? রাফি কতটুকু জানতে পেরেছিলাে? কার কাছ থেকে জানতে পেরেছিলাে? ত্রিশার মাধ্যমে নয় তাে? সত্যিই কি সব শেষ হয়ে গেল? আর কখনাে রাফির সাথে কথা বলতে পারবে না? রাফি কি সারাজীবনের জন্য হারিয়ে গেল? এমন হাজারাে প্রশ্ন দানা বেঁধেছিল মীরার মনে। যার উত্তর খুঁজতে গিয়ে মীরার নাওয়া-খাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিলাে। বাসায় সবাই উদগ্রীব, কী হলাে মীরার! এভাবেই কেটে গেল কয়েকদিন। সপ্তাহ খানেক পর রাফি নিজেই ফোন করলাে। রিসিভ করার আগেই মীরা কেঁদে ফেললাে। রাফি স্বাভাবিকভাবেই জিজ্ঞেস করল,

"কেমন আছাে মীরা?"

মীরা অভিমানী গলায় বলল,

"অল ওভার না? তাহলে কেমন থাকি না থাকি তাতে তােমার কী?"

"ঠিকাছে কান্নাকাটি শেষ করাে। পরে ফোন করবাে।"

"না, ফোন রাখবে না।"

চিৎকার করে উঠলাে মীরা। রাফি খুব স্বাভাবিক গলায় বলল,

"এত জোরে কথা বলছাে যে? বাসায় কেউ নেই নাকি?"

কাঁদতে কাঁদতে মীরা বলল,

"তুমি কেন এমন করলে রাফি? এতগুলাে দিন আমার সাথে কথা না বলে কেন কষ্ট দিলে আমাকে?"

"তুমি কী করেছিলে?"

"আমাকে তাে তুমি কিছু বলার সুযােগই দাওনি।"

"সুযােগ না চেয়ে যা বলার বলা উচিৎ ছিল। রাগের মাথায় কী বলতে কী বলবাে তাই কথা বলতে চাইনি। এখন বলাে কী বলতে চেয়েছিলে সেদিন।"

মীরা কাঁদতে কাঁদতে বলা শুরু করলাে,

"ত্রিশা প্রায়ই আমার ফোন ব্যবহার করতাে। সেই প্রথমে আমার ফোন থেকে তােমাকে কল করেছিল। তুমি তাে তখন ব্যস্ত ছিলে, ধরােনি। ত্রিশা চলে যাওয়ার পরে তুমি যখন কলব্যাক করেছিলে তােমার কন্ঠ শুনে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। একবার কথা বলেই তােমার সাথে কথা বলার লােভে পড়ে গিয়েছিলাম। ওদিকে ত্রিশা আমার বেস্টফ্রেন্ড, সে বার বার বলছিল যেন ধরা না খায়। ওকে বাঁচাতে আমি মিথ্যা বলেছিলাম।”

"বাহ! তাহলে ফ্রেন্ডকে বাঁচিয়ে এখন নিজে মরাে।"

"সরি রাফি। এবারের মত মাফ করে দাও, কখনাে মিথ্যা বলবাে না আর। প্রমিস করছি।"

"এখন যে সত্যি বলছাে তার প্রমাণ কি? যখন মিথ্যা বলেছিলে আমি তাে ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি। এবারও হয়তাে টের পাচ্ছি না।"

মীরা কাঁদছে। রাফি চুপ। কিছুক্ষণ এভাবেই নিঃশব্দে কেটে গেল। একসময় রাফি বলল,

"আমার বিশ্বাসটা ভেঙে গেছে মীরা। কিন্তু তুমি এমন করেছাে আমি সেটা মানতেও পারছি না।”

"মাফ করে দাও।"

"জানি না কী করবাে!"

মীরা একটু থেমে জিজ্ঞেস করলাে,

"তুমি কিভাবে জানলে এসব?"

"সেদিন আমরা সব বন্ধুরা তপনদের বাসায় গিয়েছিলাম। বাসায় ঢােকার সময় রাস্তা থেকে কীভাবে যেন আমার চোখটা উপরের বারান্দায় চলে যায়। সেই নীল ড্রেসটা শুকোতে দেয়া ছিল, আমাদের প্রথম দেখার দিন যেটা পরে এসেছিলে। ওটা দেখে আমার খটকা লেগেছিল। আমি পাত্তা দেইনি, ভেবেছি একরকম ড্রেস অনেকেরই থাকতে পারে। যাই হােক, সেদিন কথায় কথায় তপন আমাকে পিঞ্চ করে বলেছিল 'জানিস রাফি আমাদের বাড়িওয়ালার এক মেয়ের নাম কী? মীরা'। এ কথা শুনে সবাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খলাে। আর আমার বুকের ভেতর তখন ঝড় বইছিল, ড্রেস আর নাম দুটোই কাকতালীয় হতে পারে না।"

সবটা মীরার মাথার ওপর দিয়ে গেলাে। ও অবাক হয়ে বলল,

"তপন ভাইয়া আমাকে নিয়ে তােমাকে পিঞ্চ করবে কেন? উনি কি কিছু জানেন আমাদের ব্যাপারে?"

"আমার এক্সের নাম মীরা ছিল বলেছিলাম তােমাকে। কোথাও কারাে মীরা নাম দেখলেই ওরা আমাকে পিঞ্চ করে। সেজন্যই করেছে, তপন কিছু জানে না।"

মীরার কান্নাটা কমে এসেছিল, এখন আবার কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করলাে,

"তুমি এটা বলেছিলে কেন যে আমি তােমার সব বন্ধুদের কল দিয়েছি?"

"যখন তােমার সাথে আমার কথা শুরু হয়। তখন সব বন্ধুদের কাছেই আননােন নাম্বারে কল যেতাে। কিন্তু কারাে সাথে নাম্বার মিলিয়ে দেখা হয়নি। সেদিন তােমার ব্যাপারটা জানার পর সাবার সাথে নাম্বার মিলিয়েছিলাম। জানলাম তুমি শুভর সাথে প্রায়ই কথা বলাে। ফোনের মধ্যে তাকে স্বামী স্বামী করে ডাকো। বাচ্চার বাপও বানিয়ে ফেলেছাে।"

"আমি তােমাকে পুরাে ঘটনা বলি প্লিজ?"

"বলাে।"

"বাবা আমাকে ফোন কিনে দেয়ার পর হঠাৎ একদিন ত্রিশা এলাে। সাথে একটা কাগজে ৪ টা ফোন নাম্বার লেখা। সবাইকে ফোন করে মজা করবে বলল। প্রথম নাম্বারটা ছিল তােমার। তুমি ফোন ধরােনি৷ এরপর ফোন করেছে শুভ ভাইয়াকে। শুভ ভাইয়া ধরেছিল। আর ত্রিশাই ভাইয়ার সাথে ওসব স্বামী বাচ্চা নিয়ে কথা বলেছে। তার সাথে কথা জমে ওঠায় প্রায়ই তাকে ফোন করতাে।"

"তােমার ফোন দিয়ে ত্রিশা কেন কথা বলবে?"

"ওর ফোন নেই তাই আমার ফোন দিয়ে কথা বলতাে।"

"দীপু আর আরিফকেও তাে তােমার নাম্বার থেকে কল করা হয়েছে। আরিফের সাথে মাত্র একবার কথা হলেও দীপুর সাথে তাে অনেকবার কথা হয়েছে।"

"তাই নাকি! ত্রিশা তাে শুভ ভাইয়ার সাথে কথা বলবে বলে ফোন নিতাে। অন্য কাউকে ফোন করতাে কিনা জানিনা।"

"কললিস্টে এতগুলাে আননােন নাম্বার দেখেও তােমার ওকে জিজ্ঞেস করার কথা মনে হয়নি?"

"আমি তাে কোনাে নাম্বারই সেভ করতাম না। ত্রিশা যেগুলােতে কথা বলতাে আমি তাে শুভ ভাইয়ার নাম্বরই ভেবেছি।"

“আচ্ছা তুমি যে ওকে ফোন চাইতেই দিয়ে দিতে। ও যদি মজা করতে গিয়ে আমাকেই আবার কোনােদিন ফোন দিত? আমি তাে মীরাকে খুঁজতে শুরু করতাম। তখন কী হতাে?"

মীরার এবার একটু জ্বলুনি অনুভূত হলাে। সে খানিকটা রেগেই বলল,

"কেন আমাদের সম্পর্কের কথা ও জানলে কি তােমার খুব ক্ষতি হয়ে যাবে?"

রাফি এবার ধুম করেই হেসে দিল। মীরা হাসির কারণটা ধরতে পারলাে না। রাফি বলল,

"আমার কোনাে ক্ষতি হতাে না। তুমিই আরাে আগে ধরা খেতে আমার কাছে।"

মীরা এবার নিজের বােকামির লেভেলের কথা ভেবে নিজেই অবাক হলাে। আর কিছু বলার সাহস পেল না। একেবারে চুপ হয়ে গেল। রাফি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

"কে জানে আজকে যা বললে তার মধ্যে আরাে কত মিথ্যা আছে!"

"বিশ্বাস করাে রাফি, আমি তুমি ছাড়া আর কারাে সাথে কথা বলিনি।"

"বিশ্বাসটাই তাে ভেঙে গেছে! কিভাবে আবার বিশ্বাস করি বলাে?"

মীরা আবার কঁদছে। রাফি চুপ। কিছুক্ষণ পর মীরা বলল,

"আর একটা সুযােগ দাওনা রাফি প্লিজ।"

রাফি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,

"আচ্ছা দেখি চেষ্টা করে। তুমি যদি এখনাে মিথ্যের উপর থাকো তাহলে আবার ধরা খাবে। একটা কথা মনে রেখাে... এরপর যদি আবার ফোন বন্ধ রাখতে হয়, এ জীবনে আর কখনাে খােলা পাবে না!"

পর্ব ০৯পর্ব ১১

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন